একজন ফজল ও প্যাঁচামুখীর গল্প
Habiba Bristy
(১)
পিউ ঘাপটি মেরে বিছানায় পড়ে আছে, আজ আর বিছানা থেকে উঠার কোন প্ল্যান নেই তার । উফ্ কেন যে বড় হইছি । ছোটই থাকতাম তাহলে তো আর কুরবানীর হাটের গরু হইতে হতো না । আজ আবার এক ছাগল দেখতে আসবে । গত দুই বারের মতো আর মাঞ্জা মেরে এইসব ছাগলের সামনে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই আমার ।
-পিউ.........মহিলা কুম্ভকর্ণ হয়ে গেলি নাকি? কয়টা বাজে সেই খেয়াল আছে ?
-মার গলার আওয়াজ পেয়ে পিউ চোখ বন্ধ করে ফেললো ।
-কিরে উঠবি না তুই ? তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নে ।
-উহু মা......আমার ভীষণ পেট ব্যথা করছে, উঠতে পারবো না......বলেই পেট চেপে ধরল পিউ ।
-হইছে আর ঢং করতে হবে না, ছোটবেলা থেকে এইসব করে মাথা খেয়ে ফেলেছিস।
-মা আমি জীবনেও উঠবো না, মরে গেলেও না ।
-দেখ মা, আত্মীয়-স্বজনের সামনে তোর বাবা কে হেনস্থা করবি ? ছেলেটা খুবই ভালো, তুই একবার দেখা কর, কথা বল, তোর ভালো লাগবে ।
-মার হাত টানাটানিতে উঠে পড়লো পিউ ।
ওহ আবার সেই ক্ষণ হাজির......... মনে মনে যত গালি জানা আছে সব দিতে দিতে পিউকে দেখতে আসা সজল এর সাথে একা কথা বলতে বারান্দায় গেলো পিউ। সজল আগে থেকেই বারান্দায় বসা ছিল, পিউকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
পিঃ- কি? আমি কি আপনার খালাম্মা? আমাকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে দারালেন কেনো? বসেন।
-পিউ এর ঝাড়ি খেয়ে সজল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে পড়লো।
পিঃ- এই নিয়ে কুরবানীর হাঁটে কয়বার আসছেন? আর কয়টা ছ্যাঁকা খাইছেন?
সঃ- জি?????
পিঃ- বুঝেন না? কয়টা মেয়ে দেখছেন এর আগে?
সঃ- একটাও না, আপনিই প্রথম গরু।
পিঃ- কি? আমি গরু? আর আপনি কি? আপনি একটা ছাগল। নামটা যেনো কি আপনার? হুম মনে পড়েছে... ফজল...
সঃ- আমার নাম সজল। আর হ্যাঁ আপনিই তো বললেন আমি কুরবানীর হাঁটে আসছি।
পিঃ- থাক থাক......বেশী স্মার্ট সাজতে হবে না। এখন বলেন কয়টা ছ্যাঁকা খাইছেন?
সঃ- ছ্যাঁকা খাইনি, ছ্যাঁকা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত ৪ জনকে দিয়েছি।
পিঃ- ইস, চাপা মারার আর জায়গা পান না তাইনা? চেহারা দেখছেন কখনও নিজের? নাম শুনেই তো কাজের ছেলে মনে হয়, ফ...জ...ল, সে আবার ৪ জনকে ছ্যাঁকা দিছে। দেখেন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না, আমি একজনকে ভালবাসি, ওকে ছাড়া আমি বাঁচবনা। আপনি এখখন গিয়ে বাবাকে বলবেন যে আপনার আমাকে পছন্দ হয়নি।
সঃ- কিন্তু আমি মিথ্যা বলতে যাবো কেনো? আমার তো আপনাকে পছন্দ হয়েছে। আপনিই গিয়ে বলেন আপনার বয়ফ্রেন্ড এর কথা।
পিঃ- আমি বললে যদি বাবা বিশ্বাস করতো তাহলে কি আর আপনাকে বলি? আপনি যদি না বলেন তাহলে কিন্তু আমি এখান থেকে লাফ দিবো। সারাজীবন জেলখানায় কয়েদীদের সাথে তখন সংসার করতে হবে বুঝলেন?
সঃ- (হাসি লুকিয়ে) আমি আপনাকেই বিয়ে করবো। আর কোন হাঁটে যেতে পারবো না আমি, গরুর দাম খুব বেড়ে যাচ্ছে ইদানীং।
পিঃ- আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার তাইনা? এই দিলাম কিন্তু লাফ?
সঃ- আচ্ছা দেন।
পিঃ- দিলাম কিন্তু?(এই বলে পিউ রেলিং এর কাছে এগিয়ে গেলো আর আড়চোখে সজলকে দেখতে লাগলো)
সঃ- (সজল হেসে ফেললো) আপনি লাফ দেয়ার practice করেন আমি ভেতরে যাই।
পিউ মেজাজ খারাপ করে সজলের পিছনে পিছনে চলে আসলো।
(২)
অবশেষে পিউ এর শত চেষ্টার পরেও সজল এর সাথে ওর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেলো। বিয়ের সময় পিউ যথাসাধ্য চেষ্টা করলো মুখটাকে প্যাঁচার মতো করে রাখতে যাতে একটা ছবিও ভালো না হয়। আর সজল? এই প্যাঁচামুখী সুন্দরী বউকে নিয়ে চললো সংসার বসাতে।
-না, আপনারা যা ভাবছেন তা না, অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো এইরকম বলতে পারলাম না। কারন প্যাঁচামুখীতো তলে তলে কত বুদ্ধি করে রেখেছে সজলকে বিয়ের সাধ পানির সাথে গুলিয়ে খাওয়াবে বলে। বেচারা সজল আর কি করবে, সে ভাবলো চুপ করে থেকে লাভ নেই। তাই সেও তার সদ্য বিবাহিতা বউ এর সাথে গৃহযুদ্ধে নেমে পড়লো।
- স্বামীর সংসারে এসে পিউ মনে মনে খুশিই হলো, কারন মা বাবা হীন সজল একাই থাকে, খুব ভালো করেই জালানো যাবে এই ছাগল টাকে, কেউ কিছু বলবে না।
-ফুলসজ্জা,মধুচন্দ্রিমা...... ইত্যাদি নাকি মানুষের জীবনের সবথেকে আকাঙ্খিত সময়। সজল ভাবলো এই দিনে অন্তত পিউ রাগ করে থাকবে না। এই ভেবেই মনে মনে খুশি হয়ে সে রুমে ঢুকলো। রুমে ঢুকতেই সজলকে খপ করে ওর দিকে ছুড়ে দেয়া বালিশ ধরতে হলো।
পিঃ- ওরে বাবা...... বর সেজে আবার বাসর করতে আসা হয়েছে? এহ্ সখ কত? এখন ফুটেন এই ঘর থেকে। অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমান।
সজল আশাহত হয়ে ভাবলো এই প্যাঁচামুখীর কাছে কিছু আশা করাই ঠিক হয়নি তার।
সঃ- আমি এই ঘরেই ঘুমাবো, আপনার সমস্যা হলে আপনি যান অন্য ঘরে। (এই বলে বালিশ বিছানায় রেখে সুয়ে পড়লো সজল)
পিঃ- আরে??? কি অসভ্য মানুষ রে বাবা!
পিউ যদিও ঐ ঘর বের হয়ে আসলো কিন্তু পরক্ষনেই তার মাথায় চিন্তা আসলো যে না আমি একা থাকবো না। ও সজল এর কানের কাছে গিয়ে চীৎকার করে ডাকতে লাগলো......এই যে ফজল...... ওঠেন...... আপনি ডান পাশে গিয়ে ঘুমান, আমি বামে ছাড়া ঘুমাতে পারিনা।
সঃ- শোনো প্যাঁচামুখী, আমিও এপাশে ছাড়া ঘুমাতে পারিনা।
পিঃ- কি? আমি প্যাঁচামুখী? আর আপনি কি? আপনি একটা ......আপনি একটা ..... ফজল......।।
সজল পাশ ফিরে আবার শুয়ে পড়লো। এবার পিউ এর আকাশচুম্বী মেজাজ বালতি ভর্তি পানি হয়ে বর্ষিত হলো সজল এর উপর। আচমকা গায়ের উপর পানি পড়তেই সজল লাফিয়ে উঠলো।
সঃ- তোমার মাথার কি একটা স্ক্রু কি ঢিলা আছে? এটা কি করলা তুমি?
পিঃ- খুব ভালো করছি, আপনাকে না বলছিলাম আমাকে বিয়ে না করতে? কেনো করলেন? এইবার বুঝেন ঠেলা? আর বিয়ে করবেন?
সঃ- না, আর বিয়ে করার সাধ নাই। আমার বাড়িকে আমি আফ্রিকার জঙ্গল বানাতে চাই না?
পিউ একটা ভেংচি দিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।
কেউ কি ভেবেছিলো সদ্য বিবাহিত এই দম্পতি তাদের বাসর রাত বারান্দায় বসে কাটাবে? না, গল্প করে নয়, একজন বিছানায় পানি ঢেলে দেয়ার আনন্দে আর অন্যজন ভেজা বিছানায় ঘুমুতে না পারার রাগে বারান্দায় বসে রইলো।
এর পরের দিনগুলো সজল আর পিউ এর জীবনে ঝড়ের মতো চলে গেলো। যেনো দুজনই গিনেস বুকে ‘আমিই সেরা ঝগড়াটে’ নাম লিখানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
-সজল ঘুমায় তো পিউ এর তখন হাই ভলিউম এ গান শুনতে ইচ্ছে করে। আর পিউ ঘুমালেই কোন এক বিচিত্র কারনে সজলের নাক ডাকা শুরু হয়। দুজন যেনো জন্ম জন্মান্তরের শত্রু।
অবশেষে এই গৃহযুদ্ধের সাময়িক অবসান হতে চললো, পিউ এর মায়ের অসুস্থতার কারনে পিউকে বাড়ি যেতে হবে।সজল যখন পিউকে ওর বাড়িতে রেখে চলে আসছিলো তখন ওর সমস্ত চেতনা অসাড় লাগছিলো। বাড়ি ফিরেই সজল বিয়ের সেই বিখ্যাত ছবিগুলো নিয়ে বসলো।
সঃ- প্যাঁচামুখী, তুমি খুব শান্তিতে থাকবা তাই না? থাকো তুমি শান্তিতে, কিন্তু আমার সবকিছু তোমার কাছে রেখে দিলা কেন ? আমি যে শ্বাস নিতে পারছিনা, আমার আফ্রিকার জঙ্গলের একমাত্র প্রান তো তুমিই ছিলে, সব অক্সিজেন নিয়ে গেলে, আমি কি করে শ্বাস নেই বলো? সজল অবাক হয়ে খেয়াল করলো ওর চোখে জল, বাবা মা চলে যাওয়ার পর আর কখনও কাঁদেনি ও। সজল বুঝতে পারলো, এই প্যাঁচামুখীটা ওর সমগ্র সত্ত্বাটুকুই দখল করে বসে আছে।
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো , চলে এসো....এক বরষায়
এসো ঝরঝর বৃষ্টিতে...জলভরা দৃষ্টিতে এসো কমল শ্যামল ছায়,
চলে এসো, তুমি চলে এসো... এক বরষায়......।
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি, কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি,
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো, ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজরী আলো...
তুমি চলে এসো এক বরষায়, যদি মন কাঁদে.........।
(৩)
কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সজলের, ঢুলু ঢুলু চোখে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে ভিমরি খেয়ে গেলো সে, পিউ বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে ওর সামনে।
পিঃ- কি? এভাবে কি দেখছো? চোখ দুইটা ছোট করো, আর একটু হলেই বের হয়ে আসবে।
সঃ- তুমি ??? ধ্যাত, আমি স্বপ্ন দেখছি......(এই বলে সজল দরজা লাগিয়ে দিতে গেলো)।
পিউ সজলকে ধাক্কা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ও এখন তো সপ্নেই দেখবা আমাকে। কি ভাবছো তুমি আমি আর আসবো না? আর তুমি শান্তিতে ঘুমাবা? এত সহজে আমি তোমার পিছু ছাড়বো না বুঝছো? তোমার সাথে ঝগড়া না করলে, তোমাকে না জালালে আমার ঘুম আসেনা। আমি সারজীবন তোমার গায়ে পানি ঢেলে তোমার ঘুম নষ্ট করতে চাই।
সঃ- আরে কি সমস্যা তুমি কাঁদতেছো কেনো? আমি আবার কি করলাম?
পিঃ- তুমি কাল আমাকে রেখে চলে আসলা কেনো? একবারও পিছনে ঘুরে দেখলা না, আমি কতক্ষন তোমার জন্য দাড়ায় ছিলাম। আরেকটা বিয়ে করার প্ল্যান করতেছো না?
সঃ- (পিউকে জড়িয়ে ধরে) শোনো, পৃথিবীতে একজন সজল এর জন্য শুধু একজন পিউ কেই আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন বুঝেছ? আর হ্যাঁ, আমিও আমার প্যাঁচামুখীকে ছাড়া ঘুমাতে পারবো না।
পিঃ- এহ... মিথ্যুক একটা, নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলা তুমি, এইজন্যই তো এতবার বেল বাজানোর পরে দরজা খুললা, তোমাকে আমি সহজ সরল ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি তো একটা...............।।
নাহ্.... এই গৃহযুদ্ধের ইতি টানতে পারলাম না। তবে সত্যি বলতে কি, আমিও আসলে চাচ্ছিনা যুদ্ধ থেমে যাক, কারন কখনও ভাষায় প্রকাশ করতে না পারা এই ভালবাসাগুলো যে মিষ্টি ঝগড়ারূপী তরী বেয়েই ভীর করে সজল ও পিউ দের জীবন আঙিনায়।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ