ফ্যান্টাসি গল্প- দ্য সার্পেন্ট গর্ডেস
লেখা- অচেনা গল্পের শেষ লাইন
চ্যাপ্টার ৩: ইনটু দ্য মেলস্ট্রোম
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। উইলিয়াম দাঁড়িয়ে আছে বন্দরে। ডকে ওর বন্ধুর জাহাজ সি-গাল বাঁধা ছিল। মমিটাকে নিয়ে সোজা জাহাজে উঠে গেছে ওরা ৩ জন। সাথে আছে ক্যাপ্টেন কুপার।
উইলিয়াম মমিটাকে সেইখানে রেখে আসতে চাচ্ছে যেখান থেকে এনেছিল। এই এক মমির কারণে কতগুলো মানুষের জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে। যেভাবেই হোক, এসব বন্ধ করতেই হবে। আর সেটা শুধু একভাবেই সম্ভব। মমিটাকে চলে যেতে হবে, যেখান থেকে সে এসেছিল...সেখানে।
জাহাজ ছেড়ে দিল। জাহাজের স্টারবোর্ড সাইডে দাঁড়িয়ে বন্দরের দিকে তাকিয়ে ছিল উইলিয়াম। বন্দরের মৃদু মন্দ ঠাণ্ডা হাওয়া এসে গায়ে লাগছে ওর। দেশের কথা, ঘরের কথা আর প্রিয় মানুষগুলার কথা ভেবে মনটা কেমন যেন করে উঠল। আদৌ সে আর এই মানুষগুলার মাঝে ফিরে আসতে পারবে কিনা কে জানে। যথেষ্ট সন্দেহ আছে ওর।
সি-গাল মাঝ সমুদ্রে এসে পড়েছে। উত্তর অ্যাটলান্টিকের উঁচু-উঁচু ঢেউগুলো কেটে-কেটে কি সুন্দর সামনে এগিয়ে চলেছে সি-গাল। উইলিয়াম জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে হাওয়া খাচ্ছিল আর আশে-পাশের দৃশ্য দেখছিল। সমুদ্র খুবই রহস্যময়। আর সেই রহস্যময় সমুদ্রের মাঝে সবচেয়ে রহস্যময় অঞ্চল হল অ্যাটল্যান্টিক। পৃথিবীর যত বিচিত্রতা, রহস্যময়তা, সব যেন সে বুকে নিয়ে বসে আছে।
‘মমিটাকে ফেরত দিয়ে আসলেই কি সব শেষ হয়ে যাবে বলে তোর মনে হচ্ছে?’ জ্যাকসন জিজ্ঞেস করল উইলিয়ামকে।
‘জানি না। কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবে। মমিটা আর একটা রাতও ঐখানে থাকতে পারে না। গত দুই দিনেই যা হয়েছে, এরপর আরও যদি থাকতো, তাহলে না জানি কি হত?’
‘তো তাহলে তুই মেনে নিচ্ছিস মমির অভিশাপের ব্যাপারটা?’
‘দেখ, সব ঘটনারই ব্যাখ্যা আছে। যাকে আমরা অভিশাপ বলছি সেটারও কোন না কোন ব্যাখ্যা আছে। কিছু ব্যাখ্যা আমি তোদেরকে দিয়েছি। ওগুলোর যেহেতু ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে, তাহলে একটু ভাবলে বাকিগুলোরও পাওয়া যাবে। হয়ত ব্যাখ্যাগুলো আপাতত আমরা খুঁজে পাচ্ছি না বলে এটাকে অলৌকিক মনে হচ্ছে। পাওয়া গেলে আর মনে হত না। দেখ, এ জগতে কিছু মানুষ আছেন যারা অন্যের মাইন্ড রীড করতে পারেন। আবার দেখ, তিব্বতে কিছু মঙ্ক আছেন যারা শূন্যে উঠে যেতে পারেন। এসবই কিন্তু সত্য। আর এসব কিছুই অলৌকিক নয়, বরং লৌকিক। মানুষের ব্রেইন এর ক্ষমতা অনেক-অনেক বেশি। আমরা তার খুব ক্ষুদ্র অংশই আবিষ্কার করেছি। যদি পুরোটা আবিষ্কার করতে পারতাম, তাহলে মানুষকে হয়ত আর চেয়ার থেকে উঠতেই হত না। চেয়ারে বসে-বসেই সব কাজ করে ফেলত,’ কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল উইলিয়াম।
‘সে তো বুঝলাম, কিন্তু আনুবিসের ব্যাপারটা? ও কি সত্যিই আছে বলে মানছিস?’ ইথেন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল উইলিয়ামের দিকে।
‘অবশ্যই আছে, না হলে এতগুলো ব্যাপার ঘটাল কে? তবে সে হয়তো এমন একজন মিউট্যাটেড মানুষ যে নিজের মাইন্ড পাওয়ারের সর্বোচ্চটা ব্যাবহার করতে পারে, অথবা কোন জন্তু যার ইন্ট্যালেকচুয়াল মানুষের থেকেও বেশি, অথবা কোন এলিয়েন, যাকে অনেক আগেই তার বাবা-মা ভুল করে এখানে ফেলে রেখে চলে গেছেন, অথবা...কে জানে...হয়ত কোন উদ্দেশ্য নিয়েই ফেলে রেখে গেছেন...’ উইলিয়াম বলল।
‘তো মমিটাকে আমরা সমাধিতে রেখে চলে আসলেই কাজ শেষ, তাই তো? ইটস সো ইজি ম্যান,’ তুড়ি বাজিয়ে বলল ইথেন।
উইলিয়াম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, ‘ব্যাপারটা এত সোজা নয়। যেই মুহূর্তে আমরা অ্যাঙ্গুইসিয়াকে সমাধিতে রেখে দেব, সেই মুহূর্তে কিছু একটা আমাদের উপরে হামলা করবে,আমি শিউর। আর সেটা......আমাদের থেকেও অনেক-অনেক শক্তিশালী।’
‘তার মানে আমাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ? খুবই ক্ষীণ?’ ইথেন বলল। ইথেনের কথার সাথে-সাথে গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি হতে লাগল। হাল্কা বাতাসও বইছে।
‘না...’ উইলিয়াম দৃঢ় কণ্ঠে বলল।
‘তুই কিভাবে আশা দেখিস? আনুবিস কি করতে পারে তা তো তুই ভালোভাবেই জানিস! এরপরও আশা করছিস?’ জ্যাকসন বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
‘আমরা কেন মানুষ জানিস? কারণ আমরা সব সময় আশা করি। এমনকি যখন আমাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শূন্যের কোটায় থাকে তখনও। দেখ, ওদের ক্ষমতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে, কিন্তু আমাদের বুদ্ধি ওদের চেয়ে অনেক-অনেক বেশি। আর দিন শেষে...এটাই আমাদের রক্ষা করবে...’ মাথার উপরের খোলা আকাশটাকে দেখতে-দেখতে বলল উইলিয়াম।
‘মানে কি? তুই কি কিছু প্ল্যান করেছিস নাকি...’ গলা নামিয়ে প্রায় শোনা যায় না এমনভাবে বলল ইথেন।
‘হয়েছে, তোদের ফ্যাচ-ফ্যাচ আর ভালো লাগছে না! যা, ক্যাপ্টেনের রুমে যা। আমি আসছি,’ উইলিয়াম এক হাত তুলে ওদেরকে থামিয়ে দিয়ে বলল।
***
ক্যাপ্টেনের রুমে ওরা সবাই বসে আছে। রাতের খাবার খাচ্ছে। আর সেই সাথে জম্পেশ আড্ডাও দিচ্ছে।
‘...একবার তো হলো কি, আমাদের জাহাজকে খুব জোরে কিছু একটা ধাক্কা দিল। সব্বাইতো সেই ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু এই ক্যাপ্টেন কুপার, বুঝলে হে, একদম ভয় পাইনি! বুঝতে পারলাম যে কোন নীল তিমি আমাদের জাহাজকে ধাক্কা দিচ্ছে। আর কি! সাথে-সাথে হার্পুন রেডি করলাম। ১ম বারেই ওর পাখনা উড়িয়ে দিলাম। বেচারি ভয়ে দিল ভোঁ দৌড়! আমি তো নাছোড়বান্দা, পণ করেছি যেভাবেই হোক, আজ নীল তিমির সুপ খাবোই! তিমিটাকে তাড়া করা শুরু করে দিলাম! বেচারি প্রাণ ভয়ে দৌড়াতে লাগল, ওটা ভালো করেই জানে যে ক্যাপ্টেন কুপারের হাতে পড়লে আর রক্ষে নেই। ওর অনেক মাসতুতো ভাইকে আগেই সাবাড় করেছি কিনা...’ বলেই হেউ করে একটা বিশাল ঢেকুর তুলল ক্যাপ্টেন। সমানে হুইস্কি গিলে চলেছে সে। ওদিকে প্রতি মুহূর্তে বৃষ্টির বেগ বাড়ছে....সেই সাথে বিজলীও চমকাচ্ছে মাঝে-মধ্যে।
‘...আরেকবার হলো কি, আমরা পাইরেটদের হাতে আটকা পড়লাম। আমাদেরকে বেঁধে রেখে সব লুট করে নিল ওরা। সব্বাই ভয়ে একদম প্যান্ট খারাপ করে দিয়েছিল আরকি! কিন্তু না...আমি একদম ভয় পাইনি। স্থির ছিলাম...ওদেরকে বললাম, “ছুঁচোর দল! একবার আমার হাত আর পায়ের বাঁধন খুলেই দেখ না তোদের কি করি?” ওরা ওদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করল, খুলে দিল! আর মস্কারি করার ছলে আমার হাতে একটা লম্বা তলোয়ারও তুলে দিল। আর যায় কোথায়! একটা বিশাল হুঙ্কার দিয়ে শুরুতেই বাম পাশেরটাকে লাথি দিয়ে ফেলে
দিয়ে এক নিমিষেই চলে গেলাম পেছনের দিকে। ওখানে দাঁড়ান দস্যুটাকে মারার পরে ঘুরে গিয়ে এক লাফে উঠলাম উঁচু জায়গাটার উপরে। এরপর সোজা ওদের গায়ের উপর মারলাম এক লাফ। সেই সাথে তলোয়ারটাও প্রচণ্ড জোরে দিলাম মাথার চারপাশে ঘুরিয়ে...একটানে ৬ জনকে কাটলাম। রক্তে ভরে গেছে পুরো ডেক...’ ইথেন আর জ্যাকসন উইলিয়ামের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। ওদের দৃষ্টিতে স্পষ্ট অবিশ্বাসের ছাপ। উইলিয়াম কিছু না বলে শুধু ভেংচি কাটল। বৃষ্টির শব্দ ক্রমশ বাড়ছে। সেই সাথে বাতাসের শোঁ-শোঁ শব্দটাও। দূরে কোথাও খুব জোরে বজ্রপাত হল।
‘আমার মাথায় তো তখন খুন চেপেছে। ওদের রক্তে খানিক্ষন গোসল করে নিলাম। এরপর ওদের গলায় কামড় দিয়ে রক্ত খাওয়ার একটা ভান করলাম। বাকিগুলা ভাবল, আমি একটা ভ্যাম্পায়ার! পড়ি মরি করে যে যেদিকে পারে ছোটাছুটি শুরু করে দিল। সবগুলা ভয়ে লাফ দিল সমুদ্রে! বুহাহাহাহাহাআআ...’ কথা শেষ হওয়া মাত্রই উইলিয়ামের বন্ধুদের দিকে চোখ গেল ওর। ওরা ওদের চোখ হাতির চোখের মত করে রেখেছে। ‘ইয়ে...তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করছো না, তাই তো? আরে...ব্যাপার না...সময় হলেই টের পাবে এই ক্যাপ্টেন কুপার কি জিনিস। শুধু উপযুক্ত সময় আসতে দাও। ক্যালিপসোর দিব্যি! আমার একটা কথাও যদি মিথ্যা হয়, তবে আমার মাথায় ঠাডা পরুক...’
জাহাজের স্টারবোর্ড সাইডের একদম সামনের দিকে প্রচণ্ড জোরে একটা বজ্রপাত হলো। ওই অংশের রেলিং ভেঙ্গে গুড়ো-গুড়ো হয়ে সমুদ্রে পড়ে গেল। সাথে-সাথে ওরা সবাই দরজার সামনে এসে ডেকের দিকে উঁকি দিল। নিচে নাবিকদের ভিতর হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। ওরা বুঝে উঠতে পারছে না যে এই মুহুর্তে কি করা উচিত ওদের। জাহাজটা যেন প্রতি মুহূর্তেই একটু-একটু করে স্টারবোর্ড সাইডের দিকে হেলে পড়ছে।
কিছু বুঝে উঠার আগেই দ্বিতীয় বজ্রপাতটা হলো। এবারেরটা পড়ল জাহাজের মাঝামাঝি বরাবর পোর্ট সাইডের রেলিং এর উপর। ঐখানকার কাঠ আর লোহাগুলো ভেঙ্গে সোজা সমুদ্র গর্ভে হারিয়ে গেল। উইলিয়াম জাহাজের পোর্ট সাইডের সেই ভাঙ্গা জায়গাটার দিকে তাকিয়ে ছিল...হঠাত বুকে ইথেনের গুঁতো খেয়ে ওর দিকে তাকাল। ইথেনের চোখের মনি একদম
সাদা হয়ে আছে। ওর দৃষ্টি সোজা স্টারবোর্ডের দিকে...ইথেনের দৃষ্টি অনুসরণ করে সোজা সেদিকে তাকাল উইলিয়াম। যা দেখল, তা দেখে উইলিয়ামের মত সাহসী লোকের মুখ দিয়েও ভয়ার্ত চিৎকার বেরিয়ে এলো।
জাহাজের চেয়েও অন্তত বিশ ফুট উঁচু একটা ঢেউ...সোজা ধেয়ে আসছে ওদের দিকে। এই ঢেউ এর আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা এই জাহাজের নেই।
‘সবাই জলদি ঐ আসবাবপত্রগুলোর কাছে চলে যা! শক্ত করে ধরে রাখ ওগুলো। এখুনি...’ উইলিয়াম চিৎকার করে উঠল। একেকজন একেক দিকে দৌড় দিল। যে যা পেল হাতের সামনে, তাই শক্ত করে ধরে আছে। লাইফ জ্যাকেট! ওগুলো ওদের থেকে কয়েক ফুটের দূরত্বে আছে। কিন্তু এখন লাইফ জ্যাকেট পড়ার সেই সময়ও নেই। তাছাড়া, এই অবস্থায় লাইফ জ্যাকেটও ওদের বাচাতে পারবে কিনা, সন্দেহ আছে।
প্রচণ্ড শব্দ করে বিশাল সেই ঢেউটা ওদের গায়ের উপর আছড়ে পড়ল। পানির প্রচণ্ড ধাক্কায় ওরা কে কোথায় চলে গেল, কারোই কোন খবর নেই। নাকে, মুখে, কানে সব জায়গায় পানি ঢুকে গেছে ওদের। কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। শুধু বুঝতে পারছে যে ওরা ভেসে যাচ্ছে...ভেসে যাচ্ছে...
এক ঝটকায় পানির উপরে ভেসে উঠল উইলিয়াম। বিশাল হা করে দম নিল। বাকিদেরকেও দেখা যাচ্ছে এখন। পানির ধাক্কায় এক-এক জন এক-এক দিকে চলে গেছে। পানি খুব দ্রুত সরে যাচ্ছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে...জাহাজটা এখনো টিকে আছে, পানির নিচে যায়নি।
‘এখানে থাকাটা নিরাপদ না। এক্ষুনি সবাই নিচে চল। এই রুমটার দরজাটা বন্ধ করে দিতে হবে যাওয়ার আগে,’ বলেই নিচের রুমে যাওয়ার জন্যে পা বাড়িয়ে দিল জ্যাকসন। হঠাত ধুপ করে জাহাজের উপর কিছু একটা পড়ার আওয়াজ হলো, আর সাথে-সাথে পুরো জাহাজটা অস্বাভাবিকভাবে কেঁপে উঠল। জাহাজের একদম সামনের দিক থেকে অদ্ভুত একটা শব্দ আসতে লাগল। শব্দটা আসছে জাহাজের বো এর থেকে...
‘উইলিয়াম! না...কি করছিস? যাস নে...আমাদেরকে নিচে যেতে হবে...,’ ইথেন চেঁচিয়ে উঠল।
‘তোরা যা। আমি যা ভাবছি তাই যদি হয়, তাহলে এমনিতেও নিচে গিয়ে বেশিক্ষণ বেঁচে থাকা যাবে না,’ উইলিয়াম দৃঢ় কণ্ঠে বলল। ‘তোরা নিচে যা, আমি দেখছি কি করা যায়। আর যাওয়ার আগে এই দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে যাবি। তাতে হয়ত...তোরা আরও একটু বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারবি।’
বলেই আর কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা শব্দটা লক্ষ্য করে ডেকের দিকে দৌড় দিল উইলিয়াম। যাওয়ার আগে ক্যাপ্টেনের রুমে থাকা শটগানটা নিয়ে নিল। আগ্নেয়াস্ত্রগুলো যোগাড় করার জন্যে যাত্রার অনেক আগেই কুপারকে সে বলে রেখেছিল। ততক্ষণে নিচের ডেক থেকে নাবিকরাও বের হয়ে এসেছে। ওরাও শব্দটা শুনতে পেয়েছে।
জাহাজের বো এর উপর দাঁড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত জন্তু। বিশাল বড় তার শরীর। পুরো দেহটাই কালো। মুখটা শৃগালের মত। ডান হাতে ধরে রেখেছে লম্বা কিছু একটা, যেটার বাঁকান মুখে নীল আলো জ্বলছে।
‘আনুবিস?’ উইলিয়াম চিৎকার করে উঠল। আনুবিসকে দেখে জাহাজের নাবিকরা সব ভয়ে কাঁপতে লাগল। সামুদ্রিক জীবের সাথে যুদ্ধ করা এক কথা, আর ইজিপশিয়ান গড এর সাথে যুদ্ধ করা আরেক কথা। সামুদ্রিক প্রানীদেরকে কামানের গোলা দিয়েই মেরে ফেলা যায়, কিন্তু এই ইজিপশিয়ান গডকে কিভাবে মারবে ওরা?
আনুবিস ওদেরকে দেখে ভয়ঙ্কর একটা গর্জন করল। ওর অসম্ভব রকমের বিষাক্ত ধারাল দাঁতগুলো দেখা যাচ্ছে। আনুবিসের গর্জন এর সাথে-সাথে সমুদ্রে আরও একটা প্রকাণ্ড ঢেউ সৃষ্টি হলো। গর্জন করতে করতে সেই ঢেউ জাহাজের উপর আছড়ে পড়ল। হাতের কাছে থাকা মিজেন মাস্তুলটাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখল উইলিয়াম। ঢেউ এর তোড়ে কয়েকজন নাবিক সোজা গিয়ে পড়ল অ্যাটলান্টিকের একদম গভীরে। ওদের চিৎকার ওর কানে বিভীষিকার মত বাজতে লাগল। ঢেউটা সোজা ক্যাপ্টেনের রুমের দিকেই তেড়ে আসছে...চোখ বন্ধ করে ফেলল উইলিয়াম। পর-মুহূর্তেই কানে এলো ঢেউ এর ভয়াবহ গর্জন এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই সে তলিয়ে গেল পানির নিচে। পানির স্রোত ওকে প্রচণ্ড জোরে টানছে স্টারবোর্ড সাইডের দিকে। হাত প্রায় পিছলেই যাচ্ছে। প্রাণপণে মাস্তুলটা ধরে নিজেকে রক্ষা করে চলেছে উইলিয়াম।
মুখের উপর থেকে পানি সরে গেছে। কোন মতে চোখটা খুলে মুখ দিয়ে জোরে-জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগল উইলিয়াম। এখনো বুক পর্যন্ত পানি রয়ে গেছে। অতএব, এখনো বিপদ কাটেনি। যদি সে এই মুহূর্তে মাস্তুলটা ছেড়ে দেয় তো সোজা পড়ে যাবে অ্যাটলান্টিকের অতলে। হঠাত ওর ঠিক ডান পাশ থেকে কে যেন চিৎকার করে উঠল। ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাল উইলিয়াম কনোর।
‘ইথেএএএএএন...নাআআআআআআ...’ মাস্তুলটা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুকে বাঁচানোর জন্যে স্টারবোর্ডের দিকে যেতে লাগল উইলিয়াম। ইথেনকে পানির তীব্র স্রোত টেনে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে। বন্ধুকে বাঁচানোর জন্যে এক হাত বাড়িয়ে দিয়েছে উইলিয়াম। কিন্তু ইথেন ওটা ধরতে পারছে না। ঢেউ এর এক ধাক্কায় ইথেন হারিয়ে গেল সমুদ্রের বুকে।
সমুদ্রে গর্ভে হারিয়ে গেল ইথেন। উইলিয়ামের চোখের সামনেই পড়ে গেল ও। সে কিছুই করতে পারল না। কিছু বুঝে উঠার আগেই পেছন থেকে আরেকটা ধাক্কা খেল উইলিয়াম। এবার পড়ে যাচ্ছে সে নিজেই...
ঢেউ এর তোড়ে উলটে যাওয়ার আগেই রেলিংটা শক্ত করে ধরে ফেলল উইলিয়াম। কয়েক গ্যালন পানির চাপে ওর শরীর ভেঙ্গে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন মট করে এখুনি হাড়-গোড় সব গুড়ো হয়ে যাবে। শক্ত করে রেলিংটা ধরে কোন মতে নিচের দিকে তাকাল উইলিয়াম।
এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য সে এ জীবনে কখনো দেখেনি। বিশাল এক হোয়ার্লপুল তৈরি হয়েছে নিচে। মেলস্ট্রোম...অনেক ভয়ঙ্কর এক মেলস্ট্রোম এর ভেতর পড়ে গেছে ওরা। এই কারণেই তাহলে জাহাজটা স্টারবোর্ড সাইডের দিকে হেলে পড়েছে! ইথেন সহ বাকি নাবিকরা এই ঘূর্ণির ভেতরেই পড়েছে। ঘূর্ণি জলের মাঝখানে প্রকাণ্ড এক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতই বড় গর্ত যে এর ভেতর অনায়াসেই একটা বড়-সড় ক্রুজার ঢুকে যেতে পারবে। শেষমেশ ঐ ঘূর্ণির ভেতরেই পড়তে হবে? এটাই কি ওর কপালে লেখা ছিল?
পানি পুরোপুরি সরে যেতেই জাহাজটা আবার দুলে উঠল। আগের বারের আঘাতে বেশিরভাগ নাবিকই হোয়ার্লপুলের ভেতর তলিয়ে গেছে। কয়েকজন নাবিক বাকি আছে মাত্র। আর উপায় না দেখে ওরা শেষ চেষ্টা হিসেবে আনুবিসকে আক্রমণ করতে গেল। ওরা ওদের রাইফেল থেকে গুলি মারতে লাগল পাগলের মত। কিন্তু পর-মুহূর্তেই ওরা প্রচণ্ড অবাক হয়ে দেখল যে আনুবিস ওখানে নেই! কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেছে!
‘ও ফোর মাস্তুলের উপরে দাঁড়িয়ে আছে...সাবধান...’ ক্যাপ্টেন কুপার চেঁচিয়ে উঠল। রাইফেলগুলো আবার গর্জে উঠল।
কিছু বুঝে উঠার আগেই অনেক উপর থেকে ঠিক ডেকের মাঝখানে লাফ দিল আনুবিস। সাথে-সাথে জাহাজটা ভয়ঙ্কর একটা কাঁপুনি দিয়ে লাফিয়ে উঠল। মনে হচ্ছে যেন এই জাহাজটা ওর কাছে স্রেফ একটা ডিঙ্গি নৌকা ছাড়া আর কিছুই নয়। আনুবিসকে চারপাশ থেকে গোল করে ঘিরে ধরেছে নাবিকরা।
ওরা ওদের রাইফেল তোলার আগেই বাম হাতটায় খুব জোরে একটা ঝাঁকুনি দিল আনুবিস। সাথে-সাথে প্রচণ্ড এক শব্দ হলো আর আনুবিসের বাম পাশের সমস্ত নাবিক জাহাজের রেলিং সহ উড়িয়ে নিয়ে সোজা পড়ে গেল ঘূর্ণির ভেতরে। এটা দেখে বাকিরা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেল। মৃত্যু ভয়ে ওরা সবাই নীল হয়ে গেছে।
কিন্তু ভয় পেলে তো হবে না। ওরা এমনেও মরবে, অমনেও মরবে। আনুবিসের হাতে না মরলেও ঐ হোয়ার্লপুলের ভেতর পড়ে মরবে। আর তাই, এই মুহূর্তে বাঁচার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করতে হবে। কয়েকজন নাবিক সোজা দৌড় দিল আনুবিসের দিকে। আনুবিস ওর ডান হাত সামনের দিকে দিয়ে অদ্ভুতভাবে হাওয়ায় একটা মোচড় দিল। সাথে-সাথে মাটিতে পড়ে থাকা দড়িগুলো জীবন্ত হয়ে উঠল। সাপের মত জড়িয়ে ধরল ওদের পা। এরপর ওদেরকে সোজা তুলে ফেলল আকাশে।
সাথে-সাথে হাতে থাকা শটগানটা দিয়ে আনুবিসের হৃৎপিণ্ড লক্ষ্য করে গুলি চালাল উইলিয়াম। সবুজ রক্তে ভরে গেল জাহাজের ডেক। প্রচণ্ড রাগে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জন করে উঠল আনুবিস। ওর গর্জনের সাথে-সাথে দড়িতে উল্টো হয়ে ঝুলতে থাকা নাবিকেরা উড়ে গিয়ে পড়ল জাহাজ থেকে বিশ ফুট দূরে। চিৎকার করতে-
করতে ওরা হোয়ার্লপুলের ভেতর হারিয়ে গেল।
‘ক্যাপ্টেন, আমি ওকে দেখছি। তুমি হুইল সামলাও। যেভাবেই হোক আমাদেরকে এই মেলস্ট্রোম থেকে বেরোতে হবে,’ উইলিয়াম বাতাসের গর্জনের ভেতর চিৎকার করে বলল।
মাটিতে পড়ে থাকা আনুবিসের বিষাক্ত সবুজ রঙের রক্তের ফোঁটাগুলো কাঁপতে লাগল। ভয়ঙ্করভাবে ফুটছে ওগুলো। দেখতে-দেখতে ওগুলো জীবন্ত হয়ে উঠতে লাগল। লম্বা-লম্বা ট্যান্টাকল গজাচ্ছে ওগুলো থেকে।
‘কি ওগুলো?’ জ্যাকসন চিৎকার করে উঠল।
‘ঐগুলো ঐ শয়তানটারই দোসর। জাস্ট বি কেয়ারফুল,’ সবাইকে সাবধান করে দিল উইলিয়াম।
আনুবিসের রক্ত থেকে সৃষ্টি হওয়া বিষাক্ত সবুজ রঙের জন্তুগুলো ওদের ট্যান্টাকলের উপর ভর দিয়ে দিয়ে খুব দ্রুত ওদের দিকে আসতে লাগল। সাথে-সাথে আশে-পাশে বেশ কিছু রাইফেল আর শটগান গর্জে উঠল। কিন্তু একি! গুলি ওদের শরীরে কোন প্রভাবই ফেলতে পারছে না! বুলেটগুলো সোজা ওদের শরীরের ভেতর ঢুকে জাহাজের ডেকে বিঁধে যাচ্ছে। কিন্তু সেই জন্তুগুলো বুলেটগুলোর ভেতর দিয়েই অদ্ভুতভাবে নিজেদের শরীরকে টেনে-টেনে সামনের দিকে নিয়ে আসছে। ঠিক সেই মুহূর্তে আনুবিস গগনবিদারী একটা চিৎকার দিয়ে কোথায় যেন গায়েব হয়ে গেল।
কিছু বুঝে উঠার আগেই সেই অক্টোপাসের মত জন্তুগুলো প্রত্যেকটা নাবিকের দিকে লাফ দিল। অসহায় নাবিকরা বাঁধা দেয়ার আগেই খুব দ্রুত ওদের মুখের ভেতর ঢুকতে শুরু করে দিল ওগুলো। একটা জন্তু সোজা জ্যাকসনের দিকে আসছিল। ওর হাঁটু কাঁপছিল। পা দুটো যেন সুপার গ্লু দিয়ে ডেকের সাথে লাগিয়ে দিয়েছে কেউ।
‘জ্যাকসঅঅঅঅন...সরে যা তুইইইইই...’ উইলিয়াম ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু এর আগেই বিষাক্ত সবুজ রঙের জন্তুটা জ্যাকসনের মুখ লক্ষ্য করে লাফ দিল। ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল জ্যাকসন। জন্তুটা তার ট্যান্টাকলগুলো দিয়ে খুব শক্ত করে জ্যাকসনের মুখটা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। কিছুতেই ছাড়ছে না ওকে। উইলিয়াম জন্তুটাকে ধরে টান দিল।
টান দেয়ার কারণে সাথে-সাথে ওটার একটা ট্যান্টাকল ছিঁড়ে গেল আর উইলিয়াম তাল সামলাতে না পেরে ডেকের উপর আছড়ে পড়ল। ওটার শরীরটা অর্ধ তরল, জেলির মত। এই কারণেই তাহলে একটু আগে বুলেটগুলো ওদের শরীরে কোন প্রভাব ফেলেনি!
বিষাক্ত সবুজ রঙের অর্ধ তরল জন্তুটা জ্যাকসনের মুখের ভেতর ঢুকে গেল। মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে আর কাশছে জ্যাকসনসহ সবগুলো নাবিক।
‘ওহ মাই গড! এদেরকে বাঁচানোর কি কোন উপায়ই নেই?’ ক্যাপ্টেন কুপার চেঁচিয়ে উঠল। জাহাজের হুইল ছেড়ে দিয়ে সে উইলিয়ামের ঠিক পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
ওদের চোখের সামনেই জ্যাকসনসহ প্রত্যেকটা নাবিক বিষাক্ত সবুজ হয়ে যাচ্ছে। ওদের পুরো শরীর বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। শার্ট ছিঁড়ে হাতের পেশীগুলো বেরিয়ে এসেছে। মুখ বিকৃত হয়ে যাচ্ছে, দাঁতগুলো বড়-বড় হয়ে যাচ্ছে। দেখতে-দেখতে ওরা সবাই সবুজ রঙের ভয়াবহ কিছু দানবে পরিণত হলো।
‘ওহ মাই গড, ওহ মাই গড! হে ঈশ্বর, রক্ষা করো...’ ক্যাপ্টেন কুপার মৃগী রোগীর মত কাঁপছে। ওর দাঁতগুলো একটা আরেকটার সাথে লেগে ঠক-ঠক করে শব্দ করছিল।
সাথে-সাথে ধুপ করে আরেকটা শব্দ হলো। আনুবিস ফিরে এসেছে। ওর বুকের সেই ক্ষত চিহ্ন উধাও। সে এসেই মাত্র কান ফাটানো একটা গর্জন করল, আর সাথে-সাথে সমস্ত মিউট্যাটেড দানবগুলো ওর দিকে জড় হতে লাগল। ওরাও তর্জন-গর্জন করছে। আনুবিস ওদেরকে অদ্ভুত ভাষায় কি যেন বলছিল। আনুবিসের কথা শেষ হওয়ার পর সবুজ দানবগুলো আরেকবার গর্জন করে উঠল। এরপর একে-একে সবাই ঘূর্ণির ভেতর লাফ দিল, এমনকি জ্যাকসনও।
আর সহ্য করতে পারছে না উইলিয়াম। চিৎকার করে শটগান থেকে একের পর এক ফায়ার করতে লাগল আনুবিসকে লক্ষ্য করে। আনুবিস এবার প্রস্তুত ছিল। ফায়ার করার সাথে-সাথেই সে গর্জন করে উঠল। এবার বুলেটগুলো আনুবিসের সামনে থাকা অদৃশ্য কোন একটা দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। তবে গর্জন করার আগেই দুটো বুলেট আনুবিসের বুকে ঢুকে গেছে। আবারও সবুজ রঙের রক্ত বের হচ্ছে আনুবিসের শরীর থেকে। চোখের নিমিষেই আনুবিস আবার গায়েব হয়ে গেল। সবুজ রঙের রক্তের ফোঁটা থেকে আবারো তৈরি হলো একটা অদ্ভুত জন্তু।
‘এই সেরেছে, কি করেছিস এটা...এখন তো ওটা সরাসরি আমাদেরকে মুখের ভেতর ঢুকে যাবে! আমাদেরকেও ঐরকম বিশাল দানবে পরিণত করে দেবে,’ বলেই এক দৌড়ে টেবিলের নিচে আশ্রয় নিল ক্যাপ্টেন।
উইলিয়াম জানে গুলি করে কোন লাভ নেই। কিন্তু এরপরও সমানে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঐ অর্ধ তরল প্রাণীটার ভেতর দিয়ে গুলিগুলো সোজা চলে যাচ্ছে। ওটার কোন ক্ষতিই করতে পারছে না।
উইলিয়াম পেছাতে লাগল। পেছাতে-পেছাতে টেবিলের সামনে চলে এলো। প্রাণীটা এগিয়ে আসছে। টেবিলের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো উইলিয়াম। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। টেবিলের নিচে ঠক-ঠক করে কাঁপছিলো ক্যাপ্টেন কুপার। ওর কাঁপা-কাঁপির কারণে পুরো টেবিল শুদ্ধ কাঁপতে শুরু করে দিল। হঠাত টেবিল থেকে একটা হুইস্কির বোতল গড়িয়ে জন্তুটার গায়ের উপর পড়ল। ঝন-ঝন শব্দ করে হুইস্কির বোতলটা ভেঙ্গে গেল। বোতলে থাকা সমস্ত মদ ছড়িয়ে পড়ল সবুজ রঙের জন্তুটার গায়ের উপর।
ধোঁয়া উঠতে লাগল ওটার শরীর থেকে। চিকন সুরে চিৎকার করছে ওটা। সামনে এগোতে পারছে না আর। ওটার পুরো শরীরটাই যেন ধীরে-ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে মদের ভেতর। এক দিকে ওটার শরীর থেকে ধোঁয়া উঠছে আর আরেকদিকে বুদ-বুদ উঠছে মাটিতে ছড়িয়ে থাকা হুইস্কি থেকে। এমনভাবে বুদবুদ উঠছে যেন হুইস্কিগুলো উত্তপ্ত হয়ে ফুটছে।
দেখতে-দেখতে সবুজ রঙের জন্তুটা হারিয়ে গেল মদের ভেতর। মাটিতে পড়ে থাকা মদগুলোর রঙ সম্পূর্ণ সবুজ হয়ে গেল। ধীরে-ধীরে উইলিয়াম টেবিলের ওপাশ থেকে বেরিয়ে এলো। খুব সাবধানে সবুজ রঙের মদের ভেতর হাতটা একটু করে চুবিয়ে দিল।
‘আউচ...’ শব্দ করে হাত সরিয়ে নিল উইলিয়াম।
‘কি হয়েছে, তুই ঠিক আছিস তো?’ টেবিলের তলা থেকে বেরোতে-বেরোতে বলল দুঃসাহসী ক্যাপ্টেন কুপার।
‘আমি ঠিকই আছি, কিন্তু হাত পুড়ে গেছে। হুইস্কিগুলো অনেক-অনেক গরম হয়ে আছে...’ অন্যমনস্কভাবে কি যেন ভাবতে লাগল উইলিয়াম।
কিন্তু বেশি ভাবার সময় সে পেল না। জাহাজের ডেকে আবারো ফিরে এসেছে আনুবিস। আসা মাত্রই হাঁটু ভাঁজ করে হাত দুটো পেছনের দিকে নিয়ে দুহাতের তালু এক করে অদ্ভুত এক ভঙ্গিতে দাঁড়াল। এরপর খুব জোরে দুহাতের তালু জোড়া লাগান অবস্থায় সামনের দিকে নিয়ে এলো। সাথে-সাথে মিজেন মাস্তুলটা সহ ক্যাপ্টেনের কেবিনের সমস্ত কাঁচের জানালা সশব্দে ভেঙে গুঁড়ো-গুঁড়ো হয়ে গেল। ভাঙ্গা মাস্তুলটা ডেকের উপর গড়িয়ে পড়ল।
এক দৌড়ে কেবিন থেকে শটগানটা নিয়ে বেরিয়ে এলো উইলিয়াম। ফায়ার করার জন্যে সবে মাত্র তুলেছে, সাথে-সাথেই চোখের পলকে আনুবিস অদৃশ্য হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
‘উইলিয়াম! তোর পেছনে...’ চিৎকার করে উঠলো ক্যাপ্টেন কুপার। চিৎকারের শব্দ শুনে পেছনে তাকাতেই ধুম করে উইলিয়ামের হাত থেকে শটগানটা পরে গেল। ওর থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে দাঁড়িয়ে ছিল আনুবিস। মাটিতে পড়ে থাকা শট গানটায় একটা ফুঁ দিল সে। কাগজের মত উড়ে গিয়ে সমুদ্রে হারিয়ে গেল ওটা।
এক হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিল আনুবিস। এরপর খপ করে হাতের মুঠি বন্ধ করল। সাথে-সাথে উইলিয়াম টের পেল যে অদৃশ্য কিছু একটা পশুর মত ওর গলা চিপে ধরেছে। পেছন থেকে চিৎকার করে ক্যাপ্টেন ছুটে এলো উইলিয়ামকে বাঁচানোর জন্যে। আনুবিস ওর দিকেও একইভাবে বাম হাতটা বাড়িয়ে দিল। ক্যাপ্টেনের গলাও সে চিপে ধরেছে। দুইজনেই পাগলের মত হাত-পা ছুঁড়ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে ওদের। আর কয়েক সেকেন্ড পরেই মারা যাবে ওরা।
দুইজনকে দুই দিকে ছুঁড়ে দিল আনুবিস। ক্যাপ্টেন বিকট শব্দ করে ভারি লোহার সাথে মাথায় ধাক্কা খেয়ে সাথে-সাথেই জ্ঞান হারাল। উইলিয়াম হাঁপাচ্ছে। উঠে দাঁড়ানোর শক্তিও নেই ওর। বহু কষ্টে দুই চোখ খুলে দেখতে পেল, আনুবিস ডেকের মাঝখানেই দাঁড়িয়ে আছে এখন।
কান ফাটানো একটা আর্তনাদ করে ডান হাতটা উপরের দিকে করতেই আনুবিসের হাতে চলে এলো সেই দণ্ডটা। দণ্ডটাকে মাথার উপর তুলে সোজা ডেকের উপর আঘাত করল আনুবিস। পুরো জাহাজটা কেঁপে উঠল থর-থর করে। ফুটো হয়ে গেল ডেকের ঠিক মাঝখান বরাবর। এরপর আরেকটা গগন বিদারি চিৎকার করে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল আনুবিস।
প্রায় সাথেই-সাথেই উইলিয়াম শুনতে পেল ডেকের নিচের থেকে অদ্ভুত একটা শব্দ ধেয়ে আসছে। প্রতি মুহূর্তে শব্দটা জোরালো হচ্ছে।
প্রচণ্ড শব্দ করে ডেকের ঐ অংশের পাটাতন উড়ে গেল। সেখান থেকে খুব জোরে স্রোতের মত পানি বের হতে লাগল অবিরাম ধারায়। জাহাজটাই ফুটো করে দিয়েছে আনুবিস। এখন আর কোন আশাই নেই। মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হলো উইলিয়াম।
ধীরে-ধীরে জাহাজটা কাত হয়ে যাচ্ছে স্টারবোর্ড সাইডের দিকে। মেলস্ট্রোম এর ঘূর্ণির ভেতর পড়ে গেছে ওটা। তলিয়ে যাচ্ছে অ্যাটলান্টিকের অতলে। জ্ঞান হারানোর আগে শেষ বারের মত ওর চির চেনা পৃথিবীটাকে দেখে নিল উইলিয়াম।
জাহাজটা কাত হয়ে ঢুকে গেল সেই বিশাল গর্তের ভেতরে। ধীরে-ধীরে রহস্যময় অ্যাটলান্টিকের বুকে হারিয়ে গেল সি-গাল।
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āϰāĻŦিāĻŦাāϰ, ā§Ģ āύāĻেāĻŽ্āĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
3564 (3)
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
⧧⧍:⧍ā§Ŧ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ