দিনটা ২০১৬ সালের ২৭ শে এপ্রিল | বৈশাখ মাসের
ভ্যাপসা গরমে কিরন আর পরির জীবনে বসন্ত
এসেছে | ওদের আজ বিয়ে | না , এই বিয়ের
আগে ওদের জীবনে প্রেম এর 'প' ও পা
দেয়নি ! কিরন স্বভাবে বেশ লাজুক , তাই
কলেজ ইউনিভারসিটিতে সুন্দরী মেয়েদের
দিকে আড় চোখে শুধু তাকিয়েই গেছে |
লাইন মারা, প্রেম করা আর হয়নি ! আর পরির ব্যাপারটা
উল্টো , ওর আজ অব্দি কাউকে বিশেষ পছন্দই
হয়নি ! আর হবেই বা কি করে, গার্লস স্কুল , তারপর
গার্লস কলেজ , তার ওপরে ওর বাবা ! না পরির বাবা
অন্য বাবাদের মতন একটুও রাগী না, একেবারে
বন্ধুর মতন | তাই বন্ধু হিসেবেই স্কুলে , পড়ার
ব্যাচ এ , গানের ক্লাস এ দিয়ে আসতো আবার
নিয়েও আসতো | পারার ফাংসন থেকে যে
কোন অনুষ্ঠানে মেয়েকে একা ছাড়ার
কোনো প্রশ্নই নেই | তাই সুন্দরী পরিকে
ছেলেদের ঝারি অনেক খেলেও , প্রেম
পত্র সমেত প্রেমিক কোনদিনও খুঁজে পায়নি |
তাই অবশেষে দুজনেই মা বাবার স্মরনাপন্ন হয়ে
, মিষ্টি আর রসগোল্লার প্লেট হাতে বিয়ে
করতে রাজি হয়ে যায় | তবে কিরন এর আরো
একটা কারণ ছিল , 'চিংড়ির মালাইকারী'| যেদিন পরিকে
দেখতে গিয়েছিল ওদের বাড়িতে প্রথম ,
সেইদিন দুপুরে খাবার, চালের সরু নরম ভাত, চিংড়ির
মালাইকারী , আমের চাটনি, পাপর, খাইয়েছিল | সবই
পাত্রী নিজের হাতে তৈরী করেছে |
এখনো কিরনের যেন রান্নাগুলো মুখে
লেগে আছে , বিশেষ করে সেই চিংড়ির
মালাইকারী | যেটা খেয়েই কিরন মনঃস্থির করে
নিয়েছিল , যে বিয়ে যদি করে তাহলে এই চিংড়ির
মালাইকারীকে ই করবে , সরি , মানে ইয়ে ,
ওই পরিকেই করবে |
বৌভাতের দিন যদিও সেই পচা গরমটা ছিল না |
কালবৈশাখীর ঝড় আর বৃষ্টি শহরটা কে ভিজিয়ে
দিয়েছে | আজ বেশ ভালো ঘুম হবে , এই
ভেবেই কিরন ঘরে ঢুকলো | এখন ঘরে শুধু
ও আর পরি , আর একটা নিঃস্তন্ধতা ! তবে, ঘরে
ঢোকার আগে একটু যে নার্ভাস হচ্ছিল না কিরন ,
সেটা বললে ভুল বলা হবে | আসলে বিয়ে ঠিক
হয়েছে ফেব্রুয়ারী মাসে, তারপর পরির
সাথে দেখা হয়েছে হাতে গুণে পাঁচবার | ত়া ও
মা, বাবা ভাইয়া সহ | কথা হয়েছে , "কি কেমন
আছ?" , "হ্যা ,আমি ভালো আছি " ,শুধু ওই অব্দিই | আর
ফোন করারও উপায় নেই, পরিদের বাড়িতে
তখনও অব্দি ল্যান্ড ফোনের কনেক্সন নেয়া
হয়নি | আর বুথ এ দাঁড়িয়ে পা ব্যথা করে বকবক করার
মতন কোনো ইচ্ছাই পরি ন নিজে থেকে
দেখায়নি।পরি নিজেও কোন মোবাইল ব্যাবহার
করত না | যাই হোক, এত কিছু ভেবে এখন আর কি
হবে ! বিয়ে করেছে তো একসাথে একই
ঘরে থাকার জন্যই | আর তিন দিন ধরে এই বিয়ের
ধকল এর পর বিছানা যেন ওকে ডাকছে ! সেই
সব ভেবেই ঘরের দরজাটা বন্ধ করলো |
তারপর আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগিয়ে
এলো | পরি লাল শাড়ী পরে কনের সাজে
বসে আছে | বাহ, বেশ সুন্দর দেখতে
লাগছে তো ! সন্ধ্যে থেকে আত্মীয়
সজন, পারা পরশী , বন্ধু বান্ধবের ভীড়ে
নিজের বউ কে মন দিয়ে দেখার সময়ই পায়নি
কিরন | কিন্তু কিরন বিছানায় এসে বসতেই হঠাত একটা
উল্টো ঘটনা ঘটল ! পরি হাপুস নয়নে কাঁদতে শুরু
করলো ! কিরন তো অবাক ! কি হলো ! কি
করলো ও ! এই ভাবে কাঁদছে কেন রে
বাবা ! ... আমতা আমতা করে কিছু কথা সাজিয়ে কিরন
ভয়ে ভয়ে জিগেশ করলো , "পরি কি
হয়েছে ? কাঁদছ কেন ? আমি তো কিছুই
করিনি !" .... পরি কেঁদে কেঁদে উত্তর দিল ,
"প্লিস কিছু করবেন না ! প্লিস আমাকে ছেড়ে
দিন |
আমি বাবার কাছে যাব | এই রকম সারা রাত একটা অজানা
অচেনা ছেলের সঙ্গে একই ঘরে থাকব !
আমার ভয় করছে |" ... কিরন কথা শুনে আকাশ
থেকে পড়ল , " কি বলছ ? অজানা অচেনা ? কিন্তু
আমি তো তোমার বর |" ...... পরি চোখের জল
মুছতে মুছতেই উত্তর দিল, " সে তো আজ
হলেন ! এতদিন থরী ই না চিনতাম ! আগে এত ভয়
লাগেনি | শাড়ি, গয়না , এত গিফটস এই সবের কথা
ভাবতে ভাবতেই দিন কেটে গেছে ! কিন্তু
আজ সত্যি খুব ভয় করছে | " ............. এর কি
উত্তর দেবে কিরন ! সত্যিই তো | অজানা
অচেনাই বটে | তারপর পরিকে শান্তনা দিয়ে বলল
, " প্লিস কেঁদো না পরি | তুমি আর একটু ভলিউম
বাড়ালেই ঘরের বাইরে লোক জড়ো হয়ে
যাবে ! কে বলতে পারে, ফুলসজ্জার রাতেই
আমি বধু নির্যাতনের কেস এ ফেঁসে জেলখানা
চলে গেলাম।
না বাবা, তার থেকে আমি সোফায় যাচ্ছি | তুমি আরাম
করে হাত পা ছড়িয়ে খাটে ঘুমাও , নো
প্রবলেম |"..... কথাটা বলে কোনো ভাবে
মেক আপ দিয়ে পরির কান্না থামিয়ে সেই রাতে
কিরন সোফার ওপরই নিজের শরীরটা এলিয়ে
দিল | ঘুমনোর আগে শুধু একটা কথাই মনে
হলো , বাবার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করা
সত্যিই চাপের | পরির বয়স ২০ হলেও চিন্তাধারা ১৪
বছরের ! কি লজিক ! গিফট আর গয়নার কথা ভাবতে
ভাবতেই দিন কেটেছে, ফুল সজ্জার কথা তাই
মনেই হয়নি ! যাই হোক, কি আর করা যাবে | এই
ভাবেই মানিয়ে গুছিয়ে দিন কাটাতে হবে |
একমাত্র বউ বলে কথা |
কিন্তু ফুলসজ্জার তিনদিন পর কিরন আর মানাতে পারল
না সোফায় | রাত সারে বারোটায় পরিকে ঘুম
থেকে তুলে রিকুয়েস্ট টা করেই ফেলল ,
"পরি প্লিস, আমি খাটে শুই | তোমার কোনো
চিন্তা নেই , আমি এক কোণে ঘুমোবো |
মাঝখানে দু দুটো পায়ের বালিশ থাকবে |
আসলে এই তিনদিন সোফায় শুয়ে শুয়ে
কোমরে ভীষণ ব্যথা ! আর নেয়া যাচ্ছে না
|".... ভেবেছিল পরি কথাটা শুনে আবার না
সেইদিনের মতন কেঁদে ফেলে ! কিন্তু
এবার ব্যাপারটা উল্টো হলো , পরি সমবেদনার দৃষ্টি
দিয়ে কিরনের দিকে তাকালো , .... "ইশ , আই
এম রিয়ালি সরি | তুমি আগে বলনি কেন তোমার
কোমরে ব্যথা ! আর আমিও কি ! ওই টুকু একটা
সোফায় কেউ ঠিকভাবে শুতে পারে ! সরি ,
আমার জন্য তোমাকে এই ভাবে কষ্ট করতে
হলো | তুমি প্লিস খাটে ঘুমও | আমার কোনো
প্রবলেম নেই |".......... কথাটা শুনে কিরনের
মুখে হাঁসি | যাক, বাঁচা গেল |
আসলে পরি এই তিন দিনে এই অচেনা
ছেলেটাকে একটু হলেও চিনেছে ! একে
ভালবাসা যায় কি না ,এখনো অব্দি ওর জানা নেই !
তবে ভয় পাওয়ার মতন এই ছেলের মধ্যে একটা
লক্ষণ ও নেই |
এই সবের দু সপ্তাহ কেটে গেছে | আজ ওরা
ঢাকায় ফ্ল্যাট এ এসেছে | কিরন ঢাকায় একটি
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে | তাই
সিলেটে আসল বাড়ি হলেও , পেটের দ্বায়ে
ঢাকার বাসিন্দা | পরিও এর আগে অনেকবারই ঢাকা
এসেছে | আত্মীয় , সজনদের বাড়িতে |
কিন্তু আজকের আসাটা একটু অন্য | আজ ও
এসেছে সংসার করবে বলে | সেইদিন
ফ্ল্যাটের দরজা খুলল যখন , ঘড়িতে বাজে দুপুর
একটা | কিরন পাশের হোটেল থেকেই খাবারটা
নিয়ে এলো | পরি গুছল সেরে খাবার খেয়ে
দারুন একটা ঘুম দিয়েছে | সন্ধ্যের পর বারান্দায়
এসে রাতের ঢাকার দিকে তাকিয়েছিল ও , হঠাত
কিরনের কথায় সম্ভিত ফিরল , " বল , তাহলে
রাতে কি খাবে ? আমি বলি সিম্পেল এর মধ্যে
রাখো | চিকেন কারী আর ভাত , |" .. বেশ
হেঁসেই বলল | পরি ঘর দুলিয়ে সম্মতি দিল, "হ্যা,
তাই ভালো | চিকেন কারী আর ভাত |"....... কথাটা
বলেই আবার আনমনে রাতের ঢাকার
পরিবেশের দিকে মন দিল | গুনগুন করে গানও
শুরু করলো, "ঘরে তে ভ্রমর এলো
গুনগুনিয়ে |"....... কিছুক্ষণ বাদে দরজায় বেল
বাজলো | দরজা খুলতেই কিরন হাজির | হাতে এক
থলি বাজার , আর একটা প্ল্যাস্টিক এর ভেতর কাঁচা
মুরগির মাংস | পরির চোখ বড় বড় করে বলল,
"এগুলো কি ? এগুলো দিয়ে কি হবে ?"......
কিরন এক গাল হেঁসেই উত্তর দিল, "আরে
বাড়িতে তো আলু ,পিয়াঁজ কিছুই ছিল না ! চিকেন টা
রান্না হবে কি দিয়ে ! আমি সঙ্গে আদা রসুন
টমেটো ও নিয়ে এসেছি | যাই হোক, নাও
এগুলো ধর | বেশ জমিয়ে রান্না কর , হ্যা
|" ........... পরির শুকনো মুখে উত্তর দিল, " কিন্তু
, মানে , আমি তো রান্না পারি না | আমি ভেবেছিলাম
তুমি সামনের হোটেল থেকে সকালের মতন
চিকেন কারী নিয়ে আসবে |" .... কিরন যেন
ধাক্কা লাগলো , " কি ! রান্না পারো না মানে !
সেইদিন যখন দেখতে গেলাম, কত কি
করেছিলে তো | এচড় আলুর দম, চিংড়ির
মালাইকারী | এত তারাতারি সব ভুলে গেলে না
কি ?"..... পরি নির্বিকার গলায় সত্যবাদী যুধিষ্টির মতন
উত্তর দিল , "সেইদিন তো সব রান্না মিনতি খালা,
মানে আমাদের বাড়ির কাজের খালা করেছিল | আমি
তো সারাদিন বসে বসে শুধু সেজেছিলাম ,
ছেলে দেখতে আসছে বলে কথা |"...
কিরনের তো কথাটা শুনে চোখ কপালে !, "
মানে ? সেইদিন যে তোমার মা বাবা বলল সব
রান্না পাত্রী করেছে | আমি তো সেই চিংড়ির
মালাইকারী খেয়েই হ্যা বললাম?
পরি মিনমিন করে উত্তর দিল , "সেই জন্যই তো
বলেছিল, মিথ্যে কথা | পাত্রী রান্না করতে
জানে না শুনলে তো সুপাত্র পটবে না | তাই
|" ... না, আর কোনো কথা আসছে না ! কিরন
চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসলো | মুখটা এখন
থমথমে | এই সব আগে জানলে মিনতি খালাকেই
বিয়ে করত ! কিন্তু এখন তো আর সেটাও সম্ভব
না | তাই এই ভুমিকম্পের আফটার শক কাটিয়ে কিরন
রান্না ঘরে গিয়ে গ্যাস জ্বালালো | কলেজ লাইফ
থেকে একা থাকার অভ্যেস | তাই রান্নাটাও পারে ,
চালিয়ে নেয়ার মতন | শুধু এটা ভাবেনি যে বিয়ের
পরেও 'চালিয়ে নেয়ার মতন' নিজের হাতের
রান্না খেয়েই দিন কাটাতে হবে ! তবে পরি
সেদিন বলেছে, কিরনের হাতের চিকেন
কারীর না কি দারুন টেস্ট |
দিন কাটছে নিজের তালে | কিরন আর পরি ঢাকায়
এসেছে দশ দিন হয়ে গেছে | সেইদিন ছিল
শুক্রবার | কিরন হেলে দুলে ঘুম থেকে
উঠে এগারটার পর রান্না চাপিয়েছে | আজকের
মেনু রুই মাছের কালিয়া আর ভাত | তবে ব্যাস, ওই
রান্না টুকুই ওর দ্বায়িত্ব | কাপড় জামা কাচা পরিই করবে
| আর বাসন মাজাটা মিউচুয়াল কন্ট্রাক্ট , সেটা দুজনে
হাত লাগিয়ে দুটো থালা দিয়ে নেয় | ঠিক ই
আছে ! বিয়ে মানে তো 50 /50 | সব সময় একটা
মেয়েকেই রান্না করতে হবে কেন !
আফটার অল দেশ স্বাধীন , নারীরা স্বাধীন !
এই সব মহান চিন্তা করতে করতেই কিরন রান্না
শেষ করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো | আর হঠাত
বারান্দায় শুকুর দেয়া ওর শার্ট ,আর পাঞ্জাবিটার দিকে
চোখ পরে গেল | পরি তো সকাল বেলা ওর
সাদা শার্ট, পাঞ্জাবি কাচতে নিয়ে গিয়েছিল ! এই সাদা
শার্ট , ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবি এই রকম ডিপ নীল
রঙের কি করে হলো ? কথাটা ভেবেই কিরন
জোরে জোরে পরিকে ডাকলো | পরি
সাবানের ফ্যানা কপালে হাতে মেখে হাজির |
দেখে মনে হচ্ছে যেন বাথরুমে কাপড় জামা
কাচ্ছিল না , যুদ্ধ করছিল কারোর সাথে | কিরন বেশ
গম্ভীর ভাবে বলল , " পরি ? এটা কি ? এই শার্ট ,
পাঞ্জাবি এই রকম কি করে হয়ে গেল ?" ..পরি
বেশ প্রাউডলি উত্তর দিল , " কেন ! বুঝতে পারছ
না ? নীল দিয়ে ধুয়েছি তো | মিনতি খালা তো
দেখতাম, কাপড় জামা ডিটারজেন্ট এ দেয়ার পর
নীলের জলে ডোবাত | কিন্তু মিনতি খালা খুব
কিপ্টে জানো, কয়েক ফোঁটা নীল দিত !
তাতে কি হয় বল ! আমি তো আজ হাফ সিসি
ঢেলে দিয়েছি | কি ভালো পরিস্কার হয়েছে
না ! দেখো |"... কথাটা শুনে কিরনের যেন
কান্নাই পেয়ে গেল | আস্তে গলায় বলল , "
সেই , এত ভালো পরিস্কার হয়েছে যে জামার
রংটাই বদলে গেল ! পরি, প্লিস , বিয়ের পর এটা
আমার সেকেন্ড রিকুয়েস্ট , আমার জামা কাপড়
দারুন ভাবে পরিস্কার করার দরকার নেই | একটু
ডিটারজেন্ট এর জলে ধুয়ে দিও , তাহলেই
হবে | আর সেটাও যদি না পারো, তাহলেই ইট'স
ওকে , একটু জল ধোয়া করে দিলেও হবে
|"....পরি কথাটার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলো না, মুখ
বেঁকিয়ে বলল, "তোমার না, কিছুই পছন্দ হয় না |
যত সব |"...
সময়ের কাঁটা এইভাবেই আস্তে আস্তে এগিয়ে
যাচ্ছে | আজ কিরন আর পরির বিয়ের এক মাস পূর্ণ
হয়েছে | পরি আজ সন্ধ্যেবেলা বেশ
সেজেছে | কিরন অফিস থেকে ফিরে অবাক
, পরি না কি আজ নিজের হাতে রান্না করেছে !
ডাইনিং টেবিল এ বেশ হাঁসি মুখেই বসলো ও ,
কে জানে আজ কি আছে মেনু তে ! পরি
প্রথম রান্না করেছে বলে কথা | একটু ভয় ও
লাগছিল, নুন ,ঝাল , মিষ্টি যেন ঠিকঠাক প্রপর্সনে
হয় ! নইলে যে খাবে তার রিস্ক | এই সব
ভাবতে ভাবতেই পরি হাজির, হাতে একটা বাটি | কি
রান্না আছে ওই বাটিতে ? কিরন বেশ আগ্রহ
সহকারে বাটির ঢাকনা টা সরালো | আর যেটা পেল
সেটা দেখে ও বাকরুদ্ধ | বাটিতে আলু সিদ্ধ মাখা |
পরি এক গাল হেঁসে বলল, "আজকের মেনু,
আলু সিদ্ধ আর ভাত | আজ আমি প্রথম নিজের হাতে
আলুর খোসা ছাড়িয়েছি, সেটাকে সিদ্ধ করেছি,
তারপর তেল, পেয়াজ কাঁচালংকা দিয়ে জমিয়ে
মেখেছি | আর সরি , ভাত টা একটু গলে
গেছে ! আসলে প্রেসারে চারটে সিটি বেশি
পরে গেছে | যাই হোক, আজ তো সবে
শুরু, এরপর আস্তে আস্তে দারুন রান্না শিখে
যাবো আমি , সিওর।
সত্যি এবার পরিকে রান্নাটা শেখাতেই হবে | আলু
সিদ্ধ আর গলা ভাত খেতে খেতে কিরন এটাই
ভাবছিল | তবে মনে মনে , মুখে কিন্তু আলু
সিদ্ধর সুনামে পঞ্চমুখ |
তারপর থেকে শনি রবিবার গুলো দুজনের রান্না
ঘরেই কাটত | পরিকে ধীরে ধীরে আলু
ভাজা, ডাল , তরকারী সবই রান্না করতে শিখিয়ে
দিয়েছে কিরন|
এখন ৬ মাস কেটে গেছে ওদের বিয়ের |
এর মাঝে ঢাকার সব দর্শনিয় জায়গা দেখা হয়ে
গেছে | ফিলিপ্স এর ক্যামেরার দু দুটো রিল
শেষ, উফ,পরির কি সাজের বাহার সেখানে, ,
লিপস্টিক , প্রিন্ট এর শাড়ি, আর কতকি। সত্যি কথা
বলতে কি , কিরনের এই রকম সুন্দরী বউকে
নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগে দারুন | বেশ একটা
গর্ব হয় নিজের ওপর | ক্যামেরাতে হাত টা বার বার
আপনাআপনিই চলে যায় ওর | কেমন যেন মনে
হয় আজকাল , মুহূর্ত গুলোকে ধরে রাখতে ,
একদম নিজের করে রাখতে |
এর মধ্যে রমজানের শেষে ঈদ চলে
আসে, পরি হঠাত সকালে উঠে কিরনের হাতে
একটা কচি কলা পাতা রঙের শার্ট ধরিয়ে দিল | নিউ
মার্কেট ঘুরে ঘুরে না কি কিনেছে ও এই
শার্টটা, কিরনের জন্য | আজ ওদের কিরনের
মেজ খালার বাড়ি ধাওয়াত, পরির আবদার এই শার্টটা
পরেই কিরন ধাওয়াত রক্ষা করতে যেতে হবে
| কিরনও কথাটা শুনে হাঁসি মুখে সম্মতি জানালো |
কিন্তু খালার বাড়ি গিয়ে আরেক কেস, খালা তো
অবাক ! দরজা খুলেই প্রথম কথা, ---- "কিরে কারন ?
এই কচিকলা পাতা রঙের জামা পরেছিস যে ? মনে
আছে দু বছর আগে ঈদে তোকে এই কালর
এর একটা শার্ট এর পিস গিফ্ট করেছিলাম, আর তুই
কেমন ফেরত দিয়েছিলিস | তোর না কি এই রং
একদম চলে না | আজ নিশ্চই বউ গিফ্ট করেছে |
তাই চুপচাপ পরে ঘুরতে বেরিয়েছিস , কিরে তাই
না ?"...কথাটা শুনে কিরন চুপ আর পরির মুখটা ফ্যাকাসে
| সেই রাতে পরি ওকে জিজ্ঞাসা করেই
ফেলল , "তোমার যখন এই রংটা পছন্দ ছিল না, তখন
আমাকে বললে না কেন ? আমি চেঞ্জ করে
আনতাম |"... কিরন সেইদিন পরির চোখে চোখ
রেখে বেশ দৃঢ় গলায় উত্তর দিয়েছিল, ---
"আসলে সবাইকে না বলতে পারি , কিন্তু
তোমাকে না বলাটা ঠিক আসে না | আর আজ
থেকে কচিকলা পাতা রংটা আমার খুব পছন্দের |"....
কথাটা শুনে পরি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিয়েছিল |
আর কোনো কথা খুঁজে পায়নি উত্তর দেয়ার
মতন |
এখন জ্যানুয়ারী মাস |২০১৭ সাল এসে দরজায় করা
নেড়েছে | পরি কিছুদিনের জন্য সিলেটে
এসেছে বাপের বাড়িতে | যদিও মনটা ঢাকাতেই
পরে আছে | এই দু দিনে একটা চিঠিও লিখে
ফেলেছে , আজ যাবে পোস্ট অফিস,
পোস্ট করতে | এইসবই ভাবছিল তখনই কলিং
বেলটা বেজে উঠলো | এখন সকাল ৮ টা
বাজে, এত সাত সকালে কে এলো আবার ! এই
সব ভাবতে ভাবতেই মায়ের গলার আওয়াজটা
কানে এলো | --- " আরে জামাই এসেছে রে
, পরির বাবা, কি গো , তুমি কোথায় আছ ? দেখো
কে এসেছে !"... পরি কথাটা শুনে লাফাতে
লাফাতে ড্রইং রুমে গিয়ে পা টা থমকে গেল |
সামনে ঢাকার ফেলে আসা চেনা মুখটা হাজির |
কিরনও স্থির দৃষ্টি তে পরির দিকে তাকিয়ে , মুখে
একটা লাজুক হাঁসি | এই দৃশ্য দেখে শাশুড়ি মা বলেই
ফেলল , --- "বুঝতেই পারছি , জামাই তো বউকে
ছাড়া দু দিন ও থাকতে পারে না | কি টান |" ... পরি
সেদিন ছাদে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো , " ইশ , মা
বাবা কি ভাবলো বল তো ? আমি তো আজই চিঠি
পোস্ট করতাম | আর তুমি যে এই ভাবে হঠাত
চলে এলে , অফিসে এ ছুটি পেতে অসুবিধা
হলো না ?".... কিরন বেপরোয়া ভাবে পরির হাতটা
শক্ত করে ধরে উত্তর দিল, " ধুর, যা ভাবে ভাবুক
| আমার কি ! আমি তো আর অন্য কারোর বউ এর
সাথে দেখা করতে আসিনি | আর ওই ফ্ল্যাট এ একা
থাকার অভ্যাস আমার শেষ হয়ে গেছে |
ভীষণ খালি খালি লাগে | তাই অফিসে এ
এপ্লিকেসন দিয়ে চলে এলাম |" ......
আজ বছর পার হওয়ার দিন | ২৭ শে এপ্রিল | পরি আর
কিরনের বিবাহ বার্ষিকী | দুজনেই সকাল সকাল
রেডি হয়ে নিয়েছে, বেশ সেজে গুজে |
কিরন তো বিয়ের সেই পাঞ্জাবিটা পরেছে |
পরি সেজেছে লাল রঙের তাতের
শাড়ীতে | সিনেমা দেখে , হোটেল এ
খেয়ে বাড়ি ফেরা , সারা দিনের প্ল্যান | সবই ঠিক
চলছিল সকাল থেকে , কিন্তু হঠাত মাঝ রাস্তায়
স্কুটারটা বিগড়ে গেল | আগের বছরই এই
সেকেন্ড হ্যান্ড বাজাজ স্কুটারটা কিনেছিল কিরন |
এই বিবাহ বার্ষিকীর দিন যে এই ভাবে
ভোগাবে এটা কে জানত ! কিছু দূর গিয়ে
গ্যারেজ | পাঞ্জাবি ঘামে একেবারে ভিজে
গেছে স্কুটার ঠেলতে ঠেলতে | আর
সঙ্গে আবার সুন্দরী বউ | রাস্তার সব
লোকেরা ওদের দিকে তাকিয়ে | এত লজ্জা
লাগছিল কিরনের | তার ওপরে রাস্তার কিছু দুষ্টু বাচ্চা
অব্দি ওদের আওয়াজ দিল , " ভাইয়ার গাড়ি বিগড়ে
গেছে, ভাইয়ার গাড়ি বিগড়ে গেছে |" ... উফ,
সকালবেলা কার মুখ দেখে যে উঠেছিল !
যাইহোক গাড়ি ঠিক হওয়ার পর কিরনের মুখ ভার |
সকালের ঘটনাটা ভুলতেই পারছে না ! পরিও আর চুপ
করে না থেকে বলেই ফেলল, ---
" কি হয়েছে তোমার ? এত দুঃখ কিসের ?"...
কিরন মুখ ভার করেই উত্তর দিল , --- " ধুর , আজ যা
হলো সকালে ! আমার ওই স্কুটার এর জন্য
তোমারও লজ্জা | সরি পরি, আর তিন মাস সময় দাও,
এইবার একটা নতুন স্কুটার কিনবই |".... পরি কথাটা শুনে
হেঁসে ফেলল ,-- " কে বলল তোমাকে
আমার লজ্জা লেগেছে ! আর আমি তো
জীবনে আর কিছুই চাইনি | আমি তো প্রথম
থেকেই এই রকম স্কুটার অলা চশমা পরা একটা মিষ্টি
বর চেয়েছিলাম | সেটা পেয়ে গিয়েছি , ব্যাস,
যথেষ্ট | আর আমার নতুন স্কুটার চাই না |"... কথাটা
বলেই কিরনের কাঁধে নিজের মাথাটাকে
এলিয়ে দিল | এক বছর আগের দুটো অজানা
অচেনা মন , আজ ৩৬৫ দিনের ব্যবধানে , খুব
চেনা , খুব কাছের | প্রেম ওদের জীবনে
এসেছে, কবুল বলার পর , অন্য স্বাদে , অন্য
রূপে |
।।।।!!!
.
.
>>>>>>সমাপ্তি<<<<<<<<<
. লেখা:-Koyes Ahmed Kiron(কাল্পনিক রাজপুত্র)
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ā§Šā§Ļ āĻāĻĒ্āϰিāϞ, ⧍ā§Ļā§§ā§
533

532
> তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? (রিয়া)
> কেন? (আমি)
> বাসো কি না? (রিয়া)
.
কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা!! তবে রিয়াকে খুব
ভালোবাসি,, অনেক আগে থেকেই। সে
আমাকে অনেক আগেই তার ভালোবাসার কথা আমায়
বলেছিল,, আমি হ্যাঁ অথবা না কোনটাই বলিনি। আসলে
সে আমায় ভালোবাসলেও আমার বলতে ভয়
করে। কেন করে নিজেও জানিনা,, খুব ইচ্ছেও
করে বলতে!! আমার আর রিয়ার পরিচয়
ফেসবুকে....প্রতিদিন কথা হয়, যেমন এখনো
হচ্ছে। তো রিয়ার মেসেজের রিপ্লে দিতে
দিতে পরিচিত হয়ে নেই?
.
আমি ফারাবি,, দেখতে নম্র-ভদ্র হলেও,, ভেতরে
ভেতরে আমি কি জিনিস তা আমিই জানি। যা ভালো
মনে করি তা করতে ১ মিনিটও ভাবিনা। অল্পতেই
রেগে যাই,, তবে ভালোবাসার মানুষের কথার
অবাধ্য কখনোই হইনা। আর গিটার!! আমার একমাত্র
দুঃখের সঙ্গী। অবশ্য সবাই দুঃখের সঙ্গী
হিসেবে সিগারেটকেই বেছে নেয়, তবে আমি
নেশা করা ঘৃণা করি!! তাইতো এই টুং-টাং শব্দের
বস্তুটাকেই সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছি।
এবার রিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই....
.
রিয়া!! শান্তশিষ্ট,, চুপচাপ,, অপরুপ সুন্দরী মেয়ে।
অপরুপ সুন্দরী বলায় হয়তো অবাক হচ্ছেন,,
কেন এতো সুন্দরী হওয়ার পরও ভালোবাসার কথা
বললাম না? বুঝিয়ে বলছি। সত্যি বলতে আমি কখনো
প্রেমের কথা ভাবিনি,, কিন্তু রিয়ার সাথে পরিচিত হওয়ার
পর থেকে তার প্রতি আমি দিনে দিনে দুর্বল হয়ে
পড়ি। সেই প্রথম প্রেমে পড়া,, আমার প্রথম
ভালোবাসা। রিয়াকে পাওয়া সুযোগ তো আছে,,
কিন্তু বলি কিভাবে!! আমাদের পরিচয় বেশিদিনের নয়!
এই বেশি হলে ৭-৮ মাস...এরই মাঝে ভালোবাসা
হয়ে যায়। এবার আমাদের পরিচয়ের পরের কিছু কথা
বলি...
.
রিয়া নিজে থেকেই আমায় বন্ধুত্বের প্রস্তাব
দেয়,, সেদিন রাজি হয়েছিলাম...এই বন্ধুত্ব যে
আজ ভালোবাসায় পরিনত হবে জানতাম না। তখন
থেকে শুরু হয় আমাদের বন্ধুত্বের পথ চলা।
তবে কিছুদিন যাওয়ার পরই রিয়া তার ভালোবাসার কথা
বলে দেয়! আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা! না পারি
প্রেম করতে না পারি ফিরিয়ে দিতে।
.
> এইইই কই তুমি??? (রিয়া)
.
ওহ,, আপনাদের সাথে পরিচিত হতে গিয়ে
মেসেজের রিপ্লেই দেওয়া হলোনা।
.
> না এইতো আছি। (আমি)
> এখন বলো ভালোবাসো কি না? (রিয়া)
> আবার? (আমি)
> তোমাকে যা বলেছি তার উত্তর দাও!! (রিয়া)
.
অনেক ভেবে উত্তর দিলাম!!
.
> পরে বলবো.... (আমি)
> কেন? (রিয়া)
> প্রবলেম আছে!! (আমি)
> না তোমাকে বলতেই হবে। (রিয়া)
> আমি জোর করা পছন্দ করিনা। (আমি)
.
রিপ্লের অপেক্ষা না করেই ফেসবুক থেকে
বেরিয়ে গেলাম। থাকলে হয়তো কাহিনীটা
আরো লম্বা হতো। যাই হোক,, আজ আমি খুব
ক্লান্ত। বাসায় এসেই লম্বা ঘুম দিয়েছিলাম। বিছানা
ছেড়ে ফ্রেস হয়ে আসলাম!! কিছুদিন ধরে কিছু
ভালো লাগেনা,, তাই একা থাকতেই পছন্দ করি।
সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয়টি বলি,, কিছুদিন ধরে সব
প্রেমিক-প্রেমিকা জোড়া বেধে আমার সামনে
সামনে ঘুরে। যেখানে যাই সেখানেই!! ডিস্কাস্টিং!!
তারা কি আর জায়গা পায়না??? নিজের ভালোবাসা নিয়ে
আছি চিন্তায়, তার উপর!!! বাদ দেন!! গল্পে ফেরা
যাক.......
.
রিয়া প্রায় দুদিন ধরে বলছে তাকে ভালোবাসি কিনা,,
উত্তর না দিলেও রেগে যায়। কিন্তু কি করবো
বলুন! কিছুদিন ধরে ভুলে তাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা
বলে ফেলছি,, যার কারণে স্পষ্ট বুঝতে পারছে
আমি তাকে ভালোবাসি!! ওহ আরেকটা কথা, রিয়া আর
আমার মধ্যে অদ্ভুত সব মিল ছিল। যেমন সে যা
পছন্দ করে আমারও তা পছন্দ,, সে যেমন
ছেলে পছন্দ করে আমার তেমন মেয়ে। কিন্তু
মাঝেমাঝে খুব খারাপও লাগে!! ভালোবেসেও
বলতে পারিনা। অবশ্য এই ভালোবাসা জিনিসটা সবার
কপালে জোটেনা,, কেউ কেউ ভালোবেসেও
ভালোবাসার মানুষকে পায়না! আমাদের ব্যাপারটাও
অনেকটা তেমনই। প্রায়ই আমার মনটা খারাপ থাকতো,,
সন্ধ্যা হলে বাইরের পরিবেশটা দেখতে চলে
যেতাম,, ছাদে বসে আনমনে গান গাইতাম। পুরো
পৃথিবীটা আমার কাছে এলোমেলো লাগতে
লাগলো!!
.
ছাদে বসে আছি!! আজ নিজেকে খুব একা মনে
হচ্ছে!! হুম রিয়ার কথাই মনে পড়ছে,, তার কথা
ভাবলেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে
যায়....মোবাইলে রিয়ার ছবি ওন করলাম,, একটার পর
একটা দেখছি………
.
> ভাইয়া!!!!
.
চমকে উঠলাম ওর ডাকে!! চেয়ে দেখি এটা তো
আমার কুটনি বুড়ি!! আমার ছোট বম্ব থুক্কু থুক্কু
আমার ছোট বোন!! তার কাছে হিটলারও হার মানবে।
.
> ওইই এই মেয়েটা কে???????
.
মোবাইলের স্ক্রিন ওফ করে কিছুক্ষণ চুপ
থেকে বললাম……
.
> কই? কোন মেয়ে? মাথা ঠিক আছে তোর?
(আমি)
.
কে জানতো আমার কুটনি বুড়িটা আমার রুমে তল্লাশি
চালিয়েছে!! এ যেনো কোনো গোয়েন্দা।
সে পেছন থেকে হাত সামনে আনতেই আমি
নির্বাক হয়ে যাই!! আমি যে রিয়ার ছবি আঁকতাম সেই
ছবি!!! সবগুলো পেয়ে গেল।
.
> তুই ছবি আঁকার সময় আমি খেয়াল করতাম,, তুই
ফোনে ছবি দেখার সময় দেখলাম এই মেয়ে
আর আঁকা ছবিতে একদম মিল!! এই ভাইয়া এটা আমার ভাবি
তাইনা?? তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় ভাবির সাথে খেলবো!!!
.
তখন কেন জানি আমি রেগে যাই!! তার হাত থেকে
ছবিগুলো টান দিয়ে নিয়ে জোরে একটা ধমক
দিলাম। কিন্তু আমার রেকর্ড আছে,, কখনো এই
কুটনি বুড়িটাকে মারা তো দূরে থাক,, ধমকও দেইনাই।
পিচ্চিটা মুখ কালো করে চলে গেল!! আমার অবস্থা
বুঝলে হয়তো ও এমন দুষ্টুমি করত না!! যাই হোক,,
ঘরে গিয়ে একটু আদর করলেই ঠিক হয়ে যাবে।
আকাশের দিকে তাকালাম,, চাঁদ আজ খুব সুন্দর!!
চোখ বন্ধ করে মনেমনে বললাম,, "তুমি আর আমি
দূরে হলেও,, একই আকাশের নিচে। সারাদিনের
রোদটা,, আমাদের দুজনকেই একসঙ্গে স্পর্শ
করে। রাতের চাঁদের আলোও,, একবার হলেও
আমাদের একসঙ্গে স্পর্শ করেছে। জীবনে
একবার হলেও,, দুজনে একসঙ্গে চাঁদের দিকে
তাকিয়েছি। জীবনে একবার হলেও,, দুজনে
একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজেছি!!"
আসলেই কথাগুলো সত্য,, জীবনে একবার
হলেও তো দুজনে একসঙ্গে এসব করেছি।
ফেসবুকে লগইন করলাম,, দেখি রিয়া ওনলাইনে
রয়েছে!! দেরি না করেই মেসেজ করলাম………
.
> Hi (আমি)
> কি করো? (রিয়া)
> চাঁদ দেখি,, একটু তাকাও ওটার দিকে। (আমি)
.
দেখলাম মেসেজ সিন হয়েছে,, দেরি না করে
আমিও চাঁদের দিকে তাকালাম। অন্যরকম অনুভব
হচ্ছে,, ভালো লাগাও কাজ করছে। একসাথে চাঁদ
দেখলাম। এখন যাই,, কুটনি বুড়িটার রাগ না ভাঙ্গালে দুঃখ
আছে!!…………
.
> ওইইই!! (আমি)
> ………………
> আপ্পি ভাইয়ার সাথে কথা বলবিনা? (আমি)
> ওহ অকে!! কিটকেট গুলো আমার পেটেই
যাবে!! (আমি)
> এইই ভাইয়া ছল্লি!!! দে চকলেট দে!!!
> এতক্ষণ কথা বললি না কেন? (আমি)
> রাগ করছিলাম,, ছল্লি ভাইয়ু!!!!
.
আমার আপ্পিটা চকলেট খাওয়ায় ব্যস্ত। আমি কিছু না
খেয়েই শুয়ে পড়লাম নিজের রুমে। না খাওয়াটা
এখন আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। আমার
আপ্পিটা অনেক করে বলেছিল,, তবুও খাইনি।.......
.
পরদিন সকালে.....
ভাবলাম যা হওয়ার হবে,, ভালোবাসার কথা বলে দিব।
আমি কি পাগল? নাকি ছাগল? রিয়া আমাকে ভালোবাসে
তো আমি বলতে পারিনা কেন??????
হঠাৎ আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো কুটনি বুড়িটার কথায়।
.
> ভাইয়া একটু নাচ তো?
.
অবাক হয়ে গেলাম কথাটা শুনে!! কি বলে?? পাগল
নাকি?? সকাল সকাল কি বলে???
তার কথা শুনে কাশতে শুরু করি। কাশতে কাশতে
বললাম,,,,,,,,
.
> কিইইইই??? কেন???? এইসব অনেক আগেই
ছেড়ে দিছি। (আমি)
> আগে যে মাইকেল জেকসনের নাচ নাচতি মনে
আছে??
> হুম But এখন না। (আমি)
.
এই বলে বেরিয়ে গেলাম বাসা থেকে। একটা
ব্রিজের উপর বসে আছি। ফেসবুকে ঢুকেই
দেখি রিয়া আছে.......
.
> বলবে কিছু? (রিয়া)
> কি বলবো? (আমি)
> ভালোবাসো কিনা? (রিয়া)
> পরে বলবো!! (আমি)
> আমি মরার পরে উত্তর দিবা তাইনা???? (রিয়া)
> এসব কি বলছো? (আমি)
> তোমার মায়ের কসম তোমাকে বলতেই হবে
আজকে,, yes or no!!! (রিয়া)
.
কিছুক্ষণ ভেবে দেখলাম..প্রায় পাঁচ মিনিট পর
রিপ্লে করলাম।
.
> I lv u (আমি)
> সত্যি??????? (রিয়া)
> হুমম (আমি)
> এতদিন বলনি কেন?? (রিয়া)
> এই কথাটা বলতে সবার ভয় লাগে। (আমি)
> কই আমি তো ভয় পাইনি। (রিয়া)
> কার গিএফ সেটা তো দেখতে হবে!! (আমি)
> হিহিহি!!!! (রিয়া)
.
জানি রিয়া খুব খুশি হয়েছে!! আমি নিজেও কিন্তু কম
হইনি। হে আকাশ,, হে বাতাস,, আজ আমি ধন্য!! আজ
থেকে আমি রিয়ার আর রিয়া আমার!!!!
.
[ভুলগুলো ক্ষমর দৃষ্টিতে দেখবেন]
.
লেখা : Ahmed Farabi (ক্যাপ্টেন ফারাবি)
