***সমাজ নীতি***(লেখক রাহিম মিয়া)
১,
--বাবা আমার মেয়েটাকে বিয়ে দিবো কিছু দিয়ে সাহায্য করো।
--যান তো চাচি মাফ করেন।
--৫টা টাকা দিলে বাবা তুমি গরিব হবে না, বরং গরিবকে আজ সাহায্য করেছ বলে আল্লাহ্ কিন্তু তোমাকে ধনী বানিয়ে দিতে পারে।
--আরে সরেন তো এইখান থেকে, কোথায় থেকে
যে ফকিরের বাচ্চা আসে আল্লাহ্ জানে। আবার মুখে বড় বড় কথা আল্লাহ্ ধনী বানিয়ে দিবে। কর্ম না করলে আল্লাহ্ ধনী বানাবে বা কীভাবে? যান ভাগেন।
--বাবা ৫টা টাকা তো দেও চলে যাবো।
--দূর হন এইখান থেকে। ভালো কথাতে বললে যান না যখন, তাই ধাক্কা দিতে বাধ্য হলাম।আমার
আবার স্যারের চলে আসার সময় হয়ে গেল।
-ওহ্, হে আল্লাহ্ তুমি আমাকে ধৈর্য দান করো।
পিপ পিপ পিপ
--এই তো স্যারের গাড়ি চলে এসেছে। ঐ চাচি মাটি থেকে সরে সাইটে যান। গেট খুলে যেন না দেখি।
--রফিক কী হয়েছে এইখানে? মহিলা মাটিতে পরে রয়েছে কেন?
--স্যার আপনে আবার গাড়ি থেকে নামতে গেলেন কেন কষ্ট করে।আমিই তো মহিলাকে সরিয়ে দিবো।
--বাবা রে এসেছিলাম তোমার দাড়ুয়ান থেকে একটু সাহায্য আশায়, মেয়েটাকে যৌতুকের টাকার জন্য বিয়ে দিতে পারছি না বলে। আর তোমার দাড়ুয়ান টাকা কিছু তো দিলো না, বরং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো রে বাবা। আজ গরিব বলে চোখের পানি ফেলতে হচ্ছে।
--এইসব আমি কি শুনছি রফিক সত্য? কাজটা কিন্তু তুমি ঠিক করোনি উনাকে ধাক্কা দিয়ে। আন্টি প্লিজ কান্না করবেন না। আপনে আমার মায়ের মতো প্লিজ আন্টি আর চোখের পানি এইভাবে মাটিতে ফেলবেন না। আর রফিক তোমার মতো
মানুষ আমার দরকার নেই। তুমি তোমার ব্যাগ ঘুচ্ছিয়ে চলে যেতে পার।
--প্লিজ স্যার মাফ করে দেন, আর জীবনেও কাউকে বিনা দোষে ধাক্কা দিবো না।
--না, তোমার মতো মানুষকে ক্ষমা করা যায় না।
--স্যার আপনার পায়ে ধরি, আমার বউ বাচ্চা আছে। চাকরি চলে গেলে আমি তাদেরকে নিয়ে চলবো কীভাবে? আর এই শহরে চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন।
--সেটা আমার দেখার বিষয় না। তোমার মতো এইরকম মানুষকে ক্ষমা করা যায় না ব্যাস।
--বাবা ওকে মাফ করে দেও। ছোট মানুষ তাই ভুল
করে ফেলেছে।
--দেখেছ তুমি রফিক। উনি গরিব হতে পারে, কিন্তু মনে অনেক বড়। যাকে তুমি কষ্ট দিলে সে তোমার জন্য অনুরোধ করছে তোমাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য।শিখ কিছু শিখ ওদের থেকে।
--চাচি গো আপনে আমাকে মাফ করে দেন।
--আচ্ছা বাজান মাফ করে দিলাম,আর বাবারা আমি যাই এখন, অনেক টাকা যোগার করতে হবে যে।
--আন্টি দাঁড়ান আমার কিছু কথা ছিল আপনার সাথে।
--বলো বাবা কি কথা?
--যদি কিছু মনে না করেন আমি কি আপনার মেয়ের সমস্ত বিয়ের খরচ বহন করতে পারি? মানে আমি চাই আমি আপনার মেয়ের বিয়েটা করিয়ে দিবো, যত টাকা লাগবে আমি দিবো।
--বাবা রে।
--আবার কান্না করবেন নাতো আন্টি? আমি আপনার ছেলের মতো আর আপনার মেয়ে মানে আমার বোন। ভাই তো বোনের জন্য করতে পারে তাই না।
--হ্যাঁ রে বাবা তোমার মতো কিছু মানুষের জন্য আজও পৃথিবীতে আমরা গরীবরা বেঁচে আছি। আল্লাহ্ তোমাকে সুখে রাখুক সব সময়।
--চলেন আন্টি ভিতরে চলেন। বাড়িতে বসে বসে কথা হবে।
--আচ্ছা বাবা।
২,
--বুঝেছেন বিয়াই সাহেব মেয়ে আমার একবারে খাঁটি সোনা।এইবার অর্নাসে মেডেল পেয়ে পাশ করেছে। কি আর বলবো বুঝতাছেন তো সব আপনে।
--তা তো বুঝলাম বিয়াই সাহেব। আমার ছেলেও কিন্তু কম না, একবারে বিদেশ থেকে পড়ালেখা করে এখন দেশে নামকরা ইঞ্জিনিয়ার জানেনই তো সব। কিন্তু
--সেইসব আপনাকে ভাবতে হবে না, আমি বুঝতে পেরেছি।আমার এই মেয়েটার আগে তিনটা মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। তাঁর মাঝে দুইজনের জামাইয়ের পরিবার থেকে কিছু চাইনি, তারপরও আমি দিয়ে দিয়েছি অনেক কিছু মেয়ে বলে কথা। আর আপনাকে তো দিতেই হবে। এত ভালো একটা সম্মন্ধ হাত ছাড়া করি বা কীভাবে বলেন?বিয়ের পর আপনার বাসাতে ৫টা ফার্নিচার চলে যাবে আমার বাকি মেয়েদের শ্বশুড় বাড়ির মতো।
--আসেন বিয়াই সাহেব মিষ্টি মুখ করি।
৩,
--তোকে বিয়ে করে বেশিকিছু পেলাম না। কিন্তু আর না এইবার তোকে বাড়িতে তোর মার কাছে যেতেই হবে। গিয়ে বলবি আমি ব্যবসা করবো তাই ৫০হাজার টাকা লাগবে দিতে বুঝতে পেরেছিস।
--না আমি যাবো না।
--যাবি না কেন?
--আমার বাবা নেই, মা এত টাকা দিবে কীভাবে বলো। আর আমার ছোট বোন আছে একজন বিয়ের বাকি।
--বিয়ের মাঝে যে এত খরচ আর যৌতুক ১লক্ষ টাকার জিনিস সেইসব কীভাবে করলো তাহলে বল?
--ঐসব তো এক ধনী সাহেব করে দিয়েছে আম্মার কষ্ট দেখে।
--তাহলে ঐ ধনী কাছেই এখন যাবি।
--না আমি যাবো না।
--তুই যাবি, তোর বাপ যাবো, তোর চৌদ্দঘষ্টি যাবো।
--ওমাগো আমাকে মারছো কেন? আমার চুল ছেড়ে দেও খুব লাগছে।
--তোকে আজ ততক্ষণ পর্যন্ত মারবো, যতক্ষণ তুই যাবো না বলবি।
--আমি যাবো না।
--ঠাস, ঠাস,ঠাস যাবি না। আমার পাশের দক্ষিণ দিকে বাড়ি শফিক মিয়ার ছেলে কত কি পেল। তাঁর শ্বশুড় থেকে ৪টা ফার্নিচার ৪লক্ষ টাকার জিনিস। আর তোর মা শুধু এক লক্ষ টাকার জিনিস দিল। আজ তোকে যেতেই হবে ঠাস, ঠাস, ঠাস।
৪,
--কার সাথে ফোনে কথা বলছো তুমি রাকিব এত হেসে হেসে?
--কই নাতো। আমার এক বন্ধু ছিল তাই একটু আর কি।
--ইদানীং আমি খেয়াল করছি তুমি কিছুটা বদলে যাচ্ছো দিনে দিনে।
--কী বলতে চাচ্ছো তুমি রিমা?
--তোমার কি বিয়ের আগে কারোর সাথে সম্পর্ক ছিল কিংবা এখন কি কারোর সাথে আছে নি?
--হ্যাঁ আছে। কি করবে?
--তুমি কিন্তু আমাকে ঠকাচ্ছো। আমার বাবা যে কেন তোমার সাথে বিয়ে দিল? ঐ মেয়েকে তোমাকে ছেড়ে দিতে হবে, না হলে কিন্তু।
--না হলে কি? চলে যাবে চলে যাও। আর তোমাকে
কিন্তু আমি ইচ্ছে করে বিয়ে করিনি। তোমার বাবা এত কিছু দিবে বলে তাই করেছি। আর মুসলিদের অনেকটি বিয়ে করা ফরজ, তাই ভাবলাম বাবা, মার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে না হয়, নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবো।
--আমি তোমার মতো লুচু ও লোভীর সাথে থাকবো না আর।
৫,
--রাহিম বাজান রে।
--আন্টি হঠাৎ আপনে যে, বসেন বসেন সকালের নাস্তাটা একসাথে না হয় করবো।
--না বাজান রাহিম বসবো না, শুধু দুইটা কথা বলতে এসেছিলাম।
--এই কি আন্টি আপনে কান্না করছেন কেন?
--কই নাতো।কি জানে চোখে পড়েছে।
--আন্টি কী হয়েছে খুলে বলেন তো?
--বাজান রে কি আর বলবো,আমার মেয়েকে তাঁর জামাই অনেক মারধোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে টাকা নেবার জন্য। আমি এত টাকা ৫০ হাজার বাজান কোথায় থেকে দিবো বলো?
বাজান রে গ্রামের বাড়িটা স্বামীর শেষ স্মৃতি এইবার মনে হয় বিক্রি করে দিতে হবে, যদি তুমি কিনতে।
--আন্টি চোখের পানি মুছেন তো। আর বাড়ি বিক্রি করতে হবে না, আমি টাকা দিবো।কিন্তু এত টাকা দিয়ে কি করবে?
--ব্যবসা করবে বলেছে জামাই।
--ও আচ্ছা। তবে আমি এইবার টাকা নিজে দিয়ে আসবো আর কিছু কথা বলে আসবো আপনার জামাইকে। স্বামীর শেষ স্মৃতি কখনো বিক্রি করতে নেই আন্টি, বসেন নাস্তা করবেন আমার সাথে।
৬,
--এই নেও তোমার টাকা আর কিছু কথা তোমাকে বলার আছে মন দিয়ে শুনো। জীবন কিন্তু মানুষের একটাই আর তুমি যেসব করছো, হতে পারে তোমার সাথে কিংবা তোমার রক্তের কারো সাথে এইরকম ঘটতে পারে। এই যে তুমি হাবিবাকে মারধোর করলে, ইচ্ছে করলে আমি তোমাকে হাবিবাকে দিয়ে নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে জেল খাটাতে পারতাম। কিন্তু এতে লাভ নেই, বরং একটা পরিবার নষ্ট হবে। আর সেই একজন মানুষ হিসাবে আমি করি বা কীভাবে এই কাজ বলো?
তাই বলছি সময় থাকতে নিজেকে বদলে ফেল। না হলে একদিন তোমার এই কর্মের ফল তোমাকে অনেক কষ্ট দিবে। ভালো থাকবে আল্লাহ্ হাফেজ।
(সমাপ্ত)
পরিশেষে এইরকম কিছু মানুষের জন্য সমাজের আজ এই অবস্থা। যারা নিজভাবে যৌতুক দেয় আর বলে বেড়ায় উপহার হিসাবে। কারণ একজনের দেখাদেখি আরেকজন মানুষ চায় এটাই স্বাভাবিক। তাই যৌতুক দেওয়া এবং নেওয়ার থেকে বিরতি থাকা বুদ্ধিমানের কাজ আর ভালো কাজ বলে মনে করি।
বি:দ্র:বানানে প্রচুর ভুল থাকতে পারে, বানানে ভুল দেখলে দয়া করে ধরিয়ে দিবেন। আর রিয়েল লাইফ নিয়ে এত ব্যস্ততা যে ভালো করে ফেসবুকে আসার সময়ই হয় না। সবার কাছে দুঃখিত গল্প নিয়মিত দিতে পারবো না বলে। তবে চেষ্টা করবো মাসে কমপক্ষে একটা গল্প দেওয়ার জন্য। এই গল্পটা ফেব্রুয়ারি মাসে লিখেছিলাম ১০তারিখের আগে হয়তো খাতাতে, কিন্তু ফোনে লেখার সময় পাচ্ছিলাম না যে পোষ্ট দিবো। ৩দিন লাগিয়ে একটু একটু লিখে শেষ করলাম আর যখনি লিখতে যায় এখন শুধু ঘুম আসা কেন জানে? যা আজও আসছে। কাজের ব্যস্ততা জন্য ভালো থিমও আসে না মাথাতে। তবে চেষ্টায় আছি সমাজের আরো নতুন নতুন অবস্থা নিয়ে লেখার। অনেক কথা হয়ে গেল এইবার ঘুমাতে হবে। তবে দয়া করে ভুল বানান ধরিয়ে দিবেন খুশি হবো।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ