রম্যগল্প:- "ইমমেচিউর বউ"
লেখিকা:-- সুহাসিনী (গেয়োভুত)
হুট করেই বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম। আমার আর তিথীর সম্পর্ক মাত্র চার মাস।এখন ওর বয়স কাটায় কাটায় আঠারো বছর পুর্ণ হয়ে গেছে। তাই,প্রশাসনের নানারও ক্ষমতা নাই আমাদের বিয়ে আটকানোর। হি হি হি।
শুরুতেই বাড়ি থেকে "না না" করলেও এখন দুজনের বাড়ি থেকেই রাজি। খুব সামান্য একটা বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট হলো আমাদের।
তিথীদের বাড়িতে বরের আসনে মুখে রুমাল গুজে বসে আছি।সত্যি বলতে জীবনে এই প্রথম আমি খুব লজ্জা পাচ্ছি। এই জন্যিই বুঝি বরদেরকে আগে থেকেই রুমাল দিয়ে দেয়। উহু, কি আশ্চর্য রকম অনুভুতি.!
কিছুক্ষণ পর, বিয়েটা হয়ে গেলো।বিদায়ের সময় তথী সেই রকম কান্না শুরু করলো। আমার পাশে ওকে বসানো হয়েছে। তো, এত মানুষের মধ্যে বসাইছে-একটু ফুপিয়ে ফুপিয়ে হালকা কাদলেই হয়।তা নয়-সেই জোরে ভেঁবিয়ে ভেঁবিয়ে কাদছে। আমি আস্তে করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
-এত চিল্লায়ে কাদার কি আছে.?আস্তে করে কাদলেও তো সবাই বুঝবে যে-তুমি কাদছো..!!
তিথী আমার দিকে তাকিয়ে বিড়ালের বাচ্চার মত একবার তাকিয়ে জোরে জোরে কাদতে কাদতে বলল--
--কাদবো না তো কি.?? আমার মায়া লাগছে না.?? মেনি বিড়ালটাকে রেখে যাচ্ছি,টম কুকুরটাও একা হয়ে যাবে।আমি ছাড়া ওদের কে দেখবে..!!
যাক বাবা। আমি ভেবেছিলাম -হয়ত বাড়ির লোকের জন্য কাদছে.!!এখন দেখি তার কান্না অন্য প্রানীর জন্য।😎
গাড়িতে করে আমাদেরকে বাড়ির গেইট পর্যন্ত আনা হলো।তিথী এখন আর কাদছে না।সারা রাস্তা আমাকে চিমটি দিয়ে এসেছে।এই চারমাস ও একই রকম ভাবে চিমটি দিয়ে দিয়ে আমার শরীরের অর্ধেক মাংস তুলে ফেলেছে।
আমাদেরকে বরণ করার জন্য আমার মা গেইটে এলেন।ওনাকে দেখেই তিথী জড়িয়ে ধরে বলল--
--আন্টি কেমন আছেন.?সেই যে তানভী আমাকে একদিন নিয়ে এলো,আর কোনোদিন আনার কথা বলেনি।আপনার সেই রান্না করা কষা মাংসটা যা লেগেছিল না..!!-- আজ আবার রান্না করবেন তো.??
আমি- -তিথী, চুপ করো।বাড়ি ভর্তি মানুষ।এসব কথা পরে বলবা।তুমি এখন এই বাড়ির বউ।একটু বুঝে কথা বলো।
-(রাগান্বিত ভাবে) উহু, বউ বলেই তো বলছি। কই, অন্য বাড়ির কাউকে তো বলতে যাচ্ছি না।
অবশেষে মায়ের কথায় সে মুখে একটু অস্থায়ী তালা লাগালো।
বাসর ঘরে বেশ আগে ভাগেই ঢুকলাম।হাজার হোক, নতুন বিয়ে বলে কথা.! হি হি। দরজাটা খুলেই দেখি তিথী মুখভার করে বসে আছে। আমি একটু ভয়ে ভয়েই ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
-কি হয়েছে,তিথী.?
-কি হয়নি,তাই বলো।
-ঠিক বুঝলাম না।
-আমি ভেবেছিলাম আমাদের বাসর ঘরটা গোলাপ দিয়ে সাজাবে। কিন্তু, এসে দেখি সব রজনীগন্ধ্যা। কোন আবুইল্যাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছিলে বলো তো.??
-আহা, আস্তে বলো।এইভাবে কেউ চিল্লায়.?? এইটা আমার ছোট কাকু করেছেন।
-ডাকো ওনাকে।
-কি..!!;তোমার মাথা খারাপ..?
-কেন.? মাথা খারাপ হবে কেন.?? আমাদের বাসর ঘরটা আমার মনের মত করে আবার সাজাতে বলবো।
-তিথী,প্লিজ।এই ধরনের বোকামো চিন্তা বাদ দিয়ে একটু সিরিয়াস হও।এইভাবে আবার ঘর সাজানো কি আসলেই উচিত.? আমাদের পার্সনালিটির একটা ব্যাপার আছে না.??
--আচ্ছা, ঠিক আছে।
তারপর থেকে ও চুপ করে বসে আছে।একটা কথাও বলছে না।
-কি হল,তিথী.? কথা বলছো না যে...
-তোমার ফোনটা একটু দাও।
-কি করবা..?গেইম খেলবা.?
-সে পরে হবে, আগে আম্মুকে ফোন দেই।
-কেন কেন.??
--আমার টমিকে ঠিক জায়গায় শুতে দিয়েছে কিনা শুনতে হবে না.? তুমি তো জানো, টমির ব্যাপারে আমি কতটা সিরিয়াস..
-তিথী.এটা আমাদের বাসর রাত।কোন টমীর খোজ নেবার রাত নয়।
-ও হ্যা, তাইতো। আচ্ছা, তাহলে নীলাকে একটা কল করি.?
-আবার নীলা কেন.?
-ও বলেছিল, আমার কেমন সাহস যে-বাসর রাতে ওকে ফোন দিয়ে কথা বলি। হি হি।
--(রেগে) তিথী..!!
--তুমি বকছো কেন..?? প্রেম করার সময় তো এভাবে বকা দিতে না। বিয়ে হতে না হতেই এভাবে চেঞ্জ হয়ে গেলে..!! আমি জানতাম,এমনটাই হবে।
ও আল্লাহ, নিজের কপাল নিজেই পূড়ালাম.!
-তিথী, দেখো, তুমি আমাকে ভুল বুঝছ। আমি ওটা মিন করি নি। দেখো, তোমার বান্ধবী তোমার সাথে ফাজলামী করে এই কথা বলেছে।
-তুমি আমার একটা কথাও শুনছো না।একটা কাজও করতে দিচ্ছো না। কি চাও কি তুমি..!!
>এমন সময় দরজার ওপাশ থেকে ভাবী চাপা গলায় বলল--
-তানভী.!এত ঝগড়া কিসের..! ঠিক আছিস তো..!😜
ভাবীর গলা শুনেই তিথী দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে ভাবীকে ঘরে ঢুকিয়ে নালিশ শুরু করে দিলো---
-না ভাবি, কিচ্ছু ঠিক নাই। তানভী পুরাপুরি চেঞ্জ হয়ে গেছে।ও ওর আগের মত আমাকে ভালবাসে না।আমার কোনো আবদার রাখে না। আমার একটা কথারও গুরুত্ব নেই ওর কাছে। জানো ভাবি, কাল অব্দিও ও আমার টমির খোজ নিত,আর এখন আমাকে এক সেকেন্ডের জন্যও টমির খোজ নিতে দিচ্ছে না।
ভাবী-- আরে নাহ পাগলী।সব ঠিকই আছে। কিন্তু, আজ তো ওসব খোজ নেবার দিন না। তাই না.? এটা তো তোমাকে বুঝতে হবে।
তিথী আমতা আমতা করে আমার দিকে তাকালো।তারপর অনিচ্ছ্বাকৃত মুখ ভেংচানি হাসি দিয়ে ভাবীর দিকে মাথা ঝাকালো।
ভাবীও আর কিছু না বলে চলে গেলেন।
সে রাতে আর কোনো কথা বলি নাই ওর সাথে। আস্তে করে একটা বালিশ নিয়ে সোফার এক কোনায় চুপটি করে গিয়ে শুয়ে পড়ি।
রাগে নয়-- ভয়ে।
বলা যায়..! রিলেশনশীপের সেই আগের মত আনলিমিটেড মাইর বরাদ্দ করে কিনা..!!
যতক্ষণ জেগে ছিলাম,তিথীকে দেখলাম লম্বা লম্বা হাই তুলছিলো।তবে একবারের জন্যও শুতে দেখিনি।বসেই ছিলো।।
>পরদিন সকালে উঠে নাস্তা সেরেই জরুরী কাজের নামে আমার কর্মস্থলে ফিরে আসি। কারন, ওর সাথে এই মুহুর্তে থাকা মানে শুধুই মারামারি।চাকরীটাতেও নতুন জয়েন্ট করেছি মাত্র। সেই সুত্রেই বিবাহ বন্ধন।
তবে একটা জিনিস ঠিক বুঝতে পেরেছি--
""বাল্য বিবাহটা আসলেই সবচেয়ে বোকামীর একটা কাজ। "আঠারো বছর" শুধুই বয়সের আঠারো নয়, "মনের আঠারো"ও হওয়া উচিত। নতুবা, সে তার অবস্থার পরিবর্তনটা পরিবর্তিত করে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না।নিজেকে ফেলে রাখবে সেই পুর্বের অবস্থানে,পুর্বের খেয়ালীপনায়।
তাই,
""মনের আঠারোই মুখ্য। আর, বয়সের আঠারো পার না হলে মনের আঠারোও কাজে আসবে না।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ