____লুকানো ভালোবাসা____
___জান্নাতুল বাকিয়া তোয়া___
চার পর্ব
__না, তবে একজন আমাকে ভালোবাসতো।
__ তুমি বাসতে না?
__ না।
__ কেন?
__ ছেলেটার মা নেই তাই।
তোয়ার কথা শুনে তৌসিফ অবাক হয়ে গেলো, কাহিনী টা জানার আগ্রহটা দ্বীগুন বেড়ে গেলো।
__ ভালোবাসার সাথে মা না থাকার কি সম্পর্ক?
__ আসলে ছোট বেলাই মা কে হারানোর পর থেকেই মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার লোভে ওই ছেলেটি কে ভালোবাসা হয়ে উঠেনি।
__ ওহহ! 😱
__ হুম, তবু দেখো আমার কি ভাগ্য এক সাথে মা বাবা পেয়ে আবার হারাতে হবে।
তৌসিফ কি বলবে ভেবে না পেয়ে বললো।
__ ডিভোর্সের পর কি করবে?
__ কি আর করবো, সিয়ামকে বিয়ে করে নেবো।
তৌসিফ চোখ কপালে তুলে বললো।
__ সিয়াম টা আবার কে?
__ আমার bf.
__ what! একটু আগেই বললে যে তুমি কাউকে ভালোবাসতে না! তাহলে bf কোথায় পেলে?
__ আরে যেই ছেলেটা আমাকে ভালোবাসতো ওর নামই তো সিয়াম।
__ তুমি তো ওকে ভালোবাসতে না!
__ তাতে কি! এখন থেকে বাসবো।
__ কিন্তুু ওর তো মা নেই!
__ আমারও তো নেই।
__ না মানে, তুমি যে বললে তোমার মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার লোভ আছে, তাহলে?
__ মায়ের ভালোবাসা আমার কপালে নেই, সেটা আমি খুব ভালো করে যেনে গেছি। তাই তো আজ ভাগ্যের জোড়ে মা পেলাম ঠিকিই তবে পোড়া কপালের জোড়ে হারাতে হবে।
__ আচ্ছা ওই ছেলেটা কি এখন তোমায় আর ভালোবাসে?
__ জানিনা, তবে ও খুব ভালো ছেলে, মনে হয় এখনও বাসে। কারণ সেটা তোমাকে দেখেই বুঝতে পারছি ভালোবাসা কি।
__ মানে!
__ এই যে অরিন আপু আর তোমার ভালোবাসা টা যেমন ভাবে হয়েছে, আমাদের টাও এমনই হবে।
তোয়ার তৌসিফের মন খারাপ হয়ে গেলো। কেন এমন হলো সে নিজেও জানে না। তৌসিফ কিছু বলতে যাবে তখনই তোয়া বললো।
__ তোমার ফোনটা দাও তো।
__ এতো রাতে ফোন নিয়ে কি করবে?
__ সিয়ামের সাথে একটু কথা বলবো। দেখি ও আপনার মতো এখনও আমাকে ভালোবাসে কিনা।
তোয়ার প্রতিটা কথায় যেনো তৌসিফের কাছে আশ্চর্য মনে হচ্ছে।
__ সিয়ামের নাম্বার কোথায় পাবে এখন?
__ ওর নাম্বার আমার মুখুস্ত আছে।
__ তার মানে! আগে যোগাযোগ ছিলো ওর সাথে?
__ না তো।
__ তাহলে! নাম্বার কোথায় পেলে?
__ একবার সিয়াম রকেয়া খালার হাতে একটা চিঠি দিয়েছিলো তাতে ওর নাম্বার টাও দেওয়া ছিলো।
__ তুমি মুখুস্তো করেছিলে?
__ না, আসলে আমি একবার কোনো কিছু দেখলে আর ভুলতে পারিনা তাই ওই নাম্বার টাও মেমোরিতে সেভ হয়ে গেছে।
__ ওহহ! আচ্ছা সকালে ফোন করো।
__ না আমি আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করতে চাই না।
কি আর করা অনিচ্ছা থাকা সত্যেও ফোনটা দিতে হলো তোয়াকে। ফোনটা নিয়ে তোয়া বেলকুনিতে চলে গেলো। তৌসিফ তোয়ার থেকে এমনটা আসা করেনি। কিন্তুু কেন করেনি তারও কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। তোয়া যদি অন্য কাউকে ভালোবেসে নতুন করে ওর জীনটা শুরু করতে পারে তাহলে তো আমি কিছুটা হলেও অপরাধি ভোগানী থেকে মুক্তি পাবো। কিন্তুু কেন আমার মন মানতে চাইছে না। সিয়াম নামটা তোয়ার মুখে শোনার পর থেকেই কেমন যেন রাগ রাগ হচ্ছে। হঠাৎ তোয়ার কথায় তৌসিফ চমকে উঠলো।
__ এই নাও তোমার ফোন ।
__ কথা হলো?
__ হ্যা হলো।
__ ছেলেটা কি বললো?
__ সবটা শুনে সিয়াম বললো এখনও সে আমাকে ভালোবাসে।
কথাটা শুনে তৌসিফের মন খারাপ হয়ে গেলো। তবুও মুখে হাসি এনে বললো।
__ ও তাহলে তো আমার আর কোনো চিন্তায় থাকলো না।
__ তোমার আবার কি চিন্তা ছিলো?
__ হুম ছিলো তো অনেক চিন্তা, ডিভোর্সের পর আমার বউটার কি হবে।
__ তাই নাকি বউয়ের জন্য এতো চিন্তা করো!😱
__ করি বৈকি, সাতটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ বলে কথা, চিন্তা একাই চলে আসে!😉
__ হিহিহি তাই নাকি! আচ্ছা অনেক চিন্তা করেছো এখন আর চিন্তা করা লাগবে না, ঘুমিয়ে পড়ো।
তারপর তৌসিফ সোফায় চলে গেলো। তৌসিফ ভাবতে লাগলো কাল একবার অরিনের সাথে কথা বলতে হবে। তখনই তোয়ার কথা মনে পরে গেলো। এই দুইটা মেয়েকে তৌসিফ কিছুতেই মেলাতে পারছে না। দুজন একদম আলাদা ধাচে তৈরি। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন চোখটা লেগে এসেছে বুঝতেই পারিনি। সকালে ঘুম ভাঙ্গলো তোয়ার ডাকে।
__ এই যে মিস্টার উঠুন, সূর্য আবার ডুবতে চললো।
তৌসিফ ঘুম ঘুম চোখে তোয়া কে দেখছে। আর ভাবছে যদি আমার জীবনে অরিন না আসতো তাহলে ছি ছি কি সব ভাবছি ওতো এখন অন্য কারোকে ভালোবাসে আর আমিও অরিনকে শুধু অরিনকেই ভালোবাসি।
__ কি হলো উঠবে নাকি পানি আনবো?
__ চা খেতে কি পানি লাগে নাকি?
__ না ঘুম ভাঙ্গাতে পানি খুবই উপকারি।
__ বউ মানে এতো প্যারা আগে জানতাম না!
__ হুম এখন থেকে অভ্যাস করে নাও নইতো কপালে অনেক দুঃখ আছে। হি হি
__ কেন কেন?
__ অরিন আপুকে দেখে যা বুঝলাম তুমি তো একটা ভিতুরাম। হিহি
__ কিহহহ বললে তুমি? 😡
__ সেকি কথা কানে শোনো না, তাহলে তো আরও বিপদ।😱
__ দাড়াও দেখাচ্ছি, কে কতো শোনে।
সংকেত বুঝতে পেরে তোয়া এক দৌড়ে তৌসিফের মায়ের কাছে চলে গেলো। তৌসিফ ও যেতে যাবে তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখো অরিন ফোন করেছে। তারপর তৌসিফ সবার সাথে নাস্তা সেরে অরিনের সাথে দেখা করতে গেলো।
__ কি অবস্থা তৌসিফ?
__ এই তো ভালো।
__ মেয়েটা কি এখনও তোমাদের বাসাতে?
__ হ্যাঁ
__ হ্যাঁ মানে! মেয়েটা যাচ্ছে কবে?
__ খুব তারাতারিই চলে যাবে, তুমি আর একটু ওয়েট করো।
__ আমি আর ওয়েট করতে পারছি না।
কথা শেষ করে তৌসিফ বাসাতে চলে আসলো। এসে দেখে তোয়া মায়ের চুলে বেনি করে দিচ্ছে।
__ দেখ তৌসিফ, পাগলি মেয়েটার কাজ!
__ উফফ! মা একটু চুপচাপ বসোতো। চুলটা ঠিক করে বেণী করতে দাও তো।
তৌসিফ কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো। তৌসিফের কিছুই ভালো লাগছেনা। তৌসিফ অনেক ভেবে ঠিক করলো কাল একবার অরিনের সাথে দেখা করবে। এমন সময় তোয়া রুমে আসলো।
__ কি ব্যাপার মন খারাপ কেন?
__ কই নাতো!
__ তাহলে এমন অসময় সুয়ে আছো কেন?
__ না এমনি,,, তোমার সিয়ামের খবর কি?
__ এই রে আজ তো ফোন করতে চেয়েছিলাম,ধুর মনেই ছিলো না। তোমার ফোনটা দাওতো।
ফোনটা নিয়ে তোয়া বেলকুনিতে চলে গেলো। ধুর কেন যে ছেলেটার কথা বলতে গেলাম, আবার তৌসিফের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। রাতে তৌসিফকে তোয়া জানালো।
__ সিয়াম বলেছে সামনে সপ্তায় ও ঢাকাতে আসবে আমাকে নিতে।
__ সামনে সপ্তায়?
__ হ্যাঁ, জানি তোমার একটু অসুবিধা হচ্ছে, তবুও যদি অরিন আপুকে একটু মেনেজ করতে পারো তাহলে আমার জন্য ভালো হতো। কারন এখানে তো আমার আর কোনো থাকার জায়গা নেই তাই আর কি।
তৌসিফ কিছু না বলেই সোফায় চলে গেলো। তোয়া চলে যাবে ভেবেই বুকের মধ্যে কেমন করছে। কি করছে সেটাই বুঝতে পারছে না তৌসিফ। এই কয়েক দিনেই তোয়া এই পরিবারের সাথে মিশে গেছে। তাই হয়তো তোয়ার চলে যাওয়ার কথা শুনে বুকের মধ্যে এমনটা হচ্ছে। পরের দিন তৌসিফ অরিনকে নিয়ে একটি লেকের পাড়ে গেলো।
__ আজ হঠাৎ এখানে আসলে যে!
__ এমনি, তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো।
__ তা তো বুঝলাম, কিন্তুু এখনে বাদে কোনো রেস্টুরেন্টও তো বসা যেতো!
__ তা যেতো, তবে এই জায়গাটা আমার খুব ভালো লাগে।
__ কি চয়েজ তোমার! এইটা একটা জায়গা হলো? চারপাশে কি নোংরা।
__ নোংরা কোথায়?
__ উফফ! কি কথা বলতে এনেছো তাই বলো আগে।
__ অরিন চলো আমার দুজন পালিয়ে যায়।
__ পালিয়ে যাবো মানে?
__ দেখো অরিন তুমি তো আমার বাবাকে চেনোই, তোয়া এখান থেকে চলে গেলোও তোমার আমার বিয়ে উনি মানবেন না। তাই আমি ঠিক করেছি আমার এই শহর থেকে অনেক দুরে গিয়ে সংসার শুরু করবো।
__ মানে টা কি! কোথায় যাবো আমারা আর থাকবোই বা কোথায়? আর তুমি তো এখনও বেকার!
__ আমি ওতো কিছু জানি না, তবে এই টুকু জানি কিছু একটা ঠিক ম্যানেজ করে নিবো।
__ কি ম্যানেজ করবে শুনি!
__ দরকার পরলে রিক্সা চালাবো।
__ হাহাহা,,,সত্যি তোমার কথা শুনে না হেসে পারলাম না। এসব আবেগি কথা, আবেগে হয়তো সময় কাটে কিন্তুু জীবন চলে না।
আর একটা কথা তোমাকে ক্লেয়ার করে বলে দিচ্ছি যদি তোমার বাবাকে বুঝাতে পারো তাহলেই বিয়েটা হবে, আর নইতো অসীমের সাথেই আমার বিয়ে হয়ে যাবে।
অরিনের কথা শুনে তৌসিফ কিছুক্ষন চুপ করে কিছু বোঝার চেষ্টা করলো। তারপর তৌসিফ অরিনকে বললো।
__ তুমি কি অসীমকে ভালোবাসতে পারবে?
__ মানে! কি বলতে চাইছো তুমি?
__ বলছি তুমি বরং অসীমকেই বিয়ে করে নাও।
কথাটা বলেই তৌসিফ চলে আসলো। অরিন রাগে গজগজ করতে লাগলো। তৌসিফের কেন জানি মনটা একটু হালকা লাগছে। অরিনকে সে ভালোবাসে ঠিকই তোবে সেটা যেন অন্ধ ভালোবাসা ছিলো। ভালোবাসা তুলনাই গন্ধটাই বেশি ছিলো। এই কয়েক দিনে ভালোবাসার আসল মানেটা বুঝিয়েছে তোয়া। তৌসিফ এসব কথা ভাবছিলো আর আনমনে হাটছিলো হঠাৎ কোথা থেকে একটা গাড়ী চলে আসলো বুঝতে পারিনি। যখন তৌসিফ চোখ খুললো তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করলো হাসপাতালের বেডে।
তৌসিফ দেখলো তোয়া বেডের পাশে বসে আছে।
...চলবে...
____লুকানো ভালোবাসা____
___ জান্নাতুল বাকিয়া তোয়া___
অন্তিম পর্ব (পাঁচ)
তোয়ার চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক কান্না করেছে।
তৌসিফকে চোখ খুলতে তোয়া মা বাবাকে ডাকলো। তারা কেবিনের বাইরেই ছিলো। মা এসে তৌসিফের মাথায় হাত দিয়ে বললো।
__ এখন কেমন আছিস বাবা?
__ হ্যাঁ মা, আমি একদম ঠিক আছি।
তারপর ডাক্তার এসে তৌসিফকে দেখে বললো, চিন্তার কোনো কারণ নেই, উনি এখন অনেকটাই সুস্থ আছে। বাসায় কিছুদিন বেড রেস্টে থাকলেই একদম সুস্থ হয়ে যাবে। চাইলে আজই উনাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন। তারপর তৌসিফকে নিয়ে সবাই বাসয় আসলো। বাসায় এসে তৌসিফের মা তোয়াকে বললো।
__ তোয়া মা,,, তুই এখন কিছু খেয়ে নিয়ে একটু রেস্ট কর। কাল থেকে তো খাওয়া দাওয়া বন্ধ করেছিস, তৌসিফের কাছে এখন আমি আছি।
__ না মা,,, তুমি গিয়ে রেস্ট নাও, তুমিও তো ঘুমাওনি।
__ আমি তো এখন ঠিক আছি মা! তোমরা দুজনই গিয়ে খেয়ে রেস্ট নাও।
__ ওই তুমি একদম চুপ করে থাকবা, মা তুমি গেয়ে খেয়ে নাও আর আমি তোমার ছেলেকে ঔষধ দিয়ে খাবো।
__ তোকে রেখে আমি একা খাবো! আমি খাবার এখানে আনতেছি।
বলেই তৌসিফের মা খাবার আনতে চলে গেলো।
__ তোমরা কি শুরু করেছো, বললাম তো আমি ঠিক আছি, যাও মায়ের সাথে গিয়ে খেয়ে এসো।
__ তুমি এতো কথা বলো কেন? ডাক্তার কি বলেছে মনে নেই, বেড রেস্টে থাকতে so কোনো কথা হবে না ok।
তৌসিফকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তোয়া টাওয়াল আর পানি আনতে চলে গেলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই তোয়া পানি আর টাওয়াল নিয়ে হাজির হলো।
__ এসব কি?
অবাক হয়ে তৌসিফ জিঙ্গেস করলো।
__ সে কি কথা এক্সিডেন্টে তোমার দেখতে সম্যসা হচ্ছে! আগে বলোনি কেন?
__ কি সব উল্টা পাল্টা বকছো! চোখে সম্যসা হবে কেন!? আমি একদম ঠিকঠাকই দেখতে পারছি।
__ ও তাই, তাহলে নিশ্চয় তুমি স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছো, তাই পানি আর টাওয়াল চিনতে পারছো না।
__ কি সব আবল তাবল বলছো, এগুলা চিনবো না কেন! দেখতেই তো পারছি পানি আর টাওয়াল।
__ তাহলে জিঙ্গেস করছো কেন এসব কি!
__আল্লাহ গো কি বিটিশী বুদ্ধি দিয়েছো আমার বউটারে! আমি বলতে চাইছি এই গুলো এখানে কেন আনছো?
__ তোমাকে পানিশ করার জন্য এনেছি।
__ এখানে!
__ হুম, ডাক্তার কি বলেছে মনে নাই।
__ কিন্তুু,,,
__ একদম চুপ করে থাকো তো। এখন শর্টাটা খুলো।
__ কিহ!
__ কানে কম শুনো নাকি?
__ না মানে, কেন খুলবো?
__ আজব তো! শার্ট না খুলে পানিশ করবো কি ভাবে?
__ তুমি পানিশ করিয়ে দেবে!
__ তাহলে আর কে দেবে, এক কাজ করো অরিন আপুকে আসতে বলো উনিই করে দিয়ে যাবে।
অরিনের কথা শুনে তৌসিফের মনে পরে গেলো। আচ্ছা অরিন কি জানে আমি এক্সিডেন্ট করেছি। জানবেই বা না কেন, সবাই তো জানে, সবাই আজ দেখা করতে গিয়ে ছিলো হাসপাতালে। তাছাড়া সাদিয়া যখন জানে ওতো অরিনকে বলবেই। সাদিয়া হলো অরিনের বেস্ট ফ্রেন্ড, এক্সিডেন্টের পর সাদিয়ায় নাকি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে
__ কি ভাবছো?
__ কই কিছু না।
__ দেখি এবার শর্টা খুলো তো, সাবধানে! আস্তে আস্তে
তারপর তৌসিফের মা তৌসিফের জন্য আর তোয়ার জন্য খাবার আনলো।
__ তোয়া তুই খেয়ে নে, আমি তৌসিফকে খাওয়ে দিচ্ছি।
__ তুমি আর বাবা খেয়েছো?
__ হ্যাঁ তোর বাবা খেয়েছে,আমি তৌসিফকে খাওয়ে খাবো।
__ ঠিক আছে তোমরা ছেলেকে আগে খাইয়ে দাও তারপর আমাকে।
__ পাগলি মেয়ে, তাহলে একটু অপেক্ষা কর।
তৌসিফকে খাওয়ানোর পর মা তোয়াকে খাইয়ে দিতেই তোয়া বললো।
__ উহু আগে তুমি খাও, দাড়াও আমি খাইয়ে দিই।
এই বলে তোয়া মায়ের মুখে ভাত তুলে দিলো। মায়ের চোখে জল চলে আসলো, মা বললো
__ জানি না নিজের মেয়ে এতোটা করতো কি না, কিন্তুু তোকে পেয়ে আমাদের আর কিছুই চাওয়ার নেই রে।
তৌসিফ শুধু তোয়া আর মায়ের কান্ড দেখছে আর ভাবছে সত্যি তোয়া মধ্যে এক অদ্ভুত গুন আছে যার মাধ্যমে সে সবার মন জয় করে নিয়েছে। তারপর রাতে তৌসিফকে তোয়া খাটে ঘুমাতে বললো।
__ কিন্তুু তুমি?
__ আমি সোফাতে ঘুমাবো।
__ না তুমি এখানে ঘুমাও, আমি সোফাতে ঘুমাতে পারবো।
__ না! একটা কথা বলি, এই বিছানাটা যথেষ্ট বড় আছে। দুজনের থাকতে কোনো সমস্যা হবে না।
তারপর আর কি তোয়ার কথাটাই থাকলো।
__ তোয়া,,,,!
__ হুম বলো! (মশারি টানাতে টানাতে বললো তোয়া)
__ বলছি যে এই যে তুমি আমি এক সাথে এক ঘরে থাকি এইটা ওই সিয়াম ছেলেটা জানে তো?
তোয়া মশারি টানানো শেষ করে এসে বললো।
__ কেন, এটা যেনে ও কি করবে! আর জানলোই বা তাতে কি?
__ তাতে কি মানে! অবশ্যই মানে ও যদি সবটা যেনে তোমাকে অবিশ্বাস করে তাহলে?
__ উফ, করলে করবে, তাতে আমার কি, আর শোনো এই নিয়ে তোমার ওতো ভাবা লাগবে না।
__ ভাবনা করবো না! আমার সাতটা না পাঁচটা একটা মাত্র বউ!
__ অনেক হয়েছে এখন ঘুমাও তো।
তারপর তোয়ার কেয়ারিংয়ে তৌসিফ কয়েক দিনেই সুস্থ হয়ে উঠলো। আজ তৌসিফকে নিয়ে বাবা ডাক্তার এর কাছে গেলো। আজ তৌসিফের হাতের ব্যন্ডেজ খোলে এসেছে। মা এসে তৌসিফের হাতে হাত দিয়ে বললো।
__ এখন হাতে আর কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো?
__ না মা, এই দেখো আমি হাত অনায়াসে নারাতে পারছি।
বাবা তোয়ার মাথায় হাত দিয়ে বললো।
__ তোয়া মার জন্যই তোমার ছেলে এতো তারাতারি সুস্থ হয়ে উঠেছে। সত্যি আজ এইটা ভেবে খুব ভালো লাগছে যে আমি ঠিক এক জনকেই এই বাড়ির মেয়ে করে এনেছি।
__ তুমি একদম ঠিক বলেছো।
তোয়া কনো কথা বললো না। তৌসিফ শুধু মনে মনে বললো। তুমি ঠিকই বলেছো বাবা। তুমি সব সময় ঠিকটাই আমার জন্য করো। সেই ছোটো বেলা থেকেই, নিজে কোনো কিছু কিনলে সেটা কোনোনা কোনো দিকে খারাপ হতই। মনে একবার বন্ধুদের সাথে গিয়ে এক জোড়া জুতা কিনেছিলাম, বাড়িতে এসে তুমিই দেখিয়েছিলে দুই জুতার সাইজ আালাদা। সত্যি তুমি আজ ও আমার জন্য তোয়াকে এনেছো আমার ভালো ভেবেই। অথচ পতিবারের মতো এবারও আমি তার মুল্য বুঝিনি আর যখন বুঝলাম তখন আর কিছুই করার নাই।
__ কিরে কি ভাবছিস?
মায়ের কথাই তৌসিফের ভাবনার অবসর হলো।
__ কিছু নাতো।
__ আচ্ছা আমি খাবার রেডি করছি সবাই এসো।
এভাবে কিছু দিন কেটে গেলো। তৌসিফের মনে তোয়া অনেকটা জায়গা করে নিয়েছে সেট কথা হয়তো তোয়ার নিজেরও। তৌসিফ না পারছে তোয়াকে বলতে না পারছে সইতে। একটা চাপা কষ্টো তাকে কুরে কুরে ভেতরটা শেষ করে ফেলছে। ইচ্ছে করছে তোয়াকে গিয়ে বলি তোয়া প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা। কিন্তুু সে কথা বলার পথটাও আমি অনেক আগে হারিয়ে ফেলেছি। ওকে অনেক কষ্টো দিয়েছি তার এক মাত্র শাস্তি এটাই হবে ওর ভালোবাসার মানুষটার কাছে ওকে পৌঁছে দেওয়া। তাই তৌসিফ ঠিক করলো সে এটাই করে তার ভুলের শাস্তি ভোগ করবে। দেখতে দেখতে সেই দিনটাও এগিয়ে আসলো। আাগামি কাল তোয়া চলে যাবে। কি বলে বাড়ি থেকে বের হবে সেটা ভেবে ঠিক করলো তৌসিফ। বাকিটা পরে সব মেনেজ করে নেবে এই ভেবে রাতে খাবার সময় তৌসিফ বললো সে কাল তোয়া নিয়ে একটু ঘুরতে যাবে। বাবা শুনে বললো
__ এতো ভালো কথা, যাও মেয়েটা তো শহরের কিছুই দেখেনি ওর ভালোই লাগবে।
তৌসিফের ঘুম আসছে না শুধু এপাশ অপাশ করছে। তারপর তৌসিফ তোয়াকে ডাকলো।
__ তোয়া,,,,
__ হুম বলো
__ ঘুমাওনি এখনও!
__ তুমিও তো ঘুমাওনি।
তোয়ার উল্টো প্রশ্ন করা দেখে তৌসিফ ধরা পরে যাওয়া চোরের মতো ইস্তত করে বললো।
__ না মানে ইয়ে, ঘুমাবো।
__ মিথ্যা বলতে পারেো না তো বলার চেষ্টা করো কেন?
__ কি মিথ্যা বললাম?
__ কিছু না।
__ আচ্ছা তুমি আমার জন্য এতো কিছু করলে কেন?
__ বা রে আমার সাতটা না পাঁচটা একটা মাত্র বর বলে কথা আমি ছাড়া আর কে করবে।হিহি
__ তোয়া,, তুমি বাড়ির সবাই কে মিস করবানা?
__ হুম, খুব মিস করবো মায়ের হাতে খাওয়া, বাবার সাথে দাবা খেলা।
__ আর?
__ আর তোমাদের ছাদের ওই শিউলি ফুল গাছটা।
__ আর?
__ আবার কি মিস করবো, ও হ্যাঁ আর তোমার ফোনটা মিস করবো।
তৌসিফ অবাক হয়ে বললো
__ আমার ফোনটা মিস করবা কেন?
__ বা রে ওই ফোনটা দিয়েই তো সিয়ামের সাথে প্রেম করলাম তাই।
__ ও তাই বলো! সিয়াম কাল কোথায় থাকবে কিছু কি বলেছে?
__ ও এখানে আসতে পারবে না, বলেছে এখান থেকে একাই চলে যেতে ও স্টেশনে অপেক্ষা করবে।
__ তুমি একা যেতে পারবে?
__ কখনো একা কোথাও যাইনি তবে ঠিক চলে যেতে পারবো।
পরের দিন তোয়া চলে যাওয়ার আগে বাবা মার থেকে বিদায় নিলো। বাবার কাছে গিয়ে বললো
__ বাবা তুমি ঠিক মতো ঔষধ খাবে আর মায়ের কথা শুনে চলবে। (ছলছল চোখে কথাটা বললো তোয়া)
__ কেন তোদের কি বাসায় ফিরতে দেরি হবে।
__ হুম
তারপর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো মা তোমাকে খুব খুব খুব মিস করবো।
__ পাগলি মেয়ের কথা শোনো, যাচ্ছে বেরাতে এমন কথা বলছে যেন লন্ডনে বেরাতে যাচ্ছে, তোরা তারাতারি বাসায় ফিরে আসিস।
তারপর তোয়া আর তৌসিফ গাড়িতে উঠলো। গাড়ি চলতে লাগলো কারো মুখে কোনো কথা নেই, চুপচাপ বসে আছে। তৌসিফের খুব খারাপ লাগছে, তাই মনটা আরাল করার জন্য একটা গান প্লে করলো।
রঙিন স্বপ্ন বাতায়নে,,,,
মনে দেয় দোলা,,,,,
মনের আকাশ খুজে ফেরে
তোমারই ছোয়া!!!
স্বপ্ন সুখে ইচ্ছে ঘুড়ি,
খুজেছে নতুন আশা।
হৃদয় মাঝে গুমড়ে কাঁদে,
💖 লুকানো ভালোবাসা💖
লুকানো ভালোবাসা,,🎵🎵🎵 (ঐ)
গানটা চলছে আর তৌসিফ মনে মনে ভাবছে গানে যেন তারই হৃদয়ের কথা পাঠ করছে।
তারপর তৌসিফ লেকের পাড়ে গাড়ি থামিয়ে তোয়াকে নামতে বললো। তোয়া অবাক জানতে চাইলো এখানে কেন আনলো, তাদের তো স্টেশনে যাওয়ার কথা।
__ এখানেই স্টেশন
__ মানে রাস্তার ওই পাশে
__ ও
তারপর দুজনে একটা জায়গাই বসলো। দুজনে চুপচাপ বসে রইলো। তোয়ায় নিরবতা ভেঙ্গে বললো।
__ আমি তো চলেই যাচ্ছি, বাসায় গিয়ে বাবা মাকে কি বলবে?
__ কি আর বলবো, বলবো বাবা আমার বউ হারিয়ে ফেলেছি এখন বউ খুজে এনে দাও 😭
__ হিহি তো বিয়েটা করছো কবে?
__ যে দিন তোমার মতো কাউকে খুজে পাবো সেই দিন।
__ মানে! মজা করো না তো, অরিন আপুকে বলেছো আজ আমি চলে যাচ্ছি।
তৌসিফ একটু হেসে বললো।
__ অরিনের বিয়ে হয়ে গেছে, সাদিয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো ওই বললো। আমার এক্সিডেন্টের দুদিন পর অরিনের অসীমের সাথে বয়ে হয়ে গেছে।
তোয়া কথাটা শুনে যেন আকাশ থেকে পরলো।
__ কিন্তুু অরিন আপু তো তোমাকে ভালোবাসে?
তৌসিফ হেসে বললো।
__ ভালোবাসার মানেটা সবার কাছে এক না। তাই তো আচ্ছে ও সব বাদ দাও।
তারপর দুজনে স্টেশনে চুপচাপ বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
__ তৌসিফ ভালো থেকো, আর প্লিজ বাবা মাকে কষ্টো দিওনা, উনাদের কথা শুনে চলো।
__ হুম
তৌসিফ মাথা নিচু করে কথাটা বললো। তোয়ার চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা কারন তাকালেই আর চোখের পানি তার কথা শুনবে না।
__ তৌসিফ তুমি কিছু বলবে না আমাকে।
তোয়ার কথা শুনে তৌসিফের বুকের মধ্যে দপ করে সাহস যেগে উঠলো তারপর আবার কি যেন ভেবে নিমেষেয় সাহসটা হারিয়ে গেলো। শুধু এইটুকু বললো।
__ তোয়া তুমি খুব ভালো থেকো।
__ হুম
__ আচ্ছা
__ হুম
__ ok
__হুম
এভাবে তৌসিফ কথা বলছে আর তোয়া হুম হুম করেই যাচ্ছে। কখন যে তোয়ার ট্রেনটা চলে গেছে সে দিকে তাদের কোনো খেয়ালি নেই। যখন ক্ষনে খেয়াল হলো ততক্ষনে ট্রেনটা অনেক দুরে চলে গেছে।
__ তোয়া তোমার ট্রেন!
__ চলে গেছে।
তোয়া স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো।
__ তাহলে তুমি যাবে কি ভাবে?
__ যাবো না, ভেবে দেখলাম যার জন্য চলে যাবো, সেই তো আমারই আছে। আর যে আমাকে এতো ভালোবাসে সেই মানুষকে ছেড়ে আমি কোথায় যাবো!
__ মানে!
__ তুমি যে আমাকে ভালোবাসো সেটা আমি আগেই বুঝতে পেরেছি শুধু তোমার থেকে শুনতে চেয়ে ছিলাম, কিন্তুু তুমি যে বোকারাম তোমার দ্বারা তা আর হলো না। এখনও বলতে পারলে না।
__ কে বললো আমি তোমাকে ভালোবাসি?
__ তাহলে এতক্ষণ কথা বলতে পারছিলে না কেন! আর পানি লুকাচ্ছিলে কেন হু?
আর কিছু লুকাতে পারলো না তৌসিফ । তাই সত্যিটাই বলে দিলো তৌসিফ তার মনের কথা।
__ কিন্তুু তুমি তো সিয়ামকে ভালোবাসো।
__ সিয়াম কে?
__ তোমার bf !
__ হিহিহি
__ হাসছো কেন?
__ তুমি কি সবাই কে অরিনের মতো ভাবো?
__ মানে?
__ সিয়াম বলে আমার লাইফে কেউ নাই আর হবেও না, বিয়ের রাতে তোমার কথা শুনে অে কষ্টো হয়েছিলো। পরে ভাবলাম তোমাদের মাঝে না থাকাই ভালো, তোমার থেকে অরিনের কাহিনী শুনে আমিও ওই রকম একটা কাহিনী তৈরি করে তোমাকে বলেছিলাম। যাতে তুমি নিজেকে অপরাধী না ভাবো।
__ সবই তো বুঝলাম, তাহলে তুমি কথা বলতে কার সাথে, আর এখন যেতেই বা কোথায়?
__ রোকেয়া খালার সাথে কথা বলতাম, আর এখন উনার বাসাতেই যেতাম।
__ তাহলে এখন কোথায় যাবে?
__ কোথায় আবার! আমার সাতটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বর আছে! এখন তার সাথেই যাবো। 😜😍
__ ভালোবাসো আমায়?
__ না তো, বিয়ের আগে থেকেই একজনকে বাসতাম আর সারা জীবন তাকেই বাসবো!
__ কে সেই অপদার্থ? যাকে কিনা আমার বউ ভালোবাসে!
__ আমার সাতটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বরকে! হিহি 😍😍
__ সবটা জানার পরে,এতো ভালোবাসো আগে বলোনি কেন?
__ স্টুপিট কোথাকার! সেই ভালোবাসা তুমি বোঝোনি কেন? 😏
__ সরি এক মাত্র বউ, এই অপদার্থটাকে এই বারের মতো ক্ষমা করে দাও, কথা দিলাম এর পর পৃথিবীর সেরা পদার্থ স্বামিদের মধ্যে একজন হয়ে উঠবো।🙉
__ হিহি হয়েছে পদার্থ হওয়া এখন তারাতারি বাসায় চলো, মা বাবা অপেক্ষা করছে।
__ মাকে আমি ফোন করে এখনই বলে দিচ্ছি যে আমাদের ফিরতে একটু লেট হবে।
__ কেন?
__ আজ এক মাত্র বউকে নিয়ে রাতের ঢাকা শহর ঘুরবো। 😜😍😍
চলে আমার গাড়ি হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া,,
ঢাকা শহর দেখমু আজ বউকে নিয়া ঘুইড়া ঘুইড়া,,,,🎵🎵🎵
এভাবেই চলতে থাকুক তোয়া তৌসিফের ভালোবাসার গাড়ির চাকা।
__________সমাপ্ত__________
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ