āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ā§Šā§Ļ āĻāĻĒ্āϰিāϞ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

528

জোৎস্না ঘর
//
আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা মানুষটি আমার সামনে বসে আছে! আমি এখন ট্রেনে, রাত নয়টা দশ! গ্রাম থেকে ফিরছি! ট্রেনের ছোট্ট কামরায় আমরা স্রেফ দুইজন! আমার সামনের মানুষটি আমাকে না চিনলেও তাকে আমি খুব ভালো করে চিনি! আমার পছন্দের লেখক! নীল! ভয়ংকর সুন্দর সব প্রেমের উপন্যাস পড়েছি উনার! আমি নিজের গায়ে দুই মিনিট পর পর চিমটি কেটে দেখছি এটা স্বপ্ন নয়তো! মানুষটি জানালার ওপাশে চুপ করে তাকিয়ে আছে! আমার প্রচন্ড কথা বলতে ইচ্ছে করছে মানুষটির সাথে, কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছিনা! চরম উত্তেজনায় সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে! মানুষটি কিছুক্ষণ পর আমার দিকে তাকালো, তাকিয়ে বললো,
-- আপনি কি অস্বস্তি ফিল করছেন?
আমি বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে হড়বড় করে বলতে শুরু করলাম,
-- আমি আপনাকে চিনি! আপনার অনেকগুলো উপন্যাস পড়েছি! আপনাকে আমি ভয়ংকর পছন্দ করি! এখানে এভাবে আপনার দেখা পাবো, কখনো ভাবিনি! আমি কিছু গুছিয়ে বলতে পারছিনা সরি! আপনাকে একটু ছুঁয়ে দেখি...?
মানুষটি হাত বাড়িয়ে দিলো, আমি ছুঁয়ে দেখলাম মানুষটিকে! মানুষটি হাসছে! আমি বললাম,
-- আসলে একটুও বিশ্বাস হচ্ছিলো না! আমি রুপা! গ্রাম থেকে ফিরছি! আপনি কোথাও যাচ্ছেন..?
মানুষটি জানালার ওপাশে তাকিয়ে বললো,
-- নাহ! আমিও ফিরছি!
-- কোথায় গিয়েছিলেন?
-- জোৎস্না ঘর দেখতে!
-- জোৎস্না ঘর?
-- হুম। ধবধবে জোৎস্না এই ঘর টাকে যখন আলতো করে স্পর্শ করে, তখন চোখে অশ্রু আসে! এই অশ্রু আসার ব্যাপারটা উপভোগ করতেই ওখানে ছুটে যাই!
-- অশ্রু আসে কেন?
-- এটা যেমন তেমন জোৎস্না নয়, এই জোৎস্না ঐ ঘরটাকে স্পর্শ করার সময় কেমন যেন কান্না পায়, অদ্ভুত অনুভুতি!
-- জোৎস্না ঘরে আর কে থাকে?
-- শুধুই একটা গল্প থাকে! এই গল্পটি ভরা জোৎস্নায় একদম একা থাকতে পারেনা! তাই জোৎস্না হলেই ওখানে আমার নিমন্ত্রন থাকে।
-- বাহ! লাভ স্টোরি! হুমম?
মানুষটি চুপটি করে হাসলো, বললাম,
-- ইশশ! আমারও যদি একটা জোৎস্না ঘর থাকতো! মাঝে মাঝে কাঁদতে ইচ্ছে করে খুব, কান্না আসেনা..!
আমার কথা শুনে নীল হাসলো! আমি বললাম,
-- নেক্সট স্টেশন আসতে এখনো অনেক দেরি! চলুন গল্প শোনান! ওসব গল্প নয়! আপনার সব গল্প আমার পড়া! আপনি শোনাবেন আপনার প্রথম লেখা গল্পের পেছনের গল্পটা! কি? শোনাবেন....?
মানুষটি চুপ করে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-- শুনতে পারবেনতো?
-- অবশ্যই!
-- তবে প্রমিস করেন এই গল্পটা ট্রেনের এই ছোট্ট কামরায় বন্দি থাকবে, আর কোথাও যাবেনা!
-- প্রমিস!
আমি মানুষটির চোখের দিকে তাকিয়ে আছি, মানুষটি এবার আমার থেকে চোখ ফিরিয়ে জানালার ওপাশে রাখলো, তারপর ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
-- তুলি!
.......
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-- তুলি কে?
-- আমার বন্ধু! ভার্সিটি লাইফের সবচেয়ে ভালো বন্ধু! গল্পের পেছনের গল্প টা মেয়েটা কে ঘিরেই! ছোটবেলা থেকেই প্রচুর বই, উপন্যাস, গল্প পড়তাম! পড়তে পড়তে ভাবতাম এমন করেতো আমিও লিখতে পারি! তারপর সেই লেখালেখি করার শখ মাথায় চাপলো! জীবনের একমাত্র স্বপ্ন, লক্ষ্য, ইচ্ছে বানালাম "লেখক হওয়া!" প্রচুর গল্প লিখেছি ছোটবেলা থেকেই, আবোল তাবোল গল্প! কোনো এক বিখ্যাত সাহিত্যিক বলেছিলেন, একটা ভালো লেখক ভালো লেখার আগে কয়েকটা ডাস্টবিন ভরিয়ে পেলেন আবোল তাবোল লিখে! আমিও লিখেছি! সব অপ্রকাশ্য! কেউ জানেনা! লিখতে ভালো লাগতো, মনের খুশি মিশে ছিলো এটার মধ্যে! সেটা আর অন্য কারো মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার সাহস, স্পর্ধা হয়নি কখনো! স্কুল পেরিয়ে কলেজ তারপর ভার্সিটি! লেখার হাত ভালো হতে শুরু করলো! আমার স্বপ্নটা কখনো কাউকে জানানো হয়নি এতোদিন, তবে ভার্সিটি লাইফে এসে একটা মেয়ে হুট করে জড়িয়ে পড়লো এই স্বপ্নে!
-- কোন মেয়ে? তুলি?
-- হ্যাঁ! তুলি একদম আমার মতো! একিই স্বপ্ন, একিই ইচ্ছে এবং একিই লাইফ দু'জনের! দু'জনের পছন্দ অপছন্দ মিলে যেতো! তুলির জোৎস্না নিয়ে ছিলো অদ্ভুত পাগলামি! জোৎস্না নাকি ও একা উপভোগ করতে পারেনা! ওর সঙ্গী লাগে! এজন্য জোৎস্না রাতে আমার রাতের ঘুম হারাম করে ওর পাগলামো সহ্য করতে হয়! জোৎস্নায় হাঁটে ও, বকবক করে! আমায় চুপ করে শুনতে হয়! তুলি প্রথম মানুষ যে আমার স্বপ্ন সম্পর্কে জেনেছিলো, এবং আমিও তার টা জেনেছিলাম! দু'জনেরই ছিলো স্বপ্নপুরণে দৃঢ় মনোভাব! দু'জনই দু'জনের অপ্রকাশ্য লেখা পড়তাম! ভীষন ভালো বন্ধুত্ব ছিলো! সব ঠিক ছিলো, সমস্যা শুরু হলো ভার্সিটির একটা গল্প প্রতিযোগিতা নিয়ে! এটা যেমন তেমন প্রতিযোগিতা নয়, লেখালিখির অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম ছিলো! এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়াটা ছিলো স্বপ্ন পুরনের মতো! তিন পর্বের প্রতিযোগিতা! আরো দেড়শত ছাত্রছাত্রীর মতো আমরা দু'জনও অংশগ্রহন করলাম! বাছাই পর্বে দেড়শত থেকে পঞ্চাশ জনকে বাছাই করে নেওয়া হলো! আমরা দু'জনও ছিলাম! তারপর ২য় পর্বে পঞ্চাশ জন থেকে পঁচিশজন সিলেক্ট করা হলো! এখানেও দু'জন টিকে থাকলাম কারন লেখার মানের তুলনায় আমরা দু'জন অনেক এগিয়ে অন্য সবার থেকে! দু'জনের র্যাংকিং এর মধ্যে আমি ওর থেকে এক পয়েন্ট এগিয়ে! চুড়ান্ত পর্বের গল্পের জন্যে একটা সাবজেক্ট নির্দিষ্ট করে দেয়া হলো, ঘৃনা তবে বাস্তব! মানে ঘৃনা কে ঘিরে গল্প টা লিখতে হবে তবে ঘৃনা ভালো করে, বাস্তব করে ফুটিয়ে তুলতে পারাটাই প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার একমাত্র উপায়! গল্প লিখতে উঠে পড়ে লাগলাম দু'জনে! আমাদের কম্পিটিশন দু'জনের মধ্যে, অন্যদের কথা আমরা মাথায় ও আনিনি! আমার ভয় ছিলো আমার স্বপ্নপুরনের পথে কনফার্ম তুলি এসে পড়বে, কারন আমি তুলির লেখা পড়েছি! আমি জানি ওকে! তুলিরও ভয় ছিলো আমাকে নিয়ে! গল্প লেখার জন্যে পনেরো দিন সময় পেলাম! সাবজেক্ট টা আমার জন্যে প্রচন্ড কঠিন, আমি কখনো কাউকে ঘৃনা করিনি, কেউ করে এমন কারো সন্ধান ও পাইনি! রাতে শুয়ে থেকে একটা প্ল্যান কষলাম! স্বপ্ন পুরনের পথে যে বাধাটি আছে ঐ বাধা টিকেই স্বপ্ন পুরনের পথের উপায় হিসেবে রুপান্তর করবো!
......
আমি চুপ করে মানুষটির দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম,
-- তারপর?
-- পরদিন সকালে উঠে তুলিকে দেখা করতে বললাম। দেখা করতে আসলে ওকে বললাম, "তুই প্রতিযোগিতায় গল্প জমা দিবিনা!" তুলি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো, "কেন?" আমি বললাম, "আমি নিষেধ করছি তাই দিবিনা!" তুলি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলোনা! জিজ্ঞেস করলো, "তুই কতটা স্বার্থপর কখনো ভেবে দেখেছিস?" আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম, "আমার স্বপ্ন পুরনের পথের মাঝখানে তুই দাঁড়িয়ে আছিস! স্বার্থপর তুই! স্বার্থপর না হলে ঠিকই প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতি!" তুলি আমার দিকে কড়মড় করে তাকিয়ে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলো! যাওয়ার সময় বলে গেলো, "যদি কখনো ভাবতে ইচ্ছে করে যে তোকে প্রচন্ডরকম ঘৃনা করার কেউ আছে কিনা? তখন মনে করিস, কেউ একজন সত্যিই আছে, তোকে প্রচন্ডরকম ঘৃনা করে.....!"
নীল জানালার ওপাশে তাকিয়ে, আমি নীলের দিকে তাকিয়ে আছি, নীলের চোখ ভেজা ভেজা! আমারও! বললাম,
-- ক্ষমা চেয়েছেন পরে?
-- ঐদিন তুলি চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম ঘৃনা নামক ব্যাপারটা কতটা জঘন্য, ঘৃন্য অনুভুতির জন্ম দিতে পারে! এই কয়েকদিন আগে এই সাবজেক্ট কঠিন মনে হচ্ছিলো, গল্পই খুঁজে পাচ্ছিলাম না! আর এখন হাজার গল্প মাথায় এসে ভর করেছে! আমি গল্প লিখতে শুরু করলাম! গল্প লিখতে লিখতে খেয়াল করলাম আমি কাঁদছি! প্রচন্ডরকম কষ্ট হচ্ছে! গল্পের প্রথম প্যারা লিখেই আর লিখতে পারলাম না! ঠিক করলাম, কাল সকালে ক্ষমা চেয়ে নেবো তুলির কাছ থেকে আর জানিয়ে দেবো সব প্ল্যান ছিলো, ঘৃন্য অনুভুতি পাওয়ার জন্যে!
-- তারপর, ক্ষমা করেছিলো তুলি?
-- পরদিন সকালে তুলির কাছে যাওয়ার আগে তুলি আমার বাসায় হাজির! এসে বললো, "তোকে কখনো বলা হয়নি! আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের এইডস ছিলো, আর এটা জানার আগেই তার সাথে শুয়েছিলাম! রোগ টা পুষে রেখেছি এতোদিন নিজের মধ্যে! তোকে তো প্রায়ই বলতাম, একদিন হঠাৎ করে চলে যাবো!" আমি হতভম্ব হয়ে তুলির দিকে তাকিয়ে আছি! তুলি বললো, "আমি প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি, তবে একটা শর্ত আছে!" আমি চুপ করে শুনছি তুলির কথা! বললো, "শুতে হবে আমার সাথে তোকে! পারবি?" আমি চেনা মানুষটির অচেনা চেহারা দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি! আমি নাহয় ঘৃন্য অনুভুতি পাওয়ার জন্যে ভুলভাল বলেছি, মেয়েটি আমার থেকেও একধাপ নিচে নেমে গেলো! তুলির ডানগালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে স্বার্থপর বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম! রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষন কাঁদলাম! একটা মানুষ কিভাবে তার সবচেয়ে ভালো বন্ধুটির মৃত্যু কামনা করতে পারে!
-- তুলির এইডস ছিলো?
-- না! ওটা মিথ্যে ছিলো, সেটা পরে জেনেছি! সে ও আমার মতো প্ল্যান কষেছিলো! দু'জন একটা গেইম খেলছিলাম, দু'জনের অজান্তেই! একটা ঘৃনার গল্প লিখছি দু'জন, দু'দিক থেকে একে অপর কে ঘৃনা করে! আর বিধাতা আমাদের দু'জন কে নিয়ে অন্য একটা গল্প লিখছিলো সবার অজান্তে...!
.........
মানুষটি চুপ করে আছে! গল্প কি শেষ নাকি? অদ্ভুত! হঠাৎ মানুষটি জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-- ঘৃনা আর ভালোবাসার মধ্যে একটাই পার্থক্য! ঘৃনার পর ভালোবাসা হলেও হতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার পর কখনো ঘৃনা হয়না!
-- আপনারা তো একে অপরকে ঘৃনা করতেন!
-- নাহ! ঐ যে বললাম, ভালোবাসার পর ঘৃনা হয়না! আমরা দু'জন দু'জন কে প্রচন্ডরকম ভালোবাসি, নিজেরাও জানতাম না! আমাদের দু'জনের লেখা গল্পে শুধুই ঘৃনা ছিলো, কিন্তু উপর থেকে বসে যে মহাশক্তিধর আমাদের দু'জনের গল্প টা লিখছে, তার গল্পে ঘৃনা নয়, শুধুই ভালোবাসা ছিলো!
-- এরপর কি হলো?
-- দিন যাচ্ছে, আমাদের গল্প ও এগুচ্ছে! গল্প লিখতে লিখতে এই প্রথমবারের মতো খেয়াল করলাম, আমি কেউ একজন কে ঘৃনা করার যথেষ্ট কারন থাকা সত্ত্বেও ঘৃনা করতে পারছিনা! ওপাশ থেকে তুলিরও একিই অবস্থা ছিলো! প্রায় তেরোদিন তুলির সাথে কথা দেখা কিছুই হয়নি! চৌদ্দদিনের মাথায় তুলি আমার সাথে দেখা করতে চাইলো! দেখা করলাম! তুলি সামনাসামনি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো, "গল্প লিখেছিস?" আমি এই মেয়েটির চোখে চোখ রাখতে পারিনা, চোখ ফিরিয়ে বললাম, "হুম! তুই?" তুলি বললো, "লিখেছি!" এরপর দু'জনে চুপচাপ! কত কথা বলতাম আমরা, বকবক বকবক। আর এখন কথা খুঁজে পাচ্ছিনা!
-- পরেরদিন গল্প জমা দিয়েছিলেন?
-- হ্যাঁ।
-- তুলি?
-- ও দেয়নি! আমি জানতাম না! গল্প জমা দেয়ার শেষ সময় পনেরো তারিখ, ষোল তারিখ একটা চিরকুট পাই আমি! চিরকুট টা আপনাকে পরে পড়তে দেবো! সতেরো তারিখ মায়াপুরী পার্কের পাশের ছায়াঢাকা রাস্তাটায় দেখা হওয়ার কথা ছিলো আমাদের!
-- দেখা হয়নি?
-- হয়েছে! ওখানে নয়, আই সি ইউ তে..!
আমি চমকে উঠে মানুষটির দিকে তাকিয়ে আছি, মানুষটি চুপ করে জানালার ওপাশে তাকিয়ে বললো,
-- এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিলো! দেখা করতে আসার পথেই! আমাদের দেখা হয়েছে একটা আই সি ইউ তে, ওখানে কেউ এলাউড না! ডাক্তার আমার পরিচিত! আমার ভেজা চোখ অনেককিছু বুঝিয়ে দিলো তাকে! আমি চুপ করে তুলির পাশে গিয়ে বসলাম! আলতো করে কপালে একটা চুমু দিলাম। জ্ঞান ফিরে আসলো কিছুক্ষণ পরে! আমার দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে বললো,
-- ঘৃনার গল্প লেখা হয়নি আমার! পারিনি! তোর মতো করে স্বার্থপর হতে চেয়েছিলাম, সেটাও পারিনি! এই নীল, আমি যদি মারা যাই আমায় প্রতি জোৎস্নায় তুই দেখতে আসবি! একটু দুর থেকে চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখবি! কথা বলবিনা, কাঁদবিও না! আসবি? ভরা জোৎস্নায় আমার একদম একা থাকতে ইচ্ছে করেনা!" আমি কাঁদছি, তুলির চোখেও জল! বললো, "খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছে রে, প্রতিযোগিতার রেজাল্ট পর্যন্ত বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে, তোর হাতে একটা ক্রেস্ট, সেরা লেখক, মুখে হাসি! খুব দেখতে ইচ্ছে করছে রে...!"
আমি চুপ করে শুনছি, একটা কথাও বলতে পারছিনা! মানুষটির দিকে শুধু হা করে তাকিয়ে আছি, মানুষটি জানালার ওপাশের জোৎস্নায় কি খোঁজে কে জানে! ধরা গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
-- এরপর?
মানুষটি অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
-- তুলি মারা গেলো রেজাল্টের দিন! আমি রেজাল্ট শুনতে ও যেতে চাইনি! ওর জন্যেই যাওয়া! প্রথম হয়েছি প্রতিযোগিতায়! ক্রেস্ট হাতে এসে ওর পাশে বসেছি, ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসলো! তারপর ফিসফিস করে বললো, "ভালোবাসি তোকে খুব, তোর তো স্বপ্ন পুর্ণ হলো! এবার একটু জড়িয়ে ধরবি আমায়? প্লিজ.." আমার চোখে অশ্রু, জড়িয়ে ধরলাম আলতো করে! মেয়েটি নেই! কত সহজে হুট করে একটা মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়....!
........
মানুষটি কাঁদছে, আমিও কাঁদছি! অনেকক্ষণ হলো, দু'জন চুপ! তারপর মানুষটি একটি ছোট্ট চিরকুট আমার দিকে এগিয়ে দিলো, ঐ চিরকুট টা। তুলি যেটা দিয়েছিলো! চিরকুটে লেখা, "তোর স্বপ্নে আমি বাধা হইনি, আমি গল্প লিখিইনি, কি জমা দেবো! মানুষ বদলায়, আমি স্বপ্ন বদলেছি তোর জন্যে! আমার এখন স্বপ্ন কি জানিস? কাল সতেরো তারিখ! দেখা করবি আমার সাথে? আমার স্বপ্ন টা যে তোকে ঘিরে। একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো, তারপর আর ছাড়বোনা! এটাই আমার স্বপ্ন! আমি তোর স্বপ্নে বাধা হইনি, তুই প্লিজ আমার স্বপ্নে বাধা হোস না! আসছি কাল, মায়াপুরী পার্কের পাশের রাস্তায়! দেখা হবে.....!"
আমার চোখ থেকে টুপ করে অশ্রুফোঁটা চিরকুটে পড়লো! মানুষটি বললো,
-- ও বলেছিলো ও গল্প লিখেনি, মিথ্যে বলেছিলো! গল্প লিখেছিলো, ওর জমা না দেয়া গল্প টা পড়েছিলাম আমি! আমার গল্প থেকে দশগুন বেশি সুন্দর ছিলো! এই গল্প জমা দিলে আমি কখনোই প্রথম হতাম না..!
-- ওর গল্পের নাম কি ছিলো? গল্প টা আমি পড়তে পারি?
-- না। এই গল্প শুধু আমি পড়েছি, আর কেউ পড়েনি কখনো পড়বেওনা! এটা ওর অপ্রকাশ্য গল্প আর আমার অপ্রকাশ্য কষ্ট, অনুভুতি! গল্পের নাম ছিলো, "জোৎস্না ঘর!" ওর কবরের সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে, জোৎস্না ঘর! ধবধবে জোৎস্নায় ওখানে আমার নিমন্ত্রন থাকে! আমি ছুটে যাই! ভরা জোৎস্নায় তুলির যে একদম একা থাকতে ইচ্ছে করেনা! ঐ ক্রেস্ট টা জোৎস্না ঘরের পাশে স্বযত্নে রেখে দিয়েছি! এটা আমার নয়, কখনো ছিলোও না....!
..........
মানুষটি চুপ করে জানালার ওপাশে তাকিয়ে, আমি চিরকুট হাতে মানুষটির দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- আচ্ছা, নেক্সট টাইম জোৎস্না ঘর দেখতে যাওয়ার সময় কেউ একজন আপনার পাশে থাকলে তুলি কি ভীষন রাগ করবে?
মানুষটি অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
-- না! তবে জোৎস্না ঘরে শুধু আমারই নিমন্ত্রণ থাকে, এই জোৎস্নাকে আমি ছাড়া অন্য কাউকে সহ্য করার ক্ষমতা দেয়া হয়নি...!
আমি মানুষটির দিকে তাকিয়ে আছি। ট্রেন ছুটছে ঝিকঝিক ঝিকঝিক! কখনো কেউ জানবেনা, একটা ছোট্ট গল্প ট্রেনের এই ছোট্ট কামরায় বন্দি হয়ে আছে! কেউ জানবেনা ধবধবে জোৎস্নায় কারো কারো জোৎস্না ঘরে অদ্ভুত নিমন্ত্রণ থাকে! গল্পগুলো মানুষ লিখে, গল্পের পেছনের গল্প গুলো উপর থেকে বসে মহাশক্তিধর কেউ একজন লিখে! দুই গল্পে অনেক তফাৎ! দুই গল্প দুইজন কে হয়তো আলাদা করে, তবে জোৎস্না ঠিকই এসে মিলিয়ে দেয় দু'জন কে! জানালার ওপাশের জোৎস্নায় চোখ রাখলাম আমি, আজ কেন জানিনা এই ধবধবে জোৎস্নায় ভীষন ভিজতে ইচ্ছে করছে...!
//
লেখাঃ Shakhawat Hossen (Shohag)

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ