বাসার নিচে ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে কানামাছি খেলছি।
চোখ খুলে তাকাতেই দেখি আয়ান রেডি হচ্ছে আর জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে।
আয়ানের হয়ত অফিসে জরুরী কাজ পড়েছে,তাই হয়ত ছুটির দিন বিকেলেও যাওয়া লাগবে..। আমি আর দেরী না করে ফ্ল্যাটে চলে এলাম।
রুমে ঢুকেই আয়ানের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম-ও এখনো জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।বাচ্চাদের খেলা করা দেখছে।
আমি চুপচাপ ওর পাশে দাঁড়ালাম।
-আয়ান, আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি। 'বাবা' ডাক শোনার ভাগ্যটুকুও তোমায় গড়ে দিতে পারলাম না।
আয়ান আলতো করে আমার হাত দুটো আগলে ধরে বলল--
-রুহি, আমার কাছে তুমিই শ্রেষ্ঠ উপহার। সবকিছুই তো আল্লাহ'র হাতে,তোমার কি করার আছে বলো.? সন্তান থাকলেও তোমায় ভালবাসি,না থাকলেই শুধু তোমাকেই ভালবাসি।
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল-আয়ানের ভালবাসা।বিয়ের পাচ বছরেও আমাদের কোলে সন্তান আসেনি। আমাকে 'মা' বলে ডাকেনি।কিন্তু আয়ান সবসময় আমার পাশে থেকেছে।
কপালে মৃদু চুমু একে দিয়ে আয়ান বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
আর আমি ভাবছি তিন বছর আগেকার কথা। যখন আমার এপেন্ডিসাইটিস হয়েছিল।আয়ানের বোন একজন সদ্য পাশ করা ডাক্তার।সেটা কাটার জন্য আমাকে তার কাছেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু,অপারেশনের সময় তারই সহকর্মীদের অসচেতনতায় আমার সন্তানের নাড়ীটাও কেটে ফেলেছিল।
পরে সেটা বুঝতে পেরে আমার ননদ খুব অনুতপ্ত হয়েছিল।আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছিল। ক্ষমা তো করেছিলাম। কিন্তু, এরপর থেকে সে আর কখনো ডাক্তারি করেনি। গায়ে এপ্রোন জড়ায়নি। সেও আমাকে ভীষণ ভালবাসে। এখনো কাদে তার ভুলের জন্য।
আয়ান সবই জানে।তাই হয়ত আমাকে একটু বেশিই যত্ন করে,ভালবাসে।'
হঠাৎ খেয়াল হল আয়ান চাবি নিয়ে যায় নি।
আমি চাবিটা হাতে নিয়ে দরজা পার হতেই দেখি আয়ান পাশের বাসার ভাবির সাথে কথা বলছে। কথাগুলো ছিল অনেকটা এইরকম...
-আয়ান, দেখো তোমার রুহি তো কখনো মা হতে পারবে না।তাহলে অযথা ওকে এইভাবে টেনে লাভ কি.?
-কি করবো বলুন ভাবি.? করার তো কিছুই নেই। রুহি বাচ্চা দত্তক নিতে বলে-কিন্তু, আমি রাজি হই না। অন্যের বাচ্চা আমাকে বাবা বলে ডাকবে-সেটা কি আসলেই আমাকে আনন্দ দিবে, বলুন.??
-ডিভোর্স দিয়ে দাও। তোমার তো সামনে পুরো ভবিষ্যৎ পড়ে আছে..
-মাঝে মাঝে সেটাই মনে হয়।কিন্তু, পারিনা।বিবেকে বাধা দেয়।আমাদের ভুলেই তো ওর এই অবস্থা। আর, আমার বোনের জন্য সেটাও হয় না। ও তো সবসময় জোর করে--"ভাইয়া, আমার ভুলের শাস্তি তুই রুহিকে দিস না"।
কিন্তু আমার মনের কথাটা কেউ বোঝার চেষ্টা করলো না। রুহিও একবারের জন্যেও আমার কষ্টটা বুঝতে চাই না। আমি ওকে স্বান্তনা দিলে-তাতেই খুশি হয়ে যায়।আমার খুশি নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই।
আমি আর শোনার ধৈর্য রাখতে পারলাম না। এ কি সত্যিই আমার আয়ান.?? তিনটা বছর ভালবেসে বিয়ে করে আরো পাঁচটা বছর বিবাহিত জীবন আমাদের। এতদিনে বিন্দুমাত্রও বুঝে উঠতে পারলাম না-আমার আয়ানকে...!!:
আমার কি দোষ ছিল.?? আমার কি 'মা' ডাক শুনতে ইচ্ছে হয় না.? আমার কি ইচ্ছে করে না.?- ছোট ছোট হাত পা নিয়ে কেউ সারাদিন আমার সাথে খেলবে, আমাকে বিরক্ত করবে। কারণে-অকারণে 'মা' 'মা' বলে জড়িয়ে ধরবে...
কষ্টে আর নিজের প্রতি ঘৃণায় দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। সবকিছু কেমন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে..
---
চোখ মেলে যখন তাকালাম-নিজেকে।হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম। দরজার দিকে চোখ পড়তেই দেখি আয়ান এগিয়ে আসছে। ওকে নিজের মুখ দেখাতেও লজ্জা লাগছে আমার। ও যে শুধু আমার কারণেই বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত। আমিই তো ওকে ছেড়ে যায় নে।
আয়ান মৃদু পায়ে এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত দিল। মুহুর্তেই আমার চোখ জোড়া জলে ভারি হয়ে এলো।
-রুহি, এখন কেমন আছো.?
-মরে যাওয়ায় হয়ত ভাল ছিল। আমার বেচে থাকার কোন অধিকার নেই।
-ছি: এসব কি কথা.?? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাচতাম.? তুমিই তো আমার সব..
কি নিদারুণ জোরকৃত অভিনয়। বেশ ভালোই শিখেছে আয়ান।
ওর অভিনয়ে তাল মিলিয়ে আমিও একটু মৃদু হাসি দিলাম।
তার চেয়েও জোরে হাসছি মনে মনে।
ভীষণ হাসি। সে এক ভয়ঙ্কর হাসি.!
সেই হাসির জোর ভেতরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে...
এতটা আগুন---'হাসি থামলেও, সে আগুন থামানোর শক্তি আমার নেই..""
লেখিকা:--- সুহাসিনী (গেয়োভুত)
--------
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ