গল্পঃপুলিশের মেয়ে।
পর্বঃ০১
.
মনটা আজ খুব হালকা হালকা লাগছে।আজ ক্যাম্পাসে গিয়েই বন্ধুদের সাথে ধুমছে আড্ডা দিবো ভাবছি।কিন্তু পরক্ষনে সেই কপাল আমার হলো না।কোথা থেকে যেন পুলিশ এসে হাজির হলো-
-এই তোর নাম মাহিন?
-আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম জ্বী স্যার।
-ঝিনাইদহ কে.সি কলেজে পড়িস?
-জ্বী স্যার।
-ইতিহাস ফাইনাল ইয়ারে ?
-জ্বী মানে।
কথা শেষ না হতেই পুলিশ আমাকে নিয়ে যেতে লাগলো।
-স্যার আমি কী করেছি?
-চল আমাদের সাথে।
-স্যার আমি কোন খুন করিনি।
-পাশ থেকে এক পুলিশ বলল-তোকে কখন বললাম তুই খুন করেছিস?
আমি মনে মনে ভাবলাম তাও ঠিক আমি তো কোন খুন করিনি।
-স্যার তাহলে আমি কোন ডাকাতি করিনি স্যার।
-পাশ থেকে আরেক পুলিশ বলল-ডাকাতির কথা কখন বলেছি আমরা।
সত্যি তো ডাকাতির কথাও তো বলেনি।
-স্যার নিশ্চয়ই তাহলে জঙ্গী ভেবে নিয়ে যাচ্ছেন।আমার এমন কোন রেকর্ড নেই আমার প্রতিবেশী ক্লাসমেটদের কাছে জেনে নিতে পারেন।
-এক পুলিশ আমাকে ধমক দিয়ে বলল-এখন যদি চুপ না করিস তাহলে এখানে....?
আমি আর কিছু বললাম না।মনে মনে ভাবছি গতকাল কী এমন করেছি যে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে।নাহহ তেমন তো কিছু করিনি, ও হ্যাঁ রফিক চাচার দোকানের সামনে থেকে একশত টাকা পেয়ে ছিলাম।কিন্তু ঐ একশত টাকার কথা কিভাবে জানলো..
-স্যার ঐ একশত টাকা কী আপনার?
-কিসের একশত টাকা?
-নাহ স্যার কিছু না।
টাকাও যেহেতু স্যারের না তাহলে করেছি টা কী।
ও হ্যাঁ গতরাতে গোটা কয়েক মশা মেরেছি,কী বড় বড় মশা একদম হেলিকপ্টারের মত একেক টা।আমি এক পুলিশের হাত চেপে ধরে বললাম-
-স্যার আমি জীবনেও মশা মারবো না।মশা আমার সব রক্ত চুষে আমার শরীর সাদা করে দিলেও আমি মশা মারবো না।স্যার এবারের মত ছেড়ে দিন।ও স্যার গাড়ী থেকে ঝাপ দিবো কিন্তু।
-এক পুলিশ বলল-হাত ছেড়ে সোজা হয়ে বস না হলে কিন্তু এখানেই রিমান্ড টানবো।
আমি ভয়ে একদম চুপষে গেলাম।
চুপচাপ গাড়ীর মধ্যে বসে আছি।
পুলিশ কে এত বার করে বললাম তবুও কোন কাজ হলো না।।এই পুলিশ কে আমার যত ভয়।না জানি কোন কেসে ফাসিয়ে দেয়।
.
এখন আমি থানার এস-আই এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি উনি আমাকে ভাল করে দেখছেন।কে জানে কী দেখছে এতো।দেখা শেষে উনি এক হাবিলদার কে বললেন-এটাকে ভেতরে ঢোকাও ওর বাবা-মা আসলে তারপর ছাড়বো।বাবা-মার কথা শুনেই আমি স্যার কে অনুণয় করে বললাম-
-স্যার বাবা-মা জানতে পারলে সবাই হার্ট অ্যাটাক করবে তাদের কে জানানোর দরকার নেই।
-উনি ধমকের স্বরে বললেন-তুমি যা বলবে তাই শুনতে হবে নাকি আমাকে।চুপ করে বসো এখানে।
আমি আর কিছু বলার সাহশ করলাম না।চুপ করে বসে আছি এস-আই এর সামনে।এর কিছুক্ষন পরেই যা দেখলাম তা কল্পনাতেও ভাবিনি-
-স্যার আমি ওকে নিয়ে যেতে পারি।
-কে হয় উনি আপনার?
-আমার বয়ফ্রেন্ড।
এস-আই হাসতে হাসতে বলল-ঠিকআছে নিয়ে যান।
-এই চলো?
-হ্যাঁ মানে।
-যাবে নাকি এখানেই থাকবে?
-হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো তো।
>আমি রূপন্তীর পিছু পিছু বের হয়ে আসলাম।ও হ্যাঁ আপনাদের তো বলতেই ভুলে গেছি রূপন্তী আমাকে নিতে এসেছে। আমি থানায় আছি কিভাবে জানল।
মাথায় তো কিছু ঢুকছে না,তাছাড়া রূপন্তী বলা মাত্রই আমাকে ছেড়ে দিলো কেন মাথায় কেমন জানি সব ঘুরপাক খাচ্ছে।
.
এই মেয়েটাকেই গতকাল আমি প্রপোজ করেছি।সামনা সামনি করার সাহশ করে উঠতে পারিনি তাই মনের সব কথা একটা চিঠিতে লিখে ওর বইয়ের মধ্যে রেখে এসেছিলাম।ভাবতেই পারছি না ও রাজি হয়ে গেছে,রাজি না হলে এভাবে কেউ বাচাতে আসে।রূপন্তী আমার জুনিয়ার,একই বিভাবে তবে ও দ্বিতীয় বর্ষে আর আমি ফাইনাল ইয়ারে।রূপন্তী কিছুদিন আগে আমার কাছে নোটস নিতে এসেছিলো-
-এই যে ভাইয়া শুনেন?
পিছনে তাকিয়ে দেখি রূপন্তী।আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম-
-আমাকে বলছেন?
-জ্বী ভাইয়া আপনাকে বলছি।
-জ্বী বলুন?
-ভাইয়া আমার কিছু নোটস দরকার ছিলো।
কী শান্ত চাহনি মেয়েটার।চোখ গুলো কেমন বড় বড়, চোখের পলকও কেমন ধীরে ধীরে ফেলছে ।কী মায়াবী চেহারা এমনি এমনিতো সবাই পিছু ঘুরে না।
-এই যে ভাইয়া শুনছেন?
-ও হ্যাঁ কী যেনো বললে?
-ভাইয়া নোটস দরকার।
-আচ্ছা ঠিক আছে কাল নিয়ে আসবো।
-আচ্ছা ভাইয়া ধন্যবাদ।
আমি তো ভাবতেই পারছি না যেই মেয়ে কারো সাথে কখনো কথা বলে না সেই মেয়ে আমার কাছে নোটস নিতে এসেছে।ভাল আর ভদ্র ছাত্র হিসেবে আমার বেশ শুনামও আছে ক্যাম্পাসে।
.
এর পর থেকেই ও নোটস নিতে আসতো আর আমি এভাবে সুযোগ পেয়ে আরো কাছাকাছি থেকে পিছু পিছু ঘুরতে লাগলাম।
এভাবে প্রায় একমাস ধরে ওর পিছু পিছু ঘুরছি,আমার থেকে কত স্মার্ট আর বড়লোকের ছেলে যে ঘুরেছে কাউকে পাত্তা দেয়নি।
.
রূপন্তী অনেকটা শান্ত প্রকৃতির একটা মেয়ে,কথা কম বলে, তেমন কারো সাথে মিশে না।প্রায় সময় একায় থাকে।ক্যাম্পাসে সবাই তাকে ভাবওয়ালী বলে জানলেও আমার কাছে মেয়েটা কে অন্যরকম মনে হয়েছে।এর পরেই গতকাল প্রপোজ করেছি চিঠিতে।এত সব স্মার্ট ছেলেদের রেখে আমাকে, আমি তো ভাবতেই পারছি না।মনের মধ্যে কেমন কোকিল পাখি গান গায়তে শুরু করেছে।
-এই রিক্সা?
-এই রূপন্তী শুনো না?
-কী বলবে বলো?
রূপন্তী আমাকে তুমি করে বলছে আমি তো খেয়ালই করিনি।
-বলছিলাম যে..
কথা শেষ না হতেই রূপন্তী বলল-আগে রিক্সায় উঠো তারপর শুনছি।
.
চলবে...
.
লেখাঃশাহীন আলম সবুজ (মেঘলা আকাশ)
গল্পঃপুলিশের মেয়ে।
পর্বঃ০২
.
-রিক্সায় করে আমরা কোথায় যাবো?
-জাহান্নামে যাবো,কেন যাবে না?
-না মানে!!
-উঠবে কি না রিক্সায়?
-হ্যাঁ উঠছি।
রিক্সায় উঠার পর রিক্সাটা চলতে শুরু করল।কিন্তু কোথায় যাচ্ছি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।যেই মেয়েটা কে গতকালও কত্ত শান্ত দেখেছি সেই মেয়েটা কেমন জানি অশান্ত হয়ে উঠেছে। কেমন বদমেজাজি হয়ে উঠেছে।
-কী ব্যাপার এতো কী ভাবছো?
-নাহ্ তেমন কিছু না।
-তাহলে মাঝখানে এমন বাংলাদেশ-ভারতের মত বর্ডার তৈরি করেছো কেন?
-মানে?
-মানে রিক্সা থেকে ঝাপ দেওয়ার মতলব আছে নাকি?
রূপন্তী এসব কী বলছে কিছুই তো বুঝতেছি না।মাথায় কোন সম্যসা আছে নাকি।শেষমেষ একটা পাগলী কে প্রস্তাব দিলাম,আমার তো এখনই কান্না পাচ্ছে।
-রূপন্তী আমি তোমার কোন কথায় বুঝতেছি না।
-আরে গাধা আমাদের দুজনের মাঝখানে এমন ফাঁকা রাখেছো কেন?কাউকে বসতে দিবে নাকি।
-না আসলে, ইয়ে মানে।
-এই এইদিকে চেপে বসো।
আমি সামান্য পরিমান চেপে বসলাম যাতে রূপন্তীর শরীর স্পর্শ না করে, কিন্তু পরক্ষনে রূপন্তী আরো রেগে গিয়ে আমার হাত ধরে আরো ওর কাছে টেনে নিলো।বার বারই ওর শরীরের সাথে আমার শরীর স্পর্শ হচ্ছে আর আমার মনের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে।
.
রূপন্তীর চুলগুলো বাতাসে উড়ে উড়ে আমার মুখের উপর পড়ছে,আর শরীর থেকে মাতাল করা ঘ্রান আসছে।কখন যে পাগল হয়ে যাবো নিজেই বুঝতে পারবো না মনে হয়।রূপন্তীর মাথায় মনে হয় কোন সম্যসা আছে না হলে একদিনের ব্যবধানে কেউ এমন আচরন করে মনে হচ্ছে আমাদের অনেক বছরের সম্পর্ক।
-এই কী ভাবছো?
-কই কিছু নাতো।রূপন্তী একটা কথা বলবো?
-হুমম বলো।
-বলছি যে তুমি পুলিশ নাকি?
-কেনো বলো তো?
-না আসলে তোমাকে দেখেই পুলিশ আমাকে ছেড়ে দিলো যে।
-আমি দেখতে সুন্দরী তো তাই হয়তো।
-এই মেয়ে তোমার মাথায় কী কোন সম্যসা?
-কী বললে আবার বলো? (রাগ দেখিয়ে)
-আমি ভয়ে ভয়ে বললাম-নাহ্ কিছু না।
-শুনো পরবর্তীতে যেনো এই কথা আর না শুনি।
-তাহলে বলো তুমি জানলে কিভাবে পুলিশ আমাকে ধরেছে,আর তোমাকে দেখেই বা ছেড়ে দিলো কেনো?
-তোমাকে পুলিশ ধরেছে সেটা দেখেছিলাম আমি আর আমার মত একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখলে যে কোন পুলিশই ছেড়ে দিবে।
-তাহলে আর বাংলাদেশের কারাগারে এতো কয়েদি থাকতো না আর।
-কিছু বললে নাকি।
-নাহ্ মানে বলছি,এই তুমি পুলিশের মেয়ে নাতো?
-কেন পুলিশের মেয়ে হলে প্রেম করবে না বুঝি।
-আমি ভয়ে ভয়ে বললাম-দেখো পুলিশে আমার অ্যালার্জি আছে।ওদের থেকে যতটুকু সম্ভব আমি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলি।
-কেনো তুমি কী কোন জঙ্গী সংগঠনের লোক নাকি?
-এই কী বলছো এসব।
-তাহলে এতো ভয় কেনো?অন্যায় কাজ না করলে তো ভয় পাবার কথা না।
-সেটা আমি জানি না, তবে যেদিন থেকে তোমাকে ফলো করছি সেদিন থেকে মনে হচ্ছে কেউ আমাকেও ফলো করছে।
-হু পুলিশ।
-পুলিশ মানে?
-পুলিশ ফলো করছে তাই বলছি।
-কী বলো এসব।
-ঠিকই বলছি,পিছনে তাকাও।
-কেনো?
-তাকিয়েই দেখো না।।
পিছনে তাকিয়েই দেখি থানার মধ্যে সেই হাবিলদার বাইক নিয়ে আমাদের পিছন পিছন আসছে।।
-ওমা একি পুলিশ।তুমি পুলিশের মেয়ে আমি বুঝতে পেরেছি।
-হিহিহি...
-হাসছো কেনো বলো?
-চুপ থাকবি নাকি এটার একটা খাবি।(পিস্তল দেখিয়ে)
-ও আল্লাহ গো।
-এই কী হলো?
-তোমার হাতে পিস্তল কেন?
-এই চুপচুপ। (মুখ চেপে ধরে)
-সব পরে বলছি এখন একটা কাজ আছে চলো আগে।
-কী কাজ?
-একজন কে খুন করতে যাচ্ছি।
-কীহহ খুননননননন?
-ঐ তোরে না কইলাম চুপ থাকতে।নাকি এবার সত্যি সত্যি....?,
আমি ভয়ে আর কিছু বললাম না।চুপচাপ বসে রইলাম।এর কিছুক্ষন পরেই রিক্সা কে একটি দোকানের সামনে দাঁড়াতে বলল।রূপন্তী রিক্সা থেকেই নেমেই দোকানে বসা একটা ছেলের কলার চেপে ধরে কয়টা থাপ্পর বসিয়ে দিলো।আমি তো কিছুই বুঝতেছি না।এসব দেখেই মাথা কেমন জানি ঘুরপাক খাচ্ছে।
.
রূপন্তী বলছে আর কখনো কোন মেয়েকে বিরক্ত করবি।আমাকে না থ্রেট করেছিলি আমাকে নাকি তুলে নিয়ে যাবি।নে তোল এবার।ছেলেটা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মুখে হাত দিয়ে।দোকানের লোকজনও সবাই চোখ বড় বড় করে দেখছে এসব কাহিনি।এর পরেই ছেলেটার কলার চেপে ধরে সেই হাবিলদারের কাছে দিয়ে দিলো।
.
এখন আমার বড্ড সন্দেহ হচ্ছে হয়তো রূপন্তী পুলিশ আর নয়তো ওর বাবা পুলিশ।
-এই কী ভাবছো দাঁড়িয়ে, চলো এখান থেকে।
রূপন্তীর ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।
-রূপন্তী তুমি কিন্তু আমাকে এখনো বললে না তুমি কী পুলিশ?
কথাটা শুনেই রূপন্তী চোখ বড় বড় করে তাকালো আমার দিকে।আমি কী বলব আর বুঝতে পারছি না।এমনিতে যা দেখলাম একটু আগে।সাথে আবার পিস্তলও আছে। বেশী জোড়াজুড়ি করলে কখন না জানি আবার চালিয়ে দেয়।এটা কী মেয়ে নাকি পুরুষ।যথেষ্ট সন্দেহ হচ্ছে আমার।তাই আমি ভয়তে আর কিছু বললাম না।
.
চুপচাপ রূপন্তীর সাথে হাঁটছি এখন।
হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায় রূপন্তী রাস্তার পাশে এমন এক জায়গা আমাকে দেখালো, জায়গাটা দেখেই আমি চমকিয়ে উঠলাম।কেননা এই জায়গাতেই কিছুদিন আগে একটা খুন হয়েছে।
.
-মাহিন জানো এই জায়গাটা কেনো দেখাচ্ছি?
-আমি একটু তোতলাতে তোতলাতে বললাম -কেনো?
-এই জায়গায় গত কিছুদিন আগে খুন হয়েছে।
-কীহহ খুন।।
-হুম,তা তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?
-কই কই আমি ভয় পাচ্ছি।
-পাচ্ছো তো।আমি কী বলেছি নাকি তুমি খুন করেছো।
-আমি ক্যা ক্যা কেন খুন করবো।
রূপন্তীর কথা শুনেই আমি ঢোগ গিলতে লাগলাম।ঘামে আমার শরীর ভিজে যাচ্ছে।
-রূপন্তী এসব আমাকে বলছো কেনো?
-আরে নাহহ এমনিতে।তা তুমি এতো ঘামছো কেনো?
-ককক কই কই ঘামছি।
রূপন্তী চলো এখান থেকে আমার মনে হয় শরীর খারাপ করছে।আমি আর হাঁটতে পারবো না। আমি বাসায় যাবো।
-আচ্ছা আচ্ছা ভয় পেতে হবে না চলো।
.
চলবে...
.
লেখাঃশাহীন আলম সবুজ (মেঘলা আকাশ)
গল্পঃপুলিশের মেয়ে।
পর্বঃ৩
.
- মাহিন তোমার বাসায় চলে এসেছি।
-(...)
-এই মাহিন শুনছো আমার কথা।
-এই কে কে!!
-আরে বাবা আমি রূপন্তী।কী ভাবছো এত শুনি?
-কই কিছু নাতো।
-তোমার বাসায় চলে এসেছি।
-ও কখন আসল?
-এখনই।যাও বাসায় যাও।
-ও হ্যাঁ তাই তো।
আমি রিক্সা থেকে নেমে যেই বাসায় ঢুকবো ঠিক তখনই রূপন্তী বলল-
-রিক্সার ভাড়া কী আমি দিবো?
-আরে নাহ তুমি দিবে কেন।আমিই দিতেছি।
-নাহ থাক তোমার দেয়া লাগবে না।তুমি দেখছি খুনের কথা শুনে খুব টেনশনে আছো।
-কককক কই।দেখো রূপন্তী আমি ঐ খুনের বিষয়ে কিছু জানি না।
-আরে বাবা আমি কখন বললাম তুমি ঐ খুনের বিষয়ে জানো।
কথাটা বলেই রূপন্তী চলে গেলো রিক্সা নিয়ে।সত্যিই তো রূপন্তী কখন বলল আমি খুনের বিষয়ে জানি।নাহ এত ভয় পাচ্ছি কেনো আমি।সবই কেমন উল্টা-পাল্টা মনে হচ্ছে নিজের কাছে।নিজেই মনে হচ্ছে ধরা দিয়ে দিচ্ছি রূপন্তীর কাছে।
.
গতকাল প্রায় মরতে মরতে বেচে গেছি রূপন্তীর হাত থেকে।খুনের কথা শুনেই তো আমার শরীর ঘামতে লাগল।একটা জিনিস এখনো বুঝতে পারছি না রূপন্তী পুলিশ নাকি তার বাবা পুলিশ।আমি এখনো শিউর হতে পারিনি। আচ্ছা রূপন্তী আমাকে ঐ খুনের কথা কেন বলল,রূপন্তী কী আমাকে সন্দেহ করছে?
নাহ তা কী করে হয়!!আমি তো কিছু জানি না। নাহহ আসলে রূপন্তী কি করতে চাচ্ছে আমি রূপন্তীর ভাবসাপ কিছুই বুঝতে পারছি না।
.
নাহ এসব ভাবনা বাদ দিতে হবে।আর রূপন্তীর কাছ থেকে যতটুকু পারি এড়িয়ে চলতে হবে।এই রূপন্তীর পিছনে পড়ে গত দুইদিন হসপিটালে যাওয়া হয়নি।
বোনটার আবার অপারেশন করতে হবে।
বোনটার কাছে মা একাই থাকে।অবশ্য একটা পারসোনাল নার্সও রেখেছি, টাকা লাগে লাগুক আমার কলিজার টুকরো বোন কে সুস্থ হতে হবে।হসপিটালে ঢুকেই দেখি কেবিনে মা আর বোন গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে,দেখেই চোখ দুটো ছলছল করে উঠল খুশীতে আমার।
.
এই দুনিয়াই মা আর বোন ছাড়া আমার কেউ নেই।মা আর বোন কে নিয়েই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।
-কিরে বাবা মাহিন কখন আসলি?
মায়ের কথায় ঘোর কাটল আমার।
-এই তো মা এখনই।
-ভাইয়া তুই তো ভুলেই গেছিস আমাকে।[অভিমানী সূরে]
-নারে তুই আমার জান।তোকে কী ভুলতে পারি।
-তাহলে এই দুইদিন কেন আসতে পারিস নাই জানতে পারি।
-খুব পড়ার চাপ রে।
-যা তোর সাথে কথা নেই।[মুখ ঘুরিয়ে]
আমি বোনের কাছে গিয়েই ওর কপালে একটা চুমু দিলাম।বোন সবে মাত্র সপ্তম শ্রেনীতে পড়ে,এতটুকু বয়সে এত বড় রোগ ধরা পড়ল।এখন তিতলির ছোটাছুটি করার কথা আর এখন হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে।ও হ্যাঁ বলতেই ভুলে গেছি আমার বোনের নাম তিতলি।
.
-মা তুমি এখানে থাকো।আমি একটু ডক্টরের কাছ থেকে ঘুরে আসি।
-আচ্ছা যা বাবা।
ডক্টরের চেম্বারে ঢোকার সময়ই দেখি রূপন্তীর মত কেউ বের হয়ে চলে যাচ্ছে।আমি দৌঁড়ে গেলাম ততক্ষনে কালো গ্লাসে ঢাকা গাড়ীতে মেয়েটা উঠে পড়েছে।কেন জানি মনে হচ্ছে ঐটা রূপন্তীই ছিলো।নাকি আমিই একটু বেশী বেশী ভেবে ফেলছি।
.
আমি ডক্টরের চেম্বারে ঢুকেই বললাম-
-ডক্টর সাহেব আপনার রুম থেকে একটু আগে একটা মেয়ে বের হয়ে গেলো কে এই মেয়েটা?
-কার কথা বলছো তুমি?
-একটু আগে যে বের হলো।
-অনেকেই তো যায় আসে।তুমি আসার আগেও দুইটা মেয়ে আসছে।এত মনে রাখা কষ্ট।
-আচ্ছা বাদ দিন,আমার বোন কে কবে অপারেশন করবেন?
-কিছুদিনের ভেতরেই, আরেকটু সুস্থ হোক।
-আচ্ছা।
আমিও ডক্টরের রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।মনে হলো ডক্টরও আমার কাছ থেকে কিছু গোপন করল।মাথা কেমন জানি ঘুরপাক খাচ্ছে।
.
আমি কিছু খাবার আর ঔষধ কিনে কেবিনে গেলাম।মা এগুলো নাও,আমার একটা ইমপোর্টেন্ট কাজ পড়ে গেছে আমি গেলাম।
-মাহিন বাবা শোন?
-হ্যাঁ মা বলো!!
-কথাটা অনেক দিন ধরেই বলব ভাবছি।
-বলো কী বলবে?
মা আমাকে কেবিন থেকে বের করে নিয়ে এসে বলল-
-বাবা তুই এত টাকা কোথায় পেলি?
-কই মা এত টাকা।
-আমি জানি কত টাকা খরচ হবে।কিন্তু এত টাকা কিভাবে পাচ্ছিস?অপারেশনের খরচ,কেবিনে থাকা,ঔষধ আরো অনেক কিছু।
-বাদ দাও তো মা।এত কথা তোমার ভাবতে হবে না।
-শোন বাবা পড়াশোনার পাশাপাশি তো টিউশনি আর করিস পার্ট টাইম জব।এগুলো দিয়ে তো এত কিছু করা সম্ভব না।
-আচ্ছা মা তুমি কী চাও না তিতলি সুস্থ হোক?
-চাইবো না কেনো।
-তাহলে দোয়া করো বোনটা আমার সুস্থ হোক।আর কিছু শুনতে হবে না তোমাকে।
কথাটা বলেই আমিই চলে আসলাম।
.
এরই ভেতরে রূপন্তী অনেকবার ফোন দিয়েছে।একবারের জন্যও ফোনটা রিসিভ করিনি।রূপন্তীর কাছ থেকে দূরেই থাকতে হবে।কিন্তু মেয়েটা কে আমি বড্ড বেশীই ভালবাসি।কিন্তু রূপন্তী কে যত দেখছি ততই মনের মধ্যে রহস্য ভেদ করছে।রূপন্তীর কথা ভাবতে ভাবতেই আবার রূপন্তীর ফোন-
-হ্যাঁ রূপন্তী বলো?
-এতক্ষন ফোন ধরোনি কেন?
-একটা কাজে বিজি ছিলাম তাই।
-কী এমন কাজে যে আমার থেকেও বেশী দরকারী হয়ে গেলো?
-আচ্ছা বাবা সরি।
-হইছে থাক।আমার সঙ্গে দেখা করো?
-কোথায়?
-ক্যাম্পাসের পাশে যে পার্কটা আছে ওখানে।
-আচ্ছা।
ফোনটা রেখে দিতেই আবার কল আসল।ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম, আবার সেই নাম্বার থেকে ফোন।আমি ফোনটা না ধরেই পকেটে রেখে দিলাম।ফোনের পরে ফোন দিয়েই যাচ্ছে আমি বিরক্ত হয়ে ফোনটা বন্ধ করে দিলাম।আমি রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি,কিন্তু পরক্ষনে একটা গাড়ী থেকে কয়েকজন নেমে আমার দিকে আসল-
-চল আমাদের সাথে।
-আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?
[জোর করে গাড়ীতে তোলার উপক্রম]
-(...)
-আরে কিছু তো বলুন।আমি তো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না!!
-চুপ কর।গেলেই দেখতে পাবি...
[গাড়ীতে তোলার পর]
.
চলবে...
.
লেখাঃশাহীন আলম সবুজ (মেঘলা আকাশ)
গল্পঃপুলিশের মেয়ে।
পর্বঃ০৪
.
-আচ্ছা বলবেন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?
-এত কথা বলছিস কেন?চুপ করে থাকতে বলছি কানে যায় না।।
-বলুন না কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
-তোর যমের বাড়ী।
-আমি কিন্তু চিৎকার করবো!!
-কর এবার চিৎকার!! [পিস্তল দেখিয়ে]
আমি ভয়তে আর কিছু বললাম না।তবে দেখে মনে হচ্ছে এদের আমি চিনি।মুখ বাধা না থাকলে হয়তো ব্যাপারটা আরো ভাল বুঝতে পারতাম।
.
এর কিছুক্ষন পরেই গাড়ীটা একটা নির্জন জায়গায় এসে থামল।অবশ্য জায়গাটা দেখে আমি মোটেও অবাক হয়নি।কারন কিছুদিন আগেও আমি এখানে এসেছি।এটা একটা গ্যাং-এর ডেরা।
কিন্তু সব ঝামেলা মিটিয়ে আমি এখান থেকে বেরিয়ে এসেছি কিন্তু আবার কেন এভাবে নিয়ে আসল বুঝলাম না।ঐসব ভুলে খুব সাধারন জীবন শুরু করেছি এরই মধ্যে সব কেমন জানি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
.
এসব ভাবতে ভাবতে ভেতরে ঢুকলাম।ঢোকার পরই সালাম গ্যাং-এর সালাম লিডার বলতে লাগল-
-আরে মাহিন আয় ভেতরে আয়।
-আমাকে এভাবে তুলে আনার মানে কী?
-ফোন তো ধরলি না, পরে দেখি ফোন বন্ধ করে রেখেছিস।
-তা ভুল তো কিছু করিনি।।
-সেই কারনেই তুলে আনলাম,ফোন ধরলে তো আর এমন করে আসতে হতো না তোকে।
-যা বলবেন বলুন!!এসব শুনতে ভাল লাগছে না।
-আরে এত তাড়া কিসের।এই কে আছিস রে মাহিন কে একটা বাংলা দে।।
-জানেনই তো ওসব খাই না।যা বলবেন বলুন।আমার জরুরী কাজ আছে।
-কিসের এত জরুরী কাজ।ঐ পুলিশের মেয়ে নাকি।
-আমি অবাক হয়ে বললাম-পুলিশের মেয়ে মানে?
-সালাম হাসতে হাসতে বলল- আরে বাবু বলে কী শোন তোরা।যার সাথে এত রং ঢং তাকে তার সম্পর্কেই জানে না।
>আমার মাথা কেমন জানি ঘুরপাক খাচ্ছে।আমি এখনো জানি না আর এরা সব জেনে গেলে।রূপন্তী কে ভালবাসাটাই মনে হচ্ছে ভুল হইছে।যেদিন থেকে রূপন্তী কে প্রোপোজ করেছি সেদিন থেকে একটা না একটা অঘটন ঘটেই যাচ্ছে।
-কী বলবেন বলুন!!
-শোন মাহিন তোকে একটা কাজ করে দিতে হবে আমাকে।
-আবার কিসের কাজ।আপনার সাথে সব চুক্তি শেষ আমার।
-দেখ তুই খুব ভাল পারিস কাজগুলো।তোকে আমার পছন্দ হইছে। তুই ছাড়া এটা কেউ পারবে না।
-আমি আর কিছুই করতে পারব না।আপনার যা ইচ্ছা হয় করেন।
কথাটা বলেই হাঁটা শুরু করলাম।ঠিক তখনই সালাম বলে উঠল-
-তোর বোন তো হসপিটালে তাই না?
আমি আর এগোতে পারলাম না।কারন আমার মা-বোনের জন্য সব করতে পারি।আর আমার বোন তো আমার কলিজা,তাদের কোন ক্ষতি আমি হতে দিবো না।সাথে সাথে বললাম-
-কী কাজ?
-কোন খুন টুন করতে হবে না।শুধু একজন কে কিডন্যাপ করে দিবি।এতটুকুই তোর কাজ।বাকিটা আমার।
-এটাই কিন্তু শেষ।আর কোন প্রকার যেন আমাকে কোন কিছুর ভেতরে জড়ানো না হয়।
-ঠিকআছে যা।এটাই শেষ কাজ তোর।
-কাজটা কখন করতে হবে?
- সময় হলে ফোনে বলে দিবো।আর এই কাজের জন্যও টাকা পাবি!!
-লাগবে না টাকা!!
-আগেরটার জন্যও তো টাকা নিয়েছিস?
-তখন দরকার ছিলো।আর আমি প্রফেশনাল না এটা ভালই জানেন আপনি।
-জেনে আর কী হবে বল।তোর কাজগুলো আমার বেশ পছন্দ হয়।
-তাতে আমার কোন যায় আসে না এটাই শেষ।
কথাটা বলেই ওখান থেকে বেরিয়ে আসলাম।
.
আমি ওখান থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি, কী শুরু হলো আমার সাথে এসব আবার।জীবনটা তো বেশ স্বাভাবিক ভাবেই নতুন করে শুরু করতে চাচ্ছি কিন্তু সব কেমন জানি উল্টা-পাল্টা হয়ে যাচ্ছে।
.
মাহিন ভাবে মধ্যেবিত্ত হয়ে জন্ম
নেয়াটাই হয়তো ভুল।কারন মধ্যেবিত্তরাই
জীবনের কঠিন বাস্তব রূপ দেখতেই পাই।
তাদের সকাল এবং রাত কিভাবে আসে আর কিভাবে পার হয় এরা এসব ভাল মতনই বোঝে।প্রতিটা পা যেন এদের হিসেব করে ফেলতে হয়।
অপর দিকে রূপন্তীর মত বড় ঘরের মেয়েরা এসব বোঝেনা।তারা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম নিয়েছে।হয়তো রূপন্তী কে ভালবাসাটাই ভুল মনে হচ্ছে এখন আমার।
.
এই মেয়েটা আসার পর থেকেই একের পর এক বিপদ এসেই চলেছে।বেশ তো ছিলাম মা-বোন কে নিয়ে, কী কুক্ষনে যে প্রপোজ করতে গেলাম।কিন্তু বড্ড ভালবাসি মেয়েটা কে।রূপন্তীর কথা মনে পড়লে আর নিজের আবেগকে সামলে রাখতে পারি না।
.
আরে আমার তো খেয়ালই নেই রূপন্তী আমাকে দেখা করতে বলেছে। ফোনটা অন করেই দেখি রূপন্তী অনেক বার আমাকে ম্যাসেজ করেছে।ম্যাসেজ দেখতে দেখতে আবার রূপন্তীর ফোন-
-হ্যাঁ রূপন্তী বলো?
-বলবো মানে কী হ্যাঁ?
- না মানে!!
-কী না মানে?কখন আসতে বলেছি তোমাকে আমি?
-আসছিলামই, কিন্তু একটা কাজ পড়ে গেলো?
-কী এমন কাজ শুনি?
-ছিলো কোন একটা!!
-তারমানে বলবে না?
-ঠিক তেমনটা না।আচ্ছা বলছি!!
-আর বলতে হবে না! আমি শুনবো না।ফোন বন্ধ ছিল কেন?
-আসলে ফোন কখন বন্ধ হয়েছে খেয়ালই করিনি!!
-আমি তোমাকে ফোন করে বিরক্ত করছি সেটা বললেই হয়।
-কী বলো এসব!!
-ঠিকই বলছি।ওকে আর বিরক্ত করব না!! [কান্না কান্না ভাব]
-রূপন্তী বিশ্বাস করো একটা কাজ পড়ে গেছিলো,আর ফোন টা হঠাৎ-ই বন্ধ হয়ে গেছে,খেয়াল করিনি আমি।
-থাক আর মিথ্যা বলতে হবে না!!আমি তোমার কেউ না!!থাকো তুমি তোমার কাজ নিয়ে।
-রূপন্তী আরেকটু থাকো আমি এখনই আসছি।
-আর কত ওয়েট করব বলো তো।একা একটা মেয়ে আমি।
-তোমার কিছু হবে না।তুমি যে মারপিট জানো।
-কী বললে আবার বলো।
-কিছুনা কিছুনা আসছি।
-কোথায় আছো এখন?
-বাইপাসে, গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করছি।
-ঠিকআছে।
-কী ঠিকআছে?
-টুট,টুট,টুট...
যা ফোনটা কেটে দিলো।মনে হচ্ছে হেব্বি রেগে আছে।পাঁচ মিনিট পর হঠাৎ একটা একটা গাড়ী এসে থামল আমার সামনে।
-এই তোর নাম মাহিন?
-হ্যাঁ মানে!!
-ওঠ গাড়ীতে ওঠ?
-কোথায় যাবো?
-আরে উঠবি তো।
[হাত ধরে টেনে গাড়ীর ভেতরে তুলে নিলো]
-কোথায় যাচ্ছি?
-তুই তো বেশ কথা বলিস।চুপ করে বসে থাক।গেলেই দেখবি...
মনে মনে ভাবছি হচ্ছেটা কী আমার সাথে.....
.
লেখাঃশাহীন আলম সবুজ (মেঘলা আকাশ)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ