গল্পের নামঃধাক্কাময় জীবন
লেখাঃ Shuvro Sobuj
.
.. রোদেলা চোখ মুছতে মুছতে বললো..
- আমি কি দেখতে খুব খারাপ?
আমার এবার বেশ অবাক হবার পালা। এই মেয়ের মাঝে বিশেষ কোনো প্রব্লেম আছে যেকারণে শুধু শুধু আমাকে পেরেশানিতে ফেলে দেয়। আমার এখন বলা উচিৎ, "তুমি খুব সুন্দর, কি বলো এসব! তুমি দেখতে খারাপ,সেটা বলা পাপ, না না মহাপাপ!"
কিন্তু আমি সেটা বলবো না। আমার এখন কোনোরকম ইচ্ছা নাই এই মেয়েকে পাম দিয়ে মহাশূন্যে উড়িয়ে দেওয়ার। অন্যসময় হলে পাম দিতাম। প্রশংসা শুনলে মেয়েরা খুব খুশী হয়। কথা বাড়ায় না। আমি বললাম...
- তুমি একটা জাত পেত্নী। দেখতেই কেমন গা সিরসির দিয়ে উঠে। রাতে দেখলে মানুষ তোমাকে ভয় পাবে।
.
রোদেলার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। খুব বেশি বলে ফেলেছি। এইরকম বললে একটা মেয়ে কেবল চোখ লাল করতেই থাকবে, বিশেষ ক্ষেত্রে নাক কাঁপবে,ঠোঁট কাঁপবে। তারপর রাগ নিয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিবে। খুব বেশি পরিচিত কেউ, আপন কেউ এমন বললে তো আর কথা নাই। লঙ্কাকাণ্ড শুরু হবে। তবে রোদেলার চোখেমুখের ভাব তেমন লাগছে না। কান্না করায় লাল ছিলো, নতুন করে পরিবর্তন হয়নি। খুব কালো করে রাখলো। হয়তো অভিমানে। এটাও একটা বিরাট সমস্যা। চেনামানুষের উপরে যখন রাগ দেখালে ঠকতে হয় তখন অভিমানে কাজ চালিয়ে দেওয়া যায়। রোদেলাও ঠিক তেমন করছে। ভালো করেই জানে আমার উপর এখন রাগ দেখালে ঠকতে হবে, তাই ইমোশনাল করার চেষ্টা করছে।
- সেইজন্য তোমার বোনকে না করে দিছো? আগে বললেই পারতে।এতো স্বপ্ন..!
.
সম্পূর্ণ না বলে রোদেলা দ্রুত চলে গেলো। এবার আরো রাগ হলো আমার। এমনিতেই একটু রেগে ছিলাম ও'র উপর।গতকাল সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি পাশের বাসার আবিরের সাথে বেশ হাসাহাসি করা কথা বলছিলো। বলতেই পারে, সমস্যা নাই। কিন্তু মাঝেমধ্যে আবিরের গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে হেসে হেসে কথা বলছিল। রোদেলার একটা ব্যামো হলো কখনো হাসার কথা উঠলে পাশের জনকে গায়ে ধাক্কা দিবে আর হাসবে। সম্ভবত হাসির রেশটা বৃদ্ধি পায় ওরকম করলে অথবা পাশের জনকে একই অনুভূতিতে আনার প্রয়াস। আমার প্রশ্ন হলো আবির দু -চারদিন হলো এই এলাকায় এসেছে। ও'র সাথে কথাবলা মানে লাইন মারার সামিল। তাছাড়া আবির জানে না আমি রোদেলার কি হই। সুতরাং আবির একটা চেষ্টা চালিয়ে যাবে রোদেলাকে পটাতে। আর আমি একটা জিনিস জানি সেটা হলো, কোনোছেলে যদি কোনো নতুন এলাকায় উঠে, তখন সে নজর রাখবে আশেপাশে কত সুন্দরী আছে। কার সাথে ভাব নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে রোদেলা পারফেক্ট। গতকাল সকালে দেখার আগেও দুতিনদিন দেখেছিলাম ছেলেটা রোদেলাকে দেখলে কেমন উদাস থাকে। এ নিয়ে আমার চিন্তার শেষ নাই। চিন্তা শুরু হলো কারণ আবির দেখলাম কয়েকবার রোদেলাদের বাসাও গিয়েছে। যেতেই পারে, প্রতিবেশী হিসেবে। কিন্তু আমিতো ছোকরার মতলব বুঝে নিয়েছি, ফ্যামিলিকে পটাতে চায়, তারপর..!
.
রোদেলাকে একদিন বলি,"তোমার এই বিশ্রী অভ্যাস বর্জন করো।"
আমি আবার বলি," এটা কোনধরণের স্টাইল, কথা বলার সময় মানুষের গায়ে ঠেলাঠেলি! এটা না করে আড্ডায় জোশ উঠেনা?"
আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। বলে," এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আনন্দ লাগে এমনটা করলে। আমাকে আমার অভ্যাস চেঞ্জ করার কথা বলে দিচ্ছতো! কি শর্ত ছিলো ভুলে গেলে? বলছিলাম, আমি নিজেকে পরিবর্তন করবো না। আমার অভ্যাস, আচার, আচরণ দেখেই পছন্দ করে যেতে হবে।
- বা ে*র অভ্যাস।
- কি বললে?? আবার বলো??
- কিছুনা।
- স্ল্যাং ওয়ার্ডটা ডোন্ট ট্রাই এগেইন।
তখন আমার রাগ হচ্ছিলো। রোদেলা আবার আগে বলেছে ভুল না বুঝতে, সন্দেহ টন্দেহ হবেনা। তাই আবিরের কথা না বলে বললাম..
- তাই বলে অপরিচিতদের সাথেও গা ধাক্কাধাক্কি!
রোদেলা কথাটা শুনার পর আমার দিকে চোখেচোখে তাকিয়ে রইলো। ইচ্ছা করছিলো দুইচোখের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেই টু। দিলাম না। বললো," আমি কোন অপরিচিতের সাথে মিশামিশি করছি বলোতো?
আমি কিছু বললাম না। আবির ইন্ডিকেট করলেই বলবে সন্দেহ করছি।
রোদেলা আবার বললো..
- এইজন্যই তোমাদের এখানে আসাটা ভুল হইছে। আমাকে চব্বিশ ঘন্টা চোখের সামনে পাচ্ছ তো, তাই অহেতুক সন্দেহ করা শুরু করো । আর কক্ষনো এমন ভাববে না। আমি ভাই হিসাবে দেখি উনাকে।
.
রোদেলার হিউমার অব সেন্স বেশ উন্নত, বুঝে গেল কি ইন্ডিকেট করছি। তবে একটু গর্দভ টাইপের। বেশি কথা বলে। সারাদিনই হাসে। তবে আমার সাথে হাসলে খারাপ লাগেনা, ভালোই লাগে। কিন্তু আমার সাথেই যতো রসকষহীন কথা বলে।
.
রোদেলা আমাদের এখানে এসেছে বলেছিলো, কারণ রোদেলারা প্রথমে আমাদের এখানে ছিলো না। অন্য আরেক জায়গায় ছিলো। দুমাস হয়েছে এসেছে। রোদেলাকে আমি ইন্টার পড়া থেকেই চিনতাম। একই কলেজে পড়লাম প্রায় এক বছর। মামার বাড়ি থেকে পড়তাম। তারপর কলেজ চেঞ্জ করে নিজের বাসায় চলে আসলাম। এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়ে মামার বাড়ি চলে যাওয়াও কিছুদিন থাকার পর ইচ্ছা হলো ওখানেই পড়ালেখা করবো। কারণ হিসাবে ছিলো মামাতো ভাইয়ের সাথে ক্রিকেট খেলায় যেতে পারি, ঘুরতে যেতে পারি, বিভিন্ন ফাংশনে যেতে পারি। আমি যা জেদি, পড়বো বলছি সো পড়বোই ওখানে।
রোদেলা মেয়েটা দেখতাম ক্লাসে সব মেয়েদের সাথে বেশ ফুর্তিতে থাকতো।ছেলেদের সাথেও থাকতো, তবে যেই ছেলে যেচে যেচে কথা বলতো তার সাথেই হাসিঠাট্টা করতো। সেইকারণেই প্রথম দু তিনমাসতো একটুও কথা হয়নি রোদেলার সাথে। আমি লক্ষ্য করলাম মেয়েটা ভয়ানক রকমের সহজ সরল, কারণ দেখতাম কথায়-কথায়, হাসতে-হাসতে কি ছেলে কি মেয়ে সবার সাথেই গায়ে ধাক্কা দিতো আর ফুর্তি করতো।
এই গুণটা আমার ভালো লাগেনি। তাই রোদেলার সাথে কথা বলার চেষ্টা করিনি, প্রয়োজনও পড়েনি। রাগ হবার আরেকটিও কারণ হতে পারে আমার সাথে পরিচিত হলো না, কথাও বললো না। কি মোডি মেয়ে!
এভাবেই যাচ্ছিলো। হঠাৎ একদিন বায়োলজি প্র্যাক্টিকেল ক্লাসে ইচ্ছে হলো রোদেলার স্টাইলটা ট্রাই করি। গ্রুপে তেলাপোকা ব্যবচ্ছেদ করার পর স্নিগ্ধাকে হাসতে হাসতে বললাম, খুব মজা না ব্যবচ্ছেদ? গায়ে ধাক্কা দিয়ে।রোদেলার মতো করে। স্নিগ্ধা মামার বাড়ির পাশের বাড়ির, এক সাথে যাই আসি। স্নিগ্ধার পাশেই ছিলো রোদেলা। কয়েকবার ট্রাই করলাম। রোদেলা বুঝে গেলো ও'কে নিয়েই মজা করছি। আগেই বলছি রোদেলার হিউমার অব সেন্স খুব ভালো। বোকা বোকা লাগলেও। আমার দিকে অবাক চোখে একবার তাকিয়ে নিলো। মনে মনে বললাম যাক কাজে লাগলো পরিকল্পনা। স্নিগ্ধা গর্দভটা করলো কি! সাথে সাথে বলে দিলো," দেখ দেখ তোর মতো ভাণ করছে।"
রোদেলা স্লাইডে ঘাসফড়িংয়ের ম্যাক্সিলা রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো," কে ও?
রোদেলার পরীক্ষণ ঘাসফড়িঙ ছিলো। রোদেলার কথাশুনে মনে হলো আমি বড় ধরণের জেলপলাতক আসামী। ক্লাসমেটকে চিনে না। কি আশ্চর্য!
স্নিগ্ধা আমার পরিচয় দিলো সম্ভবত। আমি শুনিনি।স্যারকে পরীক্ষণ দেখাতে চলে আসি।
.
এর কিছুদিন পর হুট করে রোদেলা সবার ফোন নাম্বার নেওয়া শুরু করলো। আমার অনিচ্ছা সেখানে। আলাদা করে শুধু আমার নিলে দিতাম কিন্তু সবার নিচ্ছে নিয়মমাফিক আমার নিবে, সেখানে আমার দ্বিমত। তখন প্রথম এসে আমার সাথে কথা বলে। বলে," তোর নাম্বারটা প্লীজ"
আমার বেশ রাগ উঠলো। কোনোদিন কথা বলেনি আর তুই ডাকা। কি সুন্দর!
আমি বলি," তুই না আপনি ডাকেন। আর আমার নাম্বার অপরিচিত মেয়েদের দেই না।"
বলে, " অপরিচিত কোথায়।একি ক্লাসের তো!"
আমি বলি, " সেদিন কে ও বলে আমাকেও অপরিচিত ভেবেছেন। "
আমার কথা শুনে রোদেলা শব্দ করে হাসলো। অভ্যাসজনিত কারণে আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে হাসার জন্য হাত এনে আবার হাত স্থির রেখে অবাক চোখে তাকালো। আমি বলি," এটা খারাপ অভ্যাস।"
আমার কথায় মুখ ফ্যাকাসে করে দিলো। কোনোএক কারণে নাম্বার আর নেয়নি তখন।
.
পরেরদিন রোদেলা আমার দিকে বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকালো একটুপর পর। নিশ্চয় ভাবছে, " ওহে বালক তুমি এতো ভাব নেও কেন, কি এমন গুণ আছে তোমার মাঝে যেটার জন্য ভাব নিবে? ক্লাসের সবচে' সুন্দরী মেয়ে বলে অন্যদের মতো তোমাকেও সুন্দরের শ্রদ্ধা করা উচিৎ।তা না করে নিজেই নিজেকে ঠকাচ্ছ।"
রোদেলা যদি তেমনটা ভেবে থাকে তাহলে আমার উত্তর হলো এই," তুমি সুন্দরী হও আর বান্দরণী হও, আমার তাতে কিছু আসে যায়না। তুমি সুন্দরী তোমার কাছে, এমন না যে তোমার সুন্দরের প্রশংসা করলে আমার সাথে প্রেম করবে। তাহলে দুঃখিত, শুধু শুধু পাম মারায় আমি নই।
"তুমি চলে যাবে?"
সেদিনের কয়েকদিনপর রোদেলা আমার পাশে এসে ওইকথা বললো। ক্লাসে সবার আগে আমিওই আসছিলাম। প্রাইভেটে যাইনি তাই। রোদেলাও যায়নি সম্ভবত। অনেকক্ষণ মেয়েদের সারিতে বসেছিলো।আমি বসে বসে কেমিস্ট্রি বই নড়াচড়া করছিলাম।আসলে রোদেলা আর আমি ছাড়া ক্লাসে কেউ নাই তাই কিছুটা অস্বস্তি লাগছিলো। হঠাৎ করে উঠে আমার পাশে আসায় আমি ভড়কে গেলাম। আমি অবাক চোখে ও'র দিকে তাকালাম, বুঝতে চেষ্টা করলাম আমাকেই বলছে তো!
- কি হলো?
রোদেলা আবার বলায় আমি বলি," হুম।চলে যাব।আপনাদের এখানে থাকছি না আর।"
- কেন?
- কে বলছে আগে বলেন?
- স্নিগ্ধা।
মনে পড়লো আগেরদিন স্নিগ্ধাকে বলছিলাম চলে যাবার কথাটা। আমি বলি," আসলে আমার মা আমাকে চোখের আশেপাশে না দেখে আর থাকতে পারছেন না। একবছর তো প্রায়!"
একদম মিথ্যা কথা। মা'র জন্য যাব না, রোদেলার জন্য। কয়েকদিন রোদেলা আমাকে বিশেষ আগ্রহ নিয়ে দেখায় আমার যেন কি হয়েছিল। রোদেলাকেও আমি আলাদাভাবে ভাবতে শুরু করি, কিন্তু আলাদাটা ঠিক কিরকম ভাবা সেটা বুঝিনি। ঘটনাটা হলো, রোদেলা এতোদিন ক্লাসের ছেলেদের হাসতে হাসতে ছোঁয়ে কথা বলায় আমার বিরক্ত হবার কথা নয় তেমন একটা। কিন্তু রোদেলা আমাকে আলাদাভাবে যখন ভাবা শুরু করলো তখন থেকে আমি ও'কে না চাইতে কেন যেন ফলো করতাম, ভালো ভাবে বললে কেয়ারিং করতাম। আর ক্লাসে একটা ছেলে আছে, সৌরভ। সে দেখলাম দুতিনদিন ধরে অতিরিক্ত মিশামিশি করছে রোদেলার সাথে। রোদেলাও কেমন উদাসীন ও'র প্রতি।
এই জিনিসগুলা আমার কাছে একদম ভালো লাগেনি, সম্ভবত আমার মাঝে রোদেলার প্রতি অভিমান জন্ম নিয়েছে। আর অভিমানটা ক্ষোভে পরিবর্তন হয়েছে। কিছু বলতেও পারছি না আবার সহ্যও হচ্ছে না, তাই রাগ করেই বাবাকে ফোন করে বলে দিছে ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করতে।
- না গেলে হয়না?
রোদেলার কথাটা শুনে আমি অবাক হলাম। অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকালাম। রোদেলা আমতা আমতা করে বললো," না মানে অনেকদিন একই ক্লাসে তো ছিলাম,তাই বলছি।"
আমি এবার একটু হাসলাম আর অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম।
রোদেলা মাথা নিচু করে ফেললো। মনে মনে নিশ্চিত এই কথা ভাবছে,," ধ্যাত, কি বুঝাতে চাচ্ছি আর কিভাবে নিচ্ছে। কিছুই ঠিকভাবে হচ্ছে না। এভাবে হাসা, অবাকচোখে তাকিয়ে থাকার মানে হয়না।"
আমি বলি," না যেতেই হবে। "
বলে একটু হাসলাম। এতোদিন হলো জানার প্রয়োজন হয়নি।আর পরশু চলে যাব এখন মনে হইছে জানার। এখন সম্ভব না।
সেদিন আর ক্লাস করিনি। বের হয়ে আসি। বের হয়ে আসার পর মনে হলো রোদেলাও চলে আসবে। অবশ্যই আসবে। আবার মনে হলো," আসবে কেন? সৌরভ থাকতে আসবে কেন?"
রোদেলা সত্যি আসলো। দূর থেকে আমাকে ইশারা করলো দাঁড়াতে। কাছে এসে একটু গাছে ধরে দাঁড়িয়ে ধম নিলো।
আমি বললাম," স্বপ্ন দেখছিনাতো"
রোদেলা রাগ নিয়ে বললো, "আরে ধ্যাত্তেরি, যা ভাবছো তা নয়। তোমার নাম্বারটা দাও তো, আমি সম্ভবত তোমাকে ভুলতে চাইনা।
.
রোদেলার কথাশুনে বেশ খুশি হলাম। আমিও মনে মনে সেটাই ভাবছিলাম। তাই কলেজ থেকে বের হয়ে কেমন জড়তা আসছিলো হাটার সময়।
আমি হাসতে হাসতে রোদেলার মতো করে গায়ে ধাক্কা দিয়ে বললাম," অদ্ভুত না! আমিও তোমার নাম্বার চাইছিলাম।"
রোদেলা আমার কথায় মনোযোগী না হয়ে বরং আমার হাতের দিকে মনোযোগী হলো। আর বেশ মায়াবী চোখে তাকালো। আমি হাত সরিয়ে নিয়ে সরি বললাম।
আমাকে অবাক করে দিয়ে রোদেলা আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে আমারচে' দ্বিগুণ জোরে হাসতে লাগলো। সেদিন রোদেলাকে আমার দারুণ ভালো লাগছিলো।
.
প্রায়ই রোদেলার সাথে কথা হতো। ইন্টার পরীক্ষা পর মামার বাড়ি যেয়ে রোদেলার সামনে যেয়ে আমার ভালো লাগাটা জানাই। স্নিগ্ধার ভালো বুঝাপড়া রোদেলার সাথে ছিলো, তাই স্নিগ্ধার কথায় ভালো লাগাটা বলি।
রোদেলা কিচ্ছুক্ষণ মাথা নিচু করে ভাবছিলো। আমি স্নিগ্ধার দিকে ভয় ভয় চোখে তাকাই। তারপর রোদেলা বলে," আচ্ছা।তবে..!"
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে আবার চুপ হয়ে রোদেলার দিকে তাকাই।
তখন রোদেলা কিছু শর্ত দিয়ে দিলো। সন্দেহ করা যাবে না, ভুল বুঝা যাবেনা, রোদেলার যে অভ্যাস আছে সেগুলো মানিয়ে নিতে হবে। আরো অনেকগুলো। আমি আর স্নিগ্ধা হাসার চেষ্টা করায় রোদেলা বলে," ওই তোমরা হাসবে না, একদম না।"
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে," ডান?"
আমি বলি," ইয়েস এক্সেপ্টেড।"
.
আর গত দুমাস আগে রোদেলারা আমাদের পাশের বাসায় উঠে। রোদেলার বাবার ট্রান্সফার হয় এখানে। ভালো বাসা পাচ্ছিলেন না। আর আমাদের পাশের বাসায় আগের ভাড়াটিয়া চলে যায়, খালি ছিলো। আমি হাতে আসমান পেলাম। রোদেলাকে খুব জোরাজোরি করি আমাদের পাশের বাসায় আসতে। রোদেলা বারবার না করে। বলে," দূর, কি বলো এসব। তোমার শ্বশুর বাড়ি হবে পাশের বাসায়?
আমি বলি," যখন হবে তখন না হয় চলে যাবে অন্যকোথাও তোমার ফ্যামিলি। এখন তোমাকে প্রতিদিন দেখতে পারবো।সুযোগ মিস করতে চাইনা।"
রোদেলা আমার কথায় অবশেষে রাজি হয়ে ও'র ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করে আমাদের এখানে আনলো।
.
আর আনাই যত নষ্টের মূল। প্রতিনিয়ত ভুল বুঝছি, সন্দেহ করছি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও।
গতকাল আবিরের সাথে মিশামিশির জন্য আমি রোদেলার সাথে কথা বলিনি কাল। এমনকি রোদেলা আমাদের বাসায় আসছে নান অজুহাত নিয়ে। আমি এড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। দুদিন আগে একটা প্ল্যান করি। যখন রোদেলার কোনো আচার আচরণ ভালো লাগবে না তখন ও'কে গুরুত্ব দেওয়া কমিয়ে দিবো। রোদেলা সেটা বুঝে নিয়েই সেই আচার আচরণ চেঞ্জ করবে। রোদেলাকে মুখে বললেই বলবে সন্দেহ করছি!
সেইকথামতো গতকাল থেকে কথা বলিনি। আর, আরো মারাত্মক হলো ছোট বোন মৌমি জানে রোদেলার সাথে আমার কিছু একটা আছে। তাই আমি ও'কে বলি," দূর এই মেয়েকে করমু না বিয়া, বিশ্রী দেখতে।"
মৌমিকে বলার অর্থ হলো ও রোদেলাকে ভীষণ পছন্দ করে, তাই নিশ্চিত রোদেলাকে কথাগুলো বলবে। বলেই দিয়েছে সম্ভবত, তাইতো একটু আগে রোদেলা আমার সামনে এসে কাঁদতে কাঁদতে বললো, সে কি খুব খারাপ দেখতে, আমি কি সেইজন্য মৌমিকে না করে দিছি রোদেলাকে বিয়া করবো না, ব্লা ব্লা।
ভাবছিলাম কোথায় এসে বলবে সরি আবিরের সাথে এভাবে মেশা আমার একদম ঠিক হয়নি।তা না উনি আমাকে ইমোশনাল করছে অন্য টপিকে।এখন আমাকেই লাইনে আনতে হবে না হলে আরেক হারামজাদা আবির...!
না না সেটা ভাবতে পারছিনা। তিনবছরের প্রেম!
.
"সরি তুমি ইচ্ছামতো গা ধাক্কাধাক্কি করে হাসো কিংবা নাচানাচি করো আর ভুল বুঝবো না।"
রোদেলাকে অনেক জোর করে আমাদের ঘরে এনে তারপর ছাদে আনলাম।
রোদেলা নিশ্চুপ রইলো।
কিছুক্ষণ পর বললো," আমি জানি তুমি শর্তগুলো বারবার ভুলে যাবে।"
রোদেলা গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেললো। কি আজব ব্যাপার! বলছি বলেই কি সত্যি হতে যাচ্ছে! এতোদিনের প্রেম আমি ভুলে যাব,ঢং?
আমি বললাম," ভুলি আবার মনে হয়,তাইতো সরিও বলি।
রোদেলা পাল্টা প্রশ্ন করলো, " আমি বুঝি সব।কলেজে থাকতে সৌরভকে নিয়ে এখন আবিরকে নিয়ে যা-তা ভাবছো।ভাবোনি? বলো?
.
-সরি।
- দূর মিয়া। সবসময় ভুল বুঝবে আর সরি বলবে।
- আচ্ছা আর বলবো না।কেমন?
- ওয়াট? ভুল করবে সরি বলবে না?
- আচ্ছা বলবো।আমরা সম্ভবত আবার ঝগড়ায় চলে যাচ্ছি।
-তুমি যাচ্ছ।আমি না। কি করে বলতে পারলে আমি বিশ্রী, প্রেম করার আগে মনে ছিলো না?
আমি মাথায় চাপড়াতে চাপড়াতে বললাম..
- কপাল আমার। তোমাকে তো বলিনি। মৌমিকে ঢং করে বলেছি। আমার রাগ হয়েছিলো আবিরের সাথে তোমার ধাক্কাধাক্কি নামের নোংরামি দেখে।
কথাটা বলেই জিহ্বায় কামড় দিলাম। কি বললাম এসব! রোদেলা আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকাতে লাগলো। আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। এখন কিভাবে এই মেয়েকে সামলাই? সামলানোর সুযোগ না দিয়েই রোদেলা চোখ মুছতে মুছতে নিচের দিকে চলে যেতে লাগলো।
আমার কপাল রে! এখন আবার নতুন করে প্ল্যান করে রোদেলাকে শান্ত করতে হবে। একদিন রোদেলার সাথে ভালো যায়তো দশদিন খারাপ যায়!
কি আর করা রাত দশটার উপড়ে, এখন ঘুমাতে যাই। কাল দেখা যাক কি করতে পারি। অবশ্য ঘুম আসবে না!!!!
--------------------------
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŽāĻ্āĻāϞāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ģ āĻāĻĒ্āϰিāϞ, ⧍ā§Ļā§§ā§
466
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§ā§Ļ:ā§Ģā§Ļ PM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ