____লুকানো ভালোবাসা____
___জান্নাতুল বাকিয়া তোয়া___
এক পর্ব
পারিবারিক ভাবেই আজ তোয়া আর তৌসিফের বিয়ে হয়েছে। বাবার বন্ধুর মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে নির্বাচন করেছে। তবে তৌসিফের এই বিয়েতে মত নেই। কারন সে অরিন নামেে অন্য একটি মেয়েকে নিজের থেকে বেশিই ভালোবাসে। সে কথাও তার মাকে বলেছিলো। কিন্তুু মেয়ের সম্পর্কে সবটা শোনার পর তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। ওই মেয়ে তার ছেলের জন্য উপযুক্ত নয়। বাবার মুখে মুখে কথা বলার সাহস না থাকায় অরিনের বিষয়টা আর এগোইনি। তবে তাজিম উদ্দিন বসে সময় নষ্ট করেনি। তিনি তার বন্ধুর মেয়ের সাথে কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে বিয়ে ঠিক করে ফেলে। এমনকি তৌসিফও বিয়ের আগ পর্যন্ত কিছুই জানতো না। তাই তৌসিফ ঠিক করে এই অবিচার সে কিছুতেই মানবে না। তাই সে বাসর রাতেই নতুন বউকে সবটা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়। যে সে এই বিয়েটা মানে না।
__বিয়ের আগে বলেননি কেন?
__বলবো কি ভাবে? আর আমি তো জানতামই না আমার বিয়ে!
__তাহলে কি শুনে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন?
__বাবা হঠাৎ বললো দাদু অসুস্থ , তাই গ্রামে যেতে হবে,তারপর সবটাই তো জানেন।
__যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে, এখন কি চাইছেন?
__আপনার থেকে মুক্তি চাই।
__মানে!
__মানে ডিভোর্স
__কিন্তুু সেটা তো সম্ভব নয়।
__কেন! আপনি হেল্প করলে অবশ্যই সম্ভব।
__আপনি আমার এতো বড় ক্ষতি করলে। আর আমি আপনাকে হেল্প করবো!
__আপনি হেল্প না করলেও আমি আপনাকে রেখে অরিনকে নিয়ে পালিয়ে যাবো।
__আপনার বাবা যদি এইটা জানতে পারে আপনার কি হবে বুঝতে পারছেন তো?
__আমি বাবাকে ভয় পাই না।
__সেটা তো এই বাড়িতে এসেই বুঝতে পেরেছি, বাবা যখন কথা বলছিলো তখন তো বাধ্য ছেলের মতো শুধু মাথা ঝাকিয়ে গেলেন। তখন তো বললেন না আপনি এই বিয়েটা মানেন না!
একি মেয়ে রে বাবা কিছুক্ষন হলো এই বাড়িতে এসেছে এর মধ্যেই বুঝে গেলো যে বাবাকে আমি ভয় পাই। না এইটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। তোয়ার কথায় তৌসিফের ভাবনায় ছেদ পরলো।
__কি হলো কি ভাবছেন?
__অনেক রাত হয়েছে আপনি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ুন।
__আর আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
__আমি সোফায় ঘুমিয়ে যাবো।
__কিন্তুু এটা তো আপনার বাড়ি, so আপনি বিছানায় ঘুমান আমি না হয় সোফায় ঘুমাই।
__আপনি এতো কথা বলেন কেনো, যেটা বলছি চুপচাপ সেটা করুন যান ঘুমান।
হঠাৎ তৌসিফের ফোনটা বেজে উঠলো তৌসিফ ফোনটা নিয়ে বেলকুনিতে চলে গেলো। তৌসিফের কথা শুনে তোয়া বুঝতে পারলো অরিন ফোন করেছে। অনেক ভাবে তৌসিফ অরিনকে তার অনিচ্ছাকৃত বিয়ে হওয়ার ঘটনাটা বোঝাতে চেষ্টা করছে। আর তোয়া বসে বসে ভাবতে লাগলো আমার জীবনটা কেন এমন! আমিই হয়তো একমাত্র মেয়ে যে বাসর রাতে বসে বসে নতুন বরের সাথে অন্য একটি মেয়ের প্রেমালাপ শুনছি অথচ কিছুই বলছি না। আর কাকেই বা কি বলবো তৌসিফ তো সবটা বলেই দিলো। হয়তো পরিবারের চাপে পরে ও আমাকে মানতে বাধ্য হবে কিন্তুু মন তো পড়ে থাকবে অরিনের কাছে। কি দরকার শুধু ওদের দুজনের কষ্টের কারন হওয়ার। তার থেকে বরং কষ্টটা আমার সঙ্গের সাথি হয়েই চিরটা কাল থেকে যাক। ছোট থেকেই কষ্টটাকে লালন করতে করতে এখন আমি চাইলেও কষ্ট আমার পিছু ছাড়তে চাই না। বিয়ের আগে তৌসিফের পরিবারের মতো এমন একটা পরিবারের স্বপ্ন দেখতাম। যেখানে সবাইকে নিয়ে এক সাথে থাকবো। কিন্তুু উপর আলা হয়তো এমনটা চাইনি। তাই ভালোবাসা নামক সোনার হরিণটা আমার অগচরেই থেকে গেলো। হঠাৎ তৌসিফের কথায় তোয়ার ধ্যান ভঙ্গ হয়ে গেলো।
__প্লিজ অরিন তুমি বিশ্বাস করো আমি কিছুই জানতাম না।
__আমি কিছু শুনতে চাইনা
__প্লিজ অরিন তুমি বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করো!
__ওকে আমি মানলাম তুমি সত্যি বলছো।
__উফফ tnxx অরিন,, আমি জানতাম তুমি ঠিক বুঝবে।
__ওই মেয়েটা কোথায়?
__রুমেই আছে!
__কি!!! ওই মেয়েকে তুমি রুমে রেখেছো! এক্ষুনি বের করে দাও বলছি।
__কি বলছো তুমি! বাবা জানতে পারলে আমাকে আর আস্তো রাখবে না!
__ok, বের করা লাগবে না। তুমি ওই মেয়েটার কাছে যাবে না।
__কি বলছো বাবু। তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা?
__একদমই না, সব ছেলেরা এক শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
__তাই বলে আমিও কি ওদের মতো নাকি?
অভিমানি সুরে তৌসিফ কথাটা বললো আর আড় চোখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো তোয়া কি করছে। তোয়া বিছানায় বসে বসে দিব্বি পা দোলাচ্ছে। আর তৌসিফের কথা শুনছে। মেয়েটার মাথায় কোনো সম্যসা আছে নাকি! ওর সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটলো অথচ মনে হচ্ছে ওর কিছুই হয়নি। অন্য কেউ হলে তো এতোক্ষনে বাড়ি মাথায় করে তুলতো। গ্রামের ব্যাকডেট মেয়ে আর কি বা করবে। শুনেছি অনার্সে পড়ছে কিন্তুু তার ছিটে ফোটাও তো দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটা এমন করে হাসছে কেনো। আমাকে কি ওর কাছে জোকার মনে হচ্ছে। কথাটা ভেবেই তৌসিফ কিছুটা অসস্তি বোধ করলো। অরিনের ধমকে তৌসিফ বাস্তবে ফিরলো।
__কি হলো কথা বলছো না?
__ও হ্যাঁ, বলো?
__মানে এতোক্ষন কি বললাম তুমি শুনোনি।
__না মানে শোনা যাচ্ছিলো না। এবার বলো?
__আজ সারা রাত তুমি আমার সাথে কথা বলবা।
__কি?
__যা বললাম তাই, আর ওই মেয়েটার দিকে একদম তাকাবে না।
__বাবু আমার কথাটা একটু শুনো, তুমি যা বলবা তাই হবে। শুধু আজকের রাতটা আমাকে ছুটি দাও।
__কি বললে তুমি? ওই মেয়েটার সাথে আজ রাতটা থাকতে চাও!
__আরে আমি সেটা কখন বললাম, আসলে সারা দিন অনেক ধকল গেছেতো এখন একটু রেস্ট নিই। সকালে তোমার সাথে দেখা করবো।
__না ওসব হবে না,তুমি এখন আমার সাথে কথা বলবে।
__দেখো বেলকুনি খুব মসা, আমাকে খেয়ে ফেলছে। আর ফোনেও চার্জ শেষ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
তৌসিফের কথা শুনে তোয়া ফিক করে হেসে ফেললো। তৌসিফ কিছুটা লজ্বা পেয়ে অরিনকে কিছু বলতে যাবে অমনি ফোটা বন্ধ হয়ে গেলো। যাক বাবা একটু রেস্ট নেওয়া যাবে এখন। কাল সামনা সামনি বলে সবটা বোঝানো যাবে অরিনকে।
তারপর বেলকুনি থেকে তৌসিফকে রুমে আসতে দেখে তোয়া উঠে দাড়ালো।
__কি ব্যাপার আপনি এখনো ঘুমাননি?
__কিভাবে ঘুম হবে শুনি, আপনাদের রাশ লিলা শুনে কি কারো ঘুম আসে?
তৌসিফ কিছুটা অসস্তি বোধ করে বলে।
__সরি,যান এখন আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।
__এতোক্ষন তো gf এর অনেক রাগ ভাঙ্গালেন, এখন একটু বউ এর সেবা করুন।
তৌসিফ অবাক হয়ে বললো
__মানে?
তৌসিফের অবাক হওয়া দেখে তোয়া হেসে ফেললো।
__আরে অপনি দেখছি ভয় পেয়ে গেলেন।
__না মানে আপনি কি বলছেন ঠিক বুঝতে পারছিনা।
__এতোক্ষন বসে আপনাদের মান অভিমান শুনতে শুনতে আমার পানি পিপাসা পাইছে। এখন আপনি আমাকে পানি এনে দিন।
__আপনার পিপাসা পাইছে আপনি নিজে এনে খান। আমার ঘুম পেয়েছে আমি ঘুমাবো।
__কি বললেন আপনি?
__যা শুনলেন তাই।
বলেই তৌসিফ সোফায় সুয়ে পরলো।
__এতো রাতে কোথায় পানি থাকে আমি জানবো কি ভাবে?
__আমি জানি না।
__আমি যদি পানির জন্য মরে যায় না তাহলে কিন্তুু আপনার আর অরিন কে বিয়ে করা হবে না হু।
__উফফ,,, আপনার মুখে ভালো কিছু আসে না।
__কি করবো আপনি তো পানি এনে দিচ্ছেন না।
তারপর তৌসিফ ফ্রিজ থেকে পানির বোতল এনে দিলো। তোয়া পানি পান করে আচমকা তৌসিফকে প্রশ্ন করে বসলো।
__আপনি অরিনকে খুব ভালোবাসেন তাই না?
তোয়ার কথা শুনে তৌসিফ তোয়ার দিকে তাকালো তারপর মাথা নিচু করে জবাব দিলো।
__হুম নিজের থেকে বেশি।
__আপনার বাবা কি সেটা যানে?
__হুম জানে, বাবা অরিনকে মেনে নেইনি।
__কেনো?
তৌসিফ অবাক হয়ে তোয়ার দিকে তাকালো। তোয়া বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো।
__বউ হিসেবে জানতে চাইছি না। আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। কথা দিচ্ছি আপনার পব্লেম সলভ করতে হেল্প করবো।
তোয়া কথা শুনে তৌসিফ ভাবলো এই সম্যসার সমাধান তোয়াই করতে পারবে। ও নিজে থেকে চলে গেলে আর কিছুই করা লাগবেনা আমার। এই ভেবে তৌসিফ সব ঘটনা তোয়াকে বললো।
...চলবে...
____লুকানো ভালোবাসা____
___জান্নাতুল বাকিয়া তোয়া___
দুই পর্ব
তারপর তৌসিফ তোয়াকে অরিনের সম্পর্কে বললো।
__ অরিনকে আমি কলেজ লাইফ থেকেই ভালোবাসি। অনেক বার প্রপোজও করেছিলাম। কিন্তুু অরিন বারবারই আমাকে রিজেক্ট করেছিলো। তবুও ওর প্রতাক্ষান নিয়েই ওকে ভালোবেসেছি। তারপর একদিন শুনলাম অরিনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কথাটা শুনে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না, মাথায় কোনো কাজ করছিলো না। অরিনের সাথে অনেক ভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম কিন্তুু সেটা পারিনি। তারপর কোনো এক ধনীর সাথে ওর বিয়ে হয়ে যায়। যে আমাকে কখনো ভালোই বাসেনি তাকে ভেবেই কষ্ট পেতে থাকলাম। তারপর থেকেই একাকিত্ব আর সিগারেট আমাকে গ্রাস করে নেয়। এভাবেই অগোছালো দিন গুলো কাটছিলো আমার।তারপর হঠাৎ একদিন রাস্তায় অরিনের সাথে দেখা হয়। অরিন তার মায়ের সাথে রিক্সা থেকে নামছিলো। অরিনকে দেখেই বুকের পাশের পুরনো ব্যাথাটা চিনচিন করে উঠলো। তারপর কোনো কিছু না ভেবেই অরিনের সামনে গেলাম। অরিন আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। সেটা তার বড় বড় চোখ দেখেই বুঝতে পারলাম। আমিই আগে কথা বললাম।
__কেমন আছো অরিন?
__ভালো আছি, আর তুমি?
__ভালো?
সে দিন অরিনের মায়ের থেকে জানতে পারি দুমাস একটা রোড এক্সিডেন্টে অরিনের বর মারা গেছে। তাই সে এখন ওর মায়ের কাছেই থাকে। তারপর থেকে অরিনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়। নতুন করে আবার ওকে ভালোবাসতে শুরু করি। এরপর আবার একদিন অরিনকে প্রপোজ করে ফেললাম। তবে এবার আর অরিন আমাকে রিজেক্ট না করে রাজি হয়ে গেলো। অরিনের কথা মাকে বলেছিলাম। মা আবার বাবাকে বলেছিলো। বাবা সবটা শুনার পর অরিনকে আমার সাথে বিয়ে দিতে কিছুতেই রাজি না। তাই তো বাবা কারোকে কিছু না জানিয়ে আপনার সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দিলো। কিন্তুু আমি অরিনকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। এখন একমাত্র আপনিই পারেন এই সম্যসার সমাধান করতে।
কথা গুলো শেষ করে করুন দৃষ্টিতে তোয়ার দিকে তাকালো তৌসিফ।
তোয়া সবটা শুনে মাথা নারিয়ে বললো।
__হুম, সবটা বুঝতে পেরেছি!
__কি বুঝলেন?
__আপনি একটা বোকারাম!
__কি বললেন আপনি?😡
__আপনি কানেও কালা নাকি?
__এই যে মিস কথা ঠিক করে বলবেন!😡
__মিস না বলেন মিসেস।😉
__কিসেস মিসেস যাই হোন আমার তাতে কিছু এসে যায় না। আপনি কেন আমাকে বোকারাম বললেন তাই বলুন?😠
__আপনি তো একটা আছতো বোকারামই!
__কি বলতে চাইছেন আপনি??
__বোকারাম বলেই তো কিছুই বুঝতে পারছেন না।
__মানেটা কি??😠
__সময় হলেই জানতে পারবেন কেন আপনার বাবা অরিনকে আপনার জন্য ঠিক মনে করেননি।
তোয়ার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না তৌসিফ। তারপর তৌসিফ বললো।
__এখন আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে হেল্প করুন।
__কথা যখন দিয়েছি কথা তো রাখতেই হবে। আপনি কিছু ভাববেন না যা করার আমি করবো।
__কি করবেন?
__আপনার বাবা যাতে অরিনকে আপনার বউ হিসেবে মেনে নেই সেই ব্যবস্তাই করবো।
তোয়ার কথা শুনে তৌসিফের কৌতুহল বেড়ে গেলো। এক ধোয়াসা কৌতুহল নিয়ে তোয়াকে সে জিঙ্গেস করলো।
__আপনি কিভাবে বাবাকে রাজি করাবেন?
__শুধু রাজি হবেনা! বাবা নিজে থেকেই অরিনের সাথে আপনার বিয়ে দিতে চাইবে।
__তাতো বুঝলাম, কিন্তুু এই কঠিন কাজটা কি ভাবে সম্ভব হবে বলবেন একটু?
__বলেছি তো তার ব্যবস্তা আমি করবো।
তোয়ার এলো পাথারি কথায় তৌসিফ বিরক্ত হয়ে বললো।
__ ধুরর, আপনার কথার কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
__ এই জন্যই তো আপনাকে বোকারাম বললামহিহি।
__.....(চুপ)😡
__আচ্ছা তাহলে শুনুন। আমাদের সমাজের মানুষ ডিভোর্সের বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে দেখেনা। যখন কোনো মেয়ে ডিভোর্স পাই তখন সমাজের চোখে সে হেয়ো হয়ে যায়। তখন সবাই তার দোষটাই দেখতে পাই। আবার বিয়ে দিতে গেলেও অনেক প্রশ্নের স্মূখিন হতে হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই হয়। so আপনি যখন ডিভোর্সের পর এমন পরিস্তিতে পরবেন তখন আপনার বাবা নিজে থেকেই অরিনের সাথে বিয়ের কথা বলবে। কি এবার বুঝলেন তো।
তোয়ার কথা শুনে তৌসিফ তো পুরাই থ হয়ে গেলো। মেয়েটাকে যেমনটা ভেবেছিলাম মেয়েটা তো তেমন না। সত্যি অনেক বুদ্ধিমতি।
__কি মিস্টার কিছু বলছেন না যে! আইডিয়া টা কেমন হলো?
__দুরদান্ত,amazing!
তারপর দুজনেই অনেকটা ফ্রেন্ডলি হয়ে গেলো। তৌসিফ তোয়াকে জিঙ্গেসা করলো।
__আচ্ছা আমরা কি ভালো ফ্রেন্ড হতে পারি?
__আমার কোনো ছেলে ফ্রেন্ড নাই। তবে আপনি হতে চাইলে হতে পারেন।
__তাই,,, আপনার কোনো ছেলে ফ্রেন্ড নাই?
__ না,,, হওয়ার টাইম পাইনি হিহি
__ মানে? ঠিক বুঝলাম না!
__ মানে বন্ধুত্ব করার ইচ্ছে ছিলো না তাই সময় ও পাইনি।
__ও, কেন ইচ্ছে ছিলো না জানতে পারি?
তৌসিফের কথায় তোয়া ভ্রু কুচকে তৌসিফের দিকে তাকালো। তৌসিফ কিছুটা ভয় পেয়ে বললো।
__ না মানে ফ্রেন্ডলি জিঙ্গাসা করলাম, আপনি বলতে না চাইলে থাক!
__আপনি তো দেখছি আসলেই বোকারামের সর্দার।
__ আমি আবার কি করলাম?😱
__ আপনি এখনো আমাকে আপনি আপনি করবেন?
__আপনি ও তো বলছেন, তার বেলা কিছু না?
__আজব তো! আপনি আমার সিনিয়র আর সিনিয়রদের সাথে আমি আপনি করেই কথা বলি।
__ যে যেমন ভাবে কথা বলে আমি ও তার সাথে সেই ভাবেই কথা বলি।
__ মানে??
__আপনি যদি আপনি বলেন তাহলে আমিও আপনি বলবো ব্যস।
তোয়া কিছুক্ষন ভেবে বললো
__ ok, দুজনই তুমি বলবো!
__ok
__আচ্ছা রাত তো শেষ হয়ে আসলো, একবারে নামাজ পড়ে ঘুমান।
__ নামাজ?
__ হুম! কেন ?
__ না কিছু না, আচ্ছা।
তারপর নামাজ পড়ে তৌসিফ ঘুমিতে গেলো। আর তোয়া তার মায়ের কোরআন টা তেলওয়াত করতে লাগলো। এই বাড়িতে আসার সময় তোয়া কোরআন শরিফ টা সঙ্গে নিয়ে এসেছে। তোয়া এক মনে কোরআন শরিফ তেলওয়াত করতে লাগলো। এদিকে তৌসিফ মুগ্ধ হয়ে কোরআন তেলওয়াত শুনতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো মেয়েটা আসলেই অনেক গুনি। এতো ভালো কোরআন তেলওয়াত সে ছোটো বেলাই মায়ের পাশে বসে বসে শুনতো। তৌসিফ কোরআন তেলওয়াত শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে ঘুম ভাঙ্গলো তোয়ার ডাকে। তৌসিফ ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে তোয়া চা নিয়ে দারিয়ে আছে।
__ এই যে মিস্টার, উঠুন অনেক বেলা হয়ে গেছে
তৌসিফ না উঠে তোয়ার দিকে ভুত্নি দেখার মতো তাকিয়ে রইলো। কাল তো ভালো করে তোয়াকে সে দেখেই নি। এতোটা মায়াবি চেহারা মেয়েটার মুখে তৌসিফ এর আগে খেয়ালি করেনি। আর ভাবতে লাগলো শুনেছি শাড়িতেই নারী আর তার কেশেই নারীর বেশ।সেই কথাটার সত্যতা আজকে তোয়ার মধ্যেই পুর্ণতা পেয়েছে। তৌসিফকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তোয়া কিছুটা অসস্তি বোধ করলো। তাই সে একটু কেশে বলে উঠলো।
__ কি হলো! তখন থেকে কি দেখছেন?
__ আমার বউ কে!
কথাটা তৌসিফ বেখেয়ালে বলে ফেললো। এমন কথা শুনার জন্য তোয়া মটেও প্রস্তুুত ছিলো না। তাই সে কিছুটা লজ্জা পেলো। সেটা দেখে তৌসিফ আরও অবাক হয়ে তোয়াকে দেখতে লাগলো। মেয়েরা আসলেই বহুরূপি, এদের মধ্যের বৈচিত্রতা আলাদা আলাদা ভালো লাগা সৃষ্টি করে। রাগ, অভিমান, হাসি, কান্না, লজ্জা সবটার মধ্যে আলাদা আলাদা সৌন্দর্য বিরাজ করে। তোয়াকে অসস্তি বোধ করতে দেখে তৌসিফ কথাটা ঘুরিয়ে বললো।
__ আসলে এখন তো আমাদের দুজকে বর বউ এর অভিনয়টা করতে হবে। নয়লে বাবা জানতে পারলে তো আবার কি হবে বুঝতেই পারছো।
__হুম, এখন চা টা খেয়ে রাখেনি হয়ে নিচে আসুন, সবাই ওয়েট করছে।
__ আমি যাবো না।
__ মানেটা কি! যাবেননা কেন?
__ আমার বউ কথা দিয়ে কথা রাখেনি,, তাই!😏
__ মানে! আমি আবার কোন কথা রাখলাম না?
__ রাতে কি বলেছিলে?
__কি বলেছিলাম!
__মনে করো?
__ সত্যি মনে পরছেনা তো!😨
__ আমারা না ফ্রেন্ড?
__ হুম, তো!
__ তাহলে আপনি আপনি করছো কেন?😏
__ ও আচ্ছা, এই ব্যাপার। 😀
__ হুম।
__ ok আর হবে না, এখন তো চলো।
__ হুম তুমি ওয়েট করো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
তারপর দুজনে এক সাথে নিচে গেলো।
...চলবে...
____লুকানো ভালোবাসা____
___জান্নাতুল বাকিয়া তোয়া___
তিন পর্ব
নিচে সবাই তোয়া আর তৌসিফের জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা আসতেই তাজিম উদ্দিন তোয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো।
__ তোয়া মা তুমিও আমাদের সাথে বসো, এক সাথে সবাই মিলে খাই।
__ বাবা আপনারা আগে খাওয়া শেষ করুন, আমি মায়ের সাথে খেয়ে নিবো।
তোয়া কথা শুনে তৌসিফের মা তোয়া মাথায় হাত দিয়ে বললো।
__ বাবা ডাকছে যা, পরে না হয় আবার আমার সাথে বসিস।
তৌসিফের মায়ের কথা শুনে চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না।
__ এই পাগলী কাদছিস কেন?
__....(চুপ)
__ মায়ের কথা মনে পরছে?
তোয়া অবাক হয়ে তৌসিফের মায়ের দিকে তাকালো, উনি জানলেন কিভাবে যে আমি মায়ের কথা ভাবছি। তাহলে কি মায়েরা এমনই হয়।
__ শুন মা আমার কোনো মেয়ে নেই, এখন থেকে তুই আমার মেয়ে! শ্বাশুড়ি ভেবে দুরে সরিয়ে রাখিস না। তোর যে কোনো কথা আমাকে বলতে পারিস কেমন? তোয়া শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো।
__ আর একটা কথা এখন থেকে আর মায়ের কথা ভেবে মন খারাপ করবি না, আমি আছি না!
__ যখন ইচ্ছে হয় গিয়ে দেখা করে আসলেই তো হয়, এতে মন খারাপ করার কি আছে!
তৌসিফের কথাই উপস্থিত সবাই কিছুটা অবাক হলো, বিশেষ করে তোয়া বেশি অবাক হয়েছে। তাজিম উদ্দিন তৌসিফের দিকে এমন ভাবে দৃষ্টি দিলেন। মনে হচ্ছে আমিই একমাত্র অপরাধী যে কিনা অপরাধ জগতের জনক। কিছু বুঝতে না পেরে মায়ের দিকে তাকাতেই মা বললো।
__ তোয়ার যখন ৮ বছর তখন ওর মা সবাই কে ছেড়ে চলে গেছে।
তৌসিফ অবাক হয়ে জিঙ্গেস।
__ কোথায় গেছে উনি?
এইটা যেন আরও বড় অপরাধ হয়ে গেলো। তাই মা সরাসরিই বলে ফেললো।
__ ওর মা মারা গেছে।
কথাটা শুনে তৌসিফের বাক রুদ্ধ হয়ে গেলো। এখন কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। আসলে তৌসিফ জানতো না যে তোয়ার মা এই পৃথিবীতে নেই। আর জানবেই বা কি ভাবে, তোয়ার সম্পর্কে তো সে কিছুই জানে না। তাই সে একটু অপরাধ বোধ করলো।
__ সরি তোয়া, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি।
__ সরি বলছো কেন? তুমি তো জানতে না তাই জিঙ্গাসা করলা।
তারপর খাওয়া শেষ করে তৌসিফ অরিনের সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো। তখনই তৌসিফের মা এসে বললো।
__ তই কোথাও বের হচ্ছিস?
__ হ্যাঁ মা, কেন কোনো দরকার?
__ হ্যাঁ, তুই যাচ্ছিস যখন তোয়াকেও সঙ্গে নিয়ে যা, আর বাসায় ফেরার সময় তোর নানির জন্য একটা শাড়ি কিনে আনিস।
__ মা তোমার মাথা খারাপ, আমি কখনো এসব শাড়ি টাড়ি কিনেছি?
__ জানি তুই একটা অপদার্থ, তাই তোয়াকে পাঠাচ্ছি, ও পছন্দ করে আনবে।
__কিন্তুু মা, আমার যে একটু কাজ আছে!
__ সব কাজ, এখন যা বললাম তাই কর।
তৌসিফ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। ওদিকে অরিন অপেক্ষা করছে। তোয়াকে নিয়ে টেনশনের কোনো কারন নাই, কারন বিষয়টা ওর জানা। টেনশনটা হচ্ছে অরিনকে নিয়ে, এখন যদি তোয়া সাথে যায় অরিন বিষয়টা কিভাবে নেবে। সেটা ভেবেই তৌসিফের চিন্তা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে মা তোয়াকে নিয়ে হাজির। বাবা এসে বললো
__ সাবধানে যা আর তারাতারি বাসায় ফিরিস।
তৌসিফ শুধ হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে বললো।
__ আচ্ছা মা এখন যায়।
__ যায় না বল আসি!
সে তো একই হলো,ধুর কি সব নিয়াম কথাটা মনে মনে পাঠ করলো তৌসিফ। তোয়া বাবা মাকে বলে দুজন বেরিয়ে পরলো। তৌসিফ ভাবলো অরিনকে একটা ফোন করে দেখি ও কোথায় আছে। যেই ভাবনা সেই কাজ।
__ অরিন তুমি কোথায়?
__ আমি কফি শপে আছি।
__ আচ্ছা তুমি ওখানেই থাকো।
তৌসিফের কথা শুনে তোয়া বুঝতে পারলো তৌসিফ অরিনের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। আর এই জন্যই মায়ের কাছে আপত্বি করছিলো। একবার যদি উনি আমাকে বলতো যে ও আজ অরিনের সাথে দেখা করবে। তাহলে মাকে কিছু একটা বলে না হয় আর আসতাম না। নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধি মনে হচ্ছে। তৌসিফের কথায় তোয়া বাস্তবে ফিরলো।
__ কি হলো!
__ হ্যাঁ বলুন?
__ কি হয়েছে তোমার?
__ কই কিছু না তো।
__ কখন থেকে পৌঁছে গেছি, গাড়িতে থেকে নামতে বলছি, তুমি তো কোনো কথায় বলছো না! কি ভাবছো?
__ না মানে আসলে,,,,
__ ok আর মানে বলতে হবে না, এখন নামো।
__ কেন, কোথায় যাবো?
__ কফি শপের ভেতরে!
__ আপনি যান, আমি গাড়িতে ওয়েট করতেছি।
__ তোমাকে গাড়িতে একা রেখে আমি ভেতরে যাবো, এতোটা অপদার্থ ভাবো আমাকে?
__ না আমি মিন করে কিছু বলিনি, আসলে এসব বড় বড় জায়গায় যেতে আমি অভস্থ্য নই।
__ না আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।
__ কিন্তুু অরিন আপু আমাকে দেখলে যদি কিছু মনে করে!
__ ও কিছু মনে করবে না, আমি বলছি তো,ওকে সবটা আমি বলবো। আসা করি সবাই এক সাথে বসে বিষয়টা বোঝালে ও হয়তো আরও ক্লেয়ারলি বুঝতে পারবে।
__ কিন্তুু....
__ আর কোনো কিন্তুু নই!
তারপর তোয়া আর তৌসিফ ভেতরে গেলো। তৌসিফকে দেখে অরিন বসা থেকে উঠে দাড়ালো।
__ এতো লেট করলে কেন?
__ আসলে মা তোয়াকে নিয়ে শপিং এ আসতে বললো, তাই ওকে নিয়ে আসতে একটু লেট হয়ে গেলো।
অরিন এতোক্ষনে তোয়াকে খেয়াল করলো। সবাইকে অবাক করে দিয়ে অরিন জোরে করে বলে উঠলো।
__ এই তুমি, এই মেয়েটাকে এখানে এনেছো কেন?
উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে।
__ অরিন শোনো, তোমাকে আমি সবটা বুঝিয়ে বলছি।
__ কিসের বোঝা বুঝি, রাখো তোমার বোঝানো, আর এই মেয়ে তোমার লজ্জা করে না সবটা যেনেও তৌসিফের সাথে শপিং করতে এসেছো।
__অরিন চুপ করো, দেখো সবাই কিন্তুু দেখছে।
__ তৌসিফের কোনো কথায় কান না দিয়ে অরিন তোয়াকে অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিলো। তোয়ার চোখের নোনা পানি আর বেশিক্ষন আটকিয়ে রাখতে পারলো না। তোয়া শুধু একবার তৌসিফের দিকে তাকিয়ে ওখন থেকে চলে আসলো গাড়িতে।
__ এটা তুমি কি করলে?
__ যা করেছি একদম ঠিক করেছি, এসব মেয়েরা শুধু অন্যের ভালোবাসা কেড়ে নিতে পারে।
__ তোমার ধারনা একদম ভুল, তোয়া ওরকম মেয়ে না, ও অনেক ভালো।
__ আরে বাহ্! এক রাতেই তুমি যেনে গেলে ও কেমন মেয়ে!
__ হয়তো সময়টা কম ছিলো, তবে এই সময়ে এইটুকু যেনেছি ও অন্যদের থেকে আলাদা। না হলে রাতে সবটা জানার পরও এখন ও বাবাকে কিছু বলেনি উলটো আমার আর তোমার বিয়েটা যাতে হয় সেই ব্যাপস্থা করে দেবে বলে কথা দিয়েছে।
__ তোমাকে বললো আর তুমি ওর কথা বিশ্বাস করে নিলে? দেখো এটা ওর কোনো চালাকি।
__ অরিন এবার কিন্তুু তুমি বেশি বেশি বলছো, প্লিজ তোমার এসব কথা বন্ধ করো। ও এখানে আসতে চাইনি আমিই ওকে এনেছি।
__ তৌসিফ তুমি এক রাতেই এতোটা চেন্জ হয়ে গেলে,,, এখন তুমি ওই মেয়েটা দায় নিজে নিচ্ছো? how this posibal!
__ দেখো অরিন তুমি সেই তখন থেকে উলটা পালটা কথা বলেই চলেছো, আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগই দিচ্ছো না।
অরিন কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনই তৌসিফের ফোনটা বেজে উঠলো।
__ হ্যালো
__ আর কতোক্ষন লাগবে? তোয়াকে নিয়ে তারাতারি বাসায় আয়।
__ আচ্ছা আসছি।
ফোনটা রেখে অরিনকে বললো __দেখো, অরিন তোমাকে আমার বিষয়টা একটু বুঝার চেষ্টা করতে হবে।
__ আমি কিছু বুঝতে চাইনা, ওই মেয়েটাকে কবে বাড়ি থেকে বেড় করছো তাই বলো?
__ সবে কই দিন হলো বিয়ে হয়েছে এখনই তো ডিভোর্স দেওয়া সম্ভব নয়, কিছু আইন কানুন তো আছেই।
আরও কিছুক্ষন কথা বলে অরিনের থেকে বিদায় নিয়ে তৌসিফ গাড়িতে এসে দেখে তোয়া গাড়িতে বসে বাইরের দিকে উদাসীন হয়ে কি যেন দেখছে। তৌসিফের গাড়ির স্টার্ডের শব্দে চমকে উঠে নিজেকে সামলে নিলো। তারপর তারা দুজনে নানির জন্য শাড়ী নিয়ে বাসাতে ফিরলো। এর মধ্যে কেউ কারো সাথে প্রোয়োজন ছাড়া কোনো কথা বলেনি। বিয়ে উপলক্ষে আজ বাড়িতে কিছু নিকট আত্নিয়রা এসেছে। সবার সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছে তোয়া। তৌসিফ তোয়াকে যতো দেখছে ততোই মুগদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা কি এমন অলৌকিক ক্ষমতা আছে যে এমন ঘটনার ঘটার পরও কেমন সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে। নাকি অন্য কোনো কাহিনী আছে যেটা হয়তো আমরা কেউই জানি না। ধুর কি সব আজে বাজে ভাবছি। তবে আজকের ঘটনার জন্য নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। সময় বুঝে তোয়াকে সরি বলতে হবে। এদিকে তোয়া ভাবছে, ছোট থেকে আমার জীবনে যত কষ্ট পেয়েছি, তার তুলনায় আজকের কষ্টটা তো সুমুদ্রের কাছে একটি ছোট জলাশয়ের মতো। তবে আজ কেন এতোটা কষ্ট পাচ্ছি। আজ খুব তোয়ার মায়ের কথা মনে পরছে। মায়ের কথা ভাতেই তৌসিফের মায়ের কথা মনে পরে গেলো। মায়েরা বুঝি এমনই সন্তানকে স্নেহ করে। তোয়াও মনে মনে এমন একটি পরিবারের স্বপ্ন দেখতো। যেখানে সে তার ছোট ছোট ভালোবাসা গুলো অনেক যত্ন করে আগলে রাখবে। যখন তোয়া ছোট ছিল তখন রকেয়া খালা তাকে রুপকথার গল্প শুনাতো। গল্প গুলো এমন ছিলো যে রাজকুমারিকে রাক্ষসরা তাদের রাজ্যে আটকে রাখতো।অনেক কষ্ট থাকতো রাজকুমারি, একদিন কোন এক রাজকুমার এসে রাজকুমারিকে রাক্ষপুরি থেকে অনেক দুরে নিয়ে যেতো। যেখানে দুষ্টু রাক্ষের ছায়াও থাকতো না। সেই থেকে সেই রাজকুমারের স্বপ্ন দেখতাম। কখনো প্রেম করিনি এই ভেবে রাজকুমার আসবে তার সোনার কাঠি নিয়ে এসে সব কষ্ট মুছে দেবে। আমার জীবনে সেই রাজকুমার আসলো ঠিকিই তবে সেটা ক্ষণিকের জন্য। মনের মতোই পেয়েছি সবটা,পরিবার, মা, বাবা শুধু রাজকুমার টাই সেই রাজকুমার না যাকে চেয়েছিলাম। ভাবতে ভাবতে চোখ জোড়া অনবরত ঝাপসা হয়ে উঠছে। হঠাৎ কিছু একটার শব্দে তোয়া চমকে পেছন ফিরে দেখে তৌসিফ। তোয়া তারাতারি চোখটা মুছে নিলো। তবে সেটা তৌসিফের চোখে পরে গেলো। তৌসিফ ঠিকই বুঝতে পারলো তোয়া কান্না করছিলো। সেটা তৌসিফ তোয়াকে বুঝতে না দিয়ে বললো।
__ একা একা কি করছো?
__ কিছু না, আপনি কখন এসেছেন?
__ এই তো এই মাত্র।
তৌসিফ অনেক আগেই রুমে এসেছে তোয়া সেটা খেয়াল করিনি তাই তৌসিফ আর কিছু বললো না।
__ সরি তোয়া, আজকের ঘটনার জন্য।
__ সরি বলার কিছুই হয়নি, অরিন আপু জায়গায় আমি হলেও হইতো এটাই করতাম।
__ আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো। আজকের ঘটনার জন্য আমিই দায়ি।
__ প্লিজ নিজেকে অপরাধি ভেবে শুধু শুধু কষ্ট পাবেন না।
__ তুমি আগে বলো আমাকে ক্ষমা করেছো কি না?
__ আপনি বারবার কেন নিজেকে দোষ দিচ্ছেন, আচ্ছা ঠিক আছে।
__ তুমি মন থেকে ক্ষমা করোনি।
__ সত্যি আমি মন থেকেই বলছি।
__ তাহলে আপনি আপনি করছো কেন, নিজের বরকে কেউ আপনি বলে!
তৌসিফের কথা শুনে তোয়া হেসে ফেললো। সারাদিন পর তোয়াকে হাসতে দেখে তৌসিফের মনটাও কিছু টা হালকা হলো।
__ আচ্ছা তোয়া, তোমাকে একটা কথা জিঙ্গেস করবো?
__ হুম, কি কথা?
__ তুমি কাউকে কখনো ভালোবাসোনি?
তৌসিফের কথা শুনে তোয়া অবাক হয়ে তৌসিফের দিকে কিছু ক্ষন তাকিয়ে রইলো। তারপর মুচকি হেসে বললো,,,,,
...চলবে...
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ