āĻŽāĻ™্āĻ—āϞāĻŦাāϰ, ā§§ā§­ āĻāĻĒ্āϰিāϞ, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž

4884

*****স্মৃতির পাতা*****(লেখক রাহিম মিয়া)
'
'
প্রতিদিনের মতো আজও বের হয়ে গেলাম বাজারের উদ্দেশ্যে, তবে আজ ব্যাগ নিয়ে। কারণ রোকসানা বলেছে বাজার করতে হবে তাই, না হলে সকালের চা খাওয়াটা শুধু করতে যেতাম বাজারে।আজ সকালে শীতের তীব্রতা একটু বেশিই মনে হচ্ছে, তাই চাদরটা ভালোভাবে নিজের
শরীরে সাথে জড়িয়ে দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। প্রায়
বাজারের কাছে আসতেই আমি থমকে গেলাম, কারণ রাস্তার পাশে অনেক মানুষের ভিড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঘটনা দেখার জন্য আস্তে আস্তে সেখানে যেতেই আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
কারণ একটা বাচ্চা শিশু রাস্তার পাশে কাপড় মোড়ানো পরে আছে। কিন্তু সবাই শুধু দেখে যাচ্ছে, কেউ বাচ্চাটাকে নিচ্ছে না কিংবা কেউ নিয়ে বাচ্চাটাকে যে ভালো জায়গাতে নিয়ে রাখবে সেটাও করছে না। সবাই তাকিয়ে শুধু বাচ্চাটা দেখে যাচ্ছে আর কথা বলাবলি করছে। বাচ্চাটাকে ভালোভাবে দেখে আমার কাছে মনে
হল মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে হয়তো জন্ম হয়েছে।
তখন দেখতে পেলাম পাশে দুইটা কুকুরও দাঁড়িয়ে আছে, ভিতরটা কেমন জানে করতে লাগলো। পাঁচ সাত না ভেবে বাচ্চাটাকে হাতে তুলে নিলাম আর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাচ্চাটা তখন ঘুমিয়ে আছে, আমি যাচ্ছি আর ভাবছি এইরকম সুন্দর বাচ্চা কীভাবে ফেলে গেল তার পিতা, মাতা?
মানুষের মনে হয় বিবেক আজকাল মারা গেছে,না হলে এতটুকু একটা বাচ্চা রাস্তাতে ফেলে যায় কীভাবে? এইসব ভাবতে ভাবতে বাড়িতে চলে আসলাম।

--কই গো রোকসানা কোথায় গেলে বাহিরে আসো, দেখ আমি কি নিয়ে এসেছি।

ঘর থেকে বের হতে হতে

---এইভাবে জোরে চিৎকার দিচ্ছেন কেন? আজ বাজারে কি সবকিছু সস্তা পেয়েছেন নাকি, তবে এত তাড়াতাড়ি বাজার করলেন বা কীভাবে?

--আরে আগে হাতে দেখ এটা কি।

---এই মা আপনে বাচ্চা পেলেন কোথায়?বাজার করতে পাঠিয়েছি আর আপনে বাচ্চা নিয়ে এসেছেন দেখছি । 

---আর বল না, গিয়েছিলাম তো বাজার করতেই। কিন্তু বাজারে কাছে আসতেই রাস্তা পাশে মানুষের ভিড় দেখতে পেলাম। তখন ভিড়ে ঢুকে দেখি বাচ্চাটা মাটিতে পরে আছে, কিন্তু কেউ নিচ্ছে না সবাই শুধু দেখে যাচ্ছে।হঠাৎ দুইটা কুকুর দেখে ভিতরটা কেমন যানে করতে লাগলো, যদি কুকুর দুইটি সুযোগ পেয়ে ঘুমান্ত বাচ্চাটা খেয়ে ফেলে।
তুমিই বলো তখন কি বাচ্চাটাকে ফেলে আসা ঠিক হত?

---না, ঠিক হত না। আপনে অনেক ভালো কাজ করেছেন বাচ্চাটাকে এনে। আমার হাতে দেন আমি কোলে নেয়।

---এই নেও আর ঘুমিয়ে আছে বলে বাঁচা গেল, না হলে তো বাচ্চাটা কান্না করতে করতে কান ফাটিয়ে ফেলতো।

--- এই মা এইতো দেখছি ছেলে, আর এত সুন্দর ছেলে কে ফেলে গেল?এত সুন্দর ছেলে মানুষ ফেলে যায় কীভাবে আল্লাহ্‌ জানে।

---কি বলো ছেলে?

---হ্যাঁ ছেলে।

---আল্লাহ্‌ মনে হয় এই ছেলেটা আমাদের জন্যই পাঠিয়েছে। শুনো না রোকসানা আমাদের তো দুইটি মেয়ে, কিন্তু কোনো  ছেলে নেই আর কত কান্না করেছ তুমি ছেলে সন্তানের মা হবার জন্য। আল্লাহ্‌ মনে হয় তোমার ডাক শুনেছে, তাই এই বাচ্চা ছেলেটাকে আমার হাতে দিয়ে তোমার কাছে
এনেছে। আজ থেকে তুমি ওর মা আর আমি ওর বাবা।

---হ্যাঁ আল্লাহ্‌ আমার ডাক শুনেছে। আজ আমি অনেক খুশি গর্ভে দেননি তো কি হয়েছে, আপনার মাধ্যমে তো এই সুন্দর ছেলেটাকে আমার কাছে এনে দিয়েছে। আজ আমি অনেক খুশি জানান।

---তোমার এই মুখে হাসি দেখে আমারও ভালো লাগছে। এখন যাও বাচ্চাটাকে নিয়ে ঘরে যাও, বাহিরে খুব ঠান্ডা তো। আমি যাচ্ছি বাজার করে আনতে।

--এই যে শুনেন দাঁড়ান।

--কি হলো?

--বাজার থেকে দুধ আর ফিডার আনবেন বাচ্চার জন্য বুঝেছেন।

--আচ্ছা আনবো।

তারপর বাজার করতে চলে গেলাম, প্রয়োজনিও সব কিছু কিনে নিলাম সাথে বাচ্চার জিনিসগুলোও। বাজার করে এনে বউকে ডাক দিলাম।

--কই গো গেলে রোকসানা, বাজার তো  নিয়ে এসেছি।

--আপনেও না বদলাবেন না। কতবার বলেছি সাথীর মা বলে ডাকতে, তবুও বারবার আমার নাম ধরে ডাকেন।

---তোমার এত সুন্দর নাম থাকতে আমি সাথী মা বলে ডাকবো কেন হ্যাঁ। নেও বাজার নিয়ে ঘরে যাও। আজ কিন্তু ভালো করে রান্না চাই।

--তারপরও সবাই তাদের বউকে বড় সন্তানের নামের সাথে মা বলে মিলিয়ে ডাকে। আচ্ছা যাচ্ছি আর রান্না ভালো করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

--ঐ সব আমি ডাকতে পারবো না। তোমার এই সুন্দর নাম রোকসানা রেখে অন্য নাম বলার প্রশ্নই উঠে না।

--আচ্ছা আপনার যা খুশি ডাকেন, আমি যাচ্ছি ঘরে।

তারপর বাজার নিয়ে রোকসানা ঘরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরই ভিতর থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। তখন বসে বসে ফোন টিপছিলাম কান্না শুনে ভিতরের গেলাম।

--কি হলো রোকসানা বাচ্চা কান্না করছে কেন?

--দেখেন না দুধ দিচ্ছি খাচ্ছে না, উল্টা কান্না করছে বাবুটা।

--খুব ছোট তো তাই হয়তো মায়ের দুধ ছাড়া অন্য দুধ খেতে চাই না। তুমি দেখ না তোমার বুকের থেকে দুধ খাওয়াতে পার কিনা।

---আপনার ছোট মেয়েটার বয়স কত জানান তিন
বছর। এখন কি বুকে দুধ আছে বলেন?

--তারপরও দেখ আসে কিনা দুধ। না হলে তো এই বাচ্চা মনে হয় না গরুর দুধ খাবে।

--শুধু বাচ্চা বাচ্চা বলছেন কেন?

--তাহলে কি বলবো বলো?

--আমার মনে হয় আমাদের বাচ্চাটার একটা নাম রাখা দরকার। আপনার নামের সাথে মিলিয়ে রাখলে কেমন হয় ।

--ভালো হয়, কিন্তু কি নাম রাখবে ভাবছো?

--রাহিম রাখবো। আপনার নাম তো আব্দুর রহমান আর আমার ছেলে নাম হবে আব্দুর রাহিম অনেক মিল তাই না।

--হ্যাঁ অনেক মিল, তবে এটা কি শুধু তোমার ছেলে আমার বুঝি কেউ না।

--হি হি হি আচ্ছা  যান আমাদের ছেলে হয়েছে।

---হ্যাঁ আমাদের ছেলে রাহিম। তুমি দেখে নিও একদিন ওকে আমি অনেক বড় করবো।আজ তো শুক্রবার  আমি বাহির থেকে ঘুরে আসছি। এসে দুপুরের খাবার খাব আমি যাচ্ছি।

--এই যে শুনেন দাঁড়ান।

--আবার কি হলো?

--যোহরের আজান দেওয়া সাথে সাথে চলে আসবেন গোসল দিয়ে নামাজে যাওয়ার জন্য।

--আচ্ছা আসবো। তুমি দেখ বুকের দুধ খাওয়াতে পার কিনা, আমি আসি এখন।

তারপর বাহিরে চলে গেলাম আবার সেই বাজারে। সেখানে বসে চা খাব আর কিছু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিব বলে । যোহরের আজান দেওয়া সাথে সাথে বাসাতে চলে আসলাম গোসল দিয়ে নামাজ পড়ার জন্য। নামাজ পড়ে খেতে বসলাম পাশে দেখি আমার দুইটা মেয়েও বসে আছে চেয়ারে। বড় মেয়েটা ক্লাস প্রথম শ্রেনীতে পড়ে আর ছোটটা জানেনই তো মাত্র তিন বছর। খাওয়া শুরু করে দিলাম তখনি আমার বড় মেয়ে সাথী বলতে লাগলো।

---আব্বু আম্মু বলেছে এটা নাকি আমাদের ছোট ভাই সত্য?

--হ্যাঁ মা এটা তোমাদের দুইজনের ছোট ভাইয়া।

--তাহলে এতদিন কোথায় ছিল?

--তোমাদের নানীর বাসাতে ছিল তাই আগে দেখতে পাওনি। আমি আজই এনেছি তোমার আম্মু বলেছে বলে আর তোমরা না ছোট  ভাইয়া জন্য আমাকে বলতে, আজ তো তাহলে খুশি হবার কথা।

--হ্যাঁ আব্বু আমি আর স্মৃতি অনেক খুশি। তুমি যান আব্বু আমার অনেক বান্ধুবীর ভাই আছে কিন্তু আমার ছিল না। কিন্তু এখন থেকে আমি সবাইকে বলতে পারবো আমারও একটা ছোট সুন্দর ভাই আছে।

---হ্যাঁ মামুনি এখন খাও। খাওয়ার সময় এত কথা বলতে নেয়।

--আচ্ছা আব্বু।

শেষমেষ অনেক কষ্ট করে বুঝালাম যে এটা তাদের আপন ভাই আর  খাওয়ার শেষে উঠে পরলাম। রাতে ডিনার করে বিছানাতে গিয়ে দেখে আমি তো অবাক।

--রোকসানা বাবুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছ নাকি?

--হ্যাঁ খাওয়াচ্ছি, অনেক চেষ্টা করার পর বুকের দুধ
এসেছে।  দেখুন না কি সুন্দর করে বাবু দুধ খাচ্ছে।

-- তুমি খাওয়াতে থাক, আমি ঘুমায় খুব ঘুম পাচ্ছে আর শুন সকালে ডেকে দিও, নামাজ পড়ে তারপর ব্যায়াম করে অফিসে যেতে হবে।

--আচ্ছা তবে একটা কথা শুনেন।

--এত রাতে আবার কি কথা বলবে।

--বলেছিলাম যে রাহিমকে আমরা যে কুড়িয়ে পেয়েছি আমাদের দুই মেয়ে যাতে কোনোদিন না জানতে পারে।

--আচ্ছা জানবে না, কিন্তু সমাজের মানুষ তারা যদি কখনো বলে দেয় তখন কি হবে? আর রাহিম যদি বড় হয়ে এই কথা জানতে পারে এলাকার কারো থেকে যে আমরা তার আপন মা, বাবা না তখন কি করবে?

--আমরা রাহিমকে অনেক ভালোবাসা দিয়ে বড় করবো,যাতে কেউ এই কথা বললেও রাহিম যাতে বিশ্বাস না করে। আরেকটা মজার কথা কি জানেন, আমাদের ছেলের বাম হাতে একটা তিল আছে।

--তিল থাকা অনেক ভালো আর দুধ খাওয়ানো শেষ হলে ঘুমিয়ে যেও, আমি ঘুমাচ্ছি।

তারপর স্বাভাবিক ভাবেই  চলছিল দিনকাল। আমাদের ছেলে রাহিম আস্তে আস্তে করে বড় হতে লাগলো। ওর যখন পাঁচ বছরে পা দিল তখন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলাম। ছেলে আমার মাশআল্লাহ পড়ালেখাতে অনেক ভালো স্কুলের স্যার বলেছে, সেদিন শুনে খুব খুশি লেগেছিল। এখন আমার মেয়ে দুইটা আমাকে আর রোকসানাকে বলে আমরা বলে রাহিমকে ওদের থেকে বেশি ভালোবাসি।মাঝে মাঝে এই কথা নিয়ে রোকসানার সাথে অনেক কথা কাটাকাটি করে, আমি তখন চুপ করে থাকি আর মুচকি মুচকি হাসি আমার মেয়েদের কথা শুনে। রাহিম যখন ৫ম শ্রেনীতে পড়ে একদিন বিকালে দৌড়ে এসে ঘরে রোকসানাকে বলতে লাগলো, তখন আমি বাহিরে টেবিলে বসে পেপার পড়ছিলাম।

--আম্মু আম্মু তুমি কোথায়?

--কি হল বাবা এইভাবে হাপাচ্ছিস কেন? আর মুখে এত ঘাম কেন? এইদিকে আসো আমি মুছে দিচ্ছি।

--আগে বলো আমাকে কি আব্বু রাস্তার থেকে কুড়িয়ে এনেছি নাকি? আর তোমরা বলে আমার আপন মা, বাবা না এই কথাটা কি সত্য আম্মু বলো?

-- না বাবা, আর কে বলেছে এই কথা তোমাকে?

--আমার বন্ধু খেলার মাঠে বলেছে। ওর বাবা বলে ওকে বলেছে আমাকে নাকি আব্বু কুড়িয়ে এনেছে রাস্তার থেকে।

--আরে বোকা ছেলে কান্না করছিস কেন? মানুষ যা বলে তা বিশ্বাস করতে নেই বাবা। হতে পারে তোমার ঐ বন্ধু তোমাকে কষ্ট দিবার জন্য মিথ্যা এইকথা বলেছে। নাম কি ঐ ছেলের? আমি এখনো তোমার আব্বুকে বলে তাকে বকা দেওয়াবো।

--শুভ ওর নাম আমাদের পাশের এলাকার করিম চাচার ছেলে।

--আচ্ছা বাবা তুমি এখন যাও।

--আচ্ছা আম্মু।

তারপর আমাকে ডাকতে লাগলো রোকসানা

--সাথীর আব্বু কোথায় গেলেন ঘরে আসেন কথা আছে।

--হ্যাঁ বলো কি কথা আর আমি সব শুনেছি গো রাহিমের কথা ।

--আপনে গিয়ে করিম ভাইকে আর তার ছেলেকে বুঝিয়ে আসেন যাতে কোনোদিন এইসব কথা আর কাউকে না বলে।

--আচ্ছা আমি এখনি যাচ্ছি।

সেখানে গিয়ে ভালোভাবে বুঝিয়ে আসলাম যাতে আর কোনোদিন না বলে, আর কিছুটা টাইটও দিয়ে আসলাম। কিন্তু সত্য কথা যে কোনোদিন চাপা থাকে না, তাই যা হবার তাই হল। সপ্তম শ্রেনীতে পড়ার সময় আবার রাহিম এই কথা তার আরেক বন্ধু থেকে জানতে পারে। তখন আমি সব খুলে বলি আর রাহিম কথা শুনে অনেক কান্না করেছিল আর বারবার বলেছিল তোমরাই আমার আসল পিতা, মাতা। কারণ তোমরা অনেক কষ্ট করে আমাকে বড় করছো আর কোনোদিন আমি আর কিছু জানতে চাইবো না আব্বু। ছেলের তখন কথা শুনে আমারও চোখে অশ্রু জমে গিয়েছিল।
এরপর অনেক বছর কেটে গেল। রাহিম ইন্টার পরীক্ষা পাশ করলো জিপিএ 5 পেয়ে। সেদিন
মনে হচ্ছিল আমি যেন দুনিয়ার সব চেয়ে সুখী মানুষ। কারণ ছেলেকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখতাম তা আস্তে আস্তে আমার সত্যি হতে যাচ্ছে। ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিলাম ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে।সেখানে নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিল রাহিম। সে পড়ালেখাতে মনোযোগী হল কারণ তাকে যে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে আর রাহিমের একটা আলেদা গুন ছিল, সে গান গায়তে পারতো, তাই মাঝে মাঝে গিটার নিয়ে যেত। একদিন ক্যাম্পাসে বসে ছিল, তখন জুনিয়ার একটা ছেলে এসে বলতে লাগলো।

--ভাইয়া একা একা বসে আছেন যে মন খারাপ।

--না ভাইয়া, আসলে আমি একা থাকতেই পছন্দ করি।

--ও আচ্ছা। তবে ভাইয়া আপনার কাঁধে গিটার দেখে মনে হচ্ছে আপনে গান গায়তে পারেন।

--একটু আরেকটু আর কি।

--যদি কিছু মনে না করেন একটা গান শুনাতে পারবেন প্লিজ।

--আচ্ছা তাহলে শুনো

তিন পাগলের হলো মেলা নৌকায় এসে
ওরে মন তিন পাগলের হলো মেলা নৌকায় এসে
ওরে নৌকায় এসে রে
তোরা কেউ যাসনি ঐ পাগলের কাছে
তোরা কেউ যাসনি ঐ পাগলের কাছে।

--অসাধারণ ভাইয়া লালন শাহ্  সংগীত তো অনেক সুন্দর গেয়েছেন দেখছি।

--ধন্যবাদ ভাইয়া মাত্র কয়েকটা লাইন শুনালাম আর কি।

--ভাইয়া জানেন আমার আম্মুও না আপনার মত গান গায়তে পারে, বেশ করে লালন শাহ্ সংগীত গান গায় বেশি আম্মু।

--ও আচ্ছা। তবে ভাইয়া আমি উঠি বাসাতে যেতে হবে।

--ভাইয়া যদি কিছু মনে না করেন, ছোট ভাইয়া একটা কথা যদি রাখতেন খুশি হতাম।

--আচ্ছা বলো রাখার চেষ্টা করবো।

---মানে আজকের লান্স যদি আমার বাসাতে গিয়ে করতেন খুশি হতাম। আপনাকে অনেক আগে থেকে দেখে আসছি এই ভার্সিটির সব চেয়ে ভালো ছাত্র জানি। কিন্তু সাহস করে কোনোদিন কথা বলতে পারিনি। আজ অনেক সাহস জুগিয়ে কথা বলছি। যদি ছোট ভাই ভেবে থাকেন ফিরিয়ে দিবেন না, প্লিজ চলেন না আজ দুপুরের লান্সটা আমাদের বাসাতে সবাই সাথে করবেন।

--কি যে বলি। তুমি যেমনভাবে বলছো না যেয়ে উপায় আছে বলো।

--শুনে খুশি হলাম, তাহলে চলেন ভাইয়া।

তারপর লান্স করতে ওদের বাসাতে চলে গেলাম। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে ছেলেটাও নামও জেনে নিলাম নিলয় আর তার আম্মু, আব্বু ও একটা ছোট বোন আছে। বাসাতে আসতেই নিলয় বিল চাপ দিল আর দরজার খুলতেই আমি সালাম দিলাম।

--আম্মু এটা হচ্ছে আমার বড় ভাইয়া। আগে ভিতরে যায় তোমাকে সব বলছি।

--আচ্ছা আগে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় খেতে খেতে কথা হবে।

--আন্টি ভালো আছেন তো?

--হ্যাঁ বাবা ভালো তুমিও নিলয়ের সাথে ওর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আস।

--ভাইয়া চলেন আমার সাথে।

তারপর আমি নিলয়ের পিছু পিছু চলে গেলাম ওর রুমে আর ফ্রেশ হয়ে আবার নিলয়ে সাথে টেবিলে  বসে গেলাম। আন্টি খাবার দিচ্ছেন আর কথা বলছেন।

--বাবা নিলয় তোমার ভাইয়ার নাম কি শুনি?

--আম্মু ভাইয়ার নাম রাহিম আর আমার সিনিয়ার তিনি আর আম্মু যান ভাইয়া না হবুহু তোমার মতো গান গায়তে পারে।

--ও আচ্ছা ভালো তো, বাবা রাহিম নেও মুরগীর কলিজার ভাজিটা নেও।

--না আন্টি থাক।

--আরে এত লজ্জা কিসের খাও বাবা তুমি আমার ছেলের মত। তবে বাবা তোমার বাম হাতে এত বড় তিল যে, এটা কি জন্ম থেকে?

--হ্যাঁ আন্টি আর আপনার চোখে পানি কেন?

--কই নাতো, খাওয়া শেষে তোমার সাথে একটু কথা আছে বাবা।

--আচ্ছা আন্টি।

তারপর খাওয়া শেষ নিলয় বসে গেল টিভি দেখতে আর আন্টি আমাকে ডেকে বললো তার রুমে আসতে। এসে দেখি আন্টি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।

--আন্টি আমি কি রুমে আসবো?

ফিরে তাকিয়ে

--হ্যাঁ বাবা আসো, পাশে সোফাতে বস।

--আন্টি আপনে কান্না করছেন কেন? খাওয়ার সময়ও দেখলাম আপনার চোখে পানি, এখন তো আরো বেশি অশ্রু দেখছি আপনার চোখে। কেন এত অশ্রু বিসের্জন দিচ্ছেন আন্টি?

--স্মৃতির পাতা বাবা স্মৃতির পাতা।

--স্মৃতির পাতা মানে আন্টি কিসের স্মৃতি?

--সে অনেক কথা যা শুধু আমি জানি আর আমার বাবা, মা ও একটা চাচী আর কেউ না। আজ তোমার ঐ হাতে তিল থেকে স্মৃতির পাতা মনে পরে গেল।

--কি মনে পরে গেল আন্টি? আমাকে বলতে পারেন আমি কাউকে বলবো না ওয়াদা করছি।

--ঠিক আছে তাহলে শুন, নিলয়ের বাবার সাথে বিয়ে হবার আগে আমার একটা ছেলে হয়েছিল। অনেক আশা ছিল ঐ ছেলের বাবাকে বিয়ে করে সংসার করবো। কিন্তু বাচ্চা যখন আমার গর্ভে আসে তখন আমার সেই প্রেমিক বিদেশে চলে যায়। মাঝে মাঝে ওর সাথে কথা হত, কিন্তু হঠাৎ ওর আর কোনো খবর পেলাম না, বিদেশে কোথায় আছে , কেমন আছে,বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে কিছু না। তারপর অনেকমাস পর বাচ্চাটা দুনিয়ার আলো  দেখতে পাই আমার গর্ভ থেকে বের হয়ে। কিন্তু আমার আব্বু আমার বাচ্চাকে নিয়ে রাস্তাতে ফেলে চলে আসেন, আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম। বাবা তুমি জানো আমার বাচ্চাটার জন্য অনেক কান্না করেছি কিন্তু কেউ এনে দেয়নি।

--আন্টি প্লিজ কান্না করবেন না। আমিও আপনার সেই বাচ্চার মতোই। আমাকে আমার আব্বু রাস্তার পাশে কুড়িয়ে পেয়েছিল।

--কি বল, কোথায় পেয়েছে? জায়গার নাম কি? আর জানো আমার বাচ্চাটাও না বাম হাতে তিল ছিল তোমার হাতের তিলের মত। প্লিজ বাবা বল কোথায়?

--তা তো আমি জানি না। দাঁড়ান আব্বুর কাছে ফোন লাগিয়ে দিচ্ছি, আব্বুর সাথে কথা বলেন। আমি আব্বুকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করবো না কথা দিয়েছিলাম।

--বাবা তাড়াতাড়ি নাম্বারটা লাগিয়ে দেও প্লিজ।

--এই নেন।

তারপর ফোন দেওয়ার পর আমার থেকে দূরে গিয়ে কথা বলতে লাগলো, কিছুক্ষণ পর এসে হাউমাউ করে আন্টি বলতে লাগলেন।

--আমার ছেলে তুই বাবা তোর মাকে একবার মা বলে ডাক। কতকাল তোর অপেক্ষায় ছিলাম, কত
রাত কান্না করেছি।

---তাহলে তুমি আমার আম্মু, আম্মু ও আম্মুগো
তোমার ছেলেকে বুকে নিবে না।

--আয় বাবা মায়ের বুকে আয়।

--আম্মু।

(সমাপ্ত)

1 āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ: