āĻŽāĻ™্āĻ—āϞāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ģ āĻāĻĒ্āϰিāϞ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

492

১.

শপিং মলে ঢুকলে আমি প্রথমে খাবারের দোকানের দিকে যাই। খাওয়ার ব্যাপারে আমি ছোটবেলা থেকেই একটু বিলাসী। আম্মু আমাকে রাক্ষস বলত কারন ভাল খাবার সামনে পেলে আমার নাকি হুঁশ থাকেনা। তবে সুখের কথা হল আমাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে আমি এতটা ভোজনবিলাসী।
রেস্টুরেন্টটা ভালই সাজানো গোছানো। একটা খালি টেবিলে বসে গেলাম। রেস্টুরেন্টটা ৪তলায়। টেবিলটাও জানালার কাছে। বাইরের দিকে তাকালাম। আকাশটা মেঘলা। যেকোনো সময় আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামবে। কফি আর পেস্ট্রির অর্ডার দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে রইলাম আমি। পুরনো কথাগুলো আজ খুব বেশী মনে পরছে।
আমি রাহাত। বর্তমান বাংলাদেশের সবচে সফল ব্যবসায়িদের একজন। প্রায় শুন্য থেকে শুরু করেছিলাম আমি। ৭ বছরে আমার টোটাল এসেট প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। খুব একটা ভাল ছাত্র আমি কখনই ছিলাম না। গ্র্যাজুয়েশনের পর পাড়ি জমাই ফ্রান্সে। ৭ বছরের কঠোর পরিশ্রম তারপর ভাল পরিমাণ টাকা জমিয়ে দেশে ফিরে আসি। এখানে এসে শুরু করি ব্যাবসা। বাকিটা কঠোর পরিশ্রম আর কিছুটা ভাগ্যের মিশেল। ছোট বোনের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। ব্যবসা সব রিটায়ারমেন্টের পর থেকে বাবাই বেশী দেখেন। আমি এমনিতে ব্যবসার দিকে নজর দিলেও ঘোরাঘুরিই বেশী করি। এখানে আসা মূলত ঘুরতেই। তবে খুব শীঘ্রই ব্যাস্ত হয়ে পড়ব। নতুন একটা প্রজেক্ট হাতে এসেছে আমার। আজকাল নিজেকে বেশ ক্লান্ত মনে হয়। হয়ত বস্যস বাড়ছে। এই প্রজেক্টটা কমপ্লিট হলে ঠিক করেছি লম্বা একটা ছুটি নেবো আমি।
রিংটোনের শব্দে ভাবনায় ছেদ পরল আমার। মোবাইলটা বের করে sms চেক করলাম। তারপর বিল শোধ করে বেরিয়ে এলাম বাইরে। শপিংমলের দোতলায় অনেকগুলো কাপড় আর বাচ্চাদের খেলনার দোকান। তেমনি একটা দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। বোনের বাসায় যাব আজ। ভাগ্নিটার জন্য কিছু কিনতে হবে। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি। বৃষ্টিটাও কমুক। একটা টেডিবিয়ার নিলাম সেলফ থেকে। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন ডাক দিল, "রাহাত! রাহাত না তুই?"
ঘুরে না দাঁড়ালেও আমি বুঝেছি কে ডাকছে। এই কণ্ঠ ভোলা আমার পক্ষে জন্ম জন্মান্তরেও সম্ভব নয়। ফিরে জবাব দিলাম, “কেমন আছিস মীরা?”
-“চিনতে পেরেছিস আমাকে? অবাক ব্যাপার! তোকে অনেকদিন পর দেখলাম। আমি তো ভাবলাম চিনতেই পারবি না। কেমন আছিস?”
-“এইতো ভালই আছি।”
-“হ্যাঁ! তুই তো ভালই থাকবি। কোটিপতি হয়ে গেছিস।”
-“আমাকে দেখে কি কোটিপতি মনে হয়?”
-“না। তোর চেহারা গত সতের বছরে খুব একটা বদলায় নাই। যে ক্ষ্যাত ছিলি সেই ক্ষ্যাতই আছিস।”
আমি বোকার মত দাঁত কেলিয়ে হাসতে শুরু করলাম।
মীরার পাশে হঠাৎ ফুটফুটে একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল তিন চার বছর হবে বয়স। মীরার দিকে তাকিয়ে কৌতূহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “আম্মু, এটা কে?”
মীরা হেসে জবাব দিল, “এটা তোমার আঙ্কেল হয় মামনি।”
আমি হাঁটু গেড়ে বসে মেয়েটাকে কাছে টেনে নিলাম। ছোট বাচ্চাদের আমি বরাবরই আদর করি।
-নাম কি তোমার মা?
-আমার নাম নিধি।
-নিধি মানে কি গো মা?
-জানিনাতো।
নিধি অসহায় চোখে তার মার দিকে তাকাল। মীরা হেসে ফেললো।
-“ওর বাবা নাম রেখেছে।”
-হুম। চল কোথাও বসি।
-হ্যাঁ! চল।
আগের রেস্টুরেন্টটাতেই আবার বসলাম আমরা। নিধির দিকে চোখ মটকালাম আমি, “কি খাবে গো মা?”
-“আইসক্রিম।”
“এক্সকিউজ মি!” একটু দূরে থাকা সাদা পোষাকের ওয়েটারে দৃষ্টিআকর্ষণ করলাম আমি, “ওয়েটার!”
নিধির জন্য আইসক্রিম আর আমাদের দুজনের জন্য কোল্ডকফির অর্ডার দিলাম। মীরা বলল, “তোর এখনো মনে আছে, কোল্ড কফি আমার পছন্দ?”
-“থাকবেনা কেন?”
-“না থাকারই তো কথা। এতদিন পর............”
-“মানুষ বদলায় না মীরা। তুই কি বদলেছিস? তারপর বল তোর কি খবর?”
-“ভালই আছি। সংসার নিয়ে আছি। হাসব্যান্ড ব্যস্ত মানুষ। টাকা প্রচুর ইনকাম করে বাট আমার আর নিধির জন্য সময় বের করতে পারে না। তাই অবসর সময়ে আমার একটা গাড়ি আছে ওটাতে করে নিধিকে নিয়ে ঢাকা শহর চষে বেড়াই। তোর কি খবর? বিয়ে তো করেছিস নিশ্চয়ই। বাচ্চা কাচ্চা কয়টা?”
-“হ্যাঁ! করেছি তো। তোকে।”
-“দেখ ফাজলামি ছাড়। ওটা তোর অল্প বয়সের ক্রাশ ছিল। তুই বলেছিলি ওটা একটা ফান ছিল। আর তুই আমাকে তখন হেট করতি। মনে নেই। এখন তোর বয়স কত?”
-“জানিনা ৩৬/৩৭ হবে।”
-“এখনো বিয়ে করিস নি কেন?”
-“ইচ্ছে হয়নি। আর এখন বয়সও নেই।”
-“হুম। চুলও তো পেকেছে অনেক দেখছি। এত বড় রেখেছিস কেন? দাড়ি এমন নেশাখোরদের মত খোচাখোচা কেন? কতদিন হয়েছে শেভ করিস না?”
-“এক দেড় মাস। না। মোস্ট প্রবাব্লি দুমাস।”
-“থাকিস কিভাবে জংলী কোথাকার? আজই শেভ করবি। চুলও কাটাবি। আমার একটা ননদ আছে যা সুইট দেখতে! তুই একবার দেখলেই প্রেমে পরে যাবি। মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে। এখন একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভাল জব করে। ওর সাথে তোর লাইন লাগিয়ে দেব।”
-“ধ্যাত! এই বয়সে আর বিয়ে করব না।”
-“হুম। বললেই হল। এই নে আমার নাম্বারটা রাখ।”
-“হুম।”
ওর নাম্বারটা আমার ফোনে সেভ করে রেখে ওর দিকে তাকালাম আমি। একপলক হাতের মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে তারপর বলল, “শোন এখন যাই। বাসায় একটু কাজ আছে।”
একটা ব্যাপার লক্ষ করে একটু অবাক হলাম। স্বাভাবিক অবস্থায় বন্ধুদের সাথে দেখা হলে আমরা তাদের বাড়িতে দাওয়াত দেই। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মীরা একবারও সে কথা বলল না। ও মনে হয় চায় না আমি ওর বাসায় যাই। কিন্তু কেন? আমার বন্ধুরাও কেউ ওর বর্তমান অবস্থা জানে না। কারও সাথে ওর যোগাযোগ নেই। নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে। আমি ওর চোখে তাকাতেই মীরা চোখ ফিরিয়ে নিল। অন্য দিকে তাকিয়েই বলল,
-আমি উঠি।
-“ঠিক আছে যা তাহলে। বাই। বাই মা।”
-“আঙ্কেলকে বাই বল নিধি।”
নিধি আর মীরা হাত নাড়তে নাড়তে চলে যাচ্ছে। মীরা যদি আজ আমার হত তাহলে কি আমারও নিধির মত একটা মেয়ে থাকত? নাকি ছেলে? আচ্ছা মেয়ে হলে কি আমিও নাম রাখতাম নিধি? না মনে হয়। কারণ আমার পছন্দের নাম মেঘ। মেয়ে হলে মেঘবতী ছেলে হলে মেঘনাদ। ডাক নাম দুটোতেই এক। মেঘ।
আমি আকাশের দিকে তাকালাম। বৃষ্টি থেমে গেছে কিন্তু আকাশ মেঘে ঢাকা। জলভরা ঘনকাল মেঘ।
এখন যাওয়া যায়। অনেক দূর যেতে হবে। পকেটে হাত দিয়ে আমি গাড়ির চাবিটা স্পর্শ করলাম।

ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার একহপ্তার মাথায় আমার মীরার সাথে বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্ব স্থায়ী হয়নি। ইচ্ছায় না অনিচ্ছায় জানিনা ও আমাকে একবার খুব মীন করে একটা কথা বলে। আমার আত্মসম্মানে ঘা লাগে। আমি ওর সাথে সবরকম কথাবার্তা বন্ধ করে দেই। ও অনেকবার সরি বলে, কিন্তু আমি আমার অবস্থানে অটল থাকি। বেশ কয়েকবার আমার কাছে অপমানিত হবার পর মীরা হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু পরে আমি বুঝতে পারি যে আমি আসলে ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।
লাজলজ্জার মাথা খেয়ে একদিন সবার সামনে আমি ওকে বলে বসলাম আমি তোকে ভালোবাসি। ও আমাকে ফিরিয়ে দেয়। তারপর বছর না ঘুরতেই সেই ছেলেটাকে ও বিয়ে করে বসে যে বছর দুএক আগে ওকে ছেড়ে গিয়েছিল। ওর প্রাক্তন প্রেমিক। আমি তখনও কিছুই বলতে পারিনি। কিইবা আমার বলার ছিল? ওর বিয়ের কার্ড আমার কাছে নির্বাসনের শমন মনে হতে থাকে। অনার্সটা কোনমতে শেষ হতেই আমি পারি জমাই ফ্রান্সে।
জীবনটাই আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। ষোল সতের বছর আগের কথা; অথচ মনে হয় এইতো সেদিন।

ব্যাঙ্কের ভল্টটা খুলতে পাসওয়ার্ড লাগে। মোবাইলটা বের করে কাঙ্খিত sms টা পরলাম। কিছুই লেখা নেই ওতে। শুধু কয়েকটা সংখ্যা। আর একটা নম্বর ৩১৬। এটা ভল্টের নম্বর। সংখ্যাটা পাসওয়ার্ড। পাসওয়ার্ড দিয়ে দ্রুত হাতে ভল্টটা খুললাম। ভেতরে বড় একটা পার্সেল। ওটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলাম ব্যাঙ্ক থেকে। নিজের audi a6 sedan টাতে বসে খুলে ফেললাম সেটা। উপুর করতেই বেশ কয়েকটা বান্ডিল পড়ল কোলের ওপর। সব এক হাজার টাকার নোট। পঞ্চাশ লাখ থাকার কথা। ওগুলো নিয়ে মাথা ঘামালাম না। পারসেলের ভেতর থেকে আরও দুটো কাগজ বেরিয়েছে। একটাতে টার্গেটের সব রকম ডিটেইলস অন্যটা টার্গেটের ছবি।
ছবিটা দেখে চমকে উঠলাম। এটা কি করে হয়? এদের সাথে বসেই তো একটু আগে কফি খেলাম! মীরা আর নিধি! এদের খুন করার জন্য কে আমাকে ভাড়া করেছে? কাগজটা আবার পড়লাম। এদের মৃত্যু এমন ভাবে ঘটাতে হবে যেন মনে হয় দুর্ঘটনা। কোন প্রমাণ থাকা যাবে না। এসব কি? আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
হ্যাঁ আমার আরও একটি পরিচয় আছে। আমি একজন কন্ট্রাক্ট কিলার। টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করি। ফ্রান্স যাবার পর আমি ফ্রেঞ্চ ফরেইন লিজিয়নে যোগ দেই। ওদের নতুন জীবনের অফারটা আমার কাছে বেশ লেগেছিল। রিক্রুট হবার পর ভাগ্যগুণে কমিশন্ড অফিসার পোস্টে সুযোগ পেয়ে যাই। তিনবছর সার্ভিসের পর ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেয়ে যাই। তখন আমি লেফটেন্যান্ট সেকেন্ড ফরেন প্যারাসুট রেজিমেন্টে। আমাকে ওরা একটা স্পেশাল ট্রেনিংয়ে পাঠায় ইংল্যান্ড। ছয়মাস এসএএসের ট্রেনিং পাই আমি। সেখানে গোপন মিশন পরিচালনা, গোয়েন্দাগিরি, গুপ্তচরবৃত্তি, গুপ্তহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা, টীম রেকনাইস্যান্স, গেরিলা যুদ্ধ, কমান্ডো অপারেশনের ওপর বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হয় আমাকে। ট্রেনিং শেষে ফ্রান্স ফিরে আসার পর লিজিয়নের রেগুলার ডিউটি থেকে সরিয়ে একটা গোপন এলিট ইউনিটে নিয়ে নেয় ওরা আমাকে। ওখানে আমি ছিলাম ওদের বেস্ট শট। আমরা ছিলাম মূলত ডিজিএসইর এলিট ব্ল্যাক অপ্স টীম। ওরা আমাকে একটা কোডনেম দেয় fantome বা প্রেত। আইভরি কোস্ট, কসোভো, চাদ আর মালিতে ফ্রান্সের পক্ষে যুদ্ধ করি আমি। ৫ বছর পর আমি ক্যাপ্টেন হিসাবে লিজিয়ন ত্যাগ করি। তারপর থেকে আমি বিভিন্ন দেশের জন্য মার্সেনারি বা কিলার হিসেবে অসংখ্য কাজ করেছি। আমার ক্লায়েন্ট ছিল মূলত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কাজগুলোর মধ্যে ভাল কাজ নোংরা কাজ দুইই ছিল। অসংখ্য বিদ্রোহী নেতা, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ত, অপরাধী আমার হাতে নরকদর্শন করেছে। একদিন হঠাৎ সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে আমি দেশে ফিরে আসি। ব্যাবসা শুরু করি জমানো টাকা দিয়ে। ফ্রান্সে আমি এই ৮/১০ বছর কি করেছি কেউই জানেনা। এটা পুরোপুরি গোপন রেখেছি সবার কাছে।
কিন্তু সমস্যাটা হল অন্য জায়গায়। এই কাজ গুলো যা এক সময় ছিল আমার পেশা সেটা আমার নেশা হয়ে গেছে। এটা এক ধরণের মানসিক রোগ। এর নাম পোস্ট ট্রমা স্ট্রেস সিন্ড্রোম। এই রোগ হলে অষ্টপ্রহর রক্তে যুদ্ধের দামামা বাজে। তখনকার সেই থ্রিল আমি মিস করতে থাকি। তাই আমি আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর জন্য ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করতে শুরু করি। তবে খুব কম। বছরে দুতিনটের বেশী না। এবার আমি নীতির দিকটা ঠিক রাখি। আর শুধু তাদের কেই মারি যাদের পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
আজেবাজে আর সহজ কেস হলে আমি নেই না। রিস্কি আর টাফ কেসই আমার পছন্দ। ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করি সিকিউর চ্যাটরুম আর আনট্রেসেবল নম্বর দিয়ে। আমি একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তাই আমার কাছে এগুলো ডালভাত। আমাকে সবাই চেনে ঘোস্ট নামে। এই গোপন পরিচয়টুকু বাদ দিলে আমি পুরোপুরি একজন ব্যাবসাদার। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন মাফিয়া গডফাদার, ড্রাগলর্ড, সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন গুপ্তচর আমার হাতে নরকদর্শন করেছে। ফিলিস্তিনেও যুদ্ধ করেছিলাম প্রায় দুবছর। যুদ্ধ বলতে স্পায়িং করতে হত ইজরায়েল আর পশ্চিমা বিশ্বের ওপর। আইন সাধারনত যাদের ছুতে পারেনা বা যারা আইন আর নিয়মনীতির আড়ালে কুকর্ম করে বেড়ায় তাদের আপোষে সরিয়ে দেওয়াটাই আমার কাজ। এটাকে আমি একধরনের সমাজ সেবাও বলতে পারি। এটা আমার পেশা নয় নেশা।

অফিসে ঢুকে আমি বাইরে লালবাতি জ্বেলে দিলাম। এর মানে কেউ এখন ভেতরে ঢুকতে পারবে না। আমার সেক্রেটারিকে বললাম এক কাপ কফি পাঠাতে। বাবার রুম আমার রুমের পাশেই। বাবা মনে হয় নেই। লাঞ্চে গেছে। কফি আসলে আমি পার্সেলটা আবারও খুললাম।
এক সপ্তাহের ভেতর কাজ সারতে হবে। আজ ধানমণ্ডি যাব ওখানে আমার একটা ফ্ল্যাট আছে। সেফ হাউজও বলা যায়। যোগাযোগের সব ব্যবস্থা, সব অস্ত্র ওই বাড়িতেই আমি লুকিয়ে রাখি।
এজেন্টের কোডনেম লিউক। এছাড়াও আমার অনেক কন্ট্রাক্ট এজেন্ট আছে সারা বিশ্বে। এরা সবাই কোন না কোন দেশের গোয়েন্দা বিভাগের সাথে জড়িত। মজার ব্যাপার হচ্ছে এরা কেউ আমার সম্পর্কে কিছুই জানেনা। আজ বাংলাদেশের এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করব। সেই আমাকে এই কন্ট্রাক্টটা দিয়েছে।
-“হাই গোষ্ট।”
-“হ্যালো।”
-“পার্সেলটা পেয়েছ?”
-“হুম, পেয়েছি।”
-“কাজ শুরু করে দাও।”
-“তোমাকে বলেছি যে আমি মেয়ে আর বাচ্চাদের মারি না। এসব আমাকে কেন করতে বলছ?”
-“শোনো। এই লোকের টাকার কোন অভাব নেই। এটুকু কাজের জন্য ৫০ লাখ পাচ্ছ খারাপ কি?”
-“ I want details.”
-“ তোমার এই ক্লায়েন্টের একটা পরকীয়া প্রেম আছে। সেই মেয়ে তো প্রেগন্যান্ট হয়ে গিয়েছে। ভদ্রলোককে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। বাট ওর এই বউ এটা কখনোই মেনে নেবে না।”
-“ডিভোর্স দিলেই হয়।”
-“এই মক্কেলের সব প্রপার্টি তার বউয়ের নামে। বউকে তালাক দিলে একে পথে বসতে হবে। আর ওই মেয়ে একে ব্ল্যাকমেইল করছে। এদিকে আবার বউয়ের নামে জীবনবীমাও করা আছে।”
-“হুম। ওই লোক সেই মেয়েকে ছাড়বে না?”
-“না। তা ছাড়বে না। আমি তোমাকে বলেছি যে কাজটা করার জন্য কোন জোরাজুরি নেই। তুমি না করলে বল আমি অন্য কাউকে কাজটা দেই।”
-“না আমিই করব।”
-“ thanks dude.”
আমার মাথা খালি হয়ে গেছে। কাহিনী যে এদিকে মোড় নেবে, আমি তা ভাবতেই পারিনি। এখন কি করতে পারি আমি? কি করা উচিৎ?

মীরার সাথে দেখা করা দরকার। এম্নিতে দেখা করাটা অড লাগবে। ওর ননদের ব্যাপারে ইন্টারেস্ট দেখানো যেতে পারে। আমি আমার মোবাইলটা তুলে নিলাম।
-“হ্যালো। কে বলছেন?
-“রাহাত।”
-“ও তুই। আমি তো ভেবেছিলাম আর যোগাযোগই করবি না।”
-ইয়ে মানে... সেদিন তোর ননদের কথা বলছিলি।”
-ও এই ব্যাপার! আমি ভাবলাম আমার সাথে কথা বলতেই বোধহয়।”
-তোর সাথেই তো বলব। আম্মু খুব ঘ্যানঘ্যান করছে।”
-বুড়ো ছেলে ঘরে বসে থাকবি কি করবে আর? তোকে তো পেটানো উচিত।”
-হুম তাহলে কাল দেখা করি।”
-ঠিক আছে। কাল ফোন দিস। বিকালে।”
-“নিধি কে নিয়ে আসিস।”

লেকের পাশেই রেস্টুরেন্ট। সাজসজ্জা ভালোই। খাবার কেমন হবে আল্লাহই জানে। এদিকে আমি আজকের উপলক্ষকে কেন্দ্র করে চুল ছোট করে কেটেছি। শেভ করে বয়স কমানোর একটা হাস্যকর প্রচেষ্টাও চালিয়েছি। দেখতেও মনে হয় বাঁদরের মত লাগছে। মীরার ননদ মিথিলা মাঝেমধ্যে আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। দেখতে আমাকে কেমন লাগছে আল্লাহই জানেন। একটা আয়না পেলে হত। একটা সময় ছিল যখন এই সুযোগটা আমি হাতছাড়া করতাম না। ভাব জমানোর চেস্টা করতাম। কিন্তু আজ মাথার ভেতর হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। মীরা আসর জমানোর চেষ্টা করছে। আমি ওকেই প্রশ্ন করলাম।
-“এই তোর হাসব্যান্ড যেন কিসের বিজনেস করে?”
-“তোকে বলেছিলাম না গার্মেন্টস, বায়িং হাউস আর ইম্পোর্ট-এক্সপোর্ট।”
-“হুম মালদার পার্টি। তোর স্বামীর অফিস কোথায়?”
-“উত্তরাতে। কেন?”
-“এমনি। ব্যবসা করি যদি কখনো প্রয়োজন হয়।”
আরো বেশ কিছুক্ষন এটা-সেটা নিয়ে কথা বললাম আমরা। বেশ ভালই কাটল সময়। অনেকদিন পর প্রাণখুলে কারো সাথে কথা বললাম। সামাজিকতা তো কবেই পানি দিয়ে গুলে খেয়েছি। মিথিলা মেয়েটাও বেশ স্মার্ট আর সপ্রতিভ। মীরা আমাকে আর মিথিলাকে প্রাইভেসি দিতে চাইলেও আমি ওকে উঠতে দেইনি। ওকে দূরে ঠেলে দিতে ইচ্ছে করছিল না। আমি বারবার মীরার দিকে তাকাচ্ছিলাম। বুকের বাঁপাশে চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভুত হল আমার। একেই মনে হয় সুখের মত ব্যাথা বলে। আজ থেকে সতের আঠার বছর আগেও এই অনুভুতিটা হত আমার ওকে দেখলে। এতদিন তো এই অনুভুতিটা প্রায় ভুলেই ছিলাম। হাসি পেল আমার। ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে ওকে একবার একটা কার্ড দিয়েছিলাম। তাতে দুটো মাত্র লাইন লেখা ছিল।
প্রহর শেষে আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ
এতকিছুর মধ্যেও কিন্তু আমার মাথায় একটা কথাই শুধু ঘুরছিল, মীরাকে মারার কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়েছে আমাকে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ওকে মারার বেশ কয়েকটা প্ল্যানও আমার মাথায় এসে গেছে। নিজের ভেতরের খুনিটাকে মনে মনে গালি দিয়ে আমি আবার ওদের কথায় যোগ দেওয়ার চেষ্টা চালালাম।

পরের দিনগুলো কাটল প্রচণ্ড ব্যস্ততার ভেতর দিয়ে। বেশ কয়েকটা মিটিং। তারওপর আবার মীরার হাসব্যান্ডের ওপর নজরদারি। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ। মীরাকে মারার কন্ট্রাক্টটাও আছে। ওটা ধরে রাখতেই হবে। নইলে ফিল্ডে আর কেউ নামলে বিপদে পরে যাবো। আমার মত পেশায় যারা আছে তাদের অসংখ্য সোর্স থাকে। ওর স্বামীর অবৈধ সম্পর্কটা আছে পার্সোনাল সেক্রেটারির সাথে। প্রায় ৪ বছর ধরে সে এই খেলাটা খেলছে। অফিসের স্টাফরা কেউই তেমন কিছু জানেনা। দুএকজন হয়ত সন্দেহ করে কিন্তু নিশ্চিত ভাবে কেউ কিছু বলতে পারে না।
মীরার স্বামী বনানীতে একটা ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছে মেয়েটাকে, ওটাই ওদের প্রেমকুঞ্জ। মেয়েটা ওখানেই থাকে। প্রায়ই ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে যায় লোকটা। সাথে থাকে সেই সেক্রেটারি। মেয়েটা প্রচণ্ড উচ্চাবিলাসি। সে প্রথম থেকেই জানত যে লোকটা বিবাহিত। তারপরও সে এই কাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে মেয়েটার আর একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। ওই দুজন ইচ্ছে করেই এই কাজটা করছে মীরার স্বামী আশফাক সাহেবের সম্পত্তির লোভে। আশফাক সাহেবকেও সরিয়ে দেবার ইচ্ছে মেয়েটার। আর প্রেগন্যান্সির ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুয়া। যে ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিয়ে গিয়েছিল মেয়েটা সেই ডাক্তার মেয়েটাকে চেনেনই না। ডাক্তারের সহকারীকে কিছু ঘুষ দেবার পর আসল কথা স্বীকার করেছে সে। আশফাক সেটা জানেন না। উনি মেয়েটার শরীরের নেশায় মত্ত। লোভ জিনিষটা খুব খারাপ। কারও লোভ টাকার প্রতি কারো নারীর প্রতি। কিন্তু সবাই ভুলে যায় যে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। লোভের দাম তাদের দিতেই হবে। আর এই লোক আজ না হোক কাল মীরার বা নিধির ক্ষতি করার চেষ্টা করবেই। ওদেরও নিরাপদ রাখতে হবে।
প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে মীরার স্বামীর একটা লাইসেন্স করা রিভলবার আছে। ওটাই আমার ট্রাম্প কার্ড। আমার প্ল্যানও কমপ্লিট। লোকটা প্রতি মঙ্গল আর বুধবারে মেয়েটার বাড়ি যায়। ওখানেই ঘটনা ঘটবে। এটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেয়া কোন ব্যাপারই না। মেয়েটার প্রেমিকের ব্যাপারেও খোঁজ খবর করা শেষ। ছোড়াটা নেশাখোর। ওয়ারীর দিকে থাকে। এখন শুধু মঙ্গলবারটার জন্য অপেক্ষা।
অপেক্ষার প্রহরগুলো এত দীর্ঘ হয় কেন?

রাত প্রায় বারোটা। গাড়ির জানালা খুলে দিলাম আমি। হু হু করে বাতাস ঢুকছে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক জায়গাটা লং ড্রাইভের জন্য আদর্শ। এবার ছুটিটা কক্সবাজারে কাটাব। অনেকদিন হয়ে গেছে সমুদ্র দেখিনা। একটা ফোন এসেছে। না দেখেই বুঝেছি আমার এজেন্ট কোডনেম লিউকের কল এটা,
-“কোথায় তুমি?”
-“কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছি।”
-“ধুর! এদিকের খবর কিছু রাখো?”
-“কি হয়েছে?”
-“তোমার মক্কেল তো খুন হয়ে গেছে।”
-“কিভাবে?” হাল্কা গলায় প্রশ্ন করলাম
-“ওই যে, রিলেশন ছিল যে মেয়েটার সাথে সেই মেয়েটার নাকি একটা ড্রাগ এডিক্টেড বয়ফ্রেন্ড ছিল। সে সব জানতে পারে। ওদের প্রেম করার সময় ওই ফ্ল্যাটে হানা দেয়। দুজনকেই গুলি করে। তোমার মক্কেল শেষ মুহূর্তে নিজের রিভল্বার দিয়ে ছেলেটাকে গুলি করে। ব্যস তিনজনই শেষ। পুলিশে এলাকা ভর্তি। তোমার টার্গেট মানে মক্কেলের ওয়াইফের কাছে খবর গেছে। মেয়েটা খুব কান্নাকাটি করছে। সরি ম্যান, তোমার কন্ট্রাক্টটা বাতিল হয়ে গেছে।”
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম একটা। তারপর গম্ভীর গলায় বললাম, “ইটস ওকে, মাহবুব সাহেব।”
আমার কথা শুনে আঁতকে উঠল লোকটা। তোতলাতে লাগল, “তুত-তু-তুমি...... তুমি কি বললে? তুমি আমার নাম কিভাবে জানো?”
মৃদু হাসি আমি। তারপর আবার গম্ভীর গলায় বলি, “সেটা আসল কথা না আপনি কে? আপনার পেশা কি? আপনার ঠিকানা সবই আমি জানি। শুনুন আমি আর এই পেশায় থাকতে চাইছি না। আর ভাল লাগছে না আমার এসব করতে। আপনিও আর মৃত্যুর দালালি করবেন না। আপনাকে তাহলে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। কি বলছি তাতো আশা করি ভাল করেই বুঝতে পারছেন?”
-“হ...হ্যা। কক...কিন্তু.........­­......”
-“কোন কিন্তু নয়। যা বলেছি সেটাই। আপনি এই কন্ট্রাক্টটার পুরো টাকাটাই পেয়ে যাবেন। পুরো পঞ্চাশ লাখ। সময়মত সেটা আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। আমাদের ডীল এখানেই শেষ। আপনার সাথে ব্যবসা করে আরাম পেয়েছি। বিদায়।”
ফোনের সিমটা খুলে কামড়ে ভাঙলাম আমি। ফোনটা ছুড়ে দিলাম বাইরের দিকে। ভাঙ্গা সিমটাও একই দিকে গেল। ড্যাশবোর্ড থেকে আরেকটা মোবাইল বের করলাম। রেডিও অন করলাম।

খুনগুলো আমিই করেছি। পুরনো ঢাকা থেকে প্রথমে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে তুলেছি। ভাল পরিমাণ ড্রাগ দিয়ে ছেলেটাকে অচেতন করে নিয়ে এসেছি মেয়েটার বাসায়। মেয়েটার বাসার দারোয়ানের চোখ এড়িয়ে বদমাশটাকে ছ’তলায় তুলতে জান কালি হয়ে গেছে আমার। ফ্ল্যাটে অচেতন ছেলেটাকে লুকিয়ে রেখে নিজেও লুকিয়ে ছিলাম।
আশফাক সাহেব আর তার ফিয়াসে ঘরে ঢোকবার পর বেরিয়ে আসি আমি। আমাকে দেখে লোকটা সত্যিকার অর্থেই হাঁ হয়ে গিয়েছিল। আমার প্রথম গুলিটা মেয়েটার মাথায় লাগে। আশফাক সাহেব রিভলবার বের করে ফেলেছিলেন কিন্তু বুকে একটা ছোট ফুটো তাকে রিভলবারটা ব্যাবহার করার কোন সুযোগই দিলনা। অচেতনপ্রায় নেশাখোরটাকে এনে জায়গা মত দাড় করিয়ে দিলাম। বদমাশটা টলছে। আশফাক সাহেবের রিভলবারটা দিয়ে গুলি করলাম।
আমার বন্দুকে সাইলেন্সার লাগানো ছিল শব্দ হয়নি। কিন্তু রিভলবারের গুলি বন্ধ ঘরে বজ্রধ্বনি তুলল। এখনি লোকজন এসে পরবে। আমাকে দ্রুত বের হতে হবে এখান থেকে। আমার প্রতিটা শট অনেক হিসেব করা। কারো বেঁচে যাওয়ার সম্ভবনা নেই। হাতে গ্লাভস ছিল তাই ফিঙ্গারপ্রিন্টেরও ভয় নেই। আর আমার বন্দুকটা দেশে তৈরি। চোরাবাজার থেকে কেনা। কোন নম্বর নেই তাই ট্রেস করা সম্ভব না। মোট কথা ধরা পরার কোন ভয় নেই।
আমার পিস্তলটা নেশাখোরটার হাতে আগেই ধরিয়ে দিয়েছিলাম। দরজার নব টিপে টান দিতেই দরজা ভেতর থেকে আটকে গেল। সাবধানে বাসা থেকে বেড়িয়ে এলাম। পুরো এপার্টমেন্টে হইহল্লা শুরু হয়ে গেছে ততক্ষনে। এই হইচইয়ের মধ্যে আমাকে কেউ লক্ষ করল না। ২ ব্লক দূরে গাড়িটা দাড় করিয়ে রেখেছি আমি।
মীরা আর নিধির জন্য খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু এটা আমাকে বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে। এটা ওদের ভালর জন্যই করেছি আমি। মীরাকে আমি ১৭ বছর আগে যতটা ভালবাসতাম আজও ঠিক ততটাই ভালবাসি। আজীবন বাসব। কেউ যদি ওদের কোন ক্ষতি করার চিন্তাও করে তবে তাকে আগে আমার মুখোমুখি হতে হবে। রেডিও স্টেশনে গানস এন্ড রোজেসের নভেম্বর রেইন গানটা বাজছে। গায়কের দরাজ গলার সাথে আমিও গলা মিলিয়ে গাইতে শুরু করলাম
Nothing lasts forever
And we both know the same
Its hard to hold a candle
In the cold November rain
আজকের আকাশে চাঁদ নেই। মেঘে ঢাকা আকাশটার দিকে তাকালাম আমি। আমার জীবনটাও হয়ত অন্যরকম হতে পারত। অনেক সুন্দর হতে পারত। কিন্তু এই কণ্টকময় পথটা আমি নিজেই বেছে নিয়েছি। জানিনা আরও কতদূর হাঁটতে হবে।

১০

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হইনি তখনো। ফোন বেজে উঠল। এত রাতে ফোন! কে হতে পারে? একটু অবাক হয়েই ফোন রিসিভ করে বললাম,
-“হ্যালো? কে বলছেন?”
-“চিনতে পারছিস রাহাত?”
-“মীরা? এত রাতে? কি হয়েছে?”
-“তুই জানিসনা কি হয়েছে? আমার স্বামী, তার প্রেমিকা আর প্রেমিকার বয়ফ্রেন্ড খুন হয়েছে। খুনটা কে করেছে, সেটা কি আমাকেই বলতে হবে?”
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ও কিভাবে জানল? আশ্চর্য!
-তুই কিভাবে জানলি?
-আমারই তো জানার কথা কন্ট্রাক্টটা তো আমিই দিয়েছিলাম তোকে।
আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম। এই অ্যাঙ্গেলে চিন্তা করার কথা আমার মাথাতেও আসেনি। কোনমতে আবার বললাম- কেন?
-তোর মত আমিও একজন যোদ্ধা। কিন্তু আমার যুদ্ধক্ষেত্র হচ্ছে সাইবারস্পেস। আমি একজন প্রফেশনাল হ্যাকার। প্রজেক্ট ভেনাসের কথা মনে আছে? তোকেই তো ভাড়া করতে চেয়েছিল ওরা আমাকে মারার জন্য।
-তুইই তাহলে ভেনাস?
-“হ্যা আমি। আশফাক ভয়ঙ্কর খারাপ লোক ছিল। আমি বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা। পরকীয়া ছাড়াও আরও অসংখ্য অপরাধ আছে ওর। ও একটা খুনি। আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলেছে। আমার বাচ্চার চেহারাটা একবার দেখার সুযোগও আমি পাইনি। এই অসম্মানের মৃত্যু ওর প্রাপ্য ছিল।
-মানে কি?
- মানেটা আর কিছুই না। আমাকে শারীরিক আর মানসিক ভাবে অত্যাচার করত বাস্টার্ডটা। আমার তখন সাতমাস চলছিল। ও চায়নি বাচ্চাটা। এটা নিয়ে একদিন ঝগড়া হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। আমার পেটে লাথি মারে শয়তানটা। সাথে সাথে এবরশন হয়ে যায়। ও জেনে যায় ভেনাসের কথাও। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করত। ভয়ঙ্কর ক্ষমতালোভি ছিল। ওর কথামত না চললে নিধিকে মেরে ফেলার হুমকি দিত।
আমি দাঁতে দাঁত পিষলাম, “আমার ব্যাপারে সবই তো জানতি। তাহলে এতদিন আমার সাথে যোগাযোগ করিসনি কেন? এসব আমাকে আগে জানাসনি কেন?”
-তোকে জানানোর মত অবস্থা ছিল না। আর থাকলেও জানাতাম না। তুই আর দশজনের চেয়ে আমাকে ভাল করে চিনিস। তাই না? তাছাড়া ভয় ছিল যদি ফিরিয়ে দিস।
-তাহলে এখন আমি কেন?
-কারণ আমি জানতাম যে একমাত্র তুইই আমার প্ল্যানে চোখে কাপড় বেঁধে নাচবি। যদি তোর কানে খবর যায় যে আমার কোন বিপদ হচ্ছে তখন তুই আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা অবশ্যই করবি। যেই তুই জানলি আশফাক আমাকে মারতে চায় সাথে সাথে তুই আশফাককেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলি। হাজার হলেও তোকে খুবই ভাল করে চিনি আমি।
নিজের বোকামিতে মজা পেয়ে আমি হেসে ফেললাম, “গুড শো। ইম্প্রেসিভ।“
-আমি খুবই দুঃখিত রাহাত। কিছুই করার নেই আমার। তুই এই খেলার অনেক পুরনো খেলোয়ার। তুই তো জানিসই , এই খেলার কিছু নিয়ম আছে। সেই নিয়ম সবসময় মেনে চলতে হয় আমাদেরকে। আর সেই নিয়ম অনুযায়ী সব কিছু করতে হচ্ছে আমাকে। তোর কোন দোষ নেই।”
-তার মানে কি, এখন আমিও?”
-"হ্যা। তুইও। কিছু করার নেই। ইট’স নট পার্সোনাল। জাষ্ট বিজনেস। আরেকটা কথা কোনদিনও তোকে বলতে পারিনি। আজ বলছি নইলে আর কোনদিনও বলতে পারব না। আমিও তোকে ভালবাসতাম। কিন্তু আমার সিলি ইগো আমাকে তোর কাছে যেতে দেয়নি। আশফাককে বিয়ে করাটা ছিল আমার জীবনের সবচে বড় ভুল। তুই তখনও বুঝতে পারিসনি আজও পারলিনা। তবে কাজটা আমাকে করতেই হবে। তুই ছাড়া অন্য কেউ হলেও করতে হত। নিজেকে আর নিধিকে বাঁচানোর জন্য। যাই হোক। no hard feelings. ভালো থাকিস।”
এ কথা বলার সাথে সাথে লাইনটা কেটে গেল। কল টাইম পাঁচ মিনিট। মুহূর্তের মধ্যে প্রচন্ড শব্দের সাথে সাথে অগ্নিগোলকে পরিণত হল আমার গাড়িটা।

১১

রাতের বৃষ্টি আমি অনেকদিন দেখিনা। রাতের মধ্য প্রহরে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে হাঁটতে কেমন লাগে তা জানতাম না আমি।
রিষ্টওয়াচে প্রায় আড়াইটা বাজে। শরীরে বৃষ্টির হিমশীতল ফোঁটা তীরের মত বিঁধছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে হাঁটছি আমি। তবে ভালই লাগছে আমার। অন্যরকম অনুভুতি। দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলের যুদ্ধগুলোর স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছে। কলম্বিয়ার সেই রেইনফরেস্ট। আহ! কি সেই সব দিন ছিল। একদমই যে খারাপ লাগছে না তা নয়।
আমার এত প্রিয় দামী সেডানটার এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি দেখলে দুঃখ হওয়ারই কথা। তবে মীরা আমাকে বোকা বানিয়েছে এটা ভেবে মজা পেয়েছি। ও আমার আসল পরিচয় খুব সম্ভবত ডিজিএসআইয়ের কাছ থেকে পেয়েছে। আমি কে সেটা জানতে পেরেই ও ফাঁদটা পেতেছে।
খুব ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছি আমি। শুধু তখন যদি সিগারেট কেনার জন্য না নামতাম। এই বৃষ্টি দেখবার সৌভাগ্য আমার আর হতনা। সিগারেট কিনে গাড়ির কাছাকাছি আসা মাত্রই কলটা আসে আমার পার্সোনাল মোবাইলে। কলটা বলতে গেলে অপ্রত্যাশিতই ছিল। একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতেই আমার শখের সেডান আমার চোখের সামনে অগ্নিগোলকে পরিণত হল। শকওয়েভের প্রচণ্ড ধাক্কায় উড়ে হাত দশেক দূরে গিয়ে পরলাম।
দশ মিনিট ওভাবেই পড়েছিলাম। যখন নিশ্চিত হলাম যে বেঁচে আছি তখন উঠে বসলাম। জনশূন্য রাস্তায় এই মাঝরাতেও লোক জমা হয়ে যাচ্ছে। আমি উঠে যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। আর তখনই শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি।
দশ বছর আগে সি.আই.এ আমাকে একটা কাজ দেয়। কোন এক হ্যাকার তাদের অনেক হাইলি ক্লাসিফাইড ইনফরমেশন হ্যাক করে তাদের শত্রু দেশগুলোর কাছে বিক্রি করছে। আমার কাজ ছিল সেই হ্যাকারকে ট্র্যাক করে বের করা ও তারপর তাকে শেষ করে দেওয়া। আমি তখন ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গেরিলাদের সাথে যুদ্ধ করছিলাম ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। ব্যাস্ততার কারণে কাজটা আমি ফিরিয়ে দেই। সেই হ্যাকার একটা কোডনেম ব্যবহার করত। ভেনাস। মীরার কথায় আমার আর বুঝতে বাকি নেই মীরাই সেই ভেনাস। সাইবার স্পায়িং আর সাইবার ক্রাইমের জগতের মুকুটহীন সম্রাট। টোটালী এনোনিমাস। সি.আই.এ, এম.আই.সিক্স, এফ.এস.বি, মোসাদ. সবার লিস্টের মোস্ট ওয়ান্টেড সাইবার ক্রিমিনাল। প্রায় বিশ বছর ধরে সাইবার জগতের ত্রাস। সব ইন্টেলিজেন্সের কাছে ভেনাস ছিল আনটাচেবল।
অবশ্য মীরা আমাকে না বললে আমিও ভেনাসের আসল পরিচয় জানতাম না। ও নিশ্চয়ই অনেক আগে থেকে এই কাজটা শুরু করেছে। আমরা কেউই জানতে পারিনি। আমাদের বন্ধুদের সাথে কখনোই শেয়ার করেনি। তবে একটা সমস্যা হয়ে গেছে। মীরা সম্ভবত জানেনা যে ওর পরিচয় ফাঁস হয়ে গেছে। মোসাদ ওকে ট্রেস করে ফেলেছে। মাসখানেক আগে মিডল ইস্টের এক সোর্সের কাছ থেকেই এই খবরটা পেয়েছি আমি। ওরা ট্রেস করতে পারলেও এখনও ওর পরিচয় জানেনা। তবে যেহেতু ট্রেস করতে পেরেছে। পরিচয় বের করা মোসাদের জন্য ছেলের হাতের মোয়া। আমাকে ও মারতে চাইল কেন এই চিন্তা পরে। আগে ওকে বাঁচাতে হবে। মোসাদের প্রতিশোধ বড়ই ভয়ঙ্কর।
রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকান দেখে এগিয়ে গেলাম আমি। এত রাতে আমার বৃষ্টিতে ভেজা বিদ্ধস্ত করুণ অবস্থা দেখে বৃদ্ধ চাওয়ালা অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। আমি তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলাম,“চাচা, একটা লাল চা আর একটা বেনসন দেন। আর ঢাকা যাওয়ার বাস কই পাব একটু বলেনতো”।

১২

বাস ছাড়বে ঘণ্টা দুয়েক পর। মোবাইলটা বের করলাম। মোসাদে আমার কিছু লিঙ্ক আছে এদের কাছ থেকে খবর নিতে হবে। আমার পার্সোনাল সেক্রেটারি লিসাকে কল দিলাম।
-হ্যালো স্যার। কি ব্যাপার? এত রাতে। কোন সমস্যা?
-লিসা তোমাকে আমি একটা ফোন নম্বর দেব। এখনই এই নম্বরে কল করে তুমি আমার এই নম্বরটা পাস করবে।
-জ্বি স্যার। আপনি নম্বর বলেন।
-এটা ইন্টারন্যাশনাল কল। এক ভদ্রলোক ধরবেন। তার সাথে বাংলায়ই কথা বোলো। উনি বাংলা জানেন। নম্বরটা লিখে নাও।
নম্বরটা আব্বাস আলী নামের একজন ব্যবসায়ির। এসপিওনাজ জগতের সব ধরনের খবর এর কাছে পাওয়া যাবে। এই লোক আমার পুরনো বন্ধু। থাকে ডেনমার্কে। সেখানে এর একটা রেস্টুরেন্ট আছে। সেটা শুধু নামেই। এই রেস্টুরেন্টের পেছনের ঘরে প্রতিদিন অনেক মুল্যবান গোপন তথ্য টাকার বিনিময়ে হাতবদল হয়। এক্স সি.আই.এ। এসপিওনাজ জগতের সর্বশেষ যেকোন বিশ্বাসযোগ্য ইনফরমেশন এর কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এটাই তার আসল ব্যবসা। রেস্টুরেন্টটা লোক দেখানো। ভেনাসকে শেষ করার কন্ট্রাক্ট দশ বছর আগে এই লোকই আমাকে এনে দিয়েছিল সি.আই.এর তরফ থেকে। তখন মধ্যপ্রাচ্চে সি.আই.এর অপারেটর ছিল এই লোক। ধরা পরেছিল গেরিলাদের হাতে। আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম কিছু ইনফরমেশনের বিনিময়ে। আমাকে সেদিন বলেছিল সে পৃথিবীর যেখানেই থাকুক কোন আমার কোন প্রয়োজন হলে সে লাগলে জান দিয়ে দেবে।
আজ আমার সাহায্যের খুবই প্রয়োজন। মোবাইল ভাইব্রেট করছে। রক্তের প্রতিটি কনিকায় উল্লাস বোধ করলাম আমি। আবার খেলা জমে উঠেছে।
-“আব্বাস। আমি Phantom.”
-“আরে দোস্ত এতদিন কোথায় ছিলে? এত বছর পর বন্ধুকে মনে পড়ল?”
-“I need your help Abbas. Do you remember about project venus? মোসাদের লেটেস্ট এক্টিভিটি কি?”
-“আরে দোস্ত! মোসাদের হারামি গুলো ওকে খুঁজে বের করেছে। ওরা একজন টেক এক্সপার্ট সহ চারজনের একটা ইউনিট পাঠিয়েছে ওকে খতম করার জন্য। একদম টাটকা খবর। আরেকটা মজার বিষয় কি জানো? এই ভেনাস আসলে বাঙালী এক মহিলা।ওরা সবাই আমেরিকান টুরিস্টের ছদ্মবেশে বাংলাদেশে ঢুকবে। ওদের সবার কাছেই আমেরিকান পাসপোর্ট থাকবে। দুইদিনের মধ্যে অপারেশন শেষ করার অর্ডার আছে ওদের কাছে। সবাই কেনেডি এয়ারপোর্ট থেকে প্লেনে উঠেছে। আগামীকাল দুপুর দুটায় ওরা বাংলাদেশে পৌঁছবে।”
-“মোসাদ এজেন্টদের ডিটেইলস আমাকে মেইল কর জলদি।”
-“হুম। তা করছি।”
-“অনেক ধন্যবাদ। তোমার এই উপকার আমি কখনোই ভুলব না।”
-“ধন্যবাদ কেন old sport? তুমি না থাকলে আমি এতদিনে মরে ভুত হয়ে যেতাম। আমি তো তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর সামান্য চেষ্টা করছি মাত্র।”
ফোন রেখে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। সামনে যুদ্ধ। রণকৌশল ঠিক করতে হবে। কিন্তু মেইলটা বিশেষ দরকার। জানা দরকার প্রতিপক্ষের দৌড় কতদুর।

১৩

সকাল দশটার দিকে ঢাকা পৌঁছলাম। প্রথমেই ধানমণ্ডির ফ্ল্যাটে এলাম। সেখান থেকে ফোন করে মা বাবার খোঁজ নিলাম। বললাম কিছুদিনের জন্য বেড়াতে যাচ্ছি। লিসাকে কল করে বললাম আমাকে অফিসের ল্যান্ডক্রুজারটা পৌঁছে দিতে।
এই বাড়িতে আমার সব ইকুইপমেন্ট রাখি আমি। ওয়াল কেবিনেটের নিচের তাক থেকে পুরনো একজোড়া শু নাইফ বের করলাম। বিশেষ ভাবে তৈরি জুতো। গোড়ালি মেঝেতে ঠুকলেই সামনে দুই ইঞ্চি ফলা বেরিয়ে আসে। কেবিনেটের পিছনের ফলস প্যানেল খুলে বের করে আনলাম একটা fn57 পিস্তল। যত্নের সাথে তাতে একটা ট্যাক্টিকাল লেসার লাইট আর সাইলেন্সার লাগালাম। রান্নাঘরের লুকানো জায়গা থেকে নিলাম একটা কারাম্বিট নাইফ আর একটা স্টিলেটো। লিভিং রুমের সোফার গদির নিচ থেকে বের করে আনলাম একটা হেক্লার এন্ড কচ mp5. এটাচমেন্ট হিসেবে সেটাতে রেড ডট সাইট আর সাইলেন্সার লাগালাম। স্টোররুম থেকে নিয়ে এলাম বেশ কয়েকটা হ্যান্ডগ্রেনেড আর ফ্ল্যাশব্যাং। অ্যামুনিশন, এক্সপ্লোসিভ, নাইটভিশনসহ আরো দুয়েকটা আইটেম একটা স্লাইড ব্যাগে ভরে নিলাম।
এবার আমি তৈরি। লিসা বারোটার দিকে এসে গাড়ি দিয়ে যাবে। ততক্ষণে শাওয়ার নিয়ে নিলাম আমি। আব্বাসের মেইল থেকে ডোশিয়ে গুলো প্রিন্ট করে নিলাম। আব্বাস আরও কিছু তথ্য দিয়েছে। ওরা অস্ত্রের ব্যবস্থা করবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাছ থেকে। এই ব্যাপারে ওদের “কানকাটা শহিদুল” নামের এক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাহায্য করবে। যার বিনিময়ে সে প্রায় দু লাখ টাকা পাচ্ছে।
শার্টের নিচে একটা লাইটওয়েট বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরে নিলাম। কাঁধে ঝোলালাম শোল্ডার হোলস্টার । পায়ে শু নাইফ পরে নিলাম। সাবমেশিনগানটা একটা সুটকেসে ভরে নিলাম। কলিংবেল বেজে উঠল। লিসা এসে গেছে।

১৪

চারটা বাজে প্রায়। দেড়ঘন্টা ধরে এয়ারপোর্টের এরাইভালের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এক পশলা বৃষ্টি অলরেডি হয়ে গেছে। আকাশের মুখ এখনো গোমড়া।
হঠাৎ ওদের দেখলাম আমি। চারজন টুরিস্টের একটা হাসি খুশী দল। দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। সবচে লম্বাজনের নাম সিজার। মোসাদের টর্চার স্পেশালিস্ট। চশমাওয়ালাটা রবিন। কোভার্ট অপসের লোক। একটা অত্যন্ত রূপবতী মেয়েকেও দেখছি। ও হচ্ছে জ্যানেট। এই মেয়েটাই ওদের পাথফাইন্ডার। মোসাদের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অপারেটর। শেষজন ডিউক। ও হচ্ছে আমারই মত একজন গুপ্তঘাতক। ফ্রিল্যান্সার। জাতে জার্মান। একটা মাইক্রো এসে ওদের তুলে নিল। মাইক্রোর ড্রাইভারটাই সম্ভবত শহিদুল। ওদের পিছু নিয়ে রূপসী বাংলা হোটেল পর্যন্ত গেলাম আমি। এবার মীরা আর নিধিকে বাড়ির ভেতর আটকাতে হবে। ওদের বাড়ির দিকে গাড়ি ঘোরালাম।

১৫

মীরাদের বাড়িটা অনেক সুন্দর। ডুপ্লেক্স বাড়ি। দারোয়ানটাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছি। মীরা আর নিধিও ঘুমাচ্ছে। নিধি বাদে বাকি সবাইকে ঘুমের ওষুধ ইঞ্জেক্ট করতে হয়েছে। একটা ব্যাপার লক্ষ করে অবাক হলাম। মীরা আজ আমাকে দেখে খুশী হয়েছে। যেন আমি মরিনি বলে স্বস্তি পেয়েছে। খুশীতে খাবি খাচ্ছিল। এই মেয়েটাকে আমি কোনদিনও বুঝতে পারলাম না। পরে যখন আমি মীরাকে বিপদটা বোঝানোর চেষ্টা করি তখন ও ভয় পেয়ে যায় । তাও নিজের জন্য না। নিধির জন্য। সব কথা আমাকে খুলে বলে সে।
ও ছিল চাইল্ড জিনিয়াস বা প্রডিজি। তার মা বাবা ছাড়া আর কেউই এই ব্যাপারটা জানেনা। অনেক অল্প বয়সেই হ্যাকিঙের বিদ্যা আয়ত্তে আসে তার। মাত্র পনেরো বয়স থেকেই এই কাজ করা শুরু করে সে। আমাদের সাথে যখন পড়ত তখন থেকেই হায়াবুসা নামে কাজ শুরু করে। একটা কম্পিউটার আর নেট কানেকশন থাকলে যেকোনো সিকিউরিটি সিস্টেম গুঁড়িয়ে দেবার ক্ষমতা ওর আছে। আমার সাথে গেম খেলা আর আমাকে খুনের চেষ্টা খুবই যুক্তিযুক্ত ছিল। ওর হাসব্যান্ডের শারীরিক আর মানসিক নির্যাতনে অতিষ্ট হয়েই এটা করেছে সে। আমি থাকা মানেই অপরাধের প্রমাণ থাকা তাই আমাকেও শেষ করে দিতে চেয়েছিল।
ওকে আমার প্ল্যান ব্যাখ্যা করলাম। কিন্তু ও রাজি হল না। নিধিকে নিয়ে আমাকে পালিয়ে যেতে বলল। পরে জোর করে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিতে হয়েছে। প্রচুর ধ্বস্তাধস্তি করতে হয়েছে বাকি সবার সাথেই। চব্বিশ ঘন্টার জন্য আমি নিশ্চিন্ত। নিধি আগেই ঘুমাচ্ছিল। ওকে এখনো জাগাইনি। ওকে ভেতরে আটকে রাখলেই হবে।
সন্ধ্যা মিলিয়ে এসেছে। কিছু অস্বাভাবিক এখন পর্যন্ত আমার চোখে পড়েনি। কফির কাপে চুমুক দিলাম আমি। তখনই মাইক্রোটা দেখলাম। বাড়ির চার দিকে চক্কর দিচ্ছে। তারপর আবার চলে গেল। mp5 কাঁধে ঝোলালাম আমি। পায়ের আওয়াজে পিছন ফিরে তাকালাম। নিধি দাঁড়িয়ে আছে। হাসলাম আমি।
-“আমার আম্মুটা কেমন আছে?”
-“ভাল। আঙ্কেল তুমি কেমন আছ? কখন এসেছ?”
-“একটু আগে। তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকিনি।”
-“আম্মু কোথায়?”
-“ঘুমাচ্ছে। নাও আম্মু। ঘুম থেকে উঠেছ দুধটা খেয়ে নাও।”
-“দুধ পচা।”
-“এটা চকোলেট মিল্ক। আঙ্কেলের কথা শোন। লক্ষ্মী মেয়ের মত খেয়ে নাও।”
-“আচ্ছা দাও।”
আমি দুধের গ্লাসটা ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম। নিধি দুধ খাচ্ছে। আমি চুপচাপ দেখছি। দেখতে ভাল লাগছে। কেমন যেন একটা অনুভুতি হচ্ছে আমার। ঠিক বোঝানো যাবে না। নিধিকে নিজের মেয়ের মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু ও আমার মেয়ে নয়। মীরার মেয়ে। আচ্ছা, মীরার সাথে যদি আমার বিয়ে হতো, তাহলে কি আমাদের বাচ্চাটা নিধির মতোই হতো?
দুধের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মেশানো আছে। কিন্তু খুব কম মাত্রার। মেয়েটা মিনিমাম বারো ঘন্টা ঘুমাবে। MP5 টেবিলের ওপর রেখে নিধিকে কোলে নিলাম আমি। রান্নাঘরের বাতি নিভিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
রাত বারটার দিকে কাল রঙের একটা মাইক্রোবাস এসে বাসার সামনে থামল। নিধি আমার কোলেই ঘুমিয়ে আছে। দ্রুত ওকে মিরার ঘরে শুইয়ে দিয়ে এলাম। দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে তালা মেরে দিলাম।
কিচেনে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে কারেন্ট চলে গেল। ওরা মেইন সুইচ অফ করে দিয়েছে। গলায় ঝোলানো নাইটভিশন গগলস পরে নিলাম আমি। সাবমেশিনগানটার হাতল শক্ত হাতে চেপে ধরলাম। টের পেলাম আমার শরীর টানটান হয়ে আসছে। রক্তে কোলাহল শুরু হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরু হচ্ছে! যুদ্ধ!

১৬

তিনজনের একটা দল ঢুকল গেট দিয়ে। দোতলার জানালা দিয়ে নাইট ভিশনে পরিস্কার দেখলাম আমি। দুজনের হাতে একে ৪৭। একজনের হাতে পিস্তল। পিস্তলওয়ালাটা রবিন। সে দল থেকে আলাদা হয়ে বাইরে সারভেন্টস কোয়ার্টার আর দারোয়ানের ঘর ঘুরে এল। সম্ভবত সবাইকে মেরে ফেলেছে। সিজার মূল দরজার দিকে এগিয়ে এল। ওর পিছে বাকি দুইজন।
আমি কিচেন ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। সিঁড়ির কাছে গিয়ে উঁকি দিলাম। নিচের ঘরগুলো খুঁজছে ওরা। বাইরে হঠাৎ ভয়ঙ্কর আওয়াজে বাজ পড়ল। আমি সাবমেশিনগানের স্টক কাঁধে ঠেকালাম। ডান হাত দিয়ে mp5 ধরে বাম হাতে সিঁড়ি দিয়ে একটা গ্রেনেড গড়িয়ে দিলাম। রবিনের পায়ের কাছে গিয়ে থামল ওটা। সিজার আর ডিউকও দেখতে পেয়েছে ডিমের মত দেখতে মৃত্যুদূতকে।
মাটিতে ঝাপিয়ে পরে কভার নিল তিনজনই। প্রচণ্ড শব্দে ফাটল গ্রেনেড। রবিনের চিৎকার শুনতে পেয়ে বুঝলাম আহত হয়েছে ও। দরজা দিয়ে আবার সিঁড়িতে বের হলাম আমি। রবিন হলরুমে পড়ে ছটফট করছে। একটা পা দেখলাম হাঁটুর নিচ থেকে আলাদা হয়ে গেছে। বাকি দুজনকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সাবমেশিনগানের ট্রিগার টিপে ধরলাম। দুপ দুপ করে শব্দ হল আর রবিন একটা চিৎকারের সাথে ভবযন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে পরপারের পথে যাত্রা করল। দ্রুত লাফিয়ে আবার ভেতরে ঢুকে গেলাম আমি। তখনই একে৪৭ এর ব্রাশফায়ার দরজার চৌকাঠ চুরমার করে দিল। সিজারের হিব্রু ভাষার চিৎকার শুনতে পাচ্ছি। ফিলিস্তিনে কাজের সুবাদে হিব্রু জানি আমি। সিজার ওয়াকিটকিতে যা বলছে তার সারমর্ম হল তারা অজানা শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত। আর রবিন মারা গেছে। ব্যাকআপ শহিদুলকে ভেতরে পাঠানো হোক।
ওরা উঠে আসছে। আমি কিচেনে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। দরজার নিচের ফাঁক দিয়ে তীব্র আলোর ঝলকানি দেখতে পেয়ে বুঝলাম ওরা আমার ফাঁদে পা দিয়েছে। দরজার নিচে আমি একটা ফ্ল্যাশ গ্রেনেড এমন ভাবে বেঁধে রেখেছিলাম যেন কেউ ঢুকতে গেলেই সুতোয় টান লেগে পিন খুলে যায় আর ফ্ল্যাশব্যাং বিস্ফোরিত হয়।
দরজা খুলে বের হয়ে বুঝলাম হিসেবে বড় একটা ভুল করেছি। ওরা ঢোকার আগে একটা ফ্ল্যাশব্যাং ছুড়েছিল ভেতরে। সেটাই ফেটেছে। সিজার আর ডিউক কাউবয়ের মত ভাব নিয়ে ভেতরে ঢুকছে এখন। মুহূর্তের মধ্যে আমার কারিগরি ফলানো ফ্ল্যাশব্যাংটা বিস্ফোরিত হল। তিনজনই অন্ধ হয়ে গেলাম।
সিজার আর ডিউক না দেখেই এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে । আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। হঠাৎ যেন বুকে হাতুড়ির বাড়ি পড়ল। উড়ে গিয়ে রান্নাঘরে পরলাম। দম আঁটকে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুঝলাম গুলি লেগেছে। কেভলার ভেদ করতে পারেনি এটাই বাঁচোয়া। হাচড়ে পাচড়ে উঠে দাঁড়ালাম। চোখে প্রায় কিছুই দেখতে পারছি না। আচমকা আমার বা চোঁয়ালে ভয়ানক একটা ঘুসি মারল কে যেন। সাথে সাথেই লাথি। পরে গেলাম সিঙ্কের ওপর। সামলে নিতে না নিতেই আবার.........।
“ওঠ। হারামজাদা! খা....র পুলা!” অশ্রাব্য ভাষায় গাল দিয়ে উঠল শহিদুল। “মাইয়াডা আর পিচ্চিডা কই? কথা ক, নইলে কাইটা গাঙ্গে ভাসাইয়া দিমু। ওঠ।”
সিজার আর ডিউক টলতে টলতে দরজায় এসে দাঁড়াল।
“Ask the bastard!” চেঁচিয়ে শহিদুলকে বললো সিজার, “Where is the girl?”
দুজনেই এগিয়ে এল। সিজার আর শহিদুল আমাকে ধরে দাড় করাল। ডীঊক প্রচণ্ড এক আপারকাট বসাল চোয়ালে। দুচোখে সর্ষেফুল দেখলাম আমি। দলের মেয়েটা এসে কিচেনে ঢুকল।
“Duke. They aren’t here.” জ্যানেট বলে উঠল। ও সম্ভবত পুরো বাড়িটা ঘুরে এসেছে এতক্ষনে।
“What?” নিখাদ বিস্ময় ফুটে উঠল ডিউকের গলায়, “this is impossible.”
মীরা আর নিধি এ বাড়িতে নেই, খবরটা পাওয়ার পর শহিদুল আর সিজারের হাতের বাধনে ঢিল পরল খানিকটা। এটাই শেষ সুযোগ। মেঝেতে গোড়ালি ঠুকলাম আমি। শু নাইফের ফলা থ্যাচ করে বেড়িয়ে এল। সামনে ডিউক দারিয়ে ছিল। কষে লাথি মারলাম ওর তলপেটে। পুরো পেট ফেরে গেল বেচারার। কোন আওয়াজ না করেই পেট চেপে ধরে শুয়ে পরল সে।
শহিদুল আর সিজার কিছু বোঝার আগেই নাকে মুখে আর ঊরুসন্ধিতে বেমক্কা গুতো খেয়ে পড়ে গেল। কিচেনের নাইফ কম্পার্টমেন্ট হাতের নাগালেই ছিল। মেয়েটা পিস্তল ড্র করছে। বেচারি অ্যামেচার। খুব স্লো। নাইফ কম্পারটমেন্ট একটা ফল কাটার ছুরি তুলে নিয়ে ছুড়ে মারলাম ওর দিকে। ঠিক গলায় গাঁথল সেটা। হাত থেকে পিস্তল ফেলে দিয়েছে মেয়েটা। সামনের দিকে ঝাপিয়ে পড়ে ওটা হস্তগত করলাম আমি। ডিগবাজী দিয়ে সোজা হয়ে হাঁটু মুরে বসেই গুলি চালালাম। প্রথমে সিজার সে রাইফেল তুলে ফেলেছিল। তারপর নাক চেপে ধরে বসা শহিদুল। টাইলস করা কিচেনে ওদের মগজ বিচিত্র লাল হলুদ নকশা তৈরি করল। ডিউক এখনো মরেনি। পিস্তল দিয়ে ওর খুলিও উড়িয়ে দিলাম। পুরো ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটল যে কিছু বোঝবার মত সময় পায়নি কেউ।
এইবার ক্লিনিং। লাশগুলো রাত পোহাবার আগেই গায়েব করতে হবে। উপস্থিতির প্রমাণ লোপাট করতে হবে। মীরাকে ওরা পায়নি। পাওয়ার কথাও না। ওরা এই বাড়িতেই ছিল। মীরার বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারছি না। এই বাড়িতেই একটা পাতালঘর আছে। মীরা খুব সম্ভবত ওই ঘরে বসেই তার গোপন কাজগুলো করত। সারা বাড়িতে একটা ল্যাপটপ ছাড়া আর কিছু না পেয়ে সন্দেহ হয় আমার। বসার ঘরে বড় সোফার নিচেই দরজাটা আছে। সোফা সরিয়ে ভাল করে না দেখলে বোঝা যাবে না। ওখানেই মীরা আর নিধিকে লুকিয়ে রেখে এসেছি। লাশগুলোর দিকে তাকালাম আমি। এগুলোর একটা ব্যবস্থা না করলেই নয়।

১৭

ভোর হয়ে গেছে। আমার ল্যান্ড ক্রুজার ছুটছে চট্টগ্রামের দিকে। দুপুরের আগে কক্সবাজার পৌছতে পারব বলে মনে হয় না। আকাশ মেঘলা। আজও সারাদিনে সূর্যের চেহারা দেখব বলে মনে হচ্ছে না। পাহাড়ি রাস্তা কাল রাতের বৃষ্টির পানিতে পিচ্ছিল হয়ে আছে। আমাকে খুব সাবধানে ড্রাইভ করতে হচ্ছে।
আপাতত মীরাকে কক্সবাজারে লুকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারন বাকি পৃথিবীর জন্য ওরা দুজনেই এখন মৃত। বাংলাদেশ এখন আর ওদের জন্য নিরাপদ না। ওদের পরিচয় বদলে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে হবে। ওদের নতুন পরিচয় আর পাসপোর্ট যোগাড় করতে আমার সপ্তাহখানেক লাগবে। ততদিন ওদের লুকিয়ে রাখতে হবে।
মীরাদের বাড়িটা জ্বালিয়ে দিয়েছি আমি। পুলিশ জানবে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। বাড়ির দারোয়ান, মালি, কাজের বুয়া, মালিক আর তার মেয়ের আগুনে পুড়ে মৃত্যু। ভেতরে দুটো মর্গ থেকে চুরি করে আনা মহিলা আর বাচ্চার লাশ ছিল। কাজের লোকগুলোর জন্য খারাপ লাগছে। বেচারারা খামকাই মারা পড়ল। খুনিদের লাশগুলোর বেশ ভাল ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এই জীবনে ওদের লাশ কেউ খুঁজে পাবেনা।
আকাশের দিকে তাকালাম আমি। মেঘ কেটে গেছে। ভোরের প্রথম সূর্যের আলো ঘুমন্ত মীরার মুখে পড়ল। এই আলোতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে মীরাকে। আমার একবার মনে হল জাহান্নামে যাক সব। নতুন করে জীবন শুরু করি না কেন? আমি, মীরা আর নিধি। এই অপূর্ব মুখটার দিকে তাকিয়েই তো আমি জনম জনম পার করে দিতে পারব।
জীবনে তো প্রায় সবই পেলাম। বাকি অপূর্ণতাটুকুও ঘুচিয়ে দেই। আমারও তো ইচ্ছে করে আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মত বাঁচতে। আমারও তো ইচ্ছে করে সারাদিন পর বাসায় ফিরে একটি মায়াবতী মুখ দেখতে। মিষ্টি একটা বাচ্চা বাবা বাবা বলে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরুক আমায়। এই খুন খারাবি আর কত? আমার আবার সেই আঠার বছরের তরুণটির আবেগ নিয়ে মীরাকে ভালবাসতে ইচ্ছে করল।
নিধির দিকে তাকালাম আমি। ওর বাবা যত বড় অপরাধীই হোক। এই বাচ্চা মেয়েটিকে তো আমিই পিতৃহীন করেছি। আমি কি পারবোনা ওকে পিতার ভালবাসা দিতে? নিজের প্রতি ঘেন্না হল আমার। আমি এত নিরুপায় কেন? নিয়তির সামনে আমি এতটা অযোগ্য এতটা অসহায় কেন?
--------------------­­--------------

পরিশিষ্টঃ

রাহাত সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে। মীরা আর নিধি সুইজারল্যান্ড চলে যাচ্ছে। কাল রাত ১২টায় ফ্লাইট। ওখানে যাওয়ার তিন মাসের ভেতর মীরা আর নিধি ওখানকার সিটিজেনশিপ পেয়ে যাবে। মীরার আর ওর স্বামীর সব ব্যবসা সব এখন বোর্ড অফ ট্রাস্টির হাতে। সেই বোর্ডের প্রধান রাহাত। সে কিভাবে ঘরে বসে থেকে এত দ্রুত এত ব্যবস্থা করল মীরা জানেনা। জানার কোন ইচ্ছেও নেই।
সপ্তাহ খানেক ধরে রাহাত ওদের সাথেই ছিল। এই সময়ে মীরা রাহাতের সাথে একটা কথাও বলেনি। রাহাতও কথা বলার চেষ্টা করেনি। রাহাতের ওপর রাগ হচ্ছে মীরার। গাধাটা একবারও তাকে বললনা, “দরকার নেই তোর যাবার, যেতে হবেনা তোকে”। যদি শুধু একবার বলত। তাহলেই তো মীরা থেকে যায়। কালকের পর হয়ত আর কখনোই দেখা হবেনা।
আজ সকাল থেকেই প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। মীরা দেখল রাহাত বাইরে বাগানে দাঁড়িয়ে ভিজছে। ওর মনে পড়ল আঠার বছর আগে এমনই এক দিনে রাহাত তাকে বলেছিল, “আজ আমরা বৃষ্টি বিলাস করব। তোকে নিয়ে আজ বৃষ্টিতে ভিজব। তুই কি আমার হাত ধরে থাকবি?“
সেদিন সে রাহাতকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। ছেলেটা আসলেই বদ্ধ পাগল। একাই বৃষ্টিতে ভিজছে। এটাও ভুলে গেছে যে বৃষ্টি বিলাসে একজন সঙ্গী দরকার হয়। একা একা বৃষ্টি উদযাপন করা যায় না।
ঝুম বৃষ্টিতে মীরা বাগানে নেমে গেল। রাহাতের পাশে দাঁড়িয়ে ওর হাত ধরল। সেই হাত পরম মমতায় আর্দ্র। রাহাত শক্ত করে মীরার হাত চেপে ধরল। সেই হাত প্রতিজ্ঞা রক্ষায় কঠিন কিন্তু ভালবাসায় কোমল। আকাশের দিকে তাকাল মীরা। আকাশে মেঘ। জলভরা ঘনকাল মেঘ। অনেকটা ওদের জীবনের মতই।

~~ শোভন নবী

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ