4921

সমঅধিকার
-
পত্রিকাটা হাতে নিয়েই রেগে আগুন রেহানা খানম।
' ধর্ষণ করতে গিয়ে বখাটে মেয়ে গর্ববতী'। কীযে দিনকাল আসলো!  এসব বখাটে মেয়েদের জন্য আজকাল ছেলেরা ঘরথেকে বেরই হতে পারে না। নিজের চৌদ্দবছরের ছেলেটাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তা।
' এই নাও চা '।
' সবে চা আনার সময় হলো? যাও তাড়াতাড়ি খাবার রেডি ' ধমক না দিলে এখনকার স্বামী নামের জীবগুলো কোন কাজই করতে চায় না। যত্তসব!
কোনরকম খাবার মুখে দিয়েই ছুটতে হলো তাকে। অফিসে দেরি হলে বসের ঝাড়ি খেতে হয়।
নাহ!  রাস্তায় খুব জ্যাম।  কোনরকম জ্যাম ঠেলে অফিসে পৌছালো।  এত চাপ নিয়ে কেউ বাঁচে নাকি!  অফিস সংসার হাটবাজার আরো কত কী! কিছুদিন পর ঈদ,  স্বামী সন্তানদের জন্য কেনাকাটা অনেক  বাকি। এমাসে বেতনটা হবে হবে করেও হচ্ছে না। কোম্পানির একটা প্রজেক্ট আটকা পড়ে আছে। বস কিছুতেই লসের মুখে বেতন দিবেন না,  রেহানা খানম তা ভালো করেই জানেন। বোনাসটা তো পাওয়া হলোই না।   
অফিস থেকে বের হতেই  এক ভিখারী এসে পা জড়িয়ে ধরে,  ' আফা আমার বউ অামারে ছাইড়া চইলা গেছে। কিছু টেকা দেন,  বাচ্চাডা না খায়া আছে '।
কোন রকম কিছু দিয়ে বিদায় করলো। কোথা থেকে যে আসে এসব?  
সাথে সাথে ফোন বেজে উঠে। রিসিভ করার পর, 
' ওগো,  বাবা মা আসছে। বাজার করে নিয়ে এসো।'
' ঠিক আছে,  এখন রাখি ' রাগে গজগজ করতে করতে ফোন রাখে রেহানা খানম।
বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে বাস আসলো। কিন্তু ওঠা  মুখকিল।  এতমানুষের ভিড়। ভিড় ঠেলে যেই উঠতে যাবে অমনি একটা ছেলে  তাকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে বাসে চড়ে বসে। পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয় নিজেকে। বেহায়া নির্লজ্জ ছেলে কোথাকার। কোথাকার চুপে চুপে বাসে উঠবে,  তা না করে মহিলাদের গা ঘেঁষাঘেঁষি শুরু করছে। বলি ধর্মের কী মাথা খাইছে ছেলেটা? একটু পর্দা করলে কী হতো? আবার দেখো মেয়েদের মতো ছেঁড়া প্যান্ট পরছে। কলিযুগ বোধহয় এসেই গেল।
হঠাং পেছন থেকে, 
' আপা ভাড়া দেন।  '
প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে  ' থ ' হয়ে গেল।  একি!  মানিব্যাগটা কোথায় গেল?   পকেটমারগুলো সময় অসময় বুঝে না। কন্টাক্টরকে কোনরকম বুঝিয়ে নিজের এলাকাতে এসে নামলো। তখন বেশ রাত হয়ে গেছে।  দোকান থেকে বাকিতে তরিতরকারি আর মাছ মাংস কিনে আর রিকসা পাচ্ছে। যাও একটা পেল রিকসাওয়ালী বেশি ভাড়া চাচ্ছে। তাতেই রাজি রেহানা খানম। বাসায় গিয়ে ভাড়া দিয়ে দিবে। মাঝপথে এসেই রিকসাওয়ালী রিকসা থামিয়ে নেমে একটা চাকু বের করে।
' কী আছে তাড়াতাড়ি বাইর কর।  নইলে হান্দায়া দিমু। '
' এই অসভ্য মেয়ে!  কীসব বলছো? তোমাকে পুলিশে দেব। '
হঠাং কোথা থেকে আরো দুজন মেয়ে এসে যোগ দেয় রিকসাওয়ালীর সাথে।
শুরু হয় দস্তাদস্তা। একপর্যায়ে ছিনতাইকারী মেয়েরা তার পেটে ছুরি মেরে হাতের ব্যাগ করে নেয়।  সে পেটে হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
-
' কী হলো?  ওঠো?  দেখো তোমার জন্য শাড়ি গয়না কিনে এনেছি। '
স্বামীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে রেহানা  খানমের। তখনো পেটে হাত দেওয়া। না কিছু হয়নি।   দুঃস্বপ্ন ছিল।
' যাও,  ফ্রেশ হয়ে নাও। আজ না তোমার মিটিং? বাসার দিকটা সামলে নিতে পারব। ' এই বলে স্বামী বের হয়ে গেল।
রেহানা  খানমের তখনো  ঘোর কাটেনি। হঠাৎ ফোনের শব্দ কানে আসতেই ফোন রিসিভ করে উত্তর করে '
' সমঅধিকার কনফারেন্স ক্যান্সেল '।

Collected