গল্পঃ """নতুন পথ চলা"""
•
অন্ধকার ঘরে কাগজের টুকরো ছিড়ে কেটে যায় আমার সময়।
তুমি চলে গেছ জানি স্মৃতিরাও দোলে যেমন শূণ্য ফুল বইয়ে রয়ে যায়।
রেখেছিলাম তোমায় আমার হৃদয় গভীরে তবুও চলে গেলে এই সাজানো বাগান ছেড়ে আমি রয়েছি তোমার অপেক্ষায়।
নিকষ কালো এই আঁধারে স্মৃতিরা সব খেলা করে রয় শুধু নির্জনা।নির্জনতায় আমি একা
একবার শুধু চোখ মেল দেখ আজও পথে চারি আলো তুমি আবার আসবে ফিরে বিশ্বাস টুকু দুই হাতে আঁকড়ে ধরে
•
মুখে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে থাকে, হাতে গিটার নিয়ে গানের এই কলি গুলো বাজাতে থাকে।রাতের আঁধারে ছাদে বসে রাতের প্রকৃতি দেখে, সিগারেটের ধোঁয়া আর গিটারের ধ্বনির মাধ্যমে নিজের কষ্ট গুলো রাতের আকাশে উড়াতে ব্যর্থ চেষ্টা করে।
.
একটা মেয়ে জানালার কাছ থেকে গিটারের ধ্বনি শুনে আর চোখের জল ফেলে।কিন্তু গিটারের ধ্বনি শুনে কেন মন খারাপ করে? কেন চোখের জল ফেলে? সে জানে না।সে গিটারের টোনের সাথে নিজেকে হারিয়ে ফেলে।তারপর কখন যে নিজের অজান্তেই চোখ থেকে জল পড়ে, বুঝতে পারে না।
.
প্রতিদিনেই ছেলেটা মনের দুঃখে সিগারেট খেত, গিটার বাজাত।তখন পুরনো দিন গুলির কথা তার মনে পড়ে যেত।কখনো বসন্ত ঘেরা স্মৃতি, কখনো বৃষ্টি ভেজা স্মৃতি।কখনো কুয়াশা ভেজা সকালের স্মৃতি।ঐ সময় তার চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা নোনা জলও গড়িয়ে পরত।যখন বুঝতে পারত তখন মুচকি একটা হাসি দিয়ে দুই হাতে পানিটা মুছে ফেলত।
•
যেদিন থেকে নতুন বাসাতে এসেছে, সেদিন থেকেই মেয়েটা গিটার বাজানো শুনে আসছে।কিন্তু কে এই গিটার বাজায় সে জানে না।প্রতিদিন একটা গান কেন বাজায় সেটাও বলতে পারে না।আবার ছাদে উঠে শুনতেও পারে না, কাছে গিয়ে কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারে না।কারণ মেয়েটার মনে একটা ভয় ও একটা বাঁধা কাজ করে।তারপর আরও কিছুদিন চলে যায়।একদিন মনে সাহস নিয়ে ছেলেটাকে এক নজর দেখতে ছাদে যায়।কিন্তু ভয়ে কাছে যেতে পারেনি দূর থেকেই এক নজর দেখে।ঐ-দিন এর পর থেকে প্রায় সময় ছাদে যেত।শুধু ছেলেটাকে এক নজর দেখার জন্য।
.
এভাবে কয়েকটা মাস চলে যায়।কিন্তু সে এই রহস্য বের করতে আর পারেনি।কারণ তার সম্পর্কে কার কাছ থেকে জানবে? সে তো এই বাসাতে নতুন এসেছে।বিকালে চা খেতে থাকে, এক মনে সূর্য ডুবা দেখতে থাকে।মনে মনে ভাবে, ছেলেটাকে নিয়ে কেন এত চিন্তা করে! তার কি আর কোনো কাজ নেই? আর কোনো কর্ম নেই? মনে মনে বলে, আমাকে এই রহস্য বের করতেই হবে।এই চিন্তা থেকে মুক্তি পেতেই হবে।
.
মাগরিবের নামাজ পড়ে চিন্তা করতে থাকে, কার কাছ থেকে ছেলেটার সম্পর্কে জানতে পারবে? মনে মনে বলে, উনার মার কাছ থেকে জেনে নিব? কিন্তু উনার মা যদি কিছু মনে করেন! আবার বলে, করলে করবে উনার কষ্টের কাহিনীটা তো জানা যাবে।এসব না না ধরণের কথা মনে মনে একা একাই বিড় বিড় করে বলতে থাকে।
•
পরদিন বিকালে ছেলেটার সম্পর্কে জানতে তাদের ফ্ল্যাটে যায়।কলিং বেল বাজাতেই ওর মা দরজা খুলে।দরজাটা খুলতেই অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।কিন্তু অবাক চোখে তার দিকে কেন তাকিয়ে আছে বুঝতে পারছে না।
.
- আস-সালামু আলাইকুম
সালামের কথা শুনে উনার কল্পনা থেকে ফিরে আসে।
- ওলাইকুম আস-সালাম
- কেমন আছেন?
- ভালো আছি, কিন্তু তুমি কে?
তোমাকে তো চিনলাম না।
- জ্বি আন্টি আমি ফারাহ আমার বাবা আপনাদের বাসায় নতুন বাড়া এসেছে।
- একি! তোমাকে ভিতরে না নিয়েই কথা বলতেছি এসো ভিতরে এসো।
.
তারপর ফারাহকে ড্রয়িংরুমে বসিয়ে নাস্তা নিয়ে আসে।কিন্তু উনি যে তাকে দেখে অবাক হয়েছেন।এটা তাকে বুঝতে দিচ্ছেন না।আবার ফারাহ বলতে শুরু করে
- কয়েক মাস হয়ে গেল কিন্তু এখন পর্যন্ত আপনার সাথে পরিচয় হলো না।তাই আসলাম পরিচয় হতে।আপনাকে আবার বিরক্ত করিনি তো!
তিনি বলেন
- একি বল মা বিরক্ত হব কেন! তুমি আসছ আমার ভালই হয়েছে তোমার সাথে একটু কথা বলা যাবে।আর আমি তো সারাদিন একাই থাকি।তা তুমি কি কর?
- আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি।আচ্ছা আন্টি কাউকে তো দেখছি না
- আমার এক ছেলে, এক মেয়ে।ছেলেটা রুমে আছে, মেয়েটা প্রাইভেটে গেছে এখনেই মনে হয় চলে আসবে।
- ও আচ্ছা।
- ছেলেটার নাম তাওহীদ, মেয়েটার নাম মাওয়া।
•
এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে।উনি দরজা খুলতেই মাওয়া চমকে যায়।অবাক চোখে ফারাহর দিকে তাকিয়ে থাকে।মাওয়ার এমন আচরণে ফারাহ অনেক অবাক হয়।কিন্তু কারণ জিজ্ঞাসা করতে পারেনি।তারপর তার সাথে মাওয়াকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
- এ হলো ফারাহ আমাদের বাসাতে নতুন বাড়া এসেছে।ফারাহ এই হলো মাওয়া।তারপর দুজনেই টুকটাক কথা বলে।
.
এর পর থেকে প্রায় দিনেই প্রায় সময়েই ফারাহ এসে কথা বলত, সময় কাটাত।কখনো তাওহীদের মায়ের সাথে, কখনো তার বোনের সাথে।তাওহীদের সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করতে পারত না।কিন্তু ফারাহ যে কারো সম্পর্কে জানতে চায়তো; এটা আবার উনি বুঝতে পারতেন।তাই ফারাহকে প্রশ্ন করত, কিন্তু ফারাহ কাটিয়ে নিত।
.
তাওহীদ কয়েকদিন ধরে একটা জিনিস লক্ষ করছে, তাদের ফ্ল্যাটে কেউ একজন আসে।মাঝে মাঝে নিজের রুম থেকে একটা নারী কণ্ঠ শুনে।মাঝে মাঝে কণ্ঠটাকে তার খুব চিনা মনে হয়।আবার মাঝে মাঝে কণ্ঠটাকে খুব অচেনা মনে হয়।একদিন তার মাকে জিজ্ঞাসা করে।
.
- মা আমাদের রুমে কেউ কি আসে?
- হ্যাঁ পাশের ফ্ল্যাটের নতুন বাড়াটিয়ার মেয়ে আসে।
- ও আচ্ছা।
- জানিস মেয়েটা দেখতে না খুব লক্ষী এমন একটা বউ হলে খারাপ হয় না।
- মা তুমি আবার শুরু করলে?
পাশ থেকে তার বোন বলে
- মা কি শুরু করেছে হুম? মা তো ঠিক কথাই বলেছে।
- মায়ের সাথে তুইও শুরু করলি!
- হুম করেছি বেশ করেছি।কোন সমস্যা?
.
এভাবে প্রায় সময় ফারাহকে নিয়ে তাদের মাঝে কথার কাটাকাটি হতো।মাঝে মাঝে তাওহীদ খুব বিরক্ত হতো, মাঝে মাঝে চুপ করে থাকত, আবার মাঝে মাঝে রুমে বা ছাদে চলে যেত।
.
একদিন গিটার বাজাচ্ছে হঠাৎ ফারাহর কথা তার মনে পড়ে যায়।তখন বারবার ফারাহ তার মনের মাঝে চলে আসতে থাকে।ভুলতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।সাথীর কথা মনে হতেই চোখে জল চলে আসে।তখন এক মনে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
•
একদিন তাওহীদের সম্পর্কে জানতে চায়লে তিনি বলতে শুরু করেন।
আমার ছেলেটা এমন ছিল না।তার জীবনটা এরকম ছিল না।তার জগৎ টা অন্য রকম ছিল।তার জীবনটাও ভিন্ন রকম ছিল।আগের তাওহীদ আর এখানকার তাওহীদের মাঝে দিন-রাত তফাত।আমাদের দিন গুলি সুখেই চলে যাচ্ছিল।কোনো দুঃখ ছিল না, কোনো কষ্ট ছিল না।কিন্তু একটা দূর্ঘটনার পর থেকে সব পরিবর্তন হয়ে যায়।ঐ দূর্ঘটনার পর থেকে আমার ছেলেটা এই রকম হয়ে যায়।
.
যে ছেলেটা দিন-রাত নিজে হাসত আবার অন্যদেকেও হাসাত।আজ সে ছেলেটাই একটা রুমে দিন-রাত আবদ্ধ হয়ে থাকে।রাতের আঁধারে সিগারেট খেয়ে আর গিটার বাজিয়ে রাত পার করে।উনি কথা গুলো বলে কেঁদে ফেলেন।
.
আন্টি উনার জীবনে কি এমন ঘটেছিল?
.
আজ থেকে এক বছর আগে তার হবু স্ত্রী মারা যায়।তার হবু স্ত্রীর মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিল না।ওকে সন্ত্রাসীরা ট্রাক চাপা দিয়ে মারে।কিন্তু এই মৃত্যুটা তাওহীদ সহ্য করতে পারেনি।তারপর থেকেই সে এমন হয়ে যায়।
তাওহীদ ওর স্মৃতি গুলোকে ভুলতে পারে না।কি করেই বা ভুলবে! আমার ছেলে ছোট থাকতেই; আমার বান্ধবীর মেয়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক করি।এই বিষয়টা তাদেরকেও বলি।কিন্তু বিয়ে কি জিনিস তারা বুঝেনি।আবার ঐদিন থেকেই তারা কেমন করে যেন এক আত্মা হয়ে গিয়েছিল।
•
তাওহীদ লেখা-পড়া শেষ করতেই গোয়েন্দার চাকরি পেয়ে যায়।সাথী অনার্স ৩য় বর্ষে উঠলে; তাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করি।কিন্তু বিয়েটা আর হয়নি।যেদিন সাথী মারা যায় সেদিন সাথীর এক বান্ধবীর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিল।হঠাৎ এক ট্রাক এসে তাদের গাড়িকে ধাক্কা মারে।তারপর দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।ভাগ্য গুণে তাওহীদ বেঁচে যায় আর সাথী মৃত্যু বরণ করে।কিন্তু সাথীর এই মৃত্যু তাওহীদ সহ্য করতে পারেনি।তারপর থেকেই সে ...
কথাটা শেষ করতে পারেনি; তার আগেই দু-জনের চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকে।পাশে ফিরে তাকালে মাওয়ার চোখেও পানি দেখে।কিছুদিন পর জানতে পারি তার শত্রুরা এই কাজ করেছে।
.
- ফারাহ মা তোমাকে একটা কথা বলব কথা দাও কথাটা রাখবে!
ফারাহ কি বলবে বুঝতে পারছে না, চুপচাপ বসে থাকে।
- আমি তোমাকে জোর করব না।তোমার মত থাকলে আমরা তোমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলব।
.
তিনি মনে করেন ফারাহ তাওহীদকে আবার আগের মত ফিরিয়ে আনতে পারবে।এবং সাথী বলেছিল তাকে আবার বিয়ে দিতে।তাই সাথীর কথা রাখতে গিয়ে তিনি ফারাহকে বিয়ের কথা বলেন; ফারাহকে বলার কারণ ছিল ফারাহর চাল-চলন এবং আচার-ব্যবহার।যেটা খুব কম মেয়েদের মাঝে দেখা যায়।এবং ফারাহ যে তাওহীদকে পছন্দ করে, এটা তিনি বুঝতে পারেন।তাই উনার বিশ্বাস সে পারবে।
.
ফারাহ কি বলবে! নিজের বিয়ের কথা নিজের মুখে কি করে বলবে? তাই চুপ করেই থাকে।
- ফারাহ তোমাকে আর একটা বলি!
- জ্বি বলেন
- সাথী আর তুমি তোমরা দু-জনেই দেখতে প্রায় এক।তাই আমি আর মাওয়া তোমাকে প্রথম দেখে চমকে গিয়েছিলাম।
তখন মাওয়া সাথীর একটা ছবি ফারাহর হাতে দেয়।ফারাহ এক দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
•
ফারাহ রাতের চাঁদ দেখতে থাকে, আপন মনে তাওহীদকে নিয়ে ভাবতে থাকে।সে মনে করেছিল তাওহীদের সম্পর্কে জানলে তার চিন্তা গুলো ভাবনা গুলো কমে যাবে।কিন্তু এখন! আরও বেড়ে গেল।সময়ে অসময়ে তাকে নিয়ে ভাবে, একটু নিরবতায় থাকলে কল্পনায় এসে পড়ে।কিন্তু তাকে নিয়ে কেন ভাবে? সময়ে অসময়ে তাওহীদের কথা তার মনে কেন আসে? সে বুঝতে পারে না।সে মনে মনে বলে, তাহলে আমি কি তার হৃদয়ের মাঝে আটকে গেছি? উফ! আর কিছু ভাবতে পারছি না, কি করব আমি?
.
পরদিন সকালে কোকিলের কুহু কুহু ডাকে ফারাহর ঘুম ভাংগে।প্রকৃতির দিকে তাকাতেই দেখে গাছপালা নতুন রুপে সেজে আছে।প্রকৃতির এই রুপ দেখে তার মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।ক্যালেন্ডারে চোখ বুলাতেই দেখে আজ পহেলা বসন্তে পা দিয়েছে।
বিকাল বেলা বেলকনি থেকে দেখে, কত নর-নারী সেজে বাসা থেকে বের হয়েছে।তার মনেও বসন্তের দোলা লাগে কিন্তু কাকে নিয়ে বের হবে? তাই মন খারাপ করে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া মানুষ গুলোকে দেখতে থাকে।
.
রাতে তাওহীদ একটার পর একটা সিগারেট খেতে থাকে।কারণ সিগারেট খেলে তার কষ্ট একটু হলেও কমে! কিন্তু সাথীকে ঘিরে বসন্তের পুরনো স্মৃতি গুলো বারবার মনে হতেই থাকে।সে কি করবে বুঝতে পারছে না, কি করলে একটু কষ্ট কমবে বোঝে উঠতে পারছে না।শুধু ছটপট করতে থাকে।
.
দূর থেকে তাওহীদের কষ্ট দেখে ফারাহর বুকের ভিতর চিন চিন করে ব্যথা করতে শুরু করে।তার চোখে জল জমতে শুরু করে।সে মনে মনে ভাবে, একটা মানুষ অন্য একটা মানুষকে কতটুকু ভালোবাসলে এই রকম কষ্ট অনুভব করতে পারে? তাওহীদের কষ্ট দেখে সে চুপ করে থাকতে পারেনি; পাশে এসে চুপচাপ ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।হঠাৎ মেয়ে কান্না শুনে পাশে ফিরতেই চমকে ওঠে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।তারপর তাওহীদ বলে
•
- কি ব্যাপার আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি কে? আর এতরাতে এখানেই বা কি করেন?
রাগে অভিমানে ফারাহ বলে
- আমি কাঁদলেই কি বা না কাঁদলেই কি তাতে আপনার তো কোন আসে যায় না।আমি ফারাহ আপনাদের বাসায় বাড়া থাকি।কেন রাতে কি ছাদে উঠা নিষেধ?(মনে মনে বলে, আপনাকে কতটুকু ভালোবাসি যদি একবার বোঝাতে পারতাম!)
তাওহীদ বলে
- উল্টা প্রশ্ন করেন কেন? চুপচাপ নিচে চলে যান।
- কি আমি বেশী কথা বলেছি? আপনি প্রশ্ন করেছেন আমি শুধু তার উত্তর দিয়েছি।
- ও আচ্ছা! উত্তর তো দিয়েছেন, তাহলে এখন চলে যান।
- না যাব না, প্রথমে আপনার গিটার বাজানো শুনব তারপর যাব।
- এই যে বাচ্চাদের মত এত ন্যাকামী করছেন কেন?
-কিহ! আমি ন্যাকামী করছি?
- তা না হলে কি?
- আমি মোটেও ন্যাকামী করছি না।
- ঠিক আছে তাহলে আপনিই ছাদে থাকেন।
কথাটা বলেই তাওহীদ নিচে চলে যেতে থাকে।এছাড়া সে কি করবে? তার মেজাজটা যে নষ্ট করে দিয়েছে।ফারাহ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মন খারাপ করে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
তারপর একদিন ফারাহ মাওয়ার কাছ থেকে তাওহীদের সম্পর্কে সব জেনে নেয়।কারণ সে কি রকম তাতো ফারাহ জানে না।মাওয়ার কাছ থেকে সব কিছু শুনার পর, তার চোখে পানি অনুভব করে।এখন সে কি করবে সেটাই ভাবতে থাকে।কারণ তাওহীদের সম্পর্কে যা জেনেছে তাতে ওকে পেতে হলে তাকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।
•
এর পর থেক ফারাহ প্রায় দিনেই তাওহীদের কাছে আসতে চায়তো, মাঝে মাঝে টুকটাক কথা বলতে চায়তো, আবার অনেক সময় দূর থেকেই চুপ করে থাকতো।কিন্তু তাওহীদ খুব বিরক্ত হতো; বারবার তাকে অপমান করতো।ফারাহ শুধু চুপ করে সব অপমান সহ্য করে যেত।কোনো সময়েই রাগ দেখাতো না, কিছু বলতো না।শুধু মলিন মুখে তার দিকে তাকিয়ে থাকতো।
.
তার এমন ব্যবহারে ফারাহ খুব কষ্ট পেত। তাই সব সময় মনমরা হয়ে থাকতো।কোনো কিছুই তার ভালো লাগতো না।অনেক সময় তার বাবা আবার অনেক সময় তার মা দূর থেকে তার কষ্ট দেখতো।কিন্তু কোনো কিছুই বলতে পারতো না।কারণ তারাও এই ব্যপারটা জানতো।ফারাহ এক মনে মেঘলা আকাশ দেখতে থাকে আর তাওহীদের কথা ভাবতে থাকে।
.
অনেক দিন পর আবার সাথীকে তার খুব মনে পড়ছে।তার মায়াভরা মুখটা বারবার চোখে ভেসে উঠছে।যখন সাথীর কথা মনে হয় তখন তার একটার পর একটা খেতে হয়।আজ আবার তাকে ঘিরে বৈশাখের স্মৃতি গুলো মনে পড়ে যায়।সে সব সময় চায় স্মৃতি গুলো ভুলে থাকতে, কিন্তু আজ আবার! সাথী চলে যাওয়ার পর থেকে রাগে-অভিমানে নিজেকে শেষ করে দিতে সিগারেট খাওয়া আরম্ভ করে।কিন্তু তার কোনো অসুখেই হয় না।তার অসুখ কেন হয় না, সে ভেবে পায় না।
•
তাওহীদ মনের দুঃখে একটার পর একটা সিগারেট খেতে থাকে আর রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।ফারাহ ছাদে এসে তাওহীদকে এই অবস্থায় দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনি।ধীরে ধীরে তাওহীদের পাশে যায় তারপর বলে
- এই যে! এই যে! এত সিগারেট কেন খাচ্ছেন? অতিরিক্ত সিগারেট খেলে তো অসুখ হবে।
কথাটা শুনে তাওহীদের মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।কারণ ঘরেও তাকে নিয়ে কথা শুনতে হয়।আবার ছাদেও তার জন্য অশান্তিতে থাকতে হয়।এখন ছাদে আসলেই সব সময় তার পিছু পিছু থাকবে।পাশে ফিরে রাগে
- ঠাসসস(চড় বসায়)
এক গালে হাত দিয়ে ভেজা চোখে ফারাহ আবার বলে
- দয়া করে সিগারেট-টা ফেলে দেন! সিগারেট-টা ফেলে দিলে কি খুব বেশী অসুবিধা হবে?
অতিরিক্ত রাগে
- ঠাসসস(আবার থাপ্পড় বসায়)
- এই মেয়ে এই একদম চুপ একটা কথাও বলবি না।তোর মত এত বড় বেহায়া মেয়ে আমি আমার জীবনে একটাও দেখিনি।আর একটা কথা বললে এখানেই মেরে ফেলে রেখে দিব।চলে যা এখান থেকে চলে যা, আর কখনো সামনে আসবি না।দয়া করে আমাকে একা থাকতে দে!
ফারাহ কিছু না বলে মুখে উড়না চেপে কাঁদতে কাঁদতে চলে যেতে থাকে।
•
এখনো তাওহীদের রাগ কমেনি; রাগে ঐ জায়গাটাতেই দাঁড়িয়ে থাকে।মনে মনে বলে, এখন চলে গেলী কেন? তাওহীদ আবার একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া উড়াতে থাকে।তারপর ভেজা চোখে গিটারটা হাতে নিয়ে বাজাতে থাকে।
.
ফারাহ রুমে এসে বালিশ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।কিছুক্ষণ পর তার মা আসে, তাকে জিজ্ঞাসা করতেই মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।উনি বলেন কি হয়েছে? কিন্তু কিছু বলে না।শুধু কাঁদতেই থাকে।
.
তাওহীদের রাগ কমলে মনে মনে বলে, এটা সে কি করল! এভাবে না বললেও তো পারতো, এটাই কি তার প্রকৃত চরিত্র ছিল? তাওহীদ বলে, অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আর একবার দেখা হলে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।এখন তার দেখা কিভাবে পাব?
•
ফারাহ তাওহীদের কথামত তার সামনে আসে না।এখন সে সব সময় নিজেকে রুমে আবদ্ধ করে রাখে।যখন তাওহীদের কথা মনে হয়, তখন তার বুকের মাঝে চিনচিন ব্যথা শুরু হয়।ঐ সময় তাওহীদকে এক নজর দেখতে তার মনটা ছটপট করে।কিন্তু তাকে দেখতে যেতে পারে না, কারণ সে যে না করেছিল।তাই রুমে একা একাই কাঁদে।
.
একদিন তাওহীদের মা ও বোন ফারাহকে দেখতে আসে।কিন্তু আসার পর যা দেখল এবং শুনল তাতে উনি খুব কষ্ট পান।উনি বলেন, সব খুলে বল।কিন্তু ফারাহ বলতে না করে।তারপর উনার অনুরোধে সে সব খুলে বলে।
.
উনি নিজের রুমে এসে ছেলেকে ডাকতে থাকে
- তাওহীদ! এই তাওহীদ!
রুম থেকে তাওহীদ বলে
- জ্বি মা!
- তোকে নিয়ে ফারাহদের বাসায় একি শুনলাম? তুই মেয়েটাকে পছন্দ করিস না ভাল কথা কিন্তু তুই মেয়েটার সাথে একি করলি?
- মা আমি ইচ্ছা করে কিছু করেনি; ঐ মেয়েটা কয়েকদিন ধরে আমাকে জ্বালিয়ে মারতেছিল।ঐদিন আমার মনটা ভালো ছিল না।কিন্তু ও এসে এমন আরচণ শুরু করল পরে রাগে।
- তাই বলে তুই? আমার কথাতেই ফারাহ তোর সাথে কথা বলতে চেয়েছিল।আমার কথার তো কোন দাম নাই।তোর যা মন চায় তাই কর আমি কিছু বলব না।আমি মরলে আমার মরা মুখ দেখতে আসবি না।
.
তাওহীদকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়নি; তার আগেই চলে যান।এখন তাওহীদ কি করবে? একদিকে মায়ের কথা আর একদিকে পুরনো স্মৃতির ব্যথা।মনে মনে বলে, মায়ের কথাটাই রাখব পুরনো ব্যথাটাকে বুকের মাঝেই কবর দিব।তখন অনুভব করে তার চোখ দুটো ভিজে গেছে।আবার মনে মনে বলে, এখন ফারাহ কেমন আছে কে জানে।কাল নববর্ষ কাল ফারাহকে পেলেই সব ঠিক করে নিব।
•
ফারাহ মনের দুঃখে জানালার গ্রিল ধরে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে।আজ পুরো এলাকাটাকে তার কাছে অন্য রকম লাগছে।প্রত্যেকের মনে যে বৈশাখের রঙ লেগেছে সেটা তাদের কাজ কর্ম দেখেই বুঝতে পারছে।তারও ইচ্ছা ছিল বৈশাখের কন্যা হতে, কারো হাত ধরে ঘুরাফেরা করতে।তারপর দুই জনে মিলে বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজতে।কিন্তু তার এ সুযোগ কখনো হবে না।তাকে একা একাই থাকতে হবে।রাতের মেঘলা আকাশ দেখতে থাকে আনমনে আরও না না ধরণের কথা ভাবতে থাকে।
.
ফারাহ সারাটাদিন মন খারাপ করে বিকালে ছাদে আসে একটু খোলা হাওয়া খেতে।ছাদে আসার পর দেখে আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে।এবং তার সাথে দমকা হাওয়া বয়ছে, যেকোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে।বাতাসের কারণে ফারাহর কপালের পাশের চুল গুলো উড়তে থাকে।তাতে তার মনে একটু ভাল লাগা কাজ করে।তাই চোখ বন্ধ করে মুখ উপর করে বাতাসের এই খেলা উপভোগ করতে থাকে।
•
এমন সময় তাওহীদ ছাদে আসে।ফারাহকে দেখে, এক মনে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।ধীর পায়ে তার কাছে যায়।নিচু সুরে তাকে বলে
- ফারাহ!
তাওহীদের কণ্ঠ শুনে পাশে ফিরে বিস্ময় ভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।এমন সময় বৃষ্টি পড়তে শুরু করে দু-জন দু-জনের দিকে চুপচাপ তাকিয়েই থাকে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।বৃষ্টি যে পড়তেছে এটাও তাদের মনে নেই।
.
- কি হল! কথার উত্তর দিবেন না? আমার সাথে কথা বলবেন না?
.
ফারাহ আনন্দে কি বলবে বুঝতে পারছে না, তার যত রাগ-অভিমান ছিল তাওহীদের একটা কথাতেই সব ভুলে যায়।কিন্তু মিথ্যা অভিমানের অভিনয় করতে চুপ করে থাকে।
.
- ঠিক আছে কথা বলতে হবে না, আর কখনো আমার মুখটা আপনাকে দেখাতে আসব না।আমি চলে যাচ্ছি বিরক্ত করতে আর আসব না, ভালো থাকবেন।
এই কথা গুলো বলে তাওহীদ হাঁটা শুরু করে।এমন সময় পিছন থেকে ফারাহ বলে
.
- এই যে! এই যে! একা একাই চলে যাবেন? আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবেন না? আমি তো একা থাকতে পারব না।
.
ফারাহর দিকে তাকাতেই সে একটা মুচকি হাসি দেয়।বৃষ্টিতে ভেজার কারণে ফারাহকে অপরুপ দেখাচ্ছে।অঝর ধারায় বৃষ্টি পড়তে থাকে একজন অন্যজনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই থাকে।তারপর একজন আর একজনের হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে।
•
লিখাঃ MD Mahmudur Rahman Tauhid
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŽāĻ্āĻāϞāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ģ āĻāĻĒ্āϰিāϞ, ⧍ā§Ļā§§ā§
498
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§ā§§:ā§§ā§Š PM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ