••গল্পের নামঃ তোমারেই মন পড়ে•••
•
•
লেখাঃ S M Rasel Parvez (লালনের প্রতিবেশী)
•
•
" আকাশ জুড়ে ভাঙ্গা জোৎস্নায়
পড়ছে তোমায় মনে,
শিউলি তলায় দাড়িয়ে তোমায়
ভাবছি সঙ্গোপনে।
বেলা শেষে মৃদু আলোয়
টোল পড়া সেই হাসি
খলবলিয়ে মনের ঘরে
হাসছে দিবানিশি।
দূর বাগানে জোনাক মেয়েরা
জ্বলছে নিবে নিবে,
ঝিঝির দলে করুন সুরে
কাঁদছে তোমায় ভেবে।
বকুল বনের শুকনো পাতারা
ঝরছে তোমার দুঃখে
হুতুমপেঁচা বকুল ডালে
ডাকছে করুন মুখে।
এমন রাতে সখী গো আজ
কেমনে রই ঘরে?
এমন ক্ষণে একলা মনে
তোমারেই মনে পড়ে। "
.
.
অনেকদিন পর ডায়েরিটা হাতে নিয়েছিলাম। শেষ যে কবে পাতা ছুয়েছি তা প্রায় ভুলেই গেছি। ডায়েরির কভার পাতায় ছোট খাটো একটা মরুভূমির সৃষ্টি হয়ে গেছে। প্রায় আধা ইঞ্চি ক্যাঁচক্যাঁচে ধুলো বালির মোটা আস্তরন পরেছে। পদ্য লেখার আমার কোন অভ্যেস কিংবা শখ ছিলো না, এমনকি পদ্য কিভাবে লিখতে হয় তাও আমার কাছে অজানা। তবে সেদিন যে কিভাবে হাত ফসকে লিখে ফেলেছিলাম তা আমার কাছে বড় সন্দেহ ঠেকছে। কাজল টানা সেই চোখ, সেই কুঁচকানো ভ্রু, সেই টোল খাওয়া গাল এখনও চোখের সামনে ভাসছে। মনে হচ্ছে ক্ষনকাল আগেও সে হেসেছে। যার রেশ এখনও কাটেনি। দুই ভ্রুর মাঝে কালো টিপ, কোঁকড়ানো চুল, ডান ঠোঁটের তিলটাকে কেমন করে ভুলি? এ অসম্ভব কম্ম যেন কৎসচিন কালেও সম্ভব না। এখন কেমন আছে নীরা? কতদিন যে তার টোল পড়া হাসিটা দেখিনা যে!!! সে কি হাসি গো.. যেন হৃদয়ের মেরুদণ্ড ভাঙ্গার অস্ত্র।
.
নীরাকে প্রথম যে দিন দেখেছিলাম, সেদিনকার কথা ভুলবার নয়। এখনও স্মৃতি পটে ভীড় ঠেলে শুধু ওই দিনটার কথাই বারবার সামনে এসে উপস্থিত হয়। কেনই বা গিয়েছিলাম সেদিন গাঙ্গের ধারে? কেনই বা চেয়েছিলাম কাজল টানা সেই চোখ দুটোর দিকে?
.
আমার কৈশোর জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কেটেছে শহরের সাথে। আসতে চেয়েছিলাম না এই ইট পাথরের খাচার ভিতরে। কিন্তু তাতে কি আর রক্ষে আছে? বাবা মা জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মামার সাথে। তারপর এখানের এক স্কুলে ভর্তি হলাম। প্রথম প্রথম বেশ ভালোই লাগতো। সব কিছুতেই যেন একটা বিস্ময়। বড় বড় দালান, দুইতলা বিশিষ্ট বাস গাড়ি, চলন্ত সিড়ি। যা দেখতাম তাইই শুধু বিস্ময় জাগাতো। তবে কিছুদিন পরেই বিশুদ্ধ বাতাসের অভাব টের পেলাম। পথে ঘাটে শুধু সবুজের গন্ধ খুজে বেড়াতে লাগলাম। তবে নাকে শুধু গুমোট বাতাসই ধরা পড়তো। প্রতিদিন সকাল বিকেলে ছাদে বসে শুধু সবুজের চিহ্ন খুজে ফিরতাম।
.
গ্রামে বন্ধু বলতে একমাত্র শাকিল। গ্রামে যে কদিন থাকতাম শাকিলের সাথেই ঘুরতাম। বিকেল হলে হয়তো নদীর পাড় কিংবা বিলের ধারে গিয়ে বিকেলটুক কাটিয়ে আসতাম। সেদিনও শাকিলের সাথে হাটতে বেড়িয়েছিলাম। হাতে এক ঠোঙা বুট ভাজা নিয়ে দুজন কটমট করে চিবুচ্ছিলাম, সাথে নানা রকমের খোস গল্প। হঠাৎ উত্তর পাড়ার নীমতলী ঘাটে এসে খোস গল্প থেমে গেল একজোড়া চোখের চাহনিতে। কি সেই চাহনি গো। এখনও মনে পড়লে অমর সন্জীবনী হয়ে যায়।
নীরা নীমতলী ঘাট থেকে জল নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলো। পড়নে রঙ্গ বাহারি টাঙ্গাইল শাড়ি, হাতে নীল কাচের চুড়ি, কপালে ছোট্ট কালো টিপ, কোঁকড়ানো কালো চুলগুলো খোপা বন্দী করা। সেই দিনই প্রথম বিস্ময়ের দরুন হৃদয়ের মেরুদন্ডটা ভেঙ্গেছিলো। কি দারুন মায়াবী চোখ। সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৌন্দর্য যেন খোলা হাতে ঢেলে দিয়েছে নীরার মাঝে। আমি শাকিলকে ডেকে বললাম, " কে রে মেয়েটা..? "
শাকিলের বোধহয় এবার হুশ হলো, ঘাড় ঘুরিয়ে কয়েক সেকেন্ড থমকে থেকে বললো, " ওহ.. ওটাতো গফুর চাচার মেয়ে নীরা। তোর সেই নীরু। ছোটবেলা যে তোকে ফড়িং ধরে দিতো। "
আমার বিস্ময় যেন আরও বেড়ে গেল। নীরু এতবড় হয়েছে? কত দিন যে সাক্ষাৎ হয়নি তার ইয়ত্তা নেই। সেই ছোট্ট তুলতুলে একরত্তি মেয়ে এখন কত্ত বড় হয়ে গেছে। আমি শাকিলের কাধ ঝাকিয়ে বললাম, " নীরু এবার কিসে পড়ছে রে.?"
শাকিল অন্যমনস্ক হয়ে বললো," ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছিলো এখন ইসকুলে যায়না। "
তারপর যে কদিন বাড়িতে ছিলাম প্রতিদিন বিকেলে নীমতলী ঘাটে নীরার আশায় বসে থাকতাম।
কলসী ভরে জল নিয়ে যাওয়ার সময় টানা টানা চোখে মিটিমিটি চায়তো আর টোল পড়া গালে মুচকি মুচকি হাসতো। হয়তো মনে মনে বলতো, "কি গো এখনও কি ফড়িং ধরে দেওয়া লাগবে ? " আমি অনেকবার ডেকে কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু কথাগুলো গলা পর্যন্ত এসেই আবার নিচে নেমে গেছে মুখ দিয়ে নির্গত হতে পারেনি। ক, দিন পরেই গ্রীষ্মের ছুটি শেষে আবার শহরে চলে এলাম। .
সারাদিন ব্যাস্ততার ক্লান্তি শেষে যখন বাসায় ফিরতাম তখন কল্পনায় ভেসে নীরার টোল খাওয়া গালের হাসিটা মনের মাঝে এক চিলতে সুখ এনে দিতো। প্রতিদিন অপেক্ষার প্রহর গুনতাম কবে আবার গ্রামে যাব, কবে আবার নীরার সেই টোল হাসিটা দেখবো। দিন শেষে রাত আসে কিন্তু অপেক্ষার প্রহর শেষে যেন সকাল আসতে চাইতো না। সকাল সন্ধ্যায় কতো এলোমেলো স্বপ্ন বুনতাম।
তারপর অনেকবার বাড়ি গিয়েছি। প্রতিবারই সেই নীমতলীর ঘাটে বসে থেকেছি। কলসী ভরে জল নিয়ে যাওয়ার সময় টানা টানা চোখে মিটিমিটি চাহনী দেখেছি। টোল পড়া গালের মুচকি মুচকি হাসি দেখিছি কিন্তু মুখ ফুটে অব্যাক্ত কথাগুলো বলতে পারিনি, এর অবশ্য শাকিলের হাতে অনেক গাঁট্টা খেয়েছি।
প্রতিবারই শহরে ফিরবার সময় টোল পরা হাসিটা পথ আগলে ধরেছে। প্রতিবারই মনের কাছে জবাবদিহিতার সুরে বলেছি, "এবার বলতে পারিনি তো কি হয়েছে, সামনের বার এলে ঠিক বলবো। " কিন্তু সে বার আর এলো না গো...
.
পড়ালেখার পাঠ চুকে গেছে। অনেকদিন জন্মভূমি দেখতে যাওয়া হয়নি। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে ক, দিন হলো একটা প্রাইভেট কন্সট্রাকশন ফার্মে চাকরি জুটেছে। বেতন মোটামুটি। এবার আর কোনও বাধা নেই। ছুটি পেলেই গফুর চাচার কাছে গিয়ে নীরাকে সারাজীবনের জন্য চেয়ে আনবো। কবে সেই দিন আসবে গো। সময় যেন এবার আর কাটেনা। অফিস, বাসা যেখানেই যাই চোখের সামনে শুধু টোল পরা সেই হাসিটা ভাসে। দিন শেষে কর্ম ব্যাস্ততার গ্লানিটা সেই টোল পরা হাসিটা ভুলিয়ে দিতো।
একদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে দেখি দরজার সামনে একটা খাম পড়ে রয়েছে। হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলাম আমাকে উদ্দেশ্য করে একটা চিঠি এসেছে।
রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে নীরার সেই টোল পরা হাসিটা কল্পনায় আনার চেষ্টা করলাম।
হঠাৎ সেই চিঠিটার কথা মনে হতেই মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেল। বিরক্তিকর মনে টেবিল হাতড়ে সেই চিঠিটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম। হাতের লেখাটা অতি পরিচিত মনে হচ্ছে। অনেকটা শাকিলের হাতের লেখার মতো। প্রেরকের ঠিকানায় শুধু নীরার নাম লেখা। এবার সত্যিই কৌতুহল বেড়ে গেল। ঘাম খুলে কাগজখণ্ড বের করে দেখলাম অপরিনত হাতের একটা ভাঙা চিঠি। যেটাতে লেখাঃ
" কেমন আছেন? বোধহয় ভালোই আছেন। অনেকদিন আপনাকে দেখিনা। বাড়ি আসবেন কবে?
-ইতি
- নীরা ( নীরু ) "
এবার আর বুঝতে বাকি রইলো না চিঠিটা লিখেছে নীরা,, আমার নীরু আর পোস্ট করেছে শাকিল। চিঠিটা দেখে ইচ্ছে করছে এখনই ছুটে চলে যাই নীরার কাছে সেই টোল পরা হাসিটা দেখতে। চিঠিটা ভাজ করে বালিশের নিচে রেখে দিলাম। আগামী সপ্তাহে দুদিন ছুটি আছে। আগামী সপ্তাহেই ছুটে যাব জন্ম ভুমির পানে।
.
পোটলা পুঁটলী গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম। কতদিন যে হয়ে জন্মভূমি দেখিনা। কতদিন যে মায়ের হাতে ভাত খায়নি সেই সাথে কতদিন যে হয়ে গেল সেই টোল পরা হাসিটা দেখিনি। বাড়ি ফিরবার জন্য মনটা খুব উদগ্রীব হয়ে আছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না বাড়ি ফিরছি ততক্ষন পর্যন্ত এই উদগ্রীব ভাব কাটছে না। বাড়ি ফেরার আগে মায়ের জন্য একটা শাড়ি,, ভাইয়ের জন্য জামা জুতো আর নীরার জন্য এক ডজন নীল কাচের চুড়ি আর এক পাতা কালো টিপ কিনেছি!!
.
গাড়ি চলছে আপন। পাশের সীটে বসা লোকটার নাকে এতক্ষণ ঘুমের সুর শুরু হয়ে গেছে। এদের বুঝি ঘুমের মধ্যে ঘোৎ ঘোৎ শব্দ করা পেশা হয়ে গেছে,, সেই সাথে যেখানে যাবে রাজ্যের ঘুম সাথে নিয়ে যাবে,, ঘুম বুঝি এদের অর্ডার দেওয়াই থাকে,। চাইলেই এসে হাজির হয়ে যায়। আমার চোখে কোনও ক্লান্তি নেই। হয়তোবা বাড়ি ফেরার সুখেই।
বাসের জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাকি পথের দুরুত্ব আন্দাজ করলাম। এইতো আর বেশি দেরি নেই।
.
বাস থেকে নেমে নদীর ধার ধরে হাটছি। এলোমেলো এক বৈরী হাওয়া এসে গায়ে ধাক্কা দিচ্ছে। সামনের দিকে চেয়ে একলা মনে হেটে চলছি। হঠাৎ ছোট্ট একটা গর্তে পা পড়ে হালকা ধাক্কা খেলাম। ব্যাগের ভিতর থেকে চুড়ির ঠুনঠুন আওয়াজ ভেসে আসলো। মনে মনে হেসে উঠলাম। সামনে দেখি শাকিল কোথা থেকে যেন হেটে আসছে। আমাকে দেখেই থমকে গেল। হাসিখুশি মুখটা পানসে বর্নের হয়ে গেল। আমি নিজেই এগিয়ে গিয়ে বললাম কি রে দোস্ত কেমন আছিস? হঠাৎ মনমরা হয়ে গেলি যে?
শাকিলের চোখে পানি। আমি এবার রিতিমত বিস্মিত। শাকিল এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো। বন্ধুরে তুই আরেকটা দিন আগে আসতে পারলি নে.? কালকে নীরু তোকে খুজে না পেয়ে চলে গেল। " আমি সচকিত হয়ে শাকিলের কাধ ঝাকিয়ে বললাম, " কেন কি হয়েছে নীরুর???????
শাকিল এবার চোখ মুছে নরম হয়ে বললো, " প্রতি বিকেলে নীরু তোর আশায় ওই নীমতলীর ঘাটে বসে থাকতো, ঠিক তুই যেখানে বসতিস। কালকে নীরুকে সাপে কেটেছিলো। পাগলীটা আর ফিরলো না। তোকে না দেখার আক্ষেপ নিয়েই চলে গেল দুর বহুদুরে। "
আমি শাকিলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। যেদিন বোধহয় চোখের নোনা জলের ঢেউ শাকিলের কাঁধ স্পর্শ করেছিলো।
•
ডায়েরির পাতা ঘেটে নীরুর চিঠিটা খুজে বের করলাম। মনে হচ্ছে নীরু চিঠিটা কেবলমাত্র লিখে ডায়েরিতে লুকিয়ে রেখে গেছে। এতক্ষনে আমার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। ঠোঁটের কোনে নোনা পানির স্বাদ অনুভব করছি। এখন চিৎকার করে অব্যাক্ত কথাটা বলতে ইচ্ছে করছে, "নীরু তোমাকে অনেক ভালোবাসি। " শুনেছিলাম নীরুকে বকুল তলায় শায়িত করা হয়েছে, তবে আমি দেখতে যায়নি। হয়তো গেলে মাটি খুড়ে আবার টোল পড়া সেই হাসিটা দেখতে ইচ্ছে করবে। হঠাৎ কয়েকদিন আগে অফিস থেকে উপহার দেওয়া ফোনটা ক্রিংক্রিং শব্দে আর্তনাদ করে উঠলো। চোখ রগড়ে দেখি শাকিল। ফোনটা কানে লাগিয়ে বললাম, "হ্যালো " ওপাশ থেকে ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে ভেসে এলো, " দোস্ত আজকে নীরুর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী "
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŽāĻ্āĻāϞāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ģ āĻāĻĒ্āϰিāϞ, ⧍ā§Ļā§§ā§
482
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§ā§§:ā§Ļā§Ļ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ