*****জীবনের সাথে সংগ্রাম *****
(লেখক রাহিম মিয়া)
'
'
'
'
'
দুপুরে কড়া রোদের মাঝ দিয়ে আপন গতিতে হেটে চলছি আমি আর উদ্দেশ একটা ই ছাত্রী অহনার বাসাতে গিয়ে তাকে পড়ানো। মেয়েটা ২য় শ্রেনীতে পড়ে, খুব পাকনা পাকনা কথা বলে। প্রথম দিন ই অহনার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম আমি, এত পাকনা পাকনা কেউ কথা বলতে পারে জানা ই ছিল না। এইসব ভাবতে ভাবতে অহনার বাসাতে চলে এসেছি , ভিতরে গিয়ে দেখি সে পড়ার টেবিলে বসে আছে আর আমিও চেয়ার টান দিয়ে বসে পড়লাম। তখনি অহনা বলতে লাগলো
>>স্যার জানেন আম্মু না আজ মার্কেটে গিয়ে অনেক শপিং করেছে আর আমার জন্য অনেক কিছু এনেছে। স্যার চকলেটগুলো আপনার জন্য রেখে দিন।
>>না মামনি আমি চকলেট খাব না, তুমি ই চকলেট খাও আর গতকাল যে হাতের লেখা বাড়ির কাজ দিয়েছি, সেটা লিখেছ নি?
>>হ্যাঁ স্যার লিখেছি এই নেন খাতা।
>>খুব ভালো তো সুন্দর করে লিখছ আর আমি যে কবিতা বলেছিলাম আমাদের ছোট্ট নদী এটা মুখস্ত করতে, সেটার কী হলো?
>>হ্যাঁ স্যার আমাদের ছোট্ট নদী কবিতাটা মুখস্ত করেছি।
তারপর অহনার থেকে কবিতা শুনে আর অনেক কিছু শিখিয়ে আর বাড়ির কাজ দিয়ে, এক ঘন্টার পর তাদের বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি, আমি দুইমাসের বেতন পাই কিন্তু তা দিবার কোনো খবর ই নেই আর মার্কেটে গিয়ে শপিং করে। নিজের মুখে লজ্জায় টাকা কথা বলতে পারি না বলে আজ এই অবস্থা।
অ sorry আপনাদেরকে আমার পরিচয় দেওয়া হয় নি। আমি রাহিম, এইবার অর্নাসে প্রথম বর্ষে পড়ছি আর ছাত্র হিসাবে অনেক ভালো সবসময় জিপিএ 5 পাই কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলে জিপিএ 5 পেলে বা কী সেটা দিয়ে তো আর ভাত খাওয়ার চাল কিনা যাবে না। বাবা সে ছোট্টকাল থাকতে মারা গিয়েছে আর আমার মা কাপড় সেলাই করে আমাদেরকে বড় করছে, মানে আমার একটা ছোট্ট বোনও আছে। এইবার বোনটা SSC পরীক্ষা দিবে আর ফর্ম ফিলাপের জন্য অনেক টাকা লাগবে। ছোট্টবেলা থেকে মা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে বড় করেছে। তাই যখন ই বুঝার হয়েছি তখন থেকে টিউশনি করা শুরু করে দিয়েছি যাতে মার কষ্টটা একটু কমাতে পারি। এখন মোট ১০টা টিউশনি করি কারণ টাকা অনেক প্রয়োজন। অনেকদিন ধরে অসুস্থ মা তাই তিনি আগের মত কাজ করতে পারেন না তাই বেশিভাগ খরচ আমার এখান থেকে দিয়ে থাকি।পকেটে যখন টাকা থাকে না তখন মানুষ চিনা যায়। ভাগ্যের জোরে একটা gfও কপালে লেখা হয়ে গেছে কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলেকে প্রেম করলে তো আর চলবে না কিন্তু কিছু করার নেই মেয়েটাকে আমি ছাড়তে পারি নি। অ sorry মেয়েটা নাম মিতু। মিতুর মাঝে জানে কিসে মায়া যার জন্য তাকে ছাড়তে পারি না। মিতুকে আমি যত অবহেলা করি সে তত কাছে আসতে চাই আর তার বাবা অনেক ধনী তাই মাঝে মাঝে ভয় হয়, আমাদের সম্পর্ক কখনো মেনে নিবে মিতুর বাবা এই নিয়ে।
দুপুরে বাড়িত গিয়ে খেয়ে আবারও বের হয়ে গেলাম একটা ছাত্রকে পড়ানোর জন্য তখনি মিতুর কল আসে আর আমি কলটা রিসিভ করলাম
>>হ্যাঁ মিতু বলো কল দিয়েছ কেন শুনি?
>> তুমি এখন কোথায় আছ বলো তো রাহিম ?
>>হুম আমি এখন একটা ছাত্রকে পড়াতে যাচ্ছি রাস্তাতে আছি ।
>>বিকাল ৪টা সময় দেখা করতে পারবে পার্কে?
>>৪টা সময় আমার একটা টিউশনি আছে আর হুম ৫টা সময়ও আছে তবে সন্ধার আগে মানে ৬টা দিকে দেখা করতে পারি যদি তুমি চাও।
>>আচ্ছা ৬টা দিকে ই আমি তোমার জন্য পার্কে অপেক্ষা করবো আর তোমার সাথে অনেক কথা আছে। হুম এখন কল রাখি আই লাভ ইউ রাহিম
>>আই লাভ ইউ টু পাগলী একটা (বলার সাথে সাথে টু টু করে কলটা কেটে গেল)
তারপর আমি ফোনটা পকেটে রেখে চলতে লাগলাম হেটে কারণ রিক্সা দিয়ে গেলে অনেক টাকা লাগবে আর আমার কাছে এক একটা টাকা স্বর্ণের মতো দামী যা অপচয় করা চলবে না। তাই তো হেটে ই টিউশনি করি।
৪টা আর ৫টা সময়ের টিউশনি করে চলতে লাগলাম পার্কে উদ্দেশে, জানি মিতু অনেক আগে ই গিয়ে বসে আছে। হাত ঘড়ি দিকে তাকিয়ে দেখি ৬টা ১০বাজে তাই হাঁটার স্পিড বাড়িয়ে দিলাম, আমাকে যে তাড়াতাড়ি মিতুর কাছে যেতে হবে।
গিয়ে দেখি মহারানি বসে আছে শাড়ি পড়ে আর আমি গিয়ে মিতুর পিছুনে দাঁড়িয়ে বলতাম লাগলাম
>>কারো জন্য কী অপেক্ষা করছেন মেডাম।
>>তা সাহেবের কী এতক্ষনে সময় হলো আসার, ঘড়ি দেখছ কয়টা বাজে ৬টা ২০মিনিট আর ৩০ মিনিট পরে ই সন্ধা হয়ে যাবে। যাও তোমার সাথে কথা নাই।
>>আমার মহারানিটা মনে হয় রাগ করেছে, দেখি তো তোমাকে ভালো করে রাগলে তোমাকে কেমন লাগে(আমি এই বলে মিতুকে ভালোভাবে দেখতে লাগলাম আর হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম কারণ শাড়িতে মিতুকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে যেন ডানা কাটা পরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে)
>>কী দেখছ এমন করে রাহিম(মিতু লজ্জা সুরে)
>>আমার মহারানিকে দেখছি, আজ তোমাকে না ডানা কাটা পরীর মত লাগছে মিতু।
>>থাক এত দেখতে হবে না, বিয়ে পর ভালো করে না হয় দেখবে। নেও এটা তোমার জন্য।
>>শপিং ব্যাগে কী শুনি তো?
>>হুম খুলে দেখ কী আছে ভিতরে।
>>এই কী এটা তো একটা শার্ট, তুমি শার্ট কিনতে গেলে কেন শুনি?
>>তোমাকে প্রায় ই দেখি রাহিম সব সময় ২টা শার্ট শুধু পড় তাই আমি এটা আজ উপহার দিলাম বুঝেছ।
>>হুম বুঝলাম, বলো কী কথা তোমার বলার আছে ফোনে যে বললে?
>>হুম আব্বু আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে কিন্তু আমি বলে দিয়েছি এখন বিয়ে করবো না আর যদি জোর করে তাহলে বাড়িত থেকে চলে যাবো। আব্বুকে হয় তো ৪বা ৫বছর এই ভয়টা দেখিয়ে রাখতে পারবো, তাই তুমি তাড়াতাড়ি কিছু একটা কর রাহিম।
>>হুম অর্নাস পাশ করে নেই তারপর একটা চাকরি জোগাড় করে তোমাকে বউ করে নিব।
>>আচ্ছা যা ই করো তাড়াতাড়ি করো, এইদিকে সন্ধা হয়ে আসছে আমি এখন যায়।
>>আচ্ছা চলো তোমাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।
তারপর মিতুকে তার বাসাতে দিয়ে আবার চলে গেলাম সন্ধা ৭টার দিকে এক ছাত্রকে পড়ানোর জন্য। তো এইভাবে চলছে আমার দিনকাল। এইদিকে ছোট্ট বোনটার ফর্ম ফিলাপের দিন এগিয়ে আসছে তাই লজ্জা শরম বাদ দিয়ে যে করে হক অহনার মাকে টাকা কথা বলতে ই হবে মনস্থির করলাম।কারণ আরও টাকা প্রয়োজন , তো অহনাকে পড়াতে গিয়ে বলতে লাগলাম
>>আচ্ছা অহনা তোমার আম্মুর কী টাকার কোনো সমস্যা আছে?
>>না স্যার নেই। জানেন স্যার আব্বু না বিদেশ থেকে অনেক টাকা পাঠায় আম্মুর কাছে আর এই মাসেও পাঠিয়েছে।
(আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম এই তো সুযোগ তিন মাসের বেতন নেওয়া । যে করে হোক যেভাবে হক অনুরোধ করে টাকাটা হাতে পেতে হবে)
তারপর অহনাকে পড়িয়ে তার মাকে অনেক অনুরোধ করে টাকার কথা বলার পর তিনি টাকা দিয়ে দিলেন। বাসাতে এসে মার হাতে টাকাটা দিয়ে দিলাম ছোট্ট বোনটাকে দেওয়ার জন্য।
এইভাবে অনেকটি মাস কেটে গেলে ছোট্ট বোনও SSC তে জিপিএ 5পেল শুনে আমি যে কী খুশি হয়েছি বলার মতো নেই। কিন্তু তার চেয়ে আরও বেশি খুশি হয়েছিলাম যখন দেখলাম ছোট্ট বোনটা টিউশনি করা শুরু করে দিয়েছে পরিবারে একটু হাল ধরবে বলে, সেইদিন সুখে আমার চোখ দিয়ে প্রায় পানি এসে গেল। এইভাবে যেতে যেতে অনেকটি বছর চলে গেল আর আমি অর্নাস পাশ করে প্রায় জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলছি চাকরি জন্য। যেদিকে যায় খালি ঘুষ আর ঘুষ, ঘুষ ছাড়া কোনো চাকরি দেওয়া হয় না। চাকরি খুঁজে প্রায় হতাশা হয়ে গেলাম। তো একদিন মিতু বললো পার্কে দেখা করতে ।
পার্কে গিয়ে দেখি মিতু বসে আছে আমি কাছে গিয়ে বলতে লাগলাম
>>হ্যাঁ বলো মিতু পার্কে ডাকলে যে?
>>রাহিম আমি তো আর পারছি না আব্বুকে বুঝাতে, তুমি কিছু একটা করো।
>>আমি আর কী করবো জীবনের সাথে সংগ্রাম করছি। তুমি তো ধনী দুলালীর মেয়ে জীবনের সাথে সংগ্রাম কী তা হয় তো বুঝার ক্ষমতা নেই। কারণ যে নিম্ন মধ্যবিত্ত যে ই বুঝে আসলে জীবন কী?
>>কী বলতে চাচ্ছ তুমি?
>>কিছু না, আমি অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু ঘুষ ছাড়া কোথায় চাকরি দেয় না। তুমি আমাকে আর কয়েকটা মাস সময় দেও চাকরি একটা জোগাড় করে নিব
>>আচ্ছা কিন্তু যা করো তাড়াতাড়ি করো, না হলে আমাকে হারাতে হবে বলে দিলাম (অভিমানি সুরে বলে চলতে লাগলো মিতু)
আর আমি তার চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম। বাসাতে যেতে যেতে ভাবতে লাগলাম হায় রে জীবনের সাথে সংগ্রাম আর কত কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকবো। চাকরি খুঁজে দুইটা টিউশনি বাদ দিতে হলো। চাকরি জন্য জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলছি কিন্তু চাকরি পাচ্ছি না ঘুষ ছাড়া। তখনি হঠাৎ রাস্তাতে লক্ষ করলাম একটা লোক কী নিয়ে যেন পালাচ্ছে। আমার দেখে মনে হলো চোর তাই লোকটা ধরে কিছু ধুলাই দিলাম। তখন আরেক লোক এসে বললো বাবা তোমার জন্য আজ আমার ব্যাগ ভরা টাকা নিতে পারে নি, তোমাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দিব। আমি লোকটা দেখে বুঝলাম অনেক ধনী হবে হয় তো তাই বলে ফেললাম, ধন্যবাদ দিতে হবে না পারলে একটা চাকরি খুঁজে দেন। তিনি আমার কথা শুনে হাসতে লাগলো, পরে একটা কার্ড দিয়ে বললো সকালে এই ঠিকানা অফিসে যোগাযোগ করলে চাকরি হয়ে যাবে, তিনি বলে চলে গেল। আর আমি তো অবাক হয়ে রইলাম। পরে সকালে কার্ডে ঠিকানা গিয়ে দেখি এই লোক কম্পানির মালিক।আমার আর বুঝায় বাকি রইল না কিছু, সু্তরাং চাকরি হয়ে গেল বিনা ঘুষে, তাও মাসে বেতন ৪০হাজার টাকা শুনে যে কী খুশি লাগছিল বলার মতো নেই।
বাড়িত এসে খবর দিলাম চাকরি পেয়েছি মা আর ছোট্ট বোনটা শুনে খুব খুশি হলো, কিন্তু মিতুকে কিছু বলা হয় নি তাই কল দিয়ে বললাম পার্কে দেখা করতে সরাসরি বলবো বলে।
তাই আগে গিয়ে ই পার্কে বসে রইলাম
>>কী ব্যাপার সাহেব আজ যে আমার আগে এসে গেলেন (মিতু এই বলে পাশে বসে পড়ল)
>>হ্যাঁ আজ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে তাই।
>>কী সারপ্রাইজ আছে শুনি?
>>সারপ্রাইজ হলো এই আমার চাকরি হয়ে গেছে আর আমরা অতি শীঘ্রই বিয়ে করছি।
>>সত্যি বলছো, আমার না আজ কী খুশি লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না রাহিম(মিতু আমাকে জড়িয়ে ধরে)
>>হ্যাঁ এক সত্য, দুই সত্য, তিন সত্য, আই লাভ ইউ পাগলী একটা(আমি জোরে জড়িয়ে ধরে)
>>আই লাভ ইউ টু পাগল এখন ছাড় বলছি।
>>না ছাড়া যাবে না।
>>কী দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।(এই বলে কামড় মেরে দৌড়)
>>অ মা গো তুমি আমার বুকে কামড় মারতে পারলে, আজ তোমার একদিন কী আমার একদিন (আমিও দৌড় পিছুনে)
>>হি হি হি আমাকে ধরতে পারবে না
(সমাপ্ত)