603

***মিথ্যে অভিনয়***
-------K.H.TUSHAR
.
.
ছাদের এক কোনায় বসে আছি।সাথে এক প্যাকেট
গোল্ডলিফ আর লাইটার।
এভাবেই কাটছে জীবন।৩ বছর ধরে এটাই রুটিন
হিসেবে ধরে নিয়েছি।
নিশাচর হিসেবে নিজেকে যাহির করতে ভালোই
লাগে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ২ টা বাজে।
অনেকের কাছে এটা গভীর রাত হলেও আমার
কাছে মাত্র শুরু।
গীটার টা নিয়ে টুং টাং করছি।
সিগারেটের ধোয়া গুলো বাতাসে মিশে যাচ্ছে।
ইশ!এর সাথে কষ্ট গুলোও মিশে গেলে মন্দ
হতো না।
জীবন টাই বড়ই অদ্ভুত।
কিছু সময় ভালো,খুবই ভালো।
তবে খারাপের সময় শুধুই খারাপ।
ছন্নছাড়া জীবন মন্দ না ভালোই।
সিগারেটের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে দেখি মাত্র
১ টা সিগারেট বাকি আছে।
সিগারেট টা খেয়ে নিচে রুমে চলে গেলাম।
রাত ৩ টার মতো বাজে।এখন না ঘুমালে সকালে
উঠতে পারবো না।
মিউজিক লিস্টের প্রিয় গানটা ছেরে ঘুমের রাজ্যে
পাড়ি জমালাম।
.
মনে হলো ভূমিকম্প হচ্ছে।কই নাতো উঠে
দেখি সব ঠিকাছে।
তাহলে!!!
মনে পরলো অইটা ফোনের ভাইব্রেশন ছিলো।
ফোন টা হাতে নিয়ে দেখি সানজিদার ফোন।
উফ!এই মেয়েটার জালায় জীবন টা শেষ হয়ে
গেলো।
মেয়েটাকে অনেক বুঝিয়েছি কাজ হয় না।মিথ্যে
মায়ায় আর জড়াতে চাই না।
তবে আমি শিউর সব কিছু জানার পর সানজিদা উধাও হয়ে
যাবে।
ফ্রেশ হয়ে,খাওয়া দাওয়া করে ভার্সিটিতে চলে
গেলাম।
ভাবছিলাম পিছনের গেট দিয়ে ঢুকবো যাতে
সানজিদার সাথে দেখা না হয়।
কিন্তু অই যে"যেখানের বাঘের ভয় সেখানেই
সন্ধ্যে হয়"।
পিছনের গেট দিয়ে ঢুকতে ই দেখি সানজিদা দারিয়ে
আছে।
সানজিদা:ফোন দিলাম ধরলি না কেনো?
আমি:সেটা কি তোকে বলতে হবে?ইচ্ছা হয় নাই
ধরি নাই।
:তুই এমন করিস কেন আমার সাথে?
:আমি খারাপ তাই এমন করি।আসিস কেন আমার কাছে।
:তুই বুঝিস না???
:না।
আর কিছু না বলে চলে আসলাম।জানি সানজিদা কি
বলবে।কিন্তু সেটা সম্ভব না।
মিথ্যে মায়া মোহতে আর পরতে চাই না।
.
যথারিতী আবার রাতে ছাদে আসলাম।
তবে আজ কেনো জানি সিগারেট খেতে ইচ্ছে
করে না।বসে বসে সানজিদার কথা ভাবছি।
মেয়েটা অনেক ভালোবাসে।তবে বুঝলেও
বুঝতে চাই না।
এইসব মোহ ছারা আর কিছুই না।
মানুষ মোহ পরে অনেক কিছুই করে।
অহনা ও হয়তো মোহ পরে আমাকে
ভালোবেসেছিলো।
আবার মনে পরে গেলো অহনার কথা।
খুব ইচ্ছে করে অহনাকে একটা ফোন দিতে।না তার
আর দরকার নেই।
অন্য কারো সাথেই কথাতে ব্যাস্ত আছে
.
পরদিন আবার ভার্সিটিতে গেলাম।
আবার সামনে সেই সানজিদা।
মেয়েটাকে নিয়ে পারি না।
ভাবছি আজকে ওকে সব বলবো।
আমি ই আগে বললাম,
আমি:কেমন আছো?
সানজিদা:ভালো।
আমি:তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।
সানজিদা:বলো।
আমি:এখানে না।নদীর পারে চলো।
সানজিদা কে নিয়ে নদীর পারে আসলাম।
আমি:সানজিদা তুমি যেটা চাচ্ছো সেটা সম্ভব না।
সানজিদা:কেনো সম্ভব না?
আমি:তুমি আমার আগের কিছুই জানো না।সেটা
বলতেই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।
সানজিদা:বলো।
আমি:তাহলে শুনো,
আমি এর আগে একটি মেয়ে কে ভালোবাসতাম।
সানজিদা:মেয়েটি কোথায়?
আমি:হয়তো অন্য কারোর সাথে সুখেই আছে।
সানজিদা:কি হয়েছিলো।
আমি:অন্য কারো কাছে সুখ খুজে পেয়েছিলো।
সানজিদা:নাম কি তার?
আমি:অহনা।
সানজিদা:আমাকে অহনা ভাবা যায় না?
আমি:সেটা সম্ভব না।
আর কিছু না বলে চলে আসলাম।
.
ফুটপাতের রাস্তা ধরে হাটতেছি সাথে গোল্ডলিফ
সিগারেটে।সিগারেট টানতে টানতে একটি পার্কে
এসে বসলাম।
পার্কটি তে আগে প্রতিনিয়ত আসতাম
আসার যথেষ্ট কারন ছিলো।
কেউ একজন বলে ছিলো যেখানেই থাকো না
কেনো বিকেলে এখানে আসবে।
এখনো আসি পার্কটাও সেই আগের মতো কিন্তু
হারিয়ে গেছে সেই মেয়েটি।
হয়তো অন্য কারো সাথে সুখেই আছে।
আচ্ছা তার কি মনে পরে না বিকেলে পার্কে এসে
একসাথে বসে থাকার কথা?
হয়তো পরে না।কারন কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা
সহজেই সব কিছু ভুলে যেতে পারে।তাদের
মধ্যে সহজে ভুলে যাবার একটি গুন থাকে।
.
আমি মানুষ টা কখন মানুষ হিসেবে দাড়াতে পারি নি।অমানুষ
হিসেবেই আছি।
ভালোর কাতারে তো দুরে থাক খারাপের খাতায় সবার
শেষে আমার নাম।এটা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।
হয়তো একদিন মানুষ হবো।
.
রাত গড়িয়ে মাঝ রাত।
রুটিন মাফিক ছাদে চলে আসলাম।
সাথে গোল্ড লিফ লাইটার আর গীটার।
শুধু একটা গান ই মাথায় আসছে "আমি তোর মনের
মতো হতে পারলাম নারে........."।
ভাবছি শহর ছেরে দুরে চলে যাবো
চাইনা মিথ্যে মায়ায় জড়াতে।
সানজিদা ও হয়তো কালের বিবর্তনে চলে যাবে।
নিয়তি মাঝে মাঝে জীবন কে থমকে দেয়।
জীবন ঠিক ই চলে থেমে যায় মন টা।সব ই নিখুত
ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয়।
.
# অনুগল্প
.
[কল্পকৃত]