ফিউশন ট্র্যাকিং
লিখা: অচেনা গল্পের শেষ লাইন
অধ্যায় - ০১ : মিশন (বর্তমান)
মধ্যরাত, গভীর ঘুমে অচেতন রাইসা, এলান চোখ খুলে ঘুমন্ত রাইসার মুখের দিকে অপলক চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ; জানালা খোলা, চাঁদের আলোয় সারা ঘর ঝলমল করছে, সবচেয়ে বেশি ঝলমল করছিলো রাইসার মুখ, টিকলো নাকের চারপাশ ঘিরে হালকা ঘাম চিকচিক করছে। কারও নাক যে ঘুমের মাঝেও ঘামতে পারে তা রাইসাকে না দেখলে জানাই হতো না। ঘুমন্ত রাইসার সৌন্দর্য যেন জলের বুকে চাঁদের ছায়া, ছুঁয়ে দিলেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। অপার্থিব এক ভালোবাসায় বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে এলানের, আজকের পর কি আগের মত ভালবাসতে পারবে তাকে রাইসা, সব জেনেও কি আপন করে নিতে পারবে তাকে? ক্ষণিকের তরে মানবীয় আবেগ গ্রাস করে এলানকে। ভাবে, থাক না সব কিছু আগের মতই! কি দরকার শতবছর ধরে চলে আসা সিস্টেমের বিরুদ্ধে একা লড়াই করার! পর-মুহূর্তেই সব দুর্বলতা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে সে। পা টিপেটিপে বিছানা থেকে নামে এলান।
খুব সন্তর্পণে বিড়ালের মত, কোন রকম শব্দ না করে ঘর থেকে বের হয়ে আসে সে। পরবর্তী দশ মিনিটের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যায়, কালো স্ক্রীন টাইট ট্রাউজার, কালো ফুল হাতা স্ক্রীন টাইট টি-সার্ট, কালো হাত মোজা পড়ে অন্ধকারে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। ডান হাতে ধরা বড় একটা ব্রিফকেস, তাই ডান দিকে একটু ঝুঁকে আছে তার দেহটা, বুঝা যাচ্ছে অনেক ভারী কিছু আছে হাতের ব্রিফকেসটায়। রাস্তায় নেমেই প্রথমে পকেট থেকে বের করে তার ফিউশন ট্র্যাকিং গোলকটা; এক সেন্টিমিটার ব্যাসের ছোট একটি গোলক, তার মধ্যে থেকে হাজার খানেক চুলের মতন চিকন গোল্ডেন তার বের হয়ে আছে, কিছুক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকে এলান এই ফিউশন গোলকটির দিকে। কি অপরিসীম ক্ষমতা ছোট এই গোলকটির! আয়তনে মার্বেলের মতন এই গোলকটি পৃথিবীর তিনশত কোটি মানুষকে একটি অদৃশ্য কারাগারে বন্দী করে রেখেছে গত দুইশত বছর ধরে ! সবকিছু ঠিকমত ঘটলে আজই এর অবসান ঘটবে, এলানের উপর নির্ভর করছে বিশ্বের সমগ্র মানুষের স্বাধীনতা, সে না পারলে জীবিত আর কারও পক্ষেই এই যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব না। তার পরিকল্পনা অন্য কারও কাছে খোলাসাও করেনি ফাঁস হয়ে যাবে মুহূর্তেই, সে ব্যর্থ হলে অন্য কেউ যে চালিয়ে নিয়ে যাবে আর পরবর্তী হামলার পরিকল্পনা করবে সেটাও সম্ভব না, নাহঃ তাকে কোন ভাবেই বিফল হওয়া চলবে না!
চরম আক্রোশে ফিউশন গোলকটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে বুট দিয়ে মাড়িয়ে গুঁড়া গুঁড়া করে দেয় এলান, মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত সিস্টেমের কাছে অদৃশ্য হয়ে যায় সে, পৃথিবীর স্যাটেলাইট, কম্পিউটার, কোন রোবট, বায়োবট বা কোন স্ক্যানিং সিস্টেমই আর তাকে চিহ্নিত করতে পারবে না। চরম তৃপ্তির একটা আবেশ এলানের সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, আহঃ! স্বাধীনতার এত আনন্দ! একটু আবেগ প্রবণ হয়ে উঠে এলান, আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছা করে তার, মুহূর্তেই নিজেকে সংযত করে সে, এখনও আসল কাজ বাকী।
হাত ঘড়িতে সময় দেখে নেয়এলান, এখন বাজে একটা, তিনটা বাজার আগে ফিউশন সেন্টারে পৌঁছাতে হবে। প্রতিটিগাড়িতেই ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগানো থাকে, গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথেই ট্র্যাকিং একটিভ হয়েযাবে। তাই গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কোন উপাই নেই, হেঁটেই যেতে হবে তাকে।
অধ্যায় - ০২ : ফিউশন গোলক
একবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে পৃথিবীতে যখন অরাজকতা সীমা ছাড়িয়ে যাবার উপক্রম হয় তখন একদল নিবেদিত প্রাণ বিজ্ঞানী ফিউশন ট্র্যাকিং ডিভাইসটি আবিষ্কার করে। প্রাথমিক ভাবে আইন করে বাধ্য করা হয় যে, প্রত্যেকেই এই ডিভাইসটি সাথে রাখতে হবে। এতে সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে ট্র্যাক করা সম্ভব হয়। প্রতি মুহূর্তের কে কোথায় আছে, কি করছে, কি কথা বলছে, তার সব বিস্তারিত ইনফরমেশন ফিউশন সেন্ট্রালে চলে যেত। ফলে, অবিশ্বাস্য রকম ভাবে কমে আসে অপরাধের সংখ্যা। কিন্তু এর কয়েক বছর পর, আবার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই এর হার। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এবার অপরাধ সংগঠিত হওয়ার স্থানে কাউকে ট্র্যাক করা সম্ভব হচ্ছে না । পরে জানা গেলো যে, অপরাধীরা এক স্থানে ফিউশন ট্র্যাকিং ডিভাইসটা রেখে অন্য কোথাও অপরাধ সংগঠিত করে আবার আগের স্থানে ফিরে এসে ট্র্যাকিং ডিভাইস পকেটে ভরে নেয়। এতে করে ফিউশন সেন্টারে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার স্থানে কোন অপরাধীর উপস্থিত থাকার কোন ইনফরমেশন পাওয়া যায় না।
আবার আইন পরিবর্তন করা হলো, প্রতিটি শিশুর জন্মের সাথে সাথে অস্ত্রোপচার করে মস্তিষ্কের ঠিক কেন্দ্রে ফিউশন ট্র্যাকিং গোলক বসানো বাধ্যতামূলক করা হলও। এতে করে জীবিত অবস্থায়, মস্তিষ্ক অক্ষত রেখে কেউ এই গোলক অপসারণ করতে পারবে না। ফলাফল স্বরূপ এক প্রজন্ম পরেই পৃথিবীতে অপরাধের সংখ্যা একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। সমগ্র মানব জাতী এক হয়ে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কাজ করতে থাকে, কোথাও কোন অপরাধ নেই, নেই কোন বিশৃঙ্খলা, সবাই যার যার কাজ করে যাচ্ছে সুশৃঙ্খলভাবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে মানুষের জীবন হয়ে উঠে ভয়ংকর রকম বৈচিত্রহীন, একঘেয়েমি পূর্ণ, আত্মহত্যার হার বেড়ে যায় ভয়ংকর রকমভাবে।
ধীরে ধীরে বিশ্ববাসী অনুধাবন করতে পারে, সবাই একেকটা জৈবিক রোবটে পরিণত হয়ে গেছে; কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে, মানুষ নিজের অজান্তেই নিজের বানানো পরাধীনতার শিকলে বাঁধা পড়ে গেছে। সম্পূর্ণ ট্র্যাকিং সিস্টেম এমন ভাবে ডেভেলপ করা হয়েছিলো যে, সে নিজেই নিজেকে আপডেট করতে ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবে। এই ট্র্যাকিং সিস্টেম এমন ভাবে পরবর্তী প্রজন্মের ফিউশন গোলক তৈরি করে যে, মস্তিষ্কে বসানো এই গোলকের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট কম্পনের সিগনাল দিয়ে যে কোন মানুষকে মুহূর্তেই হত্যা করা সম্ভব।
কিছু সাহসী যুবক ছোট খাটোবোমা নিয়ে মাঝে মাঝেই সেন্টারে হামলা করে, কিন্তু সেন্টারের কাছে পৌছার আগেই অসহ্য মাথা ব্যথায়চিৎকার দিয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে আর মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুরকোলে ঢলে পরে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে পরম অবহেলায় এদের দেহকেইলেকট্রিক চুল্লীতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। মানুষের স্বাধীনতা স্পৃহা কল্পনাতীত, নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কত টগবগে তরুণ যে এভাবে জীবনজলাঞ্জলি দিয়েছে, তার হিসাব নেই।
.
অধ্যায় - ০৩: এলান: (এক বছর আগের ঘটনা)
ফিউশন সেন্টার পার হয়ে এলানের অফিস, প্রতিদিন সকালে এর পাশ দিয়ে গাড়ী চালিয়ে তাকে অফিসে যেতে হয়, যাবার পথে একরাশ ঘৃণা নিয়ে ফিউশন সেন্টারের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। শুধু ঘৃণার যদি নিজস্ব কোন শক্তি থাকতো, তাহলে পৃথিবী দুইশত কোটি মানুষের ঘৃণায় মুহূর্তেই গুঁড়ো হয়ে ধূলির সাথে মিশে যেতো মানুষের নিজের হাতেই তৈরি ইতিহাসের জঘন্যতম এই সেন্টারটি। আফসোস, মানুষ ঘৃণাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলেও ঘৃণার নিজস্ব কোন শক্তি নেই।
আজকেও মনে হয় দেরি হয়ে যাবে অফিসে, ভাবে এলান। তাড়াহুড়ো করে গাড়ি পার্ক করে অফিসের দিকে দৌড়ে যায় সে। ঢোকার মুহূর্তে ডিং করে একটা শব্দ হয়ে স্পিকারে আওয়াজ ভেসে আসে, "মিস্টার এলান, আপনি এক মিনিট দেরি করে অফিসের এসেছেন, আপনার এক ঘণ্টার বেতন মাস শেষে কেটে নেওয়া হবে।
জাহান্নামের যাও তুমি, নিজের অজান্তেই গালিটা মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে এলানের।"
মিস্টার এলান, আপনি এই মাত্র মহামান্য ফিউশন সেন্টারকে কূটোক্তি করেছেন, আপনাকে একশত ইউনিট জরিমানা করা হলো।
রাগে গজগজ করতে করতে নিজের ডেস্কের গিয়ে বসে এলান। একটা ঘণ্টা যেহেতু বেতন থেকে কাটাই যাবে তাই এই একটা ঘণ্টা একটু টিভি দেখা যাক। চ্যানেল বদলাতে বদলাতে একটা চ্যানেলের বিজ্ঞাপন তার চোখ আটকে যায়। মাথাটা একটু ঝাঁকি দিয়ে আবার শুনার চেষ্টার করে এলান, সে কি ঠিক শুনছে? নাহঃ! ঠিকই তো শুনছে!
মেয়েটি একনাগাড়ে বলে যাচ্ছে,
আপনি কি বিষাদগ্রস্ত? নাগরিক বিনোদনের অভাব অনুভব করছেন? আপনি কি নিজেকে বন্দী মনে করছেন ? আপনি কি আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে খুন করতে চান ? তাহলে আমরা আপনাকে খুঁজছি না, আপনিই আমাদের খুঁজছেন, চলে আসুন আমাদের এখানে, জীবনকে উপভোগ করুন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মাত্রায়।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতেপারছে না এলান, ফিউশন সেন্টারের অনুমোদনব্যতীত কোন কিছু প্রচার করা যায় না, তাহলে খুনের বিজ্ঞাপন কিভাবে প্রচার করছে এই সংস্থা!নতুন কোন ব্যবসার ধান্দাবাজী না তো? তারপরও ওদের ঠিকানাটা টুকে রাখে এলান। খুন করার স্বাধীনতা! ওহ! নিশ্চয় খুব থ্রিলিংকোন খেলা হবে; গতানুগতিক থিম পার্ক, সী বীচ, পাহাড় ট্র্যাকিং এইসবের আর মানুষ কোন মজা পায় না, এখন দরকার অপরাধ করার আনন্দ, তার উপর সেটা যদি হয় খুন করার মত অপরাধ তাহলে তো সেএক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা!
অধ্যায় - ০৪ : সি.এন্ড.কে
ক্রাইম এন্ড কিলিং সেন্টার এর বাহিরে দাড়িয়ে আশপাশটা বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে এলান, বিশাল এলাকা জুড়ে এই সংস্থা, অনেকটা থিম পার্কের মত। ভিতের ঢুকে এলান ইনফরমেশন কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যায়।
হ্যালো স্যার, আমাদের সি.এন্ড.কে সেন্টারে আপনাকে স্বাগতম।
কি সুন্দর মেয়েটা ! কিন্তু হাসিতে কোন প্রাণ নেই কেন? যেন মমির হাসি! একটু চমকে উঠে এলান। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, আমি আজ প্রথম এসেছি এই সেন্টারে, আমাকে কি আপনাদের সার্ভিসের ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারেন?
আপনি ঐখানে একটু অপেক্ষা করেন, আমাদের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনাকে ব্রীফ করবে।
এলান আরও পনের জনের সাথে বসে অপেক্ষা করছে একটা ঘরে, কিছুক্ষণ পর একজন সুদর্শন যুবক এসে কান অব্ধি লম্বা চড়া হাসি দিয়ে বললো, আমি এই কোম্পানির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, আপনাদের ব্রীফ করতে এসেছি। আমারা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একেবারে অন্য ডাইমেনশনের উত্তেজনা। নাহ, কোন ড্রাগ বা ভার্চুয়াল কোন কিছু না। একেবারে রিয়েল। আপনারা পারবেন সত্যিকারের মানুষকে খুন করতে।
- ;জ্বি, চমকাবেন না। ভয় পাওয়ারও কিছু নেই, আমরা সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া মেনেই এই প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। এটা হলো ডি.এন.এ. ব্যাংক; এখানে পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাত ও কুখ্যাত সব ব্যক্তিদের ডি.এন.এ স্যাম্পল আছে; সক্রেটিস, প্লেটো, একেলিস, আলেকজেন্ডার, সিজার, স্পার্তাকাস, ক্লিউপেটরা, কলোম্বাস, রাইট ব্রাদারস, নিউটন, নেপোলিয়ন, আইনস্টাইন, হিটলার, মোসোলিনি, পেলে, সাদ্দাম হোসেন, বিন লাদেন, মিলেট দম্পতি, পিয়েলা, ইঞ্জিয়াস কিং, বিভিয়ানা মাইক; কি নেই এই ব্যাংকে!
দর্শনার্থীদেরকে বাহির থেকে একটা বড় ভবন দেখিয়ে বললো মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ।
এইটা হলো ক্লোন সেন্টার, এখানে আপনাদের পছন্দমত শিকারকে ক্লোন করা হয়। সবাই কেমন যেন একটু চমকে উঠে। স্মিত একটা হাসি দিয়ে এক্সিকিউটিভ বললো, জ্বি, আপনারা ডিএনএ ব্যাংক থেকে স্যাম্পল পছন্দ করে কাকে হত্যা করতে চান আমাদের জানাবেন, পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা তাকে ক্লোন করে ফেলবো।"পৈশাচিক হাসিটা সমগ্র মুখে ছড়িয়ে পড়ে এবার।"
--"সবশেষে এগুলো হলো আমাদের কিলিং জোন, দুর থেকে কতগুলো প্রাচীর ঘেরা জায়গা দেখিয়ে বললো এক্সিকিউটিভ। প্রতিটা ব্লক আয়তনে দশ হাজার বর্গ মিটার, একেকটায় একের রকম পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, কোনটায় পাহাড়ি এলাকা, কোনটা আবার শুধু মরুভূমি, আবার কোনটা ঘন জঙ্গল। নির্দিষ্ট দিনে ক্নোন করা প্রাণীটাকে এখানে ছেড়ে দেওয়া হবে, আর আপনি আপনার পছন্দমত যে কোন একটা অস্ত্র নিয়ে তাকে শিকারে নেমে যাবেন। সে এক ভয়ংকর রকম এডভেঞ্চার!" ঠোঁট বাকিয়ে শো...শো... একটা শব্দ করে, শরীর কাঁপিয়ে গা শিউরে উঠার মত ভঙ্গি করে মার্কেটিং এর এই এক্সিকিউটিভ।"
দর্শনার্থীদের মধ্যে থেকে একজন প্রশ্ন করলো, আচ্ছা যদি শিকারি নিজেই শিকার হয়ে যায়?
- না, এমন হবার কোন সম্ভাবনা নেই। আপনাদের হাতে একটা এলার্ম বাটন থাকবে, কোন বিপদ হলে এই বাটনে চাপ দিবেন; সাথে সাথে আমাদের শার্প-শুটার স্নাইপার ক্লোনটাকে গুলি করে ভূপাতিত করে ফেলবে।
এলান একে একে সবার চোখের দিকে তাকায়, সেখানে জ্বলজ্বল করছে অজানা এক আভা, মুহূর্তেই যেন সবার মধ্যে নতুন এক প্রাণের সঞ্চার হয়। হাজার হোক, খুন করার নেশা পৃথিবীর প্রাচীনতম, ভয়ংকর নেশা। দুইশত বছর কেন, হাজার বছরেও এই নেশা মানুষের রক্ত থেকে যাবার নয়।
- আপনারা আজকে বুকিং দিয়ে গেলে আগামী সপ্তাহে এসে আমাদের এই অভূতপূর্ব খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন, নির্বিকার ভাবে বলে এক্সিকিউটিভ।
সবার মত এলানও বুকিং দেওয়ার জন্য লাইনে দাড়ায়। বেশিভাগই হিটলার আর আলেকজান্ডারকে বুকিং দেয়। বুকিং এর লোকটা একটু অবাক হয়ে এলানের দিকে তাকায় যখন সে বুকিং দেয় সক্রেটিসকে। একটু নার্ভাস হাসি দিয়ে এলান শুধু বলে, "আমি প্রাচীন গ্রীক দর্শনশাস্ত্রের ভক্ত"
সঞ্চিত ইউনিটের প্রায়অর্ধেক খরচ করে যখন এলান বাড়ি ফিরল তখন রক্তের মধ্যে একটা আলোড়ন অনুভব করছিলো সে, এ এক অন্যরকম অনুভূতি। অনেক দিন পর আজ তার শান্তিরঘুম হয় । আহঃ!এমন শান্তির ঘুম কত দিন হয় না!
.
অধ্যায় - ০৫ : প্রথম খুন
স্যার, আপনাকে কিছুক্ষণের মধ্যে প্রস্তুত হতে হবে, সক্রেটিসকে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই মাত্র "বললো লোকটা আর আপনি এখান থেকে যেকোনো একটা হাতিয়ার বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।"
এলান দেখে তার সামনে তীর ধনুক, তলোয়ার, বিংশ শতাব্দীর রিভলভার থেকে শুরু করে সর্বাধুনিক এটমিক ব্লাস্টার পর্যন্ত থরে থরে সাজানো আছে। সব ঘুরে সে শেষমেশ বিকট দর্শন দুইটা তলোয়ার হাতে তুলে নেয়।
জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকে, তারপর ঘন জঙ্গলে ঢুকে যায় এলান। দুই হাতে দুইটা তলোয়ার নিয়ে সন্তর্পণে এগিয়ে যাচ্ছে সে, সতর্ক দৃষ্টি, নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ নিজেই শুনতে পাচ্ছে। হঠাৎ চোখের কোনে কি যেন নড়ে উঠতে দেখে সে, লাফ দিয়ে গাছে আড়ালে চলে যায় এলান, তারপর ধীরে ধীরে উকি দিয়ে দেখে একটা কাঠবিড়ালি জান প্রাণ দিয়ে দৌড়চ্ছে । নিজের মনেই হেসে উঠে সে।
আরও এগিয়ে যায় সে, বুকের ভেতর ড্রাম বাজানোর শব্দ হচ্ছে, লাফ দিয়ে একটা বালির টিবির উপর উঠে সে, একটু ধাক্কার মত খায় এলান সাথে সাথে, দেখে পনের বিশ মিটার দুরে একটা গাছের নিচে বসে আছে পৌড় একটা লোক, নির্বাক নিশ্চল। এত অল্প বয়সী কাউকে আশা করেনি এলান, কত হবে লোকটার বয়স! চল্লিশ বিয়াল্লিশ!
খোলা তরবারি নিয়ে সক্রেটিসের দিকে এগিয়ে যায় এলান, সামনে দাড়িয়ে হুংকার দিয়ে উঠে, "আমি এসেছি আপনাকে হত্যা করতে।"
- মৃদু হেসে উঠে সক্রেটিস, কিছুক্ষণ আগে হেমলক পান করিয়ে আমাকে হত্যা করা হয়েছে, তুমি আবার কিভাবে হত্যা করবে? আর আমি এখানেই বা এলাম কিভাবে? এটা কি মৃত্যুর পরবর্তী জীবন? হত্যা, লোভ, কি এই জগতেও চলে এসেছে?
আবার তৈরি করা হয়েছে আপনাকে। প্রায় তিন হাজার বছর আগে প্রথমবার হত্যা করা হয়েছিলো, মানুষ এখন মানুষ তৈরি করার প্রযুক্তি আয়ত্তে নিয়ে এসেছে ।
- বিন্দু মাত্র বিচলিত না হয়ে, মৃদু হেসে সক্রেটিস বললো, "ও! পুনঃ-পুনঃ যদি সৃষ্টিই করা যায় তাহলে মৃত্যুর কি স্বার্থকতা? ঠিক আছে কর হত্যা আমাকে, তবে তার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো, "কেন?"
একটু থমকে যায় এলান; তারপর বলে, এটা একটা খেলা, আপনি শিকার আমি শিকারি, আপনি দৌড়ান, এটাই নিয়ম এই খেলার। আপনি বাঁচার জন্য লড়বেন আর আমি হত্যা করার জন্য লড়ব।
- হো হো করে হেসে উঠে সক্রেটিস, দৌড়িয়ে এমন কোন জায়গায় কি যেতে পারবো যেখানে মৃত্যু আমাকে ছোঁবে না!
রক্তের মধ্যে কম্পন অনুভব করতে থাকে এলান, মৃত্যু মুখেও শিকারকে এমন নির্বাক দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। ডান হাতে ধরা তলোয়ারটা গায়ের জোরে ঢুকিয়ে দেয় সক্রেটিসের বুকে, আর বা হাতের তলোয়ারটা সজোরে বসিয়ে দেয় মাথা বরাবর।
- উহঃ শব্দ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, মৃত্যুর আগে শুধু একটা কথা মুখ দিয়ে বের হয় তার, "হায়! তিন হাজার বছরেও সভ্যতা, মনুষ্যত্ব একচুলও এগোয় নি"
এলানের সারা শরীর রক্তেমাখামাখি, তার পায়ের কাছে পড়ে আছেসক্রেটিসের থেঁতলানো মগজ, পৈশাচিক উল্লাসে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠে সে। অপ্রকৃতিস্থের মত হাসতে হাসতে কিলিং জোন থেকে বের হয়ে আসে এলান।
অধ্যায় - ০৬ : দ্বিতীয় খুন
পরবর্তী কয়েকদিন ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি এলান, ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে শুধু ভেসে উঠেছে মাটিতে পড়ে থাকা সক্রেটিসের মগজ। উহঃ কি বীভৎস দৃশ্য ! তার অবচেতন মন কিছু একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে তাকে, বারবার একই স্বপ্ন দেখিয়ে। কিন্তু ইঙ্গিতটা ধরতে না পেরে তার অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়, মাঝে রাইসার সাথে বেশ কয়েকবার তুমুল ঝগড়া হয়ে গেছে তার।
একদিন তুমুল ঝগড়ার মধ্যে হঠাৎ রাগের মাথায় রাইসা বলে উঠে, ফিউশন গোলকের মাধ্যমে তোমার মগজে যদি তীব্র একটা ব্যথা দিতে পারতাম তাহলে মনটা শান্ত হতো।
হঠাৎ এলানের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে, "কি বললেন তুমি ? আবার বলো , আবার বলো।"
"ফিউশন গোলকের মাধ্যমে তোমার মগজে যদি তীব্র একটা ব্যথা দিতে পারতাম তাহলে মনটা শান্ত হতো। কেন হুমকি দিচ্ছ নাকি? যতবার বলতে বলবে ততবার বলবো, আমি কি তোমাকে ভয় পাই নাকি? রাগে গজগজ করতে থাকে রাইসা।
।
ইউরেকা! ইউরেকা! চিৎকার দিয়ে বউকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে ধেই ধেই করে নেচে উঠে এলান। তার সারা গালে, মুখে চুমু দিতে শুরু করে হঠাৎ।
একটা ঝাড়া দিয়ে এলানকে সরিয়ে দিয়ে বলে "কি ব্যাপার ! পাগল হয় গেলে নাকি?"
পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে ভয়ংকর পরিকল্পনা ফাইনাল করে ফেলে এলান। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বার বার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সে। অবশেষে সন্তুষ্ট হয়, নাহঃ পরিকল্পনায় কোথাও কোন ফাঁক নেই; একদম ফুলপ্রুফ প্ল্যান।
অবশেষে সি.এন্ড.কে সেন্টারে হাজির হয়ে এলান। এগিয়ে যায় ইনফরমেশন কাউন্টারের দিকে। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মৃদু একটা হাসি দিয়ে বলে, "আমি কি কোম্পানির টেকনিক্যাল ম্যানেজারের সাথে দেখা করে বলতে পারি?"
ইন্টারকমে কিছুক্ষণ কথা বলে মেয়েটি বলে, "আপনি এই দিক দিয়ে পাঁচ নাম্বার রুমে যান, ওখানেই টেকনিক্যাল ম্যানেজার বসেন।"
দরজায় নক করতেই ভিতর থেকে একটা ভরাট কণ্ঠ বলে উঠে, "আসুন স্যার , আসুন।" তা এবার বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য?
- আমি আপনাদের সার্ভিস কিছুদিন আগে একবার নিয়েছিলাম, সত্যি অসাধারণ। আমি খুব অভিভূত এ ক্লোন খুন করার ব্যাপারে আপনাদের অভিনব আইডিয়া দেখে। আমি আবারও তা করতে চাই।
ঠিক আছে, আপনি বুকিং দেন, সমস্যা কোথায়?
- আমি আসলে আপনাদের ডি.এন.এ ব্যাংকের কাউকে খুন করতে চাই না, আমি আমার নিজের ক্লোনকে খুন করতে চাই।
.
কিন্তু আপনি তো বিখ্যাত কেউ নন, তার উপর আপনি কেন নিজের ক্লোনকে খুন করতে চান?
-দেখুন, আমি যদি নিজের ক্লোনকে খুন করতে যাই, সেই ক্লোনটাও বাঁচার জন্য লড়াই করবে । কিন্তু দুইজনের চিন্তাধারা যেহেতু একরকম সেহেতু এই লড়াইটা হবে খুবই উচ্চমার্গীয় বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই। এতে আপনাদের এই প্রজেক্টে নতুন মাত্রা যোগ হবে। আর আজ আমি বিখ্যাত কেউ নই, কিন্তু কাল যে হবো না সে গ্যারান্টিতো কে দিতে পারবে না , তাই না?
হুমম, ভালো বলেছেন। ঠিক আছে , আমি টেকনিসিয়ানদের বলে দিচ্ছি , আপনি আজকে ডিএনএ স্যাম্পল আর বুকিং দিয়ে যান। আমরা আপনাদের লড়াই উপভোগ করতে চাই।
- আচ্ছা, তার আগে আমার একটা প্রশ্ন ছিল। এই যে ক্লোন করছেন তাদের মেমরি কোথা থেকে আসছে?
আসলে বেশ কয়েক দশক আগে আমাদের বিজ্ঞানীরা মানুষের মেমরি জীনের সন্ধান পায়, এর ফলে স্যাম্পল যে মুহূর্তে নেয়া হচ্ছে ক্লোনিং এর পর সে পর্যন্ত স্মৃতি তার ব্রেনে লোড করা সম্ভব হয়েছে। তার মানে আপনি যদি এখন ডিএনএ স্যাম্পল দিয়ে যান আপনার ক্লোনের এই মুহূর্ত পর্যন্তই স্মৃতি থাকবে।
এক সপ্তাহ পর, ধীরে ধীরে চোখ খুলে এলান। নিজেকে একটা ঘন জঙ্গলে আবিষ্কার করে সে । লাফিয়ে উঠে এলান, সি.এন্ড.কে সেন্টারের টেকনিক্যাল ম্যানেজারের সাথে কথোপকথন পর্যন্ত তার মনে আছে, তারপর আর কিছুই মনে নেই তার। সে এখানে কিভাবে এলো ! দেখে তো জায়গাটা মনে হচ্ছে সি.এন্ড.কে সেন্টারের কিলিং জোন । মানে ! সে ক্লোন ! তাকে এখন হত্যা করতে আসবে সে নিজেই । ধীরে ধীরে সব স্মৃতি ফিরে আসে তার, মনে পড়ে গেলো তার ভয়ংকর সেই পরিকল্পনার কথা । মৃদু হাস্য মুখে সে অপেক্ষা করতে থাকে নিজের জন্য।
মুখোমুখি দুই এলান, দুজনেই চুপ, কোন সারা শব্দ নেই কারো মুখে। দুজনেই জানে একটা টু শব্দ করলে আসল এলানের মাথায় বসানো ফিউশন ট্র্যাকিং গোলকের মাধ্যমে সব ইনফরমেশন চলে যাবে ফিউশন সেন্টারে। কোন কথা না বলে, হাতের তলোয়ারটা মাটিতে ফেলে দিয়ে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে আসল এলান।
.
প্রচণ্ড বেগে মাথার উপর নেমে আসে বিকট দর্শন তলোয়ার, বিদীর্ণ হয়ে যায় আসল এলানের মাথা। মুহূর্তেই এলানের মগজ থেকে ফিউশন ট্র্যাকিং গোলকটা বের করে পকেটে ভরে নেয় ক্লোন এলান।
রক্ত মাখা শরীর নিয়েকিলিং জোন থেকে বের হয় আসে দুই শত বছর পর, পৃথিবীর প্রথম স্বাধীন মানুষ।
.
অধ্যায় - ০৭ : মিশন - (বর্তমান)
টানা দুই ঘণ্টার মত হেঁটে হাঁপিয়ে উঠে এলান, ফিউশন সেন্টারের দেয়ালে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয় সে, তারপর ছয় ফিট উঁচু দেয়াল টপকিয়ে ঢুকে পরে পৃথিবীর ভয়ংকরতম জায়গা ফিউশন সেন্টারের সীমানায়। বিশাল এলাকা নিয়ে এই সেন্টার, সমগ্র এলাকা জুড়ে এটমিক ব্লাস্টার হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভয়ংকর দর্শন সামরিক রোবট। এ্যালনের সাথে ফিউশন ট্র্যাকিং গোলকটা না থাকার কারণে এদের কেউই তাকে দেখতে বা ট্র্যাক করতে পারবে না, এইসব রোবটদের কাছে আসলে এলানের কোন অস্তিত্বই নেই। তারপরেও স্বাভাবিক আত্মরক্ষার তাড়নায় তার বুকটা ধুকধুক করছিলো, কাঁপা কাঁপা পদক্ষেপে সে একটা রোবটের সামনে দাড়ায়, কিন্তু রোবটটার মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখতে না পেয়ে তার ভয় আস্তে আস্তে উবে গিয়ে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। এবার মেইন রোড দিয়ে দীপ্ত পদক্ষেপে হেঁটে গিয়ে মূল ফটকের সামনে দাড়ায় এলান। মূল ফটকে দাঁড়ানো রোবট গার্ডের পকেট থেকে টান দিয়ে পাঞ্চ-কার্ডটা বের করে আনে সে, রোবটের কোন বিকার নেই। মূল বিল্ডিং এ ঢুকে লিফটে দিকে এগিয়ে যায় এলান, লিফটে ঢুকেই অক্সিজেন মাস্কটা মুখে লাগিয়ে নেয় তারপর ভূগর্ভস্থ পঞ্চাশ তলা নিচে, সেন্টারের হৃৎপিণ্ড উপস্থিত হয় সে। বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে যায় সে ! আলোতে চারদিকে মধ্যাহ্নে মত ঝলমল করছে ; প্রায় পঞ্চাশ মিটার ব্যাসের একটা গোলক, ঠিক ছোট ফিউশন ট্র্যাকিং গোলকের মতই দেখতে শুধু আকারে বিশাল, তরল হিলিয়ামের উপর ভাসছে, আর চারদিক থেকে লক্ষ কোটি তার এসে এই গোলকের বহিরাবরণে মিশেছে। এ এক অপার্থিব অপূর্ব দৃশ্য! পৃথিবীর কোন জীবন্ত মানুষ গত দুইশত বছরে এখানে আসতে পারেনি!
বিহ্বল ভাব কেটে গেলে, কালক্ষেপণ না করে কাজে লেগে যায় এলান। ব্রিফকেস খুলে কাঁপা কাঁপা হাতে বের করে আনে ছোট কিন্তু ভয়ংকর বিধ্বংসী টাইম বোমাটা। এই সেন্টার ধ্বংস করার জন্য এত পাওয়ারফুল বোমার কোন দরকার ছিলো না, কিন্তু এলান কোন রকম ঝুঁকি নিয়ে রাজি নয় । বোমাটা জায়গা মত বসিয়ে হাত ঘড়ির সাথে মিলিয়ে ঠিক ছয়টায় সময় সেট করে সে। এখন বাজে সাড়ে চারটা, এখান থেকে বের হয়ে, সাতটার মধ্যে ব্রডকাস্টিং সেন্টারে পৌঁছাতে হবে তাকে। টিভি, রেডিও, ইন্টারনেটে বিশ্ববাসীর কাছে এক যোগে প্রচার করতে হবে তাদের মুক্তির সুসংবাদ। হাতে সময় কম, সবকিছু আবার চেক করে ঠিক পাঁচটার সময় লিফটে করে গ্রাউন্ড ফ্লোরে উঠে আসে এলান।
সেন্টারের দেয়াল টপকিয়ে বাইরে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয় এলান, অধৈর্য হয়ে একটু পরপর হাতের ঘড়িতে সময় দেখতে থাকে সে, শেষে এসে ঘড়ির সাথে সুর মিলিয়ে কাউন্ট ডাউন শুরু করে এলান ...... ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান .... এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড, তিন সেকেন্ড কোন সারা শব্দ নেই ! হঠাৎ পায়ের নিচে মাটি কেঁপে উঠে, থরথর ! পাঁচ সেকেন্ড পর বিকট শব্দের কানে তালা লাগে যায় এলানের।
মুচকি হেসে পকেট থেকেআট পাতার ভাষণের পাণ্ডুলিপিটা বের একটু চোখ বুলিয়েই আবার পকেটে চালান করে দিয়েব্রডকাস্টিং সেন্টারের দিকে পা বাড়ায় এলান, মিশন সফল।
অধ্যায় - ০৮ : পরিসংহার<br>
" .... বিশ্ববাসী, আজ আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তা টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আপনাদের । আমাদের সামনে অনেক কাজ , আমাদের প্রিয় এই পৃথিবীকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। সবাই ভালো থাকুন আর সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।" একদম শেষে এসে এলান বলে, "আসল এলানের পক্ষ থেকে আমি; ক্লোন এলান। রাইসা, আমাকে ক্ষমা করে দিও।" এই বলে দীর্ঘ বক্তৃতা শেষ করে ব্রডকাস্টিং সেন্টার থেকে বের হয়ে আসে এলান।
চারদিকে উৎফুল্ল মানুষের ঢল! মানুষ আজ মুক্তির আনন্দে পাগল প্রায়। রাস্তায় বের হয়েই এলান দেখে হাজার হাজার মানুষ উন্মাদের মত নেচে বেড়াচ্ছে, স্লোগান দিচ্ছে। ভিড়ের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দেয় এলান, এবার শুধু হারিয়ে যাওয়া আর রাইসা থেকে পালিয়ে থাকা।
রাইসা ভিড়ের মধ্যে পাগলের মত খুঁজছে এলানকে, চিৎকার করছে নাম ধরে ডাকছে আর বলছে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি তোমাকে এলান, কোথায় তুমি, প্লিজ ফিরে এস, প্লিজ, প্লিজ ফিরে এস। হঠাৎ শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। ভিজে যাচ্ছে সব, ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে পরাধীনতার সব ছাপ আর রাইসার চোখের জল।
(সমাপ্ত)
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ā§Ģ āύāĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
3565
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
⧧⧍:ā§Šā§Ģ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ