গল্পঃকিডন্যাপ।
পর্বঃ০৪
.
শায়ানের বোন আজ সুস্থ।হ্যা শায়ান আজ
অনেক খুৃশী,এমন কী তার মা।শায়ানের
বোন আজ তাদের সাথে কথা বলেছে। এতে শায়ানের চোখে পানি চলে এসেছে,এটা খুশীর কান্না।শায়ানের বোনকে ফিরে পাবার কান্না।সে যা করেছে তার সবটুকুই তার বোনের জন্য।শায়ান কখনো চায়নি তার বোন টাকার জন্য চিকিৎসার অভাবে
মারা যাক।যেমন ভাবে তার বাবা মারা
গিয়েছিলো।
.
শায়ান বুকে যে কষ্ট গুলো ছিলো সব এক
নিমিষেই মিশে গেলো তার চোখের
পানি,কাঁদলে মনটা অনেক হালকা হয়,
তাই সে বোনের কেবিন থেকে বেরিয়ে
এসে সুখের কান্না করছে।যে কান্নার দাম
কোটি টাকা দিয়েও কেনা যাবে না।এর
একেকটি ফোটার দাম অনেক।
.
--এই যে ভাইয়া একটু পিছনে তাকাবেন?
(তানিশা)
--আমাকে বলছেন?(ছেলেটা)
--জ্বী ভাইয়া।
--জ্বী বলুন।আপনি কী দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে
এলেন।
--জ্বী আসলে ভাইয়া সরি।
--কেন?
--আসলে আমি আপনাকে অন্য আরেকজন মনে
করে ডাক দিছি।
>কথাগুলো হাপাতে হাপাতে বলল তানিশা।
--আচ্ছা ঠিক আছে।
.
এদিকে তানিশাও শায়ান কে মনে মনে
খুজতে লাগলো।তানিশা যেখানেই যায় শুধু
তার দুটি চোখ শায়ানকেই খুজে ফেরে।।
শায়ান যেন তার মনে জেগে বসে আছে।
তার অনুভূতির শিরায় শিরায় মিশে গেছে।
সে কিছুতেই শায়ান কে ভুলতে পারছে না।
শায়ানের সব কিছুই তানিশার কাছে
অজানা।সবই রহস্য মনে হয় তানিশার এমনি
শায়ানের নামটাও।
.
পিছন থেকে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে
তানিশা চমকে ওঠে।
--এই তানিশা ঐ ভাবে দৌড়ালি কেন?
(মিথিলা)
--না রে এমনিতেই। (তানিশা)
--কী হয়েছে তোর বল তো।
--কই কিছু না তো।
--শোন তোর মুখ দেখেই সব বোঝা যাচ্ছে
কী হয়েছে।এ কয়েকদিন তোকে খুবই অন্য মনষ্ক দেখছি।
>তানিশা কোন কথা বলছে না চুপ করেই
আছে।সে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে
না।
--আচ্ছা ঠিকআছে তোকে বলতে হবে
না,ক্লাসে চল।
>তানিশা আর মিথিলা ক্লাসে চলে যায়।
.
এদিকে শায়ান তার মা,বোন কে নিয়ে
এখনো হসপিটালেই আছে।এখনো শোভার
সম্পূর্ন সুস্থ হতে কিছুদিন লাগবে।শায়ান
তার মা,বোন কে নিয়ে বেশ ভালই দিন
কাটাচ্ছে।সেই দশ লক্ষ টাকা দিয়ে তার
বোনের চিকিৎসা খরচ করেও বেশ কিছু
টাকা বেচে আছে,এতে তাদের দিব্যি চলে
যাচ্ছে।
.
>শায়ান এখন বেশ ভাল থাকলেও,তার মনে
এখন অশান্তি কাজ করছে।নিজের মধ্যে
অপরাধবোধ কাজ করছে শায়ানের।শায়ান
ভাবে সে তানিশা কে কিডন্যাপ করে যে
দশ লক্ষ টাকা নিয়ে ছিলো তার জন্য
তানিশার বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়া
উচিত।নয়তো সারাজীবন তাকে এই
অপরাধের এই বোঝাটা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে
খাবে।
.
পরক্ষনে ভাবে এটা করেছে বলেই তার বোন
আজও পৃথীবির আলো দেখছে।কী হয় একটু
খানি স্বার্থপর হলে।একটুখানি সুখের জন্য
না হয় এরকমটা করায় যায়।তানিশার বাবার
তো অনেক টাকা এই দশ লক্ষ টাকা তাদের
কাছে কিছুই না।
.
-কী ব্যাপার তানিশা আমি ক্লাসে
পড়াচ্ছি আর তুমি কী ভাবছো।
(কথাটা বলল তানিশার স্যার)
>স্যার মনে হয় তানিশা ওর bf এর কথা
ভাবছে।
>পাশ থেকে ওর এক ক্লাসমেট কথাটা
বলল,আর এতে সবাই হাসাহাসি শুরু করে
দিলো।
-চুপ করো তোমরা সবাই,তানিশা কে বলতে দাও।
-না স্যার তেমন কিছু না। (তানিশা)
-এ কয়েকদিন যাবত খেয়াল করছি তোমার
কোন মন নেই ক্লাসে।কী হয়েছে বল
তো।গত দুইদিন ক্লাসেও আসোনি।
-কিছু না স্যার।একটু অসুস্থ ছিলাম।
-তুমি অনেক ভাল স্টুডেন্ট, তাই কোন বাজে
চিন্তা করলে ঐ সব বাদ দিয়ে পড়াশোনায়
মন দাও।এটাই তোমার কাছে চাওয়া।
-ঠিকআছে স্যার।
-তুমি বেশী খারাপবোধ করলে বাসায়
যেতে পারো।
.
>তানিশা আর মিথিলা ক্লাসরুম থেকে
বেরিয়ে আসে।তানিশার এমন আচরণ
কিছুতেই মানতে পারছে না মিথিলা।ঐ তুই
বলবি তোর কী হয়েছে।
-তোকে না বলেছিলাম শোভার সম্পর্কে
খোজ নিতে,নিয়ে ছিলি খোজ? (একটু রেগে
কথাটা বলল তানিশা)
-ও তাহলে তুই ঐ ছেলেটার কথা ভাবছিস,
যে তোকে কিডন্যাপ করেছিলে?
-হুমম,নিজে না ভাবতে চাইলেও ও চলে
আসছে ভাবনায়।
-ও আচ্ছা।প্রেমে পড়েছিস নাকি
কিডন্যাপারের।
(কথাটা বলেই হাসতে শুরু করে দিলো
মিথিলা)
-কি যা তা বলছিস।কিডন্যাপারের প্রেমে
পড়বো কেন।
-বুঝি বুঝি,শেষে তানিশা তুই,,,,?
-ঐ তুই থামবি।শোভার খবর পেলি নাকি
বল।
-নারে এখনো কোন খোজ পেলাম না।তবে
আশে পাশের লোকদের বলছি,শোভারা যদি
বাসায় আসে তাহলে আমাকে জানাবে।
.
>তানিশা ভাবে কবে যে শোভার দেখা
পাবো।এই একটা রাস্তায় মাত্র খোলা
আছে।যদি কোন খোজ পাওয়া যায়।
.
বাসায় এসেই তানিশার বাবা তানিশার
কাছে জানতে চাই তার এমন ভাবনার
কারন।তানিশার স্যার নাকি ফোন
দিছিলে তার কাছে।তানিশার বাবাও
তানিশাকে অনেক বোঝায়, তার অতীতে
ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনা ভুলে যেতে।তানিশার
বাবা ভাবে ছেলেটা বলেছিলো সে
তানিশার কোন ক্ষতি করেনি।তাহলে তার
মেয়ে এমন হয়ে যাচ্ছে কেনো।তানিশার
বাবাও দীর্ঘশ্বাস ফেলে তানিশা কে এসব
কথা ভাবতে না করে।
.
তানিশা ভাবে সে কী সত্যি ঐ
কিডন্যাপারের প্রেমে পড়েছে নাকি।না
হলে তার বাবা এতো না করার সত্তেও
কেনো ঐ ছেলেটার কথা ভাবছে।সে এটাও
ভাবে তার বাবাও তার ভাবনার কারনটা
বুঝে ফেলেছে।।
.
পরকক্ষনেই ভাবে- নাহ প্রেমে পড়ব
কেনো।
আমি কখনোই কারো প্রেমে পড়ব না।
আমি তো শুধু জানতে চাই তার সম্পর্কে,
আর ঐ ডায়রিতে লেখা শোভার সম্পর্কে।
.
৮
.
শায়ান তার মা আর বোন কে নিয়ে
হসপিটাল থেকে আজ বাড়ীতে চলে
এসেছে।
তার বোন এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।সে আবার আগের
মত পড়াশোনা করতে পারবে।মন খুলে
হাসতে পারবে।আগের মত চঞ্চল হয়ে উঠবে।
পুরো বাড়ী মাতিয়ে রাখবে।
.
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই শায়ানের
চোখের একপাশ থেকে কিছু পানি গড়িয়ে
পড়লো।এটা সুখের কান্না।ছোট বোন কে
ফিরে পাবার কান্না।এখন থেকে তাদের
জীবন আবার স্বাভাবিক ভাবে চলতে
থাকবে এটা ভেবেই শায়ান একটা সুখের
দীর্ঘশ্বাস ফেলতে থাকে।কিন্তু শয়ানের
মনে এক অদ্ভুত রকমের শূন্যতা কাজ
করে,কিছুটা অপরাধবোধ কাজ করে তার
মনের মধ্যে
.
এদিকে তানিশাও ঐ কিডন্যাপার কে মনে
মনে খুজতে থাকে। তার মনে জেগে বসে
আছে ঐ কিডন্যাপার যাকে সে ভুলতে
চেষ্টা করলেও ভুলতে পারছে না।তানিশা
এখন তার বান্ধবি মিথিলার জন্য অপেক্ষা
করছে ক্যাম্পাসে।মিথিলা ওকে কি জানি
বলবে তাই তাড়াতাড়ি আসতে বলল।
.
-এই তানিশা তুই এখানে, আর আমি তোকে
কোথায় না কোথায় খুজছি। (মিথিলা)
-এত জরুরি তলব,কী বলবি বল এখন।
(তানিশা)
-সেই মেয়েটার খোজ পেয়েছি?
-তানিশা অবাক হয়ে বলল-কোন মেয়েটা?
-আরে সেই শোভা মেয়েটা।
-কোথায় পেলি শোভাকে?
-পাবো আর কোথায়,ওরা আজ বাসায়
ফিরেছে।
-কোথায় ছিলো এতোদিন?
-পাশের বাসার আন্টি বলল,হসপিটালে
ছিলো নাকি।
-তানিশা একটু চমকে যায়।কারন ঐ
কিডন্যাপার ও খুব টাকার দরকার ছিলো,
যার কারন ছিলো শোভা।
-হসপিটালে কেন?
-শুনলাম শোভার নাকি মাথায় কী সম্যসা ছিলো।
-চল?
-কোথায় যাবো?
-শোভাদের বাসায়।
-এখনি যাবি?
-হুমম চল?
-ক্লাস করবি না?
-না,আজ আর কোন ক্লাস করব না।এই রহস্য
আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সাথে ঐ
কিডন্যাপার আমার মনে জেগে বসে আছে।
-কী বলিস এসব তানিশা।
-হুমম ঠিকই বলছি।
-তার মানে তুই ঐ কিডন্যাপারের প্রেমে
পড়েছিস।
-সেটাই তো মনে হচ্ছে।না হলে
উঠতে,বসতে,খেতে,ঘুমোতে,যেখানে যায়
শুধু ঐ কিডন্যাপারের কথা মনে হবে কেনো।
যতবার ভাবছি মনে করব না ততবার শুধু ঐ
কিডন্যাপারের কথা মনে পড়ছে আমার।
-তুই মরেছিস তানিশা।
-মরলে মরবো,তবুও এটার শেষ বার করতে
হবে আমার।আমি আর এভাবে থাকতে
পারছি না।
-ঠিকআছে চল...
.
>তানিশা আর মিথিলা শায়ানের বাসার
দিকে রওনা হলো।তানিশা আর কিছুতেই
থাকতে পারছে না।যেভাবেই হোক তার এই
রহস্য উদঘাটন করতে হবে।সে আর সময় নষ্ট
করতে চাই না কিছুতেই।
-এই মিথিলা আর কতদূর? (তানিশা)
-এই তো আরেকটু পথ বাকি আছে।
(মিথিলা)
-পথ তো শেষই হচ্ছে না রে।
-আরে বাবা এতো অধৈর্য্য হলে চলবে।
-কি করব বল,এই কয়েকদিন তো আমি ঠিকমত
ঘুমাতেই পারিনি।শুধু এসব ভাবতে থাকি
আনমনে।বাবাও বুঝে ফেলেছে কেমনে
জানি যে আমি এসব দূশ্চিন্তা করি।
-করবেই তো।এই পোলাটা দেখছি তোর
মাথাটা পুরো খেয়ে নিয়েছে।
.
>তানিশা আর মিথিলা কথা বলতে বলতে
শোভাদের বাসার সামনে চলে এসেছে।
বাইরে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো মিথিলা।
পাশে তানিশা চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
ভেতর থেকে শোভার মা বাইরে এসে
সালামের জবাব দিলো।
.
-কেমন আছেন আন্টি। (মিথিলা)
-এই তো মা ভালো। তোমরা কে চিনলাম
নাতো। (শোভার মা)
-আসলে আন্টি আমরা শোভার কলেজের
বান্ধবি।অনেকদিন শোভা কলেজে
আসেনি,তাছাড়া বাসায় এসেও পাইনি,তাই
খোজ নিতে এসেছি।
-শোভা তো অসুস্থ ছিলো।তাই অনেক দিন
হসপিটালে ছিলাম।আর শোভা তো এখন
বাড়ীতে নেই।
-কোথায় গেছে শোভা?আর শোভার কী
হইছিলো আন্টি?
-শোভা ওর ভায়ের সাথে একটু বেড়িয়েছে।
ওর ব্রেইন টিউমার হয়েছিলো।
>তানিশা এবার একটু অবাক হয়ে তাকালো
শোভার মায়ের দিকে।
-এখন তো শোভা সুস্থ।কথাটা বলল
তানিশা।
-হ্যাঁ মা আল্লাহর রহমতে সুস্থ এখন।
-আন্টি কত টাকা খরচ হয়েছিলো।
-শোভার মা কথাটা শুনতে মোটেও প্রস্তুত
ছিলো না।তিনি নিজেই এখন ভাবছেন,এই
মেয়েরা এত কথা জানতে চাচ্ছে কেনো।
তিনি নিজেও জানেন না এত টাকা শায়ান
কোথায় পেলো।এরাও টাকার কথা জানতে
চাচ্ছে।তবুও তিনি সাত পাঁচ না ভেবে
বলেই দিলেন-
-দশ লক্ষ টাকার মত।
>এবার তানিশাও চিন্তায় পড়ে যায়,তার
বাবার কাছ থেকেও দশ লক্ষ টাকা
নিয়েছিলো ঐ কিডন্যাপার । এই কী তাহলে
সেই কিডন্যাপারের বাড়ী।তানিশার রহস্য
শোভাকে পেলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
-তানিশা বলল-শোভা কে তাহলে কখন
পাবো।
-বিকালে আসলে পাবে।
-আচ্ছা আন্টি এখন তাহলে আমরা যায়।
-তা হয় কী করে।তা মা তোমরা দাঁড়িয়ে
কেনো, ঘরের ভেতরে আসো, কিছু
খেয়ে
যাও।
-না আন্টি আরেকদিন আসবো। কথাটা বলল
মিথিলা।
>তানিশা চাচ্ছিলো ভেতরে ঢুকতে যদি সে
কোন ফটো পাই ভেতরে।তাহলে হয় তো
সহজেই সব হয়ে যাবে।কিন্তু মিথিলার
কারনে সেটা হলো না আর।
.
তানিশা আর মিথিলা বাসায় চলে যায়।
তানিশা ভাবে আজ বিকালে শোভাদের
বাসায় গিয়েই শোভার কাছ থেকে সব
জেনে নিবে।যদিও তানিশা ভাবছে এটাই
হয়তো ঐ কিডন্যাপারের বাসা।তবুও সে
এখনো শিউর না।
.
চলবে.....
.
মূল থিম: সিরিয়াল কিলার নীল (Mrs.
KPC)
.
লেখাঃশাহীন আলম সবুজ (মেঘলা আকাশ)
গল্পঃকিডন্যাপ।
পর্বঃ০৫
.
-তোমার ভাইয়ের নাম টা কী বলা যাবে?
-কে আপনি বলেন তো আগে।
-আমি তানিশা।
-আমার ভাইয়ার নাম দিয়ে কী করবেন আপনি।
-খুবই দরকার।বলো না শোভা প্লিজ।
-আপনি কী আমার ভাইয়ের প্রেমিকা?
-না মানে,
-ও আমারই ভুল,প্রেমিকা হলে তো আপনি আমার
ভাই কে চিনতেন।তো বলেন আমার ভাই কে
কেন দরকার?
-তোমার ভাইয়ের কোন ফটো আছে
তোমার কাছে?
-আছে তবে এখানে না।বাড়ীতে আছে।
-আপনি কোন পুলিশ নন তো?
-আরে নাহ পুলিশ হতে যাবো কেন।
তোমার ভাই কে আমার ভীষণ দরকার।
-কী দরকার বলুন তবে।
-তোমার ভাইয়ের সাথে একটু কথা বলবো।
-হা,হা,হা,,,বুঝছি।
>তানিশা বুঝে উঠতে পারছে না,শোভা কি বুঝল,
আর কী মনে করে হাসছে।তবুও অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে বলল-
-কী বুঝেছো?
-আপনি আমার ভাইয়া কে ভালবাসেন আর ভাইয়া
আপনাকে পছন্দ করে না।
-আসলে তেমন কিছু না।
-বুঝি সব,সত্যি বলছি আমার ভাইয়া কোন
মেয়েকেই পাত্তা দেয় না।ও এমনই,সব সময়
নিজের যেটা ভাল মনে করে সেটাই করে।
-তোমার ভাইয়ার নামটা বলবে প্লিজ?
-আমার ভাইয়ার নাম না জেনেই প্রেমে পড়ে
গেছেন।
>তানিশা চুপ করে আছে।কী বলবে বুঝতে পারছে না।
-আমার ভাইয়ার নাম শায়ান।
-ও আচ্ছা,আরেকটা উপকার করবে?
-বলুন।
-কাল বিকালে কী এখানে একবার তোমার ভাইয়া
কে আনতে পারবে?
-আচ্ছা নিয়ে আসবো কিউটি ভাবী।
-ভাবী মানে?
-দেখেন আমার ভাইয়া আপনাকে পছন্দ করুক বা না
করুক,তুমি তো অনেক কিউট,আমার ভাইয়ার জন্য
এমন কিউট মেয়েই আনবো।তাই তো
তোমাকে ভাবী বলবো।সরি তুমি করে বলে
ফেললাম।
>তানিশা কোন কথা বলতে পারছে না।তানিশা একটু
একটু লজ্জাবোধ করছে।আর ভাবছে মেয়েটা
কী পাগল নাকি।
-ভাবী তাহলে গেলাম,কাল যেভাবেই হোক
ভাইয়া কে নিয়ে আসবো।
>তানিশা শোভার চলে যাওয়া দেখছে আর ভাবছে
যাকে সে এতদিন খুজছে সে হয়তো কাল তার
সামনে আসবে।তার মনে জেগে বসা কিডন্যাপার,
না কিডন্যাপার না ওর নাম তো শায়ান,যে আমার মনটা
কে কিডন্যাপ করে নিয়েছে।
.
>ও হ্যাঁ আপনাদের তো বলাই হয়নি,তানিশা বিকাল
বেলাতে শোভাদের বাসায় এসে শোভার
খোজ পাই।তারপরেই এসব ঘটনা ঘটল।
.
>শোভা তো ভাবছে হয়তো মেয়েটা ওর
ভাইকে পছন্দ করে কিন্তু ওর ভাই হয়তো পছন্দ
করবে না।অপর দিকে তানিশা তো শায়ানের নামই
জানল আজ।দেখেছে মাত্র কয়েকবার,কথাও
বলতে পারেনি তেমন করে।
.
-এই তানিশা।
>পিছন থেকে কারো ডাক শুনে দাঁড়িয়ে
পড়লো তানিশা।পেছনে ঘুরে দেখে মিথিলা
তাকে ডাকছে।
-কিরে তানিশা কখন থেকে ডাকছি।
-সরি রে খেয়াল করিনি।
-তা খেয়াল করবি কিভাবে কানে কম শোনা শুরু
করছিস নাকি।
-কি যা তা বলছিস।
-তা কোথায় গেছিলি,শোভাদের ওখানে বুঝি।
-হুমম।
-দেখা পেলি কী শোভার।
-হুমম..
-আমাকে তো যাওয়ার সময় বললি না।
-আসলে মনে ছিলো না।
-হইছে আর বোঝানো লাগবে না আমাকে।কথা
বলছিস শোভার সাথে।
-হ্যাঁ বলেছি,ওর ভাইয়ের নাম শায়ান।
-শায়ান,খুব সুন্দর নাম তো।পোলাডা তো
নামের মতই সুন্দর মনে হচ্ছেরে।
-তুই থামবি।
-আমাকে থামিয়ে কাজ নেই।তা শায়ানের সাথে
কথা বলবি কবে।
-কাল বিকালে শোভাকে বলেছি লেকের
পাড়ে আনতে।
-যাক অবশেষে তাহলে রাজকন্যা রাজকুমারেে
দেখা পাচ্ছে।
-কি সব বলিস না তুই।যাকে ভাবছি সে তো নাও
হতে পারে।না দেখা পর্যন্ত তো কোন ভরসা
নেই।
-আরে তোর কিডন্যাপারি হবে।
-হলেই ভাল।আমি বাসায় গেলাম।তুইও যা।
.
>তানিশা মিথিলার সাথে কথা শেষ করে বাসায় চলে
যায়।তানিশা অনেকটা শিউর এই হবে সে কিডন্যাপার।
তানিশা ভাবে কাল কিভাবে সে শায়ানের সাথে
দেখা করতে যাবে,শাড়ী পড়ে নাকি অন্য কিছু।
.
>কিভাবে সে তার মনের কথাগুলো বলবে শায়ান
কে।সব শোনার পর যদি শায়ান ওকে ফিরিয়ে
দেয়।তাহলে কী করবে তানিশা তখন,কাঁদবে নাকি
শায়ান কে বোঝানোর চেষ্টা করবে।
.
>তানিশা এসব কথা ভাবছে আর বিছানায় এপাশ ওপাশ
করছে।তারে চোখে আজ রাতে ঘুম নেই।শুধু
ছটফট করছে মনটা কখন সে শায়ানের সাথে
দেখা করবে।তার মনের ভেতর না বলা কথাগুলো
বলবে।আর নিজের মনটা কে হালকা করবে।
.
পরেরদিন বিকেল বেলা....
.
>তানিশা আর মিথিলা অনেকক্ষন যাবত শোভার জন্য
অপেক্ষা করছে।
এখনো তাদের আসারর নাম গন্ধ নেই।লক্ষনীয়
হলো,তানিশা কখনো সুন্দর করে সাজে না,কিন্তু
আজ সেজেগুজে এসেছে।শাড়ী,
কানে ইয়া বড় দুল,ঠোঁটে হালকা
লিপিস্টিক,চোখে কাজল,চুলগুলো একপাশ করে
দেয়া তারমধ্যে ছোট ফুল গোজা।এককথায়
কোন পরীকে হার মানাবে,যে কোন পুরুষ তার
উপর ক্রাশ না খেয়ে যাবে না।কোন পরী
তাকে দেখলে হিংসায় মরে যাবে।
.
-এই তানিশা আর কতক্ষন অপেক্ষা করবো।
-যতক্ষন না আসে।
-মানে কী,মাথা খারাপ হইছে তোর।
-মাথা তো অনেক আগেই খারাপ হইছে।আর
হবার বাকী আছে কী।
-সত্যি তোর মাথাটা গেছে।
-হুমম,,বেশী কথা না বলে চুপ করে অপেক্ষা
কর,আমার মন বলছে আজ আসবে।
-যদি না আসে।
-তাহলে তোকে ঐ লেকের মধ্যে চুবিয়ে
আমার শরীরের রাগটা মিটাবো।
>মিথিলা আর কোন কথা বলে না।দুজনেই এখন
অপেক্ষা করছে শোভা আর শায়ানের জন্য।
.
চলবে....
.
লেখাঃশাহীন আলম সবুজ (মেঘলা আকাশ)
গল্প:কিডন্যাপ।
পর্বঃ০৬ (শেষ পর্ব)
.
-এই তানিশা ঐটা কী শোভা?
-কই..
-ঐ যে দেখা যাচ্ছে।
-হুমম ঐটা শোভা।
-তাহলে শোভার ভাই শায়ান কোথায়?
-সেটাই তো,শায়ান কে তো দেখছি না।
-আরে তানিশা শোভার পিছনে দেখছিস একটা
ছেলে আসছে।ঐটা কী তোর রাজকুমার নাকি।
-চুপ কর তো, আরেকটু কাছে আসলে বুঝতে
পারবো।
-হুমম,,ভালো করে দেখ।
-নারে ঐটা তো শায়ান না।
-তাহলে,কি হবে এখন।
-শোভা আসুক তো আগে।
>কয়েকমিনিটের মধ্যেই শোভা তানিশা আর
মিথিলার কাছে চলে আসে।সাথে সাথে তানিশা
অধিক আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে-
-শোভা তোমার ভাইয়া কই?
-সরি গো,ভাইয়া আজ আসতে পারবে না।
>কথাটা শোনার সাথে সাথে তানিশার চোখ
দুটোতে পানি ছলছল করছে,এই বুঝি কখন টুপ
করে গড়িয়ে পড়বে।
শোভা তানিশার এমন অবস্থা দেখে হো হো
করে হেসে উঠলো। তানিশা বুঝতে পারছে না
কেনো সে হাঁসছে।
-আমার কিউটি ভাবী তো অনেক সুন্দর করে
সেজে এসেছে।মন খারাপ করে না ভাবী,ঐ
দেখো ভাইয়া আসছে।
>তানিশা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে সেই
কিডন্যাপার যে তাকে কিডন্যাপ করেছিলো।সেই
অচেনা মুখটা আজ একটু চেনা চেনা লাগছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই শায়ান চলে আসে
তানিশাদের কাছে।সাথে সাথে তানিশা মুখ উল্ট
দিকে ঘুড়িয়ে ফেলে।
.
-কিরে শোভা,কে খুজছে আমাকে? (শায়ান)
-ভাইয়া এই কিউটি ভাবীটা খুজছে তোমাকে।
-তা মুখটা ঐ দিকে ঘুড়িয়ে আছে কেন,কানা নাকি
বোবা।
>কথাটা বলার সাথে সাথে,দুইভাই বোন হেসে
গড়াগড়ি দেবার অবস্থা।
-ভাইয়া তোমরা কথা বলো আমি আসছি।
>মিথিলাও চলে গেলো শোভার সাথে।ওদের
দুজনের কথার সুযোগ করে দিয়ে।
.
-এই যে ম্যাম এবার একটু ঘুরুন। (শায়ান)
>তানিশা ঘুরে দাঁড়ানোর সাথে সাথে শায়ানের
চোখ যেন বেড়িয়ে আসার উপক্রম
হলো।সে নিজের চোখ কে বিশ্বাসই করতে
পারছে তার সামনে এখন যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে
আছে যাকে সে কিডন্যাপ করেছিলো।শায়ান
বুঝে উঠতে পারছে না,এই মেয়ে শোভাকে
কিভাবে পেলো।তবুও সে কিছুটা আগ্রহ নিয়ে
বলল-
-তুমি এখানে?
-তানিশা মাথা নিচু করে বলল-হ্যাঁ আমি।
-সরি তানিশা,তোমাকে কিডন্যাপ করাটা আমার ঠিক
হয়নি।আমি খুবই হতাশায় ভুগছি নিজে নিজে,ভাবছিলাম
তোমার বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে
আসবো।সেটাও পারিনি,যদি তোমার বাবা পুলিশে
দেয়,তখন আমার পরিবারের কঠিন দূর্দশা
হবে,সেই ভেবে যাওয়া হয়নি।তুমি চাইলে যা
খুশী করতে পারো এখন।তাছাড়া আমি কেনো
কিডন্যাপ করেছি যদি তুমি জানতে--
-হ্যাঁ আমি সব জানি।সেই রহস্য আমার সব জানা
হয়ে গেছে।
শায়ানের কথা শেষ না হতেই তানিশা বলল কথাটা।
-কিছুটা অবাক হয়ে বলল শায়ান-কিভাবে?
-এত জেনে লাভ নেই,তবে তুমি তোমার
বোন কে বাঁচাতে এমনটা করেছিলে সেটা আমি
জানি।এটা যে কেউ করতে পারে।তুমি নিজের
জায়গাতেই ঠিক।ঠিকই করেছো।এর জন্য
তোমেকে কোন শাস্তি পেতে হবে না।
-তাহলে কী করতে হবে?
-অন্য কারনে শাস্তি পেতে হবে।
-কী কারনে?
-তুমি আমাকে কিডন্যাপ করার সাথে সাথে আমারও
মনটা কে কিডন্যাপ করে নিয়েছো শায়ান।
>শায়ান ভাবছে মেয়েটা সত্যিই বোকা,কিডন্যাপার
কে কোথায় শাস্তি দিবে, সেটা না করে
কিডন্যাপারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
-দেখো তানিশা,তুমি যেটা ভাবছো সেটা
কখনোই সম্ভব না।
-কেনো সম্ভব না?
-তুমি অভাব কখনো বুঝেছো,মনে হয়
বুঝোনি,আমরা প্রতিটা পা ফেলতে গেলে
অভাবের মধ্যে দিয়ে ফেলতে হয়,।জীবনটা
তোমাদের মত বড়লোকদের কাছে অনেক
সহজ।কিন্তু আমাদের কাছে,,?থাক সেটা নাই বা
বললাম।
-বিশ্বাস করো শায়ান,কিডন্যাপের পরের দিন
থেকে আজ পর্যন্ত আমি ঠিকমত কিছুই করতে
পারিনি।না পেরেছি ঘুমাতে,না পেরেছি খেতে।
তোমাকে মন থেকে অনেকবার মুছে
ফেলতে চেয়েছি কিন্তু তারথেকে বেশী
জেগে বসেছো।তোমাকে খুজতে অনেক
কিছুই করেছি।পাগলের মত হয়ে গেছি আমি।
-আমার কিছুই করার নেই তানিশা।(কঠিন কন্ঠে বলল
শায়ান)
-আমি বড়লোক ঘরের মেয়ে বলে কী
কাউকে ভালবাসার অধিকার নেই? (কান্না জড়িত কন্ঠে
কথাগুলো বলছে তানিশা)
-আমি সেটা জানি না তানিশা।তুমি তোমার ঘরে
ফিরে যাও।
-আমি তোমাকে ভীষণ ভালবাসি শায়ান।একটা
মেয়ের মন কী তুমি বোঝনা।কতটা উতলা হলে
একটা ছেলেকে সে খুজে বের করে শুধু তার
মনের কথাগুলো বলার জন্য।
-আমার মনে কোন ভালবাসা নেই কারো জন্য।
-তুমি মিথ্যা বলছো,তোমার চোখ বলছে তুমি
আমাকে ভালবাসো।
>তানিশা কাঁদছে আর তার চোখের কাজল গুলো
চোখের পানির সাথে কালো হয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
-কখনোই না।আমি কাউকে ভালবাসতে পারি না।
আমার মন বলে কিছু নেই।আমি শুধু আমার পরিবার
কে নিয়ে ভাবতে চাই।তারাই আমার সব।আর
কাউকে প্রয়োজন নেই আমার।
-তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতো তুমি
আমাকে ভালোবাসো না?
-কি যা তা বলছো তানিশা।
-ঠিকই বলছি, সৎ সাহশ থাকলে বলো।
-তুমি মিথ্যার মোহে পড়ে আছো।তুমি ভুল
ভাবছো আমাকে নিয়ে।
-কোন ভুল ভাবছি না।কিডন্যাপের পরে কখনো
কী তোমার আমার কথা মনে পড়েনি?
-আমি জানি না।তানিশা পাগলামী না করে নিজের
বাড়ীতে চলে যাও।যদি আমাকে সত্যি ভালবাসো
তাহলে কখনো আর আমার সামনে আসবে না।
>কথাটা বলেই শায়ান চলে যেতে থাকল।
>আর তানিশা বসে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার
করে বলতে লাগল,আমি তোমাকে ভালবাসি
শায়ান,ভীষন ভালবাসি।আর আসবো না কখনো
তোমার সামনে।ভাল থেকো তুমি।
.
>শায়ান মনে মনে বলছে,আমিও তোমাকে
ভীষন ভালবাসি তানিশা।ভাল কখনো না বাসলেও
আজ কে তোমার ভালবাসার কাছে হেরে গেছি।
.
আমার কিছুই করার নেই তানিশা।তুমি বড় ঘরে
মেয়ে,আমার সঙ্গে তোমার কখনোই যায় না।
অন্য কাউকে নিয়ে সুখে থেকো তুমি।মনে
করো আমি তোমার স্বপ্ন,ঘুম ভাঙলেই যার
কোন অস্তিত্ব নেই।তুমিও একদিন স্বাভাবিক হয়ে
যাবে।এই পাগলামীও বন্ধ হয়ে যাবে।তুমি সত্যিই
বোকা মেয়ে তানিশা।
.
ইচ্ছা করছিলো তোমার চুলগুলো একটু ছুয়ে
দিই।বড় নিঃশ্বাস নিয়ে একটু ঘ্রান নিই,এত সুন্দর
করে সেজে এসেছো কেন তুমি,প্রায় পাগল
হয়ে গেছিলাম।ভাল থেকো তানিশা,সুখে
থেকো।
.
>কথাগুলো ভাবতে ভাবতে শায়ানের চোখের
একপাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।কষ্টগুলো পানি
হয়ে ঝড়ে পড়ছে।শায়ান তার পরিবারকে নিয়েই
সুখে থাকতে চাই।আর তার স্বপ্নটা পূরন করতে চাই।
.
>অপরদিকে তানিশাও হয়তো স্বাভাবিক হয়ে যাবে
একসময়।অন্য কারে সাথে জীবনটা জড়িয়ে
নিবে।ভাল থাকার চেষ্টা করবে।হয়তো পারবে,
হয়তো পারবে না।
.
দুজনের প্রেম কঠিন বাস্তবতার কাছে হেরে
গেছে।শুধুমাত্র স্মৃতি হয়ে থাকবে কিডন্যাপের
কিছু মূহুর্ত।
.
মূল থিমঃসিরিয়াল কিলার নীল (Mrs. KPC)
.
লেখাঃশাহীন আলম সবুজ (মেঘলা আকাশ)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ