āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ā§Ģ āύāĻ­েāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

3564 (9)

ফ্যান্টাসি গল্প- দ্য সার্পেন্ট গর্ডেস
লেখা- অচেনা গল্পের শেষ লাইন
চ্যাপ্টার ৯ঃ এ ভেরি নেসেসারি লাই
ওরা এখন বসে আছে জাহাজের নিচের ডেকের একটা কামরার ভেতর। ঠাণ্ডা আরো বেড়ে গেছে। এখন সেটা প্রায় অসহ্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
ম্যাক্স এর মৃত্যুর পর ওরা বিশেষ একটা কথা বলেনি। নীরবে হেঁটে-হেঁটে জাহাজের কাছে চলে এসেছে। অ্যাঙ্গুইসিয়া মারা গেলেও ওরা এখনও পুরোপুরি মুক্ত নয়। ওদের সামনে অনেক বড় এক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। সেটা হচ্ছে, প্রায় ২০ মিটার চওড়া খাদটা অতিক্রম করা। সেটা কিভাবে করা যাবে তা কারো মাথাতেই আসছে না। জ্যাকসন বেশ ভালোই লাফাতে পারে, কিন্তু সেটা ২০ মিটার যাওয়ার মত না। বিকল্প ব্যাবস্থা ভাবছে ওরা। এখনও পর্যন্ত ফলাফল শুন্য। এমনকি উইলিয়ামের মাথাতেও কিছুই আসছে না।
ম্যাক্স এর হঠাত মত পরিবর্তন ওদের কাছে বিস্ময়ের মতই লেগেছে। তবে ওরা আরও অবাক হলো যখন ওরা জানতে পারলো যে ম্যাক্স এর মত পরিবর্তন এর আসল কারণ ছিল, কুপার।
উইলিয়াম তখন সবে মাত্র বুঝতে শুরু করেছে যে অ্যাঙ্গুইসিয়াকে ওর মানবিক রুপে হত্যা করা সম্ভব নয়, কারণ ওর অসম্ভব দ্রুত গতি, যার কাছে ওরা বারবার মার খেয়ে যাচ্ছিল। ওর দ্রুত গতির সাথে ওর হঠাত-হঠাত অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা এবং ২,৩ সেকেন্ড এর জন্যে নিজের শরীরকে ট্রান্সপারেন্ট করে ফেলার শক্তি, এইসব মিলিয়ে সে ছিল ওই রুপে প্রায় ইনভিন্সিবল। কথাটা সে আগে একবার উইলিয়ামকে বলেও ছিল, ‘আমি এই রুপে...প্রায় ইনভিন্সিবল বলতে পারো।’
ওর সাথে ফাইটিং এর এক পর্যায়ে সে কথাটা আবার বলেছিল। তখনই উইলিয়াম এর মাথায় আসে ব্যাপারটা। অ্যাঙ্গুইসিয়া যদি এই রুপে প্রায় ইনভিন্সিবল হয়, তাহলে ভালনারেবল কোন রুপে? তখনই সে বুঝতে পারলো সত্যটা, যে কেন শুরু থেকে অ্যাঙ্গুইসিয়া নিজের দানবীয় রুপ না নিয়ে মনুষ্য রুপে মারামারি করছে। কারণ, সে যখন সাপ হয়ে যায় তখন সে আগের মত দ্রুত মুভ করতে পারে না, স্লো হয়ে যায়, আগের মত হূট হাট অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে না, নিজের শরীরকে ট্রান্সপারেন্ট করে ফেলতে পারে না।
উইলিয়াম তখন নিজের জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিনয়টা করে দেখালো। অ্যাঙ্গুইসিয়াকে রাজি করালো নিজের সর্প রুপ ধরে ওর সামনে আসার জন্যে।
কিন্তু এরপরও ও অ্যাঙ্গুইসিয়াকে কাবু করতে পারতো না, যদি না সময়মত জ্যাকসন আসতো। এমনকি জ্যাকসনকেও প্রায় মেরেই ফেলেছিল অ্যাঙ্গুইসিয়া। ঠিক সময়মত ম্যাক্স যদি না আসতো, তাহলে ম্যাক্স এর জায়গায় জ্যাকসন এর বিশাল শরীরটা লাভায় ডুবে যেত।
ম্যাক্স এর সময় মত আসার পেছনে কুপারের শতভাগ অবদান ছিল। ম্যাক্স ছিল ওর অনেক কাছের এক মানুষ। ম্যাক্স এর মৃত্যু ওকে আজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে।
উইলিয়াম যখন অ্যাঙ্গুইসিয়ার কাছে অনুনয় বিনয় করছিল, তখনই কুপার খেয়াল করে যে ম্যাক্স নড়ছে। এখন যদি ম্যাক্স উঠেই অ্যাঙ্গুইসিয়ার পক্ষ নিয়ে মারামারি শুরু করে দেয় তাহলে ওরা সব মারা পড়তো। কেউ বাঁচতো না। তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে কুপার দৌড় দিয়ে গেল ম্যাক্স এর কাছে। ওর মন বলছিল ওর কথা ম্যাক্স ফেলতে পারবে না।
ম্যাক্স এর কাছে হাঁটু গেড়ে বসেছিল কুপার। এরপর তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল তার অতীত জীবনের কথা, একসাথে ওরা কত অ্যাডভেঞ্চার করেছে সে কথা। মনে করিয়ে দিয়েছে ওর ছোট-ছোট বাচ্চাগুলোর কথা, যারা ওর আশায় পথ চেয়ে আছে। এরপর ওর কাছে কুপার শেষ প্রশ্ন করেছিল যে ওদের কাছে কি একবারও যেতে ইচ্ছে হয় না ওর?
কুপারের শেষ কথার পরেই ম্যাক্স এর ভেতর ধীরে-ধীরে পরিবর্তন আসতে লাগল। মুখটা শক্ত করে মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়েছিল ম্যাক্স। এরপর সোজা দৌড়ে গিয়েছিল ওর মৃত্যুর দিকে।
ম্যাক্স চলে যাওয়ার আগে কুপারের দিকে তাকিয়ে কি বলেছে তা কেউ না বুঝলেও কুপার ঠিকই বুঝেছে। ও তার বন্ধুর শেষ কথাটা রাখবে। দেখে শুনে রাখবে ওর ছোট্ট দুই শিশুকে। ওদেরকে কখনও বুঝতে দেবে না যে ওদের বাবা-মা কেউই নেই।
ওরা জাহাজে এসেছে প্রায় ঘন্টাখানেক হলো। এখনও ওরা এখান থেকে বের হওয়ার কোন উপায় খুঁজে পায়নি। ইতিমধ্যেই জ্যাকসন তার শরীর থেকে পেরাসাইটটাকে বের করে দিয়েছে। ওর শরীর থেকে বের হওয়া মাত্রই ওটাকে অ্যালকোহলে চুবিয়ে মারল ওরা। নিজের স্বরূপে ফিরে আসতে পেরে বেশ খুশি জ্যাকসন।
ক্যাপ্টেন জাহাজে আসার শুরুতে খুব গোমড়ামুখো হয়ে থাকলেও ২ বোতল মদ গেলার পর থেকে আবার ওর স্বাভাবিক অবস্থাতে ফিরে এসেছে। সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে সবার সাথে।
‘কই, এখান থেকে বের হওয়ার উপায় কিছু খুঁজে পেলি তোরা? অ্যাঙ্গুইসিয়া নাহয় মারা গেল, কিন্তু এ জায়গা থেকে বেরোতে না পারলে আমরাও ধীরে-ধীরে মারা পড়ব, কিছু একটা করতে হবেতো...নাকি? এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে?’ ক্যাপ্টেন সবার চারপাশে বাদুড়ের মত ঘুরতে-ঘুরতে বলতে লাগল।
উইলিয়ামের প্রচণ্ড বিরক্তি লাগল, এমনিতেই সেই কখন থেকে না খেয়ে আছে, তারপর ক্যাপ্টেনের এসব ফ্যাচ-ফ্যাচ...
‘নাহ দোস্ত আর পারছি না, খুব ক্ষিধা পেয়েছে, আর কতক্ষণ খালি পেটে থাকা যায় বলতো...’ ইথেন বলল।
‘তাছাড়া প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগছে। অন্তত আগুন জ্বালাতে পারলেও তো একটু আরাম পাওয়া যেত,’ কুপার বলল। শীতে ও জমে যাচ্ছে।
‘সে তো বুঝলাম। কিন্তু আমাদের কাছে লাইটার থাকলেও শুকনো কাঠ নেই, খড় কুটোও নেই...তাহলে আগুন জ্বালাবে কিভাবে?’ জ্যাকসন হতাশ হয়ে বলল।
‘কেন? এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার দিয়ে? মিশর বন্দরে বেশ কিছু মালপত্র পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল আমার। তার ভিতর এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার ও আছে। কিন্তু আফসোস, জাহাজটা ধ্বংস হয়ে গেল...এখন ওদেরকে যে কি জবাব দেব...’ মাথা নেড়ে জবাব দিল কুপার।
‘হুম, তাই করুন। ওগুলো তো আপনার আর কোন কাজে লাগবে না, তাই ওখান থেকে একটা সিলিন্ডার খুলে জাহাজের থেকে একটা বার্নার এনে তার সাথে সংযুক্ত করে দিন। রান্না-বান্না নাহয় নাই হলো, একটু উত্তাপ অন্তত পাওয়া যাবে। এই শীতের ভেতর বেশিক্ষণ থাকলে এমনেই মরে যাবো,’ ঠান্ডায় কাঁপতে-কাঁপতে বলল ইথেন।
ক্যাপ্টেনের কথা যেন উইলিয়ামের মনে পুরোনো স্মৃতির ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে, কিছু একটা ওর মনে আসতে চাচ্ছে, কিছু একটা...
‘ক্যাপ্টেন? তোর জাহাজের পালগুলো কি দিয়ে তৈরি জানিস? কটন নাকি পলিমার?’ উত্তেজনার সাথে বলল উইলিয়াম। ওর মনে হচ্ছে ও এই মৃত্যুপুরী থেকে বেরোনোর একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছে।
‘পলিমার, কেন?’
‘কি ধরনের পলিমার? জানিস?’ জিজ্ঞেস করল উইলিয়াম। প্রতিটা শব্দের সাথে বুক ধুক-পুক করছিল ওর।
‘নাইলন ৬, তো?’ ক্যাপ্টেনের ভ্রু কুঁচকে এলো। উইলিয়াম এসব কেন জিজ্ঞেস করছে সেটা সে বুঝতে পারছে না।
‘ক্যাপ্টেন...ক্যাপ্টেন...তুই আসলেই একটা জিনিয়াস...’ উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠল উইলিয়াম। এরপর এক লাফে ক্যাপ্টেনকে জড়িয়ে ধরল। সবাই অবাক হয়ে উইলিয়ামের দিকে তাকালো। কে জানে, হয়তো ক্ষুধা তৃষ্ণায় পাগল হয়ে গেছে উইলিয়াম?
‘আমি? মানে আমি...আসলেই জিনিয়াস? মানে...মন থেকে বলছিস তো না? ফাজলামো করছিস নাতো, নাকি? দেখ উইলিয়াম...যদি এটা তোর আরেকটা ফাজলামো হয় তাহলে কিন্তু...’ কুপার সন্দেহের সাথে বলল।
‘আরে না...সত্যিই এবার আমি মস্করা করছি না। এবার আমি সিরিয়াসলিই বলছি, তুই আমাদেরকে এখান থেকে বেরোবার রাস্তা বাতলে দিয়েছিস! খুব চমৎকার একটা ক্লু দিয়েছিস আমাদেরকে,’ উইলিয়াম প্রচণ্ড আনন্দের সাথে বলল।
‘আমি, মানে...বলেছি? মানে আমি...’ আমতা-আমতা করতে লাগল ক্যাপ্টেন। এরপর হঠাত বাকিদের দিকে ঘুরে বুক ফুলিয়ে বলল, ‘তোমরা নিস্কর্মার দলগুলো এতক্ষণ ধরে এত এত চিন্তা ভাবনা করেও যা পাওনি, আমি তা চুটকিতেই পেয়ে গেছি! আমি আসলে স্রেফ একটা ক্লু দিয়েছিলাম তোমাদেরকে...হ্যাঁ, স্রেফ একটা ক্লু...’
‘কিন্তু ক্যাপ্টেন, আমিতো এখনো বুঝতে পারছি না যে আপনি কি ক্লু দিলেন,’ বেঁচে যাওয়া একমাত্র নাবিক গিবস জানতে চাইলো। বেচারাকে হতভম্ব দেখাচ্ছিল। ওর অবশ্য দোষ নেই। বাকিদেরও একই অবস্থা।
‘সেটা বুঝলে...আজকে তুমি আমার জায়গায় থাকতে! বুঝলে হে ছোকরা?’ দাম্ভিকতা দেখিয়ে বলতে-বলতে নিঃশব্দে উইলিয়ামের পাশে সরে এলো ক্যাপ্টেন। এরপর গলাটা একটু নিচু করে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘হ্যাঁরে উইলিয়াম...আমি যেন কি ক্লু দিয়েছি! মানে বের হওয়ার রাস্তার ব্যাপারে আরকি...জানিসই তো যে আমার কিছু মনে থাকে না...’
‘তুই একটু আগেই গ্যাস সিলিন্ডার আর বার্নারের কথা বললি না? সেটাই ছিল ক্লু। ওটা শুনার পর পরেই আমার মনে একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছিল। সম্ভাবনা আরো উজ্জ্বল হলো যখন তুই বললি যে তোর জাহাজের পালগুলো নাইলন ৬ পলিমার দিয়ে তৈরি,’ একগাল হেসে বলল উইলিয়াম। ক্যাপ্টেন সব বুঝে ফেলার মত করে মাথা নাড়তে লাগল।
‘তুই আসলে কি বলতে চাচ্ছিস খোলসা করে বলবি?' জ্যাকসন সরু চোখে উইলিয়ামকে পর্যবেক্ষণ করতে-করতে বলল।
‘গ্যাস সিলিন্ডার, বার্নার আর ক্যাপ্টেনের জাহাজের পাল, ওগুলোই আমাদের প্রধান হাতিয়ার এখান থেকে বেরোনোর। এগুলোর মাধ্যমে আমরা উড়ে-উড়ে ঐ খাদ পেরোবো,’ স্মিত হেসে বলল উইলিয়াম।
‘কিভাবে শুনি?’ সবাই এগিয়ে এলো উইলিয়ামের দিকে।
‘হট এয়ার বেলুনে চেপে,’ ওদের সবার বিস্ময়ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল উইলিয়াম।
‘উফ, উইলিয়াম! মাথা তোর আসলেই গেছে! বেলুন দিয়ে উড়বিতো ভালো কথা, কিন্তু বেলুন কোথা থেকে আসবে শুনি?’ হতবাক ইথেন বলল।
‘বেলুন আসবে ক্যাপ্টেনের জাহাজের পাল থেকে,’ উইলিয়াম বেশ খুশি মনে জবাব দিল।
‘কিভাবে?!’ সবাই একসাথে জানতে চাইলো।
আয়েশ করে বসলো উইলিয়াম। এরপর ব্যাখ্যা করা শুরু করল, ‘একটা হট এয়ার বেলুনের কয়েকটি অংশ আছে। উপরের বেলুন, বার্নার, প্রোপেন সিলিন্ডার, প্যাসেঞ্জার বাস্কেট এবং প্যারাসুট ভেন্ট। প্রোপেন সিলিন্ডার তো আছেই। বার্নার হিসেবে জাহাজের রান্না করার বার্নারগুলোকে কাজে লাগাবো। প্যাসেঞ্জার বাস্কেট জাহাজের কাঠ দিয়ে বানাবো। আর বেলুনটা, যাকে আসলে বলে এনভেলপ, ওটা তৈরি করাই সবচেয়ে কঠিন। অনেক হিসেব নিকেশ এর ব্যাপার আছে ওখানে, তবে ব্যাপার না, হয়ে যাবে। আর সেই এনভেলপটা তৈরি হবে...ক্যাপ্টেনের জাহাজের পাল দিয়ে।’
‘কি বলছিস তুই! জাহাজের পাল আগুনে পুড়ে যাবে!’ হতবাক হয়ে গেল কুপার।
‘না, পুড়বে না। কারণ, ওগুলো নাইলন ৬ দিয়ে তৈরি। এটার ফায়ার রেসিস্ট্যান্স ক্ষমতা আছে। এছাড়া নাইলন এর তৈরি প্রোডাক্টের সাথে বিভিন্ন ফায়ার রিটার্ডেন্ট ব্যাবহার করা হয়, ফলে এগুলোর ফায়ার রেসিসটেন্সি আরো বেড়ে যায়। তাছাড়া এর গলনাঙ্ক হচ্ছে ২২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। আমাদেরকে মাটি থেকে তোলার জন্যে বেলুনের ভেতরের বায়ুর তাপমাত্রা ১০০-১২০ ডিগ্রি হলেই যথেষ্ট। তবে সবচেয়ে মজার কথাটা কি জানিস? বেলুনের এনভেলপ আসলেই নাইলন এর কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়,’ খুব প্রশান্তি নিয়ে কথাগুলো বলল উইলিয়াম।
‘আমার মনে হয় উইলিয়াম এর কথা ঠিকই আছে। আমাদের এখুনি কাজে লেগে যাওয়া উচিত,’ সব শুনে তরুণ নাবিক গিবস বলল।
‘ঠিক আছে, আমরা একটু পরেই কাজে নেমে পড়ব। কিন্তু তার আগে, আমাদের প্ল্যানে ভুল ভ্রান্তি রয়ে গেল কিনা সেটা সবাই মিলে একটু ১০টা মিনিট ভেবে দেখ, এরপর আমরা কাজ শুরু করব,’ উইলিয়াম সবাইকে বলল।
সবাই চুপ করে ভাবতে লেগে গেল। উইলিয়ামের কথায় সবার ভেতরেই উৎসাহের জোয়ার এসে গেছে। সবাই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে। অন্যসবার সাথে জ্যাকসন আর ইথেনও চুপ করে ভাবছিল। হঠাত করে নিরবতা ভেঙ্গে ইথেন বলে উঠল, ‘তো ঐ বেলুনকে নিয়ন্ত্রণ কিভাবে করবি তুই? তুই কি আগে কখনো বেলুন চালিয়েছিস?’
‘না, চালাইনি। শুধু থিওরিটা জানি। আর ব্যাপারটা এত কঠিন কিছুই না। দেখ, হট এয়ার বেলুন উপরে উঠে কেন? প্রোপেন যখন জ্বলে তখন বেলুনের ভেতরের বায়ু উত্তপ্ত হয়ে হালকা হয়, এবং উপরে উঠে যায়। একসময় বায়ুর ঊর্ধ্বমুখি চাপ বেড়ে যায় আর তার ফলে প্লবতা সৃষ্টি হয়। এর জন্যেই বেলুন উপরে উঠতে থাকে। তো তারমানে হচ্ছে বেলুনকে উপরে উঠাতে হলে শুধু প্রোপেন সিলিন্ডারের মুখ খুলে দিলেই হবে। সাথে-সাথে বার্নার জ্বলে উঠেবে, আর বেলুন ধীরে-ধীরে নিজেই উপরে উঠতে থাকবে,’ উইলিয়াম বলল।
‘আর নিচে নামানোর ব্যাপারটা?’ জ্যাকসন জিজ্ঞেস করল।
‘সেটাও সোজা। বেলুনের একদম উপরে, মানে মাথার দিকে একটা গোলাকার ছিদ্র থাকে। সেই ছিদ্রের মুখে ওটার আয়তনের চেয়ে আকারে আরো বড় একটা কাপড় গুজে দেয়া হয়। যখন বেলুনে উত্তপ্ত গ্যাস থাকে, তখন সেই ফুটোটার মুখে থাকা কাপড়কে গ্যাস ধাক্কা দেয়, ফলে গ্যাসের চাপের কারণে কাপড়টা জায়গামত থাকে। সেই কাপড়টাকে বলে প্যারাসুট ভেন্ট। ওটার সাথে সুতো লাগানো থাকে যা উপর থেকে একদম নিচে পর্যন্ত বিস্তৃত। যখনই নিচে নামার প্রয়োজন হয়, সেই প্যারাসুট ভেন্ট এর সাথে লাগানো সুতোয় টান দিলেই হবে। ছিদ্রটা খুলে যাবে, এবং উত্তপ্ত গ্যাস বেরিয়ে গিয়ে বেলুনের ভেতরের বায়ুর তাপমাত্রা কমিয়ে দিবে। ফলে বেলুন নিচে নেমে আসবে ধীরে-ধীরে,’ এক গাল হেসে বলল উইলিয়াম।
‘সে সবই তো বুঝলাম, কিন্তু বেলুন খালি উপরে আর নিচে গেলেই হবে? সামনে না গেলে আমরা খাদটা পার হবো কিভাবে শুনি?’ কুপার জিজ্ঞেস করল।
‘সে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি সব ভেবে রেখেছি। একটা প্রপেলার লাগবে আমাদের। কাঠ দিয়ে তৈরি করবো ওটা। চিন্তা করিস না। আমরা পারবো। এখন সবাই দয়া করে কাজে লেগে পড়,’ উইলিয়াম সবাইকে নির্দেশ দিল।
ওরা নিজেদেরকে দুই গ্রুপে ভাগ করল। জ্যাকসন, ইথেন আর গিবস এর উপর দায়িত্ব পড়ল প্রপেলার তৈরি করার। প্রথমে ওরা জাহাজের কিছু কাঠ কেটে তিনটা উইং বানাল। এরপর একটা গোল করে কাটা কাঠের তিন দিকে তিনটা ফুটো করে উইংগুলোকে ফুটোর ভেতর গাম দিয়ে ভালোভাবে আটকে দিল। এরপর সেই গোল কাঠের চাকতির পেছনের প্রান্তে একটা ফুটো করে তার ভিতর খুব শক্ত করে লাগাল একটা লম্বা হ্যান্ডেল। এটা দিয়ে প্রপেলারটাকে ঘোরাবে।
প্যাসেঞ্জার বাস্কেট বানানোর দায়িত্ব ছিল ক্যাপ্টেন আর উইলিয়ামের উপর। দায়িত্বটা আসলে শুরুতে ছিল জ্যাকসনদের গ্রুপের, কিন্তু ক্যাপ্টেন নিজেই আগ বাড়িয়ে এই দায়িত্বটা নিয়েছে। আরো বলে দিয়েছে যে এসব ছোটখাট কাজ করতে ওর একজনের বেশি সহযোগী লাগবে না। কেন সে আগ বাড়িয়ে দায়িত্বটা নিয়েছে সেটা বোঝা গেল একটু পর।
বাকি ৩ জন যখন কাজ করছে খুব মনোযোগ দিয়ে, তখন ক্যাপ্টেন, উইলিয়ামকে বলল জাহাজে উঠে আসতে। এরপর ওকে সোজা নিয়ে গেল জাহাজের নিচের দিকের একটা রুমে। মিশরে এক্সপোর্ট করার জন্যে যেই পণ্যগুলো সে এনেছিল সেগুলো এই রুমেই রেখেছিল সে। দেখা গেল, যে পন্যগুলো বিশাল-বিশাল বাস্কেটের ভেতর রাখা। প্রত্যেকটা বাস্কেটের নিচে চাকা বসানো আছে, পরিবহন এর সুবিধার জন্যে। সেখান থেকে মাঝারি মাপের একটা বাস্কেট এর কাছে গিয়ে দাঁড়াল ক্যাপ্টেন। এরপর সেখান থেকে পণ্যগুলো সরিয়ে ফেলে খালি বাস্কেটের পেছনের প্রান্ত ধরে উইলিয়ামকে বলল, ‘আই লাইক শর্টকাটস!’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে উইলিয়ামও বাস্কেটের পেছনের প্রান্ত ধরলো। এরপর ধাক্কা দিয়ে-দিয়ে সেই রেডিমেড বাস্কেটকে সোজা নিয়ে এলো সেখানে, যেখানে সবাই প্রপেলার তৈরি করছিল। আসার আগে অবশ্য উইলিয়াম বাকি ঝুড়িগুলোতে উঁকি ঝুকি দিয়ে দুটি খুবই প্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে নিয়েছে। এক্সপোর্টের জন্যে রাখা দুটি ব্যাটারি চালিত টেবিল ফ্যান।
এরপরের কাজটা সবচেয়ে কঠিন। এনভেলপ তৈরি করা।
‘এখান একটু হিসেব কষতে হবে, দাঁড়া...আমরা এখানে আছি ৫ জন মানুষ। এনভেলপ এর আয়তন এমন হতে হবে যে যাতে করে ওটার ভেতর ঠিক সেই পরিমাণ গরম বায়ু থাকতে পারে, যেই পরিমাণ বায়ু আমাদের ৫ জনকে তুলার জন্যে যথেষ্ট,’ উইলিয়াম বলল। সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনছিল।
‘তার মানে হচ্ছে যে বেলুনের ভেতরের আয়তনটা সঠিক হওয়া খুবই দরকার। নাহলে ওটা আমাদেরকে আকাশে তুলতে পারবে না। এখন হিসেবটা আমি বরং খাতাতেই করে দেখি...’ কিছুক্ষণ খাতায় খস-খস করে কী যেন লেখল উইলিয়াম। খুব মনোযোগের কারণে কপালের ভ্রু কুঁচকে এলো ওর। প্রায় ১০ মিনিট পরে খাতা থেকে মুখ তুলল সে।
‘আমি এনভেলপ, বাস্কেট, বার্নার, প্রোপেন সিলিন্ডার, প্রপেলার এবং আমাদের ৫ জনের আনুমানিক ভর হিসেব করলাম। টোটাল এসেছে মোটামুটি ৫৮৫ কেজি। এখন, ৯৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্রতি কেজি ভর তোলার জন্যে একটা হট এয়ার বেলুনের এনভেলপের আয়তন হতে হয় প্রায় ৩.৯১ কিউবিক মিটার। সে হিসেবে ঐকিক নিয়মে ৫৮৫ কেজি ভর তোলার জন্যে এনভেলপের আয়তন হতে হবে ২২৮৭.৩৫ ঘন মিটার,’ এক মনে বলে যাচ্ছিলো উইলিয়াম। ‘তো, আমাদের বেলুনকে যদি একটা বৃত্ত ধরি তাহলে বৃত্তের আয়তন হতে হবে ২২৮৭.৩৫ ঘন মিটার। বৃত্তের আয়তনের সুত্র থেকে বৃত্তের ব্যাসার্ধ পেলাম ৮.১৭৩৬ মিটার। অতএব আমরা সেইল ফেব্রিকগুলোকে কেটে যখন জোড়া দেব, তখন যে বেলুনটা তৈরি হবে, তার ব্যাসার্ধ হতে হবে ৮.১৭৩৬ মিটার। তার মানে হচ্ছে, আমাদেরকে এই মাপটার কথা মাথায় রেখেই সেইল ফেব্রিকগুলোকে কাটতে হবে।’
এরপর উইলিয়ামের নির্দেশ মত সেইল ফেব্রিকগুলোকে পরিমাণমত অংশে কেটে জোড়া লাগিয়ে ৮.১৭৩৬ মিটার ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটা বেলুন আকৃতির রুপ দেয়া হলো।
এরপর ওরা বাস্কেট এর ভেতর সিলিন্ডার, বার্নার, এনভেলপ এবং বাকি প্রয়োজনীয় টুকটাক জিনিসপত্র রেখে সেটাকে ধাক্কা দিয়ে-দিয়ে নিয়ে চলল সেই খাদের কাছে। খাদটা অত কাছে নয়। অনেক দূরে। ওদের গলদঘর্ম হয়ে যাচ্ছে ওটাকে ধাক্কা দিয়ে এত দূরে নিয়ে যেতে। অবশ্য, ওটার তলায় চাকা থাকায় সুবিধা হয়েছে। আসলেই ওদের পরিবহনে সুবিধে হচ্ছে! তাছাড়া হাতে মশাল থাকার কারণে অন্ধকারে দেখতেও সমস্যা হচ্ছে না।
ঘন্টাখানেক পরিশ্রম করে ওরা অবশেষে সেই খাদের মুখে এলো। এরপর বাস্কেটের উপর থেকে সবকিছু নামিয়ে আবার কাজে লেগে পড়ল।
এনভেলপের মাথার দিকের খানিকটা অংশ গোল করে কেটে ফেলে সেই অংশে প্যারাসুট ভেন্ট বসিয়ে দিল ওরা। প্যাসেঞ্জার বাস্কেটের উপরে কাঠের তক্তা দিল ছাদ হিসেবে। সেই তক্তার উপর শক্ত করে বসালো একটা বার্নার। এরপর একটা প্রোপেন সিলিন্ডার বসিয়ে দিল প্যাসেঞ্জার বাস্কেটের ভেতর এক কোণে। সিলিন্ডারের মুখে লম্বা রাবারের নল ফিট করে সেই নলের অপর প্রান্ত লাগিয়ে দিল বার্নারের সাথে।
তারপর বাস্কেটের পেছনে ছোট্ট একটা ফুটো করে সেখানে প্রপেলারটা বসালো ঠিকমতো। প্রপেলারের ডানাগুলো থাকলো প্যাসেঞ্জার বাস্কেটের বাইরে আর হ্যান্ডলটা থাকলো বাস্কেটের ভেতরে। শুনতে সহজ শোনালেও, কাজটা যে করতে যাবে, সেই শুধু বুঝবে যে ওটা আসলে কতটা কঠিন! প্রপেলারটা বসানো হলে ওরা সেইলিং রোপগুলো দিয়ে এনভেলেপটাকে খুব ভালোভাবে বাঁধল বাস্কেটের সাথে।
এখনো বেলুনটা ফুলে উঠেনি। সে কারণে বেলুন এবং প্যাসেঞ্জার বাস্কেট এখনো কাত হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। অতএব একে প্রাথমিকভাবে ফোলাতে হবে। সেই কাজটা করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হলো। প্রোপেন সিলিন্ডারের কাজ হচ্ছে প্রাথমিকভাবে ফোলানোর পরে। প্রাইমারি ইনফ্লেশান বা প্রাথমিক স্ফিতি দেয়ার জন্যে ব্যাটারি চালিত টেবিল ফ্যান দুটি ব্যবহার করলো ওরা। হট এয়ার বেলুনকে প্রাইমারি ইনফ্লেশান দেয়া সহজ কথা নয়। পাক্কা ২০ মিনিট লাগল ওদের। অবশেষে বেলুনটা স্ফিত হয়ে উঠল। বেলুনটা ফুলে উঠা মাত্রই বেলুন আর বাস্কেটটা নিজে-নিজেই সোজা হয়ে গেল। এরপর সাথে-সাথেই তাতে চেপে বসল সবাই। এনভেলপটা ফোলানোর আগেই অবশ্য ওরা বাস্কেটকে দড়ি দিয়ে মাটির সাথে খুব ভালোভাবে বেঁধে রেখেছিলো যাতে করে ফুলে উঠার সাথে-সাথেই উড়ে যেতে না পারে।
‘রেডি?’ সবার দিকে তাকিয়ে বলল উইলিয়াম। সবাই সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল। এরপর ছুরি দিয়ে মাটির সাথে লাগান দড়িটা কেটে দিল উইলিয়াম।
প্রোপেন গ্যাসের সিলিন্ডারটা খুলে দিল ওরা। প্রোপেন, রাবারের টিউব দিয়ে বার্নারে গিয়ে পৌঁছল, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল উইলিয়াম, প্রোপেন ভালোভাবে অক্সিজেনের সাথে মিশ্রিত হোক। এরপর হাতে থাকা মশালটাকে বার্নারের মুখে ধরলো। সাথে-সাথে বার্নার এর মুখ দিয়ে দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলে উঠল। ধীরে-ধীরে উত্তপ্ত হতে লাগল বেলুনের ভেতরের বায়ু।
বার্নারটা পুরো তীব্রতায় ছেড়ে রেখেছে ওরা। দাউ-দাউ করে বার্নারের মুখ দিয়ে আগুন উঠছে। কিন্তু বেলুনটা উঠছেই না। সবাই খানিকটা নার্ভাস বোধ করছে। এমনকি উইলিয়াম নিজেও। উত্তেজনায় নিজের নখ কামড়াচ্ছিল সে। এত কষ্ট করে বেলুনটা বানিয়েছে ওরা, এখন যদি কাজ না করে? এক মিনিট...২ মিনিট...৫ মিনিট...১০ মিনিট...১৫ মিনিট...
বেলুনটা হালকা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল হঠাত করে। এরপর ধীরে-ধীরে আকাশে উঠতে শুরু করলো। কান ফাটানো খুশির চিৎকার দিয়ে উঠল ওরা সবাই।
‘বেলুন যথেষ্ট উপরে উঠেছে। এখন প্রপেলারটা ঘুরা কেউ একজন। যথেষ্ট জোরে ঘুরাতে হবে কিন্তু, ক্যাপ্টেন তুই যা...’
ক্যাপ্টেন কুপার প্রপেলারের হ্যান্ডেল ধরে অনেক জোরে-জোরে ঘুরাতে লাগল। প্রপেলারটা বোঁ-বোঁ শব্দ করে ঘুরছে। সেই সাথে বেলুনটাও খুব ধীরে-ধীরে সামনের দিকে খানিকটা এগিয়ে গেল। কিন্তু খানিক বাদেই ওটা আবার থেমে গেল!
‘ওকি, থেমে গেল কেন? প্রপেলার জ্যাম হয়ে গেছে নাকি?’ ভয়ে-ভয়ে বলল ইথেন।
‘আরে নাহ! প্রপেলার ব্যাটা জ্যাম হয়নি, আমিই জ্যাম হয়ে গেছি! আর পারছি না। তাই একটু জিরিয়ে নিচ্ছি,’ হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল ক্যাপ্টেন।
‘ওরে উজবুক, ঐ প্রপেলার না ঘোরালে যে ওটা সামনে যাবে না...জ্যাকসন, তুই একটু প্রপেলারটা ঘুরাতো। তুই হাঁপিয়ে গেলে আরেকজন ঘুরাবে, এইভাবে চলবে। কিন্তু প্রপেলার যাতে না থামে,’ বিরক্ত কণ্ঠে বলল উইলিয়াম।
ওরা প্রপেলার ঘোরাতে লাগল। সেই সাথে বেলুনটাও ধীরে-ধীরে সামনে যেতে থাকল। এবং দেখতে-দেখতে ওরা লাভায় পরিপূর্ণ খাদটা পেরিয়ে এলো।
এবার বেলুনটা নিচে নামানোর পালা। উইলিয়াম প্যারাসুট ভেন্ট এর সুতোর সাথে লাগানো হ্যান্ডেল এ খুব জোরে একটা টান দিল। এরপর ওভাবেই ধরে রাখল। ছিদ্রটা খুলে গেছে। ভেতরের গরম বায়ু সব বেরিয়ে যাচ্ছে। বেলুনটাও ধীরে-ধীরে নেমে এলো মাটিতে।
লাফ দিয়ে বেলুন থেকে নামল ওরা সবাই। মুক্তির আনন্দে ছটফট করছে ওরা। এরপর আর সময় নষ্ট না করে সবাই একযোগে গোলাকার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। সিঁড়ির ধাপ যেন শেষই হচ্ছে না। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ উঠার পরে অবশেষে ওরা সামনে একটা দরজা দেখতে পেল।
দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে ওরা অবাক হয়ে গেল। চারপাশে নরকঙ্কাল এর স্তূপ পড়ে আছে এখানে-ওখানে। এই সেই গুহা, যেখানে অ্যাঙ্গুইসিয়া শিশুদেরকে বলি দেয়ার জন্যে নিয়ে আসতো! গুহাটার ডান পাশের দেয়ালে একটা মাঝারি আকারের টানেল দেখতে পেল ওরা। সাথে-সাথে অ্যাঙ্গুইসিয়ার একটা কথা মনে পড়ল উইলিয়ামের, ‘...এরপর সম্পুর্ন ভিন্ন এক পথে আবার ফিরে এলাম এই স্থানে।’
‘এই সেই টানেল! সমাধির ভেতর মরে পড়ে থাকা সেই অসহায় শ্রমিককে বালুর ভেতর দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার পর, ঠিক এই পথেই অ্যাঙ্গুইসিয়া আবার এখানে ফিরে এসেছিল,’ ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল উইলিয়াম।
গুহাটার প্রবেশ পথের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম দুই মিনিট চোখে কিছুই দেখল না ওরা। চোখ ধাঁধানো আলোয় ওদের চোখ বুজে এলো। এরপর ধীরে-ধীরে চোখ সয়ে গেল।
অনেক উঁচু একটা পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে ওরা। ভোরের আলো এসে পড়েছে গুহার মুখে। অনেক-অনেক দিন পর যেন গায়ে খুব জোরে বাতাসের ঝাপটা পেল ওরা। প্রাণ ভরে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিলো সবাই। বেঁচে থাকার আনন্দের চেয়ে বড় আনন্দ সম্ভবত এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই।
***
কানাডার টরোন্টোয় উইলিয়ামের বিশাল বাংলো বাড়িতে আজ প্রচুর সাংবাদিক এসে ভিড় করেছে। এছাড়া অসংখ্য দর্শনার্থীও এসেছে। সবাই ওকে এক নজর দেখতে চায়। একটা জাহাজ সমুদ্রের বুক থেকে একদম
লাপাত্তা হয়ে গেল, তারপর আবার তার কয়েকজন যাত্রী ফিরেও এলো, এ তো রীতিমত লিজেন্ডারি ব্যাপার! সবারই উইলিয়ামের কাছে একটাই প্রশ্ন। আর বারবার একই প্রশ্নের জবাব দিতে-দিতে বিরক্ত উইলিয়াম বলল, ‘দেখুন, আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, আমাদের জাহাজ ডুবির সাথে কোন অতিপ্রাকৃত কিছুর হাত নেই! সমুদ্রে ঝড় উঠেছিল, আর তাতে আমাদের জাহাজ ঝড়ে পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। আমাদের মধ্যে অনেকেই মারা গেছে ঝড়ের কারণে। আমরা বাকিরা শুধু মাত্র ভাগ্য গুনে বেঁচে এসেছি, এইতো।’
‘কিন্তু স্যার, সেই ভাগ্য গুনে মানে কিভাবে, সেটা একটু জানতে চাচ্ছি, প্লিজ স্যার...’ বেশ মধুর সুরে জিজ্ঞেস করলো এক রিপোর্টার।
‘আমরা লাইফ বোটে ছিলাম। চারটা লাইফ বোটের ভেতর ৩টাই ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে গেছে। শুধু আমরাই ভাগ্য ক্রমে বেঁচে এসেছি। লাইফ বোটে ভাসতে-ভাসতে আমরা ইজিপ্ট গিয়ে পৌঁছাই। আর এরপর সেখান থেকে সোজা কানাডা, এইতো,’ এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বলল উইলিয়াম।
‘অ্যাঙ্গুইসিয়ার মমিটা কোথায় স্যার? ওটা নাকি ঐ জাহাজেই ছিল? ঘটনা কি সত্য?’
‘জি ছিল। ওটা আমি মিশর নিয়ে যাচ্ছিলাম, কারণ, ওটা নিয়ে আপনারা একের পর এক আজগুবি গল্প ফাঁদছিলেন যা ছিল খুবই বিরক্তিকর। তাই ওটাকে তার নিজের স্থানেই ফিরিয়ে দিতে নিয়ে যাচ্ছিলাম।’
‘স্যার, আপনার কি মনে হয় না যে অ্যাঙ্গুইসিয়ার মমির কারণেই আপনাদের জাহাজ ডুবি হয়েছিল, এতগুলো ক্রু মারা গিয়েছিল?’ এক অল্পবয়সী মেয়ে সাংবাদিক নিজের সোনালি চুলগুলো ঝাঁকিয়ে বলল।
‘কে জানে, হতেও পারে...’ ঠোঁট উল্টিয়ে পাত্তা না দেয়ার ভঙ্গিতে বলল উইলিয়াম। ‘এখন দয়া করে একটু নিস্তার দিন, অনেক প্রশ্ন করেছেন আপনারা, আমারও ব্যাক্তিগত জীবন বলে কিছু আছে...’
এরপর আর কোন কথা না বলে উইলিয়াম সবার মাঝখান থেকে উঠে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। তারপর রিপোর্টারদের মুখের উপর সপাটে দরজা বন্ধ করে দিল। বন্ধ দরজার ওপাশে রিপোর্টাররা চিৎকার করছিল। ওরা ওর উত্তরে সন্তুষ্ট নয়।
সন্তুষ্ট সে নিজেও নয়। কিন্তু তার কীইবা করার ছিল? ও যদি পুরো সত্যটা বলতো, তাহলে এই মানুষগুলোই ওকে বদ্ধ উন্মাদ বলতো। বলতো যে উইলিয়াম খ্যাতির জন্যে এসব মিথ্যা, আজগুবি এবং আষাঢ়ে গল্প ফাঁদছে।
তবে...ওর সত্য না বলার কারণ অবশ্য পুরোপুরি সেটাও নয়। কারণ আছে আরো একটা...
পৃথিবী খুব দ্রুত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের উন্নতি হচ্ছে আলোর গতিতে। এ অবস্থায় এসব অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে কথা বললে মানুষগুলো লৌকিক দিক ছেড়ে অলৌকিক দিকে বেশি করে ঝুঁকে পড়বে। আর একবার যদি তা হয়, তাহলে মানব সভ্যতা আর কখনই সামনে এগোবে না। আজীবন পেছাতেই থাকবে। বিজ্ঞানের পূজারি হয়ে সে তার এত বড় ক্ষতি কিভাবে করতে পারে? সে তাই করেছে যাতে মানুষের মঙ্গল হয়, পৃথিবীর কল্যাণ হয়।
সব কথা সবার জানার প্রয়োজন নেই। কিছু কথা না হয় আড়াল হয়েই থাক। তাতে যদি সবার মঙ্গল হয়, তবে তা গোপন হয়ে থাকাই ভালো।
কিন্তু ঠিক সে মুহুর্তে মাটির শত হাত নিচে কিছু একটা চলছিলো। আনুবিশ আবার জেগে উঠেছে। আবার তার চোখে রক্তের অশ্রু বইছে। এ যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ।
*সমাপ্ত*

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ