গল্পঃ #এমন_ও_তো_প্রেম_হয়
,
মেসে বসে একটা বই পড়ছি। যখন অবসরে থাকি তখন বই হলো আমার অবসর কাটানোর একটা প্রিয় উপায়। গতকাল থেকে অফিস কিছুদিনের জন্য ছুটি দিয়ে দিয়েছে, তাই হাতে তেমন কোনো কাজ নেই। এমন সময় রাহুল আসলো আমার কাছে। ও আমার রুমমেট। শুধু রুমমেট বলা যায় না, ও আমার ভালো বন্ধু, তাছাড়া আমরা একই অফিসেই জব করি। আর আমার নাম নয়ন। ঢাকায় একটা কোম্পানিতে জব করি।
>> তো এখন কী করবি ভেবেছিস.? আমিতো পরশুদিন চলে যাবো। (রাহুল)
-- হুম, কি করবো এখনো কিছু বুঝতে পারছি না। (আমি)
অফিস কিছুদিনের জন্য বন্ধ। তাই পরশু দিন রাহুল তার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি চলে যাবে। এখন আমি কোথাই যাবো সেটা নিয়েই চিন্তা করছে রাহুল। অাসলে আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তা অবশ্য নয়। আমার ও ফেনীতে নিজের বাড়ি ঘর জায়গা জমি আছে, তবে ওখানে আমাকে আগলে রাখার মত কেউই নেই। মা বাবার একমাত্র ছেলে ছিলাম আমি। ছোটবেলাতেই মা মারা যায়। বাবার হাত ধরে কনোমতে বড় হলাম। কিন্তু গত দু মাস আগে আমাকে পৃথিবীতে সম্পুর্ন একা করে বাবা ও পরপাড়ে পাড়ি দেয়। এখন শুধু নিজের বাড়ি ঘর ই আছে, ওখানে আনন্দে কারো সাথে ছুটি কাটাবো এমন কেউই নেই। তাই আমি ছুটিতে কোথাই যাবো তা এখনো ঠিক হয় নি, আর একা একা মেসেও আমার দিন কাটবে না, তাই আমাকে নিয়ে রাহুল খুবই চিন্তার মাঝে আছে।
>> আমি একটা কথা বল্লে শুনবি...?? (রাহুল)
-- সব কথাই তো শুনছি, বল কি বলবি,,
>> বলছি, তুই আমার সাথে আমার বাড়িতে চল। ওখানে খুব সুন্দর পরিবেশ, তোর অনেক ভালো লাগবে।
--......................
>> কি হলো কিছু বলছিস না যে..?
-- কি বলবো..?
>> কী বলবি মানে..? তুই আমার সাথে যাবি কি যাবি না...??
-- ভেবে দেখি,,
>> হুম,,,তাই দেখ।
,
এবারের ছুটি টা খুব সমস্যায় ফেলে দিলো। এখন ছুটিতে কোথাই যাবো এটা নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে। একা একা মেসে থাকতেও ভালো লাগবে না, আবার বাবার রেখে যাওয়া খালি বাড়িতেও এখন আর মন টিকবে না, তাই রাহুলের সাথে ওর বাড়ি যাওয়াই ভালো হবে। ওখানে ভিন্ন পরিবেশে ভালোই লাগবে। তাছাড়া ওর বাড়ি খাগড়াছড়িতে, ওসব এলাকায় খুব একটা যাওয়া হয় নি, আমার পাহাড়ী এলাকার প্রতি ছোটবেলা থেকেই অনেক অাকর্ষন রয়েছে। তাই ওখানে যেতে রাজি হয়ে গেলাম।
,
আজ দুজন খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। অনেক দূরের পথ তাই খুব সকালেই বেরিয়ে গেলাম। বাসে উঠেই দিলাম ঘুম। বাসে বসে ঘুমানো টা আমার অভ্যাস না, গতকাল রাতে ভালো ঘুমাতে পারি নি, তাই বাসে একটু হেলান দিয়ে বসতেই ঘুম পেয়ে গেল।
,
কতক্ষন ঘুমিয়েছি তা ঠিক জানি না, রাহুলের ধাক্কাতেই ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুমটা কেন ভাঙ্গালো তা ওর কাছ থেকে জানতে চাইলাম,
>> আরে ব্যাটা জীবনে অনেক ঘুমাতে পারবি,, বাইরের এই সুন্দর দৃশ্য খু্ব একটা দেখতে পাবি না।
তাইতো,, বাইরের এই মোনোরম দৃশ্যটা যদি না দেখি তাহলে যে এখানে আসার কোনো মুল্যই নেই। রাহুল কে একটা ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার, এই সুন্দর দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য, কিন্তু দিলাম না। কারো জন্য ধন্যবাদ সহজেই আমার মুখ দিয়ে আসে না। কেন সেটা আমি নিজেও জানি না। যাইহোক আমার ধন্যবাদে ওর কিছু যায় আসে না। জানালার পাশেই বসেছিলাম, তাই বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে তেমন কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। চারিদিকে সবুজে ঘেরা বড় বড় পাহাড়। পাহাড়ের মাঝে উঁচু নিচু রাস্তা। আর এই উঁচু নিচু রাস্তা দিয়েই আমাদের গাড়ি চলছে। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে আমার মনটা যেন খুব হালকা হয়ে গেল। অনেক দিন পর নিজেকে খুব উৎফুল্ল লাগছে। মাঝে মাঝে ছোট খাটো কিছু বাজার চোখে পরছে, আর তাতে দেখা যাচ্ছে বিচিত্র রকমের মানুষ। যেতে যেতে ভারত বাংলাদেশের সিমান্ত ও চোখে পরলো। কিছুক্ষন পর গাড়ি একটা রেষ্টুরেন্টের সামনে থামলো, আমরা দুপুরের খাওয়া শেষ করে আবার উঠে পরলাম।
,
বিকেল বেলা গাড়ি খাগড়াছড়ি এসে থামলো। আমরা গাড়ি থেকে নেমে আরেকটা বাসে করে রওনা হলাম দীঘিনালার উদ্দেশ্যে। দীঘিনালায় পোঁছে একটা অটোতে উঠে উপজেলার পাশে নামলাম। আসার পথে অনেক দৃশ্যই চোখে পরলো, ক্লান্ত থাকায় তা আর এতো ভালো করে পর্যবেক্ষন করি নি। এখান থেকে রাহুলদের বাড়ি আর দুই মিনিটের পথ। তাই হেঁটে ওদের বাড়ি পর্যন্ত আসলাম।
,
বাড়িতে এসেই রাহুল তার বাবা মা কে সালাম করলো, আমিও সালাম দিলাম। রাহুল তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। ওর বাবাকে দেখতেই বোঝা যায় বয়স ষাটের অধিক। গম্ভির চেহারার অধিকারি। সাদা পান্জাবী পরা, মাথায় টুপি। আমাকে দেখতেই রাহুলকে জিজ্ঞেস করলো,,
-- ছেলেটা কে..?
>> বাবা ও আমার বন্ধু। আমরা এক অফিসেই জব করি। আসলে কিছুদিন আগে ওর বাবা মারা গেছে তো, তাই ছুটি কাটাবার মত কেউ নেই। ওর মা ও ছোটবেলায় মারা গেছে। তাই ওকে আমার সাথে নিয়ে এসেছি।
-- হুম,,খুব ভালো করেছিস। এসো বাবা এসো।
খুব মায়া ভরা কন্ঠে আমাকে কথা গুলো বললো। উনাকে দেখে বাবার কথা মনে পরলো। বাবাও ছিলেন ওনার মত গম্ভির চেহারার মানুষ। খুব দয়ালু মানুষ ছিলেন। রাহুলের মা ও ছিলেন খুব দরদী মহিলা। আসতে না আসতেই খুব আদর শুরু করলেন।
এসে খুব ক্লান্ত লাগছিলো তাই সেদিনটা শুয়ে বসেই কাটিয়ে দিলাম।
,পরেরদিন সকালে আংকেলের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।
>> বাবা, এতক্ষন ঘুমানো তো শরীরের পক্ষে ভালো না। সকাল বেলা উঠে একটু বাইরে হেঁটে আসতেই তো পারো। শরীরটা খুব ফুরফুরে লাগবে।(আংকেল)
-- আসলে আংকেল, একটু ক্লান্ত ছিলাম তো, তাই ঘুম ভাঙ্গতে একটু দেরী হয়ে গেলো।
>> হুম বুঝেছি। যাও উঠে ফ্রেশ হয়ে আসো, তারপর নাস্তা করবে। আমরা সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
-- জ্বী আচ্ছা।
ভেবেছিলাম উনি খুব চুপচাপ স্বভাবের মানুষ হবে। চেহারা দেখে তাই মনে হয়। গম্ভীর চেহারার মানুষরা সাধারনত চুপচাপ স্বভাবের হয়ে থাকে। কিন্তু উনি তেমন নয়। মানুষকে খুব সহজেই আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা ওনার আছে। যাইহোক, ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখি সবাই আমার অপেক্ষা করছে।
-- আপনারা শুধু শুধু আমার জন্য অপেক্ষা করতে গেলেন কেন আন্টি.? আপনারা নাস্তা করে নিতেই পারতেন।
>> কী যে বলো বাবা। তুমি আমাদের অতিথি। তোমাকে রেখে আমরা কিভাবে খেয়ে নিতে পারি বলো..? তাছাড়া আমারা একা মানুষ। দুইজন মাত্র থাকি। তুমি এসেছ খুব খুশি খুশি লাগছে।
আমি ওনাদের কথা শুনছি আর অবাক হচ্ছি। বর্তমান দুনিয়ায় এমন মানুষ ও হয়.?
,
নাস্তা সেরে আমি আর রাহুল বের হলাম তাদের এলাকা টা ঘুরে দেখতে। খুব সুন্দর জায়গা। এ এলাকায় বাঙালির চেয়ে আদিবাসি মানুষরাই বেশি। হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। এমন সময় রাহুলের ফোনটা বেজে উঠলো, আমার দিকে তাকিয়ে ও একটা হাসি দিয়েই একটু দূরে চলে গেল। আমি যা বোঝার বুঝে নিলাম। নীলা ফোন করেছে। ওর গালফ্রেন্ড, এই এলাকায় নাকী থাকে, তবে আমি কখনো দেখি নি। ও কথা বলছে আর আমি রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে আমার চোখ আঁটকে গেল। মেয়েটি রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে সাইকেল চালিয়ে আসছে। মেয়েটি খুব একটা ফর্সা না, ও ছিলো শ্যামলা, তবে ওর চেহারাটা ছিলো দারুন মায়াবি। যে কাউকে মায়ায় আবদ্ধ করার জন্য ওই চেহারাটা যথেষ্ট। আমি অপলকে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটি সাইকেল চালিয়ে আমার সামনে এসে সাইকেলটা থামালো আর ভ্রুঁ কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আবার চলে গেল। মনে হয় আমার একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকা দেখে মেয়েটি বিরক্ত হয়েছে।
,
এতক্ষনে রাহুলেরও কথা শেষ হয়েছে। ওকে মেয়েটির ব্যাপারে কিছু বললাম না।
>> আজ তোকে তোর ভাবীর সাথে দেখা করিয়ে দেব। (রাহুল)
-- ভাবী.!! কোন ভাবী.?
>> আরে নীলার কথা বলছি।
-- ও, তাই বল। তো আমার সাথে দেখা করাবি.? না তুই দেখা করবি.?
>> হে হে,, দুইজনেই দেখা করবো।
-- কখন করবি..?
>> বিকেলে,
-- ও, আচ্ছা।
তখনকার মত দুজন বাড়ি চলে এলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর বিকেল বেলা দুজন আবার রওনা হলাম নীলার সাথে দেখা করার জন্য। হেঁটে হেঁটে আমরা একটা জায়গায় এসে পোঁছালাম জায়গাটা খুব সুন্দর। চারিদিকে সবুজ ঘাস। এখানে অনেক প্রেমিক যুগলকে দেখা যাচ্ছে তারা প্রেমালাপ করছে। তবে এদের মধ্যে তেমন কোনো বাঙালী প্রেমিক প্রেমিকা কে দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশই চাকমা।
নীলা এখনো আসে নি। তাই আমরা দুজন বসে আছি। বসে বসে অন্যদের কর্মকান্ড দেখছি।
>> ওই যে,,নীলা আসছে। (রাহুল)
দুজন মেয়েকে দেখা যাচ্ছে, তবে ওই দুজনের মাঝে সকালের দেখা শ্যামলা মেয়েটিও আসছে।
-- নীলা কোনটা.?
>> ওই যে বামদিকের টা।
-- পাশের টা কে..?
>> ওর চাচাত বোন পাখি।
-- ও,
তারমানে সকালের দেখা ওই শ্যামলা মেয়েটা নীলার চাচাত বোন। ওরা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো, আর রাহুলের মুখে হাঁসি ফুটলো। অামাকে রাহুলের সাথে দেখে পাখি অনেকটা অবাক হয়েছে। তারপর আবার ভ্রু কুঁচকে রাহুলকে জিজ্ঞেস করলো,,
~ এই চার চোখাটা কে.?
পাখির এমন কথায় আমিও কিছুটা অবাক হলাম। ছোটবেলা থেকেই চশমা পড়তাম বলে ছোটবেলায় বন্ধুরা দুষ্টুমি করে আমাকে চারচোখা বলতো। এখন মেয়েটিও বলছে।
>> ও আমার বন্ধু নয়ন। (রহুল)
~ তা, নয়নের নয়ন চারটে কেন.? (পাখি)
= থামতো,, যেখানে সেখানে দুষ্টুমি করিস না। তা আপনিই বুঝি নয়ন.? রাহুলের সাথে একসাথে থাকেন.? (নীলা)
-- জ্বী হ্যাঁ।
= ও,, রাহুলের কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি।
-- তাই না কী.?
= হ্যাঁ।
-- ও,,,,আচ্ছা, আপনারা কথা বলুন আমি ও দিকটা একটু ঘুরে আসি।
= আচ্ছা।
ওখান থেকে চলে আসলাম। কেন জানিনা মেয়েদের মাঝে থাকতে আমার একটা অস্বস্তি হয়। মেয়েদের সাথে তেমন কথাও বলতে পারি না। হয়তো ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের এড়িয়ে চলতাম বলে এমনটা হয়। যাইহোক হাঁটতে হাঁটতে ওদের কাছথেকে একটু দূরে এসে বসেছি। আপাতত এখানে তেমন মানুষ জন নেই। বসে বসে মোবাইলে গেমস খেলছি। এভাবে মিনিট দশেক বসে বসে গেমস খেলছিলাম। হঠাৎ আমার পাশেই দেখি একটা সাপ। অামিতো ভয়ে অজ্ঞান হওয়ার অবস্হা। আমি ছোটবেলা থেকেই সাপকে যমের মত ভয় পাই। আমি সাপ সাপ বলে চিৎকার করতে লাগলাম। এমন সময় কোথাথেকে পাখি এসে একটা লাঠি দিয়ে মেরে মেরে সাপটাকে মেরে ফেলে। আর আমি যেন জীবন ফিরে ফেলাম।
~ হা হা হা,, একটা ধোঁড়া সাপ দেখে আপনার এ অবস্হা।
-- জ্বী,,,আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আসলে ছোট বেলায় একটা সাপের কামড় খেয়েছিলাম, তখন থেকেই সাপকে আমি ভয় পাই।
~ ও,,, তাই না কী..? এখানে অনেক সাপ আছে। একটু সাবধানে চলা ফেরা করবেন।
-- হুম।
~ এখন চলুন আমার সাথে।
-- কোথায়..?
~ এতো প্রশ্ন করবেন না তো,,, আসুন।
,
আমি বাধ্য ছেলের মত ওর সাথে যেতে লাগলাম। ও আমাকে একটা দোকানের সামনে নিয়ে আসলো। একটা টুল এগিয়ে দিয়ে আমাকে বসতে বল্লো। আমিও বসলাম, আর ও আমার মুখামুখি বসলো।
>> পরিমল দা,,,আমাদের দুইটা চা দাও। (দোকানী কে বল্লো)
~ লোক টা কে.? (দোকানী)
>> আমাদের গ্রামের অতিথি। (পাখি)
-- আসলে আমার এখন চা খেতে ইচ্ছে করছে না। (আমি)
>> আরে, খেয়ে নিন। আমাদের এলাকার সবচেয়ে সেরা চা।
আমি আর না করলাম না, দোকানী দুজন কে চা দিলো। আমি চা খেতে খেতে আশে পাশের দৃশ্য দেখছি। সত্যি চা টা চমৎকার হয়েছে। মেয়েটি আমার দিকে একপলকে চেয়ে আছে, আর চা পান করছে। আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। কেউ যদি একজনের উপর একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে অস্বস্তি তো হবেই, তারওপর আবার মেয়ে।
>> আচ্ছা আপনার চশমা টা একটু খোলেন তো। (পাখি)
-- কেন..?
>> খুলতে বলছি খোলেন, আবার এতোকথা বলছেন কেন..?
-- না মানে, আমি চশমা ছাড়া তেমন ভালো দেখতে পাই না।
>> ভালো দেখতে হবে না, খোলেন।
চশমা টা খুলে হাতে নিলাম। কিন্তু কেন খুলতে বল্লো তা বুঝলাম না। ঝাপসা চোখে দেখলাম মেয়েটি আমার দিকে আবার একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ততোক্ষনে আমাদের চা খাওয়া হয়েগেছে।
>> হুম,,,এবার চশমা টা দিতে পারেন।
চশমা টা আবার চোখে লাগিয়ে নিলাম। এই মেয়েটা একটু বাচ্চা বাচ্চা টাইপের।
,
সেদিনের মত ওখান থেকে বাড়িতে চলে এলাম। আমার নিজের রুমে বসে আছি, এমন সময় রুমে রাহুলের বাবা আসলো।
>> বাবা, তোমায় বিরক্ত করলাম না তো..?
-- আরে না না আংকেল, কি যে বলেন। বিরক্ত হবো কেন..?
>> হুম,,,বাবা, তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেবে তো..?
মনের মধ্যে খটকা লাগলো, আমাকে কী এমন কথা জিজ্ঞেস করবে যার জন্য অনুমতি নিতে হবে.? তারপর ও আংকেল কে বল্লাম,,
-- জ্বী আংকেল দেবো,, বলুন।
>> আসলে বাবা,, আমি কিছু দিন ধরে খেয়াল করছি, রাহুল একটা মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলে। আমার ধারনা রাহুল ওই মেয়েটাকে ভালোবাসে, আশা করি আমার ধারনা সঠিকই হবে,, তুমি বলো তো মেয়েটা কে..?
আমি বলবো কী বলবোনা একটা দোটানায় পরে গেলাম, তারপর ও ভাবলাম আংকেল যা করবেন রাহুলের ভালোর জন্যই তো করবেন। তাই নীলার কথাটা বলে দিলাম।
-- আসলে আংকেল,, মেয়েটির নাম নীলা। এই এলাকায় থাকে। তবে মেয়েটির আর কোনো পরিচয় তো আমার জানা নেই। তবে একদিন রাহুলের মুখে নীলার বাবার নাম আসাদুজ্জামান চৌধুরী, শুনেছি।
>> আসাদের মেয়ে.!! মেয়েটি তো খুব ভালো, শান্ত স্বভাবের মেয়ে। তাছাড়া শিক্ষিত ও বটে।
আংকেলের কথায় বোঝা যাচ্ছে নীলাকে রাহুলের বৌ করে নিতে ওনার কোনো আপত্তি নেই।
-- আংকেল আপনি কী রাহুলের বিয়ের কথা ভাবছেন..?
>> হুম,,আমরা আর কতো দিন একা একা থাকবো বলো..? তাই ভাবছি আগামী দু তিন মাসের মধ্যেই ওর বিয়েটা সেরে ফেলবো। তাছাড়া পাত্রি তো রাহুলের পছন্দ করাই আছে। তবে তুমি ওকে ওর বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলো না।
>> জ্বী আচ্ছা।
যাক,,,রাহুলের প্রেম পূর্নতা পেলো। ছেলেটা খুব খুশি হবে।
,
আজ শনিবার, অাংকেল বল্লো আজ ওনার সাথে বাজারে যেতে। শনিবারে এখানে বড় বাজার বসে। যদিও আমার তেমন বাজারে যাওয়ার কোনো অভ্যেস নেই। তো সকালে আমি রাহুল আর আংকেল রওনা হলাম বাজারের উদ্দ্যেশ্যে। বাজার এখান থেকে খুব একটা দূরে নয়। যাওয়ার পথে আবার পাখির সঙ্গে দেখা হলো।
>> কেমন আছেন চাচা.? (পাখি)
~ ভালো আছি মা,,তুমি কেমন আছ..? (আংকেল)
>> জ্বি ভালো,,,কোথাই যাচ্ছেন..?
~আর বলো না মা,,এই গাধা দুটোকে নিয়ে যাচ্ছি, বাজার করা শেখাতে।
>> হি হি হি,,,জ্বী তাই করুন,,,গাধাদের ঘোড়া বানিয়ে আসুন,,,হি হি হি।
এই কথা বলে ও চলে গেলো। আর যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে দিয়ে চলে গেলো। এই মেয়ের কাজ কারবার কিছুই বুঝতে পারি না। শুধু এই মেয়ের কেন.? কোনো মেয়েরই কাজ কারবার আমি বুঝতে পারি না।
,
যাইহোক, বাজারে গেলাম, গিয়ে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। এতো মানুষ আর এতো দোকানপাট দেখলে সবারই মাথা ঘুরে যাবে। বাজারের বেশির ভাগ মানুষই আদিবাসী। তারা বিভিন্ন জিনিস বিক্রয় করছে। সেদিন একগাদা বাজার করে বাড়িতে ফিরলাম। কি কি বাজার করলাম নিজেও জানি না। আংকেল অবশ্য সব বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু ওটা এক কান দিয়ে ঢুকেছে, অন্য কান দিয়ে বেরিয়েছে।
এভাবে কিছুদিন কেটে গেলো। এখন পাখির সাথে আমার প্রায়ই কথা হয়। ও আমাকে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছে। এখন অবশ্য ওকে দেখে আর অস্বস্তি হয় না। তবে ওকে দেখে এখন অন্য একটা অনুভূতি হয়। অনুভূতিটা কী তা আমি এখনো বুঝতে পারছি না।
,
আগামীকালই ঢাকায় চলে যাবো। তবে যতই সময় পার হচ্ছে ততই বুকে একটা চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। কাল সকাল বেলা রওনা হবো। পাখিকে দেখলাম আজ আমার চারপাশে ঘুর ঘুর করছে। ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ওর মন খারাপ। ওকে যতই দেখছি ততই আমার চিন চিন ব্যাথাটা বেড়েই চলেছে, বুকের মাঝে যেন কেউ একজন হাতুড়ি পিটাচ্ছে।
>> আপনি কাল চলে যাবেন...? (পাখি)
-- হ্যাঁ,,,,
>> আরো কয়দিন থেকে যেতে তো পারেন।
-- না,,,ছুটি শেষ।
>> ও,,,,,আর কিছু বলবেন..?
-- না,,,কী আর বলবো..? ভালো থাকবেন।
>> আর কিছু বলার নেই.?
-- না,,
ও আর কিছু বল্লো না, শুধু জোরে জোরে দুটো নিশ্বাস নিলো, আর মন খারাপ করে চলে গেল। ও চলে যাওয়ার সাথে সাথে যেন আমার কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছিলো। কেন এমন হচ্ছে..? এটা কী প্রেম.? না কী অন্যকিছু।
এর পরের দিন সকাল সকাল আমরা যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলাম। আংকেল আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম। আন্টিতো কেঁদেই দিলেন। আর আংকেল আমার হাত দুটো ধরে বার বার আমাকে অনুরোধ করছেন যেন আবার ছুটি দিলেই রাহুলের সাথে এখানে চলে আসি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। মনটা যেন খুব ভারি ভারি লাগছে। এমন মনে হচ্ছে যেন আমার হৃদয়ের বিশাল এক অংশ রেখে চলে যাচ্ছি। আমার চোখ দুটো পাখিকেই খুঁজছে। কিন্তু ওকে দেখতে পাচ্ছি না। বাড়ি থেকে বের হয়ে হেঁটে একটু এগুতেই দেখলাম পাখি দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ দুটো লাল লাল ফোলা ফোলা। যেন সারারাত ঘুমায় নি। শুধু কেঁদেছে।
ও আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার চোখের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর চোখের জল গড়িয়ে গাল বেয়ে নামছে। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার চোখ দিয়েও জল পরা শুরু হয়েছে। আমার আর কিছুই বুঝতে বাকী রইলো না। শুধু গানের একটা লাইন মনে পড়ছে :-
,,,,,,,,এমনও তো প্রেম হয়,,,,,,,,,,,
,
,,,,,,,চোখের জলে কথা কয়,,,,,,,,
ঠিক ওর চোখের জল আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে ও আমাকে কতটা ভালোবাসে। হঠাৎ ও আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো আর ক্রন্দনরত কন্ঠে আমাকে বলতে লাগলো,,
তোমার চেহারা দেখেই আমি বুঝেছিলাম তুমি বোকা, কিন্তু তুমি এতোটা বোকা বুঝতে পারি নি। তুমি বোঝো না সেই কবে থেকে তোমাকে ভালোবাসি। কত বোঝানোর চেষ্টা করেছি,আর তুমি কিছুই বোঝো না।
~ এই যে, এখানে কী বোঝানো হচ্ছে..? (রাহুল)
>> অাপনার গাধা বন্ধুকে ভালোবাসা বোঝানো হচ্ছে। আপনি দূরে থাকেন। (পাখি)
-- হুম,,,বোঝান বোঝান,,,ও এই জিনিসটা একটু কম বোঝে ভালোকরে বোঝান। (রাহুল)
~ থাক মা,,,এখন আর বেশি কিছু বোঝানোর দরকার নেই। আর যা যা বোঝানোর তা বিয়ের পর বুঝিয়ে দিও।
আর এই যে বাবা নয়ন। আমি ভাবছি আগামী দু তিন মাসের মধ্যে আমার দুই ছেলের বিয়ে সেরে নেবো। তোমরা বিয়ের জন্য প্রস্তুত হও।
-- জ্বী আংকেল (আমি)
~ তুই তো দেখছি সত্যিই গাধা। আমি তোকে ছেলে বলে সম্বোধন করলাম আর তুই এখনো আংকেল বলছিস..?
আমি আর কিছু না ভেবে রাহুলের বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলাম। সত্যিই এমন মানুষ লাখে একটা হয়।
~ হয়েছে বাবা,, এখন গিয়ে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হও আর আমি পাখির বাবার সাথে কথা বলে সব ঠিক করছি।
,
অতপর তিন মাস পর আজ পাখি আমার স্ত্রী। ভাবতে এখনো অবাক লাগে কী থেকে কী হয়ে গেল। নাহ,,,রাহুল কে একটা ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার যার জন্য আজ এতো কিছু হলো।
----------------------সমাপ্ত------------------------
লেখকঃ #Noyan_Bhowmik(শান্ত ছেলে)
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŽāĻ্āĻāϞāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ģ āĻāĻĒ্āϰিāϞ, ⧍ā§Ļā§§ā§
443
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§ā§Ļ:ā§Ēā§§ PM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ