ফ্যান্টাসি গল্প- দ্য সার্পেন্ট গর্ডেস
লেখা- অচেনা গল্পের শেষ লাইন
চ্যাপ্টার ৫: দ্য হিডেন গড
মেয়েটা অদ্ভুতভাবে হেসেই চলেছে। ওর দানবীয় হাসিটা ওর সাথে বেশ মানিয়ে গেছে। এই রকম ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার সাথে একটা মেয়ে কিভাবে হাসতে পারে?
‘ত...ত...তুমি...তুমি কিভাবে অ্যাঙ্গুইসিয়া হও? তুমি তো অনেক আগেই মারা গিয়েছ! তোমার মমিটাও আমাদের কাছে আছে,’ তীব্র ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল উইলিয়ামের শিরদাঁড়া বেয়ে।
‘ছিল...এখন নেই! এখন সেটা আনুবিসের কাছে। তবে আবার এটাও সত্য যে ওটা আমারই মমি ছিলো...’ উইলিয়ামকে ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে দেখতে-দেখতে বলল অ্যাঙ্গুইসিয়া।
‘কিসব আবোল-তাবোল বকছো, তোমার মমি...আবার তুমি জীবিত...দেখ, এসব বুলশিট কাহিনী ছেড়ে আমাদেরকে সাফ-সাফ জানাও যে তুমি আসলে কে, এখানে কি করছো, আমরা এখানে কিভাবে এলাম আর আমাদের বন্ধুরা কোথায়?’ উইলিয়ামের রাগ চাপতে লাগল এবার। মেয়েটা কি ওদের সাথে মশকরা করছে?
‘অনেকগুলো প্রশ্ন, অনেকগুলো উত্তর। ঠিক আছে, একে-একে সবগুলোরই উত্তর দিচ্ছি, অবশ্য আমি বেশিক্ষণ কথা বললে তোমাদেরই লাভ, কারণ...যতক্ষন আমি কথা বলব, তোমাদের আয়ু ততক্ষণ পর্যন্ত বেড়ে যাবে...’ ক্রুর একটা হাসি দিয়ে বলল অ্যাঙ্গুইসিয়া।
‘তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে তোমরা জাহাজসহ সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিলে। ঐ ঝড় আনুবিস, মানে আমার পিতারই সৃষ্টি ছিল। তার অনেক ক্ষমতা। সে তার সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে সমুদ্রে একটা মেলস্ট্রোম তৈরি করল। সেই সাথে পানির নিচে একটা বিশাল পোর্টালও তৈরি করল। তোমরা যে হোয়ার্লপুলটা দেখেছ ঠিক তার নিচেই ছিল পোর্টালটা। তোমরা ঠিক যেই মুহুর্তে ডুবে গেলে, ঠিক সেই মুহুর্তেই তোমরা চলে এলে সোজা এইখানে। আমার জগতে...’
‘তোমরা আবার ভেবো না যে আনুবিস যা করেছে তা সে আমাকে ভালবাসে বলে করেছে। না...সে যথেষ্ট নিষ্ঠুর।
নিজের কথা ছাড়া আর কারো কথাই সে ভাবে না। সে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়েছে কারণ আমিই ওকে ডেকেছিলাম। না ডাকলে সে কখনোই আসে না। সে যখন এসে দেখল যে তোমরা আমার মমিটা চুরি করেছ, তখন সে খুবই রেগে গেল। কারণ, আমার দেহটাকে সে নিজের হাতে মমি করেছিল। তাই সেই মমিটাকে যখন তোমরা নিয়ে গেলে, তখন সে রাগে দিশেহারা হয়ে গেল; এই জন্যে নয় যে তোমরা তার মেয়ের মমি চুরি করেছ, বরং এই জন্যে যে তোমরা তার নিজের হাতে করা মমি চুরি করেছ। তোমাদেরকে সে মেরেই ফেলত, কিন্তু আনুবিসকে আমিই অনুরোধ করেছিলাম তোমাদেরকে আমার কাছে এনে দেয়ার জন্যে। আর তাই সে তোমাদের না মেরে সোজা আমার কাছে এনে দিল। আমার মমিটা যারা চুরি করেছে, আমার সমাধি যারা অপবিত্র করেছে, তাদেরকে এত সহজে আমি ছেড়ে দেই কিভাবে...’
‘এরপর তুমি জানতে চেয়েছিল যে আমি কিভাবে এখনো বেঁচে আছি, যেখানে আমাকে মমি করে ফেলা হয়েছে অনেক আগেই...তোমাদেরকে সব কিছু বলতে আমার সমস্যা নেই...কারণ, তোমরা এমনিতেই একটু পর পরপারে চলে যাবে। যাওয়ার আগে নাহয় একটু খোশ গল্প করেই গেলে আমার সাথে...’ বলেই বিশ্রীভাবে হা-হা করে হেসে উঠল মেয়েটা।
‘গোড়া থেকেই শুরু করি তাহলে, শোন...মন দিয়ে শোন...’
অ্যাঙ্গুইসিয়া চোখ বন্ধ করল। যেন ঘটনাগুলো সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। অ্যাঙ্গুইসিয়া নিজের কাহিনী শুরু করল। ওর প্রতিটি শব্দ আশে-পাশের দেয়ালে ভয়ংকরভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে...
যেই রাতে আমি ১৮ বছরে পা দিয়েছিলাম, ঠিক সেই রাত থেকেই সব কিছু শুরু হয়। আমি তখনও গ্রামবাসির কাছ থেকে নিজের ক্ষমতা লুকিয়ে রেখেছিলাম। কাউকে জানতে দেইনি যে আমি আনুবিসের মেয়ে, একজন ডেমি গডেস। আমার মায়ের নির্দেশ, নিজের ক্ষমতা কাউকে দেখান যাবে না। একজন সাধারণ মানুষের মতই জীবন-যাপন করতে হবে। তখনও পর্যন্ত আমি উনার নির্দেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালন করছিলাম।
সেই রাতে বাসায় আমি একাই ছিলাম। নিজের সদ্যপ্রাপ্ত ক্ষমতাগুলোকে যাচাই-বাছাই করছিলাম...এমন সময়...আমি শুনতে পেলাম কিছু একটা ফিসফিস করে আমার নাম ধরে ডাকছে, রক্ত শীতল করে দেয়া একটি কণ্ঠস্বর আমাকে ডাকছে...
‘অ্যাঙ্গুইসিয়া...অ্যাঙ্গুইসিয়া...’
আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলাম। যদিও আমি আনুবিসের মেয়ে, আর তার কিছু গডলি পাওয়ারও আমার ভেতর ছিল, কিন্তু এরপরও, আমি তখন নিতান্তই দুর্বল এক বাচ্চা মেয়ে। প্রথমে ভেবেছিলাম আমার শোনার ভুল। আবার কাজে মন দিলাম।
কিন্তু একটু পর সেই একই কণ্ঠস্বর আমাকে আবার ডাকল।
‘অ্যাঙ্গুইসিয়া...অ্যাঙ্গুইসিয়া...মুক্তি চাই...আমাকে মুক্তি দাও...’
এবার আরো স্পষ্টভাবে কণ্ঠস্বরটাকে শুনতে পেলাম আমি। সে মুক্তি চাইছে...কিন্তু কার কাছ থেকে? আমি ভাবলাম কেউ বাইরে থেকে ডাকছে আমাকে। সাথে-সাথে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম, কেউ নেই!
আমার তখন সন্দেহ হলো যে কেউ হয়ত আমার জানালার কাছে মুখ এনে আমাকে ডাকছে এবং আমি আসার আগেই সরে পড়ছে। পুরো ব্যাপারটাই হয়তো তার ফান।
আমি ঠিক করলাম, যেভাবেই হোক, তাকে ধরবোই। তাই আমি সোজা বাড়ির ছাদে উঠে গেলাম। ছাদের কোনার দিকে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে জানালার দিকে লক্ষ্য রাখছিলাম। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন কাউকে দেখলাম না, তখন আমার বিরক্তি ধরে গেল। ভাবলাম, ধুর, সে হয়ত আর আসবে না। প্রচণ্ড বিরক্তি থেকে যখন নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছি ঠিক তখুনি, আমি আওয়াজটা আবার শুনলাম। খুব ঠান্ডা শিরশিরে একটা গলা, আমাকে বলে উঠল,
‘অ্যাঙ্গুইসিয়া...অ্যাঙ্গুইসিয়া...আমাকে মুক্ত করে দাও....মুক্তি চাই...মুক্তি...’
‘কে, কে তুমি?’ তীব্র ভয় আমাকে আচ্ছন্ন করল।
‘সব বলছি, আগে আমাকে মুক্ত করে দাও...ছেড়ে দাও আমাকে...ছেড়ে দাও...’ কণ্ঠস্বরটা সেই একই রকম শীতল গলায় বলল।
হঠাত আমি বুঝতে পারলাম কণ্ঠস্বরটা আসলে কোথা থেকে আসছে...না...সেট
া আমার জানালার সামনে থেকে নয়, ওটা আসছে আমারই ভেতর থেকে...
প্রচণ্ড ভয়ে আমার হাত পা কাঁপতে লাগল, আমার ভেতরে তাহলে অন্য কেউ আছে? সে বেরিয়ে যেতে চায় এখন? যদি সে বেরিয়ে গিয়েই সাথে-সাথে আমাকে হত্যা করে?
‘তুমি আ...আমার ভে...ভেতর থেকে কিভাবে ক...কথা বলছো...’ ভয়ে আমার গলা থেকে কথাই বেরোচ্ছিলো না।
‘আমি আর তুমি একই অস্তিত্ব অ্যাঙ্গুইসিয়া। তোমার অস্তিত্বের দুইটা অংশ। একটা তুমি, আর একটা আমি। এই দুইটা মিলেই একজন অ্যাঙ্গুইসিয়া। কেবল পার্থক্য হলো, তুমি মানুষ...আর আমি...ঠিক মানুষ নই...’
‘মা...মানুষ নও? মানে কি...তুমি কি?’
‘আগে আমাকে মুক্ত করে দাও অ্যাঙ্গুইসিয়া, তারপর তোমাকে সব বলব।’
‘ন...না...আগে বলো যে তোমাকে মুক্ত করলে আমার লাভটা কি? আর তোমাকে মুক্ত না করলে আমার ক্ষতিটাই বা কি?’ আমি বললাম। আনুবিসের মেয়ে হিসেবে সবকিছুতেই আগে নিজের লাভ দেখার ব্যাপারটা আমি জন্মগতভাবেই শিখেছিলাম।
আমার ভেতরের অস্তিত্বটা আমার অজ্ঞতাতে যথেষ্ট বিরক্ত বোধ করছে, ওর রাগ বাড়ছে, আমি প্রতি মুহুর্তে সেটা টের পাচ্ছি। কিন্তু একটু ভেবে এরপর সে উত্তর দিলো, ‘তোমার প্রকৃত ক্ষমতা তুমি এখনো দেখোনি। সেটা দেখবে যদি তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। আমিই তোমার হিডেন পাওয়ার! তোমার ভেতরের হিডেন গড! আমাকে ছাড়া তুমি একজন সাধারণ বুজরুকি দেখানো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নও।’
‘কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দিলে যে তুমি ছাড়া পাওয়ার সাথে-সাথে আমাকে হত্যা করবে না, তার কি প্রমাণ আছে?’ একগুঁয়ের মত বললাম আমি।
কণ্ঠস্বরটা মনে হয় ওর জীবনে এতটা হাস্যকর কথা কখনো শোনেনি। হা-হা করে হেসে উঠল ওটা। সেই হাসি শুনে আমার রক্ত হিম হয়ে গেল। এ আসলেই মানুষ নয়...
‘তুমি খুবই বোকা একটা মেয়ে...তুমি এখনো বুঝতে পারছো না ব্যাপারটা? আমি আর তুমি একই অস্তিত্বের অংশ। আমরা একসাথে একটা অস্তিত্ব গঠন করি। তোমাকে ছাড়া আমি অচল। আবার আমাকে ছাড়া তুমি। তুমি মানেই আমি, আর আমি মানেই তুমি। আমি কেন নিজের ক্ষতি নিজে করবো?’
আমি অনেক ভাবলাম। কণ্ঠস্বরটা ঠিকই বলছে। ওর যুক্তি আমার কাছে গ্রহনযোগ্য মনে হলো। কিন্তু এরপরও, একটা সম্পুর্ণ অপরিচিত কন্ঠস্বরকে আমি কিভাবে বিশ্বাস করতে পারি? আমার উত্তর দিতে দেরি হচ্ছে দেখে সে বলল, ‘দেখ, আমি তোমাকে অমর করে দিতে পারি। তুমি কি অমরত্ব চাও না? যুগ-যুগ ধরে বেঁচে থাকতে চাও না? এসব কোন কিছুই সম্ভব হবে না যদি আমি তোমার শরীরের ভেতর আটকে পড়ে থাকি। আমার ক্ষমতা আমি ব্যবহার করতে পারবো শুধু তখুনি যখন তুমি আমাকে মুক্ত করে দেবে।’
আমার অনেক আগে থেকেই অমরত্বের লোভ ছিল। আমি ওকে বললাম, ‘ঠিক আছে আমি রাজি।’
‘তুমি রাজি? তাহলে বাক্যটা বল, বাক্যটা বল...আমাকে বেরোতে দাও...তোমার অনুমতি ছাড়া আমি বেরোতে পারবো না...’ কণ্ঠটা হিসহিসিয়ে উঠল।
‘আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম...’ বলেই আমার ভেতর থেকে যা এতক্ষণ ধরে বেরিয়ে আসার জন্যে ছট-ফট করছিল তাকে আমি বেরোতে দিলাম এবার।
ধোঁয়াটে কিছু একটা সজোরে আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে গেল। মুক্তির আনন্দে ওটা ছটফট করছে। ওটার বুনো উল্লাস শুনছি আমি। গায়ের প্রতিটা লোম দাঁড়িয়ে গেল আমার। এ কাকে মুক্তি দিলাম আমি? ধোঁয়া-ধোঁয়া আকৃতিটা আমার সামনে এসে স্থির হলো। তখনও সে উল্লাস করে যাচ্ছে বুনোভাবে। ধীরে-ধীরে ধোঁয়াটা একটা মেয়ের রুপ নিলো। ঠিক আমার চেহারা! যেন আমারই জমজ বোন!
‘হেলো, অ্যাঙ্গুইসিয়া! কেমন আছো! অবশ্য, আমি নিজেও অ্যাঙ্গুইসিয়া...তাই আমি ভালই জানি তুমি কেমন আছো, তাই জিজ্ঞেস করা আর না করা একই কথা...’ বলেই ভয়ঙ্করভাবে হাসতে শুরু করল। মেয়েটা দেখতে হুবহু আমার মত! কিন্তু এরপরও সে আমার মত নয়! আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে এটা ওর আসল রূপ নয়। এটা স্রেফ একটা মায়া, একটা বিভ্রম। তার আসল রূপ সে এখনো আমাকে দেখায়নি। কি সেই আসল রূপ? কোন একটা দিকে সে আমার থেকে ভীষণভাবে আলাদা...কিন্তু কি সেই দিক?
‘ব্যস, এই?! তোমার কি এমন সিক্রেট ক্ষমতা আছে যেটা নিয়ে তুমি এত বড়াই করলে? তোমাকে দেখতে তো আমার চেয়ে বেশি শক্তিশালী মনে হচ্ছে না। আবার বলে কিনা আমাকে অমর করবে সে...’ বলেই তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে ঠোঁট উল্টালাম আমি। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে আমি ঠিকই টের পাচ্ছি ওর অসম্ভব শক্তিশালী ক্ষমতা। আমাকে জানতেই হবে কি ক্ষমতা সে লুকিয়ে রেখেছে নিজের ভেতর। কি সেই ক্ষমতা যা নিয়ে সে এত বড়াই করছে?
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে তার নিজের ঠোঁট বেঁকিয়ে একইরকম তাচ্ছিল্যের একটা দৃষ্টি দিল। এরপর ধীর পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে। আমিও তাকে অনুসরণ করলাম। এরপর সে সোজা হাঁটতে-হাঁটতে একটা বাসার সামনে এসে দাঁড়াল। বাসাটা আমারই এক সমবয়সী ছেলের। আমার দিকে তাকিয়ে আবার একটা বিদ্রুপের হাসি দিয়ে সে মাটি থেকে একটা পাথর কুড়িয়ে নিলো। এরপর আমাকে বলল, ‘তুমি গিয়ে আড়ালে লুকোও...’
আমি আড়ালে লুকিয়ে থাকলাম। দেখলাম সে পাথরটা ছুড়ে মারল ঐ ছেলে যে রুমে থাকে ঠিক সেই রুমের জানালায়। হুট করে জানালাটা খুলে গেল। আমি আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে সবই দেখছিলাম।
‘অ্যাঙ্গুইসিয়া! তুমি?! এত রাতে? আমার জানালায় পাথর মেরেছো কেন?’ ঘুম-ঘুম চোখে তাকিয়ে বলল ছেলেটা। ভীষণ অবাক হয়েছে সে। ভেবেছে, আমিই ওর জানালায় পাথর মেরেছি।
‘তোমার সাথে খুব দরকারি কিছু কথা আছে। একটু ঐদিকটায় আসো,’ খুব আদুরেভাবে বলল আমার জমজটা। বলেই একটু দূরে থাকা দুই পাহাড়ের মাঝখানের অন্ধকার জায়গাটা দেখিয়ে দিল। ছেলেটা ভীষণ খুশি হলো। এমন সুন্দরী একটা মেয়ে তাকে আড়ালে ডাকছে, সে না গিয়ে পারে?
ছেলেটা ওর পিছে-পিছে যেতে লাগল। তবে ওর অনেক আগেই আমার জমজটা পৌছে গেল সেই অন্ধকার জায়গাটায়। গিয়েই পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে থাকল। আমিও ওদের পিছু নিয়েছি। ছেলেটার নজর সামনের দিকেই ছিল। একবারও পেছনের দিকে তাকানোর প্রয়োজন মনে করল না। পেছনের দিকে তাকালে হয়তো সে বুঝতো, যে কি সর্বানাশা পরিণতির দিকে সে এগিয়ে যাচ্ছে।
‘কি জন্যে ডেকেছো বলবে তো?’ অধৈর্য হয়ে গেল ছেলেটা। এত রহস্য ওর ভালো লাগছে না।
‘তোমাকে ডেকেছি আমার একটা উপকারে আসার জন্যে,’ খুব ধীরে-ধীরে বলল আমার সেই জমজটা।
‘কি উপকার, আমি তোমার জন্যে সব করতে রাজি আছি অ্যাঙ্গুইসিয়া, শুধু একবার বলো...’ ছেলেটার কন্ঠে আকুতি ঝরে-ঝরে পড়ছিল।
‘বললে তুমি কখনোই রাজি হবে না...’ খুব ঠান্ডা গলায় বললো আমার জমজটা। আমি সেই মুহুর্তে ওর ভেতরের অস্থিরতা টের পাচ্ছিলাম।
‘আমি রাজি আছি...শুধু একবার বলে দাও যে কি করতে হবে...আর তো...তো তোমার গ...গলার কি হয়েছে! ঠাণ্ডা লে...লেগেছে?’ বলল ছেলেটা। ওর গলাটা শুনে সে বেশ ভয় পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এরপরও এত সুন্দরী একটা মেয়েকে সাহায্য করে তার আস্থাভাজন হওয়ার লোভ সামলাতে পারছে না সে।
‘সত্যি তো?’ বলল মেয়েটা। ওর ভেতরের অস্থিরতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সে আর অপেক্ষা করতে চাচ্ছে না।
‘হ্যাঁ সত্যি...সাহায্য করবো...কি চাও আমার কাছে ব...বলো?’
‘তোমার জীবন...’ হাড়ে কাঁপুনি ধরানো ঠাণ্ডা শিরশিরে গলায় বলল মেয়েটি।
‘ক...কি? অ্যা...অ্যাঙ্গুইসিয়া...ক...কি বলছো এসব! মাথা কি পুরোই গেছে তো...তো...তোমার...’ ’থরথর করে কাঁপতে-কাঁপতে বলল ছেলেটা। তবে এরপর সে যা দেখল তা ওর পুরো শরীরকে চকের মত সাদা করে ফেলল।
মেয়েটির শরীরটা লম্বাটে হয়ে অনেক উঁচুতে উঠে যাচ্ছে। চামড়া শক্ত হয়ে বিষাক্ত সবুজাভ রঙ পেয়েছে। মাথাটা বড় হয়ে সামনের দিকে বেড়ে যাচ্ছে। শরীরের নিচের অংশকে অদ্ভুতভাবে গোল করে পাকিয়ে-পাকিয়ে মেঝেতে ফেলছে সে। এরপর সে সোজা ঘুরলো ছেলেটার দিকে।
ছেলেটা প্রচণ্ড ভয়ে একটা গগনবিদারী চিৎকার দিল। ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে অনেক বিশাল একটা বিষাক্ত সবুজ রঙের সাপ। ওর বিভাজিত জিহ্বাটা দিয়ে অদ্ভুতভাবে বাতাসে নিঃশ্বাস টেনে-টেনে নিচ্ছে।
ছেলেটা সাথে-সাথে ঘুরে পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু সাপটা চোখের পলকেই ছেলেটাকে ওর বিশাল মুখের ভেতর নিয়ে ফেলল। ওর লম্বা-লম্বা দাতগুলো দেখা যাচ্ছে। সেই দাতগুলোর ফাঁকে ছেলেটার শুধুই পা দুটো দেখা যাচ্ছে। বাকি শরীরটা সাপের মুখের ভেতর। পশুর মত ছটফট করতে লাগল ছেলেটা। বাঁচার আকুল চেষ্টা করছে সে। এরপর ছেলেটাকে আর ছটফট করার সুযোগ না দিয়ে সাপটা ওকে সোজা চালান করে দিল নিজের বিশাল পেটে।
আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার জমজটা মানুষ নয়, একটা বিশাল আকৃতির সাপ!
সাপটার পেটের ভেতর যেন একটা অদ্ভুত আলোড়ন সৃষ্টি হলো। গুড়-গুড় শব্দ হচ্ছে সেখানে। ঠিক তখুনি ওর পেটটার ভেতর যেন আলো জ্বলে উঠল। সাপটা মুখ হা করল। ওর খোলা মুখ দিয়ে সবুজ আলো বাইরে ঠিকরে-ঠিকরে পড়ছিল। ও খুবই খুশি, আমি ওর পরিতৃপ্তিটা টের পাচ্ছি। এবং ওর ভেতরে কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে, সেটাও বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু কি যে হচ্ছে সেটাই ধরতে পারছি না। খুব দেখতে ইচ্ছা করছে যে আসলে ওর পেটের ভেতর ঠিক কি হচ্ছে। কিন্তু সে জন্যে আমাকেও ওর পেটের ভেতর যেতে হবে, যা আমি কিছুতেই করতে রাজি না। ধীরে-ধীরে সেই সবুজ আলো নিভে এলো। আর এরপর সে মাটিতে সজোরে থুথু নিক্ষেপ করল। ওর থুথুর সাথে সাদা কিছু একটা বেরিয়ে এলো। একটা কঙ্কাল! সেই ছেলেটির কঙ্কাল! আর এরপর, সাপটা আবার সেই মেয়েতে পরিণত হয়ে গেল। আমি দৌড়িয়ে গেলাম।
‘তুমি...তুমি...তুমি আসলেই মানুষ নও! তুমি একটা...তুমি একটা জানোয়ার! একটা সাপ! আর এইমাত্র ত...তুমি...ঐ ছেলেটাকে খে...খেয়ে...’
‘খেয়ে ফেলেছি...’ মুখটা মুছতে-মুছতে বলল সে।
‘কিন্তু ওকে খেয়ে ফেললে কেন...ওকে খেয়ে তোমার কি লা...লাভ হলো...’
‘লাভ এটাই হলো যে আমি, অমরত্বের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম...সেই সাথে তুমিও...’
‘মানে?’
‘মানে হচ্ছে, ঐ ছেলেটাকে আমি ক্ষুধা নিবারনের জন্যে মারিনি। অন্য কারণে মেরেছি। সোজাভাবে বললে বলা যায় ওকে আমি আমার ভেতরে শোষণ করে নিয়েছি! এখন ওর জীবনটা আমার হয়ে গেল! ওর আয়ু আমার আয়ুর সাথে যোগ হলো! ওর ভেতর যাই ছিল, ওর জ্ঞান, স্মৃতি, ক্ষমতা সব...সব কিছুই আমার হয়ে গেল। ওর পুরো অস্তিত্বটাই আমার সাথে মিশে গেল। এইভাবে, আমি একের পর এক হত্যা করবো...আর অমরত্বের পথে একধাপ একধাপ করে অনেক দূর এগিয়ে যাবো,’ হিসহিসিয়ে করে উঠল মেয়েটা। কতাহ বলার সময় ওর কালো রঙের জিহ্বাটা লকলক করছিল।
‘সে নাহয় বুঝলাম। কিন্তু তুমি নিজে ঐ ছেলেকে তোমার ভেতর শোষন করে নিয়েছো, এতে করে তোমার আয়ু বাড়ল, তুমি শক্তিশালী হলে, কিন্তু এতে করে আমার কি উপকার হলো?’ প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
মেয়েটা আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে হেসে উঠল। এবার আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম? ও যদি ছেলেটির মত আমাকেও...
‘সেটা তোমাকে এখন বলব না। একসময় তুমি নিজেই টের পাবে। এখন বলে দিলে তো সব মজাই শেষ হয়ে গেল। তুমি কি তাই চাও?’ হাসতে-হাসতে বলল মেয়েটি। ব্যাপারটা আমার পছন্দ হলো না। আমাকে জানতেই হবে যে আসলে সে অমর হলে আমার কি উপকার হবে।
‘আমি এখুনি জানতে চাই...এক্ষুনি...’ খুব অধৈর্য হয়ে উঠলাম আমি।
‘এক কাজ করো...তোমার যেহেতু তর সইছে না, সেহেতু তুমি চাইলে এখুনি সব জেনে নিতে পারো। এই একটু আগে ছেলেটিকে যেভাবে শুষে নিয়েছি, তুমি যদি চাও, তোমাকেও সেভাবেই...এরপর নিজেই নাহয় সব জেনে নেবে...’ জিহ্বা বের করে গাল চাটতে-চাটতে বলল সে।
গা গুলিয়ে এলো আমার। আমি জীবনেও ওর পেটে যাবো না। আমি দরকার হলে বরং বিষ খেয়ে মরব, তাও ওর পেটে যাবো না।
তার থাকার জন্যে আমি একটা পাহাড়ের গুহার ব্যবস্থা করে দিলাম। ওটার ভেতরেই সে থাকতো। আলো একদম সহ্য করতে পারতো না সে। তাই দিনের বেলায় সে গুহাটার ভেতরেই থাকতো। প্রতিমাসে মাত্র একবার বের হতো সে। সে রাত পুরোটা জুড়েই চলতো তার তাণ্ডব। গ্রামবাসীদের অনেকেই সেই বিশাল সাপকে দেখতে পেয়েছিল। ওর ভয়ে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেল। বাকিরা ওকে পুড়িয়ে মারতে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। আমি বাধা দিলাম। গ্রামবাসীরা বুঝে গেল যে ওর সাথে আমার কোন একটা যোগাযোগ আছে। তাই ওরা আমাকেও পুড়িয়ে মারবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো। আমাকে বেধে রাখলো পুড়িয়ে মারার জন্যে। কিন্তু সে রাতে প্রচণ্ড ঝড় হলো। সেই ঝড়ের মাঝে এলো সে। আনুবিস। আমার পিতা। জীবনে এই প্রথম বারের মত তাকে দেখতে পেলাম আমি। আমি অবাক হয়েছিলাম তাকে এখানে আসতে দেখে। কারণ, সে বিনা কারণে কাউকে সাহায্য করতে কখনোই আসে না। পরে জানতে পারি যে আমাকে যখন বেঁধে রাখা হয়েছিল, তখন আমার মা গ্রামের শেষ প্রান্তে থাকা আনুবিসের মন্দিরে দৌড়ে যান। কারণ, ওকে ডাকার একটাই উপায়, ওর মন্দিরে গিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে তারপর ওকে ডাকা। এছাড়া আমাদের ডাক ওর কানে কখনোই পৌঁছায় না। আমার মা-ই সেদিন আমাকে বাঁচিয়েছিলেন।
আনুবিস এসেই যারা আমাকে পুড়িয়ে মারতে যাচ্ছিলো তাদেরকে অভিশাপ দিলো। এরপর তাদেরকে সোজা পাঠিয়ে দিল এই জায়গাটায়, যেখানে আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি। এই জায়গাটা আনুবিস অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করতো। যারা তারা অবাধ্য হতো তাদেরকে সে সোজা এখানে পাঠিয়ে দিতো পচে গলে মরবার জন্যে। কারণ, এখান থেকে বেরোনোর কোন রাস্তাই নেই। ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতরাতে-কাতরাতে খুব ভয়াবহ মৃত্যু হতো ওদের।
এরপর থেকে গ্রামবাসীরা আমাকে প্রচণ্ড ভয় পেতো। তারা বুঝতে পেরেছিল যে আমি আসলে একজন ডেমি গডেস। তারা ভাবতো, ঐ বিশালাকৃতির সাপটা আমারই পোষা সাপ। ওরা তো আর জানতো না যে ঐ সাপটা আমার সঙ্গিনী নয়, বরং ওটা আমারই একটা অংশ। ওরা আমাকে পুজো করতো। আমার জন্যে কত কিছু যে বিসর্জন দিতো তার শেষ নেই। আমিও সুযোগ পেলাম। মাঝে-মাঝেই ছুতো ধরে কারো না কারো শিশুকে আনুবিসের উদ্দেশ্যে বলি দিয়ে দিতাম। জোর করে ছিনিয়ে নিতাম বাচ্চাগুলোকে। এরপর বাচ্চা ছেলেগুলোকে আমি পাঠিয়ে দিতাম সেই পাহাড়ের গুহার প্রবেশ পথে যেখানে সাপটা থাকত। সেখানে পাঠিয়ে দেয়া মাত্র সাপটা ওদেরকে খেয়ে ফেলতো। ওদের আত্মাকে শুষে নিতো নিজের ভেতর।
তবে ঐ রাতের পর থেকে সাপটা সব সময় সেই গুহায় থাকতো না। সে থাকতো এইখানে, এই জায়গাটিতে। এখানে ওর থাকার ব্যবস্থা আনুবিসই করেছিল। আর আমি যখন বলির উদ্দেশ্যে কোন বাচ্চাকে হাত পা বেঁধে ঐ গুহায় নিয়ে যেতাম, তখন আমি ওকে ডাকতাম। সে কিছুক্ষণের ভেতরেই কিভাবে-কিভাবে যেন ঐ গুহায় হাজির হয়ে যেত।
আমার নিষ্ঠুরতা দেখে আমার মা হার্টফেল করে মারা গেলেন। কিন্তু তাতে কি, আমাকে অমর হতে হবে, আর সে জন্যে সাপটা যা যা বলে আমাকে তাই তাই করতে হবে। কারণ আমি জানি, সে মিথ্যা বলছে না। সে আমারই আরেকটা অংশ। সে মিথ্যা বললেই সাথে-সাথে আমি টের পেয়ে যাবো। অতএব সে যা বলছে, সত্যিই বলছে।
এভাবে আমি অসংখ্য শিশুকে বলি দিলাম আনুবিসের দোহাই দিয়ে। সবাই আমার ভয়ে থরথর করে কাঁপতো। না জানি আমি কখন কার উপর রেগে যাই আর তার বাচ্চাকে সাপটাকে দিয়ে খাইয়ে দেই। আমি আমার জন্যে একটা টাইটেল ঠিক করলাম। দ্য সারপেন্ট গডেস। সবাই বাধ্য হতো আমাকে সেই নামে ডাকতে। ওরা আমাকে তাদের কুইন বলেও মেনে নিতে বাধ্য হলো।
সবকিছুই ভালো চলছিল আমার। বেশ কিছুদিন এভাবেই কেটে গেল। হঠাত একদিন আমি টের পেলাম যে আমার খাবারে কেউ একজন বিষ মিশিয়েছে! মারাত্নক বিষ! গ্রামবাসীদের মাঝেই কেউ করেছে কাজটা। খুব দ্রুতই আমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো। আমি এক দৌড়ে আনুবিসের মন্দিরে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিচুয়ালগুলো সম্পন্ন করে আনুবিসকে ডাকতে লাগলাম। একজন ডেমি গডেস হওয়ার এই হচ্ছে সুবিধা। বিষের প্রভাব সাধারণ মানুষের উপর যত দ্রুত, আমার উপর তত দ্রুত নয়। কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে এরই মাঝে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। আমার সময়ও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু আমি এক মনে প্রার্থনা করতে লাগলাম। ডাকতে লাগলাম তাকে। আমার যখন প্রাণ বায়ু প্রায় বেরিয়ে গিয়েছে তখন সে এলো। আমি তাকে মৃত্যুশয্যায় বললাম যে আমার জাতি আমার সাথে বেঈমানি করেছে। বিষ খাইয়েছে আমাকে। এটা বলেই...আমি মারা গেলাম।
পরমুহূর্তেই আমি দেখলাম যে আমি আমার শরীর থেকে বেরিয়ে কোথায় যেন তীব্র বেগে হারিয়ে যাচ্ছি...যাচ্ছি তো যাচ্ছি...এ যাওয়ার যেন কোন শেষ নেই। অনেকক্ষণ পরে আমি নতুন করে অন্য একটা শরীরে নিজের অস্তিত্ব টের পেলাম! দেখলাম...আমি সাপটার ভেতর ঢুকে গেছি! আমার উভয় অস্তিত্ব মিলে-মিশে এক হয়ে গেছে। একটি একক অস্তিত্ব তৈরি হয়েছে।
কিন্তু আমি মারা গেলাম না কেন? আমার অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে গেল না কেন?
ঠিক সেই মুহুর্তেই আমি সত্যটা বুঝতে পারলাম। জন্ম থেকেই আমার অস্তিত্বটা পৃথক দুইটা অংশে ভাগ হয়ে ছিল। আমি তখন এক ছিলাম না। আমার শরীরের ভেতর আমার যে জমজটা ছিলো সে সব জানতো, বুঝতো। কিন্তু আমার ১৮ বছর হওয়ার আগে আমি চাইলেও তাকে আমার শরীর থেকে মুক্তি দিতে পারতাম না। আর তাই, সে আমাকে এর আগে কিছুই বলেনি। সঠিক সময়ের জন্যে অপেক্ষা করে গেছে।
আমার শরীরটা ছিল মানুষের। তাই ওটার ভেতর আমার মানব অস্তিত্বটাই প্রকট হয়ে ছিল। আর তাই, সাপটা ঐ শরীরে থাকা অবস্থায় কিছুই করতে পারতো না। আর আমার ইচ্ছা ব্যতিত সে ঐ শরীর থেকে মুক্তিও পেতে পারে না। এখন কোনভাবে যদি আমি ওকে মুক্ত করে দেয়ার আগেই মারা যেতাম তাহলে আমি আর সে দুইজনেই পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যেতাম, একসাথে। তাই সে আমার ১৮ বছর হওয়ার পর পরেই মুক্তি চেয়েছিল ঐ শরীর থেকে। সে মুক্ত হওয়ার পর তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারলো। সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে সে অমরত্বের পথেও এগিয়ে গিয়েছিল অনেক দূর। এরপর তো আমি মারা গেলাম। কিন্তু আমি মারা যাওয়ার পরও আমার অস্তিত্ব ধ্বংস না হওয়ার কারণ হচ্ছে, আমার অস্তিত্বের একটি অংশ তখনও বেঁচে ছিল, সেটিই আমাকে এ জগতের সাথে বেঁধে রেখেছিল। ঐ অস্তিত্বটাই আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
এখন আর আমার আলাদা দুইটি অস্তিত্ব নেই। উভয়ে মিলেই একটি একক অস্তিত্ব হয়ে গিয়েছে। এখন আমিই সেই সাপ, আবার আমিই সেই ডেমি গডেস...আমিই...দ্য সারপেন্ট গডেস অ্যাঙ্গুইসিয়া। আমার অস্তিত্ব এখন সম্পুর্ণ হলো। পরিপূর্ণ হলো।
অ্যাঙ্গুইসিয়ার দীর্ঘ বক্তৃতা শেষ হলো। উইলিয়াম কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। এসব কিছুর কি ব্যাখ্যা দেবে সে? মনে হচ্ছে যেন সে একটা দুঃস্বপ্নের মাঝে আটকা পড়ে আছে। একটা দুঃস্বপ্ন শেষ হওয়া মাত্রই আরেকটা আসছে। ক্যাপ্টেন ততক্ষণে ভয়ে চকের মত সাদা হয়ে গেছে। ওর ঠিক পেছনেই বুড়োটি আগের মত নির্লিপ্তভাবেই দাঁড়িয়ে আছে, যেন এসব ভয়াবহ কথার কোনটাতেই তার কিছু যায় আসে না। অবশেষে উইলিয়াম মুখ খুলল, যে কথাটি জিজ্ঞেস করার জন্যে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিল সে, সেটি জিজ্ঞেস করল, ‘আমাদের বন্ধুরা সব কোথায়?’
ভয়ঙ্কর রকমের কালো চোখ দিয়ে উইলিয়ামকে ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে দেখতে লাগল অ্যাঙ্গুইসিয়া। এরপর নিজের জিভ দিয়ে গাল চাটতে-চাটতে বলল, ‘ওদেরকে আমি খেয়ে ফেলেছি...’
তীব্র ভয় উইলিয়ামকে আচ্ছন্ন করল। হাত পা কাঁপতে লাগল ওর। ইথেন, জ্যাকসন...এদের সবাইকে এই শয়তানটা খেয়ে ফেলেছে?
‘তু...তুমি আমাদের বন্ধুদেরকে খেয়ে ফেলেছো...তুমি...তুমি...’ ভাষা হারিয়ে ফেলেছে ক্যাপ্টেন কুপার।
‘অল্প কয়েকজন আছে এখনো...ওদেরকে ধীরে-ধীরে খাবো। আর সেই সবুজ দানবগুলোকে অবশ্য খাবো না। ওদেরকে আনুবিস নিজের হাতে শাস্তি দিয়েছে। ওরা তাকে আক্রমণ করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। ওদেরকে এর ফল ভুগতেই হবে। অভিশপ্ত অবস্থাতেই ধুঁকে-ধুঁকে মরবে ওরা।
উইলিয়ামের মাথা ঘুরছিল। ইথেন বেঁচে আছে কিনা কে জানে। এদিকে জ্যাকসনও অভিশপ্ত হয়ে আছে।
ওদের বাঁচানো তো দূরে থাক, ও নিজেই নিজেকে বাঁচাতে পারবে কিনা সন্দেহ।
‘চলো একটু গেইম খেলি...শিকারকে নিয়ে খেলতে আমি আজীবনই পছন্দ করি...’ বলেই মেয়েটা নিজের ডান হাতটা সামনের দিকে দিয়ে অদ্ভুত একটা ভঙ্গি করল। সাথে-সাথে উইলিয়ামের বাম দিকে একটা দরজা খুলে গেল। সেখান থেকে বেরিয়ে এলো কিছু সবুজ রঙের দানব। ওদের মাঝে জ্যাকসনও রয়েছে! ওদের দুই জনকে দেখতে পেয়েই দানবগুলো ভয়ঙ্করভাবে গর্জন করতে লাগল, ঠিক যেভাবে শিকারী জন্তু তার শিকারকে দেখলে করে।
‘মজার ব্যাপার কি জানো? ওরা এখন শুধু আমার কথাই শোনে। তবে তার চেয়েও মজার ব্যাপার কি জানো? যদি তোমরা নিজেদের বাঁচাতে চাও, তাহলে বন্ধুদের হত্যা করতে হবে। আর যদি বন্ধুদের বাঁচাতে চাও, তাহলে বন্ধুদের হাতেই নিজেরা মারা পড়তে হবে,’ উন্মত্তভাবে হাসতে-হাসতে বলল অ্যাঙ্গুইসিয়া। ওর আইরিশ এবং পিউপিলবিহীন অসম্ভব রকমের কালো চোখগুলোকে দেখতে এখন আরও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর লাগছিল।
দানবগুলো উইলিয়াম আর ক্যাপ্টেনের দিকে তাকিয়ে জোরে-জোরে তর্জন-গর্জন করছে। ওরা ধীরে-ধীরে পিছনে সরতে লাগল। দানবগুলোও এক পা এক পা করে ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে উইলিয়াম আর কুপার।
To be continued..............
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ā§Ģ āύāĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
3564 (5)
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
⧧⧍:ā§Šā§¨ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ