āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ā§Šā§§ āĻŽে, ⧍ā§Ļā§§ā§­

617 {2}

পাগলের প্রেম,,

Sopner Akash

শেষ পর্ব,,,,

.
- এইযে শুনছেন?
- হ্যাঁ বলুন।
- চিনতে পারছেন?
- হ্যাঁ, ওইযে আপনি সেদিন আমাকে বাইক নিয়ে নামিয়ে দিলেন।
- হুম, মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ,, আপনার নামটা জানতে পারি?
- হ্যাঁ, আমি মারিয়া আর আপনি?
- আমি তুহিন।
- খুব সুন্দর নাম , কাধেঁ ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
- অফিসে।
- ওয়াও, কিসের জব করেন?
- সফটওয়্যার কোম্পানিতে।
- গ্রেট, ওখানে বেতন মনে হয় ভালই, তাই না?
- হ্যাঁ, মোটামুটি ভালই, ৪৩ হাজার আছে।
- এটাকে মোটামুটি বলেন।
- তা নয়তো কি? আপনার বাসা কই?
- বাসা অনেক দূরে, অন্য জেলায়। এখানে হোটেলে থাকি। আর এখান থেকেই পড়াশোনা করি।
- ওহ্,,, এখন আসি, আমার অফিসে দেরী হয়ে যাচ্ছে।
- আচ্ছা যান, একটা কথা বলবো?
- বলুন,
- মিঃ তুহিন আপনার নাম্বারটা দিবেন?
- হু, দেওয়া যায়, এই নেন।
.
তারপর অফিস চলে যায় তুহিন। তুহিনের একটু অবাক লাগলো প্রথমে কারণ মারিয়া ওর নাম্বার চাইলো, যেটা ওর নিজের চাওয়ার কথা আর সেটা ওই মেয়ে চাইলো।
বিষয়টা পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজে মন দেয় তুহিন।
.
সন্ধ্যা বেলা, যখন বাসায় এসে বিছানায় বসে গেমস খেলছিল তখনই একটা মিস কল আসে ওর ফোনে। কল ব্যাক করে দেখে সেই মেয়েটা। তারপর থেকে ওদের ফোনে কথা বলা শুরু হয়।
.
আমি যখন বলতাম, এখন বিয়ে করে নতুন বউ ঘরে আন।
তখন আমার ছেলেটা হাসতো আর বলতো,, মা একটু পরে করি বিয়ে, কেবল তো কথা বললাম ওর সাথে।
.
এরপর থেকে ওরা দুজন প্রতিদিন ফোনে গুজুর গুজুর করতো। আমার ছেলেটা খুব ভালবাসতো ওই মেয়েটাকে।
একদিন তুহিন মারিয়াকে প্রপোজ করে আর মারিয়া খুব সহজে ওকে গ্রহণ করে।
.
ওরা ফোনে কথা বলতো, যাকে বলে প্রেম। আর আমি হাসতাম, আমার ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে, প্রেম করতে শিখে গেছে।
যখন ওকে এ কথা বলতাম তখন লজ্জা পেয়ে আমার আঁচলে মুখ লুকাতো।
.
ওদের রিলেশন হওয়ার ছয় মাস পর,,,,
.
ওরা প্রতি শুক্রবারে দেখা করতো আর সেদিন মারিয়া ওর কাছ থেকে এটা ওটা দামী জিনিস চাইতো আর তুহিন সেটা অবলিলায় দিয়ে দিতো, কারণ তুহিন মারিয়াকে সত্যি সত্যি খুব ভালোবাসতো। এরজন্যে মাঝেমধ্যে মারিয়া ওর হাত খরচের জন্য টাকা চাইতো, অনেক গুলো করে, আর তুহিন ব্যাংক থেকে তুলে দিয়ে দিতো।
.
কিন্তু মেয়েটা ছিলো খুব বাজে। ওর মনে ভালবাসা বলতে কিছু ছিলো না। মেয়েটা ছিলো একটা প্লে গার্ল।
যখন যার কাছ থেকে পারে যেভাবে এটা ওটা নিতো ভালবাসার নাটক করে।
.
এটা আমি আর আমার ছেলে কেউ তখন জানতাম না।
কিন্তু একদিন ওরা যখন দেখা করতে গেছিলো তখন মারিয়ার ফোন ভুলে তুহিনের এক ব্যাগে ফেলে রেখে ও ওর হোটেলে চলে যায় আর তুহিন বাসায় চলে আসে।
.
রাতে যখন কিছু কাজ করার জন্য ব্যাগ থেকে ফাইল আনতে যায় তখন মারিয়ার ফোন পায় ওর ব্যাগে।
.
তখন ও ফোনে দেখে ওর মতো অসংখ্য ছেলের নাম্বার নানা রকম রোমান্টিক মেসেজ কত নাম্বার থেকে। আর তখনই আসছিল কয়েকটা মেসেজ। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে দেখে মারিয়ার কর্মকান্ড।
.
খুব ভেঙে পরে ও। পরের দিন গিয়ে মারিয়াকে এসব বলে, ও কেন করলো ওর সাথে এমন। কিন্তু মেয়েটা চুপ করে থাকে কিচ্ছু বলে না।
তাই একটা থাপ্পড় মেরে চলে আসে ও, আর কিছু বলেনি।
.
তারপর কয়েক দিন একেবারে ভেঙে পরে ও, সবসময় চোখের জল ফেলতো আর নিশ্চুপ মনমরা হয়ে থাকতো। আর কি যেন ভাবে। এরকম ভাবতে ভাবতে একদিন মাথা ঘুরে পরে যায় তারপর ওকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
.
ও যেদিন মারিয়াকে থাপ্পড় মেরেছিল সেদিনের পর থেকে আর ওকে এখানে দেখা যায়নি, হয়তো চলে গেছিলো এ এলাকা ছেড়ে।
.
আর আমার ছেলেকে এমন করে রেখে যায়। হাসপাতাল থেকে ফেরার পরই ও এমন হয়ে যায়।
.
তুহিন ওকে বিয়ের কথা বলতো না এমনটা নয়, তুহিনও ওকে মাঝেমধ্যে বিয়ের কথা বলতো কিন্তু ও তখন এড়িয়ে যেতো আর তুহিন ওর বাচ্চার নামও ঠিক করে ফেলেছিলো,, ওর আশা ছিলো ওদের একটা মেয়ে হবে আর তার নাম হবে, ময়না।
.
তাই আমি মাঝেমধ্যে ওর সাথে ফাজলামো করে বলতাম, ভবিষ্যৎ ময়নার মার হবু জামাই। আর ও তখন হাসতো, কিন্তু মেয়েটা ওকে এতবড় ধোঁকা দিবে তুহিন কল্পনাও করতে পারেনি।
.
এখন পর্যন্ত ওর চিকিৎসা চলছে ধীরে ধীরে ওর পাগলামী গুলো কমে আসছে, আগে আরও বেশি পাগলামী করতো কিন্তু এখন আর করে না, এখন শুধু চুপচাপ বসে থাকে, কেউ কথা বললেও বেশি উওর দেয় না।
.
আর ও সেই গাছতলায় গিয়ে বসে থাকে আর মারিয়ার অপেক্ষা করে, ও ভাবে হয়তো একদিন মারিয়া ওর কাছে ভালো হয়ে ফিরে আসবে, তাই ও অধীর আগ্রহ নিয়ে ওখানে বসে থাকে, তবে ও এখন নিজেও জানে না ও কি জন্য ওখানে যায়,  কিন্তু ও তো আর জানে না, ওর এ আচরণ দেখে সবাই ওকে পাগল বলে।
.
হ্যাঁ, আমার ছেলেটা আজ পাগল, পাগল হয়েছে ও ওর ভালবাসার জন্য, আমার ছেলে ভালবাসার পাগল। এক মেয়ে ওকে ধোঁকা দিয়ে পাগল বানিয়ে দিয়ে গেছে।
কাউকে মন থেকে ভালবাসছিলো বলে আজ ওর এই অবস্থা।
.
আজ সবাই ওকে পাগল বলে কিন্তু আমি তো জানি আমার ছেলে পাগল নয়। আমার ছেলে সবার থেকে ভালো। ওর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটাই হলো ও ওই মেয়েকে ভালবাসছিলো। এটাই ওর ভুল।
.
- আন্টি কাঁদবেন না প্লিজ,
- হ্যাঁ, ঠিকই বলছো, এখন আর কেদে কি হবে? আমারই দোষ,, সেদিন যদি আমি ওর সঙ্গ না দিয়ে ওকে শাসন করে বলতাম কোনো মেয়ের পেছনে না যেতে তাইলে আর আজ এ অবস্থা হতো না।
- নিজেকে দোষ দিচ্ছেন কেন? দোষ তো ওই মেয়ের, ও আপনার ছেলের সাথে প্রতারণা করছে।
- যা হবার হয়ে গেছে, এখন আর আগের দিন গুলোর স্মৃতি সামনে এনে কি লাভ।
- ঠিকই বলছেন আন্টি।
- তোমার জানা হয়ে গেছে, হলে এবার যেতে পারো।
- কেন আন্টি আপনার প্রবলেম হচ্ছে?
- না, কিন্তু আমি একা থাকতে চাই এখন, তুমি যাও।
- আচ্ছা আন্টি, পরে আবার আসবো এখন আসি।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
তারপর ওখান থেকে চলে আসলাম। কেন জানি আজ ওই পাগলটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে, দুই চোখ ভরে কান্না আসতে চাইছে তবুও আসছে না। কোনো এক অজানা বাধা জল গুলো আটকে রাখছে, হয়তো একদিন কোনো বাধা না মেনে চোখ বেয়ে ঝরনার মতো পড়বে।
.
এই অল্প দিনে ও আমার মনে এভাবে জায়গা করলো কিভাবে? ওকেও যে আমি ভালবেসে ফেলেছি, এখন ওকে পাবো কিভাবে, আর ওতো এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।
.
আন্টি বলছে এর আগে নাকি আরও খারাপ অবস্থা ছিলো তারমানে এখন ধীরে ধীরে ও সুস্থ হয়ে যাচ্ছে, হ্যাঁ, ওকে সুস্থ হতেই হবে। দরকার হয় আমি ওর সাথে থাকবো। ও আবার সেই চাকরি করবে,, প্রতিদিন অফিসে যাবে। ওকে যেভাবেই হোক সম্পূর্ণ সুস্থ হতেই হবে।
.
না হলে আমি যতটুকু ওকে ভালবাসি সেটুকু মিথ্যা হয়ে যাবে।
আর ওই মারিয়া নামের মেয়েটাই কি? আমিও তো একটা মেয়ে কিন্তু আমার ভেতর তো এমন মানসিকতা নেই, যেটা দিয়ে আমি কারও মন বা জীবন নিয়ে খেলা করবো। ও এমন করলো কেন? এতোই কি ওর অভাব যে কারও সাথে খেলা করে নিজের দিন চালাতে হবে।
.
এসব মেয়ের বাসায় কেউ আছে কিনা কে জানে? থাকলে বোধ হয় ওদের একটু শিক্ষা থাকতো, এখন শিক্ষা নেই বলেই এমন করে, মানুষদের প্রতিনিয়ত ঠকায়, ভালবাসায় ধোঁকা দেয়।
.
সামান্য কটা টাকা আর ভালো থাকা খাওয়ার জন্য এমন শতশত ছেলেকে নিয়ে খেলা করতে ওর এতটুকুও বাঁধলো না, যে ওর পরিণাম কি হতে পারে। ভাববেই বা কি করে, ওদের জ্ঞান, শিক্ষা, সৎ চরিত্র থাকলে তো এসব নিয়ে ভাববে। এগুলোই তো ওদের নেই, তো ভাবার প্রশ্নই আসে না।
.
প্লে বয় বা প্লে গার্ল, ওরা শুধু নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে নিজের সম্মান আর মনুষ্যত্ব কে মেরে ফেলে শুধু নোংরামি আর জীবন খেলায় মেতে থাকে।
যেখানে ভালবাসা বলতে কিছু নেই, ভালবাসা কি ওরা জানে না, ওরা জানে শুধু খেলা করতে, কিভাবে একজনের মন নিয়ে খেলা যায় এটা ওরা খুব ভালভাবে জানে। তাই তো ওরা যখন কারও মন ভেঙে দেয় তখন তারা কাদে আর ওরা হাসে। এরা হলো প্লে বয় বা প্লে গার্ল। আর এদের একটা নিত্য অভ্যাস হলো, যেদিন যাকে পাবে তার সাথেই সারারাত কোনো হোটেলে বা নির্জন জায়গায় কাটিয়ে দেওয়া। এরা প্রথমে যে দামী জিনিসটা হারায় তা হলো এদের চরিত্র। চরিত্রকে উপেক্ষা করে এরা এদের সবকিছু অন্যসব ওদের মতো কুকুরদের কাছে সমর্পণ করে দেয়।
.
তাই কারও জীবন নিয়ে খেলা করতে এদের একটুও বাধে না। একবারও তারা তার কথা ভাবে না, যার সাথে তারা এমন ভালবাসার খেলা করছে তাদের কি হবে। কারণ তারাই তো ওর ভালবাসা ধরে আকড়ে আছে, কিন্তু এই প্লে গার্ল গুলো কেন ওদের মনের কথা বুঝতে চায় না, সে ওর জীবন থেকে চলে গেল তো ওর জীবনটাই মরুভূমিতে পরিণত হবে।
.
ওরা ওদের এই কথাটা ভাবে না, ওরা শুধু জানে ঠকিয়ে কিভাবে এটা ওটা হাছিল করবে।
.
প্লে গার্ল ছাড়াও আরও কিছু ছেলে মেয়ে আছে যারা একজনের সাথে কতদিন প্রেম করে আবার কিছুদিন পর একজন আরেক জনের হাত ছেড়ে দিয়ে অন্য তৃতীয় জনের হাত ধরে,, এতে যে হারায়,, সে চিরদিনের জন্য তার ভালবাসা হারিয়ে ফেলে,, চিরদিনের জন্য, তার কারণ হলো, ভালবাসা থেকে তার বিশ্বাসটা সারাজীবনের জন্য নষ্ট হয়ে যায়, এজন্য সে তার ভালবাসা পাওয়ার হাল ছেড়ে দেয়। আর সারাজীবন একা থাকতে চায়।
.
না, অনেক চিন্তা ভাবনা করে ফেললাম, এখন একটু ঘুমাতে যাই। আজ খালি হাতে তুহিনের বাসা থেকে চলে আসছি, ওর সাথে একটু কথাও বলতে পারলাম না।
এখন ঘুমিয়ে পড়ি, কাল কলেজে গিয়ে দেখবো ও আসে কিনা, তাহলে ওখান থেকে ওর সাথে একটু মেশার চেষ্টা করবো। যে করেই হোক ওকে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ করবো, ওর সব দায়িত্ব আমিই নিব।
.
অতঃপর তার পরের দিন,,
আপুকে বলে দিছি তুহিনের সম্পর্কে আমার কেমন মনোভাব কিন্তু আপু সব শুনে কিচ্ছু বলে নাই, শুধু কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো।
তাই আজ ওর সাথে একটু ভালভাবে কথা বলার জন্য একটু আগেই কলেজের দিকে রওনা হলাম।
.
কিছুক্ষণ পর কলেজে এসে পড়লাম,, এসে দেখি মক্কেলটা বসে আছে,, তাই আবার আমিও ওর কাছে গিয়ে এক গাছের গুড়ির উপর ওর পাশে বসে পড়লাম।
- এই শুনো,, ( হাত ধরে আমার দিকে ঘুরালাম)
- কি?
- বলো তো তোমার নাম কি?
- মনে নাই তো।
- তোমার নাম হলো তুহিন।
- তুহিন???
- হ্যাঁ,, আজকে থেকে এটা মনে রাখবে,, যে তোমার নাম তুহিন।
- আচ্ছা।
- এবার বলো তোমার নাম কি?
- তুহিন।
- এইতো পেরেছো,, চলো আমার সাথে যাই।
- কই?
- আগে চলো তারপর বলছি।
- না না, আমি যাব না, মা বকবো, কারও সাথে গেলে।
- কেউ কিচ্ছু বলবো না, চলো আমার সাথে। ( হাত ধরে জোর করে নিয়ে যাচ্ছি)
- তুমি কলেজে যাবে না?
- জ্বী না, আজ আমি তোমার সাথে থাকবো।
-,,,,,,,,,,,
- আর শুনো,, একদম বাচ্চাদের মতো করবে না। তুমি অনেক ভালো, গুড বয়।
-,,,,,,,
- আর শুনো এখন থেকে আমি যা বলবো তুমি তাই করবে।
- তুমি কে?
- আমি !!!!  আমি হলাম তোমার একটা বন্ধু। আর আমাকে তুমি তানিশা বলে ডাকবে।
- আচ্ছা।
- আজ এতো পরিষ্কার হলে কেমনে? এতদিন তো ময়লা জামা আর অগোছালো চুল ছিলো কাটলে কবে?
- কাল মা, এক লোকের কাছে নিয়ে গেছিলো সেই পাজি লোকটা আমার সব চুল কেটে দিছে।
- হিহিহি,,, ওটা পাজি লোক না, ওটা নাপিত।
-,,,,,,
- নতুন জামাও তোমার মা কিনে দিছে?
- হ্যাঁ।
এটা কই নিয়ে আসলে।
- চলো ভেতর যাই।
.
তারপর ওকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম। ভালই লাগছে ওর সাথে সময় কাটিয়ে, বাচ্চাদের মতো কথাবার্তা, আচার আচরণ, কেন যে সবাই ওর কাছ থেকে দূরে থাকে কে জানে। আমার তো এই পাগলটার সাথে থাকতে ভালই লাগছে। সারাজীবনই ওর সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু আগে ওকে গুছিয়ে নিতে হবে। একদম স্বাভাবিক মানুষ করে তুলবো ওকে। কারণ,, ওকে যে আমি ভালবেসে ফেলেছি। ওকে একা রেখে আমি ছেড়ে যেতে পারবো না। যাই হয়ে যাক না কেন? ওর কথায় ভাবনা কাটলো,,,
.
- এখানে কেন এলে?
- চলো আমরা এখন খেতে বসবো।
- না না, আমি খাইছি। মা খাবার দিছিলো, ওইগুলা খাইছি।
- চুপ, এখানে চুপটি করে বসে থাকো, খাইছো তাতে কি হইছে,, আবার আমার সাথে খাইবা,  ঠিক আছে।
-,,,,,,,,
টেবিলে খাবার দেবার পর,,,,
.
- এই নাও খাও এবার।
- আমার ক্ষিধে নেই।
- হা, করো। ( জোর করে মুখে খাবার তুলে দিলাম)
- খাইয়ে দিলা কেন?
- এমনি,,, আর চুপচাপ ভালো ছেলের মতো সবগুলো খাবার খেয়ে নিবা আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
- আচ্ছা,,,,
.
তারপর সবগুলো খাবার ওকে খাইয়ে দিলাম। যখন খাইয়ে দিচ্ছিলাম তখন শুধু কেন জানি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো,, আমি কিছু বুঝতে পারলাম না, ও কেন আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলো,, ওর চোখের সামনে কি তাহলে আগের কোনো ঘটনা ভেসে উঠে ছিলো, নাকি অন্য কিছু!!!!
জিগেস করি দেখি,,,
.
- এই শুনো,
- উম,
- এর আগে কখনো এভাবে তোমাকে খাইয়ে দিছে?
- কি জানি, মনে পড়ছে না,, কিন্তু মনে হলো তোমার মতো কেউ আমার সামনে ছিলো।
- কেউ নাই,, এখানে শুধু আমি, আর এখন থেকে আমার কথা একটু ভাববে, ঠিক আছে,,( আগের স্মৃতি ভুলানোর চেষ্টা করছি)
- কেন?
- আমি বলছি তাই,
- আচ্ছা,,
- আর হ্যাঁ,, আমি তোমাকে এখানে নিয়ে আসছি, খাইয়ে দিছি এটা কাউকে বলবে না কিন্তু, তোমার মাকে তো একদম না।
- কেন?
- আমাকে তো অনেক বকবে তাহলে সবাই।
- তুমি অনেক ভালো, তোমাকে কেউ বকবে না।
- আচ্ছা,, চল একটু হাটি, আর তুমি আমার সাথে সাথে হাঁটবে।
-,,,,,,,
.
পাগলটা সত্যিই পাগল,, একদম বাচ্চাদের মতো, যা বুঝাই তাই বুঝে। জানি না ওর কি হয়েছিল, হয়তো মানসিক ভাবে ব্রেইনে কিছু হয়েছিল তাই এরকম হইছে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি তাতে বুঝতে পারলাম ও এতটা পাগল না। ও খুব শিঘ্রই ঠিক হবে, কিন্তু এরজন্যে চাই একটু,
আদর, ভালবাসা, শাসন, কেয়ার,, আর ওকে এগুলো আর কেউ দিব না, স্বয়ং আমি নিজে ওকে এগুলো দিব, কারণ আমার ভালবাসা আমি আমার নিজের মতো করে তৈরি করে নিব।
.
ওকে আমার পাশে রেখে দুজনে হেটে চলছি। ও কেমন যেন মাথা নিচু করে আনমনা হয়ে হাঁটছিলো। ওকে আর এখন ভয় পাই না, ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ ও খুব ভালো, নরম মনের মানুষ। আর ওর সাথে এখন আমি ফ্রেন্ডলি হয়ে গেছি।
.
আর সবাই ওর পাশে আসে নাই কারণ সবাই ওকে পাগল ভাবতো, আর পাগল ভেবেই কেউ ওর সাথে মিশে নাই, মিশতে চায় নাই, কিন্তু আমি এখন ওর সাথেই আছি, একটু কেয়ার আর শাসন করছি, সেটাও আবার শুনছে, আমার কথা মতো চলছে। ওর মনটা একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে গেছে।
.
চিকিৎসা হচ্ছে কিন্তু সেটা কতদূর এগিয়ে গেছে কে জানে, আমি তো কিছু জানি না, থাক, জানার দরকার নাই, আমারটুকু আমি করবো। দেখি ওর হাতটা ধরতে পারি কিনা,, তাহলেই সার্থক হবো আমি ওকে পেতে।
.
- তুহিন শুনো,
- কি?
- আমার হাত ধরো,
- কেন?
- তুমি রাস্তার মাঝ দিয়ে যাচ্ছো কেন? গাড়ি আসবে, আমার হাত ধরে আমার সাথে একসাথে হাঁটো।
- তাতে কি হইবো।
- তাতে আমি তোমাকে ভালো রাখবো আর কিছু হলে দুজনের একসাথেই হবে। তাই হাত ধরো,,
- তাইলে আমি যদি মরে যাই তাইলে তুমিও মরবে?
- তুহিন, প্লিজ, এমন বলে না, চলো এখন, ( আমিই ধরলাম ওর হাত)
- আমি বাড়ি যাব।
- আচ্ছা দিয়ে আসছি চলো,,
-,,,,,,,,,,
- এই কি হলো, দূরে যাচ্ছো কেন আর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছো কেন?
- আমার ভালো লাগছে না।
- আচ্ছা, ছাড়লাম,,, একটা কথা বলো তো,,
- কি??
- এর আগে কোনো মেয়ের সাথে এভাবে ঘুরেছো,,
- মনে হয় ঘুরছিলাম,
- কবে কার সাথে?
- কবে যেন,, অনেক দিন আগে,,
- নাম কি তার,,,
- মা ম মমম আরে ধুরর, মনে পড়ছে না।
- ওসব ভুলে যাও, তুমি যেটা বললে এটা একটা সপ্ন, তুমি সপ্ন দেখেছিলে।
- সপ্ন? সপ্ন এমন হয়?
- হ্যাঁ, হয়, চল তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি। আর হ্যাঁ, এই সপ্নর কথা আর কখনো ভাববে না, নয়তো অনেক বকা দিব।
- আচ্ছা।
.
তারপর কিছুক্ষণ পর ওকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি চলে আসলাম। কেন জানি নিজেকে আজ খুব সুখী মনে হচ্ছে, এতটা সুখী আমি আগে কখনো হইনি। এভাবেই থাকতে চাই, সময় কাটাতে চাই আমি ওর সাথে,,,
.
তারপর থেকে প্রতিদিন সকালে ও এখানে আসতো কিন্তু আমি ওকে সময় দিতে পারতাম না বেশী, কারণ আমার কলেজ আছে, কলেজ রেখে ওকে সময় দিব কিভাবে, তাহলে যে আমার পড়াশুনা পিছিয়ে পড়বে,, তাই ভাবলাম দেখি ওর অভ্যাসটা চেন্জ করা যায় কিনা, তাই একদিন সকাল বেলা কলেজে গিয়ে ওকে কলেজের ভেতর নিয়ে গেলাম,,
.
বান্ধবীরা প্রথমে অনেক কথা বলছে আমি এই পাগলটাকে এখানে আনছি কেন, এটা ওটা সেটা যত্তোসব,, " আমি ওদের কথায় পাত্তা না দিয়ে ওকে নিয়ে মাঠের এক সাইডে নিয়ে বসলাম আর আমিও ওর পাশে বসে পড়লাম।
ওর একটা স্বভাব হলো ফালতু বকবক না করা,,, অন্য সব পাগলরা তো সবসময় বকবক করে, কিন্তু আমার এই পাগলটা, সবসময় চুপচাপ থাকে, বেশী কথা বলতে চায় না।
.
- এই তুহিন, সকালে খাইছো?
- হ্যাঁ,
- আমার একটা কথা শুনবে?
- বলো বলো, তোমার সব কথা শুনবো, তুমি খুব ভালো,
- বাব্বা, এই কয়েক দিনে তো তুহিন অনেক কিছু বুঝে গেছে,, কাল থেকে আর সকালে এখানে আসবে না, বিকেলে আসবে, হ্যাঁ।
- কেন?
- সকালে আসলে তো আমি তোমার সাথে থাকতে পারিনা, আমার কলেজ আছে, তোমাকে নিয়ে ঘুরতে পারিনা, তাই বিকেলে আসবা আমিও বিকেলে এসে এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো, ঠিক আছে,
- আচ্ছা,,, কিন্তু সকালে আমি কিসের জন্য এখানে জানি এসে পড়ি,,,
- তুমি কিছুর জন্য আসো না, তুমি আগে এমনি আসতে, এখন বিকেলে আসবে, শুধু আমার জন্য, ঠিক আছে?
- আচ্ছা, আসবো।
- এখন বাসায় যাও, নয়তো সবাই তোমাকে এখানে বকবে,
- তুমি তো আছো, বকবে কি করে,
- এই পাজি আমি তো ক্লাসে চলে যাব, তাইলে তোমার সাথে থাকবো কেমনে?
- আচ্ছা যাচ্ছি,,
.
তারপর তুহিনকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম, ধীরে ধীরে হাটতে হাটতে সামনের দিকে এগিয়ে গেল, ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সরাসরি বাড়ি চলে যাবে। আমি গেট থেকে ক্লাসের দিকে যাচ্ছি আর আমার চোখ দিয়ে টপটপ জল পড়ছে,,,
.
এই কয়েক দিনে ও আমাকে এতটা বিশ্বাস করে ফেললো, মাত্র কয়েক দিন হলো ও আমার সাথে ফ্রেন্ডলি হয়েছে, আর তাতেই এতো বিশ্বাস করলো, বলে কিনা " তুমি তো আছো, কে বকবে, এটা সত্যিই পাগল এতো সহজে কাউকে বিশ্বাস করে ফেললো।
.
এই বিশ্বাস করাটাই বোধ হয় ওর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো, যার জন্য ওর আজ এই অবস্থা, ওই মারিয়া নামের মেয়েটা এটা করলো কি করে, ওর একটুও বাঁধলো না, একটা ছেলে ওকে এতটা বিশ্বাস করতো কিন্তু ও সে বিশ্বাস এর একটু খানিও মর্যাদা দিল না।
.
আর সবাই ওকে পাগল বলে কি করে? লজ্জা করে না ওদের, ওকে পাগল বলতে। সত্যি বলতে ওরা নিজেরাই পাগল, তার জন্যই তো তুহিনকে পাগল বলে,,, দেখি এরপর কে আমার সামনে ওকে পাগল বলে,, ঠ্যাং কেটে দিমু,, ও শুধু আমার ভালবাসার পাগল,, আর কারও পাগল বলার অধিকার নেই,,
.
অনেককেই দেখছি পাগলদের কাছ থেকে দূরে থাকতে কিন্তু সব পাগল একরকম হয় না, কিছু পাগল আছে মাথা এক্কেবারে ড্যামেজ হয়ে গেছে তারাই মানসিক ভাবে পাগল, তাদের পাগল বলা যায়, কারণ তাদের ভালো হওয়ার চান্স কম।
.
কিন্তু এই সুস্থ সবল মানুষটাকে এতো পাগল বলার কি দরকার আছে? ওতো সেরকম পাগল নয়, ওর শুধু একটু মানসিক ভাবে শক খাওয়ার জন্য এমন হইছে, তবে ডাক্তার বলেছে তো ঠিক হতে আর সময় লাগবো না। তো আমারও সময় লাগবে না ওকে আরও একটু বেশী ভালো করে তুলতে।
.
এভাবে আরও তিনমাস কেটে গেল,,,,
.
এখনো হয়তো তুহিনের মা এসবের কিছুই জানে না, কারণ আমি আর ওদের বাড়িতে যাইনি, তাই আমিও কিছু বলিনি তাকে, তুহিনও হয়তো ওর মাকে কিছু বলেনি কারণ আমি বলতে নিষেধ করছিলাম,  তাই  বোধ হয়। একটা ছেলে এতো সহজে কারও কথা মেনে নেয়, তবুও আবার মানসিক ভাবে একেবারে সুস্থ না, যাক ভালই হয়েছে, এভাবে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে গেলেই হবে।
.
আর এই তিনমাসে এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আমি ওকে নিয়ে ঘুরতে যাইনি। প্রতিটি দিনই ওকে নিয়ে নানান জায়গায় ঘুরেছি, আর ও যেটা খেতে চাইছে বা কোনো জিনিস চেয়েছে সব দিয়েছি, আমি চাই না, ও কখনো আমার কাছে কিছু চেয়ে সেটা না পেয়ে বসে থাকে, কারণ ও একজন কে দামী দামী জিনিস দিয়ে ঠকেছে, আর আমি ওকে এই ক্ষুদ্র জিনিস গুলো দিব না, এটা কি করে হয়?
.
অবশ্য এতদিনে ওর আচরণের দিক থেকেও অনেক পরিবর্তন আসছে,, যেমন,, আগে বেশী আমার সাথে কথা বলতো না, কিন্তু এখন ওই আমার সাথে আগেই কথা বলা শুরু করে কিন্তু এখন বাচ্চাদের মতো না, স্বাভাবিক বড় মানুষের মতো, এটা আবার আমিই বলে দিয়েছি কিভাবে কথা বলবে, কিন্তু সেটা খুব সহজে ও বুঝতে পেরেছে।
.
কয়েক দিন তুলে খাইয়ে দিছিলাম, এটা ওটা আর এখন নিজে থেকেই বলে ওকে খাইয়ে দিতে, আমি কোনো সময় না করিনি, সবসময় ওর পাশে আছি, ও যা চায় তাই দেই, তো এটাও ব্যতিক্রম নয়, যখন খেতে চায় তখনই খাইয়ে দেই, আমারও ভালই লাগে ওকে খাইয়ে দিতে।
.
এখন কোনো সময় অপরিষ্কার থাকে না, সবসময় পরিষ্কার থাকে, আমি যা বলি তাই শুনে,, ওর মা যে কি করে সারাদিন, আমার মতো একটু কেয়ার করলেই তো পারে, কিন্তু করবে কি করে,, তুহিন তো বাসায়ই থাকে না বেশি,, দিনের অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে, আবার বেশীদূরে না, কাছাকাছিই থাকে শুধু বাড়িতে না, বাড়ি থেকে একটু দূরে, একটা ছোট বাগান আছে ওটায় গিয়ে বসে থাকে।
.
আপনারা ভাবছেন আমি জানলাম কেমনে? আমার তুহিন যে আমাকে সব বলে দিছে, ও কই থাকে কি করে, কিন্তু আমি এগুলো ওকে জিগেস করছিলাম তাই বলছে নয়তো আর বলতো না।
.
এখন কেন যেন নিজেকে সংসারী মনে হচ্ছে, একসাথে এতগুলো সামলে রাখছি, পড়াশুনা, বাসা, আবার ওই পাজিটাকে, ওর পেছনেই এখন বেশী খাটাখাটনি করতে হয়, অনেক কিছু শিখিয়ে দেই বুঝিয়ে দেই, যেটা ও না পারে সেটা। তাই ওর পেছনেই পরিশ্রম বেশী করতে হয়। অবশ্য আমার ভালই লাগে এরকম করতে ওর সাথে, আলাদা একটা আনন্দ পাওয়া যায় ওর সাথে সময় কাটালে।
.
আরও কয়েক দিন পর,,,,
এখন খুব সকাল, আলো কেবল ফুটে উঠছে পূর্ব আকাশে, খুব সুন্দর লাগছে চারদিক, কিন্তু আমি ব্যাগ আর কাপড়চোপড় গুছিয়ে নিচ্ছি, কারণ আমাকে একটু পরই বাড়ির দিকে রওনা হতে হবে। কলেজ থেকে এক সপ্তাহের জন্য ছুটি নিছি, রাতে স্যারকে ফোন করে এ ছুটিটা নিছি।
.
বাড়িতে একটু ঝামেলা হয়েছে তাই আমাকে যেতে হবে। সমস্যার কথা আপনারা নাইবা জানলেন। কিন্তু খুব বড়সর ভাবেই হইছে। তাই কাউকে না জানিয়ে শুধু স্যারকে বলে চলে গেলাম। আর সে আপুকেও বলছি, কিন্তু তুহিন কে বলি নাই, ওকে বলে আর কি হবে ও তো আর আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকবে না।
.
অতঃপর কয়েক দিন পর,,,
আজ ফিরে আসার পালা, যথাসময়ে চলে আসলাম। এখানে এসে আবার পরের দিন কলেজে গেলাম। ভাবছি তুহিন এ কয়দিন সকালেই আসবে তাই আজও আসতে পারে, কিন্তু আজ দেখলাম না কেন? সকালে তো আসবে না, আমি নিষেধ করছিলাম, বিকেলে আসতে পারে। তাই কলেজ শেষে আবার বাসায় ফিরে বিকেলে জায়গা মতো চলে আসলাম,
.
কিন্তু কই, আসছে না তো। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওখানে বসে রইলাম তবুও আসলো না, তাই চলে গেলাম বাসায়।
সারারাত আর ভালভাবে ঘুম হলো না, প্রতিদিন আসে কিন্তু আজ আসলো না কেন?
আমি না বললেও তো আগে আসতো তাহলে আজ আসলো না কেন?
কাল দেখা যাবে,,,,
.
পরের দিন কলেজে গিয়ে কলেজের আশেপাশে ওকে খুজতে লাগলাম কিন্তু কাজ হলো না, পেলাম না,,
- এই তানিশা শুন,,
- হ্যাঁ, রাত্রি বল,,
- তোকে সেই কখন থেকে  দেখছি কি যেন খুজছিস, কি হইছে?
- তুহিনকে দেখেছিস?
- ওই পাগলটা?
- দ্যাখ, সাবধান করে দিলাম ওকে পাগল বলবি না।
- কেন?
- ও এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সুস্থ।
- কেমনে জানলি?
- ওমনি,, আগে বল দেখেছিস কিনা?
- হ্যাঁ,, সেদিন আমরা কয়েক বান্ধবীরা মিলে বাইরে এক সাবজেক্ট নিয়ে কথা বলছিলাম কিন্তু তুই সেদিন ছিলি না, তখন ও এসে তোকে খুজছিলো,, কিন্তু আমরা তো আর জানি না তখন তুই কই গেছিলি, তাই বলছিলাম, জানি না, এরপর আরও দুদিন আসছিল তোকে খুজতে কিন্তু পায় নাই তাই বোধ  আর আসে না। তানিশা একটা কথা বলতো ও তোকে খুজছে কেন?
- এমনি, তুই বুঝবি না, এখন আসি।
.
মাঠের একপাশে গিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলাম। আমার ধারণা তখন ভুল ছিলো,,, ও সম্পূর্ণ সুস্থ না বলে ওকে আমি আমার যাওয়ার কথা জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি, ভাবছিলাম ও আমাকে খুজবে না,  কিন্তু আজ আমি ওই পাগলটার কাছে হেরে গেলাম, ও আমার ধারণা ভুল করে দিছে। একদিন নয় তিনদিন খুজছে ও আমাকে।
.
ও কি তাইলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে নাকি আগের সব ঘটনা ভুলে আবার নতুন করে জীবন শুরু করছে, ওর সাথে আমাকে দেখা করতেই হবে যেকোনো ভাবে।
.
কলেজ ছুটির পর বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে একটা সুন্দর শাড়ি পরে রওনা হলাম ওর বাসায়।
কিছুক্ষণ পরই রিক্সা এসে থামলো ওদের বাসার সামনে, তারপর রিক্সা থেকে নেমে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম।
দরজার সামনে গিয়ে বেল চাপলাম।
.
একটু পর আন্টি এসে দরজা খুলে দিল,,,,
- তানিশা মা তুমি?
- হ্যাঁ, আন্টি, এসে পড়লাম। আজও তাড়িয়ে দিবেন?
- ছিঃছিঃ কি বলো, তাড়াবো কেন? ভেতরে আসো।
- চলুন।
- কি বলবো মা তোমাকে আজ কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে।
- আন্টি কি যে বলেন!!!!!
- বলো কি খাবে?
- আপনি যা দিবেন তাই খাব।
- পায়েস দেই,,
- ওয়াও, পায়েস? দেন তাড়াতাড়ি।
- আচ্ছা, আমি আনছি।
- আন্টি শুনুন।
- কি?
- তুহিন আছে বাসায়?
- হ্যাঁ,, উপরে ওর ঘরে আছে।
- আমি যেতে পারি ওর কাছে?
- যাও, কিন্তু আবার বেশি কিছু জিগেস করো না, রেগে যেতে পারে।
- আপনি চিন্তা করবেন না, এতদিন সামলে রেখেছি আর আজ পারবো না?
- এতদিন মানে!!!
- না, এমনি কিছু না, আপনি পায়েস দেন তো আন্টি,
- আচ্ছা।
.
তারপর আন্টিকে পায়েস আনতে পাঠিয়ে দিয়ে আমি উপরে চলে গেলাম। ওর ঘরের কাছে আসতেই কেমন যেন ভয় করতে লাগলো তবুও সাহস নিয়ে ওর রুমের দিকে উকি দিলাম।
.
এটা কি হলো? এটা পাগল নাকি জলজ্যান্ত একটা ইঞ্জিনিয়ার? এতো কানে হেডফোন লাগিয়ে কম্পিউটার চালাচ্ছে। এমন ভাবে চালাচ্ছে যেন অনেক দিনের অভিজ্ঞতা আছে এতে। খুব দ্রুত, চোখের পলকে কাজ করে ফেলছে।
.
- তুহিন,,,
- ( পেছনে তাকালো)
- এগুলো কি?
- ওহ্, তুমি। এতদিন কই ছিলা? জানো তোমাকে আমি কত্তো খুঁজেছিলাম।
- হ্যাঁ, আমি জানি, আমার পাগলটা আমাকে নিশ্চয় খুজবে। ( ঘাড়ে হাত রাখলাম)  কি করবো বলো একটু কাজ ছিলো তাই বাড়ি চলে গেছিলাম।
- ওহ্,,,
- তুহিন তুমি না অসুস্থ কম্পিউটার চালাচ্ছো কেমনে?
- আমি তো পারি এইগুলা চালাতে।
- তাহলে তুমি এখন সুস্থ তাই তো।
- কেন আমার আবার কি হইছিলো?
- বুঝতে পারছি তোমার পাগলের ভূত ঘাড় থেকে নেমেছে। আচ্ছা, মারিয়া নামের কাউকে চিনো?
- সেইটা আবার কে?
- তোমার আগের ঘটনা মনে নাই?
- কিসের ঘটনা?
- কম্পিউটারে কাজ করতে পারো?
- হ্যাঁ, সব পারি।
- এখন যদি তোমাকে কোনো অফিসে কম্পিউটার বা সফটওয়্যারের কাজ দেওয়া হয় তাহলে তুমি পারবে?
- হ্যাঁ, সব পারবো।
- ইয়েস, আমার কাজ হয়ে গেছে, এখন শুধু আর একটু ওকে সভ্য করে গড়ে তুলবো। তাইলেই হবে।
- মানে!!!
- কিছু না, তুমি কম্পিউটার চালাও।
- আচ্ছা।
.
আমি আজ কত্তো খুশি হয়েছি কি করে কাকে বুঝাবো। ওর তাইলে সেদিন ব্রেইনে অনেক চাপ পড়ার জন্য স্মৃতিতে একটু সমস্যা হয়েছিল। ওই কয়েক মাসের ঘটনাটা ভুলে গেছে তাই তো বেশী। এরজন্যে আমি আল্লাহর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো। কারণ তিনি ওর মন থেকে ওই মারিয়া নামের মেয়েটাকে মুছে দিছে ।
.
কিন্তু ওর কম্পিউটারের সবকিছু পারলো কেমনে আবার? ওহ্ হ্যাঁ ওতো পড়াশুনা সেই ছোটবেলা থেকে করে আসছে, তাই এটা ওর মনে থাকারই কথা, পড়া এমন এক জিনিস যেটা কখনো ভুলে যায় না। এটা মনের সাথে সম্পর্কিত। তাই ওটা কোনো ব্যক্তির মাঝে সারাজীবনই বিদ্ধমান থাকে।
.
পড়াশোনার মাঝে ওই এক বছরের দূর্ঘটনা কিছুই না। কারণ ওটা দুদিনের আর এটা সারাজীবনের জন্য।
হুরররে আমি এখন ওকে আবার সেই অফিসে জয়েন্ট করিয়ে দিব।
.
- আন্টি, আন্টি, এখানে আসুন।
- কি হইছে?
- পায়েস রাখুন তো ওখানে। এখন বলুন ও কোন অফিসে জব করতো।
- কেন?
- আরে বলুন তো।
- আমি তো ওটার নাম জানি না কিন্তু চিনি।
- কোনটা।
- কলেজ থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বড় রোডের পাশে যে ছোট্ট সিটি আছে ওখানে।
- কাল ওকে সুন্দর করে তৈরি করে রাখবেন।
- কেন?
- ও আবার ওই অফিসে এপ্লাই করবে চাকরির জন্য।
- কিন্তু ও তো।
- আন্টি ও আর পাগল নেই, শুধু মাঝের ওই মারিয়ার স্মৃতিটা ভুলে গেছে তাছাড়া একদম ঠিক আছে এখন আপনার আর চিন্তা করতে হইবো না, দেখছেন না কিভাবে কম্পিউটার চালাচ্ছে।
- আমি কিছু জানি না, যা খুশি তাই করো। কিন্তু তোমার উপর ওকে ছেড়ে দেই কি করে? তোমাকে তো ভালভাবে চিনিও না, এতদিন অতিথি বলে এভাবে আদর করছি।
- একটু ধরে নিন না আম্মু, আমি আপনার একটা  মেয়ে।
- আম্মু বললে?
- প্লিজ, ওর দায়িত্বটা আমাকে দিন।
- কিন্তু?
- প্লিজ, আম্মু, কোনো কিন্তু না, আমি ওই মারিয়ার মতো নই।
- আচ্ছা, কাল নিয়ে যাইয়ো ওকে।
- ইয়য়য়ে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
- আজ আসি তাহলে?
- এই দাঁড়াও এখানে, এখনো পায়েস খাওনি, আগে খেয়ে নাও।
- আচ্ছা, খাচ্ছি।
.
তারপর পায়েস টুকু খেয়ে বাসায় চলে আসলাম। আমার তো এখন খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে,, আমি পেরেছি এই কয়েক মাসে ওকে আদর ভালবাসা দিয়ে সুস্থ করতে কিন্তু কতটা আপন করতে পেরেছি তা জানি না। আমি তো ওকে খুব ভালবাসি ও কি আমাকে এরপর ভালবেসে আপন করে নিবে?
.
তারপরের দিন তুহিনকে নিয়ে চাকরিতে এপ্লাই করতে নিয়ে গেলাম। এ অফিসে এর আগেও জব করেছে তাই বড় স্যার বলছে আর কয়েক দিন পর থেকেই জয়েন্ট করতে পারবে।
.
উফফফ, বাঁচলাম, তাহলে এতদিনে শান্তি পেলাম, এরপর আমাদের এক হওয়ায় আর বাধা থাকবে না।
.
আরও চার  মাস পর,,,
.
বাসায় বসে আছি আর ভাবছি, শয়তানটাকে পেলে আচ্ছা করে ধোলাই দিব, ফাজিল, হনুমান, কুত্তা। আমি এতকিছু করলাম আর আমাকেই এখন পাত্তা দেয় না।
ফোন দিলে বলে কিনা আমি ব্যস্ত আছি,,, দাড়া একবার সামনে আয় তোর ব্যস্ততা তাড়িয়ে দিচ্ছি, কিন্তু কাছেও তো আসছে না, আসতে বললে বলে কিনা আমার অফিস আছে,, এই হনুমানটি কি অফিস  বন্ধ  থাকলেও অফিসে যায় নাকি!!!! এখন তো ওর বাসায় যেতেও লজ্জা করে, ধ্যাত্ এখন  কি যে করি।
.
এখনো তো ওকে বলিনি আমি ওকে ভালবাসি শুধু সবসময় বন্ধু হয়ে পাশে থাকার কথা বলেছি, ও যদি আমাকে ভালো না বাসে তাহলে কি হবে? উফফফ ওর সাথে এতকিছু জোর করে করেছি, তাহলে ভালবাসা পাব না কেন? ওটাও জোর করেই নিব।
.
কয়েক দিন পর,,,
বিকেলে এক বান্ধবীর বাসা থেকে ফিরছি, রাস্তায় অনেক বাতাস তাই হেটেই আসছি। এইতো পাইছি চান্দু, দেখি কই যাও? শয়তান, তোমার বাইকের মতো তোমার হওয়াও আজ বাইর করে দিব,,
.
- এই এই দাঁড়াও বলছি,,
- কি হইছে?
- কি হইছে মানে, হেলমেট খুলো।
- খুললাম বলো কি হইছে?
- এই আমাকে সময় দাও না কেন? আর সবসময় ব্যস্ততা দেখাও কেন?
- ওমা, তোমাকে সময় দেওয়ার কি আছে? তোমাকে সময় দিয়ে কি করবো?
- কি বললে ( ও কি বললো এটা,,)
- সত্যিই তো, বন্ধু কে এতো সময় দেওয়ার কি আছে?
- ওই কুত্তা, আমাকে বিয়ে করবি কবে? ( কলার দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে বললাম)
- হোয়াট????
- হোয়াট মানে কি হ্যাঁ? আমাকে বিয়ে করবি ব্যস।( কি আর করবো, কেঁদেই দিলাম)
- তোমাকে বিয়ে করবো কেন?
- আমি তোকে ভালবাসি তাই।
- এটা হয় না।
- কেন হয় না? এখন প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে তাই দূরে ঠেলে দিবি তাই না?
- এমন করে বলো কেন?
- তাইলে কেমনে বলবো? এতদিন সবসময় তোর পাশে ছিলাম আর আজ যখন পুরোপুরি ভালো হয়ে গেছিস তাই আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে?
- কিছু বুঝতে পারছি না।
- বুঝার দরকার নাই, আমাকে বিয়ে কর, আর কিছু চাইবো না।
-,,,,,,,,,
- এই তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস?
- না।
- তাহলে আমাকে বিয়ে করবি না কেন? আমি দেখতে খারাপ?
- না,, আমি কিছু জানি না, মাকে বলো।
- আম্মু রাজি হলে আমাকে বিয়ে করবি?
- করতে পারি,, বাট শর্ত আছে।
- শর্ত? কি শর্ত?
- প্রতিদিন সেই আগের মতো তুলে খাইয়ে দিতে হবে।
- কিইইইইই? সবকিছু ভুলে গেছিস এটা এখনো ভুলতে পারলি না?
- না। আর আমি সব কি ভুললাম?
- কিছু না।
- শর্তে রাজি?
- না না না, তোকে আর খাইয়ে দিব না, তুই পচা।
- এইবার তো মাথা ঠান্ডা করে তুমি করে বলো।
- আচ্ছা।
- খাইয়ে না দিলে কিন্তু বিয়ে হবে না।
- তাইলে তোমাকে আমি খুন করুম।
- বিয়ে করবে কে?
- আচ্ছা খাইয়ে দিমু, এবার বিয়ে করবা?
- হুম,,, চলো দুজনে মার কাছে যাই।
- আচ্ছা চলো। আর আমাকে বিয়ের পর কিন্তু অনেক সময় দিবা।
-  আচ্ছা দিব,,,,,,, পাগলী একটা।
- অই খবরদার, আমাকে পাগলী বলবে না।
- কেন?
- আমি তোমার মতো ওমন পাগল টাইপের হতে চাই না। আমি যেমন আছি তেমনই বেস্ট।
- আচ্ছা,
- আর আম্মুকে দেখো আমি বকে দিব।
- কেন?
- এর আগে তোমাকে বেশী  যত্ন করে নাই,, তাহলে অনেক আগেই সব ঠিক হয়ে যেতো।
- কি ঠিক হতো?
- ঘোড়ার ডিম, চলো এখন।
- আচ্ছা।
.
.
হুররররে, আন্টি মেনে নিছে। আমি হ্যাপি, অনেক হ্যাপি। আজ যদি ওই ফাজিল প্লে গার্ল মেয়েটাকে যদি পেতাম তাহলে ওর দুই পা কেটে রাস্তায় ফেলে রাখতাম। ওর এতগুলো দিন নষ্ট করে দিছে।
.
কিন্তু যা হবার তো হয়েই গেছে এখন আর বলে কি হবে। এখন শুধু নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে হবে আর আমরা খুব শিঘ্রই সেটা করবো।