বাবা সাধারনত ছুটিরদিন ছাড়া কাঁচাবাজারে যাননা। আজ ছুটির দিন না,তারপরও কি মনে করে সকাল ১০টায় কাঁচাবাজারে গিয়েছিলেন তার কারন আমি এখনও খুঁজে পাইনি। এখন বিকেল তিনটা বাজতে যাচ্ছে। আজকে ওই অসময়ে বাবার কাঁচাবাজারে যাবার একটা কারন হতে পারে আজ বাবা অফিস যাননি সেটা। তাঁর নাকি শরীর খারাপ লাগছিলো। শরীর খারাপ হলে অফিস কামাই দেয়া যায় অথচ বাজার কামাই দেয়া যায়না? অদ্ভুত!
অবশ্য বাবার বাজার যাওয়া না যাওয়া নিয়ে আমার মাথা ঘামাবার কোনো কারন ছিলোনা,আমার আজকের ব্যস্ততার অনেক বড় উপলক্ষ্য ছিলো,আজ আমার বড়খালার মেয়ে তিথি আপুকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে। যেহেতু মা আর বড়খালার বাসা পাশাপাশিই,তাই আপুর সাথে আজকের পুরো দিন জোঁকের মতো লেগে থাকবার দায়িত্ব আমারই ছিলো এবং,যেহেতু আপু দেখতে ভীষন সুন্দরী এবং খালা-খালুর অতিবাধ্য মেয়ে,তাই আজকে যে আপুর আকদও হয়ে যাবে, সেই সাথে আপুর নতুন বরকে আমি জ্বালানোর বড়রকম সুযোগ পাবো সে ব্যাপারে আমার কোনো এবং কোনোরকম সন্দেহই ছিলোনা!
কিন্তু সবকিছুতে পানি ঢেলে দিলো বাবার এই কাঁচাবাজার! তিনি অসময়ে বাজারে গিয়ে সাড়ে তিনকেজি কুঁচোচিংড়ি নিয়ে আসলেন,আজকে এই ছেলেপক্ষ আসা নিয়ে মা,খালা,এমনকি কাজের বুয়াও রান্নাতে ব্যস্ত। সুতরাং এই চিংড়ি কুটতে আমাকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আধাকেজি বা এককেজি না,ঝাড়া সাড়ে তিনকেজি ছোট্ট ছোট্ট চিংড়ি!
আপুর এই ছেলেপক্ষের জন্য আমি আজ ভার্সিটি অবধি কামাই দিয়েছি। লাভ কি হলো? সেই এগারোটা থেকে চিংড়ি কুটছি আর কুটছি....আপুকে সাজাতে একটু আগে ভাবি ঘরে ঢুকে গিয়েছে। আর আমার সারা শরীর থেকে বের হচ্ছে কুঁচোচিংড়ির আঁশটে গন্ধ! আজকের পর চিংড়ি আমার জন্মশত্রু হবে সন্দেহ নেই। এরকম একটা ভালো দিন মাটি করতে সাড়ে তিন কেজি মাছের আঁশটে গন্ধই যথেষ্ট!
কি কাজে যেন ভাবি রান্নাঘরের এদিকে এসেছিলো। আমার পাশ দিয়ে যাবার সময় বলে গেলো,
-তুই খবরদার আজ বসারঘরের আশেপাশেও যাবিনা,গা থেকে যা আঁশটে গন্ধ বেরুচ্ছে,ছেলেপক্ষ এই গন্ধেই যদি তিথিকে না করে দ্যায়!
-কিসব বলো ভাবি! আমার গন্ধে আপুর বিয়ে ভাঙবে! তোমার মাথায় যে কি চলে!
এবার মা শুরু করলো।
-তোর ভাবি তো ঠিকই বলেছে। চিংড়ি কোটাই শেষ হলোনা,কখন গোসল করবি আর কখন বসারঘরে যাবি! তোর গা থেকে আসলেই আঁশটে গন্ধ বেরুচ্ছে। বরং ওদের যদি তিথিকে পছন্দ হয়েই যায়,তাহলে একবারে রাতের দিকে গোসল করে ওঘরে যাস কেমন!
আমি আর কিছু বললাম না।মায়ের মতে ছোটমাছ না কুটে ফ্রিজে রাখতে নেই। সব রাগ এখন বাবার ওপর গিয়ে পড়ছে। আজকেই কেন এ মাছগুলো আনতে হলো!
বিকেল প্রায় শেষের পথে। বুয়া রান্নার সাথে সাথে ঘরেও নাস্তা দিয়ে আসার কাজটা করছে। এরই ফাঁকে একবার আমার কাছে এসে বলে গেলো,
-আফা,মাইয়া তাগো পছন্দ হইছে! আজকেই কাবিন কইরা ফালাইবো। আমার যে কি খুশি লাগতাছে!
-আপু কি বসার ঘর থেকে বেরিয়েছে?
-হ,ঘরে গিয়া দরজা আটকাইছে একটু আগে। মেকাপ বইলা ঠিক করতে হইবো! বুঝেননা,বিয়া বইলা কথা!
বুয়ার কথা শেষ হবার আগেই আমি তাড়াতাড়ি উঠে বাসার পেছনদিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আপুর ঘরের পেছনদিকের জানালা বরাবর ছুট লাগালাম। আমার মাথায় এখন অন্য একটা চিন্তা কাজ করছে। যদিও আপু খালামনির কথার কখনোই অবাধ্য হয়নি,তারপরও....
আশপাশে তাকিয়ে আবার দৌঁড়তে গিয়ে ধাক্কা খেলাম কার সাথে যেন। ছেলেটা বোধহয় ফোনে কথা বলছিলো। তাড়াতাড়ি স্যরি বলে জানালার দিকে চলে আসলাম।
যা ভেবেছিলাম তাই। আপুর জানালায় কখনোই গরাদ ছিলোনা। হাট করে খোলা জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম ঘরের ভেতরে কেউ নেই। আপু পালিয়েছে।
আমার হাত পা কাঁপছে। এখন? আপু আমাকে তো অন্তত বলতে পারতো!
-কোনো সমস্যা?
পেছনে তাকিয়ে দেখি ধাক্কা খাওয়া সেই ছেলেটা।
আমার হাতে তখনো মাছের এঁটো লেগে আছে।সেই অবস্থায় কপালের চুল সরিয়ে বললাম,
-আপনি কে? সমস্যা হলেও নিশ্চয়ই আপনাকে বলবোনা!
-মেয়ে পালিয়েছে?
আমার এবার ভিরমি খাওয়ার দশা। কোনোরকমে বললাম,
-খবরদার মুখে কোনো কথা আনবেন না!
-আচ্ছা। আপনি কনের....?
-খালাতো বোন।
বলেই রান্নাঘরের দিকে ছুটলাম। কাউকে বুঝতে দেয়া যাবেনা আপু পালিয়েছে। খবরটা যতো দেরিতে সবাই জানবে ততোই আপুর জন্য ভালো।
তিনঘন্টা পর।
আমি এখন বরের পাশে সোফাতে বসে আছি। ঠিক বিশমিনিট আগে আপুর হবু বরের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আপুর পালানো নিয়ে যতোটা হৈচৈ হবার কথা ছিলো তার কিছুই হয়নি,আমার মাথা এখনো কাজ করছেনা এতো অল্প সময়ে কিভাবে এসব হলো! ঘরের সবাই রাতের খাবারের অজুহাতে আমাকে আর ওই ছেলেটাকে বসার ঘরে একা রেখে খাবার ঘরে গিয়েছে। দুজনই চুপচাপ বসে ছিলাম,হঠাৎই ছেলেটা বললো,
-তুমি কি পারফিউম মেখেছো বিয়ের সাজগোজের সময়?
-হু।
-তখন ধাক্কা খাওয়ার সময় আঁশটে গন্ধ পেয়েছিলাম....কিছু মনে করোনা,তখন জীবনে প্রথমবারের মতো মাছের আঁশটে গন্ধও চমৎকার লেগেছিলো! পারফিউমটা না মাখলেও পারতে!
উত্তরে খুব কড়া কোনো কথা বলার জন্য ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতেই থেমে গেলাম। তার চশমার আড়ালের ঝকঝকে চোখদুটোতে দুষ্টুমির হাসি ঝিকমিক করছে। মুখে আর কোনো কথা আসলোনা আমার। টের পেলাম আমি চোখ সরাতে পারছিনা তার থেকে।
সে এবার আরেকটু নিচু স্বরে প্রায় ফিসফিস করে বললো,
-ভাগ্যিস তোমার বোনটা পালিয়েছিলো!
তার চোখের দিকে আরেকবার তাকালাম।
আমারও একই কথা মনে হলো। ভাগ্যিস আপু পালিয়েছিলো!
#নিয়তি
_শুচিতা মৌমি।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ