4814

#জীবনটা_এমনই...

সংসারটা বেশ সুখেই চলছিলো। ইডেন কলেজ থেকে অনার্স পাশ করে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা পদে চাকরী পাই । তারপর একটা কোম্পানীর বড় অফিসারের সাথে  ধুমধাম করে বিয়ে হয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে কোন খাদ ছিল না আমাদের। একে অপরকে অনেক ভালবাসতাম।যে ঘরে অভাবের বালাই নেই-সে ঘরে ভালবাসাটা একটু বেশিই উকি দেয়।কারণটা- আপনারাই ভাল যানেন। তাই, একে অপরকে যথেষ্ট সাপোর্ট,সম্মান করেই টানা চার বছর সংসার করে এসেছি আমরা।
কিন্তু অতিরিক্ত সুখ বোধহয় সবার কপালে সয় না। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো। স্বামীটা হঠাৎ এক্সিডেন্ট করে প্যারালাইজড হয়ে যায়।
তারপর, উনার চিকিৎসা করার জন্য যাবতীয় সহায়-সম্পদ হারাতে হয়েছে।এদিকে দুই দুইটা সন্তানও বড় হচ্ছে।তাদেরও খরচ আছে।
এতকিছু একা হাতে সামলিয়ে চলেছি টিচারিংয়ের ওই সামান্য বেতন দিয়ে।

""স্বামীর  দীর্ঘ চিকিৎসা,সন্তানদের পড়াশোনা,সাংসারিক খরচ,আশ-পাশের মানুষের নানান কটুক্তি----- জীবনটাকে এতটা দুর্বিষহ করে তোলে যে-মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে:-সবকিছু ছেড়ে চলে যায়,পালিয়ে যায় দূরে কোথাও.""

কিন্তু, পারিনা না। তখনই চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার নিষ্পাপ দুটো সন্তানের চেহারা,বিছানায় পড়ে থাকা ওই মানুষটার অসহায় চাহনী।তখন মনে হয়-"আজ উনি সুস্থ থাকলে তো সব আগের মতই থাকতো।তবে ওনার অক্ষমতায় আমি কেন পালিয়ে যাবো..!!""
শুধু এই উপলব্ধিটুকুই আমার সম্বল,আমার ভরসা।--

~কথাগুলো পড়ে কি গল্প মনে হচ্ছে..? জ্বি না বোন/ভাই। এমনই কষ্ট করে যাচ্ছেন আমাদের এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা।প্রায়ই বিকালে রাস্তায় দিয়ে হেটে যেতে দেখি বাজারের প্যাকেট নিয়ে ফিরছেন।মুখে একটা নিদারুন কষ্টের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ফুটে থাকে। তবুও তিনি টিকে আছেন। লড়াই করে যাচ্ছেন নিষ্টুর ভাগ্যের সাথে...

লেখিকার বাণী.--"জীবনটা খুবই সুন্দর।কিন্তু সহজ নয়।আপনি যদি ওই শিক্ষিকার চেয়ে একটু হলেও ভাল থেকে থাকেন তবে শুকরিয়া করুন।জীবনে ঘাত-প্রতিঘাত আসবেই।কেউ দু:খের মেঘ সরাতে পারেনা-আবার কেউ সুখ রাখার জায়গা পায় না। তবুও সবাই বেচে আছে।  ভাগ্যের নির্মমতায় পিষ্ট মানুষটাও প্রিয়জনের মুখের দিকে চেয়ে  কষ্টগুলোকেই পুঁজি করে সামনে এগিয়ে চলার স্বপ্ন দেখে।
তাই--কিছু পেতে হলে-বাঁচতে হবে।বাঁচতে হলে সকল পরিস্থিতেই নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হবে। নিজের জন্য না হলেও-অন্তত,কাছের মানুষগুলোর মুখে এক চিলতে হাসি ফোটানোর জন্য হোক আরেকবার নতুন প্রচেষ্টা।""

(ভাগ্যের নির্মমতায় পিষ্ট মা-বোনদের জীবনের গল্প লিখতে গিয়ে যদি কিছু উচ্চ সামাজিক মানুষের কাছে আমায় নারীবাদি নামক উপাধি পেতে হয়-তবে না হয় তাই হলাম। যদিও আমি সাম্যবাদী।)

লেখিকা:--RJ  সুহাসিনী