গল্পঃপুলিশের মেয়ে।
পর্বঃ০৫
.
পার্কের বেঞ্চির এক পাশে অনেকক্ষন ধরে
গুটিশুটি মেরে বসে আছি।কী করবো পাশে আমার স্যার বসে আছে থুক্কু ভুল বলে ফেলেছি রূপন্তী বসে আছে।
আর আমি অসহায় একটা ছেলে।আমার দিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
সে তার মত ফোন চালিয়েই যাচ্ছে।
তিনি আবার ফেইসবুক সেলিব্রেটি।
এদিকে বাবা তার পুলিশ অবশ্য সেটা এখনো তার মুখ থেকে শুনতে পারিনি তবে শুনবো আজই--
.
-রূপন্তী?
-(...)
-রূপন্তী শুনছো?
-চুপ করে বসে থাকো।।
-আমার কিছু প্রশ্ন ছিলো?
-লেট করে এসে আবার কিসের প্রশ্ন শুনি?
-না মানে?
-কী কাজ ছিলো শুনি?
-ছিলো একটা।
-একটা নাকি দুইটা ছিলো?
-মা মা মানে?
-নাহ কিছু না।
-তুমি কী আমাকে ফলো করো?
-চুপ করে বসো,কাজ শেষ করে তারপর সব শুনছি তোমার কথা।
.
রাগে আমার শরীর খিটবিট করছে।ও আপনাদের তো বলতেই ভুলে গেছি তখন যারা গাড়ীতে আমাকে তুলে নিছিলো তারা পুলিশের লোক,সিভিল পোশাকে ছিলো।অবশ্য রূপন্তীই পাঠিয়েছে সেটাই মনে হচ্ছে,না হলে পার্কের সামনে নামিয়ে দিয়ে যাবে কেনো।আমি যে কিছু জানতে চাইবো সেটারও সাহশ পাচ্ছি না,মেয়ে তো হেব্বি রেগে আছে।
.
রূপন্তী এক হাত দিয়ে ফোন চালাচ্ছে আরেক হাত বেঞ্চিতে, আমি একটু বুকে সাহশ নিয়ে সবে মাত্র হাতটা টিকটিকির মত এগিয়ে যেই একটু স্পর্শ করব ঠিক তখন মাথায় কে জানি খোচা দিলো।পিছনে তাকিয়ে দেখি হাবিলদার মূর্তিমানের মত ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।সাহশ গুলো সব চুপসে গেলো।পার্কে মানুষ আসে প্রেম করতে আর আমি আসছি বিপদে পড়ে।এমনিতে পুলিশ দেখলে আমার প্যান্ট ভিজে যাবার মত অবস্থা হয়।এই পুলিশকে আমি কখনো বিশ্বাস করতে পারি না কোন দিক দিয়ে বাঁশ দিয়ে দিবে বুঝতেই পারবো না।
.
রূপন্তী ফোন চালাচ্ছে ভাবলাম আমিও একটু ফোন চালাবো কিন্তু সুখ আমার কপালে সহ্য হলো না,সেই রূপন্তীর অফিসারের মত বলতে লাগল-
-কী ব্যাপার পকেটে হাত দিচ্ছো কেন?
-না মানে আসলে?
-কী বলো?
-ভাব তো ভাল না।আমি একটু ভয়ে ভয়ে বললাম-আসলে আমার একটু উরু তে চুলাকাচ্ছিলো তাই ভাবলাম পকেটের মধ্যে হাত দিয়ে একটু শান্তিতে চুলকায় নিই।
-হিহিহি..
রূপন্তী একটা গা জ্বালানো হাঁসি দিলো।রাগে আমার শরীর খিটবিট খিটবিট করছে।বাবা পুলিশ দেখে যা খুশী তাই করবে নাকি।আমি জোর গলায় বললাম-
-এই রূপন্তী শোনো?
-এই তুমি চিৎকার করে কথা বলছো কেন?আমার কী কানে কম শুনি নাকি?
-তাহলে কিভাবে বলবো?
-আওয়াজ নিচে নইলে?
পিছনে তাকিয়ে দেখি হাবিলদার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।হাতে সেই ইয়া মোটা লাঠি চকচক করছে।মনে হচ্ছে সদ্য তেল মাখিয়ে নিয়ে এসেছে।কে জানি কখন পিছনে বসিয়ে দিবে কয়েকটা।এটা ভাবতেই যেন বাঘের মত গর্জন থেকে বিড়ালের মত ম্যাও হয়ে গেলাম।
-আমি ভয় পেয়ে বললাম-কি যে বলো না,আমি কী চিৎকার করে বলতে পারি তোমাকে। আসলে একটা কথা বলতাম।
-কী বলো?
-ফোনটা রেখে যদি আমার দিকে তাকাতে?
-হুমম বলো?
-না মানে।
-কী মানে মানে করছো বলো?
একবার পিছনে হাবিলদারের দিকে তাকিয়ে দেখে বললাম-
-আসলে পার্কে তো সবাই প্রেম করতে আসে,তাহলে আমরা কী করতে এসেছি।
-আমরাও প্রেম করতে এসেছি।
-তাহলে সঙ্গে করে হাবিলদার আনার কী দরকার।এমনিতে তোমার ঠ্যালায় জীবন শেষ আবার হাবিলদার সাথে।
-কী বললে তুমি আবার বলো? (রাগ দেখিয়ে)
-না আসলে হাবিলদার সাথে করে না আনলে হয় না।
-সেটা পরে ভেবে দেখবো।
-লোকজন ভাববে এরা প্রেম না পাহাড়া করতে এসেছে এখানে।
-বললাম তো ভেবে দেখবো।
-ভেবে দেখলে হবে না।
-কেনো?
-এইসব পুলিশের লোক দেখলে আমার ভয় করে।
-সেই কারনেই তো সাথে করে এনেছি।
-মানে?
-একটু আগে আমার হাত ধরতে যাচ্ছিলে আমি দেখিনি মনে করছো?
>এই সেরেছে দেখলো কীভাবে।
-আসলে প্রেম করলে তো মানুষ কত কী করে।আমি না হয় একটু সাহশ দেখিয়ে তোমার হাত-ই ধরতে যাচ্ছিলাম।
-থাক হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।
.
রূপন্তী আবার ফোন চালানোর দিকে মন দিলো আর আমি সেই গুটিশুটি মেরে বসে রইলাম।কী করবো বুঝতে পারছি না।কিন্তু পরক্ষনে ভাবলাম দেখি রূপন্তী আমাকে কেমন ভালবাসে তা একটু যাচাই করে দেখি -
-এই রূপন্তী?
-আবার কী হলো।
-না মানে?
-আবার মানে মানে?
-না বলছি তুমি আমাকে ভালবাসো?
-ভাল না বাসলে এখানে বসে আছি কেনো তোমার সাথে।
মনে মনে ভাবছি সেটাও তো ঠিক।
-ভালবাসো যখন তাহলে আমার সাথে রিলেশনশিপ পোষ্ট করো না কেনো?
-পোষ্ট করলেই কী প্রমান হবে আমি তোমাকে ভালবাসি।
-না আসলে মনে মনে শান্তি পেতাম আর কী।
-দিবো না পোষ্ট।
মনে মনে বলছি তা দিবে কেনো কত ছেলের সাথে লুতুপুতু করে কে জানে।দিলে আবার সেটা করতে পারবে নাকি।এমনিতে যে সুন্দরী রিলেশনশিপ পোষ্ট করলেও ছেলেরা তবুও হুমড়ি খেয়ে পড়বে।রূপন্তী কে দেখে আমার নিজেরই হিংসে হয়,এতো সুন্দরী কেন হলো।
-আচ্ছা সত্যিই কী দিবে না?
-জানি না।
-বলো না প্লিজ।
-না!!এবার চুপ থাকো।বেশী কথা পছন্দ না।
আমি ভাবছি রূপন্তী একটু আগেই বলল যে আমাকে নাকি ভালবাসে এটাই কী ভালবাসার নমুনা।বড়লোকের মেয়ে প্রেমে যে কেনো পড়লাম।দেখে কত্ত ভদ্র ভেবেছিলাম।চুপচাপ শান্ত স্বভাবের, তেমন কারো সাথে কথা বলে না আর এখন।
.
আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম।এর মাঝে মাঝে রূপন্তী বার বার আড় চোখ দিয়ে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাঁসছে।আর আমার তো রাগে শরীর জ্বলছে।এতক্ষনে অনেক কথা শুনিয়ে দিতাম নেহাত বাবা পুলিশের এস-আই তাই কিছু বলতে পারছি না।অবশ্য রূপন্তী এখনো কিছু বলেনি আমাকে।আমার ধারনা ঐ সেদিনের এস-আই হচ্ছে রূপন্তীর বাবা।আমি একটু রাগ দেখিয়ে বললাম-
-রূপন্তী কাজ কী শেষ হইছে তোমার?
-হ্যাঁ..এবার বলো?
-রূপন্তী আমার কিছু গুরুত্বপূর্ন কথা আছে তোমার সাথে!!
-রূপন্তী বড় বড় চোখ করে বলল- হ্যাঁ বলো?
-তাহলে হাবিলদার কে যেতে বলো এখান থেকে।
রূপন্তী একবার আমার দিকে তাকিয়ে হাবিলদার কে চলে যেতে ইশারা করল।
-হ্যাঁ বলো এবার.....
.
চলবে...
.
লেখাঃশাহীন আলম সবুজ (মেঘলা আকাশ)
গল্পঃপুলিশের মেয়ে।
পর্বঃ০৬
.
-কী বলবে বলো।
-বলছি তোমার বাবা পুলিশ?
-হ্যাঁ তো?
-না মানে!!
-না মানে কী!!প্রেম করবে না আমার সাথে তাই তো?
-সেটা কখন বললাম।।
-প্রেম না করলে আবার তুলে নিয়ে আসবো।
-মানে কী!!
-মানে ঠিকই বলছি।ভুলেও কখনো এসব ভেবো না।
-ভাবলে কী হবে?
-খুব খারাপ হবে!!
-কী খারাপ?
-আবার তুলে নিয়ে যাবো থানায় তখন।।
-তারমানে....
-হ্যাঁ ঠিকই ধরেছো,প্রথমদিন তোমাকে আমার কথাতেই তুলে নিয়ে গেছিলো।
কথাটা শুনেই আমি রূপন্তীর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালাম আর ঢোগ গিলতে লাগলাম।
-কী বলো এসব?
-ঠিকই বলছি।তুমি আমাকে প্রপোজ করেছ তাই কাকা কে বললাম তোমার কথা।তখনই তুলে নিয়ে গেছিলো তোমাকে।
-তাই তো বলি তুমি জানলে কিভাবে।আর তোমার কথায় ছেড়েই বা দিলো কেন!!
-হুমম।।বুঝে ফেলেছো দেখছি।
-তাহলে ঐ এস-আই তোমার কাকা?
-হুমম..
-যাক বাবা বাচা গেলো।।
-কেন?
-আমি একটু হাফ ছেড়ে বললাম- আমি ভেবেছিলাম তোমার বাবা।তা তোমার বাবা বুঝি কোন ব্যবসায়ী।
-রূপন্তী ঝাড়ি মেরে বলল-আরে নাহ,আমার বাবা একজন পুলিশ সুপার।
>রূপন্তীর কথা শুনে তো এখনই আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে।প্যান্ট না আবার খারাপ হয়ে যায়।শান্ত, ভদ্র,একটা মেয়ে দেখে প্রপোজ করলাম,আর এখন দেখি কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসছে।কথায় আছে না গোলাপেও কাঁটা আছে।এই কথা যে কেন ভুলে গেলাম।তাহলে আজ এই পরিস্থিতিতে পড়তাম না।
.
-এই কী ভাবছো এতো?
-না না কী ভাববো।। [ভয়ে ভয়ে বললাম]
-আর তোমার কাছে যে পিস্তল থাকে ঐটা?
-আরে ঐটা আমার না।
-তাহলে?
-আমার ভাইয়ার,সেদিন চুরি করেছিলাম।
-কীহহহ..তোমার ভাইয়াও পুলিশ?
-হ্যাঁ,,,আরে তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেন?
মনে মনে ভাবছি চৌদ্দ গুষ্ঠী কী পুলিশ নাকি।এ কি বিপদে পড়লাম রে বাবা।
-আসলে পুলিশ কে আমার যত ভয়।
-কিসের এত ভয় শুনি।
-নাহ আসলে....
কথাটা শেষ না হতেই আমার ফোন বাজতে লাগল।ফোনটা বের করেই দেখি সালামের লিডারের ফোন।
-রূপন্তী বসো,একটু কথা বলে আসি।
-এখানে বসে বললে প্রবলেম কী?
-প্রবলেম আছে,একটু ব্যক্তিগত।
-ঠিকআছে।
.
আমি একটু দূরে গিয়ে সালামের ফোনটা রিসিভ করলাম-
-কী ব্যাপার এখন আবার ফোন দিয়েছেন কেন?
-দরকার বলেই ফোন দিছি।
-কী বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন?
-কাল সকালে রেডি থাকিস?
-কেন?কাল সকালে কী?
-কাল সকালেই তোকে কিডন্যাপ করতে হবে?
-কাকে কিডন্যাপ করতে হবে?
-একটা বাচ্চা কে!!
-একটা বাচ্চাকেও এভাবে ধরতে হবে।আমি পারব না এটা।
-পারতে তোকে হবেই।বাচ্চাটার বাবা অনেক টাকা-পয়সার মালিক।
-তার জন্য একটা বাচ্চা শাস্তি পাবে কেন?
-এত কথা তোর ভাবতে হবে না।যা বলছি শুধু তাই করবি।
-তবে শর্ত আছে?
-কী বল।।
-বাচ্চাটার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
-সেটা পরিস্থিতি বলে দিবে।
-এতকিছু জানি না,বাচ্চাটার কোন ক্ষতি করলে আমি এই কাজ করতে পারব না।
-ঠিকআছে যা, কোন ক্ষতি করব না।
-ঠিকআছে, বাচ্চার ছবি?
-রাতেই তোকে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
>কথাটা বলেই সালাম ফোনটা কেটে দিলো।কিন্তু আমার যে বিবেকে বাধা দিচ্ছে।কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।এদিকে রূপন্তীও গোয়েন্দার মত পিছু পড়ে আছে।সাথে ওর কাকা এস-আই,আর ওর বাবার কথা তো বাদই দিলাম।ভয়ে আমার শরীরের লোম কেমন দাঁড়িয়ে গেছে।।জীবনটা শেষ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।কিছুই মাথায় আসছে না আমার।
.
-হাও......
-এই কে কে?
-আরে বাবা আমি রূপন্তী।
-ওহহ তুমি।
-তা কে হবে শুনি।কখন থেকে ডাকছি কথা কানে যায় না।
-না আসলে খেয়াল করিনি।
-কে ফোন করে ছিলো যে খেয়াল করোনি?
-আরে তেমন কেউ না বাদ দাও।[চিন্তিত কন্ঠে]
-তুমি কী কোন টেনশনে আছো?
-আরে কই নাতো।
-দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
-নাহহ তেমন না।
-তাহলে আমি কিছু জানার ছিল তোমার কাছে?
-রূপন্তী আজ না।কাল বিকালে।
-কাল বিকালে কেন?
-নাহহ এখনই আমার বাসায় যেতে হবে।
-কিন্তু...
-কোন কিন্তু না...কাল প্লিজ।
-ঠিকআছে।
.
রূপন্তীর সাথে কথা শেষ করেই হসপিটালের দিকে গেলাম বোন কে দেখতে।বেশীক্ষন থাকতে পারলাম না।রাতের খাবার কিনে দিয়েই চলে আসলাম।মা অবশ্য বলেছিলো-কেন খাবার কিনে আনলাম,হোটেলওয়ালা নাকি দিয়েই গেছে।অবশ্য হসপিটালের সামনে হোটেলওয়ালাই খাবার দিয়ে যায় সব সময়।হয়তো বেশী টেনশনে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।মা-ও বুঝে ফেলেছে হয়তো আমি টেনশনে আছি।তাই তো জানতে চাইলো অনেকবার।
.
কোন রকমে বাসায় এসে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম।সকল ভাবনা ঘিরে ধরেছে,
কোন রকমে রূপন্তী কে আজ এড়িয়ে চলে আসলাম।কিন্তু এভাবে আর কতদিন লুকিয়ে রাখবো রূপন্তীর কাছ থেকে।কথা বলার সময় অনেকবারই রূপন্তী আমাকে আড় চোখ দিয়ে দেখেছে,সেটা বার বারই খেয়াল করেছি।এদিকে রূপন্তীর বাবা-কাকা পুলিশের লোক,কোনরকম রূপন্তী জানতে পারলে বিপদ ঘিরে ধরবে।রূপন্তীও হয়তো কিছু কিছু বুঝতে পারছে।কী করব ভেবেই পাচ্ছি না।
.
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ একটা এমএম এস আসল ফোনে,সাথে লেখা এই পিচ্চি কে কিডন্যাপ করতে হবে।ওপেন করতেই দেখি একটা ফুট ফুটে বাচ্চার ছবি,কি সুন্দর দেখতে বাচ্চা টা।হয়তো খুব বেশী হলে ৪র্থ কিংবা ৫ম শ্রেণীতে পড়ে।এত বড় অন্যায়টা কিভাবে করব ভেবেই পাচ্ছি না।সাথে সাথে সালাম কে ফোন দিলাম, ফোনটা ধরেই সালাম বলতে লাগল-
-কিরে মাহিন ছবিটা পেয়েছিস?
-হ্যাঁ পেয়েছি।
-তাহলে কাল সকালে,মনে থাকে যেন।
-আমি পারব না এটা করতে।
-কী বললি আবার বল? [রাগ দেখিয়ে]
-এই কাজটা অন্য কাউকে দিয়ে করাও।
-অন্য কেউ পারলে তোকে বলতাম না বুঝলি।
-এতটুকু বাচ্চাকে কিডন্যাপ করতে আমার বিবেকে বাধা দিচ্ছে।এটা
অন্যায় করা হবে ঐ বাচ্চার সাথে।
-বেশী বিবেক দেখাবি না।যা বলছি কর,না হলে এর ফল ভাল হবে না।
কথাটা বলেই সালাম ফোনটা কেটে দিলো।এরা কী মানুষ নাকি পশু।এতটুকু মন বলে এদের নেই।নিজের হাত-পা বাধা হয়ে গেছে,এদের কাছে আমি এখন খেলার পুতুল।কাজ আমাকে করতেই হবে, না হলে এর ফল ভোগ করতে হবে।আর সালাম তো কথা দিয়েছে বাচ্চাটার কোন ক্ষতি করবে না।বিশ্বাসও পাচ্ছি না সত্যি সত্যি ক্ষতি করে দিবে নাতো,ক্ষতি করলে তো আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না,কখনোই পারব না......
.
লেখাঃশাহীন আলম সবুজ (মেঘলা আকাশ)
গল্পঃপুলিশের মেয়ে।
পর্বঃ০৭
.
সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি কোচিং স্কুলের সামনে প্রায় এক ঘন্টা হতে গেলো কিন্তু পিচ্চিটার আসার কোন নাম গন্ধ নেই।আজ কী তাহলে আর আসবে না।না আসলেই ভাল,এত বড় অন্যায় থেকে বেচে যাওয়া যাবে।ভেবেছিলাম আসবো না কিন্তু ওরা সকালে গিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে এসেছে।এভাবে অপেক্ষা করতে করতে কিছুক্ষন পরেই-
আরে ঐ তো পিচ্চিটা আসছে।গাড়ী থেকে নামল, আর সাথে ঐটা কে নামছে...কিছুক্ষন পরেই তাকে দেখা গেলো,দেখেই নিজের চোখ কে কেমন জানি বিশ্বাস করতে পারছি না।
.
আরে রূপন্তী সাথে কেন।কিছুই তো বুঝতে পারছি না।মাথাটা কেমন জানি ঘুরতে লাগল। এত বড় অন্যায়টা কিভাবে করতে যাচ্ছি, তাহলে কী পিচ্চিটা রূপন্তীর কিছু হয়।এরই মধ্যে পিচ্চিটা রূপন্তী কে আন্টি বলে সম্বোধন করল।আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম।রূপন্তীর ভাইয়ের মেয়ে নয় তো।এমনিতে রূপন্তী গোয়েন্দার মত লেগে আছে,তার উপরে পুলিশের কোন মেয়েকে কিডন্যাপ করলে আর রক্ষা নেই।
.
মনে মনে ভাবছি কী করা যায়।পিছনে আবার সাঙ্গু পাঙ্গুরা বার বার ইশারা করছে যেতে।এখন না নিয়ে গেলে বিপদও আবার অপেক্ষা করছে।এরই মধ্যে রূপন্তী পিচ্চিটা কে স্কুলের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে।পিছন থেকে আবারও ওরা ইশারা করছে।কী বিপদে পড়লাম,কী করি এখন।
.
হ্যাঁ এটাকেই কাজে লাগাতে হবে।স্কুলের সামনের রাস্তার ওপর পাশে দাঁড়িয়ে আছি, স্কুলে ঢুকতে হলে রাস্তাটা পার হয়েই যেতে হবে।ঠিকআছে পার হওয়া যাক.......
.
-উহহহ,,,বাম পাশটা এমন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কেন।।কাঁন্নার আওয়াজ কোথা থেকে আসছে কিছুই তো বুঝতেছি না।
-এই তুমি ঠিকআছো?
পাশ থেকে কেউ কাঁদতে কাঁদতে বলল কথাটা।আমি আলসেমি আর ব্যাথা অনুভব করছি শরীরের মধ্যে,এবার একটু চোখ খোলার চেষ্টা করলাম,চোখ খুলে পাশ ফিরে দেখি রূপন্তী কাঁদছে.....
-এই রূপন্তী তুমি কাঁদছো কেন?
-কান্না কান্না কন্ঠ নিয়েই বলল- কাঁদছি কেন বুঝতে পারছো না?
-না,কার কী হয়েছে?
-তুমি কী আমার সাথে ফ্যাজলামি করছো?
আমি একটু আশে পাশে তাকিয়ে চমকিয়ে উঠলাম,আরে এটা তো হসপিটাল।আমি এখানে কিভাবে এলাম।কিছুই তো মনে পড়ছে না।
-রূপন্তী কান্না থামিয়ে একটু বলবা আমি হসপিটালে কিভাবে এলাম?
-আমি নিয়ে এসেছি!! [কান্না থামিয়ে]
-আমাকে কোথায় পেলে তুমি?
-আমার সোনা পাখির স্কুলের সামনে।
-তোমার সোনা পাখি কে?
-আমার ভাইয়ের মেয়ে।ওকে স্কুলে দিয়ে এসে সবে মাত্র বাহির হয়েছে তখনই দেখি অনেক মানুষের ভীড়,কৌতুহল বসত দেখতে এসে দেখি তুমি।
-ও এবার মনে পড়েছে।
-কী মনে পড়েছে?
-উহহ ব্যাথা...
-কই কই দেখি,একটু কষ্ট করো, ডক্টর ডেকে নিয়ে আসছি।
রূপন্তী ডক্টর ডাকতে গেলো।তারমানে
রূপন্তীর সোনা পাখি কে কিডন্যাপ করতে যাচ্ছিলাম।এখন ভাবছি তার মানে ঐসব সাঙ্গু-পাঙ্গু তখনই সরে পড়েছে।যাক বাবা শরীর কেটে ছিড়ে গেছে এটা ব্যাপার না।এত বড় অন্যায় টা তো করতে হয়নি।
.
আসলে তখন ঐ বুদ্ধি করেই রাস্তা পার হয়েছি যাতে কোন গাড়ী আমাকে ধাক্কা দেয়। এতে করে ওরা বুঝবে আমি রাস্তার পার হবার সময় এক্সিডেন্ট করার কারনে কাজটা করতে পারিনি।তাই যখনই দেখলাম একটা ইজিবাইক আসছে তখনই সামনে চলে গেলাম।আর তখনই ইজিবাইক শত চেষ্টা করে চাপিয়েও ধাক্কা এড়াতে পারিনি,তখনই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি,যার ফল সরূপ এখন হসপিটালের বেডে।
.
এরই মধ্যে ডক্টরের আগমন..
-কি ব্যাপার মাহিন সাহেব ব্যাথা অনুভব করছেন নাকি?
-জ্বী একটু একটু...
-এই একটু একটু মানে, একটু আগেই তো ব্যাথার জন্য উহহ করে উঠলে।।
[কথাটা একটু রেগেই বলল রূপন্তী]
-ডক্টর হেসে বলল-আপনার কপাল অনেক ভাল এমন একটা বউ পেয়েছেন।
আমি মনে মনে ভাবছি "বউ"। আমি রূপন্তীর দিকে তাকানোর সাথে সাথে রূপন্তী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।তারমানে এখানে রূপন্তী আমার বউ পরিচয় দিয়েছে। কী বোঝাতে চাই রূপন্তী এসব করে।ভালবাসা নাকি অভিনয়ের ছলে আমার গোপন কথা জানতে চাই।
-বাম পাশে কী ব্যাথা?
-জ্বী ডক্টর।
-হুমম ধাক্কাটা বাম পাশে লেগেছে তো তাই ব্যাথা,এছাড়া তেমন কিছু হয়নি।ঔষধ দিয়ে দিছি নিয়ম করে খাবেন দুই দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবেন।
-ঠিকআছে ডক্টর।
-আর আপনার বউ কিন্তু আপনাকে অনেক ভালবাসে,হসপিটালে আপনাকে নিয়ে এসে যে পাগলামীটা করল আমাদের সাথে,আমরা ভেবেছি হয়তো খুব সিরিয়াস রোগী।আর আপনাকে তো এখন ছাড়া যাবে না,সন্ধার আগে ছেড়ে দিবো।
.
>কথাটা বলেই ডক্টর চলে গেলো।আর আমি রূপন্তী কে বললাম-
-রূপন্তী তুমি কী আমাকে সত্যিই ভালবাসো?
-জানি না।[অভিমানী সূরে]
-বলো প্লিজজজজজজজ....
-শোন একটা কথা বলি-চোখের পানি সবার জন্য আসে না।স্পেশাল কারোর জন্যই আসে।
-আমি রূপন্তী কে কী বলব বঝে উঠতে পারছি না।সত্যি কী ভালবাসে নাকি অভিনয় করে আমার সব তথ্য জানতে চাচ্ছে।
-রূপন্তী আমরা কোন হসপিটালে আছি?
-তুমি যেটা ভাবছো সেই হসপিটালে নেই আমরা।।
-মানে?
-মানে কিছুনা।তুমি থাকো আমি বাসা থেকে আসছি।কোন কিছু দরকার হলে নার্স কে বলো সব করে দিবে।
>কথাটা বলে রূপন্তী চলে গেলো।আমি ভাবছি রূপন্তী হসপিটাল দ্বারা কী বোঝালো?তারমানে কী ও সব জেনে গেছে।নাহ এই মেয়েটা কে কোন কিছুতেই যেন বুঝে উঠতে পারছি না।যেই মেয়েটা অফিসারের মত করে কথা বলে সেই মেয়েটা আমার জন্য কাঁদছে।এত ভালবাসে কী সত্যি আমাকে।কোন বড়লোকের মেয়ে আমার জন্য চোখের পানি ফেলছে ভাবতেই শরীরের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে।
.
রূপন্তী সত্যি যদি আমাকে ভালবাসে তাহলে এমন গোয়েন্দাগিরি না করে সব সোজাসুজি কেন বলছে না আমাকে।ও যদি সত্যি ভালবাসে তাহলে আমিই ওকে সব বলে দিবো।ওকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে আমাকে।হয়তো বুঝবে, হয়তো না।তবুও এভাবে ভয়ে ভয়ে আর থাকা যাবে না।
.
এদিকে বোনেরও অপারেশন করার সময় হয়ে এসেছে।বোনের অপারেশন হয়ে গেলেই এই শহরটা কে ছেড়ে চলে যেতে হবে।না হলে সবাই এমন পিছু লেগে থাকবে।বড্ড অচেনা লাগছে শহরটা কে।এই অবস্থায় বোন কে দেখতে গেলে মা আর বোন দুইজনই কান্না-কাটি শুরু করে দিবে।একটু ভাল হলে তারপর যাবো আবার।ফোনটা হঠাৎ বাজতেই ঘোর কাটল আমার।তাকিয়ে দেখি সালামের ফোন--
-কেন ফোন করেছেন? [রাগ দেখিয়ে ]
-কেমন আছিস এখন?
-সেটা না জানলেও চলবে।।
-তুই এমন এক্সিডেন্ট প্ল্যান করে করিস নাই তো?
-কিসের প্ল্যান,এক্সিডেন্ট করার পর আপনার সাঙ্গু-পাঙ্গু কেউ আমাকে ধরেনি, সবাই কেটে পড়ছে তখন,আর আপনি এখন এসব বলছেন।আর আমি আপনারই কাজ করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির স্বীকার,আর আপনারাই কেউ আসেননি সাহায্য করতে।আমাকে মুক্তি দিন প্লিজ। আর পারছি না আমি।
-শোন এত দরদ দেখানোর সময় নেই, সুস্থ হয়ে গেলে কাজটা তোকেই করতে হবে।কিভাবে করাতে হয় সেটা ভালই জানি।
-আমিও মনে মনে বললাম -কিভাবে করাস আমিও দেখবো।
.
চলবে...
.
লেখাঃশাহীন আলম সবুজ (মেঘলা আকাশ)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ