গল্প: মায়বী
লেখক:Papon Das Raj(কলা গাছের বান্দর)
" মেয়ে তুমি সুন্দর আর চোখে তাকালে"
" তার চেয়ে বেশি সুন্দর রাগ করে তাকালে"
আজ অনেক গুলো দিন পরে ভার্সিটিতে আসলাম। একটু একটু খারাপ লাগছে কারন নিজের শখের ঘুমটাকে ঘুম পারিয়ে ভার্সিটি আসতে হলো। আর অনেক দিন পর আসছি বলতে অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম আসলাম। আমি একটু নবাব মানুষ তো তাই ঘুমকে খুব ভালবাসি। অবশ্য আমার পছন্দের বিষয় গনিতই পেয়েছি। তার জন্য আমায় পরীক্ষাতে রাত জেগে পরতে হয়েছে।
আমি আজ ক্লাসে নতুন আর এখানে সবাই অচেনা। ক্লাস যদিও ১ মাস পার হয়ে গেছে তবু আমি কিন্তু পিউর নতুন।আর নতুন বলেই একটু ভয় ভয়ও লাগছে। আর আজ সবাই আমাকে কেমন ভাবে যেন দেখতেছে। যেন আমি ভিন্ন গ্রহের প্রানী। এমন করে দেখার কি আছে বুঝি না। সামনে জায়গা না পাওয়ার কারনে পিছনে একা বসে থাকা একটা ছেলের সাথে বসলাম। তাই ভাবলাম পরিচিত হয়ে নেই। তাই আমি বললাম....
-- হাই ভাই আমি ধ্রুব।
-- হ্যালো আমি অনিক।
-- আসলে আমি আজ নতুন এসেছি তাই........
-- তাই আমিও তো নতুন।
মুখের কথা বলতেও দিলো না। আর এতো দেখি আমার মত নবাব। আজ আমাদের দেশ কেন পিছিয়ে আছে। এই আমাদের মত নবাবদের কারনেই। যাই হোক ও নতুন আর আমিও নতুন তাই ক্লাসটায় বকা খেলে একা খেতে হবে না।
ক্লাসে টিচারের আগমন হলো। আর আসা মাত্রই বলল..
-- শুভ সকাল ছেলে মেয়েরা কেমন আছো সবাই?
-- ভাল। আপনি কেমন আছেন স্যার.( মনে হয় শুধু সামনের ছেলে মেয়েরাই বলল)
-- আমিও ভালো।আচ্ছা গত ক্লাসের এসাইনমেন্ট গুলো সবাই সামনে রাখো আমি দেখবো।
এবার আমি কি করি কিছুই তো জানি না। স্যার সবার খাতা দেখতে লাগলো। আমি আর অনিক চুপচাপ বসে আছি কারন নিজেদের এখন চুপ থাকা ছাড়া আর কাজ নাই। স্যার আমাদের সামনে আসলো।
-- তোমাদের খাতা কোথায়?
-- আমরা আজ নতুন স্যার।
-- ১ মাস পার হয়ে গেল আর তোমরা নতুন। এটা লেখাপড়ার জায়গা বরং মজা করার না। ২ দিন সময় দিলাম তোমাদের বুঝলে। অন্য কারো থেকে এসাইনমেন্ট গুলো নিয়ে জমা দিবে।
-- ওকে স্যার।
এমন করে সব ক্লাস কোন রকমে শেষ করে আমি আর অনিক বাইরে এসে দাড়ালাম। এবার কার কাছে গিয়ে বলবো খাতা দেওয়ার কথা। মাথা কাজ করছে না তাই চুপচাপ ভাবতেছি আর একটু পর পর একজন অন্য জনের মুখের দিকে তাকাচ্ছি। হঠাৎ আমাদের মুখের সামনে কেউ একজন খাতা ধরলো। একটু অবাক হয়ে কে দিয়েছে এটা না দেখে খাতা দেখা শুরু করলসম। আমি খাতা দেখে বললাম....
-- হাতের লেখাই এতো সুন্দর, না জানি মানুষটা দেখতে কেমন হবে।
-- তোর সামনেই দাড়িয়ে আছে। তাকিয়ে দেখ ( অনিক বলল)
তাকাতেই একটা লম্বা ক্রাশ খেলাম আর বলে উঠলাম কি মায়াবী গো তুমি?
আমার কথা শুনে ওই মেয়ে মনে হয় রেগে গেল......
-- আপনাদের দেখে মায় হয়ে ছিল তাই খাতাটা দিলাম। কাল আমার খাতাটা ফেরত দিবেন।
বলেই চলে গেল। আর আমি পিছন থেকে বললাম....
-- এই যে মিস মায়াবী আপনার নামটা তো বলে যান।
-- নাম দিয়ে আপনার কাজ নেই।কাল ক্লাসে এসে আমায় খাতাটা দিয়ে যাবেন।
আর কোন কথা হয় নি। ও চলে যাচ্ছে আর আমি হা করে দেখছি। তারপর অনিকের ডাকে বাস্তবে আসলাম।
-- ধ্রুব নাম পরেও জানা যাবে। আগে এই গুলো লেখা শেষ করে খাতাটা আমায় দে।
-- এই তো বুঝলি আগে আমি পরে তুই।
রাতে মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে পড়তে বসলাম। লেখা শেষ হয়ে গেছে। রাত ২টার উপর বাজে আর আমি এখনও ওই মেয়ের কথাই ভাবছি। কি নাম, কোথায় থাকে, এতো কিউট দেখতে কেন? এতো কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম খেয়ালই ছিল না। আর ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের ডাকে.......
-- কিরে ক্লাস যাবি না। সাড়ে নয়টার উপরে তো বাজে।
-- ও তেরি আমি শেষ।
কোন মতে ফ্রেশ হয়ে চলে আসলাম ভার্সিটিতে। তাও ক্লাস ১৫ মিনিট লেট করলাম।
-- আসতে পারি স্যার?
-- আসো এতো দেরি মানে কি?
-- স্যার সরি দেরী করার জন্য। রাতে এসাইনমেন্ট লেখতে লেখতে দেরি হয়ে গিয়ে ছিল।
-- আচ্ছা ঠিক আছে আর যেন দেরী না হয়।
আমি চুপচাপ অনিকের পাশে গিয়ে বসলাম। আর মায়বীকে মানে মেয়েটাকে খুজতে লাগলাম। কিন্তু দেখতে পাইলাম না। মনে হয় আমি তো পিছনে বসছি বলে সামনের কাউকে দেখতে পারছি না। যাই হোক, ক্লাস শেষ করে বাইরে বের হলাম। দরজার বাইরে এসে মেয়েটাকে খুজতে লাগলাম।
-- আমার খাতাটা দেন??
-- আরে তুমি কই থেকে আসলে?
-- আপনি সামনের দরজা দিয়ে খুজতাছেন। আর আমি যে পিছনের দরজা দিয়ে আসলাম।
-- ও আচ্ছা এই নেন আপনার খাতা।
খাতাটা নিয়ে মেয়েটি চলে যেতে লাগলো। তখন মনে পরলো ওর নাম তো জানা হয় নি।
-- আপনার নামটা তো বলে যান?
মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল.....
-- খাতার প্রথম পৃষ্টাতে যে সবাই নাম লেখে এটা হয়ত আপনি জানেন না।
এটা বলেই ও চলে গেল। আর আমি নিজের মাথায় একটা থাপ্পড় দিয়ে বোকা বলতে লাগলাম। খাতাটা হাতে থাকতেও নামটা জানতে পারলাম না। এবার কী করে নামটা জানবো?
এবার অনিকও আমায় রাগ দেখাতে শুরু করলো। আমি কি করবো যদি ওরে ভাবতে ভাবতে ওর খাতার প্রথম দিকটাও না দেখা রয়ে গেল।
এভাবে প্রায় ১ সপ্তাহ পার হয়ে গেল। এখন আর ক্লাস মিস যায় না। বাড়িতে মাও খুব অবাক কারন আমি যে ছিলাম ঘুম পাগল আজ সেই আমি নিয়মিত ছাত্র। তবে আজও ওর নাম জানা হয় নি। তবে প্রতিদিন ঠিকই দেখা হয়।
একদিন আমি ভার্সিটির বাইরে একটা ফার্মেসিতে কাজেই গিয়ে ছিলাম। যখন ভার্সিটিতে ঢুকলাম তখনই পিছন থেকে একটা মেয়ে আমার নাম ধরে ডাক দিলো আর আমি তাকিয়ে দেখলাম সেই মেয়েটা। তবে অবাক হলাম ওই মেয়ে আমার নামটা জানে......
-- এই যে মিস্টার ধ্রুব একটু আস্তে হাটেন তো।
-- আরে আপনি? আমার নাম জানলেন কি করে?
-- ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। বুঝলেন।
-- মানে?
-- মানে হলো আপনার বন্ধু অনিকের কাছে আপনার নামটা জেনে নিলাম আর কি? আমি জানি যে আপনি আমার নামটা জানতে চান তবে এখনও জানতে পারেন নি? হয়ত আপনি চেষ্টাও করেন নি নামটা জানার?
-- আরে না। কারো কাছে জানতে চাইলে যদি কিছু বলে তাই জানতে চাই নি।
-- ও আচ্ছা আমি নিহা। আর তুমি ধ্রুব।
-- হুমম।
-- আচ্ছা আপনি ফার্মেসিতে গিয়ে ছিলেন কেন? কোন সমস্যা ছিল বুঝি?
-- আসলে রাতে ঠিক মত ঘুম হয় না তো তাই ঘুমের ঔষুধ কিনতে গেছি।
-- বাব্বা কি এমন সমস্যা যে ঘুৃম হয় না। কেউ কি ঘুম চুড়ি করলো নাকি?
-- বলা যেতে পারে।
-- তাহলে বলে দেন কে সে?
-- সময় হলেই বলবো?
-- ও তাহলে এখন আমি আসি।
-- আচ্ছা।
বলেই ও চলে যাচ্ছিল। আজ ওর কি হলো হঠাৎ করে এসে এতো কথা বললো। ওর বকবক শুনতে খারাপ নয় বরং খুব ভালই লাগলো। যদি এই বকবকটা স্থায়ী হতো। কেন জানি মনের অজান্তে পিছন থেকে ওরে ডাক দিলাম....
-- এই যে নিহা?
-- (পিছনে ঘুরলো। আর চোখ দিয়ে বুঝালো কি হয়েছে)
আমি হেটে ওর সামনে গেলাম পরে বললাম......
-- নিহা একটা কথা ছিল?
-- বলেন?
-- আমরা কি তুমি করে কথা বলতে পারি?
-- যেহেতু আমরা ক্লাস মেট তাই তুমি বা তুই বলাটা স্বাভাবিক।
-- ওকে। আচ্ছা নিহা আমার সাথে এক কাপ কফি খাওয়ার সময় হয়ে।
-- দুই কাপ খাওয়াতে হতে পারে কারন আমি একটু বেশি বক বক করি।
-- ওকে চলো।
এমন করে আমার আর ওর মাঝে ভালো একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠে তবে আমি ওরে মনের অজান্তেই আপন ভেবে নিয়েছি। সময়ের সাথে সাথে ভালবাসতে শুরু করে দিয়েছি। তবে হয়ত ও এখনো বুঝে নি। ওরে আমি মাঝে মাঝেই ওর বয়ফ্রেন্ডের কথা জানতে চাই আর ও উত্তর দেয় তুই আছিস তো।
এভাবে দুইটা বছর কেটে যায়। ও আর আমি খুব ক্লোজ হয়ে গেছি। হঠাৎ একদিন নিহার ফোনে আমার ঘুম ভাঙ্গলো।
-- হ্যালো কে?
-- মোবাইল দেখে কল রিসিভ করছো নাকি না দেখেই।
তারপর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি নিহার ফোন? ও হঠাৎ এতো সকালে ফোন দিলো...
-- আসলে খেয়াল করি নি?
-- তা তো খেয়াল করবেই না। আজ যে একজনের জন্মদিন সেটাও তো ভুলে গেছো।
-- ও শীট। শুভ জন্মদিন।
-- বলতে হবে না। আমি ধ্রুবদের এলাকার পার্কে বসে আছি। যদি কারো আসার ইচ্ছা থাকে তাহলে আসতে পারে।
-- আমি আসতেছে ১০ মিনিটে।
কোন মতে নিজেকে ঘুছিয়ে মুখে জল দিয়ে না দিয়েই দৌড় দিলাম। কি আজব রে আজ ওর জন্মদিন এটাই ভুলে গেছি। যারে কি না আমি এতো ভালবাসি। খুব তারাতারি দৌড়ে গিয়ে নিহার পাশে বসলাম আর হাপাতে লাগলাম।
-- দৌড়ে আসার কি হলো?
-- যদি চলে যাও।
-- কিসের ভয় তাতে...
-- পারবো না যে হারাতে?
-- বলেছো কখনো কথা গুলো।
-- সাহস হয় নি যে...
-- তাহলে বলে দাও।
-- যদি রাজি না হও।
-- না বললে যদি দেরী করে ফেলো।
-- নিহা তোমাকে যখন প্রথম দেখি তখনই তোমায় মায়বী বলে ডাকে। হয়ত দুইটা বছর সেই মায়ায় পরে আছি। একটু সেই মায়াটাকে ধরে বাচতে দিবে। কথা দিচ্ছি খুব ভালবাসবো তোমায়।
-- (চুপ হয়ে আছে)
-- রাগ করলে?
-- হুমম
-- কেন??
-- কথা গুলো বলতে এতো দেরী করলে কেন?
-- ভয়ে ছিলাম যদি হারিয়ে ফেলি।
-- এখন এতো সাহস পেলে কই থেকে?
-- তুমি দিলে যে, আচ্ছা বাদ দাও। এবার বলো তোমার জন্মদিনে কি চাও?
-- বেশি কিছু না। শুধু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলে পারলে তোমার ভালবাসা প্রকাশ করো তো।
--" মেয়ে তুমি সুন্দর আড় চোখে তাকালে"
" তার চেয়ে বেশও সুন্দর রাগ করে তাকালে?
আর কোন কথা হয় নি। নিহা শক্ত করে আমার হাতটা ধরে আমার কাধে মাথা রাখলো।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ