***সেই কালো মেয়েটা***(লেখক রাহিম মিয়া)
'
'
গত কয়েকদিনের মতো আজও তাড়াতাড়ি কলেজে আসলাম, যাতে কারো সাথে বন্ধুত্ব করে সময়টা সেই বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে কাটাতে পারি।
গত একমাস থেকে মানে যখন থেকে কলেজে ভর্তি হলাম, তখন থেকে কেউ আমার সাথে বন্ধুত্ব করেনি এখন পর্যন্ত। তাই ৭দিন ধরে কলেজে একটু তাড়াতাড়ি আসছি, যাতে কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে পারি। আমি যে কালো হয়তো তাই কেউ বন্ধুত্ব করতে চাই না। কিন্তু কালো মানুষের যে একটা সুন্দর মন থাকতেও পারে। এইসব কথা ভাবতে লাগলাম, তখন দেখতে পেলাম আমাদের
ক্লাসের সুন্দরী মেয়েটা রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিচ্ছে, টাকা দেওয়ার সময় তার পার্স থেকে একশত টাকার একটি নোট পরে যায় আর তাই আমি সেই টাকাটা গিয়ে রাস্তা থেকে তুলে ডাক দিলাম।
----এই যে আপু শুনেন।
ঘুরে ফিরে তাকিয়ে
----হ্যাঁ বল।
----এইটা আপনার টাকা ভাড়া দেওয়ার সময় পার্স থেকে পরেগিয়েছিল।
----আমাকে কি বোকা মনে হয়? আমার টাকা পরলে কি আমি দেখবো না? রাবিশ মানুষকে বোকা বানাতে চাই।
---আমি সত্য বলছি আর পার্স একটু দেখলেই তো হয় বুঝতে পারবেন।
----আচ্ছা দেখছি। সত্যিই তো একশত টাকা কম পার্সে, দেও দেও টাকাটা।
--এই নেও আর আমি ইভা। তুমি তো আমার সাথেই পড়, আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
---আমি যার তার সাথে বন্ধুত্ব করি না আর তোমার মতো ডেকের কালি মাখা মেয়ের সাথে তো প্রশ্নই উঠে না। অনেক ধন্যবাদ টাকাটা পেয়ে দেওয়ার জন্য, বাই নিজের মত কাউকে খুঁজে বের কর।
মেয়েটা চলে যেতে লাগল আর আমি ভাবতে লাগলাম। আমি কালো তাতে তো আমার কোনো
দোষ নেই। আল্লাহ্ বানালে আমি বা কি করবো। একদিন আম্মুকে প্রশ্ন করেছিলাম।
----আচ্ছা আম্মু আমি দেখতে কেমন?
-----তুই আমার মেয়ে ইভা দেখতে চাঁদের মতো আর জানিস তোকে যে বিয়ে করবে সে অনেক সুখি হবে।
----তাহলে মানুষ আমাকে কালো বলে কেন? আর আমার সাথে তারা খেলতে চায় না কেন বলো?
----ওদের দেখার চোখ নেই মা আর একটা কথা শুন কেউ খেলতে না চাইলে, যখন খেলতে মন চাইবে আমার সাথে খেলবি ঠিক আছে।
তখন বুঝিনি আম্মুর কথার অর্থ, কিন্তু এখন বুঝি সেই কথার অর্থ। আসলে প্রতিটি মায়ের চোখে হয়তো সন্তান সব সময় সুন্দর লাগে। এইসব ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে ক্লাসে ঢুকে বেঞ্চে বসে গেলাম। আশেপাশে খেয়াল করে দেখলাম আজও বেঞ্চে আমি একা বসে আছি। কিন্তু পাশে তো একটা মেয়ের ব্যাগ ছিল, হয়তো আমাকে বসতে দেখে জায়গা বদল করে ফেলেছে। ক্লাসে বসে আছি বাহিরে যেতে আজ আর মন চাচ্ছে না।
হঠাৎ সামনের বেঞ্চে কয়েকটা মেয়ে থেকে শুনতে পেলাম ক্লাসে বলে নতুন স্যার আসবে আর তিনি
এখন থেকে আমাদের ক্লাস করাবে। যাক ভালোই
হয়েছে আগের মোস্তফা স্যার ভালো ছিল না। আমি কালো বলে কত কথা শুনাতো। কিন্তু এইবারের স্যার ভালো হবে তো, এইসব কথা ভাবছিলাম তখনি দেখি একজন লম্বা লোক ক্লাসে
ঢুকলো আর তা দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গেল সাথে আমিও। তখন তিনি বলতে লাগলেন।
----বস, সবাই নিজের জায়গাতে বস আর আমি তোমাদের কলেজের নতুন স্যার হিসাবে এসেছি, এন্ড প্রথম ক্লাস পরেছে তোমাদের ইন্টার প্রথম বর্ষের সবার উপরে। সবার সাথে আগে পরিচয় হয়ে যাক, আমার নাম নজরুল ইসলাম আর বাবা, মা, বন্ধুবান্ধব সব আছে। এইবার তোমরা সবাই এক এক করে নিজের পরিচয় দেও শুনি।
তারপর সবাই এক এক করে নিজের পরিচয় দিতে লাগলো, হঠাৎ আমার পাল্লা আসলো।
---এইবার তুমি তোমার পরিচয় দেও, আর বেঞ্চে একা কেন?
----জ্বি স্যার আমি ইভা মা, বাবা, ভাইবোন সব আছে কিন্তু বান্ধুবী নেই তাই বেঞ্চে একা বসে আছি।
---হুম বুঝতে পেরেছি আর তোমার নামটা তো অনেক সুন্দর আর এই সুন্দর নামের মানুষের মুখে হাসি সবসময় থাকা দরকার। জান্নাত তুমি ওর সাথে গিয়ে বস আর আজ থেকে তুমি ওর বান্ধবী হয়ে থাকবে।
----কিন্তু স্যার ওতো দেখতে কালো আর ওর সাথে কি আমাকে খাটে বলেন?
---বড়দের মুখের উপর কথা বলা আমি তাদেরকে পছন্দ করি না, আর শুন এখন যদি তোমার মুখে কেউ এসিড দিয়ে দেয়, তুমি ইভার থেকে আরো দেখতে খারাপ লাগবে। তাই রূপ না দেখে কারোর মন দেখা বুদ্ধিমানের কাজ মনে রাখবে।
---সরি স্যার ভুল হয়ে গেছে, আমি এখনি ইভার সাথে বসছি।
----নিজের ভুল বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ আর আশা করি তুমি ইভার একজন বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে সব সময় পাশে থাকবে।
স্যারের কথাগুলো শুনে চোখগুলো দিয়ে আমার কৃতজ্ঞতা কীভাবে জানাবে বলে বুঝাতে পারছিল না। কারণ ক্লাসের সুন্দরী মেয়ে জান্নাত আমার বান্ধুবী আর সে আমার পাশে বসে আছে। পরিচয়
শেষে স্যার ক্লাসে পড়াতে লাগলেন আর মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতেন আর আমি দাঁড়িয়ে উত্তর দিতাম।
---আচ্ছা কে বলতে পারবে পানি কয়টি উপাদান দিয়ে তৈরি?
---জ্বি স্যার আমি।
---হ্যাঁ বল ইভা।
---দুইটি উপাদানে দিয়ে স্যার।
--- ভালো, আজ তো দেখছি তুমি বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছ অনেক ভালো।
---ধন্যবাদ স্যার।
এই বলে বেঞ্চে বসে গেলাম, তখনি ক্লাসের সময় স্যারের শেষ হয়ে গেল তাই স্যার চলে গেলেন পড়া দিয়ে। কলেজ শেষে জান্নাতকে নিয়ে পার্কে হাঁটতে গেলাম, কিন্তু জান্নাত আগের মত ছিল না। সে আমার সাথে অনেক কথা বললো আর তখন ভিতরে যেন আনন্দের ঢেউ বইতে লাগলো।পরে বিদায় জানিয়ে বাসাতে চলে আসলাম। বাসাতে এসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম কারণ আজ যে আমি অনেক খুশি।তখন আম্মু বলতে লাগলো।
----কি ব্যাপার আজ আমার ইভা মা অনেক খুশি মনে হচ্ছে যে।
----হ্যাঁ আম্মু আমাদের কলেজে না একটা নতুন স্যার এসেছে আর সেই স্যারের প্রথম ক্লাস আমাদের প্রথম বর্ষের উপর পরেছে। তুমি জানো আম্মু স্যার না অনেক ভালো আর আজ আমাকে একটা বান্ধুবী বানিয়ে দিয়েছে তাও ক্লাসের সুন্দরী মেয়েটাকে।
----সব বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা যা আগে ফ্রেশ হয়ে আয় টেবিলে খাবার দিচ্ছি খেয়ে নে। খাওয়ার পর জমিয়ে কথা হবে।
---আচ্ছা আম্মু যাচ্ছি।
তারপর ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম। রাতে বই নিয়ে পড়তে বসে গেলাম, পড়া শেষে ডিনার করে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে উঠে ফুরফুরে মনে কলেজের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম আর স্যারের জন্য আমাদের আম গাছ থেকে কয়েকটা আম নিলাম, স্যারকে দিব বলে।
কলেজে গিয়ে দেখি জান্নাত আগেই এসে গেছে, তাই আমি জান্নাতের কাছে গিয়ে বলতে লাগলাম।
----হাই জান্নাত কেমন আছ?
---ভালো, তুই? আর আমাকে তুই করে বলবি আমরা না বান্ধবী স্যার বলেছে।
---আচ্ছা তুই করে বলবো আর আমি ভালো আছি,নে এই আমটা তোর জন্য।
----এই দেখছি পাকা আম দে খাই। আচ্ছা তুই এত সু্স্বাদু আম পেয়েছিস কোথায়?
----আমাদের আম গাছ আছে সেইখান থেকে, তবে
খাচ্ছিস ভালো কথা পানি দিয়ে ধুয়ে খাবি তো।
----সরি রে ভুলে গেছি।
----আচ্ছা ঠিক আছে চল ক্লাসে যাই।
তারপর কলেজের ক্লাস শেষে স্যারের হাতে ৫টি আম দিয়ে বললাম, স্যার এইগুলো আপনার জন্য আম্মু দিয়েছে। কারণ সত্য কথা বললে স্যার নাও নিতে পারে তাই একটু মিথ্যা কথা বললাম আর কি। স্যারকে আম দিয়ে জান্নাতের সাথে একটু আড্ডা দিয়ে বাসাতে চলে আসলাম।
এইভাবে ভালোই চলছিল দিনকাল। হঠাৎ একদিন কলেজে এসে দেখতে পেলাম জান্নাতের সাথে একটা ছেলে ক্যাম্পাসে বসে আছে। ছেলেটাকে দেখে আমি যেন অন্য জগতে হারিয়ে গেলাম, নিজের মাঝে নেই যেন আমি। হাঁটতে হাঁটতে কখন যে জান্নাতের কাছে চলে এসেছি টেরই পাইনি। জান্নাতের ডাকে হুশ আসলো।
----কিরে ইভা এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? কতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পারছিস না।
---ও সরি রে আর তোকে দেখছিলাম, আজ তোকে না অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে জান্নাত।
মিথ্যা কথা বললাম আর কি বাঁচার জন্য।
---আমাকে তো প্রতিদিন দেখিস আজ আবার নতুন কি দেখলি। আচ্ছা বাদ দে সেইসব, এই হল আমার পাশে বসে আছে আবির আমার বন্ধু ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ে আর আবির এটা আমার বান্ধবী ইভা আমার সাথে পড়ে।
--আচ্ছা আবির ভাইয়া তো ২য় বর্ষের ছাত্র, তোর বন্ধু বা হল কীভাবে জান্নাত শুনি?
---বন্ধু হতে ছোট বড় লাগে নারে, এই এমনি হয়ে যায় আর কি, চল একটু হেঁটে আসি আবির তুমিও চলো।
---না তোমরা যাও আমি ক্যাম্পাসে বসে থাকি।
---চলেন না আবির ভাইয়া হেঁটে আসি।
---ইভা তোমার সাথে হাঁটতে আমি ইচ্ছুক নয় ঠিক আছে।
---আরে রাগ করিস কেন? ইভার সাথে না হোক আমি তো আছি, চল আমার সাথে হাঁটবি।
---আচ্ছা এত করে বলছিস যখন চল।
তারপর তিনজন মিলে হাঁটতে লাগলাম কলেজের পুকুর পাড়ের পাশে গিয়ে। আবির ভাইয়া ও জান্নাত পাশাপাশি আর আমি জান্নাতের পাশে মানে জান্নাত মাঝখানে। হাঁটছি আর ভাবছি আজ কালো বলে আবির ভাইয়া আমাকে এই কথাটা শুনালো। কলেজ শেষে বাড়িতে এসে আয়নার সামনে গিয়ে ফেয়ার এন্ড লাভলী স্নো আর দামি পাউডার মুখে মাখতে লাগলাম। আমাকে যে সুন্দর হতে হবে, না হলে যে আবির ভাইয়াকে কখনো পাব না। অনেককিছু মেখে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে মুখ ধুয়ে আয়নাতে যখন তাকালাম দেখতে পেলাম সেই আগের চেহারা কিছু বদল হয়নি। তখন খুব কান্না পাচ্ছিল কেন আমি ফর্সা হতে পারছি না, এইভেবে সকালের নাস্তা করে কলেজে চলে গেলাম। সেখানে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে জান্নাতের সাথে বসে আড্ডা দিলাম সাথে আবির ভাইয়াও ছিল। কিন্তু তিনি বেশি কথা বলেনি, শুধু জান্নাত আর আমার কথার উত্তর হ্যাঁ আর না করে যাচ্ছিল। এইভাবে চলতে চলতে কয়েকমাস পার হয়ে গেল। আমি যে আবির ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি, তাই মনের ভিতর কথাটা শুধু ছটফট করতো বলার জন্য। কিন্তু মেয়েদের যে বুকে ফুটে কিন্তু মুখে ফুটে না তা কি জানে না আবির ভাইয়া, নাকি আমি কালো বলে আমাকে তার পছন্দ না। দূর কিসব ভাবছি আমি, আবির ভাইয়া আমাকে পছন্দ করতে যাবে কেন? তিনি তো লম্বা আর দেখতে ফর্সা মাশআল্লাহ্ পুরা নায়কদের মতো। এইসব কথা রাতে ঘুমাবার সময় প্রতিদিন ভাবি আর প্রতিবার নিজের বিবেক বলে, ইভা আবির তোকে ভালোবাসতে যাবে কেন?
তোর কি আছে যে ভালোবাসবে?তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হতো। এইভাবে চলতে চলতে আবির ভাইয়ার ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা কাছে চলে আসলো, তাই ভাবলাম যে করে হোক আবির ভাইয়াকে আমার মনের কথা বলতেই হবে, না হলে
আমি তাকে হারিয়ে ফেলবো। আচ্ছা আমাকে কি আবির ভাইয়া ভালোবাসে নি? না আবির ভাইয়ার
তো কোনো gf নেই আর জান্নাত তো শুধু বন্ধু দেখে আসছি অনেক দিন ধরে। অনেক চিন্তাভাবনা করে একদিন সাহস জুগিয়ে মনের
কথা বলতে নিজেকে প্রস্তুত করলাম। তখন আবির ভাইয়ার পরীক্ষা শুরু হতে আরো পাঁচ দিন
বাকি ছিল। সেইদিন আমি কলেজে গিয়ে আবির ভাইয়াকে খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ ক্যাম্পাসে দেখলাম বসে আছে, তাই হাঁটতে লাগলাম আবির ভাইয়াকে গিয়ে কথাটা বলার জন্য। কিন্তু যে পা
বাড়াবো বিবেক যেন বলছে ইভা তুই তো দেখতে
অনেক কালো, পড়ালেখাতে ভালো হয়েছিস তো কি হয়েছে। তোর কি রূপ আছে যে আবির ভালোবাসবে? কেন শুধু শুধু বলতে যাচ্ছিস?তখন
পাটা থেমে গেল, কিন্তু আবার মনে হল। আমি যদি
আজ না বলি আবির ভাইয়াকে তাহলে হারিয়ে ফেলবো। যদি আমার আগে অন্য কোনো মেয়ে প্রপোজ করে আবির ভাইয়াকে নিয়ে যায়। না আবির ভাইয়াকে আমি হারাতে পারবো না আর তিনি আমাকে ভালোবাসতে তো পারে। আজ যেভাবে হোক নিজের মনের কথা বলে ছাড়বো।
এইভেবে আবার চলতে শুরু করলাম, আমি কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম তখন সে বলতে লাগলো ।
---কিছু কি বলবে ইভা।
---না মানে একটা কথা বলার ছিল আর কি। কিন্তু ভয় করছে যে।
----আমি বাঘ না ভাল্লুক যে ভয় করছে? তুমি ভয়হীনভাবে তোমার কথা বলতে পার।
---আবির ভাইয়া জানি না কথাগুলো কিভাবে নিবেন। তবে সত্য কথা বলতে এই যে যেদিন আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম জান্নাতের সাথে, সেদিন থেকে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
বিশ্বাস করুন রাতে আমি ঘুমাতে পারি না, শুধু আপনাকে নিয়ে ভাবি। অনেক অনেক ভালোবেসে
ফেলেছি আপনাকে তা কত আমি বলে বুঝাতে পারবো না।
আমি হাতে ফুল নিয়ে
---তোমার কথা কি শেষ হয়েছে।
---হ্যাঁ।
---এইবার আমার কথা শুনো, নিজেকে কখনো আয়নার সামনে গিয়ে দেখেছ তুমি দেখতে কেমন?
তোমার সাহস হয় কীভাবে নিজের এই পেত্নী মার্কা
চেহারা নিয়ে কাউকে প্রপোজ করতে, যদিও সে যদি তোমার মতো হত চলতো।কিন্তু আমার মতো
লম্বা, ফর্সা ছেলেকে বা কেন?? তুমি কি ভেবেছিলে তুমি আমাকে প্রপোজ করার পর ভালোবাসবো? তোমার মতো কালো মেয়ের সাথে ভালোবাসার
তো দূরের কথা বরং বন্ধুত্ব করা যায় না।
জান্নাতের সাথে বন্ধুত্ব ছিল বলে তোমার সাথে কথা বলতাম। আশা করি তুমি তোমার উত্তর পেয়ে
গেছ ইভা।
আমার দুইচোখ দিয়ে তখন শুধু অশ্রু পরতে লাগলো। আমি আর কিছু না বলে দৌড় দিয়ে কান্না করতে করতে বাসাতে চলে আসলাম। এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম আর নিজেকে কান্নার সঙ্গী করে বলতে লাগলাম। হে আল্লাহ্ কি দোষ করেছিলাম আমি যে আমাকে কালো বানিয়ে দুনিয়াতে পাঠালে। একটু কালো হলে সমস্যা ছিল
না, কিন্তু এত কালো বানিয়ে পাঠালে কেন? যাকে এত ভালোবেসেছি সেকিনা কালো বলে আমাকে ফিরিয়ে দিল। আমি তো জানি তুমি তোমার বান্দার কষ্ট সজ্জ করতে পার না, তাহলে কেন আমাকে এত কষ্ট দিয়েছ। ততক্ষণে মনে হল কার
জন্য আমি কান্না করছি , যে কিনা রূপকে ভালোবাসা কারোর মনকে নয়। না আমার চোখ
দিয়ে এই অশ্রু এমন মানুষের জন্য ফেলার প্রশ্নই
উঠে না।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যাতে এই
আবিরের মতো হাজারো ছেলে আমাকে পাবার
আশায় থাকে। তাই কান্না বন্ধ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কথা ভাবছি আর তার জন্য আমাকে অনেক বেশি পড়ালেখা করতে হবে। রুম
থেকে বের হয়ে আব্বু আর আম্মুকে বলে দিলাম।
আব্বু আমি যতদিন না জর্জ হচ্ছি বিয়ে করবো না
আর আশা করি তোমরা কেউ এর আগে বিয়ের জন্য চাপ দিবে না। এইটুকু বলে নিজের রুমে চলে
আসলাম। তারপর যতদিন কলেজে গিয়েছি আবির ভাইয়া সাথে দেখা হলেও মুখ ফিরিয়ে নিতাম অন্যদিকে। পড়ালেখাতে নিজেকে বিলিয়ে দিতে লাগলাম। ইন্টার ফাইনালে জিপিএ 5 পাওয়ার পর জর্জ হবার সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। তখনো আবিরের কথা মনে পরতো,
কিন্তু এইভেবে ভুলে থাকতাম যে ওর মত ছেলে তো রূপের পাগল আর ওকে মনে করে সময় নষ্ট করার প্রশ্নই উঠে না। শুধু পড়ালেখার মাঝে পড়ে থাকতাম, যেদিন আমার রেজাল্ট দেওয়া হবে জর্জ হবার জন্য চাবিকাঠি। সেইদিন যখন রেজাল্ট দিল, তখন আমি হলাম প্রথম আর তাই তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে স্বর্ণের মেডেল দিল সাথে সরকারি জর্জের চাকরি। সেইদিন শুধু বাবা, মাকে ধরে চোখের অশ্রু ফেলেছিলাম ,কারণ তারা আমার কথা শুনার পর কোনোদিন বিয়ের জন্য বলেনি।
আজ আমি প্রতিষ্ঠিত মনে করে নিজেকে যেন সুখপাখির মতো লাগছে। চাকরি নেওয়ার পর
বিয়ের প্রস্তাব আসতে লাগলো। যদিও জানি তারা কেউই আমার রূপ দেখে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেনি, তাই নিজেই ফিরিয়ে দিতাম আর আশায়
থাকতাম যে আমাকে দেখে ভালোবাসবে তাকে বিয়ে করবো আর না হলে না। চাকরি অনেক মাস চলে গেল। একদিন কোর্টে একটা কেস মীমাংস
করতে গিয়ে আবিরকে দেখতে পেলাম বসে আছে। তখন আমি যেন কয়েক বছর ফিরে অতীতে যেন চলে গেলাম। উকিলের জোরে কথার শব্দে বাস্তবে আসলাম। তারপর বলতে লাগলাম অর্ডার অর্ডার আজকে মামলা শুরু করা যাক।
উকিল তার কথা বলতে লাগলো। এক পর্যায় বুঝতে পারি আসামী আবিরের বড় ভাই, যে কিনা বউকে মেরে ফেলার অপরাধে আসামী হয়েছে। সময় শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বলে দিলাম আগামী সাপ্তাহ এইদিনে আর এই সময়ে বিচার আবার বসবে তখন রায় দেওয়া হবে। তারপর চলে আসার সময় যেই গাড়িতে উঠে বসতে যাবো, আবির এসে বলতে লাগলো।
---ইভা একটু শুন।
ঘুরে ফিরে তাকিয়ে
---হ্যাঁ বলুন কি কথা বলতে চান।
---তুমি আমাকে চিন্তে পারছো না আরে আমি আবির। আসলে যে কথা বলার জন্য ডেকেছিলাম
তুমি তো জানো আমার ভাইয়া তার বউ হত্যা করার জন্য আসামী। প্লিজ সে যদি দোষী হয় তাকে শুধু কয়েক বছরের জেল রায় দিও,কিন্তু ফাঁসির রায় দিও না।
----আপনাকে চিনে আমার লাভ নেই আর আসামী যদি খুনি প্রমাণিত হয়, তাহলে যে শাস্তি আছে খুনির জন্য লেখা আপনার ভাই সেইটাই পাবে। এইখানে আমার কিছু করার নেই সরি।
---তুমি না আমাকে ভালোবাসতে এইভাবে বলতে পারলে।
---আমি আপনাকে ভালোবাসতাম কিন্তু আপনে
তো আমাকে ভালোবাসেন নি।সেই কালো মেয়েটার কাছে কেন আজ ভালোবাসার কথা বলছেন। সেইসব অতীত আর আমি সব অতীত ভুলে যাওয়ার মনে করি ভালো, তাই সেইসব কথা আর কখনো বলবেন না। বাই ভালো থাকবেন আগামী সপ্তাহ সোমবার সকাল ৯টাতে দেখা হবে আশা করি।
তারপর গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে আসলাম। রাতে সেই অতীত আবারো আমাকে কান্না করালো,কিন্তু কেন আমি কান্না করছি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। অনেক কষ্টে রায় দেওয়ার আগের দিনগুলো কাটালাম। সোমবার যথা সময় বসে চেয়ারে।
---অর্ডার অর্ডার আজকের কার্যক্রম শুরু করা যাক।
তারপর নিহত বাদীর উকিল অনেক প্রমাণ দিল যে আবিরের ভাই সত্যিই খুনি। কিন্তু আবিরের উকিল কিছুই দিতে পারলো না, যে তিনি নির্দোষ এটা প্রমাণ হিসাবে। তাই শাস্তি হিসাবে বলতে লাগলাম।
---অর্ডার অর্ডার সমস্ত সাক্ষী আর প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এই দাঁড়ায় যে রফিকুল ইসলাম সত্যিই তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। তাই তাকে বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৩০২ধারা মোতাবেক ফাঁসির রায় ঘোষণা দেওয়া হল।
তখন চোখে অশ্রু দেখতে লাগলাম আবির আর তার ভাইয়ার চোখে,কিন্তু আমি বা কি করবো সঠিক জেনে সঠিক রায় দেওয়াই যে একজন জর্জের কাজ।
(সমাপ্ত)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ