362

গল্পের নামঃপবিত্র সম্পর্ক

"আজ সারা দিন মনটা খারাপ ছিলো,তাই আজ..
আর বাসা থেকে বের হইনি।কিন্তু এখন মনে..
হচ্ছে বের হতে হবে,তাহলে হয়তো মন ভালো..
হতে পারে।তাই বেড়িয়ে পরলাম,একা একা হাঁটতে..
ভালোই লাগছে।কিছুক্ষণ হাঁটার পর সামনে চায়ের..
দোকান পরলো।দোকানে গিয়ে চা দিতে বললাম,
আর ছিগারেট ধড়িয়ে টানা শুরু করলাম।সামনে..
তাকাতেই দেখলাম একটি মেয়ে যাত্রী ছাউনিতে বসে..
আছে,পাশে বড় এখটি ব্যাগ।আমি ভাবলাম হয়তো..
কোথাও যাবে কিন্তু বাস পাচ্ছে না তাই হয়তো এখানে..
বসে আছে"।

"এভাবে অনেক সময় পার হয়ে গেলো কিন্তু মেয়েটি..
এখনো আগের মতোই বসে আছে।তাই আমি আর কিছু
না ভেবে দোকানের বিল পরিশোধ করে মেয়েটির কাছে
গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনার কি কোন সাহায্য.. লাগবে।কারন সেই কখন থেকে দেখছি আপনি এখানে বসে আছেন তাও একা তাই জিজ্ঞেস করলাম"।

-"আসলে আমি এই প্রথম ঢাকায় আসছি,পরিচিত কেউ
নেই,কোথাও যে যাবো তাও পারছি না,তাই এখানে
বসে আছি"।(মেয়েটি)
-"আচ্ছা,যেহেতু আপনার এখানে কেউ নেই তাহলে 
আপনার এখানে একা আশাটা ঠিক হয়নি।আর  
আপনার বাবা-মা কোথায়"।(আমি)
-"আসলে আমার আপন বলতে কেউ নেই,বাবা-মা 
অনেক আগেই মারা গেছে।আমি আমার মামার
কাছে থাকতাম কিন্তু মামি আমাকে মেনে নিতে 
পারেনি।আমাকে নানা ভাবে অত্যাচার করতো।
মামা কিছু বলতে পারতো না,কারন মামা কিছু
বললে যদি আরও বেশি অত্যাচার করে তাই।
কিন্তু এখন মামি আরও বেশি বেশি করছে
আর শেষে এখন আমাকে বাসা থেকে বের করে 
দিয়েছে"।(মেয়েটি)
-"আমি কিছুক্ষন ভেবে তারপর বললাম যে আচ্ছা 
আপনি চাইলে আমার সাথে আমার বাসায় যেতে 
পারেন,যদি আপনার সমস্যা না থাকে।আমি আর 
আমার বড় বোন থাকি।আপনার কোন সমস্যা হবে
না"।(আমি)

"মেয়েটি ভেবে রাজি হয়ে গেলো,কারন এতো রাতে.. এভাবে একা থাকাটা ঠিক হবে না।আমি মেয়েটিকে.. বাসায় নিয়ে আসলাম।আপু দেখে বললো কে এই মেয়ে।আমি আপুকে সব খুলে বললাম,আপুও বললো নিয়ে.. এসে ভালোই করেছি।রাতে সবাই এক সাথে খেয়ে.. ঘুমিয়ে পরলাম আমি কারন সকালে অফিস আছে"।

"আচ্ছা এখন আমার সম্পর্কে বলি,আমি..
তুষার প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছি।
আমার আপন বলতে আমার বড় বোন ছাড়া..
আর কেউ নেই।ছোট থাকতে আমাদের বাবা-মা.. 
মারা যায়,তখন থেকে আমারা ভাই-বোন একা..
হয়ে যাই।অনেক কষ্ট করে আজ আমারা এই..
পর্যায়ে এসেছি।আপু এখনো বিয়ে করেনি,তার..
কারন আমি।আপু বিয়ে করলে নাকি আমার..
খেয়াল রাখার মত কেউ থাকবে না তাই।আপুর..
নাম হলো তারিফা।শিশির ভাইয়ার সাথে ৫..
বছর আপুর সম্পর্ক,কিন্তু তারা কেউ এখন..
বিয়ে করবে না,আগে আমাকে বিয়ে দিবে..
তারপর।আমি অনেক বললাম তাও কেউ..
রাজি হয়।আসলে শিশির ভাইয়া অনেক..
ভালো মনের মানুষ,আমাদের অনেক খেয়াল..
রাখেন।ভাইয়া পারতো আপুকে বিয়ে করতে..
কিন্তু করেনি আমার জন্য।ভাইয়া আরও বলছে..
যে বিয়ের পর নাকি এক সাথে থাকবে,আমাদের..
ভাই-বোনকে আলাদা করবে না"।

-"এই তুষার এখন উঠ ঘুম থেকে।আর কতো ঘুমাবি"।(তারিফা)
-"আরেকটু ঘুমাই না আপু"।(তুষার)
-"অফিসে যাবি না,তারাতারি উঠ,পরে দেরি হবে।তখন
বলবি আগে কেনো উঠাই নাই"।(তারিফা)
-"আচ্ছা উঠছি"।(তুষার)

"নাস্তা করে অফিসে চলে আসি।কাজ করছি ঠিক..
তখন আপু ফোন দিলো"।

-"হ্যাঁ আপু বলো"।(তুষার)
-"শুন তোর ভাইয়া নাকি বাসায় আসবে,তুই আর
তোর ভাইয়া এক সাথে আসিস কেমন"।(তারিফা)
-"আচ্ছা ঠিক আছে।আমারা এক সাথেই আসবো"।(তুষার)
-"তাহলে রাখছি"।(তারিফা)

"অফিসের কাজ শেষ করে ভাইয়াকে নিয়ে বাসাই.. গেলাম।এর মধ্যে ভাইয়ার সাথে অনেক কথা হলো"।

"আমি ফ্রেস হয়ে আসলাম।তারপর সবাই অনেক গল্প.. করলাম।আমি ভাইয়া আর আপুকে বললাম যে তারা.. যেন বিয়ে করে।অনেক কষ্টে তাদের রাজি.. করলাম,আগামি মাসে বিয়ে হবে"।

"হাতে সময় নেই,তাই আমি এখন থাকেই কাজে নেমে.. পরেছি।কোন কিছুর যেন সমস্যা না হয় সেই দিকে.. খেয়াল রাখছি।আপু আমাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ.. করেছে,আমার জন্য তার সব সুখ বিসর্জন দিয়েছে।আমি আপুর বিয়েতে কোন কিছুর কমতি রাখিনি।অনেক বড় অনুষ্ঠান করে আপুর বিয়ে দিলাম।সব..
কিছু ভালো ভাবেই হয়েছে।বিদায়ের সময় আপু..
অনেক কান্না করেছে,তখন আমি বলছি যে ২ দিন..
পর তো চলেই আসবে তাহলে কাঁদছ কেনো।আমিও..
যে কাঁদি নাই এমন না,আমিও অনেক কাঁদছি"।

"আপু বাসায় আসলো,এখন আমারা সবাই এক সাথে.. থাকি।আর হ্যাঁ আপনাদের তো বলতেই ভুলে গেছি.. নিঝুম মানে সেই মেয়েটি এখন আমদের সাথেই থাকে।এখন আমাদের পরিবারের এক জন সদস্য হয়ে গেছে।আপু আর ভাইয়া ঠিক করলো যে নিঝুমের সাথে.. আমার বিয়ে দিবে।নিঝুম দেখতে সুন্দর,যে কেউ রাজি.. হবে নিঝুমকে বিয়ে করতে।আর আমি কখনো আপুর.. অবাধ্য হয়নি তাই রাজি হয়ে যাই"।

"আমদেরও বিয়ে হয়ে যায়।বাসর রাতে আমি নিঝুমকে
শুধু একটা কথা বলেছি যে কখনো যেন আমাকে আর
আপুকে আলাদা করার চেষ্টা না করে।নিঝুমও ঠিক..
আছে বলে।আমি জানি নিঝুম কখন এমন করবে না,
কারন আপুর সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক,আপুও.. নিজের বোন মনে করে"।

"ভালোই চলছে আমদের সংসার"।

"আমি অফিসে কাজ করছি এমন সময় ভাইয়ার..
ফোন আসলো যে তারাতারি বাসায় আসি।আমিও..
আর কোন কথা না বলে বাসায় চলে আসি।বাসায়.. আসার পর সবাইকে কেমন খুশি খুশি লাগছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে।তখন ভাইয়া..
বললো যে আমি মামা হতে যাচ্ছি।তখন আমার..
যে কতটা ভালো লাগছে বুঝাইতে পারবো না।আজ.. আপুর সব স্বপ্ন পূরণ হয়েছে,আমি অনেক খুশি হয়েছি"।

"আমি যখন অফিস থেকে বাসায় আসতাম,
তখন আমি কিছু না কিছু নিয়ে আসতাম..
আমাদের নতুন মেহমানের জন্য।সবাই তখন..
হাসত আর বলতো এখন এসব আনার দরকার..
নেই"।

"আজ আপুকে হসপিটালে নিয়ে আসছি,
হঠাৎ করে আপুর ব্যাথা উঠে।আপুকে..
অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেছে।এই..
দিকে সবাই খুব চিন্তিত,আমিও।নিঝুম..
আমার কাছে এসে বললো কিছু হবে না।
আমি নিঝুমের হাত করে দাঁড়িয়ে আছি।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে বললো মেয়ে..
হয়েছে আর দুজন সুস্থ আছে"।

"আমারা সবাই এখন অনেক সুখে আছি"।

লেখকঃতুষার