আজ মেয়ে দেখতে আসবার পর মেয়েকে আর আমাকে যখন আলাদা করে ছাদে পাঠানো হলো কথা বলার জন্য,তখন মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করা আমার প্রথম প্রশ্নই ছিলো,
-আপনার চোখের কাজলটা কি আপনি নিজেই দিয়েছেন?
প্রশ্ন শুনে মেয়ের মুখের ভাব দেখে হাসি পেলো আমার। সে বোধহয় এরকম কোনো প্রশ্ন আশা করেনি!! তারপর মাথা নেড়ে বললো,
-না,আমি কাজল দিতে পারিনা। আপু দিয়ে দিয়েছে।
উত্তর শুনে আমার মুখে আর দ্বিতীয় কোনো প্রশ্নই আসলো না।এক তো মেয়ের কাজল পরা চোখটা ঠিক আমার মনের মতো,তার উপর সে নাকি কাজল পরতেই পারেনা! সম্ভব হলে মেয়ের বড়বোনকেই বিয়ে করতাম তাকে না দেখে,শুধু তার কাজল পরানো দেখেই। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে,এবাড়িতে আসামাত্রই মেয়ের বড়বোন তার আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে আমাদের অভ্যর্থনা করেছেন। সুতরাং....শুধু কাজল পরানোর জন্য নিশ্চয়ই কোনো বিবাহিতার ঘর আমি ভাঙবো না!!!.... মেয়ে দেখতে এসে আজ প্রথমবার মনে হয়েছিলো,আমার জীবনের একমাত্র প্রতিজ্ঞা বুঝি এবার পূরন হয়েই যাবে!!আমার একটা প্রতিজ্ঞা আছে। সেটা পূরন করতে চাই বলেই আজ অবধি বিয়ের জন্য কোনো মেয়েকে আমি হ্যা বলতে পারলাম না!! স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে কোনো মেয়ের দিকে খেয়ালই দেয়া হয়নি,যদিও আমার প্রতিজ্ঞা পূরন করবার মতো কাউকে চোখেও পড়েনি।
আমার জীবনের একমাত্র প্রতিজ্ঞা, আমি যাকে বিয়ে করবো,সে যেন ভীষন সুন্দর করে কাজল পরতে পারে। এমনিতে শুনলে মনে হবে,এ আর কঠিন কি! কিন্তু সত্যি বলতে,এটা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার,যেটা কিনা এখন পুরোমাত্রায় টের পাচ্ছি।
কাজল পরতে অনেকেই পরে,কিন্তু যেভাবে কাজল পরলে একটা মেয়ের চোখের ধরনটাই বদলে যায়,স্নিগ্ধতায় মনটা ভরে যায়,সেভাবে ক'জনে কাজল পরতে পারে!! আর এখানেই যতো ঝামেলা। যেমন কাজল পরা মেয়ে চাই,তেমনটা আর পাইনা।
আজ এই মেয়েটার কাজল পরা চোখদুটো দেখে একটা কথাই মাথায় ঘুরছিলো। "পাইয়াছি,ইহাকে আমি পাইয়াছি....।"
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভুল মানুষের ক্ষেত্রে লাইনটা মাথায় চলে এসেছে। মেয়ে তো নিজে কাজল পরতেই পারেনা! তাহলে বিয়ের পরে কিভাবে আমি কাজল পরা বউ কে প্রতিদিন দেখবো....আমার এতোদিনের প্রতিজ্ঞা তো পুরাটাই পানিতে যাবে একে বিয়ে করলে। এসব ভাবতে গিয়ে মেয়েকে নতুন প্রশ্ন করতে আর মনেই ছিলোনা। মেয়ে নিজেও আর কোনো প্রশ্ন করলোনা। একসময় ছাদ থেকে আমাদেরকে নিচে ডেকে নেওয়া হলো।
অদ্ভুত ব্যাপারটা ঘটলো তার পরে। নিচে ডাকবার পর যখন বিয়ের ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চাওয়া হলো,আমি কিনা হ্যা বলে দিলাম? আমি,এই আমি,যে কিনা আমার মনমতো কাজল পরতে পারা মেয়ে ছাড়া বিয়ে করবোনা ঠিক করেছিলাম,সে কিনা কাজল না পরতে পারা একজনকে হ্যা বলে দিলাম? কেন বললাম? উত্তরটা জানিনা।
যেহেতু একবার হ্যা বলে দিয়েছি,সুতরাং যথাসময়ে বিয়ে হয়েও গেলো। বিয়ের রাতে বউ জিজ্ঞাসা করলো,
-প্রথম যেদিন দেখতে আসলেন,কাজল পরতে পারি কিনা কেন বললেন,বলেন তো?
আমি আর কি করি। আমতা আমতা করে প্রতিজ্ঞার কাহিনি বলে দিলাম। শুনে মেয়ের সে কি হাসি! তার হাসি যেন থামতেই চায়না...চোখ বড়বড় করে হাসতে হাসতেই সে বললো,
- আমি সত্যিই কাজল পরতে পারিনা বুঝলেন! আপনার বুঝি এ জন্মে নিজ হাতে চোখে কাজল পরা বউ দেখা হবেনা!!
কে বলে কাজল পরাটাই মেয়ের চেহারা স্নিগ্ধ করতে পারে? এই হাসি,এমন হাসি কি এর আগে কাউকে হাসতে দেখেছি? মনে পড়েনা। বিয়ের রাতেই আমার প্রতিজ্ঞা ভেঙে আমি চোখের কাজল না,তার হাসির প্রেমে পড়লাম।
পরিশিষ্ট:
চোখ খুলে তাকাতেই দেখি,একজোড়া কাজলকালো চোখ আমার মুখের দিকে ঝুঁকে আছে। ঠিক আমার মনমতো কাজল,যেমনটা বিয়ের আগে সবসময় ভেবে এসেছি। চোখদুটো তো আমার বউয়ের। বাসায় অন্যকেউ নেই ও। তাহলে কাজল কিভাবে পরলো!
প্রশ্নটা করার আগেই বউ বললো,
-গত একবছর ধরে কাজল পরার প্র্যাকটিস করতে করতে তোমার মনমতো কাজল পরা শিখেছি,বুঝলে! আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী তে এর বেশি কোনো গিফট দেয়ার ইচ্ছা আমার নাই,হুহ!!
এরপরে আমি আর কি বলবো? এই ই কি ভালোবাসা? যারে ধরা যায়না,ছোঁয়া যায়না,শুধু কারনছাড়া আরো বেশি ভালোবাসতে হয়? যদি তা না ই হবে,তাহলে কেন একটা মেয়ে যুক্তিহীনভাবে একটা বছর ধরে,কাজল পরা শেখার মতো অদ্ভুত কাজটা শুধু আমার জন্য শিখবে? কেন?!
_ shuchita moumi
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ