Writer:Abir hasan Niloy
Story:Mastani
Part 1+2+3+4+5+6
ক্ষ্যাত, বেয়াদপ ছেলে একটা। দেখে চলতে পারিস না??
অনার্স এর থার্ড ইয়ারে ক্লাস করবো বলে রুম খুজছি। কিন্তু আমাকে কেউই হেল্প করছে না। কারন, সবাই আমার ঢিলে ঢালা পোশাকের দিকে তাকিয়ে আমার কাপড়ের দিকে তাকিয়ে কোনো কথায় বলছে না। সবার কাছে আমি ক্ষ্যাত। তাই খুব কষ্টে যখন নিজের ক্লাস খুজে পেলাম। তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকতেই একটা মেয়ের পায়ে সামান্য পাড়া দিয়ে ফেলি। ফলে তিনি উপরের কথাগুলো বললো..
- ছাগলের মত চেয়ে আছিস কেনো? কোথা থেকে যে সব আসে। যত্তসব,,সকাল সকাল এসব ক্ষ্যাত মার্কা ছেলেদের দেখে গা টা জ্বলে গেলো।
মুচকি হেসে আমি আমার ক্লাসে গেলাম। কারন, এখানে কথা না বলাটাই শ্রেয়। কথা বললে না জানি আবার কি না কি শুনতে হবে।
ক্লাসের একদম শেষের দুইটা বেন্চের আগে বসলাম। একটু পরে দেখলাম সেই মেয়েটা আমার দুই বেন্চ আগে বসেছে। তার মানে সেম ক্লাস।
যথারীতি ক্লাস শুরু হল,,ঠিক তখনি দেখলাম আমার পিছনের বেন্চের একটি ছেলে ঐ মেয়েটির গায়ে কাগজ ছুড়ে মারল..।
তবে দোষটা আমার উপরেই পড়লো। তখনি..
- স্যার এই ছেলেটা আমার গায়ে কাগজ ছুড়ে মেরেছে। (মেয়েটি)
- কোন ছেলে? (স্যার)
- ঐ যে ঐ ছেলেটা। চোখে গোল চশমা পরা।
কিছু বোঝার আগেই স্যার এসে খানিক কথা শুনিয়ে গেল। কিছু বলারও সুযোগ দিলো না। ধপ করে বেন্চে বসে পড়লাম..
(পরেরদিন).
.
ক্লাসে বসে আছি সেই বেন্চটাতে। স্যারের লেকচার খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছি। আর সেই মেয়েটি বসেছে আজ ফার্স্ট বেন্চে। ঠিক সে সময় স্যার বললো...
- আচ্ছা বলোতো তোমরা.. যারা শিক্ষিত তারা বেশি মূর্খ। কথাটি কি সত্য? যদি সত্য হয় তাহলে কারন টা কি? (স্যার)
ঠিক তখনি দেখলাস সবাই কেমন চুপ হয়ে গেল। স্যার সবার দিকে একবার তাকালো। আর আমিও সবার দিকে একবার তাকালাম। তখনি স্যার সেই মেয়েটিকে বললো...
- আচ্ছা নেহা, তুমি তো ফার্স্ট গার্ল, তো এই কথাটার লজিক কি? বলো...
তখনি দেখলাম.. নেহা মেয়েটি চুপ হয়ে গেল। আমতা আমতা করা শুরু করলো..তবে স্যার অনেকেরর কাছে কথাটির ব্যাখ্যা জানতে চাইল। কিন্তু সবাই কেমন যেন চুপসে গেল।
ঠিক তখনি আমি কিন্চিত হেসে উঠলাম। তবে এটা স্যারের চোখ এড়ালো না। তাই ন্যার সবাইকে চুপ থাকতে বলে..
- এই ছেলে. নাম কি তোমার? (স্যার)
- নিলয়..
- হাসছো কেনো...?
-.......
- বেয়াদপ ছেলে..পড়াশোনা তো করবে না,,ক্লাসে বেয়াদবি করবে। বলোতো. আমি মনে করি শিক্ষিত মানুষই মূর্খ হয় বেশি। কথাটি কি সত্য? যদি সত্য হয় তাহলে কারন কি?
স্যারের প্রশ্নশুনে মাথাটা নিচু করলাম। তখনি স্যার আবার বললেন..
- জানি তো পারবা না। কেনো আসো সব ক্লাসে? যত্তসব বেয়াদপ ছেলে..
- জ্বি স্যার আমিও আপনার মত মনে করি শিক্ষিত ব্যক্তিরাই সবচাইতে বেশি মূর্খ।
কারন, শিক্ষিত ব্যক্তিরা সাধারন থাকতে চাই না। তারা চাই, অসাধারন হতে। আর এই অসাধারনের রাস্তায় বিরতহীন ভাবে দৌড়াতে একসময় তারা তাদের অবস্থান, তাদের ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ফেলে।
তখন তারা শুধুই তাদের অর্থটাকে প্রাধান্য দেয়। আর সেক্ষেত্রে যে কম জানে, বা জানেই না, সেই ঙ্গানী। কারন, তারা হল সাধারন, আর সাধারন সবাই হতে পারে, এটা একটা আর্ট। তাই তারা তাদের ধর্মীয় আচার, বিধি মেনে চলে। সৃষ্টিকর্তার ভয়ে কাজ করে। অপরদিকে যারা বেশি ঙ্গানি তারা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করে। ফলে তারা তাদের ধর্মকে ভুলেই যেতে বসে। এর কারনে তারা অবশ্যই মূর্খ।
কথাটি তাড়াতাড়ি বলে শেষ করলাম। কথাগুলো বলার পর সবার দিকে তাকলাম। দেখলাম সবাই আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তখনি স্যার বললো..
- বাহ...আমি তোমাকে কি ভাবছিলাম আর তুমি তার বিপরীত। সত্যিই তুমি বেয়াদপ না, ভালো ছেলে।
মুচকি হেসে বসে পড়লাম। তখনি সেই নেহার দিকে তাকালাম। নেহা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়ত ভাবছে আমি ছেলেটা কেমন?
.
কলেজ শেষ করে যখন বের হলাম। তখনি রফি নামের একটি ছেলে এসে বন্ধুত্ব করলো। এতদিনে কেউ আমার পাশে বসে না। আর আজ একটা বন্ধুকে পেলাম...
(পরেরদিন)
ক্লাসে বসে আছি। তখনি রফি আসলো..
- আচ্ছা তোর বাসা কোথায় রে?
- কেনো?
- আরে বন্ধুনা আমরা..বল..
- থাক সেসব শোনা লাগবে না।
কি দরকার সেসব মনে করে, আমি তো এক অন্ধকার জগতের মানুষ। সভ্যতার মাঝে এসে বাঁচার চেষ্টা করছি। তাই ঐসব কথা ভেবে আর কোনো লাভ নেই।
- ঙ্গানই হল শিক্ষা নাকি শিক্ষায় হল ঙ্গান?
স্যারের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেল। তখনি নেহা উঠে বললো..
- স্যার, আমি মনে করি দুইটাই একে অপরের সাথে জড়িত। শিক্ষার মাঝেই তো ঙ্গান লুকিয়ে থাকে। একজন ব্যক্তি শিক্ষার মাঝে থেকে ঙ্গান অর্জন করে। তাই শিক্ষা ও ঙ্গান দুইটাই একে অপরের সাথে জড়িত
- হুমমম..আর কেউ কি বলবে?? (স্যার)
- স্যার, উনি যে ধারনা টা দিলেন সেটা ভূল। কারন, শিক্ষার মাঝে ঙ্গান যদি লুকিয়ে থাকতো তাহলে যারা শিক্ষা গ্রহন করেনি তারা কি ঙ্গানি না? বা তাদের মাঝে কি ঙ্গান নেই? আসলে, স্যার আমরা বলি লেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হয়। কথাটা কিন্তু এক দিক দিয়ে ভূল। কথাটি কি এমন হলে হত না যে. মানুষ হয়ে লেখা পড়া করো। আসলে কথাটি বললাম কারন, আমরা জন্মগ্রহন করার পরেই কি বিদ্যালয়ে আসি? আসি না, তাই প্রথমে পরিবার, সমাজ হয়ে ওঠে আমাদের জন্য শিক্ষাঙ্ন। এর থেকে যদি আমরা সঠিক শিক্ষা গ্রহন করে মানুষ হতে পারি। তবে সেটাই প্রকৃত শিক্ষা। বই বাদে মানুষ কিন্তু শিক্ষিত হয়। তার প্রমানও বহু আছে আমাদের সমাজে।
কথাগুলো বলে নেহার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে দেখছে। শুধু সে নয়, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি স্যার বললো...
- বাহ, কি সুন্দর উত্তর। গুড বয়..
স্যারের কথা শুনে মুচকি হাসলাম। মনে মনে বললাম, আমি স্যার মোটেও গুড বয় না। আমার মত খারাপ ছেলে আর পাবেন না। যার কোমরে থাকে সবসময় পিস্তল গোজা। মানুষ মারতে হাত কাপে না। সে মোটেও গুড বয় না স্যার..
.
ক্লাস শেষ করে বাইরে আসতেই নেহা আমাকে ডাকলো..
- এই যে, নিলয়..
নেহার ডাক শুনে দাড়ালাম। তখনি সে আমার কাছে আসলো..
- সরি (নেহা)
- ওকে..বাই.
আর কোনো কথা না বলে, বা না শুনে নেহার কাছ থেকে চলে আসলাম। একটু দুরে আসতে ঘুরে তাকিয়ে দেখি সে আবারো চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি হেসে চলে আসলাম।- এই যে ছেলে..
কলেজে এসে ক্লাসে ঢুকতে যাবো তখনি নেহা ডাকলো। ঘুরে তাকাতেই সে বললো.
- আপনি তো খুব বেয়াদপ। কাল কথা বললাম অথচ পাত্বায় দিলেন না।
- হুম..
- আবার হুম বলছেন? আচ্ছা আমরা তো সেম ক্লাস তুমি করেই বলতেছি। ওকে..
সামান্য হেসে ক্লাসের দিকে গেলাম। সমস্থ ক্লাসে চুপচাপ থাকি আমি। কারো সাথে কথা বলি না। শেষের দিকে বসি।
- আগামী সপ্তাহে তোমাদের সাপ্তাহিক এক্সাম নিবো। সবাই প্রস্তুতি গ্রহন করো ঠিব ভাবে। (স্যার)
স্যার এসে কথাটি বললো..। তবে তখনি স্যার আমার কাছে আসলো.
- আচ্ছা নিলয় তোমার বাসা কোথায়?
-......
- কি হল বলো..? (স্যার)
- স্যার আমি একটু বাইরে যাবো..
- ওকে..
স্যারের কাছ থেকে চলে আসলাম। কারন, আমি জানি না আসলে স্যারের কথার উত্তর দিতে হত। আর আমি চাই না কেউ আমার সম্পর্কে জানুক। আমি চাই না কেউ জানুক আমি মাস্তান। আমি খারাপ ছেলে। ফেলা আসা দিনগুলির মত চাই না আর আমি লাঞ্চনা।
..
বাইরে থেকে ক্লাসে আসলাম আবার। সোজা বেন্চে এসে বসলাম। তখনি দেখি নেহা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার কাছে ক্ষ্যাত হতে পেরেছি। কিন্তু নেহা কেনো তাকাচ্ছে?
তখনি স্যার বললো..
- আচ্ছা বলো তো তোমরা, মানুষ মননশীল। সবাই জানি আমরা আমাদের কোনো এক সময় মরতেই হবে। কিন্তু আমরা মানুষরা কেনো এত বড়াই করি? কেনো দুনিয়াতে এত কিছু করি?
স্যারের কথা শুনে ক্লাসে কেমন যেন নিরাবতা ভর করলো। সবাই যে যার মত লজিক নিয়ে স্যারের সামনে তুলে ধরছে। আর আমি আমার জায়গায় বসে সব দেখছি।
ঠিক সে সময় রফি বললো..
- স্যার নেহা তো ফার্স্ট গার্ল তাই আমরা ওর কাছ থেকে জানতে চাচ্ছি।
তখনি সবাই একসাথে ইয়েস বললো..। নেহা উঠে দাঁড়াতেই বললো...
- স্যার আমরা সবাই জানি জন্মালেই মরিতে হয়। কিন্তু মানুষ সেটা ভুলে যায় তার সমাজের কু ব্যবস্থার মধ্যে পড়ে। মানুষ ভুলে তার অবস্থানকে। তাই তারা দুনিয়ার মায়াতে পড়ে সব ভুলে বসে।
- হুমম..আর কেউ বলবে? (স্যার)
তখনি রফি আমার হাতটা তুলে ধরলো..। আমি হাবার মত ওর দিকে তাকালাম। কিন্তু স্যার তখনি বললো..
- হুমম নিলয় তুমি বলো।
খানিক চুপ থেকে আশেপাশে তাকিয়ে নিলাম। সবার মাঝে নিরাবতা ভর করেছে কিন্তু নেহা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি বললাম..
- স্যার আমরা জানি মানুষ মরণশীল। এটাই জানি আমাদের কোনো এক সময় মরতেই হবে। কিন্তু আসল কথা হল আমরা বড়াই করি কেনো? আমাদের যেকোনো সময় চলে যেতে হবে ওপারে তবুও আমরা বড়াই করি। আসল কথা হল মানুষের মন যত নরম ততটাই নিকৃষ্ট। কারন, আমরা উপরে উপরে যত যায় দেখাই না কেনো, ভিতরে থাকে অহংকার, লোভ। মূলত লোভ টাই আমাদের মনটাকে নিকৃষ্ট করে তোলে ফলে আমরা ব্যভিচার এ লিপ্ত হতে থাকি। দুনিয়ার সাময়িক সুখে তখন বিভর হয়ে যায়। এর ফলে ভুলে যায় আমাদের মরন সংবাদের কথা। যা এক চরম সত্য। সুতরাং মানুষের মনে সম্পদের অহংকার, লোভ, উপরে ওঠার চেষ্টাতে বিভর থাকা এসবের কারনে আমরা সব ভুলে বসি। তাই এত বড়াই করে চলেছি।
কথাগুলো শেষ করতেই ক্লাসে একটা হাত তালির রোল পড়ে গেলো। তখনি নেহার দিকে চোখ পড়লো, মেয়েটা সেই থেকেই তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হুট করেই দেখলাম সে মুচকি হাসলো তাকিয়ে। মাথাটা নিচু করলাম..
- চমৎকার বলেছো নিলয়. (স্যার)
.
ক্লাস শেষ করে ক্যামপাস থেকে বের হতে যাবো, তখনি নেহা আসলো আমার কাছে..
- আমি সরি।
- কেনো? (আমি)
- আসলে প্রথমদিন তোমাকে ক্ষ্যাত, বেয়াদপ বলে কত কথা বলেছিলাম।
- হিহিহি..
- হাসছো কেনো?
- কারন, আমি যদি ক্লাসে ভালো কিছু না বলতাম তবে তুমি কি এসে কথা বলতে? আমি ক্ষ্যাত ই থাকতাম তোমার কাছে। সো ইটস ওকে। তুমি তোমার মত থাকো...
কথাটি বলে সেখান থেকে চলে আসতে যাবো। তখনি নেহা বললো..
- তোমার বাসা কোথায়? আর তুমি হুট করে থার্ড ইয়ারে ভর্তি হলে কেনো??
কথাটা শুনে ওর দিকে তাকালাম। কিন্চিত হেসে আমি ঘুরে চলে আসলাম।
ফুটপাত ধরে হাটছি, আর মনে মনে পুরোনো কথা ভাবছি। যে ছেলের দিকে তাকাতে মানুষ ভয় পেত আর সেই ছেলের সাথেই এখন কত লোক কথা বলছে।
আসলেই সবাই ঠিকই বলে, ভালো মানুষ হতে কোনো অর্থের দরকার পড়ে না। আমি ভাবিনি ভালো মানুষ হতে পারবো। তবে আজ মনে হচ্ছে ঠিক রাস্তাতেই যাচ্ছি।
বড্ড মনে পড়ছে আব্বুর কথা। ওনার চলে যাওয়ার সময় শেষের কিছু কথা খুব মনে পড়ছে।
জোরে হেসে উঠলাম। সবাই আমাকে খারাপ ভাবে। কিন্তু কেউ কোনোদিন জানতে চাইনি আমি কেনো খারাপ হলাম?
সবাই আমাকে মাস্তান বলে পিছনে কতই না গালি দেয়। কিন্তু কেউ কোনোদিন জানতে চাই নি আমি কেনো মাস্তান? কেন আমি মাস্তানি করি?
আসলে আমরা সবাই মানুষ। তবে আমাদের সঠিক মনষ্যত্বের অভাব। আমরা পাপি কে ঘেন্না করি কিন্তু তার পাপকে না
.
(পরেরদিন)
.
ক্যমপাসে বসে আছি। তখনি নেহা আসলো..
- এটা ধরো.
- কি এটা?
- নোটস, আগামী সপ্তাহে তো এক্সাম তাই তোমাকে দিচ্ছি।
- লাগবে না।
- মানে? তুমি তো নতুন, জানোই না যে কেমন হবে।
- দরকার নাই বললাম না? (ঝাড়ি দিয়ে)
কথাটি বলে নেহার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে তখনও তাকিয়ে আছে। ধপ করে আমার পাশে সে বসে বললো..
- কে তুমি? তোমার বাসা কোথায়? (নেহা)
ঘুরে তার দিকে তাকালাম।নেহা আমার দিকে তাকিয়েই কথাটি বললো..
- কেনো? (আমি)
- আমি জানতে চাই। কারন, আমি দেখেছি তুমি কারো সাথে মিশো না। কারো সাথে কথা বলো না। তাই ভাবলাম..
- কি?
- আমি জানি মানুষ প্রেমে ছ্যাখা খেয়ে এমন হয়ে যায়। তাই ভাবলাম তুমি হয়ত ছ্যাখা খেয়েছো।
নেহার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলাম। তবে কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম। কি বলে মেয়েটা? যাচ্ছে তাই..
ক্লাসে বসে আছি। আজো দেখলাম, আমার পিছন থেকে কেউ একজন কাগজ ছুড়ে নেহার গায়ে মারলো..তখনি নেহা উঠে এসে বললো..
- ছি. নিলয়, তোমাকে আমি ভালো ছেলে বলে মনে করেছি। আর তুমি কি না সবার মত আমাকে ভালোবাসি বলে দিলা? তোমার মত ক্ষ্যাত ছেলে আর বেয়াদপ ছেলে আর একটাও নাই।
- মানে কি?
- কাগজে ভালোবাসি লিখে তোমার নাম দিয়ে আমাকে কাগজ ছুড়ে মেরে বলছো মানে কি? বেয়াদপ একটা, মন চাচ্ছে থাপ্পড় দিই।
- এই যে শুনুন, আমি মারিনি। পিছন থেকে কেউ একজন মেরেছে।
- ফাজলামো হচ্ছে?? আজ মাফ করে দিলাম, নেক্সট টাইম এমন কিছু দেখলে তোমার খবর আছে।
কোনো কথা না শুনেই সে চলে গেল। মাথায় রাগ উঠিয়ে সে চলে গেলো। মন চাচ্ছে ব্যাগ থেকে পিস্তলটা বের করে পিছনে থাকা ছেলেটার কপালে গুলি করি, এর পর নেহাকে। কিন্তু আব্বুর কথা মনে পড়তেই চুপ হয়ে বসে পড়লাম।
কিছু ভালো লাগছে না। তাই ক্লাস থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। আজ আব্বুর মৃত্যু বার্ষিকী। আব্বুর শেষ কথা ছিলো,
- নিলয়, আমি জানি তুই রাগী, তাই রাগটাকে নিজের নিয়স্ত্রনে রাখিস। মনে রাখিস, প্রকৃত বীর সেই, যে তার রাগ কে নিজের কন্ট্রোলে রাখতে পারে।
এসব ভাবতে ভাবতে ক্যামপাস থেকে বের হলাম।.......
আগামীকাল এক্সাম..। তাই ক্লাসে মনোযোগ রাখছি। অবশ্য আগে যখন এক্সাম দিতাম তখন মান্তানি করে পাস করতাম। কিন্তু এখন সেটা করা যাবে না।
সামনে তাকিয়ে দেখি নেহা আজো তাকিয়ে আছে। কি মেয়েরে বাবা..অপমান করবে আবার দেখবেও। তখনি লেকচারার স্যার আসলো রুমে।
- কাল এক্সাম, সবাই ভালো করুক এটাই চাই। (স্যার)
- স্যার সবাই আর কই বলেন, ভালো তো একাই করে একজন সে হল নেহা। (রফি)
- হুমমম.. তা ঠিক..নেহার কাছ থেকে প্রথম কেউ নিতে পারবে না। (স্যার)
ওনাদের কথা শুনছিলাম নিশ্চুপ দর্শকের মত। মনে মনে হাসছিলাম ও বটে। চাইলেই মাস্তানি করে প্রথম কেনো,,কলেজটাকেও আমার আয়ত্তে নিতে পারি। কিন্তু সেটা আমি করবো না।
..
আজ এক্সামের পর ক্লাসে এসেছি। সবাই যে যার মত গল্প করছে। আর আমি চুপচাপ বসে আব্বুর কথা ভাবছি। ভাবছি মা নামের খারাপ মহিলার কথা। যে কিনা আমার.....
- কাল এক্সাম হয়ে গেছে। তার রেজাণ্ট আজকে দিচ্ছি। (স্যার)
- -------(সবাই চুপ)
- এই সাপ্তাহিক এক্সামে প্রথম হয়েছে নিলয় হাসান। আর দ্বিতীয় হয়েছে নেহা। (স্যার)
সবাই ঘুরে আমার দিকে তাকালো। আমি আমার মত বসে থাকলাম। নেহা আরো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সবাই হয়ত আশা করেনি এমনটা। কিন্তু সেটাই হল..
- কংগ্রেস নিলয়. (স্যার)
সবাই যখন বাহ বাহ দিচ্ছে তখন নেহা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। যা আমার অসহ্য লাগছে।
- নিলয়, তুমি নিশ্চয় সারারাত পড়েছো? (স্যার)
-......
- আচ্ছা তোমার বাবা কি করেন?
- বেঁচে নেই স্যার।
- ওহ সরি,, তোমার আম্মু কি করেন?
মা নামের কথা শুনে মাথায় রাগ উঠে গেলো। বহু কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে চুপ করে থাকলাম। তখনি স্যার আবার জিগাস করলো..
- কি হল বলো..
- বেঁচে নেই।
- তোমার আব্বু আম্মু বেঁচে নেই? সো স্যাড, সরি নিলয়। বাট তোমার পড়াশোনার খরচ কে চালায় তাহলে? আর ওনারা কিভাবে মারা গেলেন??
স্যারের কথা শুনে রাগি চোখে ওনার দিকে তাকালাম। কিন্তু ওনার মুখটা দেখে কেমন মায়া হল, এসব প্রশ্ন আমাকে এ যাবত যারাই করেছে তাদেরকে রাগের বশে মেরে ফেলেছি। কিন্তু আজ নিজেকে সামলাতে হচ্ছে।
কিভাবে বলবো আমি স্যারকে, আমার পড়াশোনার খরচ আসে মাস্তানি করে? কিভাবে বলবো, আমি নিজেই আমার সৎ মাকে মেরে ফেলেছি নিজের হাতে? কিভাবে বলবো, আমার সৎ মায়ের হাতে আমার নিজের বাবা খুন হয়? তাই এসব প্রশ্ন যারা জানতে চাই তাদেরকে মেরে ফেলি আমি।
- রোড এক্সিডেন্ট করে দুজনেই মারা যায়। (আমি)
- সরি নিলয়, যাই হোক তুমি ভালো করে পড়াশোনা করো..পড়ার খরচ চালাতে সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারো। (স্যার)
স্যারের কথাশুনে মনে মনে হেসে উঠলাম। সত্যিই হাস্যকর কথাটি। আমার যা টাকা আছে তাতে এ কলেজের সবাইকে চালাতে পারবো।
..
ক্লাস শেষ করে বাইরে বের হলাম। তখনি নেহা এসে আমার সামনে দাঁড়ালো । মেয়েদের সেই ঘটনার পর আমার সহ্য হয় না। মনে হয় সবাই আমার সৎ মায়ের মতই। তাই তাদেরকে এড়িয়ে চলি..
- সরি নিলয়...
-......??
- আসলে ঐ দিন তোমাকে অপমান করার জন্য।
- ওকে...বাই
আর কিছু না বলে ওর সামনে থেকে চলে আসলাম। আমি জানিনা সব মেয়েরা একই রকম কিনা? তবে মেয়েদের দেখলে আমার সৎ মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। তাই মাথাটা গরম থাকে সবসময়।
..
(পরেরদিন)
- আচ্ছা বলোতো, ধর্ষনের জন্য দায়ী নারীদের পোষাক নাকি ছেলেরা নিজেই?? (স্যার)
ক্লাসে বসে আছি। লেকচারার স্যার রোজ কেমন পড়ানো শেষে উদ্ভট প্রশ্ন করে। আজো তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে প্রশ্ন শুনে সবাই চুপষে গেল। তবে সবার ধারনা এমন প্রশ্নের উত্তর নেহাই দেবে। কারন, সে তো প্রথম ক্লাসে।
- নেহা বলো ধর্ষনের জন্য কাকে দায়ী করবে তুমি? (স্যার)
- আসলে স্যার ধর্ষকের জন্য মূলত ছেলেরাই দায়ী।
- কেন? (স্যার)
- কারন, ছেলেদের মন খুব নিকৃষ্ট হয়। ওরা মেয়েদেরকে যেমন নির্যাতন করে। তেমনি যা ইচ্ছে তাই করায়।
- আপনি কি ধর্ষন হয়েছেন নাকি? বা এমন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন? (আমি)
নেহার কথা শুনে মায়ায় রক্ত উঠে গেল। তাই উঠে দাঁড়িয়ে কথাটি জোরে বললাম। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এমনি স্যার ও।
- আসলে নেহার ধারনা ভূল স্যার। কারো মন কখনও নিকৃষ্ট হয় না। নিকৃষ্ট করে দেয়। নিকৃষ্ট হয় সামজের কিছু বেশি বোঝা মানুষদের কারনে। তারা ধর্ষিতার দিকে আঙ্গুল তোলে। কিন্তু একবারো ভাবে না তার পরিবারের সাথে যদি এমন হত?
আর ধর্ষকের জন্য ছেলে মেয়ে উভয় দায়ী। কারন, আমাদের মনটা ঠিক তখনি নিকৃষ্ট পর্যায় থাকে। ফ্যাশানের নামে আমরা, মেয়েরা ছেলেদের শার্ট প্যান্ট পরি। কিন্তু একবারো ভাবি না এসব পরলে তার দিকে কারা লোলুভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমরা মুসলিমতার নামে, বোরখা পরি টাইট করে। কিন্তু একবারো ভাবি না এই পোষাকে তার বাহ্যিক সৌন্দর্য কেমন পর্যায়ে যাবে।
আমরা ছেলেরা সমাজে বাস করি, কিন্তু একবারো ভাবি না এই সমাজেই ধর্ষন হয়। তারা পাড়ার মোড়ে, রাস্তায় দিন রাত ভোর টিজ করে বেড়াবে। এখন তাদের সামনে যদি এমন পোষাক পরে কেউ যায়। নিশ্চয় সেই ছেলেদের মনটা আরো নিকৃষ্ট হবে। ফলে যা হবার তাই হবে। আমরা ছেলেরা নিজের ধর্মের কথা ভুলে রাস্তায় আড্ডা মেরে বেড়ায়। যদি আমরা সৃষ্টি কর্তার ভয়ে পরোপারের জন্য ভালো কাজ করি, নামাজ পড়ি তাহলে এমন ধর্ষক আর হবে না সমাজে। এমন বাজে ছেলে আর হবে না সমাজে। শালীনতা বজায় রেখে পোষাক পরি তাহলে হবে না এই সমাজে কেউ ধর্ষিতা।
- বাহহ....(সবাই একসাথে)
আমি কথাগুলো বলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লাম। মনে পড়লো আমিও তো এই সমাজের একজন খারাপ ছেলে। যার হাতে খুন হয়েছে কত মানুষ। তবে আমি সেটার থেকে বের হতেই এখানে এসেছি। ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টাতে আছি।
...
ক্লাস শেষ করে আমি সবার শেষে ও একটু দেরি করে ক্যামপাস থেকে বের হলাম। ক্যামপাস থেকে বের হতেই একটু দুরে আসতেই দেখি..
কয়েকটা ছেলে নেহাকে টিজ করছে। সামনে যেয়েই..বললাম
- এখানে কি হচ্ছে?
- সরি ভাই...আপনি এখানে জানতাম না। ভুল হয়ে গেছে। (ওদের মধ্যে লিডার টাইপ ছেলেটা)
সে কথাটি বলেই দৌড়ে পালালো..তখনি নেহা আমার দিকে তাকালো।
- কে তুমি? (নেহা)
- মানুষ..
- সে তো বুঝলাম..কিন্তু ওরা তোমার দেখে ভয় পেয়ে চলে গেলো কেনো?
- আমি কি জানি?
- তোমাকে ওরা ভাই বললো..কে তুমি?. সত্যি করে বলো..
নেহার দিকে রাগি চোখ নিয়ে তাকালাম। এতে সে চুপ হয়ে গেল। আমি আর কিছু না বলে সেখান থেকে সোজা হেটে চলে আসলাম।
হাটছি আর ভাবছি, ওরা কিভাবে চিনলো আমায়? তাহলে কি এখানেও আমার থাকা হবে না? আমি তো মাস্তানি ছেড়ে দেয়ার জন্যই সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছি এখানে। কিন্তু ওরা আমাকে ঠিকই চিনলো..- নিলয়, বলো না তুমি কে? আর তুমি এমন প্রশ্নের উত্তর কোথা থেকে পাও?
ক্যামপাসে বসে পূরোনো কিছু কথা ভাবছি। তখনি নেহা এসে উপরের কথাটি বললো।
- কি হল চুপ কেনো? কে তুমি, কোথা থেকে এসেছো?
- কেনো?? (আমি)
- জানতে ইচ্ছে করছে।
- আমি তো ক্ষ্যাত,,আর জানার বা কি দরকার?
- বলোতো প্লীজ..
কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম। এই মেয়েদের আমার একটুও সহ্য হয় না। মেয়েদের দেখলে সৎ মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। তখনি মনে হয় খুন করি।
মনে মনে বললাম, আমি তো মাস্তানি করতে চাইনি। এই সমাজ, এই সমাজের মধ্যে বাসকৃত ভালো মানুষের মুখোশ পরা কিছু লোক ও সৎ মায়ের জন্য আজ আসি মাস্তান। আমারো তো ইচ্ছে ছিলো সবার মত করে বাঁচতে।
.
এখানে এসেছি আজ তিন সপ্তাহ হল, কিন্তু সবাইকে কেমন আপন লাগছে। ক্লাসে বসে এসব ভাবছি। তখনি দেখি নেহা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক তখনি স্যার রুমে আসলো...
আজ তিনি পড়ানো বাদেই প্রশ্ন শুরু করলো..
- বলো তো, ভালোবাসা কি??
- স্যার ভালোবাসা হল একটা অনুভুতি, যা মনের মাঝে বিস্তার করে। (রফি)
- হুমমম.. আর কেউ বলবে? (স্যার)
- স্যার, ভালোবাসা হল এক প্রকার ফিলিংকস, মানে, ভালোবাসা বোঝা যায় কারো প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পর। (নেহা)
- আর কেউ বলবে কি? (স্যার)
সবাই যে যার মত উত্তর দিতে লাগলো। ঠিক সে সময় স্যার আমার কাছে এসে বললো,
- কি ব্যাপার নিলয়, তুমি কিছু বলছো না কেনে?
উঠে দাড়ালাম। মাথাটা নিচু করে বললাম..
- স্যার, আপনি কেন এই প্রশ্ন জানতে চাচ্ছেন?
- পরে বলছি, আগে বলো..
- স্যার, আসল কথা হল ভালোবাসা বলে কিছুই নেই। আমরা যে এতকিছু করি ভালোবাসার জন্য, এত মারামারি করি কারো জন্য বা ভালোবাসা পাবার জন্য, আবার সুইসাইড ও করি ভালোবাসার জন্য, মূলত এসব কিছুই ভালোবাসা না। আসল কথা হল, ভালোবাসা বলে কিছুই হয় না, এটা একটি মোহ, স্বার্থের টান। স্বার্থ ছাড়া আমরা যেমন কোনো কাজ করি না। তেমন স্বার্থ ছাড়া ভালোবাসাটাও হয় না। একটা ছেলে বা মেয়ে একে অপরকে ভালোবাসে, সেটা একটা মোহ ও স্বার্থপরতা। আপনি কোনো মেয়েকে ভালোবাসুন, কয়েক বছর রিলেশনে থাকুন, এর পর ছেড়ে আসবেন। দেখবেন কয়েক মাস পরেই সব ঠিক। আবার ভালোবাসার জন্য সুইসাইড করছে, তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনুন, দেখবেন কদিন পরে সেই বলছে, ধুরর কেনো যে সুইসাইড করতে গেছিলাম।
আসলে স্যার, ভালোবাসা বলতে পরিবারের মা বাবার ভালোবাসা বোঝায়। তারাই একমাত্র স্বার্থ ছাড়া ভালোবাসতে জানে। তাছাড়া বাইরের কেউই কখনও স্বার্থছাড়া ভালোবাসবেই না।
কথাগুলো বলে, স্যারের দিকে তাকালাম। দেখলাম উনি কাদছে।
- আরে স্যার, আপনি কাঁদছেন কেনো? (আমি)
- কি বলবো বাবা, আজ আমার ছেলে আমাকে অপমান করে তার বউকে নিয়ে সে চলে গেছে আলাদা। কিন্তু আমি সেটার জন্য কাঁদছি না। কাঁদছি এটা ভেবে, আমার ছেলেটা ভালো থাকবে তো??
কথাগুলো শুনে নিরবে কেদে উঠলাম। মনটা চাচ্ছে স্যারের ছেলেকে যেয়ে খুন করি। কিন্তু কতজনকে এমন করে মারা যায়? এমন ঘটনা তো ঘটেই। তখনি আব্বুর কথা মনে পড়লো। আব্বুই আমাকে ভালো বাসতো, কিন্তু সেটা আর হল না। সৎ মা নামক এক মহিলার হাতে তিনি খুন হন। পুরোনো কিছু কথা মনে পড়তেই ঢুকরে কেঁদে উঠলাম।
..
ক্লাস শেষ করে বাইরে এসে ক্যামপাসে বসলাম। তখনি নেহা আসলো আমার কাছে।
- নিলয়, তোমাকে আমি ভালোবাসি। (নেহা)
- কিহহহ...(আমি)
- হুমমম...
- হাহাহাহাহাহা....
- হাসছো কেনো??
- এমনি, তা কেনো ভালোবাসো?? আমি তো বেয়াদপ ছেলে, ক্ষ্যাত।
- আগে ছিলা এখন নেই। আর কেনো ভালোবাসি জানি না, তবে মনে হয় তোমাকে আমার চাই।
- হিহিহিহি....
কিছু না বলেই আমি চলে আসলাম ওর কাছ থেকে। মনে হচ্ছে কানে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে আসি। কিন্তু সেটা আর করলাম না,
বাইরে বের হলাম। হাটছি আজো আমি। কিছু দুর আসতেই দেখি কেউ একজন কালো বড় কোট পরে আমাকে ফলো করছে। ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে। কিন্তু সে ব্যাপারে কিছু না ভেবেই চলে আসলাম।
(পরেরদিন)
..
কলেজে আসতেই দেখি কালকের সেই লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মানে সে আমার কলেজের সামনেই দাড়িয়ে আছে। লোকটার দিকে তাকাতেই হন হন করে হেটে চলে যাচ্ছে।
- নিলয়, বলো না তুমি কে? (নেহা)
ক্লাসে বসে আছি। তখনি নেহা এসে কথাটি বললো..
- কেনো?
- ভালোবাসি তো তাই।
- ভালোবাসাতে বিশ্বাস করি না।
- তাই? কিন্তু আমি চ্যালেন্জ করে বলতে পারি, তুমি ভালোবাসাতে বিশ্বাস করো। আর ভালোবাসা পেতে চাও। আর আমিও তোমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করবে।
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে নেহা চলে গেলো। আর আমি বেন্চের উপর মাথা রেখে, লোকটার কথা ভাবছি।
ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দেখলাস পিস্তলটা আছে কিনা। সেটা ওভাবেই আছে, যেভাবে রেখেছিলাম।
কিন্তু লোকটা কে? লোকটার জন্য কি আমার এই শহরটা ছাড়তে হবে? কিন্তু আমি তো ভালো হতে চাচ্ছি। কিন্তু সেটা কি পারবো না? খোজ নিতেই হবে আমার।
ক্লাস থেকে সোজা বাইরে আসলাম। ফোন দিলাম রিমনকে...
- রিমন, চলে আই ঢাকাতে, একটা লোককে মার্ডার করতে হবে হয়ত। তোরা করে দিস। কিন্তু শহরের একটা লোকও যেন না জানতে পারে..
- ঠিক আছে ভাই..(রিমন)
পিছনে ঘুরতেই দেখি নেহা দাড়িয়ে আছে। আমি লাফ দিয়ে উঠলাম। সে কি সব শুনে ফেললো..?
- তু তু তুমি..কেনো এখানে? কখন এসেছো?
- কে কি জানতে পারবে না বলো??
- মানে?
- মানে আমি ঐ টুকুই শুনেছি।
- ওহহ..
আর কিছু না বলে ক্লাসের দিকে আসলাম। তবে নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেটা বুঝলাম। কিন্তু আজ প্রথমবার ভয় পেয়েছি।গত রাতে সেই লোকটাকে মার্ডার করা হয়েছে। ভাবতেই কেমন যেন অনুশোচনা হচ্ছে মনের মধ্যে। আমি আবারো সেই কাজে জড়িয়ে যাচ্ছি কি? কিন্তু আমি তো ভালো হতে চাচ্ছি। অবশ্য মার্ডার আমি করিনি। আমার লোকজন করেছে।..
- এই যে নিলয় সাহেব..আপনার ফোন নাম্বারটা দেন তো। (নেহা)
ক্যামপাসে বসে উপরের কথাগুলো ভাবছি। তখনি কোথা থেকে যে এই নেহা চলে আসলো বুঝিনি। আর এসেই কথাটি বললো..
- মানে নাম্বার কেনো?
- বারে, নাম্বার না দিলে কথা বলবো কিভাবে তোমার সাথে? তোমাকে তো ভালোবাসি আমি। (নেহা)
- ভালো।
কথাটি বলে যেয় না উঠতে যাবো। তখনি নেহা আমার হাতটি ধরলো। আর বললো..
- আচ্ছা তুমি এমন গোমড়া মুখো কেনো? কখনও ভালো করে কথা বলোনি কেনো? কি হয়েছে তোমার হুমমম? (নেহা)
- হাত ছাড়ো..
- আগে বলো, তোমার সমস্যাটা কোথায়? তুমি সবাইকে এমন এড়িয়ে চলো কেনো? কি প্রবলেম কি?
- প্রবলেম হল আমি মেয়েদের সহ্য করতে পারি না।
- হিহিহিহিহি,,তার মানে ছ্যাখা খাইছো? ওকে ব্যাপার না, আমি তো আছি তোমাকে ভালোবাসার জন্য।
- চুপপ..আমি জীবনে মেয়েদেরই সহ্য করতে পারলাম না। আর ছ্যাখা খাইছি তাই না?
- তাহলে বলো তুমি এমন কেনো? আর কেন সহ্য করতে পারো না?
কিছু না বলেই হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসলাম। আরেকটু সময় থাকলে রাগটা কন্ট্রোল করতে পারতাম না। তখন খারাপ কিছু করে বসতাম। ক্লাসে এসে সেই বেন্চটাতে চুপচাপ বসলাম। একটু পরেই স্যার আসলো। স্যার এসে স্যারের মত পড়ানো শুরু করলো। কিন্তু সে দিকে আজ আমার মন নেই।
মনটা নেহারও নেই, মেয়েটা সেই তখন থেকেই তাকিয়ে আছে। যা আমার কাছে যথেষ্ট বিরক্তিকর লাগছে।
- কি ব্যাপার নিলয়, এমন করে বসে আছো কেনো? (স্যার)
- নাহ মানে, কিছু না স্যার।
- কি হয়েছে বলো..
- কিছু না স্যার, আব্বুর কথা মনে পড়ে গেলো তো তাই।
- ওহহ...
স্যার আমার কাছে এসে কথাগুলো বলে আবার সামনের দিকে চলে গেলেন। যেয়ে আজো উদ্ভট প্রশ্ন শুরু করলো..।
- আচ্ছা বলোতো, মানুষ সুখটাকে নিজের জীবনে পেলে সেটা ছাড়তে চাই না,আবার দুঃখ আসলে আমরা সেখান থেকে বের হওয়ার যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটা কেনো করি? সুখ কেন চাই আমরা বারবার? দুঃখটাকে কেনো চাই না? সুখ দুঃখ তো একে অপরের সাথে জড়িত। তাহলে কেন এমন করি আমরা??
স্যারের প্রশ্ন শুনে আমিই আজ প্রথম উঠে দাঁড়ালাম। বললাম..
- স্যার, মানুষ হল এমন একটা জীব, যেটা নিজের ভালোটাই বুঝতে পারে। মানে, আমরা মনে করি নিজে ভালো তো সব ভালো। আর এই নিজেকে ভালো থাকার মধ্যে রাখতে যেয়ে আমরা চরম পর্যায়ে পৌছায়। মানে একটু সুখের জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। যার কারনে দুঃখ টাও আমামের কাছে আসে। সুখ দুঃখের মাঝেই জীবন আমাদের। কিন্তু আমরা সুখটাকে বেশি ভালোবেসে ফেলি। তাকে আগলে রাখতে চাই। বরন করে থাকি সাদরে। তখনই ভুলে যায় দুঃখটাকে। তুচ্ছ মনে করি, তাই দেখবেন অনেকেই বলে এখন সুখে আছি,দুঃখ আর আসবে না জীবনে। মূলত ভুলটা সেখানেই। সুখের পরেই দুঃখ আসবেই। সুখের সময় সেটা আগলে রাখার জন্য যেমন কাজ করি। তেমন দুঃখটাকে তাড়ানোর জন্যও সে রকম কাজ করি। আমরা যদি মনে রাখি সুখের পরে দুঃখ আসবেই। আবার দুঃখের পরেই সুখ আসবে। তাহলে জীবনে খারাপ সময়ে পড়তে হবে না। আমরা দুঃটাকে বরন করি না। তাড়ানোর কাজে লিপ্ত হয়। ফলে সেটা আমাদের জীবনে জড়িয়ে যেতে থাকে।
- হুমমম..ঠিকই বলেছো তুমি। (স্যার)
..
ক্লাস শেষ করে বাইরে আসলাম। তখনি নেহা আমার পাশে এসে হাটতে লাগলো..
- তুমি কোন কলেজে পড়তা এর আগে?
- কেনো? (আমি)
- তুমি এত সুন্দর করে কথা বলো, অবশ্যই সেই কলেজটা উন্নত ছিলো। কিন্তু চলে আসলে কেনো? কি হয়েছিলো?
- কিছু না।
- বুঝেছি, ঐ কলেজের কোনো একটা মেয়েকে ভালোবাসতা, সে ছ্যাখা দিয়েছে। ফলে কলেজ ছেড়ে এখানে চলে এসেছো। তাই না?? (নেহা)
- থাপ্পড় চিনো?
- হুমম আগে কত খেয়েছি গালে।
- আমি দিবো খাবা?
- হুমম দাও না,প্লীজ খাবো..
কিছু না বলেই তাড়াতাড়ি চলে আসলাম সেখান থেকে। অন্য সময় হলে থাপ্পড় না এতদিনে খুন করতাম। কিন্তু আমি তা করবো না আর। আসতে আসতে বের হতে হবে সেখান থেকে।
.
(পরেরদিন)
.
ক্লাসে ব্যাগটা রেখে বাইরে এসে বসেছি। একটু পরেই নেহা আসলো পাশে। কিন্তু সে আজ কিছুই বলছে না। চুপচাপ বসে আছে।
- কি হল, আজ কিছু বলছো না যে??
কিছু না বলে সে আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো। কিন্তু কেন..? কি করলাম আবার আমি?
- কি হল, এভাবে তাকাচ্ছো কেনো? (আমি)
কিছু না বলেই সে আমার সামনে থেকে চলে গেলো। আর আমি হাবার মত চেয়ে আছি। কিন্তু আজ তো আমি কিছুই করিনি। না ধাক্কা দিয়েছি। না কাগজ ছুড়েছি। তাহলে এমন করছে কেনো? ধুরর করলে তো আমার কি?
ক্লাসে চলে আসলাম। তবে নেহার দিকে তাকাতেই দেখি সে মাথাটা নিচু করে আছে। অন্যদিন হলে তো সে আমার দিকে তাকাতো। কিন্তু আজ কি হয়েছে ওর।
সারাটা ক্লাসে সে ওভাবেই ছিলো। একবারো তাকায়নি আসেপাশে। তবে সি সে জেনে গেলো আমি কে?? কিন্তু কিভাবে জানবে? তখনি ব্যাগে হাত দিয়ে দেখলাম পিস্তলটা ঠিক আছে নাকি? হুমম সবই তো ঠিক আছে। কিন্তু সে কি জেনে গেলো??
..
আজ তিন দিন হল নেহা কথা বলে না। তাকায় ও না সে আর। যাক ভালোই হল, আমাকে জ্বালানোর বা প্রশ্ন করার মত কেউ নেই। এসব কথা ক্যামপাসে বসে ভাবছি। ঠিক তখনি নেহা আসলো আমার কাছে।
- আরে তুমি? তো কি মনে করে আবার? (আমি)
-...... (তাকিয়ে থাকলো)
- কি ব্যাপার চুপ কেনো?
একটু এদিক সেদিক তাকিয়ে। গম্ভীর মুখে সে আমার দিকে তাকালো। মুখে যতটা সম্ভব রাগ এনে বললো..
- কে তুমি??
প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠলাম। সেই সাথে চুপ হয়ে গেলাম। আবার জিগাস করছে সেই একই প্রশ্ন। চুপ করেই বসে রইলাম।
- আমি কিছু জিগাস করেছি। কে তুমি??
- আরে কে মানে? আর এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর থাকে নাকি?
আমার কথায় সে কোনো ভ্রক্ষেপ না করে আবার প্রশ্ন করলো..
- তোমার পরিচয় কি? বাসা কোথায় তোমার..?
- নেহা, এসব কি বলছো?আর আমাকে কেনো এসব বলছো তুমি? আমি বাধ্য নয়..
- তাই নাকি..তাহলে এটা কেনো তোমার ব্যাগে থাকে?
পিছন থেকে নেহার হাত সামনে এনে দেখালো। আর হাতে যেটা দেখলাম, সেটা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। মানে ওর কাছে এটা দেখবো বলে। কিন্তু সে এটা পেলো কোথায়?
- দাও এটা,,এটা তোমার কাছে কেনো?
নেহার হাত থেবে পিস্তলটা নিয়ে তাড়াতাড়ি কোমরে গুজলাম। কিন্তু সে পেলো কোথায়??
- তোমরা ব্যাগে এটা কেনো? (নেহা)
-......
- কি হল বলো,,আমাকে বলতেই হবে।
- ক্লাসে যাও।
- বললাম না আমাকে বলো, এটা কেনো তোমার ব্যাগে? কে তুমি সেটা বলো? কেন তুমি এখানে সব সব বলো আমায়।
- নেহা ক্লাসে যাও।
- যা যা বলছি তার এনস দাও। না হলে..
- না হলে কি...
- বুঝতে পারছো না??
নেহার দিকে তাকালাম, মন চাচ্ছে এখানেই তাকে মেরে ফেলি। কিন্তু না..
- কি হল কি...
- আসলে পিস্তল থাকে নিজেকে বাচানোর জন্য। (আমি)
- মানে? কেনো??
- মানে আমি মাস্তান, যে এলাকাতে থাকথাম সেখানকার টপ মাস্তান আমি। তাই..
- কেনো..
- আরে কেনো মানে? মাস্তানি করি তাই মাস্তান।
- কেন মাস্তানি করো? তোমার ফ্যামিলিতে সবাই মাস্তান নাকি?
- হাহাহাহা,,ফ্যামিলি??
- মানে?
- কেউ নাই আমার।
- মানে. তাহলে মাস্তানি করো কেন?
- পরিস্থিতির স্বীকার।
- কি হয়েছিলো?
একটু চুপ থেকে দীর্ঘএকটা নিশ্বাস ছাড়লাম। নেহার দিকে তাকিয়ে পুরোনো স্মৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলাম।- সব পরিবারের মত আমাদের পরিবারেও সুখ ছিলো। ছিলো অনেক কিছুই। আমার যখন ১৪ বছর বয়স তখন আমার মা মারা যায় ক্যান্সারে। সেদিন খুব কেদেছিলাম আমি। সেদিন বুঝেছিলাম মা আসলে কি জিনিস।
আব্বু মাকে খুব ভালোবাসতো। আব্বুও ভেঙে পড়েছিলো খুব। কিন্তু আমি যখন কলেজে উঠলাম। অর্থ্যাৎ আমার আব্বু আম্মুর মারা যাওয়ার তিন বছর পরই বিঢে করে আরেকটা। তিনি ভেবেছিলেন আমি একা থাকি, মায়ের অভাব পূরন করবে বলে বিয়ে করেছে। কিন্তু না সেরকম কিছুই হয়নি। আসলে সৎ রা আপন হয় না কখনই। তিনি ছিলেন লোভি একজন মহিলা।
একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখি, আমার সৎ মা আব্বু বেড রুমে অন্য একটি লোকের সাথে একই বিছানাতে...
এসব দেখার পর, নিজেকে কেমন অসহায় লাগতো। কিছু বলতে গেলেই মারতো আমাকে তিনি।
এমনি একদিন কলেজ থেকে ফিরে দেখি, সেদিনের সেই লোকটা রুম থেকে বের হচ্ছে। তার পরেই মা বের হয়,
- কি ব্যাপার মা, লোক টা কে? (আমি)
- কেনো? (মা)
- তোমার রুমে প্রতিদিন সে কি করে?
- মানে?? তোকে বলতে হবে কেনো?
- আমি আব্বুকে সব বলে দিবো।
- ঠাসসস...বেয়াদপ ছেলে, তুই যদি তোর বাপকে কিছু বলিস না, সেদিন তোর বাবাসহ তোকে খুন করবো। যা নিজের কাজ কর।
কথাগুলো চুপচাপ শুনে গেলাম।চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। তবে একদিন আব্বুকে সব বলি.
- আব্বু ঐ মহিলা ভালো না। (আমি)
- কে,,?
- সৎ মা,,
- নিলয়, কাউকে সম্মান দিতে শেখোনি? তোমার মা হয়।
- হুমম মা হয়, তবে সৎ মা।
- কি হয়েছে,,
- উনি তোমার অনুপস্থিতিতে বাইরের লোক এনে তোমার বেডরুমে....
- ঠাসসসস,,বেয়াদপ ছেলে, তুমি কি বলছো এসব...?
সেদিন আব্বুর মুখের দিকে কান্না ভরা চোখে তাকিয়ে ছিলাম।
- বিশ্বাস না করলে তুমি দেখে নিও।
এইটুকু বলেই সেদিন চলে আসি আমু ওনার থেকে।
একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি। তখনি চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায়। চিৎকার আসে আব্বুদের রুম থেকে। দৌড়ে সেখানে যেয়ে দেখি। আমার আব্বুকে সৎ মা আর সেই লোকটি খুন করছে। ছুরি দিয়ে আঘাত করছে বারবার...
- আব্বু....(চিৎকার করে ডাক দিলাম)
- ঐটাকেও ধর (মা)
ওদেরকে ধাক্কা দিয়ে আব্বুর কাছে গেলাম। সেদিন আব্বু বলেছিলো, নিলয় তুই কোনোদিন রাগের বসে কিছু করে বসবি না
তার পরেই তিনি মারা যায়,তখনি রাগ উঠে যায় আমার।
খুন আমি সেই লোকটাকে ও আমার সৎ মাকে।
তারপর থেকে আমি পাল্টে যায়। একটা গ্যাং হয় আমার। যশোরের সবাই, আমাকে একনামে চিনে। আমাকে ভয় পাই। হয়ে উঠি মাস্তান। সারা এলাকায় মাস্তানি করে বেড়াতাম। কিন্তু আব্বুর কথাটি বারবার মনে পড়তো, তাই এখন ভালো হওয়ার জন্য এখানে এসে নতুন করে ভর্তি হয়।
..
কিছু না বলেই নেহা সেখান থেকে চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু সে কেনো চলে গেল?
ক্লাসে বসে আছি। কিন্তু নেহা আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। তবে সেই তাকানোর মাঝে আছে, একটা ক্ষোভ, একটা রাগ। কিন্তু আমি কি করলাম? আমি তো তার কোনো ক্ষতি করিনি।
- নিলয়, তুমি বলোতো, মানুষ কেন স্বার্থপর হয়? যেখানে বলা হয়ে থাকে মানুষ মানুষের জন্য? (স্যার)
- স্যার, মানুষ স্বার্থপরতা শেখে পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। যদি কারো সাথে খারাপ কিছু হয়, তো সে সেখান থেকেই স্বার্থপর হয়ে যায়।
- তাহলে মা বাবা কেনো স্বার্থপর হয় না? (স্যার)
- হাহাহাহা,, স্যার, মা বাবা হল পৃথিবীর সব চাইতে অমুল্য সম্পদ। যার এই দুটো সম্পদ নেই। মোটেও ধ্বনি না স্যার। আর তারা মোটেও স্বার্থপর হয় না। কারন, তাদের মন সন্তানের জন্য সবসময় পবিত্রতায় ভরা থাকে। সন্তান যত বড়ই ভুল করুক না কেনো, মা বাবার কাছে সে কিছুই করে নি। এটাই হল ভালোবাসা স্যার, এটাই হল সন্তানের প্রতি পিতামাতার ভালোবাসা। কিন্তু কেনো স্যার, এমন প্রশ্ন?
- আসলে আমার ছেলেটা আবার ফিরে এসেছে তো তাই। (স্যার)
কিছু না বলে মুচকি হেসে বসে পড়লাম। সামনে তাকিয়েই দেখি, নেহা নেই। কিন্তু কই গেল সে?? সারা ক্লাসে সে নেই।
ক্লাস শেষ করে বাইরে বের হলাম।
কেন জানিনা আজ মনে হচ্ছে এই কলেজে আসা আমার আজ শেষ দিন। হয়ত আর আসতে পারবো না। চারিদিক ভালো করে দেখে নিলাম একবার।
ক্যামপাস থেকে বের হওয়ার আগে সব দিকে চোখটা বুলিয়ে নিলাম। ক্যাম পাস থেকে বের হয়েই, আমি অবাক..
সামনে দেখি নেহা দাড়িয়ে আছে। আর তার গায়ে পুলিশের পোষাক।
- নেহা তুমি..?
- অবাক হচ্ছো?? এটা নাও..
(হাত বাড়িয়ে)
হাত বাড়িয়ে সে যা দিলো সেটা হল আমার সেই পিস্তলটা। যা আমার ব্যাগেই থাকতো। কিন্তু সে এটা পেলো কোথায়? তাহলে আমার কাছে কি অন্য একটা??
- কি হল ধরবা না?? (নেহা)
-......
- খুব খুজেছি তোমায়। তুমি খুব নিখুত মাস্তান ও খুনি। বহু জায়গায় তোমায় খুজেছি। শেষে তোমাকে এখানে পেলাম।
-...... (অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম)
- সেদিন ঐ টিজার রা তোমাকে ভাই বলাতেই সন্দেহ হয় আমার। তারপর থেকেই তোমাকে ভালোবাসার ফাদে ফেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি পড়োনি। তবে রোজ দেখতাম তুমি তোমার ব্যাগ থেকে নড়তে না। সন্দেহটা বাড়ে। আর তোমার পরিচয়হীন স্বভাবে খোজ নিয়ে জানতে পারি, তুমিই সেই মাস্তান নিলয়। আর বড় কথা হল, সেদিন তোমায় শুনে ছিলাম ফোনে কথা বলাটা। শুনে নিয়েছিলাম কাউকে খুন করবে। আর যাকে খুন করেছিলে, সে হল আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর একজন পুলিশ। তোমার উপর নজরদারি রাখতেই আমি ওকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তাকেও মেরে দিলে।
- বাহ বাহ,,,তবে আগে কেনো ধরোনি? কেনো আমার পূরোনো কথাগুলো শোনার পর ধরলে? আর আমি তো ভালো হতে চেয়েছি।
-.......
- আমাকে ভালোবাসার নাটক করলা..?
- হুমমম..
- প্রমান হয়েই গেল, মেয়েরা আসলেই নিকৃষ্ট।
কথাটি শেষ করে নেহার হাতে থাকা পিস্তলটি কেড়ে নিলাম। সোজা কপাল বরাবার ধরে যেই না টিগার টানতে যাবো তখনি পায়ে গুলি করে আমায় কেউ একজন।
পিছনে ঘুরে দেখি ৭ জন পুলিশের মধ্যে কেউ একজন গুলি করেছে আমার।
..
কিছু মনে নেই আর, যখন ঙ্গান ফিরলো তখন দেখি আমি থানার মধ্যে। বাইরে দাড়িয়ে আছে নেহা।
- তো মি. নিলয়, খুব সমাজের হয়ে লেকচার দেন তাই না? খুব বুদ্ধিমান ছিলেন তাই না? কিন্তু এখন আর সে সব দিয়ে কাজ নেই। আপনার ফাসির ব্যাবস্থা করছি।
কিছু না বলে চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকালাম। মনে মনে বলে উঠলাম
- হায়রে মানুষ, ভালো হওয়ার সুযোগটুকু দিলি না। আর তোকে তো বিশ্বা করেই সব নিজের মুখে বলেছি সব। তারপরও তুই এমনটা করলি।
আসলেই বিশ্বাস নিয়ে খেলাটা, তোর মত মেয়েদের কাছে একটা মজার ব্যাপার। আমাকে বলে দিলেই তো হত, নিজে এসে ধরা দিতাম তোর কাছে। চেয়েছিলাম একটা ভালো মানুষ হব আগে। তারপর নিজে এসে ধরা দিবো। কিন্তু ভালো আর হতে দিলি না।
তবে এখানেই শেষ না। আমি যেভাবেই হোক এখান থেকে বের হব। বের হয়েই শুরু করবো আবার মাস্তানি। প্রথম খুন হবি তুই। বিশ্বাসের খুন করলি তুই আমাকে। আর আমি করবো তোর দেহের খুন। একটু জোরে হেসে উঠলাম। হাসিটা ছিলো এক পৈশাচিক হাসি।
(৫২)
------(সমাপ্ত)------
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ