ভোরের ফিকে আলো সবে আমার জানালা ভেদ করে মুখমণ্ডলে হামড়ি খাচ্ছে। বদ অভ্যাসটা ছোট থেকেই আয়ত্ত করা। যদিও বা ভীষণ জেদি ছিলাম বলে মা কিংবা বাবা কেউই আমাকে সকাল নয়টার আগে ঘুম থেকে তুলতে পারেনি কোনোদিন। ছোটবেলায় এ অনিয়ম থেকে অনিয়মিত ক্লাসের জন্য শাস্তিও পেতে হয়েছে অনেকবার। তবে সে শাস্তি কেবল আমার শরীরকেই ছুঁয়নি; বাবাকেও ছুঁয়েছিল মন বরাবর। প্রিন্সিপাল স্যার রীতিমত একদিন আমার সামনে বাবাকে অপমান করেছিলেন। আমি চুপটি মেরে বাবার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে রয়েছিলাম। বাবা শুধু তখন স্যারের ঝাড়িগুলো হজম করছিল। চোখমুখ দেখে আমার ছোট্ট মনও বুঝতে পেরেছিল নিশ্চয় বাবা অপমানিত হচ্ছে আমার জন্য। সেদিন স্যারের কথা শেষ হলে বাবা আমার হাত ধরে বাড়ি নিয়ে আসে। আমি বাবাকে ভয় পায়নি সেদিন; পেয়েছিলাম মাকে। বাবা আমাকে বরং আদরই করেছিল। অন্যদিকে মা গায়ে হাত তোলারও সাহস দেখিয়েছিল কিন্তু সে যাত্রায় বাবার জন্য বেঁচে যাই। ঠিক এভাবেই আমাকে আগলিয়ে রাখে বাবা। শাসনের ভাগ কম, ভালোবাসার ভাগ বেশি।
.
সকাল নয়টার এলার্ম বেজে গেছে। ফুলখুকির মতো ঘুম থেকে উঠে আমি ফ্রেস হলাম। এরপর খাবার টেবিলে নাস্তার সাথে ম্যাগাজিনে চোখ বুলাতে থাকলাম। মা তখন রান্নাঘরে আর বাবা অফিসে। সকাল আটটার দিকেই বাবা বাসা থেকে বের হয়ে যান। যাবার আগে নিয়ম করে তার একমাত্র মেয়েকে এক ঝলক ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে যেত সবসময়। মাঝেমধ্যে এই ঘটনাটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছিল বৈকি। তবে কখনো বাবা অফিস যাবার আগে আমি তার কপালে চুমু খেয়ে বলিনি "সাবধানে যেও।" রোজকার এই কথাটি মা'ই বলে থাকে বাবাকে।
মা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন। "এত বড় হয়েছিস তবুও স্বভাবটা পাল্টাতে পারলি না।" তেড়ে এসে মা আমাকে বলল।
আমি কানে হেডফোন গুজিয়ে ফেললাম। কারণ আমি জানি খাবার টেবিলে মা'র এসব বলা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যদিওবা আমিও অভ্যস্ত হয়েছি কিন্তু মাঝেমধ্যে অসহ্য লাগে। মা তার প্রতিনিয়ত কাজটি করে মানে আমাকে বকে ফের রান্নাঘরে চলে গেল। আমি মায়ের কথা সহ্য করতে না পারলে বাবাকে ফোন দিয়ে থাকি। আজও ঠিক তাই করলাম।
ফোন দেওয়ার পর বাবা ফোন রিসিভ করল।
-হ্যালো, মামনি বলো।
- প্রতিদিনের মতো আজও মা আমাকে বকেছে। তুমি এখনই মাকে বকে দাও।
- আচ্ছা মামনি আমি এখন ব্যস্ত আছি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দু'জন মিলে তোমার মা'কে রিমান্ডে নিব। কেমন?
- বাবা! তুমি বরং মাকেই ভালোবাসো। আমাকে ভালোবাসতে হবে না। রাখছি।
হিংসা ঠিক না। আমি যখন মাকে বাবাকে দিয়ে বকতে বলব তখন যদি বাবা মাকে না বকে তবে আমার মনে হয় বাবা আমার থেকে মাকেই বেশি ভালোবাসে। এ রকম অনুভূতি ঠিক কী কারণে হয় তা আমার জানা নেই। আর এ ঘটনায় মাও খুব মজা পেয়েছে। এরপর তার দুষ্টু মেয়েকে এসে গলা জড়িয়ে খাইয়ে দেয়। অমন আদর পেয়ে মায়ের প্রতি যে বিশাল আকৃতির বরফখণ্ডের ন্যায় রাগ জমে গিয়েছিল তা গলে গেল নিমিষেই।
...
এইচএসসি পরীক্ষা খুব সন্নিকটে। আমি রাত জেগে পড়ি আর বাবা আমার পাশে বসে থাকে। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ সবসময় বাবা খাওয়াত আমাকে। আজও ঠিক তাই হলো। আমি দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বাবা ঘরের আলো নিভিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
পরদিন ছিল শুক্রবার। বাবা বাসায় ছিল। ঘড়ির কাঁটা যখন নয়টা পার হবার পরেও দেখল আমি উঠছি না। তখন রুমে এসে দেখে আমি ১০৩ ডিগ্রী জ্বরে ভুগছি। এরকম অস্থির আমি এর আগে বাবাকে কখনও দেখিনি। মাকে ঠিক তখন কি কি করতে বলছে তা আমার হাড় কাঁপুনি জ্বরের ভেতরও খেয়াল করেছি। শেষমেশ পানি পট্টির পর্যায় শেষ হলে নিজেই হাতের কাছের ডাক্তারকে নিয়ে আসলো বাবা। ডাক্তার কাকু আমাকে দেখে বললেন আমার ম্যালেরিয়া হয়েছে। বাবা কথাটি শোনার পর আমার থেকে বেশি ঘাবড়ে গেল। আমি দুঃশ্চিন্তায় পড়লাম। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা এরই মধ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়া খুব যে ভালো লক্ষণ এমন নয়।
এরপরের দিনগুলোতে বাবাকে সবচে' বেশি কাছে পেয়েছি। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে শুরু করে পাক্কা ছয়দিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমার ঘুমানোর আগ অবধি বাবা আমার সেবাযত্ন করেছে। এতে অবশ্য আমি ভরসা পেয়েছি। সাহস যুগিয়েছি। নিশ্চিন্তেই সপ্তাহ খানেক পর আমি আরোগ্য লাভ করলাম।
ফাইনাল পরীক্ষাও চলে আসলো। আমি পরীক্ষা দিলাম। আড়াই মাস পর রেজাল্ট বের হলো। আমি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলাম। আমার এ সাফল্যে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে বাবা। আশেপাশের প্রতিবেশীদের সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে মেয়ের কৃতিত্বের কথা জানিয়েছে। বাবাকে এমনভাবে খুশি করতে পেরে আমিও আনন্দিত।
কিন্তু আমার বান্ধবীরা রীতিমত চমকে গেছে আমার রেজাল্টে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবার পরেও এমন রেজাল্টে তারা একটা পার্টির আবদার করে আমার কাছে। আমিও আর তাদের না করিনি। বাড়িতে কাউকে কিছু জানানোর আগেই ওদেরকে কথা দিয়ে ফেলেছি। ভীষণ খুশিও হয়েছে ওরা।
এরপর ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় এসে বিষয়টা বাবা আর মাকে খুলে বললাম। মা তেমন কিছুই বলল না। কিন্তু বাবা রীতিমত চটে গেল। সোজা সাপ্টা বলে দিলো, 'এসব পার্টি হচ্ছে না এ বাড়িতে।'
আমি মুখ গোমড়া করলাম। তবুও বাবা আমার রাগ ভাঙালো না। মার মুখও চুপসে আছে। আমি এসবের দিকে মনোযোগ দেইনি। আমার জেদ আমি এ পার্টি করতেই চাই। কিন্তু কি আশ্চর্য ত্রিশ মিনিট পার হয়ে গেল বাবা কিছুতেই রাজি হলো না। বাবার সাথে মাও এবার তাল মিলিয়ে বলতে লাগলো পার্টি না করার কথা। আমি দু'জনের উপর রাগ করেই তখন নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম। দুপুর গড়িয়ে রাত হলো। দু'বেলা রাগের কারণে অভুক্ত থাকলাম দরজা লাগিয়ে। বাবা অনেকবার ডেকে গেছে কিন্তু সাড়া দেইনি। মা ডেকেছে, বলে দিয়েছি দরজা খুলব না। এরপর মধ্য রাত্রিবেলা নিজেই যখন ক্ষুধা সহ্য করতে পারলাম না তখন নিজের ঘরে চুরি করে খাওয়ার রেকর্ড গড়লাম। খেয়ে দেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সকাল নয়টায় নিয়ম করে ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে গেলাম। দেখলাম বাবা অফিসে যায়নি। মাও বসে রয়েছে। আমি তাদের সাথে কথা না বলে খেতে লাগলাম। বাবা তখন কিছু একটা বুঝানোর চেষ্টা করল আমাকে। কিন্তু আমি বুঝার মতো সুযোগ দিলাম না। সারা রাত বান্ধবীরা ফোন করে জানতে চেয়েছে কবে আমি পার্টি দিচ্ছি! আমি লজ্জায় তাদেরকে সত্য ঘটনা বলতে পারিনি। বাবা গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে এসেছে অথচ আমি রেগে গিয়ে আবার আমার ঘরে ফিরে আসি।
এরপরের ঘন্টা পাঁচেক পর বাসায় খবর আসলো বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে। পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। খবরটা শোনার পর আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি খুইয়ে গেল। মা কাঁদতে পারছে। অথচ আমি কান্নার চেষ্টা করার পরও জল পড়ছে না। ছুটে গেলাম দুই মা মেয়ে হাসপাতালে। বাবার পায়ে তখন ব্যান্ডেজ। ব্যথায় কোঁকড়াচ্ছে। আমাকে দেখার পর পরই সবল হওয়ার চেষ্টা করল বাবা। তবে এবার আমি চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারিনি। নিরবেই তা ঝড়ছে। অল্প সময় পর হাউমাউ শব্দে কাঁদতে লাগলাম। ততক্ষণে বাবার পার্টিতে রাজি না হওয়ার কারণটিও মা জানিয়ে দিয়েছিল রাস্তায়।
বাবা আমার জন্য শহুরে জমি কিনেছে। হাতে জমানো টাকার সবটুকুই সে জমির পিছনে খরচ করেছে। তাছাড়া আমার বাবা যে খুব টাকাওয়ালা এমনও নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প আমাদের। আমিও হয়ত ভুলে গিয়েছিলাম মধ্যবিত্ত বাবারা চাইলেও সবকিছু করতে পারে না। যেখানে আমার জন্যই বাবার জমানো টাকা শেষ সেখানে পার্টির জন্য বাড়তি টাকা খরচ করে শূন্য হাতে বাবাকে চলতে দিতে পারি না আমি। বাবাও হয়ত এমন চিন্তাই করেছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে বাবার মুখে শুনলাম, বাবা নাকি পার্টির জন্য টাকা জোগাড় করে ফেলেছে। আমার মলিন মুখ দেখতে তার নাকি ভালো লাগছিল না। সেজন্যই পার্টি করার বাড়তি টাকার জোগাড় করতে বের হয়েছিল বাইরে। সেখান থেকেই এক্সিডেন্টের ঘটনা। যদি আমার জন্য বাবা এতটা চিন্তা নিয়ে বাইরে বের না হতো তবে হয়ত এই অবস্থা হতো না তার। মনে মনে লজ্জিত হলেও অনুধাবন করতে পেলাম বাবারা সবকিছুই করতে পারে সন্তানদের জন্য। সব। শুধু সন্তানরাই মাঝেমধ্যে ভুল বুঝে বাবাদের। আমিও ভুল বুঝেছিলাম। এখন সে ভুল ভেঙে গেছে। তাই বাবাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলাম। পাশে খেয়াল করলাম মায়ের চোখে পানি। এরপর খেয়াল করলাম বাবাও কাঁদছে। এসব কান্নাকে কেউ কখনও দুঃখের কান্না বলে না। এ কান্না সুখের কান্না। এ কান্না ভালোবাসার কান্না। যেখান থেকে কেবল নিঁখাদ সুখই পাওয়া যায়।
#আমার_বাবা
®জান্নাতুল মমি
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŽāĻ্āĻāϞāĻŦাāϰ, ā§§ā§ āĻāĻĒ্āϰিāϞ, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž
4861
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§Ŧ:ā§Ēā§Ŧ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ