_____বাজির_শ্বাসুড়ী_____
___জান্নাতুল বাকিয়া তোয়া___
বল খুজি তোকে আর কিসে,,,,
তুই জলে বাতাসে মিশে,,,,
জানেমন তুই জীবন,
জানেমন তুই জীবন🎵🎵
রিংটনের শব্দে সকাল সকাল মেজাজ টাই মরুভুমি হয়ে গেলো। একমন খরা নিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একটি পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।
__গুড মর্নিং,,,,, বউ মা
__ব্যাড মর্নিং,,,, বরের মা
__ব্যাড কেনো বউ মা? আমার ছেলেটা কি আবার কোনো দুষ্টুমি করেছে?
__ওই শোন তোকে আর তোর ছেলেকে এখন পেলে না দুজনারই ব্যান্ড বাজিয়ে গুষ্টির ষষ্টি পূজা করতাম।
__আর আমি বুঝি বসে বসে হাওয়ায় মিঠাই খেতাম!
__ধুর,সক্কাল সক্কাল তোর এই ডায়লোক শোনানোর জন্য আমার কাচা ঘুমটা নষ্ট করে দিলিতো😡 তোকে আমি পরে দেখে নেবো!
বলেই ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলাম। সকালে সব থেকে বাজে ও বিরক্তকর মুহূর্তটা তো তখনই হয়, যখন ফোনের ঘ্যানর ঘ্যানে বড় আদরের ঘুমটার দফারফা হয়ে যায়। এই জন্যই ঘুমানোর আগে ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রাখি। যাতে আমার নবেল পাওয়া বিখ্যাত ঘুমটার কেউ বারোটা বাজাতে না পারে। কিন্তুু আজ কেমনে যে এই মহান কাজটা করতে ভুলে গেলাম। একরাস রাগ মাথায় নিয়ে সেটাই ভাবতেছি। ও হ্যাঁ মনে পরেছে কালতো ২৫ শে ডিসেম্বর। আরে এই জন্যই তো মেয়েটা ফোন দিয়েছিলো। ধুর শুধু শুধু ওকে রাগ দেখালাম। না আর দেরি করা যাবেনা দেখি একটু পামটাম দিয়ে রাগ কমানো যায় কি না। রেডি হতে হতে আসুন আপনাদের কাছে পরিচয়ের পর্বটা সেরে ফেলি। আমি তোয়া, ইন্টার ২ ইয়ারের ছাত্রী। আর এতোক্ষন যার সাথে সংঘর্ষ হলো সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ক্লাস ফ্রেন্ড সুপ্তিকা রহমান সুপ্তি। সুপ্তি আমার সম্পর্কে আন্টি হয়। আমার বাসার দুই বাসা পরেই ওদের বাসা। এই দেখেন আপনাদের সাথে বকবক করতে গিয়ে আমার দেরি হয়ে গেলো। একটু তো মনে করাই দিতে পারেন নাকি হিহিহি। থাক এখন আর মনে করানো লাগবে না, আপনারা গল্প পড়তে থাকেন আর আমি গল্প করতে থাকি হিহিহি। আজ কলেজে একাই যেতে হবে। সকালে উঠেই যে সুনামিটা হলো এরপর সুপ্তির সাথে কলেজে যাওয়ার কোনো আলামতই দেখা যাচ্ছে না।তারপর কলেজে গিয়ে দেখি সুপ্তি, মেঘলা,মাইসা সবাই ক্যাম্পাসে বসে আছে। আমি গিয়ে সুপ্তি সামনে ব্যাগটা ধপাস করে ফেলে দিয়ে সুপ্তি সামনে বসে পরলাম।
__সরি শ্বাসুড়ী🙉
__......(চুপ)
এই রে কোনো রেসপন্সই তো দেয় না। একটু নেকা নেকা কন্না করে ওর মন জয় করে ফেললাম।
আসল ঘটনা হলো কাল ২৫ শে ডিসেম্বর দেব এর জন্মদিন। আপনারা নিশ্চয় ভাবছেন এই দেবটা আবার কে। দাড়ান বিষয়টা আপনাদের কাছে ক্লিয়ার করছি। টলিউড সুপার স্টার নায়ক দেব আছে না। ওর কথায় আপনাদের বলতেছি। ক্লাসের সকল মেয়ে দের ক্রাস হলো দেব । আমারা সবাই এই হিরোর অনেক বড় ফেন। আর এই হিরোকে নিয়েই যতো রকম ট্রিট বাজি আমাদের মধ্যে প্রযোয্য হিহিহি😁 আর একটা মজার বিষয় হলো সুপ্তিকার আর একটা নিক নাম আছে। সেই নাম আর এই হিরোর মায়ের নাম এক। তাই তো আমি সুপ্তিকে শ্বাসুড়ী বলি, আর ও আমাকে বউ মা বলে।😁
এভাবেই মজা আর দুষ্টুমিতে দিনগুলো অনেক ভালোই কাটছিলো। তারপর হঠাৎ করে একদিন সুপ্তিকার বিয়ে হয়ে গেলো। আর সেই সাথে আমার লাইফটাও কেমন পানি শুন্য ঢেউ এর মতো হয়ে গেলো। ও আর exm দিতে পারলো না। মাঝে মাঝে সুপ্তিকা আমাদের এখানে আস। এভাবেই আরও কিছুদিন কেটে গেলো। দেখতে দেখতে HSC exm এর রেজাল্ট হয়ে গেলো। পড়ার সুবাদে বাইরের একটি শহরে চলে যেতে হলো। এভাবেই কেটে গেলো একটি বছর। অর্নাস ফাস্ট ইয়ারের এনুয়াল দিয়ে ছুটি কাটাতে বাসায় গেলাম। বাসায় গিয়েই আম্মুর থেকে খুশির খবরটা পেলাম। সুপ্তিকার নাকি ছেলে বেবি হবে, ডাক্তার আঙ্কেল বলেছে।
__আম্মু সুপ্তি এখন কোথায় আছে?
__সুপ্তি এখন ওর মায়ের এখানেই আছে।
ভাবলাম সকালে গিয়ে ওকে সারপ্রাইজ দেবো, তাই আর ওকে ফোন করলাম না। রাতে ঘুমাতে গিয়ে পুরনো কথা মনে পরে গেলো। তারপর কখন যেন ঘুমের সাগরে ডুবে গেলাম বুঝতেই পারিনি।
পরেরদিন সকালে সুপ্তিকাদের বাসায় গেলাম। আমাকে দেখে সুপ্তিকা ওর মাকে ডেকে বললো।
__আম্মু দেখ কে এসেছে, তোমার নাত বউ।
আমি একটু হেসে দিয়ে বললাম
__বরের মা তুমি কেমন আছো?
__ভালো আছি বউ মা, তুমি কেমন আছো?
__হুম ভালো, আমার বরটা কেমন আছে? শুনলাম এই মাসেই বাসায় আসবে?
__হুম,,, এবার থেকে আমার এই ছেলেকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবি, আগেরটা বাদ😛
__হুম বল্লেই হলো,আমার ঠেকা পরছে যে তোর এই ছেলের বউ হতে যাবো😏
__ঠেকাই তো পরছে! এটা কি মাস বলতো?
__ডিসেম্বর! কেন?
__হুম ডাক্তার বলছে এই মাসেই তোর বর পৃথীবিতে আসবে। so এই মাস থেকে এই ছেলেকে নিয়ে ভাববি।
__ইসসস, এক মাসে হবে কিন্তুু দিনে তো নয়। এক দিনে হলে না হয় একটা কথা ছিলো😏
__তাতে কি মাস তো এক হচ্ছে!
__না না মাস মানবো না।
তর্কে তর্কে সেই আদিম গেমটা শুরু হয়ে গেলো। অভ্যাসের বসে বলেই ফেললো।
__যদি দিনটা এক হয় তাহলে?
__তাহলে আর কি, তুই যা বলবি তাই।
আমিও অভ্যাসের বসে কথাটা বলে ফেললাম। তারপর সুপ্তিকা একটু ভেবে বললো।
__ok বাজি তাহলে!
__ok done,,,, বাজি
__যদি বেবি ২৫ শে ডিসেম্বর হয় তাহলে ওর ১ম জন্মদিনের সব আয়োজন তুই করবি।
__আর যদি না হয় তাহলে এবারের দেব এর জন্মদিনের সব খরচ তোর ok?
__ok
আমাদের এই বাজির কথা ব্যাকটেরিয়ার মতো আমাদের কাছের মানুষ গুলো কনে পৌছে গেলো। এখন আর লাইফবয়েও কাজ হবে না।😀
আর মাত্র ১দিন কালই ২৫ শে ডিসেম্বর, আজ আরও একবার বাজি নিয়ে আলোচনা করলাম সুপ্তিকার সাথে। ঠিক হলো বাজির শর্তনুযায়ি সবটা কাল পেয়ে যাবো। রাতে বাজির কথা ভাবতে গিয়ে সুপ্তিকার ছেলে মানুষি কথা মনে পরে খুব হাসি পাচ্ছে। এইটা নিয়ে কেউ বাজি ধরতে পারে হিহিহি। তারপর কখন যেনো চোখটা বুজে গেলো বুঝতে পারিনি। সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।
__তোয়া তারাতারি ওঠ তো
__উহু,,,,আর একটু পর উঠছি।
__পরে না এখনই ওঠ,,,, সুপ্তিকা অসুস্থ
সুপ্তিকার কথা শুনে নিমেশেই চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেলো।
__কিহহ😵! কি হয়েছে ওর?
__একটু আগে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
তারপর আমি আর আম্মু হাসপাতালে গিয়ে দেখি, আমার কিউটি শ্বাসুড়ীর একটি পিউটি বেবি হয়েছে😜 আসলেই বেবিটা অনেক কিউট। তারপর সুপ্তিকা যখন সুস্থ হয়ে বাসায় গেলো তখন সবাই সেই বাজির কথা উস্কে দিলো।
প্রথমে আমার আম্মুই শুরু করলো।
__সুপ্তিকা তুই তো বাজিতে জিতে আমার বেয়ান হয়ে গেলি😀
__হুম আপু! এবার তোমার মেয়ে আমার বউ মা হয়ে গেলো।😁
আমি চুপ করে ভাগ্যের পরিহাস বুঝার চেষ্টা করছি। আচ্ছা আপনারাই বলুন তো,এই টা কোন কথা হইলো। বেবিটা ওই তারিখেই হতে হলো। একদিন আগে বা পরেও তো হতে পারতো। কি থেকে যে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। ডিজিটাল যুগে আর কিছুতেই ভরসা নেই😀 আপনারা দেখলেন ভাগ্য আমার সাথে কতো বড় বেইমানটা করলো হিহি😜।
__কি রে ওখানে দাড়িয়ে কি ভাবছিস?
সুপ্তিকার কথায় ভাবনার জগত থেকে অবসর গ্রহন করলাম।
__তেমন কিছু না। বরের নাম কি রাখবো সেটাই ভাবছিলাম।
__তাই! তো কি নাম ঠিক করলি?
__হুম ঠিক করে ফেলেছি, তৌসিফ আহামেদ😎
নামটা সবারই পছন্দ হয়ে গেলো। তারপর দেখতে দেখতে কেটে গেলো একটা বছর। exm এর পরপরই বাসায় চলে আসলাম। শ্বাসুড়ীর ছেলের ১ম তম জন্মদিন বলে কথা তাই আগে ভাগে চলে আসলাম।😋 তৌসিফের জন্মদিনটা অনেক বড় করেই হচ্ছে। তবে আমার শ্বাসুড়ীর দুইটা জিনিস আমার থেকে চেয়ে নিয়েছে হিহি। কেক আর ড্রসের মাধ্যমেই বাজির শ্বাসুড়ীর পেলাম।😘
বাজিতে হারলেও যে এতো মজা আগে জানতাম না। বাজিতে আমি হেরে শ্বাসুড়ীর পেলাম আসল জয়ী তো আমিই হলাম হিহি।
_____সমাপ্ত____
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ