āĻŽāĻ™্āĻ—āϞāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ģ āĻāĻĒ্āϰিāϞ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

474

কয়েকদিন ধরেই ভাইয়া আমার বিয়ের জন্য
মেয়ে দেখছে। ভাইয়ার সাথে কয়েকবার
আমিও গিয়েছি। কিন্তু কেউ আমার কাছে
মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। কারন একটা
মেয়ে আমাকে বাবা বলে ডাকে তাই। অবশ্য
মেয়েটার বাবা আমি নই। কিন্তু একথা তারা
বিশ্বাস করেনি। তারা ভেবেছে আমি হয়ত
পুর্ব বিবাহিত। তাই তারা মেয়ে বিয়ে দিতে
রাজি হল না। আর যারা জানত সত্যিই আমি
বিয়ে করিনি তারা ভাবতে থাকল এটা আমার
অপকর্মের ফসল। এই সব কারনেই আমার
বিয়েটা হচ্ছিল না। আমি ধৈর্য্যহারা হয়ে
ভাইয়াকে বললাম
- ভাইয়া আর মেয়ে দেখা লাগবেনা। আমার
বিয়ের চিন্তা আর করতে হবেনা। বিয়ে করব
না আমি।
-- তোর বিয়ে নিয়ে আমি চিন্তা করতাম না
যদি না বাবা মা মারা যেত। তারা বেঁচে
থাকলে এসব বিষয়ে আমি মাথা ঘামাতাম
না।
- অনেক তো দেখেছ। কেউ রাজি হল?
-- হবে কোথা থেকে। সঙ্গে করে তো একটা
মেয়ে নিয়ে যাস। ওদের সামনে মেয়েটা
তোকে বাবা বললে আর কেই বা মেয়ে দিয়ে
দেবে।
- ভাইয়া তুমিও জানো আমিও জানি। এই
মেয়েটির বাবা আমি না। তোমাকে তো আমি
ওর ব্যাপারে খুলে বলেছিই।
-- ভাই... আমরা জানি কিন্তু মানুষ তো
বিশ্বাস করছেনা।
- বিশ্বাস না করলে কিছু করার নেই।
ভাইয়া চুপ করে আছে। তিনিও ভীষণ চিন্তিত।
বাবা মা বেঁচে থাকলে আমার বিয়ে নিয়ে
তিনি এত চিন্তা করতেন না। বাবা মায়ের
অবর্তমানে তাকেই এ দায়িত্ব নিতে হল।
ভাবী এসে বলল
-- হয়েছে দুই ভাই অনেক কথা বলেছ। এখন রাত
হয়ে গেছে অনেক। এসো খেতে এসো।
ভাইয়া কিছু না বলে উঠে দাড়াল। আমিও
ভাইয়ার পিছু পিছু গেলাম। খেতে বসে
ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম।
- ভাবি.. অনন্যা কি এখনো ঘুমাচ্ছে?
-- হ্যাঁ ঘুমাচ্ছে।
- খেয়েছিল?
-- না খায়নি। বলল তোমার সাথে খাবে।
- তুমি ওকে খাইয়ে দিবানা? আমি কখন
বাসায় ফিরি তার কোন ঠিক ঠিকানা আছে
নাকি।
-- ওকে অনেক বার বলেছি খাওয়ার জন্য।
কিন্তু ও তোমায় ছাড়া খাবেইনা।
- এখন ওকে ঘুম থেকে জাগিয়ে নিয়ে এসো।
-- আচ্ছা। আমি যাচ্ছি।
ভাবি অনন্যাকে আনতে গেল। আমি এখনো
খাওয়া শুরু করিনি। ভাইয়া খাচ্ছে। ভাবি
ফিরে এসে বলল
-- তোমার মেয়ে ঘুম থেকে আগেই উঠেছে।
জেদ ধরে আছে। তুমি না আনতে গেলে ও
আসবেনা।
আমি মুচকি হেসে চেয়ার থেকে উঠলাম।
তারপর আমার রুমে গেলাম। অনন্যা আমার
সাথেই ঘুমায়। আমি গিয়ে দেখি গাল দুটো
ফুলিয়ে বসে আছে। আমি গিয়ে বললাম
- আম্মু কি হয়েছে?
অনন্যা কথা বলছেনা। নিচের দিকে তাকিয়ে
বসে আছে। আমি আবার বললাম।
- আম্মু... বাইরে একটু কাজ ছিল তাই বাসায়
ফিরতে দেরি হল। তুমি কেন আমার জন্য
অপেক্ষা করছিলে। তুমি খেয়ে নিতে।
অনন্যা এখনো চুপ। ভীষণ রেগে আছে আমার
উপর। আমি আবার বললাম
- আচ্ছা মা.. ভুল হয়ে গেছে। আমি আর দেরি
করে ফিরবনা। এখন চল দুজনে একসাথে খাব।
বাবার খুব খিধে পেয়েছে।
অনন্যা এবার কেঁদে কেঁদে বলছে
-- তুমি খাও আমি খাব না।
- কেন খাবেনা?
-- আমি তোমার সাথে খাব বলে না খেয়ে
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর তুমি আমায় রেখেই
খেতে বসে গিয়েছিলে।
আমি বুঝলাম অনন্যা খুব রেগে আছে। আমি
কানে ধরে বললাম
- মা এই কান ধরলাম। আর ভুল হবেনা।
অনন্যা কেঁদেই চলেছে। কিছু বলছেনা। আমি
মাথা নুয়ে তার কাছে গেলাম। বললাম
- আচ্ছা তুমি রেগে আছ আমার উপর। আমাকে
মারো দেখবা সব রাগ চলে যাবে।
-- না রাগ যাবেনা।
আমি দুহাত বাড়িয়ে বললাম
- আসো আমার কোলে আস। না আসলে আমি
আর খাব না।
আমার এই কথা শুনে অনন্যা এক লাফে আমার
কোলে চলে আসে। আমি ওর চোখ মুছে
দিলাম। তারপর বাথরুমে গিয়ে ওর মুখ ভাল
করে ধুয়ে দিলাম। নিজের হাতে খাইয়ে
দিলাম। আমি বললাম
- আম্মু তুমি এবার রুমে যাও। এবার বাবা
খেয়ে নিই?
-- আমি একা রুমে যাব না।
আমি ভাবিকে বললাম
- ভাবি যাওতো ওকে রুমে দিয়ে আসো। আর
ওর সাথে পারলে কিছুক্ষণ থাকো।
ভাবি ওকে কোলে করে আমার রুমে নিয়ে
যায়। ততক্ষণে ভাইয়া খাওয়া শেষ করে হাত
ধুয়ে নিয়েছে। ভাইয়া বলল
- মেয়েটা দেখছি তোকে ছাড়া কিছু
বোঝেইনা।
-- কি করব বল। এত জেদ ওর ভেতর।
- তোকে তো সত্যি বাবা হিসেবেই মেনে
নিল।
-- মুখের বুলি ফোটার সময় আমাকেই বাবা
ডেকেছে। তাই ভেবেছে আমিই ওর বাবা।
- আচ্ছা। তুই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়। আমি
আমার রুমে গেলাম।
ভাইয়া চলে যায় রুমে। আমি খাওয়া দাওয়া
শেষ করে আমার রুমে গেলাম। ভাবি এখনো
অনন্যাকে নিয়ে আমার রুমে বসে আছে। আমি
রুমে এসেই বললাম
- ভাবি.. এবার যেতে পারো। আমি এসে
গেছি।
-- আচ্ছা। আমি যাই। তোমরা বাবা মেয়ে
ঘুমিয়ে পড়।
ভাবি চলে যায়। অনন্যার দিকে তাকিয়ে
দেখলাম সে শুয়ে আছে। কিন্তু চোখ খোলা।
আমি বললাম
- কি গো মা... ঘুমাবেনা?
-- ঘুম আসছেনা।
- এদিকে এসো। তোমার জন্য একটা জিনিস
এনেছি।
এই কথা শুনে অনন্যা লাফ দিয়ে উঠল।
হাসিমুখে বলল
-- কি এনেছ? মজা এনেছ?
- না। আজ তোমার জন্য ক্যাডবেরী এনেছি।
-- দাও আমি খাব।
আমি ওকে ক্যাডবেরী খাইয়ে দিয়ে ঘুম
পাড়িয়ে দিলাম। অনন্যা ঘুমিয়ে পড়ল। তারপর
আস্তে আস্তে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
এভাবেই কয়েকটা দিন কেটে যায়। আমার
বিয়ের জন্য মেয়ে দেখার বিষয়টা আমি
মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আমি আমার
কাজে মন দিলাম। বিয়ের জন্যে আমি এতটা
আগ্রহী না। তবুও ফরমালিটিজ রক্ষা করার
জন্য আর ভাইয়ার কথা রক্ষা করার জন্য আমি
বিয়ের ব্যাপার নিয়ে একটু ভেবে দেখেছি।
কিন্তু এখন আমার বিয়ে নিয়ে এত জটিলতা
সৃষ্টি হওয়ায় আমি আর এই ব্যাপারে এত
মনযোগ দিতে চাইনা। তাই আমি আমার মত
কাজ করতে থাকি। আর আমার অনন্যাকে
নিয়েই দিন কাটাই। বাসায় গেলেই ওর জন্য
কিছু না কিছু নিয়ে যাই। এই মেয়েকে আমি
জন্ম দিই নি। কিন্তু ও যখন আমাকে বাবা
বলে ডাকে তখন বুকটা তৃপ্তিতে ভরে ওঠে।
আর অনন্যা তো আমায় ছাড়া কিছু বুঝেইনা।
আমি একটা ধমক দিলেই কেঁদে দেয়। আমায়
বেশি ভালবাসে তো তাই আমার উপর জেদও
বেশি দেখায়। আমিও তার বাধ্য বাবার মত সব
জেদ পূরণ করি। প্রায় এক সপ্তাহ কেটে যায়।
এর মাঝে ভাইয়াও আমাকে বিয়ের ব্যাপারে
কিছু বলেনি। এক সপ্তাহ পর রাতের বেলায়
ভাইয়া আমাকে বলল
- শোন, কাল আরেক জায়গায় মেয়ে দেখতে
যাব। মেয়ের ফ্যামিলি ছোটখাটো। সদস্য কম।
একদম আমার মনের মত। কাল আমার সাথে
যাবি।
-- কাল আমার কাজ আছে ভাইয়া।
- কাজ একটু স্থগিত রাখ। আমি ওদের কথা
দিয়ে ফেলেছি।
-- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ম্যানেজ করে নিব।
- আর হ্যাঁ.. অনন্যা কে সেখানে নিয়ে
যাবিনা।
-- না ভাইয়া.. অনন্যাকে নিয়ে যাব।
- দেখ ভাই.. এর আগের সবগুলো জায়গায়
অনন্যা গিয়েছে। কোনকিছু বলার আগেই
অনন্যার মুখে বাবা ডাক শুনে সবাই বিয়ে
দিতে বিমুখ হয়ে যায়। তাই কাল যেখানে
যাব সেখানে ওকে না নিয়ে যাওয়াই ভাল
হবে।
-- কিন্তু ভাইয়া অনন্যা কষ্ট পাবে।
- তুই কিছু একটা বলে বুঝিয়ে দিস।
আমি কিছু বললাম না। দেহের ভেতর থেকে
বেরিয়ে এল একটা বড় দীর্ঘশাস।
.
ভাইয়া আর আমি মেয়ে দেখতে এলাম
মেয়েটার নাম ফাহমিদা। একটা কমলা রং এর
শাড়ি পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে আসল।
ভাইয়া তাকে কয়েকটা প্রশ্ন করল। ফাহমিদা
মাথা নিচু করে কথার উত্তর দিল। ভাইয়া তখন
আমাকে বলল
- কিরে তুই কিছু জিজ্ঞেস করবি?
-- না ভাইয়া আমি কি জিজ্ঞেস করব।
- জিজ্ঞেস করলে যা তোরা আলাদা ভাবে
কথা বলে আয়।
আমি নিষেধ করার আগেই ফাহমিদার মা বলল
- আসো বাবা.. লজ্জা পেওনা। এই ফাহমিদা
তুই ওকে তোর ঘরে নিয়ে যা।
মনে মনে হাসছি। তারা ভেবেছে আমি
লজ্জা পেয়েছি। কত মেয়ের কত ক্ষতি
করেছি আর কিনা সামান্য আড়ালে গিয়ে
কথা বলতে লজ্জা পাব। যাই হোক.. ফাহমিদা
নিচুস্বরে আমার দিকে না তাকিয়ে বলল চলুন।
আমিও কিছু না বলে ওর পিছু পিছু ওর রুমে
গেলাম। ও আমার দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে
দিল। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। আমি
চেয়ারটাতে বসলাম। বললাম
- নিচের দিকে তাকিয়ে থাকবেন? যার
সাথে বিয়ের কথা চলছে তাকে দেখবেন না।
আমার এই কথা শুনে ফাহমিদা আমার দিকে
আড়চোখে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে
ফেলল। আর কিছু বলল না। তখন আমি বললাম
- শোনেন.. আপনার সাথে আমার বিয়ে হবে
কি না তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। তাই কিছু
কথা আগে থেকে বলে দিই। কারন কিছু না
জেনে বিয়ে করলে পরে উল্টো আমাকেই
দোষ দিবেন।
-- জ্বি বলুন। বিয়ের আগেই সব বলে ফেলা
ভাল।
- আমার বাসায় একটা মেয়ে আছে। আমায়
বাবা বলে ডাকে।
ফাহমিদার কপালে ভাঁজ পড়ে যায় কথাটা
শুনে। ভ্রু কুচকে বলল
-- কি? আপনি বিবাহিত?
- আমি কিন্তু বলিনাই আমি বিবাহিত।
-- তাহলে যে বললেন আপনার মেয়ে আছে।
- আমার মেয়ে আছে এটাও আমি বলিনি। শুধু
বলেছি একটা মেয়ে আমায় বাবা বলে ডাকে।
-- এটার মানে তো এটাই যে ও আপনার মেয়ে।
- দেখুন... বিয়ে হচ্ছে অনন্ত বন্ধন। তাই এই
সম্পর্কে জড়ানোর আগে আমি কোন মিথ্যে
বলব না।
-- তাহলে সত্যিটা কি।
- আমি বিয়ে করিনি আগে। আর এই মেয়েটা
আমার না। যখন থেকে কথা বলতে শেখে তখন
আমার কাছেই থাকত। বলতে গেলে আমিই
ওকে বাবা ডাকা শিখিয়েছি। আর তাই
আমাকেই বাবা বলে ডাকত। সেজন্য অনেক
পাত্রীপক্ষ আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল। তারা
ভেবেছে আমি মিথ্যে বলছি। আসলে বিয়ের
ব্যাপারেও আমি এত আগ্রহী না। ভাইয়ার
কথা রাখতে বিয়ের জন্য রাজী হয়েছি। আর
মেয়েটার জন্যে একটা মা প্রয়োজন। আপনি
আমায় বিয়ে করুন বা না করুন আপনাকে
সত্যটা বলার ছিল আমি বলে দিছি। মিথ্যে
বলে কাউকে ঠকাতে চাইনা। ওসব কাজ
অনেক আগেই ছেড়ে দিছি।
-- ছেড়ে দিছেন মানে। আগে কি করতেন
নাকি। - দেখুন... আপনাকে যতটুকু বলার দরকার
ছিল আমি ততটুকুই বলেছি। আর যা বাকি
আছে সেগুলো যে আমার জীবনসঙ্গী হবে
তাকে বলব।
ফাহমিদা আর কিছু জিজ্ঞেস করল না। আমি
জিজ্ঞেস করলাম
- আচ্ছা বাদ দেন। এখন বলেন আপনি বিয়েতে
রাজি কি না।
-- আমি জানিনা। আমার মা যা বলবে আমি
তাই মেনে নেব। তবে মাকে আগে এইসব কিছু
বলা দরকার।
- হ্যাঁ সেটাই ভাল হবে।
-- এখন উঠি?
- হ্যা অবশ্যই। চলেন।
কথা শেষ করে আমরা ফিরে আসলাম।
ফাহমিদাকে ভাইয়ার খুব পছন্দ হয়েছে।
আমারো হয়েছে। সুন্দরীও বলা যায় তাকে।
ভাইয়া ওদের সাথে কথা বলে। বলে যে
ফাহমিদাকে পছন্দ হয়েছে। এরপর আমি আর
ভাইয়া চলে আসি। আসার সময় ফাহমিদার
দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে
আড়চোখে তাকিয়ে আছে। আমি মুচকি হেসে
বেরিয়ে গেলাম।
.
আসলে এতদিন আমি মেয়ে দেখতে গেলেই
অনন্যাকে যেভাবে হোক নিয়ে যেতাম। এটা
আমারি একটা প্ল্যান ছিল। কারন অনন্যা তো
ওদের সামনে আমায় বাবা বলে ডাকবেই। আর
সে ডাক শুনে অবশ্যই পাত্রীপক্ষ বিয়ে দিতে
রাজি হবে না। আর আমি এটাই চাইতাম।
যাতে আমার বিয়ে না হয়। বিয়ের প্রতি
আমার তেমন কোন ফিলিংস নেই। কিন্তু
অনন্যা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। এখনই ওর
মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। আমি এটা ওটা
বলে কাটিয়ে দিই। কিন্তু এই ভাবে আর কয়
দিন। আর আমিই বা কতক্ষণ বাসায় থাকি।
সেজন্য ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও ওর
একটা মায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এই ভেবে
আমি আজ অনন্যাকে নিয়ে যাইনি। তবে
কাউকে ঠকাতেও চাইনা। তাই ফাহমিদাকে
সত্যিটা বলে দিয়েছি। এবার সে যে
সিদ্ধান্ত নিবে নিক। আমি বাসায় এলাম।
অনন্যার জন্য কিছু চকলেট নিয়ে বাসায়
গেলাম। দেখলাম অনন্যা ভাবির সাথে টিভি
দেখছে। আমি ডাক দিলাম।
- অনন্যা
আমার ডাক শুনে অনন্যা এক লাফেই আমার
কোলে চলে এল। আমি ওকে কোলে করে
নিয়ে ছাদে গেলাম। চকলেট দিলাম। অনন্যা
চকলেট খাচ্ছে। হঠাৎ অনন্যা বলল
-- বাবা... আম্মু এখনো বিদেশ থেকে
আসছেনা কেন?
আমি চমকে উঠি। এসময় অনন্যা এ প্রশ্ন করবে
আমি ভাবিনি। ওর গাল টেনে বললাম
- তোমার আম্মু যে বিমানে করে আসবে সেটা
নষ্ট হয়ে গেছে সেজন্য আসতে পারছেনা।
-- তাহলে তুমি আম্মুকে একটা বিমান পাঠিয়ে
দাও।
আমি ওর কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠি।
আমার হাসি দেখে অনন্যাও হাসল। আমি
বললাম
- ঠিক আছে মা.. আমি কালকেই তোমার
মায়ের জন্য একটা বিমান পাঠিয়ে দিব।
আমার এই কথা শুনে অনন্যা মহাখুশি। কিন্তু
চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। এই মেয়ে যখন বড়
হয়ে জানতে পারবে ওর বাবা আমি না তখন
এর কি অবস্থা হবে। আর যখন জানতে পারবে
ওর বাবা মায়ের মৃত্যু আমার হাতেই হয়েছে
তাহলে কি অনন্যা আমায় ক্ষমা করবে?
ভাবতে ভাবতে আমি নিচে নেমে এলাম।
অনন্যাকে ভাবির কোলে দিয়ে আমি বাইরে
চলে গেলাম।
.
ফাহমিদাকে সবকিছু বলার পরেও ও কিভাবে
বিয়ের জন্য রাজি হল আমি বুঝলাম না।
ভাইয়া তো মহাখুশি। ভাবিও আমাকে এটা
ওটা বলে দুষ্টুমি করতে শুরু করল। ভাইয়া ওদের
সাথে কথা বলে দিনতারিখ ঠিক করল। আমার
কাছেও ভাল লাগতে শুরু করল। কারন এতে
অনন্যা একটা মা পাবে। আমাকে আর ওকে
এটা ওটা বলে শান্ত করতে হবেনা। তাছাড়া
আমি ছেলে। বাইরে আমাদের কাজ করতে হয়।
ঘর সামলানোর দায়িত্ব মেয়েদের। ফাহমিদা
এলে সে ঘরও সামলাতে পারবে। এতদিন
ভাবি একাই পুরো বাড়ি সামলাত। এখন ভাবির
দায়িত্বটা কিছুটা হলেও কমবে।
.
সকাল বেলায় অনন্যা আমাকে জিজ্ঞেস
করল
--বাবা.. আম্মু নাকি আসবে?
- হ্যা মা। তোমাকে কে বলেছে।
-- ঐ যে বড় আম্মু বলেছে।
- ও... তুমি খুশি।
-- হ্যা বাবা। আমি খুব খুশি। তুমি আম্মুর জন্য
বিমান পাঠিয়ে দিয়েছ আমাকে আগে বলনি
কেন?
- ভুলে গিয়েছিলাম। এখন তো জানতে
পারলে। তোমার আম্মু তোমাকে খুব
ভালবাসে। আসলে আম্মুকে জিজ্ঞেস করবা
যে কেন সে এতদিন বিদেশ ছিল।
-- ঠিক আছে বাবা।
অনন্যা তার আম্মু আসবে শুনে খুব খুশি।
মেয়েটাকে এত হাসিখুশি দেখে আমার
ভেতরটা খুব শান্তি পায়। মেয়েটা কে যে
কেন এত ভালবাসি আমি নিজেও জানিনা।
.
নির্ধারিত তারিখে আমার আর ফাহমিদার
বিয়েটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হল। ফাহমিদা হয়ত
আমার কথাগুলো বিশ্বাস করেছে। যাই হোক
বিয়েতে অনন্যাকে আমি কোলে করে নিয়ে
গেলাম। মেয়েটা সারাক্ষণ আমার সাথেই
ছিল। গাড়িতেও আমার সাথে ছিল। আসার
সময় সে ফাহমিদার দিকে তাকিয়ে রইল।
ফাহমিদা নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।
চোখে পানি। বাবা মাকে ছেড়ে আসার জন্য
কাঁদছে হয়তবা। অনন্যা তখন আমায় বলল
-- বাবা, এটা কি আমার আম্মু?
- হ্যা মা... এটা তোমার আম্মু।
-- আম্মু খুব খারাপ। আমাকে একবারো কোলে
নেয়নি। আমার সাথে একটুও কথা বলেনি।
- তোমার আম্মু খুব অসুস্থ তো তাই কথা
বলছেনা। তুমি তোমার আম্মুর কোলে যাবে?
-- না বাবা আমি তোমার কোলে থাকব।
আমি অনন্যাকে কিছু না বলে নিচুস্বরে
ফাহমিদাকে বললাম
- দেখুন.. অনন্যা কষ্ট পাচ্ছে। আপনি একটু
ওকে কোলে নিয়ে আদর করে দেন। তাহলে
আমার মেয়েটা খুশি হবে।
ফাহমিদা যে আমার কথা এভাবে মেনে
নিবে আমি ভাবিইনি। আমার এই কথা শুনে
ফাহমিদা অনন্যাকে বলল
-- অনন্যা... আম্মুর কাছে আসবেনা?
অনন্যার সাথে এই প্রথম ফাহমিদা কথা বলল।
তাই অনন্যা কিছুটা ভড়কে যায়। আমার দিকে
তাকাল। আমি বললাম
- ছি মা... তোমার আম্মু তোমার সাথে কথা
বলছে। তুমিও কথা বল।
আমার কথা শুনে অনন্যা আমার কোল থেকে
ফাহমিদার কোলে যায়। বলে
-- আম্মু তুমি এতদিন বিদেশ ছিলে কেন? আর
তুমি কাঁদছ কেন?
ফাহমিদা চোখ মুছে হাসিমুখে তার কথার
উত্তর দিচ্ছে। বলল
- একটু কাজ ছিল তাই আসিনি। এখন চলে
আসছিনা। আর যাবনা। তোমার থেকে অনেক
দিন দুরে ছিলাম তো তাই কাঁদছি।
-- বাবা তোমার জন্য যে বিমান পাঠিয়েছে
ওটা কোথায়?
এ কথা শুনে ফাহমিদা আমার দিকে তাকায়।
ফাহমিদা বুঝতে পারছেনা কি বলবে। তাই
আমিই বললাম
- অনন্যা... মা অসুস্থ। মায়ের সাথে বেশি
কথা বলো না। শুধু চুপটি করে মায়ের কোলে
বসে থাকো।
আমি যা বলি অনন্যা তা ঠিক ঠিক ভাবে
মানে। তাই অনন্যাকে আমি খুব বেশি আদর
করি। ও কোন কথা না বলেই চুপটি করে
ফাহমিদার কোলে চুপটি করে বসে রইল।
.
চারিদিকের আত্মীয় স্বজন আস্তে আস্তে
করে কমতে শুরু করল। বন্ধুরা বাসর রাত নিয়ে
ঠাট্টা মশকরা করল। ফাহমিদা আমার রুমে
বসে আছে। অনন্যাও ফাহমিদার সাথে। অনেক
রাত হল। ভাবি আমাকে ডাকল। আমি ভাবির
কাছে গেলাম। ভাবি বলল
-- অনন্যা কে আজ আমাদের রুমে থাকতে বল।
- না থাক ভাবি। সমস্যা নেই।
-- আরে শোন... নতুন বউ তোমার। তাছাড়া এটা
তোমার বাসর রাত। আজ তোমরা থাকো। কাল
থেকে না হয় অনন্যা তোমাদের সাথেই
থাকবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি অনন্যাকে নিয়ে
যেতে পারলে নিয়ে যাও।
ভাবি আমার রুমে গেল। কিন্তু আবার ফিরে
এল। আমি বললাম
- কি হল ভাবি।
-- অনন্যা যাবেনা। তুমি একটু বলো। তোমার
কথা শুনবে।
আমি আর ভাবি দুজনেই এবার আমার রুমে
গেলাম। অনন্যা আমাকে দেখেই বলল
-- বাবা দেখেছ.. বড় আম্মু আমাকে আম্মুর
সাথে থাকতে দিচ্ছেনা।
আমি এই কথা শুনে নিরুত্তর হয়ে গেলাম। কি
বলব এই মুহুর্তে অনন্যাকে। আমি কিছু বলতে
পারলাম না। তখন ফাহমিদা ভাবিকে বলল
-- ভাবি.. অনন্যা এখানেই থাক। বাচ্চা মেয়ে।
জোর করে নিয়ে গেলে কান্নাকাটি শুরু
করবে। তার চেয়ে ভালো আমার সাথেই
থাকুক।
ভাবি আর কিছু না বলে চলে যায়। আমি চুপ
করে খাটে বসলাম। ফাহমিদাও চুপ করে বসে
আছে। অনন্যা আমাকে বলল
-- আম্মু অনেক ভাল।
- কিভাবে বুঝলে তোমার আম্মু ভাল।
-- আম্মু আমায় খুব আদর করেছে।
- আমি আদর করিনা? আমি ভাল না?
-- তুমি তো আম্মুর চেয়েও বেশি ভালো।
ফাহমিদা এই কথা শুনে হেসে ফেলল। হাসতে
হাসতে বলল
-- আমি তোমার আব্বুর চেয়েও ভাল। কিছুদিন
পরেই বুঝবে।
অনন্যা বলল
-- তোমরা দুজনেই ভাল।
আমি বললাম
- অনন্যা... অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমিয়ে
পড়।
-- বাবা ঘুম আসছেনা।
- তোমার আম্মুকে বল। তোমার আম্মু তোমায়
ঘুম পাড়িয়ে দিবে।
.
এরপর আমি বাইরে চলে গেলাম। অতিরিক্ত
আবেগে আমার চোখে পানি এসে যায়। শুধু
অনন্যার জন্য। মেয়েটা সত্যি আমাকে বাবা
আর ফাহমিদাকে মা ভাবা শুরু করল। চোখ ভরা
পানি নিয়ে আমি মনে মনে অনন্যার বাবা
মায়ের কছে ক্ষমা চাই। তারা হয়তবা
আমাকে ক্ষমা করে দিবে। হাশরের মাঠে
হয়ত বা আমার উপর কোন দাবী রাখবেনা।
কারন আমি তাদের মেয়েকে আমার মেয়ের
মতই বড় করে তুলছি। তাই হয়তবা আমি ক্ষমার
যোগ্য। বাথরুমে গিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে নিই।
প্রায় আধাঘন্টা পর আমি আবার রুমে ঢুকলাম।
ততক্ষণে অনন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে। ফাহমিদা
ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমাকে দেখে
খাট থেকে নেমে আমাকে সালাম করল। আমি
নিষেধ করিনি। আমি আমার মতই। লজ্জা
টজ্জা খুব একটা পাইনা। আমি ফাহমিদাকে
বললাম
- আচ্ছা আমি তো আপনাকে সব খুলে
বলেছিলাম। তারপরেও কেন আপনি বিয়েতে
রাজি হলেন?
-- আপনার কথাগুলো বিশ্বাস করবছিলাম তাই।
একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে তো কেউ
মিথ্যে বলবেনা।
- কে বলেছে বলেনা। মানুষ সত্যের চেয়ে
মিথ্যে বেশি বলে।
-- আমার কাছে মনে হয়েছিল আপনি সত্যি
বলছেন তাই। তাছাড়া আমি আমার
পরিবারকে সবকিছু বুঝিয়ে বলেছি। তারা
আপনার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছে। অনন্যার
ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছে।
- বাহ... গোয়েন্দাগিরিও করে ফেললেন এই
ফাঁকে।
-- সেটা আমি জানিনা। আম্মুরা জানে।
- হুম। আসলে আমি বিয়ের ব্যাপারে কোনদিন
ভাবিনি। অনন্যার একজন মা প্রয়োজন তাই
বিয়েটা করেছি।
-- আচ্ছা... আমি তো এখন আপনার জীবনসঙ্গী।
এখন তো আমাকে সবকিছু বলতে পারেন। কে
এই অনন্যা।
আমি খাট থেকে নেমে গিয়ে ল্যাপটপটা
নিলাম। তারপর আবার খাটে এসে ওটা অন
করলাম। সেখানে আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি
ওপেন করলাম। অনন্যা সেই ছবিগুলো দেখে
আঁৎকে উঠে। ছবিগুলোতে আমার হাতে
পিস্তল, ছুরি, রামদা, মদ, বিয়ার এসব কিছু।
আমি তখন ফাহমিদাকে বললাম
- আমি আগে খুব খারাপ ছিলাম। একলা
মানুষদের পেলেই ধরতাম। টাকা পয়সা,
সোনা-গহনা যার কাছে যা কিছু পেতাম সব
কেড়ে নিতাম। ভাইয়া কখনো এই ব্যাপারে
কিছু জানেনি। শুধু ভাইয়া না। আমার ঘনিষ্ঠ
কয়েকজন বন্ধু ছাড়া আর কেউই জানেনা।
যাদের সাথে এসব করতাম তারাও আমার
চেহারা কখনোই দেখেনি। কারন আমরা
সবসময় মাস্ক ব্যবহার করতাম। তাই আমাদের
কেউই চিনতনা। আমরা কোন রাজনৈতিক
লাইনে ছিলাম না। শুধু মাত্র বন্ধুরা মিলে
এসব করতাম। আর আমাদেরকে কেউই হাতে
নাতে ধরতে পারেনি। কারন আমরা এই কাজ
বেশিদিন করিনি। শুধু ছমাস করেছি। এই
ছমাসেও কম কিছু করিনি। কত মেয়ের গলা,
কান থেকে আমি কত গয়না ছিনিয়ে নিয়েছি
আমি নিজেও জানিনা। সেসব গয়না বিক্রি
করে মদ খেতাম। এভাবেই কাটছিল আমাদের
দিন। আর দিনে দিনে আমরা পশুর ন্যায় হয়ে
উঠছিলাম। কিন্তু এমন একটা দিন সামনে এল
যার জন্য আমরা সেদিনই সব কিছু ছেড়ে
দিয়ে ভালো হয়ে যাই। সেদিনই আমি এই
অনন্যাকে পাই। আমরা বন্ধুরা সবাই প্ল্যান
মোতাবেক বেরিয়েছি। কাউকে একা পেলেই
ধরব। এসব কাজ আমরা বেশির ভাগ ফয়েজ
লেকেই করতাম। সেদিন আমরা বন্ধুরা সবাই
আলাদা আলাদা হয়ে ফয়েজ লেকে ঢুকলাম।
ভেতরে ঢুকেও সবাই আলাদা আলাদা রইলাম।
কিন্তু সবাই কাছাকাছি। আস্তে আস্তে
উপরের দিকে উঠলাম আমরা। পাহাড়ের মতই
এটা। তারপর আমরা চারপাশের পরিবেশ
দেখি। মানুষজন থেকে আলাদা হয়ে আমরা
একটু নির্জনতায় প্রবেশ করলাম। সেখানেই
একজোড়া মানুষ পেলাম। একটা ছেলে আর
একটা মেয়ে। আর মেয়েটার কোলে একটা
বাচ্চা। বাচ্চাটাকে মেয়েটা দুধপান
করাচ্ছিলেন। আমরা বুঝতে পারি যে বাচ্চা
মেয়েটাকে দুধ পান করানোর জন্যেই এই
দম্পতি একটু নির্জন জায়গায় বসেছেন।
তারপর আমরা সবাই মুখে মাস্ক বেঁধে
একত্রিত হয়ে ওদের ঘিরে ধরলাম। ওরা খুব ভয়
পেয়ে গেল আমাদের দেখে। ছেলেটা বলল
- ভাই.. প্লিজ ভাই এমন করবেন না। আমার
মেয়ে রয়েছে এখানে।
আমি ওর কথা শুনে ওকে বললাম মানিব্যাগ
বের করতে। মানিব্যাগ বের করে দেখলাম
মাত্র দুশো টাকা আছে। আমার মাথা গরম
হয়ে যায়। জ্যাকেটের ভেতরে একটা ছোট
লোহার পাইপ ছিল। ওটা দিয়ে সজোরে
ছেলেটার মাথায় বাড়ি দিলাম। ছেলেটার
মাথা ফেটে রক্ত বেরোয় আর ছেলেটা
মাটিতে পড়ে যায়। ছেলেটি অজ্ঞান হয়ে
মাটিতে পড়ে যায়। এই দৃশ্য দেখে ছেলেটার
স্ত্রী জোরে কেঁদে উঠল। আমি ওর চুলের মুঠি
ধরে গলায় ছুরি ধরলাম। ভয়ে মেয়েটা চুপ হয়ে
গেল। নীরবে কান্না শুরু করল। বলল
-- ভাই... দয়া করেন ভাই। আমার নিষ্পাপ
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটু দয়া করেন
ভাই।
আমি কিছু বললাম না। আমার বন্ধু মেয়েটার
ব্যাগ চেক করে মাত্র পাঁচশ টাকা পেল।
মেয়েটার হাতে একজোড়া চুড়ি ছাড়া আর
কোন গয়না নেই। আর চুড়িগুলোও সোনার না।
আমার মাথা আরো গরম হয়ে যায়। আমার এক
বন্ধু তখন আমার কানে কানে বলল
- বন্ধু... আজ টাকা পয়সা কিছু নিস না। নিয়ে
লাভ নেই। এদের কাছে কিছু নেই। তার চেয়ে
ভাল চল মেয়েটাকে নিয়ে খেলি। কোনদিন
তো করিনাই।
এই কথা শুনে আমার ভেতর মনুষ্যত্ব আরো
লোপ পেয়ে যায়। মেয়েটা আমার চোখের
দিকে তাকিয়ে আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পারে।
মেয়েটা তখন আমার পা জড়িয়ে ধরে
অজোরে কাঁদতে শুরু করল। আর বলতে থাকল
-- ভাই আমাকে যেতে দিন। আমার মেয়েটার
দিকে তাকিয়ে হলেও ভাই আপনারা দয়া
করে আমায় যেতে দিন।
আমি ওর মুখে বার বার মেয়ে মেয়ে শুনে
আরো রেগে যাই। ওর কোল থেকে
মেয়েটাকে জোরে ছিনিয়ে নিই। আর বললাম
- আমি কি চাইছি সেটা নিশ্চয়ই তুই বুঝতে
পেরেছিস। আর মুখ দিয়ে যদি একটা কথা
বলেছিস তাহলে তোর মেয়েটাকে এখান
থেকেই নিচে ফেলে দেব।
আমার মুখে এই কথা শুনে মেয়েটির কান্নার
জোশ আরো বেড়ে যায়। সে কাঁদতে কাঁদতে
বলে
-- ভাই এমন কাজ করবেন না। আপনারা
আমাকে মেরে ফেলেন। কিন্তু আমার মেয়ের
কোন ক্ষতি করবেন না।
- তো তাহলে আমি যা বলব তা শুনবি?
-- হ্যাঁ ভাই শুনব।
কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটির দুচোখ লাল হয়ে
যায়। আমি আমার বন্ধুর কোলে বাচ্চাটাকে
দিলাম। এরপর আমি মেয়েটির দিকে এগিয়ে
গেলাম। মেয়েটি খুব কাঁদছে। আমি এখনো
ভাবি যে সেদিন মেয়েটার প্রতি আমার
একটুও মায়া হল না কেন? আমার জায়গায় যদি
একটা নরখাদক থাকত হয়তবা তারো মায়া হত।
কিন্তু আমার হল না। আমি মেয়েটার দিকে
হাত বাড়াতেই মেয়েটা বলল
-- আল্লাহ যাতে আপনাদের কোন দিন ক্ষমা
না করে।
এই বলেই মেয়েটা লাফ দেয়। আমাদের
চোখের সামনেই। আমরা নিচে তাকিয়ে
দেখি মেয়েটার মাথা থেকে রক্ত বের
হচ্ছে। জবাই করা মুরগীর মত কয়েকবার
ঝাপটেই নিথর হয়ে যায়। আমরা সবাই তখন
নিস্তব্ধ হয়ে যাই। মেয়েটা মারা যাবার
পরেই আমার টনক নড়ল। তখন আমার চোখে
পানি এসে গেল। আমরা খুব ভয় পেয়ে যাই।
ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে
এখনো অজ্ঞান হয়ে আছে। নাকে হাত দিয়ে
দেখলাম কোন নিঃশ্বাস পড়ছেনা। তখন
বুঝতে পারলাম ছেলেটা মারা গেছে। আমরা
তখনি পালানোর জন্য প্ল্যান করলাম। কিন্তু
ওদের বাচ্চাটা কোথায় রাখব। আমাদের
ভাগ্য ভালো ছিল যে বাচ্চাটা তখন
ঘুমাচ্ছিল। না হলে বাচ্চার কান্নার শব্দে
আমরাই বিপদে পড়তাম। আমি বাচ্চাটাকে
আমার জ্যাকেটের ভেতর লুকিয়ে উপরে
একটা চাদর পড়ে নিই। তারপর আবার আমরা
সবাই আলাদা হয়ে যাই। আলাদা আলাদা
হয়েই আমরা ওখান থেকে ধীরে বেরিয়ে
যাই। মেয়েটাকে আমি বাসায় নিয়ে আসি।
ভাইয়াকে শুধু বললাম রাস্তায় পেয়েছি।
ভাইয়া আমাকে বলল
- কার না কার বাচ্চা পেয়েছিস। থানায়
গিয়ে খবর দে।
-- না ভাইয়া থানায় যাওয়ার দরকার নেই।
তোমাদের বিয়ে হল কয়েক বছর হয়ে গেল।
কোন বাচ্চা হয়নি এখনো। তোমরা এই
মেয়েটাকে রেখে দাও। বড় হলে তোমাদেরই
বাবা মা ডাকবে।
ভাইয়া তখন বিষয়টা মেনে নেয়। সেই
বাচ্চাটাই আজকের অনন্যা। অনন্যা নামটা
আমিই রাখি। ওকে ভাবি মায়ের মমতা দিয়ে
একটু একটু করে লালন পালন করতে শুরু করে।
অনন্যা যখন কথা বলতে শিখছে তখন আমি
ওকে ভাইয়াকে দেখিয়ে বললাম এটা তোমার
বাবা। আমার মুখে বাবা ডাক শুনে অনন্যা
আমাকেই বাবা ডাকা শুরু করল। অনেক চেষ্টা
করেছি যাতে অনন্যা ভাইয়াকে বাবা
ডাকে। কিন্তু অনন্যা আমাকেই বাবা ডাকতে
থাকে। এটা নিয়ে ভাইয়াও আর কিছু বলেনি।
ভাবিও বেশি কিছু বলেনি। এরপর থেকে
আমিই অনন্যাকে বাবার মত করে বড় করে
তুলি। অনন্যা আস্তে আস্তে করে বড় হল। আর
সত্যি সত্যিই আমাকে বাবা ভাবল। তাই
আমিও ওকে আমার মেয়ের মত করে আদর
করি। কিন্তু ওর বাবা মার সাথে আমি যে ঘৃণ্য
অন্যায় করেছি সেজন্য আমি কখনো
নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। এঘটনার পর
থেকেই আমরা বন্ধুরা এসব নোংরা কাজ
ছেড়ে দিই। সবাই আস্তে আস্তে ভালো হয়ে
যাই। আর অনন্যাকেও আমি খুব ভালবাসতে শুরু
করি। ও যখন আমাকে বাবা বলে ডাকে তখন
আমার বুকটা আনন্দে ভরে ওঠে। ওর মা
নিজের সতীত্ব রক্ষা করার জন্য নিজের
জীবনটা দিয়ে গেল। সন্তানের মায়া ত্যাগ
করে নিজের সতীত্ব বজায় রাখল। আমি
তাকে মাথা নত করে শ্রদ্ধা জানাই। ওদের
মাগফিরাতের জন্য দোয়া করি।
.
বলতে বলতে কেঁদে ফেলি আমি। ফাহমিদার
দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখেও পানি।
সে অনন্যাকে জড়িয়ে ধরল। শোয়া থেকে
উঠিয়ে কোলে তুলে নিল। আমি ফাহমিদাকে
বললাম
- আপনার আর আমার মধ্যে যে সম্পর্কই থাকুক
না কেন আমার মেয়েটা যেন মায়ের অভাবটা
বুঝতে না পারে।
-- আপনি ভাববেন না। আজ থেকে আমিই
অনন্যার মা।
ফাহমিদার এই কথা শুনে আমি ফাহমিদাকে
বললাম
- ধন্যবাদ আপনাকে। আমি কখনো প্রেম
করিনি। আর কাউকে ভালোবাসিও নি। শপথ
করেছিলাম যে আমার স্ত্রী হবে আর যে
আমার অনন্যার মা হবে তাকে খুব করে
ভালবাসব।
আমার এই কথা শুনে ফাহমিদা চোখ মুছে
মুচকি হাসে। আমার মুখেও ফুটে উঠে তৃপ্তির
হাসি।
.
দুবছর পর....
.
আমার মেয়ে এখন স্কুলে পড়ে। ফাহমিদা
ওকে মায়ের মমতা দিয়েই বড় করেছে।
কোনদিন অবহেলা করেনি। আর আমিও
করিনি। এর মাঝে ফাহমিদার দায়িত্ব
আরেকটু বেড়ে যায়। আরো একটা সন্তানের
দেখাশোনা করতে হয়। আমি একটা ছেলে
সন্তানের বাবা হয়েছি। অনন্যা আমার
ছেলেকে ভাই বলে ডাকে। দুপুরে বাসায় বসে
আছি। অনন্যাকে ভাইয়া স্কুল থেকে নিয়ে
এল। অনন্যা বাসায় এসে বলল
-- আম্মু খিদা পেয়েছে।
- একটু অপেক্ষা কর মা। তোমার ভাই খাচ্ছে।
অনন্যা ভাইয়ের কথা শুনে ভাই ভাই বলে
দৌড়ে এল। ভাইয়ের কপালে চুমু দিয়ে আদর
করে দিল। এই দৃশ্য দেখে আমি আনন্দে
আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলি। কে বলবে
অনন্যা আমার মেয়ে নয়। ও আমারই মেয়ে।
ফাহমিদা ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে ভাত নিয়ে
এসে অনন্যাকে খাইয়ে দিচ্ছে। খাওয়ার পরে
অনন্যাকে বলল
-- খেয়েছ। এবার চুপটি করে ভাইয়ের পাশে
ঘুমাও।
অনন্যাও এখন ফাহমিদার কথা মানে।
আমাদের দুজনের কথার বাইরে যায় না।
অনন্যা ঘুমিয়ে পড়ল। ওরা ঘুমানোর পর
ফাহমিদা আমার জন্য ভাত নিয়ে এল। আমি
প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে ফাহমিদাকে
জড়িয়ে ধরলাম। ফাহমিদা লজ্জা পেয়ে বলল
-- কি হচ্ছেটা কি। দুপুর বেলা কি শুরু করেছ?
আমি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম
- থ্যাংক ইউ ফাহমিদা। অনন্যাকে মায়ের
অভাব বুঝতে দাওনি। আর আমাকেও কোন দিন
কষ্ট দাওনি।
ফাহমিদা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
-- অনন্যা তো আমারই মেয়ে। তাকে কি করে
মায়ের অভাব বুঝতে দিই। আর তুমি তো আমার
স্বামী। তোমাকে কি করে কষ্ট দিই।
আমি ফাহমিদার কথা শুনে নিরুত্তর হয়ে যাই।
মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই। তারপর
আমরা দুজনে একসাথে খাওয়া দাওয়া করে
নিই। আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া
জানাই যে তিনি আমাকে খুব ভালো করে
দিয়েছেন। অনন্যার জন্য বাবা মায়ের
ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমি যেন আমার
স্ত্রী সন্তান ভাই ভাবি নিয়ে সারাজীবন
সুখে থাকতে পারি। ঠিক এভাবেই বাঁচতে
চাই আমি। ঠিক এভাবেই। (সমাপ্ত)
.
.
.
লেখক :- বিবাগী শাকিল

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ