*****ভালোবাসতে রং লাগে না*****
(লেখক রাহিম মিয়া)
'
'
শিক্ষামূলক গল্প
'
'
'
>> কেন বারবার আমার পিছু পিছু ঘুরছেন? কী দেখেছেন আপনে আমার মাঝে?
>>ভালোবাসি যে তাই তো পিছু পিছু ঘুরি, আর
তোমার মাঝে যা দেখছি তা আমি বলে শেষ করতে পারবো না ইভা।
>>কিন্তু সমাজ আর আপনার পরিবারে কেউ কী আমাকে মেনে নিবে? আমি যে দেখতে অনেক কালো কেন বুঝছেন না? আপনার সাথে আমার মিল হয় না।
>>ভালোবাসতে রং লাগে না ইভা আর কতবার বলবো , লাগে কী জানো? লাগে শুধু একটা সুন্দর মন, যা তোমার মাঝে আমি দেখতে পেয়েছি। তুমি যখন হাসো মনে হয় ঝরনা থেকে পানি বদলে মুক্তা ঝরছে, আর এই হাসিই যে আমাকে পাগল বানিয়েছে।
>>বুঝতে চেষ্টা করুন আপনার সাথে আমার যায় না, আপনে দেখতে ফর্সা, লম্বা আর আমি তো দেখতে অনেক কালো। আপনে যদি ভালোবেসে যানও, আপনার পরিবার কখনো আমাকে মেনে নিবে না।
>>সেই সব আমি দেখবো, কতবার বলেছি তোমার ঠিকানা দিতে, কিন্তু দেও না। প্লিজ আজ তো বলো কোথায় থাকো? প্রতিদিন তোমার পিছু নেয় বাড়ি চিনার জন্য আর প্রতিবার আমার চোখকে ফাঁকি দিয়ে উদাও হয়ে যাও। প্লিজ ইভা আজ তো বলো ঠিকানা।
>>আপনার সাথে আমার কখনো মিল হতে পারে না, সরেন আমার পথ থেকে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে বাসাতে যেতে হবে, আর পিছুনে পিছুনে ঘুরাঘুরি বন্ধ করে দিন আমার।
হঠাৎ যাওয়ার সময় হাত ধরে ইভার
>>প্লিজ ইভা আমাকে প্লিজ ঠিকানাটা বলে যাও। আমি যেভাবে হক বাবা, মাকে বুঝিয়ে তোমাদের বাড়িতে পাঠাবো।
>>ছাড়ুন আমার হাত বলছি, আপনার সাথে আমার কখনো মিল হতে পারে না, আমি কালো দেখতে আর হয়তো কোনো কালো
ছেলে সাথেই আমার বিয়ে হবে।
>>ইভা দাঁড়াও প্লিজ।
কিন্তু না, ইভা আমার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে লাগলো, আমার দেওয়া পিছুনে ডাকও শুনছে না। আজও ইভাকে আমি বুঝাতে পারিনি, যে ভালোবাসা শরীরে রং দিয়ে হয় না, মন দিয়ে হয়। মন খারাপ করে বাড়ির দিকে চলতে শুরু করলাম, কারণ ইভার পিছু নিলে সে বুঝে ফেলবে আমি পিছু নিয়েছি। আপনারদেরকে একটু পরিচয় দিয়ে দেয় আমার। আমি রাহিম, পড়ালেখা অনেক আগে শেষ করেছি আর বাবার বিরাট ব্যবসা মাঝে মাঝে মন চাইলে একটু দেখাশুনা করি। আর যার সাথে এত কথা হচ্ছিল সে ইভা, মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু ইভা সব সময় বলবে সে কালো, তাই আমার মতো ফর্সা ছেলের সাথে তার মিল হয় না। ইভাকে যখন প্রথম দেখছি স্কুলের ছোট্ট বাচ্চাদের সাথে হেসে হেসে খেলা করছে, সেই ভুবন ভুলা হাসি দেখে ইভার প্রেম পড়ে গিয়েছিলাম, যদিও সে দেখতে কালো কিন্তু তার হাসি আর চোখ ছিল মন কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
বাড়িত এসে মন খারাপ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম কিন্তু কিছুতে মনটা ভালো হচ্ছে না, তাই বের হয়ে মাঠে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার ৩বন্ধুও বসে আছে হৃদয়, মাসুদ ও আকাশ। আমি গিয়ে পাশে বসতেই হৃদয় বলে উঠলো।
>>রাহিম দোস্ত তোর কি কিছু হয়েছে? মুখটা দেখতে এমন মন খারাপের মতো লাগছে কেন? তোর কি আজ মন খারাপ?
>> হ্যাঁ রে দোস্ত।
>>কেন?
>>আর বলিস না, তোর হবু ভাবি বলে দিয়েছে পিছু না নিতে, কারণ তার সাথে বলে আমার মিল হবে না সে বলে দিয়েছে, আর তোরা তো সবই জানিস।
>>তুই একটা কাজ কর আমার বাইকের হেলমেট নিয়ে যা। এটা মাথাতে দিয়ে রাখবি যাতে দেখতে না পাই। আমার তো মনে হয় তুই এখনো ভাবির বাড়িটা চিনতে পারিস নি। আর আমরা একটা জিনিস বুঝি না তুই ফর্সা হয়ে আর দুনিয়াতে এত ফর্সা ফর্সা মেয়ে থাকতে, তুই এমন মেয়ের পিছু পড়ে আছিস কেন?
>>তুই বুঝবি নারে হৃদয়, আর এই মেয়েটা তোর হবু ভাবি তাই মেয়ে না বলে সব সময় ভাবি বলবি ঠিক আছে। তবে আমি হেলমেট নিয়ে যাই এখন, সন্ধা প্রায় হয়ে গেলে রে।
>>আচ্ছা যা আগামীকাল কথা হবে।
বন্ধুদেরকে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি, যেভাবে হক আগামীকাল ইভার বাড়িটা চিনতে হবে আর বাবা মাকে রাজি করাতে হবে। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
প্রতিদিনের বিকালে মতো রাস্তাতে দাঁড়িয়ে আছি তবে আজ হেলমেট পড়ে। একটু পর দেখি ইভা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে বাড়ির দিকে কলেজের থেকে। আমিও পিছুনে পিছুনে চলতে লাগলাম, তবে আজ লুকিয়ে না সরাসরিভাবে। এক সময় ইভা একটা বাড়িতে ঢুকে গেল আর আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই ইভার বাসা, তাই ঠিকানাটা মুখস্থ করে চলে আসলাম। কিন্তু এইভেবে অবাক হয়েছি আজ ইভা আমাকে বুঝতে পারলো না কেন? ওহ সরি আমি তো হেলমেট পড়ে আছি তাই হয়তো বুঝতে পারেনি।
বাসাতে এসে ভাবনায় পড়ে গেলাম কী করে আম্মু আর আব্বুকে বুঝায় ? শেষমেষ বুদ্ধি না পেয়ে ছোট্ট বোনের হাতে ৫০০টাকা নোট ধরিয়ে তাকে দিয়ে আম্মুকে বলতে বলি আর যখন শুনলাম আম্মু রাজি হয়ে গেছে ইভাকে দেখার জন্য খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছিল। কারণ আম্মু রাজি মানে আব্বুও রাজি হতে সময় লাগবে না।
অনেক কষ্টের শেষের দুইজনকে রাজি করিয়ে বিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি, কিন্তু ইভার বাসার থেকে আসার পর যা শুনলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমার বিয়ে বলে কখনো ঐ কালো চামড়ার সাথে দিবে না। আমি যাতে ঐ মেয়েকে ভুলে যায় আর সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখবে আমার জন্য শুনে মাথা গরম হয়ে গেল। কিছু না বলে রাগে বাহিয়ে বের হয়ে গেলাম।
পরেরদিন বিকালে ইভার জন্য রাস্তাতে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ ইভাকে দেখতে পেলাম কাছে আসতেই।
>>ইভা তোমার সাথে কিছু কথা আছে, একটু দাঁড়াবে প্লিজ।
>>হ্যাঁ বলুন কী কথা?
>>আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
>>কী পেয়েছেন হ্যাঁ?বাসাতে বাবা, মাকে পাঠিয়ে অপমান করান, আবার আমার সাথে এইখানে মজা করছেন।
>>আমি সত্যিই তোমাকে বিয়ে করতে চাই ইভা বিশ্বাস কর।
>>কালো মেয়েদের সাথে প্রেম করা যায় কিন্তু বিয়ে না, আর আপনে এখন সরেন আমার পথ ছাড়েন।
>>বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ যেওনা ইভা।
কিন্তু না, আজও ইভা চলে গেলো। চোখের দুই ফুটা অশ্রু মাটিতে পড়ে গেল।
কয়েকদিন পরে ঘটলো নতুন ঘটনা, আমাকে ছবি দেওয়া হয়েছে কোনো এক পাত্রীর আর বলা হয়েছে পছন্দ হলে বলতে, না হলেও এই মেয়েকে আমায় বিয়ে করতে হবে। ছবিটা নিয়ে বাহিরে মাঠে চলে গেলাম। হাতে ছবি দেখা মাত্রই মাসুদ বলো উঠলো।
>>দোস্ত তোর হাতে এইটা কী রে?
>>ছবি একটা মেয়ের হারামী।
>>কই দেখি তো।
>>নে দেখ বেশি করে।
কিছুক্ষণ পর
>>দোস্ত রাহিম এই মেয়ের পিক নিয়ে ঘুরছিস কেন?
>>এই আটা, ময়দা মার্কা মেয়েটা সাথে আমার বিয়ে করাবে বলে দিয়েছে আর খুব তাড়াতাড়ি।
>>কী বলিস? তাহলে আমার কী হবে? আমি এই মেয়েকে দেখে যে ক্রাশ খেলাম রে।
>>তাহলে তুই বিয়ে কর।
>>আর তুই?
>>আমি তো ইভাকে ভালোবাসি তাই ইভাকেই বিয়ে করবো, তারজন্য তোদের তিনজন এরই সাহায্য দরকার, কী করবি তো?
>>তোর জন্য জীবনও দিতে পারি দোস্ত।(একসাথে বলে উঠলো তিনজন )
>>আরে জীবন দিতে হবে না, তোরা জীবন দিলে সাহায্য করবে কে? এখন শুন মাসুদ,তোর যখন মেয়েটা পছন্দ হয়েছে আংকেল, আন্টিকে দেখিয়ে বিয়েটা করে ফেল প্রস্তাব দিয়ে আর আমি কাজী অফিসে বিয়ে করবো ভেবে ফেলেছি, তোরা হবেই তার সাক্ষী।
>>আচ্ছা কিন্তু কখন?
>>তুই বিয়ে করবার পর ই বুঝেছিস।
---আচ্ছা বুঝলাম।
তারপর বন্ধুদেরকে বিদায় জানিয়ে বাসাতে চলে গেলাম, আর ভাবছি কীভাবে করবো এইসব?
কয়েকদিন ভিতরের মাসুদের বিয়ে হয়ে গেল ঐ মেয়ের সাথে। আর নিজের প্লেন এর মতে ইভাকে রাস্তা থেকে নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেললাম। বাসাতে আনার পর অনেক ঝামেলা লেগে গেল বাবা আমাকে বাড়িত থেকে বের হতে বলে দিলো। তাই বউ নিয়ে এখন বন্ধুর বাড়িতে। বাসর ঘরে ঢুকে দেখি ইভা কান্না করছে।
>>এই কী তুমি কান্না করছো কেন ইভা এই সুমুধুর রাতে?
>>আমার কারণে আজ আপনাকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। আপনাকে আমি বলেছিলাম আমাদের মিল মেনে নিবে না কেউ,সেই কথা শুনলেন না তো বিয়ে করেই ছাড়লেন।
>>দেখো ভালোবেসে মানুষ অনেক কিছু করেছে আর আমি তো মাত্র বাড়ি ছাড়লাম।
>>তা তো দেখতেই পারছি।
>>>বাতিটা অফ করে দেয়, অন্ধকার থাকা দরকার এই রাতে।
>>না না না বাতি অফ করবেন না।
>>হা হা হা অফ তো করেই ফেলেছি।
>>সাবধান আমার কাছে আসবেন না।
>>ঠিক আছে চলে যাচ্ছি।
>>এই কই যাও(পাঞ্জাবিতে ধরে টান দিয়ে)
>>তুমিই তো বললে কাছে না আসতে।
>>দুষ্ট, ফাজিল বুঝে না কিছু, গেলে পা ভেঙে দিবো।
>>থাক বাবা পা ভেঙে গেলে অসুবিধা হবে বরং রাতে থেকে যাই তবে অন্ধকারে কিন্তু ভূত দৌড়াদৌড়ি করে ইভা।
এই বলার সাথে সাথে বিদ্যুৎ গতিতে এসে ইভা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
কয়েকদিন পর বাবা,মা আমাদের বিয়েটা মেনে নিলো।তবে আমার বন্ধু মাসুদের থেকে এইটা শুনে অবাক হয়েছি যে, তার সুন্দরি বউ বলে এখন ওকে রান্না করা, বাসুন মাঝনি করা আরো অনেক কাজ করায়।
(সমাপ্ত)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ