369

"কুয়াশা"
®Shopnil Khademul(স্বপ্নময়ী বালক)
.
.
.
.
.
------ কুয়াশা ভেজা এক সকালে সোহাগ- জিমুর প্রথম দেখা পেয়েছিল। খালি পায়ে শিশিরের উপর দিয়ে হাটছিল জিমু।সেই পথ দিয়ে কোচিং করতে যাচ্ছিল সোহাগ।অত:পর প্রথম দেখায়...........
যদিও কখনো প্রেম ভালবাসায় বিশ্বাসী না সোহাগ।কিন্তু এই মেয়েটাকে দেখার পর মনের মাঝে কেমন জানি কম্পন সৃষ্টি হয়ে গেল।যেভাবেই হোক মেয়েটার সাথে পরিচিত হতেই হবে।কিন্তু প্রথম দিন কোন কথা বলল না।মেয়েটাকে দেখতে দেখতে অপলক দৃষ্টিতে চলে গেল। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছিল কাল দেখা হলে যেভাবেই হোক মেয়েটার সাথে কথা বলবে।
.
পরেরদিন সকালেও জিমুর দেখা পেল।
জিমুর কাছে যায়া অাজ সোজা বলে দিল.........
: অাপনার নামটা জানতে পারি??
: (___)
: কি হল বলেন??
: তাসফি রহমান জিমু।
: অাপনি কি এই এলাকায় নতুন??
: (____)
: অাপনি কি কম কথা বলেন??
: না,কিন্তু অাপনাকে অামি চিনিই না।তাহলে কথা বলতে যাব কেন??
: অামি সোহাগ।এবার Hsc দিব ।প্রতিদিন সকালে এই রাস্তা দিয়ে কোচিং করতে যাই।
: ওহহ অাচ্ছা ।
: অাচ্ছা কাল কি এখানে অাবার অাসবেন? ?
: হ্যা প্রতিদিন অাসব।যতদিন না অামার অাম্মুর দেখা পাই।
: অাপনার অাম্মু হারিয়ে গেছে।
: না।তবে অাকাশের তারা হয়ে গেছেন। যাওয়ার অাগে বলে গেছেন।অাকাশে যখন তারা উঠবে সেখানেই অামাকে খুজে পাবি।কুয়াশা ভেজা সকালে যখন হাটবি।তখন কুয়াশার মাঝে অামাকে খুজে পাবি।তাই অামি প্রতিদিন কুয়াশার মাঝে হাটি।কিন্তু অাম্মুর দেখা পাইনা। রাতের অাকাশে তারার মাঝে'ই অামার অাম্মুর খোজ করি। (মন খারাপ করে)
: ওহহ অাচ্ছা।মন খারাপ কইরেন না প্লিজ।
: অামার মন খারাপ দিয়ে অাপনার কাজ কি??
: না কিছুনা। এত সুন্দর একটা মেয়ে যদি মন খারাপ করে থাকে তাকে কি ভাল দেখা যায়!!!
: অাচ্ছা অাজ যাই।
: হ্যা....
.
সোহাগ ভাবছিল তাসফিকে কি বলে ডাকব??তাসফি??নাকি জিমু??না তাসফি নামটাই ভালো।
তাসফির মা মারা গেছেন এক মাস হল।বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটা মায়ের পাগলি মেয়ে ছিল। যেভাবে মাকে খুজে বেড়াচ্ছে!!
তাসফির মা মারা গেছেন শুনে সোহাগের মনে মনেহয় তাসফির জন্য ভালবাসা অারো বেড়ে গেল।
.
পরদিন থেকে প্রতিদিন তাসফির সাথে দেখা হতো অার টুকটাক কথা হতো।
তাসফি দেখতে যে খুবই সুন্দরী তা নয়।কিন্তু চেহারাটা খুবই মায়াবী।যে কেউ মনেহয় একবার দেখেই প্রেমে পড়ে যাবে।
.
পর থেকে তাসফি ওর মাকে কুয়াশার মাঝে খুজে বেড়াত। অার সোহাগ তাসফির সাথে কিছুটা পথ যাইত পরে কোচিং এ চলে যেত।
.
কয়েকদিনেই ওরা বন্ধু হয়ে গেল । মা মারা যাবার পর তাসফি অনেকটা অন্যরকম হয়ে গেছে।খুব একা হয়ে গেছিল। সোহাগ সবসময় চেষ্টা করত তাসফিকে হাসি খুশি রাখতে।
তাসফির দু:খ গুলো সোহাগের সাথে এখন ভাগ করে নেয়। তাসফির মা মারা যাবার 22দিন পরেই ওর বাবা নতুন বিয়ে করেছিল।সৎ মা'র অত্যাচার একদম সহ্য হয় না তাসফির। কারণ ওর মা ওকে খুব বেশিই অাদর করতেন কিন্তু সৎ মা তার 4ভাগের এক ভাগ ও করেনা।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সব গুছিয়ে পরে হাটতে বের হয়।
.
তাসফি 10 পর্যন্ত লেখাপড়া করছে।কিন্তু পরে বাড়ি থেকে অার পড়তে দেয়নি।অবশ্য বিয়েও দেয়নি।অনেকেই'ত বিয়ে দিয়ে দেয় যার জন্য পড়তে দেয়না।কিন্তু তাসফিকে বিয়েও দেয়নি পড়তেও দেয়নি।
.
এভাবেই দিনগুলো চলে যাচ্ছিল।ওরা প্রতিদিন সকালে কুয়াশা ভেজা সকালে হাটে,গল্প করে।সুখ-দু:খের গল্প।হাসি-কান্নার গল্প।
.
একদিন..........
: অাচ্ছা তাসফি তোমাকে একটা কথা বলি??
: বল।
: অাচ্ছা ধর,তুমি একটা ছেলেকে ভালবাস।
: এসব ধরতে পারবনা।অামাকে দিয়ে ওসব হবেনা।
: অারে মনে করতে বলছি।
: পারবনা।
: অাচ্ছা বাদ দাও......অাচ্ছা,শীত তো প্রায় চলেই গেল শীত চলে গেলে কুয়াশাও হারিয়ে যাবে।তখন কি অার রাস্তায় হাটবা না??
: জানিনা
: প্লিজজ বল।
: হুমম হাটব।
: সত্যি'ত??খুব খুশি লাগছে অামার।
: এতে খুশি হওয়ার কি হল??
: তুমি বুঝবানা..
: বুঝালেই বুঝব।
: না বুঝতে হবেনা।
: দেখ অামি সব বুঝতে পারছি।কিন্তু তুমি যা ভেবে রেখেছ .তা কখনো সম্ভব না সোহাগ।
: অামি'ত ভাবছি তোমার বিয়েতে খুব মজা করব।কি দাওয়াত দিবে তো??
: হুম (মন খারাপ করে)
: থ্যাংকু।
: অাচ্ছা অাজ যাই।
: অাচ্ছা
.
.
.
রাতে সোহাগ ভাবছে।তাসফিও কি মনেমনে ওকে ভালবাসে?? না হলে যখন বলল তোমার বিয়েতে দাওয়াত দিবা?? তখন ওইরকম রিয়েক্ট করল কেন??
যাইহোক......এসব ভাবতে ভাবতেই সোহাগ ঘুমিয়ে পড়ল।
.
পরদিন সকালে গেল।কিন্তু তাসফিকে কোথাও খুজে পাচ্ছিল না।সোহাগের টেনশন শুরু হয়ে গেল। তবে কি তাসফির সাথে অার দেখা হবেনা? ?ওর কি কিছু হয়েছে?? নাকি বাড়িতে প্রবলেম হইছে? ?
সোহাগ এই ঠান্ডা'র মাঝেও ঘামতে লাগল।
অাজ অার কোচিং এ গেলনা। কিছুক্ষণ পর তাসফি অাসল।
.
: অারে তুমি কোথায় ছিলা এতক্ষণ ?? জানো অামার কত টেনশন হচ্ছিল? ?
: টেনশন হবার কি হল? ?
: কিছুনা ...কেমন অাছ তাসফি??
: ভাল তুমি??
: হুম ভাল।তাসফি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।
: বল
: ভয় করছে
: ভয় পাবার কি হল!!??
: অাচ্ছা বলছি ''অামি তোমাকে খুব ভালবাসি''
: মানে???
: অামি তোমাকে ভালবাসি তাসফি। প্লিজ অামাকে ফিরিয়ে দিয়না
: কিন্তু এটা অামার পক্ষে সম্ভব না।অাজকের পর থেকে তোমার সাথে অার কথা হবেনা। ভাল থেকো।
: দেখ তাসফি। অামার পরিক্ষার অার মাত্র কয়েকদিন দিন অাছে।অাজকে কোচিং এ শেষ ক্লাস করতে যাচ্ছি অার যাবনা।তুমি যদি না করে দাও।অামিও তোমার সাথে অার কখনো দেখা করতে অাসবনা।সারাজীবনের জন্য তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যাব।
: (কান্না)
: কি হল কান্না করছ কেন??
: অামিও তোমাকে খুব ভালবাসি।কিন্তু এটা সম্ভব না। অামার অাব্বু মেনে নিবেনা।
: অবশ্যই নিবে।অামার ফ্যামিলিকে বলে অামি রাজি করব।অার অামার ফ্যামিলির সবাই তোমার অাব্বু কে বুঝিয়ে বলবে।অবশ্যই মানবে।অামার উপর বিশ্বাস রাখ তাসফি।
: কিন্তু অামার ভয় করে।
: ভয় পেয়োনা অামি অাছি তো।
: না তুমি তোমার ফ্যামিলিকে বুঝিয়ে অাগে রাজি কর।
: বুঝাব'ই তো....
: তাহলে বুঝাও??
: তাসফি অামার পরিক্ষা সামনে । পরিক্ষা টা শেষ হোক পরে বলব।কিন্তু তুমি অামার সাথে রিলেশন করবা তো প্লিজ বল।
: ভেবে দেখি।
: না না বল
: যদি তোমাকে হারাতে হয়।
: সেটা অামি দেখব। অাচ্ছা
এই কয়েকদিন তো সকালে এখানে অাসতে পারবনা।তোমার নাম্বার টা দিবা??
: হ্যা দিব।তোমার নাম্বার টা কাগজে লিখে দাও।অামি রাতে মেসেজ দিব।
: অাচ্ছা.....017730.....
: অাচ্ছা চল কিছুক্ষণ হাটি।অার তো এখানে অাসতে পারবানা কয়েকদিন।
: হ্যা চল.....
হাটতেছে অার কথা বলতেছে।
: তাসফি বিয়ে করবে অামায়?
: হুম (অাস্তে করে)
: সারাজীবন এভাবেই পাশাপাশি হাটবা তো??
: হ্যা
: ভালবাস অামায়??
: অনেক
: অাচ্ছা তুমি কি চাও অামার কাছে??
: তেমন কিছুনা একরাশ ভালবাসা,কুয়াশা ভেজা সকালে তোমার পাশে হাটতে/রাতের অাকাশে তোমার সাথে চাদ দেখতে এতটুকুই।
: অামিও তাহলে এটাই চাই।তোমার চাওয়াই অামার চাওয়া......
এভাবেই কথা বলতে বলতে দুজন হারিয়ে গেল কুয়াশার মাঝে।যদিও শীত প্রায় চলেই গেছে। কিন্তু অাজ খুব কুয়াশা চারদিকে । (সমাপ্ত)