515

_কাউকে খুঁজচ্ছেন?(আমি)
লোকটা আঁতকে উঠে বল্লো,
_হ্যাঁ না মানে.... (শুভ)
_কি হ্যা,না করছেন?
_না মানে অফিসে যাচ্ছিলাম।
ভাবলাম আপনিও তো এই সময় আপনার
অফিসে যান,তাই দুজনে না হয়
একসাথে গেলাম।
এই আর কি।।
.
লোকটা প্রায়ই এমন করে।কতবার বারণ
করছি,তবুও এমন করে।
.
_আমার যে একা যেতে ভাল লাগে!
আর আমি হেঁটে যাব।
আপনি বরং সিএনজি /রিক্সায় চলে
যান।(আমি)
_সকালে হাঁটা সাস্থ্যের জন্য ভাল।
তাই আজ হেঁটে যাব ঠিক করলাম।(শুভ)
.
উনি আমার সাথে হাঁটবেন ই
আজ,কোন বারণ মানবে না বুঝতেছি।
_কোন কথা বলছেন না যে?
আচ্ছা আপনি কি কখনো বোবা
ছিলেন আগে?তার রেশ বোধয়
কাটেনি না?(শুভ)
বিরক্তি ভরা দৃস্টি নিয়ে একবার
তাকালাম।
_কিছু তো বলুন?সকালে নাস্তা করছি
না এটা তো জিগেস করতে পারেন!
_আপনার এসি গাড়ি রেখে এভাবে
হেঁটে কষ্ট না করলেও পারতেন।(আমি)
_আমার গাড়িটা খারাপ হয়ে আছে।
তাই হেঁটে যাচ্ছি।
.
আমি জানি উনি বানিয়ে মিথ্যে
বলছেন আমাকে।
_মিস্টি কি করছে?
_কি আবার,ঘুমোচ্ছে। ভাবী রোজকার
ডিউটি পালন করছে ওকে ডেকে
ডেকে।
_ও আচ্ছা।
.
তারপর উনাকে আর কথা বলার সুযোগ
না দিয়ে আমি আমার অফিসে চলে
গেলাম,উনি উনার পথে।
.
আমি ফৌজিয়া। চট্টগ্রাম এ মাস্টার্স
এর পাশাপাশি ছোট্ট একটা চাকরি
করি পড়ার খরচ চলে শুধু সেই চাকরির
বেতনে।থাকা-খাওয়ার খরচ মাসের
শেষ সময় এ হিমশিম খেতে হয়।তখন
বাড়িতে গিয়ে বাবার থেকে
টাকা আনি। মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে
আমি।
.
আর একটু আগের লোকটা শুভ,শুভ হাসান।
উনার একমাত্র ভাতিজি মিস্টি কে
আমি প্রাইভেট পড়াই।সেখান থেকে
উনার সাথে আমার পরিচয়।
বেশ ধনী লোক উনারা।মিস্টির
মায়ের অনেক রিকোয়েস্ট এ আমি
ওদের বাসায় গিয়ে পড়াই।
.
শুভ আমার সাথে ফ্রিলি মিসতে
চান,কিন্তু আমি চাই না।কারণ এটা
উনার নিতান্তই আবেগ আমার মতে।
.
বিকালে মিস্টি কে পড়াচ্ছি
টেবিলে বসে।শুভ সেই রুমে সোফা
তে বসে ল্যাপটপ নিয়ে ব্যাস্ত। কিন্তু
আমার মনে হলো,উনি ল্যাপটপের
চেয়ে এদিকে বেশি তাকিয়ে
আছেন।খুব অসস্তি লাগছিলো আমার।
তাই ভেবে চিন্তে বল্লাম,
_শুভ,আপনি প্লিজ অন্য রুমে যাবেন?
মিস্টি পড়ায় মনোযোগ দিচ্ছে না।
বারবার আপনার দিকে ফিরছে।
.
বেচারা শুকনো হাসি দিয়ে মলিন
মুখে চলে গেলেন।আমিও সস্তিতে
পড়ালাম মিস্টি কে।
.
কিছুদিন পর অফিস ছুটির পর দেখি
দাঁড়িয়ে আছেন উনি
_কি শুভ, আজ ও আপনার গাড়ি নস্ট হয়ে
গেছে?(আমি)
_না ম্যাডাম। আসলে আজ আমার এক
বন্ধুকে গাড়িটা দিয়েছি ওর বউকে
নিয়ে ঘুরতে।ও ই বলেছিলো।(শুভ)
_ভাল।।
_আচ্ছা আপনার কোন বন্ধু বান্ধব নেই?
মানে ছিলো না?
_ছিলো।থাকবে না কেন?
_ওদের সাথে ও কি কম কথা বলতেন?
_না।
_তাহলে....?
_খুব কথা বলতাম ওদের সাথে।আমরা
সবাই যখন একত্র হতাম,তখন দুনিয়াতে
সবচেয়ে সুখি,স্বাধীন মানুষ মনে
করতাম নিজেকে।
_মারামারি করতেন না?
_হুম করতাম,অনেক মারামারি।
রাস্তাঘাট এ কম করতাম।
_এখন কথা বলেন কেন?
_এমনি।
_ফ্রেডদের অনেক ভালবাসেন?
_হুম।
_আপনি গড়গড় করে কথা বল্লে
আপনাকে বাচ্চাদের মত দেখায়।
.
সত্যিই তো, আজ আমি শুভর সামনে এমন
গড়গড় করে কথা বল্রাম।
আর উনিও এভাবে কমেন্ট করবেন
ভাবতে পারিনি।আমি ফ্রেন্ডদের
কথা বলতে লাগলে এমনই হয় সমসময়।
.
আমি কেন,আমার মনে হয় সবাই সবার
ফ্রেন্ডদের ব্যাপরে এমন।
.
একদিন মিস্টি কে পড়াচ্ছি।
টেবিলে দেখি একটা ডায়েরি।
.
_মিস্টি মা,চাচ্চুর কলম টা আর
ডায়রিতে লাল কার্ড টা এদিক
আনতো...(শুভ)
_ওকে চাচ্চু।
_তুই না হয় তোর ম্যাম কে বল,উনি
ডায়রি থেকে কার্ড টা খুঁজে দেবে।
তুই খুঁজে পাবি না।
.
বুঝতে পারলাম এর মধ্যে কোন ব্যাপার
আছে।আমার ইচ্ছে করছিলো না
ডায়রিতে হাত দিতে।
ওমনি মিস্টি ও খুঁজে পেল কার্ড
টা,আর আমি ও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
.
উনি পাশের রুমে নিজের গলায় গান
ধরলেন। " ভালবেসে সখি নিভৃতে
যতনে, আমার নামটি লেখো তোমার
মনেরও মন্দিরে......."
.
এসবের মানে না বোঝার মত বোকা
ছিলাম না আমি।বুঝেও বুঝলাম না
উনার ইচ্ছে টা।
.
একদিন হাফ অফিস ছিল।আমার এক
কলিগ শাহেদ ভাইর সাথে ছুটির
কিছুক্ষণ আগে কথা বলছিলাম। উনার
মেয়ের দুষ্টমির কথা শুনে হাসছিলাম
আমি খুব।
আমি জানতাম না যে,শুভ সেদিনও
আমার সাথে বাসায় (কাছাকাছি
ছিলো আমাদের বাসা)ফেরার জন্য
আমার অফিসে এসেছে আর এতোক্ষণ
আমাদের দেখছে।
_Excuse me, ফৌজিয়া আপনার সাথে
আমার কিছু কথা আছে। চলুন।(শুভ)
.
বেশ গোমড়া মুখে কপালে বেশ
কয়েকটা ভাঁজ রেখে কথাটা উনি
বল্লেন। উনার চোখের দিকে
তাকিয়ে বেশ অবাক হলাম। আমাকে
আরো অবাক করে শুভ বল্লেন,
_কি হলো কি? বল্লাম তো আপনার
সাথে আমার কথা আছে। শুনতে
পাননি?
.
বেশ রাগি গলায় বল্লেন কথাটা।
আমিও হতভম্বের মত হা করে তাকিয়ে
আছি। এবার উনি আমার হাত ধরে
টেনে নিয়ে আসতে লাগলেন।
নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে
পারছিলাম না, কি হচ্ছে এসব??
_আরে কি করছেন শুভ?এভাবে হাত
ধরে টানছেন কেন?
.
মুখের সামনে আঙ্গুল দিয়ে বল্লেন,
_একদম চুপ। আসুন আমার সাথে।
.
একটা পার্কের বেঞ্চি তে অনেকটা
ছুঁড়ে দিলেন আমাকে।
বেশকিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। তারপর আমিই
বল্লাম,
_ কি ব্যাপার? আপনার হঠাৎ এই
আচরণের কারণ কি? সত্যিই আমি এটা
আপনার থেকে একসেপ্ট করিনি.....
_তুমি কি কিছুই বোঝ না? নাকি
বুঝতে চাওনা??
.
একের পর এক অবাকই হতে থাকলাম
আমি। উনি আমাকে তুমি বলে
ডাকছেন!!তাও চোখে টলমল পানি
নিয়ে!!
.
_আমি কোন ভনিতা করতে চাই না।
আমি...., আমি তোমাকে ভালবাসি।।
_..........
_কিছু বলছো না যে...?
_মন বড় বিচিত্র শুভ হাসান।
_আমার মনের বিচিত্র হবে না
ফৌজিয়া। জিবনে কখনো বিচিত্র
হবে না।
_জীবনের কতটুকু দেখেছেন আপনি?
কতটুকু বোঝেন? বড় ভাইয়ের গড়া
সাম্রাজ্যে থেকে জীবনের মানে
আপনি বুঝবেন না।
দামী জুতো পরে খালি পায়ে
হাঁটার কস্ট বুঝবেন না।
_আমি এতো কথা শুনতে চাই না।
তুমি কেন জিবনের এতো মানে
খুঁজচ্ছো?
_শুভ,জিবনের মানে আমি খুঁজচ্ছি না।
কারণ,জিবনের অনেক মানে আমার
জানা।
আমি দেখেছি, সন্তানের মুখে হাসি
ফোটানোর জন্য একজন বাবা কত
কষ্ট,কত পরিশ্রম করতে পরেন।
একজন মা কতটা ত্যাগ করতে পারেন
আমি দেখেছি শুভ।
মাসের শেষে সন্তানের পড়ার খরচ
যোগান দিতে গিয়ে হাসি মুখের
আড়ালে চিন্তিত,চাপা কষ্টের মুখ
গুলো আমি দেখেছি।
এসি রুমে শুয়ে আরাম পাবেন ঠিকই
কিন্তু মধ্যবিত্ত দের মত সে শান্তি
পাবেন না।
_আমি তোমাকে ভালবাসি। ওসব
জীবনের মানে,শান্তি আমি চাই না।
তোমার মত মিডেল ক্লাস ওসবের
মানে ভাল জানবে।
_জীবনের মানে জানতে যেদিন
চাইবেন,সে দিন আসবেন আমার
কাছে।
ছোট ছোট আবদার,খুশি,কষ্ট আনন্দের
মানে যে দিন বুঝবেন সে দিন
আসবেন ভালবাসি বলতে।
কথা দিলাম শুভ, ফিরিয়ে দেব না
সেদিন খালি হাতে।।
.
উনার মুখোভঙ্গিমা দেখে
বুঝলাম,উনি আমার ডাকে সাড়া
দিয়ে আসার পাত্র না।
.
আপন মনে হাঁটছি,জানি কেউ আসবে
না ডাকের সাড়া দিতে।। তাই মনটা
গুনগুন করে গেয়ে উঠলো____
""যদি তোর ডাক শুনে কেউ না
আসে.......
তবে একলা চলো রে....।
যদি কেউ ফিরে না চায়,
ওরে ওরে ও অভাগা......""
.
___ # Fouzia Parveen Rumana