472

***ইগো***
-----K.H.TUSHAR
দুপ্রান্তে দুজন বসে আছে।উভয়ের মনে একটা জিনিস ই কাজ করতেছে।
আর সেটা হলো ইগো।
দুজনের মনেই একটি চিন্তা "আমি কেনো আগে বলবো?ও বলতে পারে না?"
চিন্তা এক ভাবনা ও এক। দুজনের মধ্যে সমস্যা টাও এক।আর সেটা হলো ইগো!
একবার ভাবি আমি ই আগে বলবো।
আবার পরক্ষনেই মনে হয় আমি কেনো বলবো?ও বললেই তো পারে।
এভাবেই চলছে।
যদিও জানি ওর মনের অবস্থাটা ও এক। এভাবেই চলছে চলুক।
তবে আর কতদিন?অনেক তো হলো।
তাই এবার ভাবছি ইগো কে বিদায় ঘন্টা দিয়ে আমি ই আগে বলবো।
সেই ভাবনা মতোই বেরিয়ে পরলাম বলার জন্য।
.****
আমি তুষার।একজন অকর্মার ঢেকি স্টুডেন্ট।
স্টুডেন্ট রা যদিও টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ নিজেই বহন করে।
তবে আমি কেনো জানি সেই কাতারে পরি না।
কারন আমাকে দিয়ে কিছুই হয় না।
ভার্সিটিতে প্রথম দিন একটি মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো অদ্ভুতভাবেই।
অদ্ভুত বলছি কারন মেয়েটার সাথে পরিচয় হওয়ার আগেই একটা ঘটনা ঘটেছিলো।
আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগে বেশির ভাগ সময়েই ফুটপাত ধরে হাটতাম।
মাঝে মাঝে কিছু বন্ধুরাও থাকতো।
আর সাথে বন্ধুরা থাকা মানেই ফাইজলামী উচ্চ সীমানায়।
একদিন কিছু বন্ধুরা মিলে হাটতেছিলাম.হঠাৎ মনে হলো পিছন থেকে কেউ আমার জুতার(স্যান্ডেল)
পিছনে পারা দিয়ে আছে।
পিছনে ঘুরতে ঘুরতে ই একটি মেয়ে বললো"কি মেয়ে দেখলেই পিছনে তাকাতে মন চায়??"
এই কথা বলে চলে গেলো।
আমি তো বলদের মতো শুধু তাকিয়ে রইলাম।কিছুই বুঝলাম না।
সব কিছু ই মাথার উপর দিয়ে গেলো।
পারা দিলো আমাকে আবার ঝারি ও খেলাম আমি!
কি আর করার মনে মনে মনে ভেবে  রাখলাম কখনো দেখা হলে জবাব দিয়ে দেবো।
.
ভার্সিটি তে প্রথম দিন অই মেয়েটিকে দেখলাম।দেখেই আমার মাথায় সেই কথা চলে এলো।
সুযোগ খুজতে লাগলাম কিভাবে উপযুক্ত জবাব দিতে পারি।
কিন্তু জবাব দেয়ার আগেই মেয়েটা আমাকে দেখে ফেললো।
আর সামনে এসেই বললো,
মেয়েটা:আপনি অই ছেলেটা না?
আমি:কোন ছেলে?(বুঝেও না বুঝার ভাব)
:অই যে মেয়ে দেখলেই পিছনে তাকান।
:কি??আমি পিছে তাকাই? না আপনি ছেলে দেখলে জুতা পারা দেন?
:অই কে জুতা পারা দেয়?
এইভাবেই চললো কিছুক্ষন।
কি আর করার মেয়েদের সাথে তো আর কথা বলে পারা যায় না তাই নিজেই চলে গেলাম।
ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় আবার মেয়েটার সাথে দেখা।
তবে এবার ভালোভাবেই কথা বললো।
জানতে পারলাম তার নাম অহনা।
অত:পর আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো।
.
বন্ধুত্ব ভালোভাবেই চলতে লাগলো।
গ্রুপ স্টাডি থেকে ঘুরাফেরা সব ই একসাথে করতাম।
এই ঘুরাফেরা করার কারনে অনেকেই ভাবতো আমাদের মধ্যে সম্পর্ক আছে।
আর অহনাও আমার সাথে ঘুরাফেরার করার কারনে ছেলেদের হাত উত্যক্ত থেকে রেহাই পেতো।
কারন সবাই ভাবতো ও আগে থেকেই সেটিং!
এ নিয়ে আমাকে অনেক দুর্ভোগ ও পোহাতে হয়েছে।
যে সব ছেলেরা অহনাকে পছন্দ করতো তারা আমার দিকে এমন ভাবে তাকাতো যেনো আমি তাদের মেরে হাসপাতালের কেবিনে ঝুলিয়ে এসেছি!!!
একদিন এক বড় ভাই ডাক দিলো,
বড় ভাই:এই তুষার এদিকে আয়।
আমি:হ্যা ভাই।
:তোর সাথে অহনার কিসের সম্পর্ক?
:আমরা বন্ধু।
:আর কিছু নেই তো???
আমি উত্তর দেয়ার আগেই অহনা কোথা থেকে যেনো চলে আসলো।আর এসেই আমার সাথে এমন ভাবে কথা বললো যেনো আমি তার প্রেমিক।
অই বড় ভাই তাই সত্যি ভেবে নিলো।
আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো আমাকে কাচা খেয়ে ফেলবে।
আর অহনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মুচকি মুচকি হাসছে।
একাধিক বার এমন ঘটনার সামনে পরতে হয়েছিলো।
কি আর করার আমাকেই দিয়েই অহনা সেভ থাকতো।
.
চলতে ছিলো ভালোভাবেই তবে বিপত্তি বাধলো যখন শুনলাম অহনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে!
কিন্তু আমি তো ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।
যদিও কখনো বলা হয় নি।কারন যদি বন্ধুত্বটাই নষ্ট হয়ে যায়!!!
অহনা ও আমাকে ভালোবাসে এটাও আমি জানি।তবে কেউ কাউকে কখনো বলি নি।
বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে শোনার পর আমি অহনাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারি নি।
কারন এখনো বেকার।তার উপর অকর্মার ঢেকি।
নিজের ই খরচ চলে না আর অহনাকে!!!!
না অহনা ভালো থাকবে এটাই চাই।
তাই আবেগ কে প্রশ্রয় দেয়া চলবে না।
অহনার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হয় অহনাও বলতে চায় তবে পারে না।
আস্তে আস্তে ওর থেকে দুরে যেতে থাকি।
মিথ্যা মায়া বাড়িয়ে লাভ নাই।
.***
অহনার বাসার সামনে এসে পরেছি।অহনা বেলকনিতেই ছিলো আমাকে দেখে নিচে আসলো।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট বুঝেছি ও কিছু জানতে চায়।
একবার ভাবলাম বলে দিবো আবার ভাবলাম না সেটা ঠিক হবে না।
এর মধ্যেই দেখলাম বাসায় অনেক মানুষ।
জানতে পারলাম আজ অহনাকে আংটি পরাতে এসেছে।
অহনার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ও এখনো আমার কথা শুনতে চায়।
তবে সেটা তো আদৌ সম্ভব না।
হঠাৎ আমার কাধে একটি হাত এসে পরলো।আমি পিছনে ঘুরতেই বললো,
"কি কে,এইচ,তুষার সাহেব আমার হবু বৌয়ের সাথে কি কথা হচ্ছে?"
আরে এতো আসিফ ভাই!!!যার কথা কখনো ভুলার নয়।
এমন কোনো সাহায্য নেই যা তার কাছ থেকে পাই নি।
তার মানে তার সাথেই অহনার বিয়ে!!!!!
না আর ভাবতে পারছি না।
আসিফ ভাইকে বললাম অহনা আমার বান্ধবী নোট নিতে এসেছিলাম।
এই বলে দ্রুত এসে পরলাম।
আসার সময় অহনার চোখে কিছু দেখতে পেলাম।
তবে সে ভাষা বুঝার ক্ষমতা আর পরিস্থিতি কোনটাই আমার নেই।
নির্জন রাস্তায় একাকী হাটছি আর ভাবছি"যদি ইগো কে আগ্রাহ্য করে আগেই বলতে পারতাম তাহলে হয়তো অন্যরকম হতো।
আবার ভাবছি সেটা কি আদৌ সম্ভব?হয়তো হ্যা হয়তো না।আপাততো সেটা নিয়ে ভাবলে চলবে না।নিজের ইগো নিজের কাছে রেখেই বাকি পথ চলতে হবে"।
.
    [কল্পকৃত]