āĻļāύিāĻŦাāϰ, ⧍⧭ āĻŽে, ⧍ā§Ļā§§ā§­

576

জীবন!
অদ্ভুত একটা প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্মটির অন্তিমপ্রান্তে পাড়ি দেওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু কারো সংস্পর্শে এই প্লাটফর্মটি পাড়ি দেওয়া খুব সহজ। আর সে যদি বন্ধু নামক আজিব সেই প্রানি গুলো হয় তাহলে কোন কথা নেই। চোখের পলকে পাড়ি দেওয়া যায়।
.
--কি ভাবছ?
আমার স্ত্রী পারমিতার কথায় ঘোর ভাঙ্গল।
--না কিছু না।
--আমার হয়েগেছে। এখন যাওয়া যায়?
--হ্যা চল।
.
শীত প্রায় বিদায় লগ্নে। কয়েকটি রজনী পার হলে দেখা পাব বসন্তের। শা শা বাতাসের সাথে সমসত্ত্ব মিশ্রণে আবদ্ধ হয়ে কৃষ্ণচূড়া সুভাস ছড়াচ্ছে। এই শা শা বাতাস জানান দিচ্ছে ‘বসন্ত’ আমি খুব শীঘ্রই আসছি, তোমরা আমাকে বরণ করার জন্য তৈরী থেকো। মাথার উপরে সূর্য্যের তেজে পুকুরের পানি প্রায় তলায় এসেগেছে। এই কাঠফাটা রোদে ঘণ্টা যাবত অপেক্ষা করছি আমার বন্ধু রনির। এ নিয়ে দশ মিনিট পরপর তিনবার ফোন দিয়েছি। সে কোথায় আছে জানতে চাইলে প্রত্যেক বারই উত্তরে বলেছে ‘দুস্ত আর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর আমি আসছি’। অবশ্য, এই মুহূর্তের সাথে আমি অনেক আগে থেকে পরিচিত। শুধু আমিই না, আমাদের বন্ধুসভার প্রত্যেকেই রনির এই গুণ’টার সাথে পরিচিত।
এক ঘণ্টা সাতাশ মিনিট পর মহারাজের সেই পাঁচ মিনিট পূর্ণ হল। আমার কাছে এসে বত্রিশ পাটি দাত কেলিয়ে বলছেন ‘দুস্ত তোর জরুরি তলবে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়েছি। তাই খেয়ে আসা হয়নি। একটু নাস্তা টাস্তা হলে ভাল হত’।
কোন কিছু না বলে ক্যান্টিনের দিকে হাঁটা দিলাম। রনিকে এখন কিছুই বলা যাবে না। একটা প্রবাদ আছে, সময় যখন খারাপ যায় তখন চামচিকাও লাথি মারে। আমার এখন এই অবস্থা। তাই রনিকে কিছু বলা এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
রনি আমার সামনে বসে আছে। এ নিয়ে গপাগপ চারটা তান্দুর রুটি তার পেটে চালান দিয়েছে। আরও দুইটার অর্ডার করা হয়েছে। রনির ফোকলা দাত গুলো বের করে হ্যাবলার মত একটা হাসি দিয়ে বলছে, ‘বুঝলি দুস্ত আগের মত এখন আর খেতে পারি না’। মনেমনে আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম, সেই সাথে দোয়া করলাম রনি আগের মত যেন আর কোনদিন খেতে না পারে। এখন মানিব্যাগের যা বারটা বাজাচ্ছে যদি তার ভাষায় আগের মত খেতে পারত তাহলে এতক্ষণে আমার মানিব্যাগের চিতায় আগুন দিতে হত।
ওয়েটার আরও দুইটা তান্দুর রুটি দিয়ে গেছে। রনি রুটি ছিড়তে ছিড়তে বলছে ‘দুস্ত তুই চিন্তা করিস না। ওয়ান’টুর ভেতরে আমি তোর সবকিছু করে দেব।
মনেমনে আল্লাহ’র কাছে আরতি ছিল, ‘তাই যেন হয়’।
.
বড় রাস্তার মুড়ে হাপাতে হাপাতে রনির সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। রনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন মুখ খোলা বিপদ-জনক। তাই বাধ্য ছেলের মত তার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম।
--এ নিয়ে তিন সপ্তাহ। তুই কিছুই বলতে পারলি না। আমি একটা কথা বুঝতে পারিনা তুই আমার বন্ধু হয়ে এত ভীতু কেনো? সামন্য একটা কথা বলবি তাও পারছিস না। (রনি)
রনির এতক্ষণ জমিয়ে রাখা সুপ্ত রাগ গুলো প্রকান্ড ভাবে বিস্ফোরিত হয়েছে। আসলেই নিজেকে রনির বন্ধু ভাবা লজ্জার। তার মত সাহসী ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্ব হল কিভাবে আমি তা ভেবে পাই না। অবশ্য, প্রত্যেক বস্তুই তার বিপরীত ধর্মীকে আকর্ষণ করে। আমাদের বেলায়ও তাই।
রনি আবার বলে উঠল...,
--আমি তোর সাথে আর নাই। তোর যা ইচ্ছে কর।
--এত রাগছিস কেনো? তুই তো বুঝিস পারমিতার সামনে গেলে ভয়ে আমার সবকিছু গুলিয়ে যায়।
--যদি তোর এতো ভয় তাহলে প্রেম করতে আসছিস কেনো? ঘরে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাক।
--এত রাগছিস কেনো? চল আইস্ক্রিম খাই।
--মাফ চাই। তোর আইস্ক্রিম তুই খা।
--দুস্ত আগামি-কাল দেখবি ঠিকই হয়েগেছে।
--তোর এই আগামি-কাল কোনদিন’ই আসবে না।
--সত্যি বলছি দুস্ত আগামি-কাল বলে দিব।
--আমি মরার পর বলিস, এখন তুই বিদায় হ।
--চল আইস্ক্রিম খাই।
.
বিকেল পাঁচটা, ছাদে উঠতেই মেজাজ গেলো বিগড়ে। ছাদের চার কোণে চারটা গাদা ফুলের গাছ আছে। এই চারটার মধ্যে একটার মালিক আমি। কিছুদিন আগে দু’তলার ফ্লাটের তিনটে পিচ্চির সাথে যুক্তি করে এই তিনটে গাদার চারা কেনা হয়েছে। অবশ্য, বুদ্ধিটা আমার ছিল। চাইলে আমি একাই চারটা গাছ কিনে ছাদের চার কোণে রাখতে পারতাম। কিন্তু তা হবে বোকামি। কিছুদিন আগে একটা গোলাপের গাছ এনে রেখেছিলাম। দুই দিন যেতে না যেতে টব’টা পর্যন্ত উধাও । এর কারণ দু’তলার তিনটা পিচ্চি। গাছে একটা ফুল ছিল ঐটা রিন্তি নামক পিচ্চি শাঁকচুন্নি নজরে আসে, অগত্যা তিনি ফুলটা গায়েব করে দেন। উনার হাতে ফুল দেখে উনার ছোট যমজ দুই ভাই প্রশ্ন করেন ফুল কোথায় পেলে? উত্তরে তিনি বলেন ‘অনিক ভাইয়া ছাদে একটা গোলাপের গাছ এনে রেখেছেন। সেখান থেকে এনেছি। একথা শুনে তারা পাগলের মত ছাদে ছুটে। কিন্তু গাছে তখন কোন গোলাপ ছিল না। যেটা ছিল সেটা রিন্তি নিয়েগেছে। গাছে ফুল না পেয়ে মোহিত গাছটি ভেঙ্গে ফেলে আর সেখানে ঘটে বিপত্তি। মোহিত গাছ ভাঙ্গতে গিয়ে তার হাতে কাটা ফুটে রক্ত বের হয়। মোহিতের রক্ত দেখে তার যমজ ভাই রোহিত রাগে টব সহ গাছটি নিচে ফেলে দেয়। এরপর বুদ্ধি করে তাদেরকে বললাম চারজন মিলে চারটা গাদা ফোলের গাছ কিনব। গাছ গুলো ছাদের চার কোণে থাকবে। কেউ কারো গাছ ভাঙ্গতে পারবে না। যদি ভাঙ্গে তাহলে তার নিজের গাছ দিতে হবে। আর কেউ যদি কারও গাছের ফুল ছিড়ে তাহলে তাকে ২০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এসব নিয়ম মেনে তারা আমার সাথে ফুলের গাছ কিনতে রাজি হয়। আজ ছাদে উঠে দেখি কোথাকার কোন বজ্জাত মেয়ে এসে আমার গাছের একটা ফুল ছিড়ে ফেলেছে। বকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে যখন পা বাড়ালাম তখন ভাবলাম রিন্তি, রোহিত, মোহিত’কে নিয়ে আসলে ভাল হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। পিচ্চি তিনটা আমার কথা শুনে রাগে ফুলে ফেঁপে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। রোহিত বলতেছে, অনিক ভাইয়া যে আপনার ফুল ছিড়েছে যদি টাকা না দেয় তাহলে আগের গাছটার মত ছাদ থেকে তাকে ফেলে নিচে দিব। চারজন তুমুল উত্তেজনায় ছাদে উঠলাম।
ছাদে যেতেই রিন্তি বলে উঠলো.......
--আরে মিতা’দি আপনি অনিক ভাইয়ার গাছের ফুল ছিড়লেন কেনো? (রিন্তি)
--ভাল লেগেছে তাই। (পারমিতা)
--এখন’তো আপনাকে ২০ টাকা দিতে হবে?
--কিসের টাকা?
--অনিক ভাইয়ার গাছের ফুল ছিড়লে যে।
--তোর অনিক ভাইয়া ফুল বিক্রেতা নাকি?
--ফুল বিক্রেতা হতে যাবেন কেনো?
--তাহলে টাকা চাইছিস যে?
--এটা আমাদের কমিটির নিয়ম।
--আমি কি তোদের কমিটিতে আছি?
--না।
--তাহলে কিসের টাকা?
.
রিন্তি আর কথায় না পেরে থেমে যায়। তখন পারমিতা নিচের নামার জন্য হাঁটা দেয়। সাথে পিচ্চি তিনটাও। আমি রোহিতকে ধরে বাকিদের যেতে দেই।
--রোহিত....।
--জ্বি, ভাইয়া।
--তুমি যেন কি বলেছিলে?
--কিছু না।
--ছাদ থেকে ফেলে দিব কিন্তু।
--বলছি ভাইয়া, বলছি।
--হ্যা বল।
--যে অনিক ভাইয়ার গাছের ফুল ছিড়েছে সে যদি ফুলের টাকা না দেয় তাহলে আগের গাছটার মত তাকে নিচে ফেলে দিব।
--সে’কি টাকা দিয়েছে?
--না।
--তুমি তাকে নিচে ফেলেছ?
--না।
--তাড়াতাড়ি বল কেনো ফেললে না? নয়ত আমি তোমাকে নিচে ফেলে দিব।
--আসলে পারমিতা দিদিকে খুব ভয় পাই। দুপুরে ঘুমাইনি বলে আমাকে উরাধুরা মাইর দিয়েছেন। সেই ভয়ে কোন কিছু বলার সাহস পাইনি।
--পারমিতা তোমাদের কি হয়?
--খালাতো বোন। মা তাকে নিয়ে এসেছেন আমাদের পড়ানোর জন্য। এসেই যা শুরু করেছেন। আমার খুব ভয় হচ্ছে পারমিতা দিদিকে।
--দুপুরের মারের প্রতিশোধ নিতে চাও?
--হ্যা। কিন্তু কিভাবে?
--সময় হলে বুঝতে পারবে। এখন যাও।
.
পারমিতাকে আমার আগে থেকেই চেনা। ছাদে পারমিতাকে দেখার পর তাকে কোন কিছু বলার সাহস হয়ে উঠছিলো না তাই রিন্তি, মোহিত, রোহিতকে নিয়ে আসি। আমার এখনও মনে আছে, মডেল টেস্ট পরীক্ষার শেষ হতে না হতে বাবা একটা কোচিং সেন্টারে আমাকে ভর্তি করে দেন। বই পোস্তক নিয়ে বসে থাকা আমার কোন কালেই ভাল লাগত না। তাই বাবার উপর তখন খুব রাগ হয়েছিল। কিন্তু এই রাগ তিন কি চারদিনের মাথায় উধাও। চতুর্থ দিন ক্লাসে বসে আছি। এক বড় ভাই পদার্থ বিজ্ঞান ক্লাস নিচ্ছেন। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে কোন কিছু আয়ত্তে আনতে পারছিলাম না। তাই সবার সাথে হ্যা, না মিলাচ্ছিলাম মাত্র। আর মনেমনে বাবার বোকামির কথা চিন্তা করছিলাম। এত টাকা খরচ করে কি দরকার ছিল কোচিংএ ভর্তি করার। টাকা গুলো অহেতুক জলে গেল। হঠাৎ আমার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে কানে ভেসে আসল ‘আসতে পারি ভাইয়া’?
তখন আতকে উঠে দরজার দিকে তাকালাম। তাকানোরই কথা। এত সুন্দর কণ্ঠের মালিক কে সে একবার দেখা প্রয়োজন। দরজার দিকে তাকিয়ে আবিষ্কার করলাম যতটা সুন্দর উনার কণ্ঠ তিনি ততটা সুন্দর না। শ্যাম বর্ণের। তবে উনার দিকে তাকালে কেমন যেন মায়া কাজ করে। সামনে থাকা ভাইয়া উনার নাম জিজ্ঞেস করলে উত্তরে বলেন ‘পারমিতা’। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার প্রতিভার পরিচয় পেয়েছিলাম। আমি গত চারদিন থেকে যে জিনস গুলো বুঝতে পারছি না তিনি এসেই তার ফটাফট উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন। কক্ষের সবাই তার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। অবশ্য, দু’এক জন আছেন যারা জ্বলে পোড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছেন। এর একটা কারণটা খুব সাধারন। যারা জ্বলছেন তারা সামনের ব্যাঞ্চের স্টুডেন্ট মানে ভালো ছাত্র। কে পড়া পারল না পারল তাতে আমার মত হাবাগুবার কিছুই যায় আসে না।
ধীরে ধীরে কোচিং থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে এসেছিল। বিগত দিনে আবিষ্কার করলাম আমি পারমিতার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি। কালো শ্যাম বর্ণের মেয়ে সবদিনই আমার রুচির বাইরে ছিল। কিন্তু এই প্রথম কোন শ্যাম বর্ণের মেয়ের প্রতি কিরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে। চেয়েছিলাম পারমিতাকে আমার পছন্দের কথা জানাতে। কিন্তু ভয়ে জানাতে পারিনি। বিগত দিনে যা দেখে আসছি তা দেখে আর সাহস হয়ে উঠেনি তার সাথে কথা বলার। বাঘিনী। তার মধ্যে বাঘিনীর একটা প্রভাব আছে। যা আমাকে ভীতু করে রেখেছে। শুধু আমাকেই না। কোচিং এর প্রায় প্রত্যেকেই তাকে ভয় পায়।
কিছুদিন আগে আমাদের কোচিং এর আবির নামে একটা ছেলে তাকে প্রপোজ করলে কোন কিছু না ভেবে চড় বসিয়ে দেয়। উপদেশ সরূপ বলে, ‘এখানে পড়তে এসেছিস নাকি ভাঁওতাবাজি করতে এসেছি’। পারমিতা ছেলেটাকে যে উপদেশ দিল আমার মনে হয়না আমার বাবা এমন উপদেশ দিতে পারবেন। এরপর থেকে পারমিতাকে প্রত্যেকেই মনেমনে ভয় পায়।
দেখতে দেখতে তিন মাস কেটে গেল। আমার পছন্দটাও কোচিং এর চার দেওয়ালের মধ্যে শিকল বন্ধী রয়েগেল।
.
আজ পারমিতাকে দেখতেই চিনতে পেরেছিলাম। আগের মতই আছে। একটু লম্বা হয়েছে। কখনও ভাবিনি পারমিতার সাথে আমার এভাবে দেখা হবে। আজ পারমিতাকে দেখার পর কোচিং এর চার দেওয়ালে বন্ধী ভালোবাসা আবার নতুন করে জাগ্রত হল। রোহিতের কথায় বুঝতে পারলাম পারমিতার সেই বাঘিনী স্বভাবটা এখনও রয়েগেছে।
.
--ড্রাইবার, আজিমপুর যেতে আর কতক্ষণ?
--ঘণ্টা খানেকের মত লাগবে স্যার।
পারমিতা আমার পাশে বসে আছে। রাস্তার দিকে চোখ রাখলেই দেখা যায় কৃষ্ণচূড়ার যৌবনে প্রকৃতি মোহময় করে রেখেছে। পাতা বিহীন শিমুল গাছের শাখা-প্রশাখায় আগুনের ন্যায় লাল হয়ে আছে। আজ থেকে চার বছর আগে এইদিনে রনিকে নিয়ে সেকি আনন্দ। রনির অনুপস্থিতে বসন্ত কেমন যেন পানসে মনে হচ্ছে। প্রকৃতির এই নব-সাজ দেখাচ্ছে বিদঘুটে বিচ্ছির।
--এই শুনছ?
পারমিতার কথায় ধ্যান ভাঙ্গল।
--হ্যা, বল।
--কি ভাবছো? রনির কথা নিশ্চয়?
--হুঁ।
--একটু পরই আমাদের দেখা হবে রনির সাথে।
.
আজও দাঁড়িয়ে আছি পারমিতার অপেক্ষায়। পারমিতা রোহিত, মোহিতকে স্কুলে দিতে গেছে। ফেরার সময় ও একা বাড়ি ফিরে। আমার খুব কাছের বন্ধু রনিকে পারমিতার কথা জানালে সে বলে দেরী করছিস কেনো বলে দে। দেরী করলে এক সময় দেখা যাবে তোর পাতে অন্য কেউ ভাগ বসিয়েছে। ভাগ বসানোর আগে যা করার কর। রনির কথায় অজানা একটা শঙ্কা আমাকে গ্রাস করে। তাই ভাবলাম পারমিতাকে আমার পছন্দের কথা বলে দিব। কিন্তু ভয়ের জন্য হয়ে উঠছে না। এ নিয়ে তিন সপ্তাহ হল। আজ রনিকে অনেক কষ্ট করে সাথে নিয়ে এসেছি। রনি থাকলে মনে কিছু সাহস থাকে। অবশ্য, গত তিন সপ্তাহ ধরে রনি আমার সাথে ছিল, কিন্তু পারমিতাকে কিছুই বলা হয়েনি। আজ রনি কড়া ভাবে বলেছে আজ যদি আমি না বলতে পারি তাহলে সে কোনদিন আমার সাথে আসবে না। আজই যা বলার বলতে হবে।
দূরে ঝাপসা ভাবে দেখা যাচ্ছে পারমিতা প্রতিচ্ছবি। আমার হৃদ স্পন্দন ক্রমশ বাড়ছে। পাশে থেকে রনি বলছে আজ যা বলার বলবি। যদি বলতে না পারিস তাহলে তোর মত ভীতু ফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ রাখব না। রনির এ কথায় বুক ধুকপুকানি বেড়ে গেল। পারমিতা আমার যত কাছে আসছে তত মনে হচ্ছে আমার ওজন কমে আসছে। আর একটু গেলে শূন্যের মধ্যে ভাসব।
এই ঘোরের মধ্যে পারমিতা কবেই আমাদের অতিক্রম করে চলেগেছে। ভয় নিয়ে পেছনে রনির দিকে তাকাতেই দেখি চোখ দুইটা রসগোল্লার মত বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ে মাথা নিচু করে রাখলাম। রনি একটু জুরে আমাকে ধমকে বলল...
--এত ভয় তাহলে প্রেম করতে আসলি কেন? ঘরে চুড়ি পরে বসে থাক যা। আর আমার সাথে কথা বলবি না।
কথাটা বেশ জুরে বলে উঠল রনি। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি পারমিতা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। গাড় ফিরাতেই রনিকে আর দেখতে পেলাম না। সে ততক্ষণাত ব্যানিশ। মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে বাসায় ফিরলাম।
রাত আটটা। ছাদে বসে নিজের বোকামির কথা চিন্তা করছি। আজ যদি পারমিতাকে বলে দিতাম তাহলে এমন অনুশোচনায় ভোগতে হত না রনিও আমার উপর রাগ করত না।
হঠাৎ পারমিতা এসে ছাদে আমার পাশে দাঁড়াল। সে পাশে দাঁড়ানোর ফলে আমার মধ্যে আড়ষ্টতা কাজ করছে। এই দুই মাসে পারমিতা আমার সাথে আমার কোন কথা হয়নি। আর বলব’ই বা কি করে। থাকে দেখলে আমার অস্তিত্ব মেলে না। ঠিক যেন সমধর্মী চোম্বক। মৌনতার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে পারমিতা মুখ খোলল...
--কেমন আছেন?
--জ্বি, ভালোই আছি।
--আগের চেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছেন। আর হবেনই বা না কেনো। সময় তো কম যায়নি। সাতটি বছর। মুখে দাড়ি গোফও গজিয়েছে দেখছি।
--জ্বি।
--তা এখন কি করছেন?
--জ্বি, আসলে তেমন কিছু না।
--কথায় কথায় জ্বি জ্বি করছেন কেনো? নাকি এটা আপনার অভ্যাস?
--জ্বি, আসলে না।
--আবরও।
--দুঃখিত। আর হবে না।
--রোহিতকে বিচুতি পাতা ডাকার জন্য আপনি বলে দিয়েছেন?
--ইয়ে.. মানে....
--ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অনেক দিন পর বিচুতি পাতা বলে কেউ আমায় ডাকল। অবশ্য, এখন যদি সেই সাত বছর আগের দিন গুলিতে থাকতাম তাহলে যে আমায় বিচুতি পাতা বলত থাকে দেখে নিতাম।
--হা হা।
--আপনি দেখছি হাসতেও জানেন। তা আজকে আপনার বন্ধুর সাথে কি নিয়ে ঝগড়া হল।
--ও কিছু না।
--তাই।
--হুঁ।
--আগামি-কাল তো বসন্তের শুরু।
--হ্যা।
--আপনার কোন কাজ আছে?
--না। কেনো?
--একটু বেরুবো বলে ভাবছিলাম। কিন্তু সাথে কাউকে পাচ্ছিলাম না বলে আর বাইরে যাওয়া হচ্ছে না। আপনি কি আগামি-কাল আমাকে একটু সময় দিতে পারবেন।
--হ্যা, পারব।
--আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি কাল সকাল দশটায় তৈরী থাকবেন।
--আচ্ছা।
.
পারমিতা ছাদ থেকে চলে যাওয়ার পর মনেহচ্ছে এতক্ষণ আমি স্বপ্নের মধ্যে ছিলাম ঘুম ভাঙলে স্বপ্নটাও ভেঙে যাবে। রাজ্য জয়ের তৃপ্তি নিয়ে রনিকে ফোন দিলাম, কিন্তু রনি ফোন ধরছে না। আজ রনির রাগের পরিমানটা একটু বেশি তাই হয়ত ফোন ধরছে না। সকাল হলে দেখা যাবে রনির সব রাগ উদাও।
.
পারমিতার সাথে বসে আছি চন্দ্রিমা উদ্যানে। পারমিতা আমাকে এখানে নিয়ে আসার মানেটা কি বুঝতে পারছি না।
--আপনার ঐ বন্ধুটার নাম যেন কি? (পারমিতা)
--কোন বন্ধু?
--কাল যার সাথে ঝগড়া হল।
--অহ! তার নাম রনি।
--উনাকে ফোন দিয়ে এখানে আসতে বলেন।
--রনিকে এখানে ডাকার কি আছে?
--এতো কেনো কেনো করছেন কেনো। ফোন দেন।
--ও গতকাল থেকে আমার ফোন পিক করছে না।
--আমার মোবাইল দিয়ে উনাকে ফোন দিয়ে আসতে বলেন।
--হুঁ।
পারমিতার মোবাইল দিয়ে যেই ফোন দিলাম সাথে সাথে রনি ফোন পিক করল। অথচ গতকাল থেকে ‘শ’ খানেক ফোন দিয়েছি তার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই।
--হ্যালো। কে বলছেন?
--তুই কোথায়?
--বাসায়। কিন্তু আপনি কে?
--অনিক।
--শালা তুই আমাকে ফোন দিয়েছিস কেনো? আর এটা কার নাম্বার।
--আমি ফোন দেইনি। পারমিতা দিতে বলেছে। আর এই নাম্বারটা পারমিতার।
--মানে?
--আসলেই বুঝতে পারবি। চন্দ্রিমা উদ্যানে আছি। চলে আয়।
--তুই আধা ঘণ্টা অপেক্ষা কর আমি আসছি।
.
গাড়ি এসে থেমেছে আজিমপুর কবরস্থানের গেইটে। ভেতরে গেলেই রনির দেখা পাব। গেইট থেকে ৬৭ কদম পরই রনির বাড়ি। আজ তার তিন বছর হল এখানে আসার। হাঁটতে হাঁটতে ৬৭ কদম পেরিয়ে কবে রনির বাড়ির সামনে চলে আসি বুঝতেই পারলাম না। রনির বাড়ির সামনে সাদা প্রাচিরে খুদাই করে লিখা রায়হান মাহমুদ রনি (১৩৯৭-১৪২১ বঙ্গাব্দ)। কৃষ্ণচূড়ার কিছু পাঁপড়ি ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসা হয়নি আজ রনির বাড়িতে। মাঝে মাঝে রনির উপর প্রচন্ড রাগহয়। আমাদের না জানিয়ে আজিমপুরে এসে বাড়ি করেছে। বন্ধু হিসেবে একবার বলারও প্রয়োজন মনেকরেনি। আসলেই শালা স্বার্থপর। নিজ স্বার্থে সবাইকে একা রেখে এখানে এসে সংসার পেতেছে। আন্টি (রনির মা) তাকে সবসময় বলতেন মেসে আর কতদিন থাকবি? চাকরি বাকরি করে একটা বাড়ি বানাবি কবে? আন্টি এ কথা গুলো এখন আর রনির শুনতে হয়না। কারণ, এখন সে আর মেসে থাকে না। তার নিজ বাড়িতে থাকে। তাই আন্টির এসব কথা বলার আর সুযোগ হয়ে উঠেনা।
শালা আসলে একটা বড় ধরনের মিথ্যুক। সেদিন যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। পাঁচ মিনিট বললে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। সেদিন বলেছিল আধা ঘণ্টা দেরী হবে আসতে। অথচ তিনটা বসন্ত পার হয়ে গেলো তার কোন খবর নেই। মাঝে সৃষ্টিকর্তাকে জিজ্ঞেস করি আর কতটা বসন্ত পার হলে রনির আধঘণ্টা পূর্ণ হবে। সৃষ্টিকর্তাও মুখ ফিরিয়ে নেন। আমার এখনও মনে আছে, তিন বছর আগে বসন্তের এই দিনে প্রকৃতি সজ্জিত হয়েছিল কৃষ্ণচূড়ার আর শিমুলের রক্তিম আভায়। সেদিন রাজধানীর রাজপথটাও রক্তিম আভায় রঞ্জিত হতে সুযোগ হাতছাড়া করেনি।
.
লেখাঃ রবিউল হাসান

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ