596

গল্প : ঝগড়া
.
>> মেঘা তুমি কান্না করতাছ কেন?
আর তুমি এতো রাতে হাসপাতালে কি কর?
.
কান্না মাখা মুখে মেঘা বলে ।
মা অসুস্থ । মা কে নিয়ে এসেছি।
>> ও।
আন্টি এখন কেমন আছেন?
আর তুমি রাতে ডিনার করছ তো ?
.
এবার কিন্তু মেঘা রেগে যায়। তার কান্না মাখা মুখটা পরিণত হয় ঝাল মরিচ খেলে যেভাবে মুখ টা লাল হয়ে যায় ঠিক সে রকম।
>> আচ্ছা তোমার কি বুদ্ধি দিন দিন কমে যাচ্ছে নাকি হে । এতো উদাস কেন তুমি ?
আমি এখানে একা এসেছি। খাব কোথায় থেকে। আর এখানে ৪-৫ ছেলের সাথে কি আমার সম্পর্ক আছে যে তারা আমাকে খাবার দিয়ে যাবে আর বলবে আপু খান।
আপনি অনেক সময় ধরে কিছু খান নি।
নেন আপনি নেন। খাবার মুখে দিন।
.
>> আরে রেগে যাচ্ছ কেন?
>> আমি রাগব নাতো তোমার সাথে মধুর প্রেম আলাপ করব । পেটের যা অবস্থা।
পেটের খিদা অনুসারে আমি তো কম ঐ রাগলাম।
>> তুমি কি কিছু খাবে?
>> না আমি তোমাকে বসে বসে দেখব।
যাও খাবার নিয়ে এসো।
>> কি আনব?
>> ফুচকা, আইসক্রিম নিয়ে আসবে ।
>> কি!
তুমি এসব খাবে । আর এতো রাতে আমি এসব কোথায় পাব। আর মানুষের খিদা লাগলে ভাত , ডাল, মাছ,মাংস এসব খায়।
আর তুমি তোমাদের ঢঙ এর খাবার খাবে।
যত্তসব ফালতু খাবার এসব।
না না তুমি এসব খাবে না।
আমি তোমার জন্য ভাত,আর মাছ, মাংস এসব খাবার নিয়ে আসছি।
>> এই খবরদার। একদম বাজে কথা বলবে না। যে টা বলছি সেটা কর।
তোমার রুচি এতো খ্যাত।
আমাদের মেয়েদের খাবারে তোমাদের ছেলেদের এতো হিংসা কেন?
নিজে তো শুকনো কাচা মরিচ ঐ খেতে পার না। আর জ্বাল মরিচ নিয়ে কথা বল।
>> বাপরে বাপ এতো জ্বাল।
আমাকে একদিন তুমি জোর করে খাইয়ে ছিলে। আমি তো কান্না করতে করতে একদম পাগল হওয়ার অবস্থা। তারপর থেকে আমি এসব খাবার খাব দূরের কথা চোখে পর্যন্ত দেখি নি।
>> হইছে এতো কথা বলতে হবে না । যাও খাবার নিয়ে এসো।
.
.
তাসিম ভাবতে লাগলো এতো রাতে কোথায় সে এসব আজেবাজে খাবার পাবে। মেয়েরা এসব খাবার কিভাবে খায়।
দ্যাত এইটা একটা খাবার হলো। জ্বালে ভরা।
তাসিম একবার মেঘার সাথে ফুচকা খেয়েছিল লাস্টে চিনি আধা কেজি খেয়ে জ্বাল থেকে মুক্তি পেয়েছিল।
সে দিন তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে পড়তে শার্ট টা ভেজে গিয়েছিল।
তারপর থেকে সে ফুচকা খাবে দূরের কথা ফুচকা ওয়ালার দোকান দিয়ে ঐ যায় না।
আর এখন মেঘা তাকে ফুচকা আনার জন্য ফাটিয়েছে। সে রাগে তো একবারে আগুন। কিন্তু সে কি করবে?
তার তো কিছু করার নাই। মেঘাকে সে তো ভট্ট ভালোবাসে। এ মেয়েটা যতই তাকে জ্বালাতন করে না কেন সে এ মেয়েকে কিছুতেই ভুলে থাকতে পারে না।
তাই সে এ মেয়েটার সব আবদার পূরণ করে।
অনেক কষ্ট করে পেল ফুচকার দোকান।
>> ভাই ফুচকা আছে?
>> না ভাই ফুচকা নাই।
সব শেষ হয়ে গেছে।
>> আরে ভাই কি বলেন?
না ভাই এইটা হতে পারে না।
ভাই প্লিজ দেখেন ফুচকা আছে কিনা?
নইলে ভাই আমার আজ খবর আছে।
আমি থাকব নইলে আমার টিশার্ট থাকবে না।
অথবা
টিশার্ট থাকবে কিন্তু আমি থাকব না।
>> ভাই আপু এতো গরম?
>> আরে ভাই ওকে যে দিন প্রপোজ করছিল। সে দিন আমার মেসের খাট ভেঙে গিয়েছিল। এখন বুঝেন কি গরম।
ভাই দেন ভাই নইলে আমার অবস্থা আজ কয়েলের মতো পুরে পুরে যাবে।
>> আচ্ছা ভাই দেখতাছি কিছু ফুচকা দিতে পারি কিনা।
.
নেন ভাই এই টুকু ঐ পাইছি।
>> ভাই ঐ যে ফুচকা দিলেন ওর জন্য মাত্র ২ মিনিট লাগবে।
কিন্তু ও যখন ফুচকা খায় ২০ মিনিটের ফুচকা লাগে আর ওর ২০ মিনিটের ফুচকা লাগে আমার ৪০ মিনিট।
এখন বুঝেন কি ফুচকা পাগলি।
>> ভাই আর নেই।
>> ও আচ্ছা ভাই।
.
.
>> কি এনেছ?
তাড়াতাড়ি দেও।
>> নেও।
>> টাকার কি অভাব পরছে নাকি?
এতো কম হে।
>> আরে টাকার অভাব পরবে কেন?
ফুচকা কম ছিল তাই কম আনছি।
আচ্ছা তুমি তোমার আম্মুকে নিয়ে হাসপাতালে এসে তোমার এতো খাবারের প্রতি মনোযোগ কেন?
>> ভ্যাএএএএএএএএএ।
>> আরে কান্না করতাছ কেন?
>> খিদা লাগছে তো।
তাই কান্না করি।
>> খিদা লাগছে খাও।
কান্না কর কেন?
>> না আমি ভাত মাংস খাব।
>> তো এতো রাতে ভাত মাংস পাব কোথায়?
>> আরে যাও না যোগাড় করে নিয়ে এসো।
খুব খিদা লাগছে।
>> আল্লাহ এই মাইয়ার কাছ থেকে আমাকে রক্ষা কর।
>> ভ্যাএএএএ।
>> আবার কান্না কর হে।
>> খিদা লাগছে খুব।
তাই কান্না করি।
>> আচ্ছা দেখি কোথায় খাবার পাই কিনা।
.
.
>> ভাই খাবার আছে কি?
>> আছে ভাই।
>> তাইলে ভাই দেন তো।
>> আচ্ছা ভাই দিচ্ছি।
.
.
>> নেও খাবার খাও।
.
একটু একটু করে খাবার মুখে দিচ্ছে মেঘা কিন্তু তার খাবার যাচ্ছে না।
তার গলার ভিতরে গিয়ে খাদনালীর মধ্যে আটকে যাচ্ছে।
কান্নায় তার বুকটা পেটে যাচ্ছে।
কিন্তু কেন?
কারণ তার মা অসুস্থ আর এই পাগল ছেলেটার জন্য।
একে একে দু'বার খাবারের জন্য তাকে পাঠিয়েছে কিন্তু তাসিম কিছু বলে নি। শুধু তার কথা শুনেছে।
>> মেঘা খাচ্ছ না কেন?
>> তুমি খেয়েছ কিছু?
>> না।
খাই নি?
আচ্ছা আন্টি কেমন আছেন?
>> মা আগ থেকে এখন অনেক ভালো।
আচ্ছা তুমি আমাকে এতো ভালোবাসা কেন?
>> জানি না।
তবে তোমাকে আমি চাই।
>> মায়ের জন্য খুব কান্না পাচ্ছে।
মা ছাড়া জানতো আমার আর কেউ নেই।
মা চলে গেলে আমি কার কাছে থাকব।
>> থাকতে হবে না কারো কাছে।
রাস্থায় থাকবে তুমি।
তোমার কি কারো কাছে থাকার যোগ্যতা আছে।
>> কি আমার যোগ্যতা নাই।
আমার যোগ্যতার প্রশ্ন করছ।
প্রপোজ কে করছিল?
>> আর কে আমি।
কিন্তু তুমি তো চাইছিলে আমি তোমাকে প্রপোজ করি।
চাইছিলে না তুমি।
বল তুমি।
>> বাহ রে আমার টেকা পরছে নাকি।
>> টেকা পরে নাই।
তাইলে আমি যাই।
>> আরে কোথায় যাচ্ছ?
>> কেন?
আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাব তোমাকে বলব কেন?
>> আমি এখানে একা তো।
>> তাইলে আগে কি বলছিলে?
>> কি বলছি আমি?
>> কেন?
তোমাকে কে দেখবে?
>> ও তা তো ঠিক ঐ বলছি।
কে দেখবে আমাকে?
>> তা অবশ্য ঠিক।
কিন্তু একটা পাগল ছেলে তোমাকে আপন করে নিবে তোমাকে ।
>> পাগল ছেলে কেন নিবে?
>> কারণ বেশি ভালোবাসে তো তোমাকে।
>> ও তাই নাকি সে ছেলেটা কে?
>> তোমার কাছে বসে আছে।
>> তার মানে তুমি।
>> জ্বী।
মহারানী।
চল মায়ের কাছে যাই।
>> আচ্ছা চল মহারাজ।
.
মেঘাকে মন খারাপ থেকে রক্ষা করতে সামন্য ঝগড়া করছে তাসিম।
যেন মনটা তার ভালো থাকে।
/
লেখক ও আইডি : হিমু জুনিয়র